মসজিদ-উল-পোলাপাইন

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি
লিখেছেন লুৎফুল আরেফীন (তারিখ: শনি, ২৯/১২/২০০৭ - ১২:১৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দেশে থাকতে জুমার দিনটা নামাজ পড়া হতো মোটামুটি নিয়মিত হারে। দ্বীনের টানে হোক আর পাড়াতো বন্ধুদের সাথে মিলিত হবার আগ্রহেই হোক, হতো। লক্ষ করেছি যে, মসজিদে একটু বুড়ো ধরণের লোকদের আনাগোনা বেশী থাকে। পাড়ার কেউ রিটায়ার্ড করলেই ধরে নেবেন যে, অত্র এলাকার মসজিদ কমিটির মেম্বার সংখ্যা আরেকজন বাড়লো। তাৎক্ষণিকভাবে না হলেও পটেনশিয়াল দৃষ্টিকোণ থেকে এটা একটা ধ্রূব সত্য। আর এই সকল মুরুব্বীদের চোখে আমরা পোলাপাইনেরা ছিলাম আজীবনের অনাকাংখিত। আমরা নাকি মসজিদে বসে রাজ্যের কথাবার্তা বলি। তাই আমাদের জায়গা ছিল বাধাধরা পেছনের লাইনে। আমরা কলেজ বা ইউনিভার্সিটি পড়ুয়ারা আবার একদম পেছনের কাতারটা ছেড়ে দিতাম কচিকাঁচাদের জন্য। কারণ আমাদের বিবেচনায় ওরা কথাবার্তা বলে আরোও বেশী। শুধু কথাবার্তা বললে হতো! সেজদায় গিয়ে নানারকম বিপত্তি সৃষ্টি করতো! সুবহানা রাব্বিয়াল আ—লা ৩বার বলে অপেক্ষা করছি আল্লাহ হু আকবর শোনার জন্য। এরমধ্যে শুনি, আমার ডানপাশের ২ পিচ্চি ফিসফিস করছে,
- আমারে যতোবার কুত্তা বলছিস তোরেও ততোবার যোগ ১
- তুই তার চেয়েও একশো বেশী
- বললামই তো, আমারে যতোবার বলছিস, তুই ততো যোগ ১

অপরজন এই লুপ ফাংশানটা পুরোপুরি বুঝতে পারলো না, কিন্তু যথারীতি রেগে গেল। প্রতিশোধ হিসেবে এই সব অঙ্কের ধার না ধেরে সে সটান এক ঘুষি মেরে দিল অপরজনের বাহুতে। ঘুষিটা মেক্সিকান ওয়েভের মতোন পুরো কাতারে রটে গেল! সেজদা থেকে উঠে দাঁড়ানোর পর টের পেলাম আমি আন্ডা-বাচ্চাদের ক্রসফায়ারে পড়ে গেছি! আমার ডানপাশ থেকে সেই অঙ্কবিদ ফাজিলটা এবার প্রতিপক্ষের ঘুষির শোধ নিতে লাইন থেকে একটু পেছপা হয়ে বাম হাতে আক্রমন চালালো! দূর্ভাগ্যক্রমে সেটা মিস ফায়ার হয়ে আমার পিঠে এসে পরলো! নামাজের মধ্যে কিছু বলতেও পারি না – মারটা হজম করলাম। কিন্তু ঘুষিটা খেয়েই বুঝলাম, রোকনুদ্দৌলা যতোই ভেজাল খুঁজুক, এরা এক্কেবারে পিওর জিনিসই খায়!! সুতরাং এদেরকে সচরাচর আমাদের সিনিয়রদের লাইনে জায়গা দেবার রিস্ক নিতাম না।

আমাদের মতো এই সব ক্ষণজন্মা নামাজীদের মধ্যে মসজিদে নামাজ দ্রুত শেষ করার একটা প্রচ্ছন্ন প্রতিযোগীতা চলতো বরাবর। এই প্রতিযোগীতার গতি তুঙ্গে থাকে একেবারে পেছনের কয়েকটা লাইনে। এরপর গতিটা কমতে কমতে সামনের ২ লাইনের কাছাকাছি গিয়ে একেবারে মরে যায়। এই সব লাইনে যারা নামাজ পড়েন, তাদের সাধারণতঃ বাড়ি যাবার কোনও তাড়াহুরো থাকে না। ওমরকাজ্বা নামক একটা বিশেষ নামাজ এরা আবিষ্কার করেছেন, গোটা জিন্দেগীর সব কাজ্বা নামাজ পড়ে ফেলবার একটা স্কীম। প্রতি ওয়াক্তেই কিছু কিছু করে পড়েন। অপরদিকে, একেবারে পেছনের কাঁতারের নামাজীরা নামাজ শেষে বের হবার জন্য এমনভাবে পাড়াপাড়ি শুরু করে যে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় মসজিদের ভেতরে হয়তো আগুন লেগেছে!

যাহোক, মসজিদের শহর ছেড়ে বিদেশে এসেও ঢাকার মতোই জুম্মার দিনটা মসজিদে যাবার চেষ্টা করতাম শত কাজের মাঝেও। এখানেও জুম্মার দিনে দেখা হতো শহরের বাকি বাঙালীদের সাথে। একটা সাপ্তাহিক মিলনমেলার মতোন ব্যাপার! আমাদের এই মসজিদ গমন লাফ দিয়ে হঠাৎ বেড়ে যেত বিশেষ কিছু সময়। উদাহরণস্বরুপ, রমজানের সময়ের কথা বলা যায়। এর মূল কারণটাও পুরোপুরি ধর্মীয় নয় -- মজাদার ইফতারীর লোভে আমরা মসজিদগামী হতাম এই মাসটাতে। তূর্কী আর আরব মসজিদে গোটা রমজান মাসেই বাদ মাগরিব ব্যাপক খাওয়া দাওয়ার আয়োজন হতো। আমরা ভূখা নাঙ্গার দল ইউনিভার্সিটি বা অফিস শেষে ছুটতাম সেই ইফতারী পাকড়াওয়ের আশায়।

একবার এক পাকি’ মারফত আমরা জানতে পারলাম যে, আরব মসজিদের খাবারের মান নাকি তূর্কীটার চে ঢের ভালো! প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি যে, আরব মসজিদ যেতে হলে আমাদের একটা ট্রেন ধরতে হতো, সেটা শহর থেকে ১০ মিনিটের পথ। উপরন্তু নানাবিধ সন্ত্রাসীকর্মকান্ডে জড়িতদের তালিকায় নাম উঠে যেতে পারে – এই আশঙ্কাতে আমরা বাঙলাদেশীরা সচরাচর আরব মসজিদের পথ মাড়াতাম না! কিন্তু পাকি’টার মুখে নানারকম রসনা উদ্দীপক খাবারের বর্ণনা শুনে আমাদের জ্বীভেও লোল পড়তে লাগলো। সুতরাং এক সন্ধ্যায় আমরা ৪/৫ জনের একটা দল ছুটলাম আরব মসজিদে ইফতারী করার আশায়।
মসজিদে পৌছে আমরা জানতে পারলাম, মাগরিবের পর মসজিদের সেলারে ইফতারীর আয়োজন করা হয়েছে। ফরজটুকু পরার পর প্রতিযোগীতামূলকভাবে সুন্নত পরেই সবাই তীরের বেগে দৌড়ালাম সেলারের দিকে। মেঝেতে ছোট ছোট মাদূর পেতে তবলিগী কায়দায় খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে। আমরা যখন খাবারের জন্য অপেক্ষা করছি তখন এক বসনীয়ান যুবক আমাদের সাথে বসবার অনুমতি চাইলো। আমরা সানন্দে রাজী হলাম! নানাধরণের কথাবার্তার ফাঁকে একসময় খাবার পরিবেশিত হলো। মাদূরের একদম মাঝখানটায় বড় ১টা পাত্রে বিরিয়ানীর মতোন একটা কিছু দেয়া হলো। খাবারটার চেহারা বেশিক্ষণ অবলোকন করার সুযোগ পাইনি। কারণ, তাবলিগী কায়দায় বসলেও খাবার পরিবেশনের পরে জায়গাটা যুদ্ধক্ষেত্রের রুপ নিল।
আমাদের দলে ২জন বিশিষ্ট ভোজনরসিক ছিলেন -- একজন ফয়সাল ভাই (আমরা ডাকতাম মোটা), আরেকজন মোমিন। মোমিন তখন সদ্য দেশ থেকে আগত, রান্নাবান্নার হাতে খড়ি হয়েছে মাত্র! সুতরাং “ঘরে কি খায় না খায়” অবস্থা! যুদ্ধটা লাগলো মূলত এই ২জনের মধ্যে। এদের বদৌলতে খাবার পরিবেশন এবং নিঃশ্বেষ হবার মাঝখানের সময়টুকু মৃদূ ধস্তাধস্তি আর ছুরি-চামচের ঝনঝনানী শুনতে শুনতেই কেটে গেল।

আমরা অপেক্ষাকৃত দূর্বলগোছের পোলাপাইনেরা কয়েক সেকেন্ড যাবৎ দেখলাম যে, মোটা আর মোমিন খাদ্যযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে পরস্পরকে যেন আর চিনতে পারছে না! বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যাগ্র মেদিনী… ধরণের পরিস্থিতি। ভাতের গাঁদার মধ্য থেকে যখনই একটা বড়সর মাংসের টুকরো আবিষ্কৃত হচ্ছে তৎক্ষণাৎ সেটার ওপর হামলে পড়ছে মোটা আর মোমিন। সেই কুরুক্ষেত্রের মধ্যে কাঁটাচামচ নিয়ে এগুনোর ব্যাপারটা সাহসে কুলাচ্ছিল না। যাহোক, কয়েক সেকেন্ড সময়ের মধ্যে বিরিয়ানীর ট্রে খানা দেখলাম ন্যাড়া হয়ে গেলো! আমাদের সাথে আমন্ত্রিত বসনিয়ান যুবক কিছু বোঝার আগেই পুরো ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটে গেল যে, তাকে মন হলো কিছুটা হতচকিয়ে গেছে! সারাদিন রোজা করে সে বেচারাও যথার্থই ক্ষুধার্ত। তারপরেও হাসিমুখে বললো, এখানের নিয়ম হচ্ছে ২বার খাবার দেয়া। অর্থাৎ খালি হয়ে গেলেও সমস্যা নেই, আরোও খাবার আসবে!
যুদ্ধক্ষেত্রে রসদের এই প্রকাশ্য আগমনী বার্তা দিয়ে যুবক নিজের উপকার তেমন একটা না করতে পারলেও আমাদের দলের ২ পালোয়ানের বিরাট উপকার করে ফেললো!
যুবকের কথা ঠিক। খাবার শেষ হতেই একজন এসে খাবারে পাত্রটা রিফিল কর দিয়ে গেল। এবারে আশান্বিত হয়ে বসনিয়ান যুবক তার কাঁটা আর ছুরি সমেত বিরিয়ানীগামী হলো। কিন্তু এবারেও মোটা আর মোমিনের যুগপৎ চামচ আক্রমনের কাছে করূণভাবে হার মানতে হলো বেচারাকে! উপরন্তু আমরা ছাপোষারাও এবারে আর গতবারের মতো উচ্ছিষ্টভোগী হতে চাইনি। ফলে আমাদের সাথে আহারপর্ব সুখকর হবে না বুঝতে পেরে যুবক এবার অন্য একটা দলের সাথে ভীড়ে গেলো।

আমাদের এই ক্ষুধার স্বরুপ আরবরা সম্ভবতঃ মনে রেখেছিল। পরের বার রমজানে আরব মসজিদে গিয়ে দেখলাম, শুকনো বিস্কুট আর কেক দিয়ে ইফতারীর ব্যবস্থা করেছে ওরা! আমরা এখনও মনে করি যে, পাকীস্তানী, ইন্ডিয়ান আর বাঙালদের যৌথ আক্রমনের কারণে ওদের কমপ্লিমেন্টারী বাজেটে সম্ভবতঃ বিপর্যয় ঘটে গিয়েছিল! নইলে এক লাফে বিরিয়ানী থেকে বিস্কুটে কেন নামবে?!

আরেকদিনের ঘটনা। বিদেশ বিভূঁইয়ের রীতিনীতি, আচার-প্রথা ইত্যাকার ব্যাপারগুলো ১০০% মানিয়ে চলা খুবই কঠিন। শুনেছি যে, তূর্কিরা নাকি একটু দেরীতে ইফতার খোলে। আমরা যারা তূর্কি মসজিদের ইফতারীর রেগুলার ভোক্তা ছিলাম, এই নিয়ম তারা অনুসরণ করলেও মাঝে মধ্যে ভুলচুক হতো। একবার আমরা কতক এইরুপ অভাগা গেছি তূর্কি মসজিদে ইফতার করতে। নিয়মানুযায়ী, খোরমা আর খেজুর দিয়ে ইফতার খুলে সবাই নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। নামাজ শেষে ভোজের ব্যবস্থা। সেদিন মোমিন আর ফয়সাল জুটি বাঁধতে পারে নাই। অর্থাৎ শুধু ফয়সাল ভাই (মোটা) আমাদের সাথে ছিলেন। সুতরাং সবার মনে কিছুটা স্বস্তির ভাব বিরাজ করছিল - আর যাইই হোক এদের ২জনের খাদ্যযুদ্ধের বলী হতে হবে না! কিন্তু বিপত্তিটা ঘটলো আরেক জায়গায়। মোটা ফয়সালের ওসওয়াসায় পড়ে আমরা সবাই সেদিন আযানের আগেই খেজুর খেয়ে ফেলেছি! যখন বুঝলাম যে, এদের নিয়মে সেটা ভুল হয়েছে, তখন মানে মানে চেপে গেলাম। বসে রইলাম আযানের জন্য। কিঞ্চিৎ পরেই ওযুর পানি মুছতে মুছতে মসজিদে ঢুকলো টিটু ভাই। জিজ্ঞেস করলো, ইফতারীর টাইম হইছে কি না। আমি ভেবে দেখলাম, লেজ যেহেতূ কাটা পড়ছে, সবারটাই পড়ুক। বললাম, “কখোন! খান, তারাতারি খান”। ফয়সাল ভাইও সায় দিলেন।
শুনেই টিটুভাই দ্রুত খেজুর মুখে দিলেন। ভাগ্য খারাপ ওনার। ঠিক সেই সময় অকুস্থলে ঈমাম সাহেব এসে হাজির, টিপু ভাইয়ের হাতে অর্ধেক খাওয়া খেজুরের ভগ্নাংশ। ঈমাম সাহেব বিরক্তিমূলক চাহনী দিয়ে টিটু ভাইয়ের দিকে এমনভাবে তাকালেন, যেন ভস্ম করে ফেলবেন! টিটু ভাই কিছুই না বুঝে হালকা হাসি দিয়ে হ্যালোটাইপ একটা চাহনী ফেরত দিলেন। এতে অবস্থা নিয়ন্ত্রনের আরোও বাইরের চলে গেল! ঈমাম সাহেব মহা বিরক্ত হয়ে বিরবির করে কি যেন একটা বললেন। আমরা কেউ সেটা না বুঝলেও ভাবগত অনুবাদটা সহজেই করে ফেললাম – “ঐ বেকুব! খেজুর যে খাইলি, আযান হইছে?! আযানের আগে কেউ খেজুর খায়?!”

এই ঘটনার পরে টিটু ভাই ১বার ফয়সাল ভাইয়ের দিকে তাকান, আরেকবার আমার দিকে। আমরা যারা পাশে থেকে এই তূর্কি-ঝারি খাওয়ার দৃশ্য দেখছিলাম তারা হাতের মধ্যে খেজুরের বিচিখানা (কারণ খেজুর তো সব্বাই খেয়েছি!) এমনভাবে আঁকড়ে রাখলাম যে, ঈমাম সাহেব দূরে থাক, নিজেরাও ভুলে গেলাম যে, কিছুক্ষণ আগে বিচিযুক্ত কোনও ফল ভক্ষণ করেছি! এরপর থেকে তূর্কি মসজিদে গেলেও আমরা আত্মরক্ষার্থে পেছনের কাতারে বসতাম, কবে আবার ঈমাম সাহেবের রোষানলে পড়ি! পেছনের কাতারটা চিরকালই যেন আমাদের মতো কুলাঙ্গারদের জন্য বরাদ্দ হয়ে গেল!


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি
নিঝুম এর ছবি

ইক্রা কুল্লা হেব্বা খআইরু...মানে ...চরম হইসে...
---------------------------------------------------------
যাগায় খাইয়া যাগায় ব্রেক...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

খাইছে!!

নিঝুম এর ছবি

আরবী টা ভুয়া(বানায়া লেখসি,মেট্রিক পরীক্ষায় যেমন লেখসিলাম)।বাংলাটা সত্য...

--------------------------------------------------------
যাগায় খাইয়া যাগায় ব্রেক...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

স্বরচিত আরবী লেখার প্রতিভাটি আপনার অভিনব। আপনার আগের লেখাতেও লক্ষ্য করেছি।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

নিঝুম এর ছবি

আর কইয়েন না।ছোটবেলায় হুজুর বাসায় আসলে একটা বেত সামনে নিয়া আমারে,আমার ছোট ভাইরে আর আমার ছোট বোনরে আরবী পড়াইত।আর তার মিন মিনে গলা দিয়ে কিছুক্ষন পর পরি খেঁকিয়ে উঠত "ওই জোরে পড়,কইতাছি...জোরে পড়"

আমার ছিলো মাইর হজম করার চরম প্রতিভা।আমি চিপায় বইসা খালি ঝিমাইতাম।আর বেতের সপাং সপাং বাড়ী পরলে লাফায়া ঝাপায়া উলটা পালটা পড়া শুরু করতাম।আমি তখনি একটা জিনিষ দেখসিলাম ভুল পড়লে হুজুর ধরতে পারত না কিন্তু আস্তে পড়লেই মাওলানার যত রাগ।
গাছের মালির যদি এই দশা হয় তাহলে তাইলে বুঝেন ফুল(চামে দিয়া নিজেরে ফুল বললাম) গুলার কি হবে?

পরে অবশ্য অন্য হুজুরের কাছে পইড়া কুরআন শরীফ আল্লাহর রহমতে কিছু না বুইঝাই খতম দিসিলাম।কিন্তু বদঅভ্যাস টা থাইকাই গেলো।উলটা পালটা আরবী বলা ছাড়তে পারি নাই...

ইন্না কানা বি তাহসালু খোদা....মানে...নিশ্চই আল্লাহ আমাকে মাফ করে দিবেন
---------------------------------------------------------
যাগায় খাইয়া যাগায় ব্রেক...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

ভাইরে! ছোটবেলায় পরীক্ষাতে আমিও হাদিস এর বাণী বানায়া লিখছি!! আল্লাহ মাফ করুন!! হাসি

ইসলামিয়াত স্যারেরাও এই পাপের ভাগিদার, উনারা কোটেশান গুইণা নাম্বার দিতেন..!

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

রসালো বর্ণনা।
নামটাও চমৎকার: মসজিদ-উল-পোলাপাইন গড়াগড়ি দিয়া হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

ধন্যবাদ!

কনফুসিয়াস এর ছবি

গুল্লি
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমি কিন্তু সবার আগেই লেখাটা পড়ছিলাম। (যখন পঠিত সংখ্যা ছিল ১)। পড়ে দেখলাম আপনিই সেই শৌচাগার বিষয়ক লেখার লেখক। মন্তব্য করতে দেরী হল-- এই যা।
(বিপ্লব)

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

শৌচাগার দেখি হিট!
২য় পর্বটা লেখা শেষ করা লাগবে মনে হচ্ছে হাসি

আপনাকে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

মুজিব মেহদী এর ছবি

দারুণ হয়েছে। এত মজা করে লেখনে কেমন?
বসনীয়ান যুবকের জন্য মায়া হলো। বেচারা।
...................................................................
অসংখ্য 'নেই'-এর ভিড় ঠেলে
জ্বলজ্যান্ত 'আছে' খুঁজে পাওয়া হলো আসল ফকিরি

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞ।
বসনীয়ান যুবকের জন্য মায়া আমাদেরও হয়েছিল সেদিন, কিন্তু আমরা ছিলাম দূর্বল রাষ্ট্র!!
আমরাও যে সেদিন খেতে পেরেছি ,সেটা ছিল আমাদের সৌভাগ্য!

kungo thang এর ছবি

bhalo laglo

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ!

ঝরাপাতা এর ছবি

ইয়া হাবিবি, বহুত খুব।

* * * * *


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

হিমু এর ছবি

দেখলেন লোকজনের কারবার? মসজিদ নিয়ে লেখার পরও কিন্তু আপনার নাম ফাটলো শৌচাগার নিয়ে। এ-ই হয়।


হাঁটুপানির জলদস্যু

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

রোগটাই ছড়ায়, স্বাস্থ্যটা নয়!

নজমুল আলবাব এর ছবি

মজাদার হইছে। একেবারে ইফতারির লাহান।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

কোরবানীর গরুর গোস্তর মতোন না?

তানভীর এর ছবি

লেখাটা আগে চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। এই মোটা ফয়সাল কি চিটাগাং-এর? উলমে গেছিল পড়তে? ওরে তো চিনি আমাদের সাথে চট্টগ্রাম কলেজে পড়ত...কলেজ গ্রুপের মেইলে পোস্টের লিঙ্কটা তাইলে দিতে হয় চোখ টিপি...পোলাডা জার্মানী গিয়াও শান্তি পাইলো না...আহহারে

========
"পুনরায় রৌদ্রহীন রৌদ্রে আমি, পথহীন পথে"

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আপনার অনুমান পুরোপুরি সত্যি!
আমি তারে বড়ই ভালো পাই। আমার উলম জীবনের সবচেয়ে ফাটাফাটি বন্ধুদের একজন।
উলমের পোলাপানদের একটা ফোরাম আছে, সেখানে আমার কাজই হচ্ছে সবাইরে পচানো। আমার কিছু কুক্ষ্যাতি আছে এই লাইনে। চোখ টিপি

তানভীর এর ছবি

আমরাও হেরে বড়ই ভালা পাইতাম। পোলাডা সাত চড়েও রা করত না। খালি গাল ফুলায়ে বইসা থাকত। শুনছি সে নাকি খাওয়ার সাথে সাথে এখন রন্ধন শিল্পেও বিশেষ পারদর্শীতা অর্জন করছে (হাসিব এই তথ্য দিছে হো হো হো )

========
"পুনরায় রৌদ্রহীন রৌদ্রে আমি, পথহীন পথে"

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

ঘটনা পুরোপুরি সঠিক।
উলমের বিশিষ্ট রন্ধন শিল্পীদের মধ্যে ওনারে গুণতেই হবে।
হাসিব ভাই মুরগী আর হাস যথাথয়ই ভালো রাঁধেন।

মোটা (আমি ফয়সাল ভাইরে এই নামে ডাকি) অবশ্য সবকিছুই খুব ভালো রাঁধেন।

আড্ডাবাজ এর ছবি

মজাই লাগল। ধন্যবাদ।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

এতোদিন পরেও কেউ পড়ে আনন্দ পাচ্ছে!
ব্যাপারটা উপভোগ্য।
আপনাকেও ধন্যবাদ।

ফারলিন এর ছবি

আমারে যতোবার বলছিস, তুই ততো যোগ ১.. killer !!

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

হাহাহা!
তাইলে বলেন, এরকম পরিস্থিতিতে না হেসে নামাজ চালিয়ে যাওয়াটা কতোটা চ্যালেঞ্জিং ছিল আমার পক্ষে!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।