১.
ঘটনা প্রথমে কেউ বিশ্বাস করতে পারে নাই। পরে শেফালিকে কাঁদতে দেখে কারো আর বুঝতে বাকি নাই। ২ বার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছে শেফালি। মতি মেম্বার আর পাড়ার লোকদের গুষ্টি উদ্ধার করেছে কাঁদতে কাঁদতে। এতে কি আর লাভ আছে?! মতি মেম্বারের সম্পর্কে গ্রামের সবাই জানে। অপকর্মের ধারি, কিন্তু তার বিরুদ্ধে বলার লোক কই? লোকটা দিনকে দিন আরো ভয়ঙ্কর আর ক্ষমাতাশালী হয়ে যাচ্ছে। বয়স পঞ্চাশের কাছে। মেহেদি লাগানো চুল দাঁড়ি। কালো মখমলের নৌকার মতোন টুপী। যখন মেম্বার ছিল না তখন কিছু লোক একত্র হয়ে একবার প্রতিবাদ করেছিল। সেটা তেমন হালে পানি পায় নাই। আর এখন তো আর সেটাও হয় না। উপরন্তু মেম্বার হয়ে যাওয়ায় সবার ওপরে লাঠি ঘোড়ায়।
শেফালির ভাই আছে ২ জন। ২ জনেই থাকে বিদেশে। একজন সৌদিতে। আরেকজন দুবাই। দেশে শেফালি বাবা-মায়ের সাথে। পরিবার চলে ২ ভাইয়ের টাকায়। কখনও সৌদি থেকে টাকা আসে, কখনও দুবাই থেকে। শেফালির বাবা ঠিক করলেন, পরেরবার ছেলেরা কেউ দেশে আসলে বিচার চাইবেন মেম্বারের বিরুদ্ধে। এতো বড় অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না।
২.
বড় ছেলে ফিরলো সৌদি থেকে। শেফালি ভাইকে পেয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো। পুরোনো কষ্ট জেগে উঠলো। বাবা-মা কেঁদে কেটে বিচার চাইলো, কিছু একটা কর বাবা! বড় ভাই ক্ষেপে টেপে বললো এর বিচার করবে। ২/১ বার একে ওকে বললো, লোক জড়ো করলো। অনেক হৈ চৈ হলো বিষয়টা নিয়ে। কিন্তু মতি মেম্বারের বিচার হলো না। বড়ভাই এক মাসের মতোন রইলো গ্রামে। চলে গেলেন আবার।
ছোটভাই এলেন পরের মাসে। অনেকদিন দুবাই থেকে ওদের মতোই চেহারা হয়েছে ছোট ভাইয়ের। নাদুশ নুদুস। চোখে সুরমা দেন। ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি রেখেছেন। পয়সাও নাকি ভালোই করেছেন।
গ্রামের বাড়িতে ঘর উঠেছে ২ ভাইয়ের টাকায়। পাকা ঘর। চারপাশে দেওয়াল উঠেছে। বাড়ির অবস্থা ভালো – এটা সবাই বেশ বুঝতে পারে। কিন্তু বোনের ঐ একটা গ্লানি। আজও বোন কাঁদে। ছোট ভাই এসবে কান দেয় না। কদিন পরে চলে যায় সেও।
৩.
দুই ভাইয়ের ব্যস্ততা বাড়ে। তাদের নিজেদের পরিবার হয়েছে এখন। তারা পরিবার নিয়ে অনেক ব্যস্ত। এদিকে মেম্বারের দাপট দিন দিন বারে। ভোটের সময় মেম্বার বাড়ির ওপরে আসে ভোট চাইতে। সাথে অনেক লোক-লষ্কর। মেম্বার ভোট চায় আর বিশ্রীভাবে হাসে। শেফালির দিকে তাকিয়েও ভোট চায়। শেফালি ঘৃণা ভরে চোখ ফিরিয়ে নেয়। সেটা কেউ খেয়াল করে বলে মনে হয় না। সবাই মেম্বারকে হেসে বিদায় দেয়। শেফালি অবাক হয়। কারো কি মনে নেই নাকি?! এই তো সেদিনের ঘটনা।
মনে রাখবে কি করে?! আজকাল মেম্বারের সাথে আদমের ব্যবসা শুরু করেছে ছোটভাই। জমজমাট ব্যবসা। সেই সূত্রে আজকাল আরোও বেশী বাড়ির ওপরে আসে মেম্বার। সময়ে অসময়ে। সেদিন রাতেও এলো। ২ ঘর পরেই বাবা-মায়ের ঘর। ওরা জানলোও না যে মেম্বার এসেছে। জানলো শেফালি। ঘরে সে একা। মেম্বার ঘরে ঢুকে ভণিতা করে না। সরাসরি কাপড়ে হাত দেয়। টান মেরে খুলে নেয় সব কিছু। লাল পেড়ে সবুজ শাড়ি ছিটকে পরে একপাশে। সাথে জমা হয় মখমলের টুপি। সাদা পাঞ্জাবী। কালো কোর্তা। সব শেষে সাদা পাজামা। শেফালি চিৎকার করে না। আগেরবার চিৎকার করলেও শুনতে পায় নাই বাবা মা কেউই। ওদের ঘুম অনেক গভীর … …
বি.দ্র. লেখাটির সাথে কেউ কেউ আমার এই লেখাটির ভাবগত মিল পেতে পারেন। আসলে "বড়দের ঈশপের গল্প" শিরোনামটি আমার নিজেরই খুব পছন্দের হওয়াতে এই শিরোনামে গল্পটি লেখার ইচ্ছেটা পূর্ণ করলাম। আর তাছাড়া এই বিশেষ মাসটিতে লেখার জন্য উপযোগীও মনে হলো এই গল্পটিকে।
মন্তব্য
হুম পড়লাম।
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
হুম ধন্যবাদ
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
আপনার গল্প লেখার হাত দিন দিন পলিনোমিয়াল হারে পেঁকে যাচ্ছে- সেটা কী জানেন?
জাঝা
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
তা আর বলতে!
পলিনোমিয়াল রেটে বয়স ও কি বাড়ছে?!
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
ঝরঝরে গদ্য।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
হু একটু বেশী ঝরঝরে, কারণ গল্পটার আড়ালে আমি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীটা তোলার চেষ্টা করেছি।
কাঁচা স্যাটায়ার এরকমই হয়, সামনের গল্পটা খুব ন্যাড়া থাকে পেছনেরটাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে।
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
- হুরমতি বু'র কথা মনে আছে? শেফালীদের ঐরকম করে একটা করে ব্লেড সঙ্গে রাখা উচিৎ, তখন কিংবা এখন। মেম্বার, চেয়ারম্যান যেই আসুক জায়গামতো ঘ্যাচাং!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আছে না?! ভুলি ক্যামনে?!
আমরাই তো ... ...
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
ইস দেশে কত মেয়ে আছে কত অসহায়।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
মুমু, পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মেয়েরা আসলেই অসহায় আমাদের দেশে।
তবে আমি এখানে ঠিক সেই জায়গাটাতে আলো ফেলি নাই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীটা পূণর্ব্যক্ত করেছি।
ঈশপের গল্প সিরিজে বরাবর তাইই করার চেষ্টা করবো।
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
স্বার্থের জন্য আমরা কত নীচে নামতে পারি!
আমাদের পক্ষে সব ই সম্ভব।
ঠিক তাই, এটাই বলতে চেয়েছি।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
দারুন লাগল বস...
সিরিজটাই ঝাক্কাস
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
ধন্যবাদ।
ছেঁড়া স্যান্ডেল ক্যানো বাপ?!
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
ভালো লাগলো।
হাঁটুপানির জলদস্যু
আমি ধন্য!
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
সিরিজটা চলুক।
এই পর্বের ঈশপের গল্পের নীতিকথা হতে পারে ধুগোর এই বাক্যটি: "শেফালীদের ঐরকম করে একটা করে ব্লেড সঙ্গে রাখা উচিত।"
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
সবাই ব্লেড সাথে করে নিয়ে ঘুরতে শুরু করলে আবার দেখা যাবে আমাদের ব্যবসায়ী সমাজ ঐ ব্লেডের কাটতি বেশী বুঝে দাম বাড়িয়ে দেবে।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
ভালো লেগেছে ।
সিরিজটায় চোখ রাখবো নিয়মিত ।
শিমুল, আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনার লেখাতেও আমি নিয়মিতই চোখ রাখি।
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
শুকরান ।
নতুন মন্তব্য করুন