শৌচাগার বিপর্যয় -১

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি
লিখেছেন লুৎফুল আরেফীন (তারিখ: বিষ্যুদ, ২০/১২/২০০৭ - ৫:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

autoছোটবেলায়, এমনকি বড় হয়েও দেখেছি আমরা ছেলেরা সাধারণতঃ যখন তখন যেখানে সেখানে প্রকৃতির ছোট খাটো ডাকে সাড়া দিতে দাঁড়িয়ে যাই। শুধু তাইই নয়, বালুর ওপরে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার সুযোগ পেলে তো মূত্রধারার সাহায্যে কিশোর ধারাপাতের অ আ ক খ -র যাবতীয় প্র্যাকটিসও চলতো! সেদিন ওয়েব ব্রাউজ করতে করতে হঠাৎ ওপরের ছবিটা দেখে আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা মনে এসে গেল। উপরের ছবির সতর্কবাণীটি একটি স্ট্যান্ডিং টয়লেটের মূত্রত্যাগী পুরুষদের প্রতি কর্তৃপক্ষের সবিনয় অনুরোধ। যুগে যুগে পুরুষেরা টয়লেট নোংড়া করায় যে মেধার সাক্ষর রেখেছে তারই স্বপক্ষে আরেকটা নিদর্শন!

অধিকতর শিক্ষিত হবার আশায় বিদেশ পাড়ি জমানোর পর থেকেই দু’চোখে অশেষ বিস্ময়ের ধাক্কা সামলে বেড়াচ্ছি। নানা দেশের নানা রকমের মানুষ। তাদের রকমারী কালচার, বর্ণ আর ভাষা। চমক সর্বত্রই! এই রকমারিত্বের বাইরে ছিল না শোচাগার আচরণও। দীর্ঘদিন একই ফ্লোরে থাকার কারণে আমাকে ফ্লোরের এটা সেটা নিয়ে নাক গলাতে হতো। ফ্লোরের টুকিটাকি নিয়ে যারা ভাবেন, তাদের সাথে মিটিং এ যোগ দিতে হতো। প্রত্যেক ফ্লোরেই একজন ফ্লোর স্পিকার থাকে; এর দায়িত্ব হচ্ছে ফ্লোরের সকলের ভালো-মন্দের দেখভাল করা। যেমন, রান্নাঘর পরিস্কার আছে কি না। ব্যালকনিটা পরিস্কার আছে কি না। গার্বেজ ঠিক মতো পরিস্কার/খালি করা হচ্ছে কি না ইত্যাদি। তবে ফ্লোর স্পিকারদের জন্য সর্বাপেক্ষা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল টয়লেটের পৈশাচিক ব্যবহার রোধ করা এবং সেটাকে বরাবর ব্যবহার উপযোগী রাখা।

আমাদের ফ্লোর স্পিকার ছিল একজন জার্মান ছাত্র। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ফ্লোরে শান্তির কোনও ঘাটতি ছিল না। সবাই সুখে শান্তিতে দিনপাত করছিলাম। কোথাও কোনও বাড়তি ময়লা দূরে থাক, কিচেন, টয়লেট সব ঝকঝক করতো। সবকিছু নিয়মমাফিক, একেবারে জার্মান তরিকা!! এই নিরবিচ্ছিন্ন সুখ শান্তিতে ছেদ পড়লো ফ্লোরে একজন চৈনিক বন্ধুর আগমনের পর থেকে। হঠাৎ একদিন প্রাতঃকার্য সমাধা করতে টয়লেট গিয়েই দেখি, মুখের সামনে নাক বরাবর একটি কার্টুন চিত্র। সেখানে ৬টি ধাপে টয়লেট ব্রাশের প্রয়োজনীয়তা এবং এর ব্যবহার বিধি সচিত্র বর্ণনা করা হয়েছে। একদম নীচে ফ্লোর স্পীকারের নাম লেখা। টয়লেটে বসে আমি সাধারণঃত জরুরী বিষয়-আসয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করি। চোখের সামনে ছবিটা আমার চিন্তায় বারবার ছেদ ফেলতে লাগলো।
টয়লেট সেরে বেড়িয়ে এসে ফ্লোর স্পিকারকে শুধালাম, বিষয়টা কি? টয়লেটের দেয়ালে এই রচনা লেখার কি কারণ?
ফ্লোর স্পিকার জানালো, গতকাল সে নাকি টয়লেটে গিয়ে সেটা অপরিস্কার দেখেছে। কেউ একজন ব্যবহারের পর ভালোভাবে পরিস্কার করে নাই। তাই সে টয়লেট শেষে ব্রাশ ব্যবহারের ব্যাপারটি স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছে।
আমি হুমম বলে সায় দিয়ে চলে আসলাম। ঘটনা এখানে শেষ হয়ে গেলে এই প্রবন্ধ হয়তো লিখা হতো না। কিন্তু এইরুপ অমোনোযোগী শৌচাগার-আচরণের ঘটনাটি ক্রমশঃ পৌণঃপূণিক হয়ে উঠলো। এরপর একদিন আমিও আবিষ্কার করলাম যে জনৈক ছাত্র টয়লেট নোংড়া করে রেখে গেছে। তারপর আবারও একদিন। অতঃপর আরোও বেশ ক’বার। সেই শৌচাগার বিপর্যয়ের বর্ণনাতে একটু পরেই আসছি। এর আগে প্রায় ১২ বছর পূর্বের আমার কোলকাতা টু দিল্লীর ১৮ ঘন্টা ট্রেন জার্নীর কথা একটু না বললেই নয়।

৯৫ এর শেষের দিকের ঘটনা। আমি কোলকাতা থেকে “রাজধানী এক্সপ্রেস” এ করে দিল্লী যাচ্ছিলাম। দীর্ঘ ১৮ ঘন্টার সেই ট্রেন জার্নীর সময় আমাকে মোট ৩বার প্রকৃতি ডাক দেয়। কিন্তু সেই ডাকে আমি মাত্র ১ বার সাড়া দেই। সেটা হচ্ছে ১মবার। প্রথমবারের টয়লেট দর্শনের ভয়াল স্মৃতি মন থেকে মুছে ফেলতে পারছিলাম না বলেই পরবর্তিতে প্রকৃতি ডেকে গেলেও আমি সাড়া দেবার সাহস করি নি! এখানে সেই প্রথমবারের ঘটনাটা বলি।
টয়লেটের সামনে রীতিমতো মানুষ-মড়া ভীড়। লম্বা চিকন লাইনটা আমার কামড়ার প্রায় সামনে পর্যন্ত এসে ঠেকেছে। একটু একটু করে আগাচ্ছি আর এটা সেটা দেখে প্রাকৃতিক চাপকে ভুলে থাকার চেষ্টা করছি। অনেকখন অপেক্ষার পরে একসময় দেখলাম টয়লেট আর আমার মাঝে আর কেউ নেই! প্রায় দৌড়ে টয়লেটের ভেতরে ঢুকলাম।
কিন্তু ঢোকার পরে ভেতরে আলাদা করে টয়লেট হিসেবে পরিচিত সাদা কড়ির পাত্রটি আমার দৃষ্টিগোচর হলো না! থাকার মধ্যে আছে ফ্লোরের মাঝখানে ছোট্ট একটি ছিদ্র আর ২পাশে ২টি পায়া। আশেপাশে এর চে বড় কোনও ছিদ্র আবিষ্কার না করতে পেরে আমি বুঝলাম, ট্রেনের দুলুনীর মধ্যে নির্ভুল নিশানায় ঐ ছিদ্রটার মাঝখান দিয়েই মলমূত্র এসপার-ওসপার করতে হবে। এই নিশানা যদি সামান্য এদিক-সেদিক হয় তাহলে আপনাকে নিদেনপক্ষে গোসল করে বের হতে হবে। তবে নিশানা ঠিকঠাক রাখার জন্য সহায়ক হিসেবে ২ পাশের দেয়ালে ২টি হাতল আছে দেখলাম। ঐ ২খানা হাতল সাড়াশীর মতোন আঁকড়ে রাখতে পারলে ট্রেনের দুলুনী, টয়লেটের দুলুনী আর শরীরের মিউনিসিপ্যাল দপ্তরের দুলুনীর মাঝে একটা হারমোনী তৈরি হয়। তখন নিশানা ব্যার্থ হবার সম্ভাবনাও কমে যায়। কিন্তু সবাই সেই দূরুহ কাজটা ঠিকঠাক মতোন কেন করবে? ভুলচুক হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেই ভুলচুকের ফলাফল যথারীতি চাক্ষুস করলাম টয়লেটে ঢোকা মাত্র! এদিকে সেদিকে মানুষের ভুলচুক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখে আমি হয়তো এ যাত্রা ফিরতি পথ ধরতাম কিন্তু অনেকখন লাইনে দাড়িয়ে থেকে অবস্থা তখন বেগতিক! এমতাবস্থায় আরোও ভয়াবহ দৃশ্যও হয়তো আমাকে মলত্যাগে বিরত করতে পারতো না!

এবারে আমার ডরমিটরীর ঘটনায় ফিরে আসি। সকালবেলার কথা। শীতপ্রধান দেশে সকালে বিছানা ছেড়ে উঠতে কারই বা মন চায়? সুতরাং যতোটা সম্ভব ঘুমিয়ে নিয়ে আমি তখনই উঠতাম, যখন যাবতীয় প্রাকৃতিক হাঁক ডাক ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মতোন হয়ে উঠতো। আমার ঘর থেকে টয়লেটের দূরত্ব আরোও ৪-ঘর সমান। উপরন্তু ইউরোপে বদনা বা পানির চল না থাকায় আমরা বাঙ্গালীরা সাধারণতঃ পানিভর্তি একটা বোতল হাতে করে নিয়ে যেতাম টয়লেটে। বোতলটা কেউ দেখে ফেলে কি না সেই আতঙ্ক, আর প্রকৃতির অদম্য চাপ -- এই ২য়ের কারণে বোতল নিয়ে যথাসম্ভব দ্রুতপায়ে রুম আর টয়লেটের মাঝখানটুকু পার হতাম! মনে মনে দোয়া কালাম পড়তাম যেন এই সময়টুকুনের মধ্যে কেউ রুম থেকে বের না হয়! অগত্যাই কেউ বেড়িয়ে গেলে তড়িৎ সিদ্ধান্ত পাল্টে টয়লেটে না গিয়ে বরং আরেকটু এগিয়ে বোতল হাতে কিচেনে ঢুকে যেতাম! ভাবখানা এমন করতাম, যেন বোতল নিয়ে আমি মোটেই টয়লেটে যাচ্ছিলাম না বরং কিচেনেই তরকারিতে ঝোল দিতে যাচ্ছিলাম!

যাইই হোক, টয়লেটে ঢুকে যে দৃশ্য দেখলাম তাতে আমার ১২ বছর আগের সেই ট্রেন জার্নীর কথা মনে এসে গেল। সেই একই রকমের তান্ডব! ক্ষণিকের জন্য ভাবিত হলাম এই দেখে যে, কোনওরুপ দুলুনী ছাড়া এই রকমের অজন্তা-ইলোরার পেইন্টিং কিভাবে সম্ভব?!! তারাহুড়োর মধ্যেও ঐ দৃশ্য দেখে আমার প্রাকৃতিক বেগ উর্দ্ধমুখী হলো! আমি তড়িতাহতের মতোন ছিটকে ঐটা থেকে বেড়িয়ে পাশের উইমেনস টয়লেটে ঢুকে গেলাম। সেটা বরাবর পরিস্কার থাকে। প্রাতঃকৃত্য সেরে বেড়িয়ে এসে ফ্লোর স্পিকারকে ঘটনা খুলে বললাম। এরপর ২ জনেই সরেজমিনে ব্যাপারটা আবার দেখতে টয়লেটে গেলাম। নাকে-মুখে হাত দিয়ে যা দেখলাম তার বর্ণনা দেয়া আসলেই সম্ভব না! ১২ বছর আগের ট্রেনের টয়লেটে দুলুনীর একটা ব্যাপার ছিল। কিন্তু বিনা উষ্কানীতে কেউ এমন হেলিয়ে দুলিয়ে কেন কাজটা করবে সেটা ভেবে পাচ্ছিলাম না! মনে আছে ছোট বেলায় কোরবানীর গরুকে খাওয়ানোর জন্য একপ্রকারের চিটাগুড় কেনা হতো। বালতিতে রাখা সেই চিটাগুড় গরু মুখ ডুবিয়ে খেত আর এলোপাথারি ভাবে বালতির গায়ে মাখাতো। টয়লেট আর সেই বালতি চোখের সামনে বারবার গুলিয়ে যাচ্ছিল। কমোডের এমন সব গহীন অঞ্চলে মনুষ্য বর্জ্য লেগে আছে, যা ইহজন্মে আগে দেখিনি! শুধু তাইই নয়, ঠিক কিভাবে বসলে এমনটা হতে পারে সেটাও বুঝে উঠলাম না ২জনের কেউই। তবে ধারণা করলাম, হয়তো পা ছড়িয়ে না বসে, সিটের উপর তুলে বসায় এমন দূর্গতি হয়ে থাকবে! এই ব্যাখ্যার কথা মাথায় রেখে নতুন আরেকটি চিকাও লাগানো হলো।
auto
যাহোক, ঘটনার নায়ক কে - এই প্রশ্ন মাথায় নিয়ে আমরা ২জনেই কিছুক্ষণ চিন্তা করে দেখলাম, চৈনিক বন্ধুটির আগমন আর এই পৌণঃপূণিক “শৌচাগার বিপর্যয়” মোটামুটি সমসাময়িক। সুতরাং, এবারে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে পরের ফ্লোর মিটিং এ বিষয়টা উথ্থাপন করা হবে। পাশাপাশি জার্মান বন্ধুটি আরোও কিছু শিক্ষামূলক চিকা মেরে দিল টয়লেটের দেয়ালে। যেমন, Nicht spritzen, sitzen যার ইরেজী অর্থ হচ্ছে “Don’t spray, sit down”, তারপর Please don’t blast shit on the walls ইত্যাদি।
auto
পরের ফ্লোর মিটিং এ বিস্তারিতভাবে টয়লেটের ঘটনা নিয়ে আলোচনা হলো এবং ইঙ্গিতে চৈনিক ছোকরাকে সাবধান করে দেওয়া হলো। কিন্তু ফল লাভের আশা যে নেই সেটা আমরা বুঝলাম আরো কিছুদিনের মধ্যেই। ফ্লোরের ৩ টা টয়লেট (মহিলা সহ)-এর ১ টা সারা মাস ধরে ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পরে থাকতো ঐ চৈনিকের কারণে। কারণ ঐ ছোকরা টয়লেট সিটে বসার মতোন কোনও ফাঁকা জায়গাই অবশিষ্ট রাখতো না। সুতরাং বাকি ২ টা দিয়েই কোনওমতে চলতো ফ্লোরের অবশিষ্ট ৮ জনের। হঠাৎ একদিন লক্ষ্য করলাম কিচেনে চৈনিক ছোকরা একটা ছোটখাটো পার্টির আয়োজন করেছে। আমন্ত্রিত সহ মোটামোটি ৭/৮ জন চৈনিক এক মাহফীলে!!। মনে মনে প্রমাদ গুনলাম! এদের সবারই পয়ঃনিষ্কাশন পদ্ধতি বাচ্চাদের “সার্ফ এক্সেলঃ দাগেই শেখা, দাগেই মজা”র মতোন হয় তাহলে ব্যবহার উপযোগী একটা টয়লেটও থাকবে না আমাদের জন্য! যেমন ভাবা তেমনই ঘটনা ঘটলো। সেটা পরের দিন সকালে টের পেলাম।রাগে আমার মাথা ভন ভন করতে লাগলো। ঘরে এসে লাল রঙের মার্কার পেন দিয়ে খুব কড়া ভাষার একটা চিকা তৈরি করলাম।

WHOEVER HAVE DONE THIS; LISTEN:
CLEAN THE TOILET AS SOON AS YOU SEE THIS NOTE
THIS IS NOT THE WAY SOMEONE SHOULD USE THE TOILET!
IF YOU EVER DO THIS TO THE TOILET AGAIN
YOU WILL BE REPORTED TO THE HOUSE MASTER!!!
BE CAREFUL!!!

এটি টয়লেটে টাঙানোর মাত্র আধা ঘন্টা পরে বেড়িয়ে দেখলাম টয়লেট পরিস্কার হয়েছে। এরপর কিছুদিন অন্ততঃ শান্তিতে থাকা গিয়েছিল।
[চলবে]


মন্তব্য

শেখ জলিল এর ছবি

“সার্ফ এক্সেলঃ দাগেই শেখা, দাগেই মজা”

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

দুর্দান্ত ঘটানার অসাধারণ রসিক বিবরণ!

আপনি তো রাজধানী এক্সপ্রেসের টয়লেটে গিয়েছিলেন, কিন্তু আমি একবারো যাইনি। এখন বুঝতে পারছি যে সেযাত্রা বড় বাঁচা বেঁচেছিলাম।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আলহামদুলিল্লাহ্

হিমু এর ছবি

সাধু, সাধু!

আমি আকৈশোর টয়লেটবিষয়ক শুচিবায়ু নিয়ে বেঁচে ছিলাম। পরবর্তীতে বারোয়ারি টয়লেট ব্যবহারে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যখন বাধ্য হওয়া শুরু করলাম, তখনই বুঝেছি, নিজের গুমুতের প্রতিসব মানুষের দায়িত্ববোধ সমান নয়। বিশেষ করে কিছু কিছু লোক এদের বেড়াল পার করে দিয়ে গা-ঢাকা দিতে চায়।

ট্রেকিংবা হাইকিঙের কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্নরকম টয়লেট ব্যবহারে একরকম বাধ্য হয়েছি। মাছির ভয়ে রুদ্ধমল হয়ে তিরিশ কিলোমিটার দূরে গিয়ে হেগেছি, এমন নজিরও আছে। আমার পক্ষ থেকে সবসময় চেষ্টা ছিলো আমার পরবর্তী সারিবানের জন্য টয়লেটকে ব্যবহারোপযোগী করে রেখে আসার। চন্দ্রসূর্য সাক্ষী, এই কাজ অন্তত শতকরা ১০০ ভাগ করতে পারিনি। দুয়েকবার অচিহ্নিত বর্বর হাগারুর প্রতি সহযাত্রীদের ক্ষুব্ধ বকাবকি কান পেতে শুনতে হয়েছে, নিরিবিলি অনুভব করেছি যে আমিই উদ্দিষ্ট পাপিষ্ঠ। কিন্তু কমনসেন্সের কানকথায় চুপ করে গিয়েছি।

তবে ২০০৩ সালে মিউনিখে কিছুদিনের জন্য এক ভোনহাইমে বাস করতে হয়েছিলো, সেখানে আমি মোটামুটি পৃথিবীর সব মহাদেশের মানুষের বিভিন্ন আচরণ সম্পর্কে অবগত হই। চীন ও ফরাসী দেশের লোকেরা আসলেই টয়লেটের ওয়ান-টাইম ইউজ করে। ওদের বোধহয় ধারণা, প্রতি রাউন্ডে ওদের জন্য নতুন কমোড সরবরাহ করা হবে। আমার ফরাসী প্রতিবেশী এরিক ফাঘজ হাগলে সেই কমোড পরদিন সকালে পুৎসফ্রাউ এসে পরিষ্কার না করা পর্যন্ত ব্যবহার করার অযোগ্য হয়ে থাকতো। আর হাও চেন আসার পর লোকজন ফ্লোরান্তরী হতো হাগার জন্য। হাও চেন একদিন নিজেও টয়লেট ময়লা বলে অভিনয় শুরু করেছিলো, আমি কুংফুর ভয় ভুলে হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলাম, থিয়েটার করিস না!

হে ঈশ্বর, তুমি চীনাদের পেছনের মডেল পাল্টাও। কুছ কালা হায়।


হাঁটুপানির জলদস্যু

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

এখনোও হাসছি। আপনার মুখের মডেলটা কি? সেইটাও খোদায় ১ পিস-ই বানাইছে।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

নিজের কয়টা হাগাময় স্মৃতি স্মরণ করি শুনেনঃ

১ ... আইইউটিতে যখন প্রথম রুম নিতেছি তখনি বড়ভাইদের সাবধানবাণী শুঞ্ছিলাম, "খবরদার বিদেশীদের ব্লকে রুম নিবা না, বাংগালরা আলাদা ব্লকে থাকবা ... " আমরা তখনো নেহাতি কচিকাচা, জিগাইলাম ক্যান ... ভাইয়েরা কইলো থাকলেই বুঝবা ...

যা হয় সবসময়, চাইর বেকুবে রুম নিয়া দখলীস্বত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়া টের পাইলাম, একপাশের রুমে প্যালেস্টাইনের তিন দামড়া, আরেকপাশের রুমে আফ্রিকার তিন কাল্লু (আমার চেয়ে বেশি না অবশ্য) ... পুরা ব্লকে একটু হাঁটাহাটি কইরা বুঝলাম দশটা রুমের মাঝে আটটাতেই প্যালেস্টাইন, আফ্রিকা আর পাকি পুলাপানের আড্ডা ... এক রুমে খালি দুই বাংগাল খালাতো ভাই আমাদের চেয়েও পাংশু মুখে ঘুরতাছে ...

যাই হোক, তখনো আমাদের বাল গজায় নাই, নিজেদের সান্তনা দিলাম, পৃথিবীর সৌন্দর্য আসলে তার বৈচিত্রে ... মাল্টিকালচার অভ্যস্ত না হইলে কেম্নে কি ইত্যাদি ইত্যাদি ...

পরের দিন ভোর সাড়ে ছয়টায় চাইর বেকুবের ঘুম ভাংলো (আট্টায় ক্লাস উঠ উঠ ইত্যাদি ইত্যাদি) ... প্রথমে গেল বির্জু মহারাজ ... একটু পরে দেখি সে ফিরে এসে খুব গম্ভিরভাবে বইসা আছে, ভাবে মনে হইলো ক্লিয়ার হইয় নাই ... নেক্সট গেল পারভেজ, আসলো কেলাইতে কেলাইতে ... কি ঘটনা? ... কয় গিয়া দেখ, ডাইন্দিকের কোনারটা ... আমি আর ভল্ডু গেলাম ... বোটকা গন্ধ অগ্রাহ্য কইরা ভয়ে ভয়ে ঊঁকি দিয়া দেখি ...

যা দেখলাম সেটার রং ঘন সবুজ (আসলেই সবুজ, হইলদার ছিটাফোটাও নাই) ... আর দৈর্ঘপ্রস্থ নিয়া কিছু না বলি ... তবে সেইটা ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণে ডিকম্পোজ না হওয়া পর্যন্ত সেখান থেকে সরার কোন ঊপায় আছে বলে মনে হইলো না ...

বাথ্রুম থেইকা রুমে ঢুক্লাম, সবাই চুপচাপ ...হঠাৎ ভল্ডু কইলো "শালাগোর পুটকি দিয়া এই জিনিস বাইর হয় কেম্নে? ফুডাডা কত বড়?"

তার পর চাইর বছরে প্যালেস্তাইন আর আফ্রিকার বহুত পুলাপানের লগে খাতির হইছে, বাট যতবারই হালাগো দিকে তাকাইতাম ভোল্ডুর কথাটাই প্রথমে মনে হইতো ...

২ ... (পরে কমু, এখন হাগস চাপস হাসি )

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আপনার তো ভল্ডুর কথা মনে হয়, আমার তো এরপর থেকে আপনার গু"য়ের বর্ণন মনে পড়বে।
খাওয়া-দাওয়ার সময় না হলেই বাঁচি।

সবজান্তা এর ছবি

হিমু লিখেছেন:

হে ঈশ্বর, তুমি চীনাদের পেছনের মডেল পাল্টাও। কুছ কালা হায়।

হিমু ভাইএর এই কথাটা পড়ে, আক্ষরিক অর্থেই আমি হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়ে গিয়েছিলাম !

টয়লেট নিয়ে চমৎকার অভিজ্ঞতা মনে হয় সব পুরুষের জীবনেই কিঞ্চিত আছে।

আমারটাও পরে কোন একদিন শেয়ার করবোখন।
--------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আমি প্যাচাবো কি, ছোট্ট বেলায় আমার কষা ছিল। "পানের বোটা" সহযোগে কাম সারাইতে হইতো (আমার পিতৃদেব সাহায্য করতেন)।

জানেন নাকি "পানের বোটা" টেকনিক?!

থার্ড আই এর ছবি

আরেফিন ভাই বর্ণনা বড়ই রসাত্মক।
২০০১ সালের কথা । ইউনিতে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। আমরা কয়েক বন্ধু মিলে কেওকারাডাং ট্রেকিংএ গিয়েছিলাম। আমার এক বন্ধু ছিলো হাইকিংএর ওস্তাদ!! সে বলেছিলো একটাই সমস্য বড় বেশী হবে , সেটা হলো টয়লেট !! পাহাড়ে কোন টয়লেট নাই , উন্মুক্ত প্রাকৃতিক টয়লেট ব্যবহার করতে হবে। তাই প্রচুর পরিমান ওয়েট টিস্যু নিয়েছিলাম আমরা।

ঘটনার দিন আমাদের কেউকারাডাংএর পাশের একটি গ্রাম দাজিলিং পাড়ায় রাত যাপন করতে হয়েছিলো। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে যেই আমার টয়লেটে যাবার উপক্রম হলো তখনই দেখি আমার সামনে একদল শূকর । হা হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভাবলাম আমাকে নিশ্চই আগুন্তকের মতো লাগছে এই জন্য এভাবে তাকিয়ে আছে। সে যাই হোক আমি প্রাকৃতিক কাজে রওয়ানা দিলাম... ওমা ...এবার দেখি শুকরের দল আমার পিছু নিয়েছে..! আমি অবাক হলাম ! আমার প্রকৃতির ঢাকের খবর শূকর বুঝলো কিভাবে???

কোন উপায় নেই... লাঠি পেটা করেও তাদের তাড়ানো যাচ্ছেনা। এদিকে আমার বেগ বাড়ছে.... অন্যদিকে শূকরের দলও ভারী হচ্ছে। যেহেতু দার্জিলিং পাড়ার হেড ম্যান ( মাতাব্বর) এর বাড়ীতে আমরা ছিলাম তাই তার বাড়ীর কাছেই চট দিয়ে একটা আবরন তেরী করে টলয়ট বানানো হয়েছে পাহাড়ের উপরে। নাচীর অংশে বিশাল গর্ত । মজার বিষয় হলো এই গর্তে কোন ময়লা নেই। আমি অবাক হলাম !! টয়লেট, অথচ ময়লা নেই !! এটা কি করে সম্ভব !! যখন আমি নিজে শূকরের দল নিয়ে টয়লেটে ঢুকলাম তখন এর মর্ম বানী উদ্ধার করলাম। আমি চটের আড়ালে গেলাম আর শূকরের দল টয়লেটের নিচে তাদের অবস্থান নিয়ে হা করে আছে। ভয়ন্কর অবস্থা !! আমার আর প্যান্ট খুলতে ইচ্ছে করছেনা। মনে হলো প্যান্ট খুললেই বুঝি আমার অন্ড কোষ গুলো ছিড়ে খাবে শূকরের দল!!

ভয়ে ভয়ে চোখ বন্ধ করে আল্লার নাম নিয়ে সাহস করে ট্রাউজার খুলে ফেল্লাম । গরম গরম সকালের নাস্তা পেয়ে শুকরের দল ঘোঁত ঘোঁত করতে করতে চলে গেলো অন্য কোন আগুন্তকের সন্ধানে।

---------------------------------------
জল ভরো সুন্দরী কইন্যা, জলে দিছ ঢেউ।
হাসি মুখে কওনা কথা সঙ্গে নাই মোর কেউ।

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আর শূকরের দল টয়লেটের নিচে তাদের অবস্থান নিয়ে হা করে আছে।

--হাহাহাহাহা...মরে যাচ্ছি

গরম গরম সকালের নাস্তা পেয়ে শুকরের দল ঘোঁত ঘোঁত করতে করতে চলে গেলো অন্য কোন আগুন্তকের সন্ধানে।

-হাহাহাহাহাহা। আমারও কিছু পার্বত্য-অভিজ্ঞতা আছে। পরের পর্বে পাবেন।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

তানভীর ভাইয়ের মন্তব্য প্রতিবেদন
পড়ে মনে হচ্ছে সচলকে হাগাময় করে দিলাম আমি! চারিদিকে দুর্গন্ধ বেরুতে দেরী নাই!!

নজমুল আলবাব এর ছবি

পেটের ব্যাথায় যদি কালকে ঈদের নামাজে যেতে না পারি তাইলে সব গুনাহ নিশ্চিতভাবেই আরেফীন, হিমু,কিংকং আর থার্ড আইয়ের ঘাড়ে বর্তাবে...

আল্লাহ এদের হেদায়েত কর।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আল্লাহ এদের হেদায়েত কর।

-আমিন!

থার্ড আই এর ছবি

ছুম্মা আমিন............

যাদের সুন্নত পড়া বাকী আছে চার রাকাত কাবলা জুম্মা পড়ে নিন।
-------------------------------------
জল ভরো সুন্দরী কইন্যা, জলে দিছ ঢেউ।
হাসি মুখে কওনা কথা সঙ্গে নাই মোর কেউ।

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

রেনেট এর ছবি

কাগজে কলমে মুগ্ধতা জানিয়ে গেলাম আরেফীন ভাই, সচলায়তনে আমার প্রথম ভালো লাগা লেখা।
আপনার এরকম বিপর্যয় আরো ঘটুক দেঁতো হাসি
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

অকুতোভয় বিপ্লবী এর ছবি

আমি একটু শেয়ার করি দেঁতো হাসি

আমার এই অভিজ্ঞতাটা ভারত ভ্রমণের সময়। আওরঙ্গাবাদ থেকে ট্রেনে করে কলকাতা আসতে লাগে ৩৬ ঘণ্টার চেয়ে একটু বেশি সময়। এই দীর্ঘ সময় তো আর না হেগে পারা যাবে না। তাই যাব না যাব না করতে করতেও একসময় টয়লেটে যেতে হল আর কি।
টয়লেট মোটামুটি পরিষ্কার ছিল, যতটুকু না হলেই নয়। আমি অবশ্য সেটাও আশা করিনি, টয়লেটে ঢুকেছিই নিঃশ্বাস বন্ধ করে খাইছে
যাই হোক, মোটামুটি পরিচ্ছন্ন টয়লেটের দেখা পেয়ে আনন্দে এতটাই আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম যে, হাগার পর দেখলাম শালার কোন বদনা জাতীয় মাল নেই সেখানে, প্রকৃতির অবারিত আহ্বানে টিস্যু বাবাজিকে আনতে ভুলে গিয়েছিলাম। এখন কী যে করি ! টেনশনে পড়ে গেলাম খাইছে
দেখি পানির কল হল অন্যরকম, যেটায় হাত দিয়ে উপরে তুলে ধরে রাখলে ছ্যাড় ছ্যাড় করে পানি আসে। মর জ্বালা ! এমন করলে পুটু ধুই কেমন করে !

অতঃপর বেশ কয়েক মিনিট অসহায়ের মতন চিন্তা করে শেষমেশ এক হাতে কলের লিভার তুলে ধরে রেখে ট্রেনের অসামান্য ঝাঁকুনি ম্যানেজ করে পুটুখানা কলের জলের ধারার নিচে পেতে দিয়ে অন্যহাতে ক্লিন করলাম, জানটা বের হয়ে গেছে এক্কেবারে মন খারাপ #:-S

------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।