১.
- বাবা তুমি কিন্তু এখনও আমাকে প্লে-ষ্টেশনটা কিনে দিলে না।
- দেব তো বাপ, ধৈর্য ধরো
- ধরেই তো আছি। ভালো রেজাল্টের কথা বলছিলা, সেটাও করছি। তুমি বিট্রে করছো।
- না রে বাপ, বিট্রে করি নাই। যেকোনও দিন কিনে দেবো। হাতে কিছু টাকা আসুক।
- ধ্যুত্ টাকা পেলে তো খালি জমি কেনা। জানি না? এতো জমি দিয়ে কি হয়?
রাজিবের রাগ হয়। গজগজ করতে করতে চলে যায় পাশের রুমে।
বাড়িটা সরকারী। অনেক বড়। মোটের ওপর ৬ খানা রুম আছে। সবই বিশালাকার। রাজিবের রুমটাও অনেক বড়। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই বাড়ির ভেতরের শান-শওকাত। রাজিব রিমোট কন্ট্রোলের বোতাম চেপে কাজের মেয়েটাকে ডাকে। বেল বাজার খানিক পরেই মেয়েটা এসে হাজির হয় হাত মুছতে মুছতে।
- রাজিব ভাইয়া কি কইবেন কন। মেলা কাম আছে।
- জিমির খাবার দিয়ে যা
- অয় তো খাইছে একটু আগেই।
- যা বললাম কর। জিমি খাবে।
- আচ্ছা। খালি খাওয়ান আর হাগান।
কাজের মেয়েটার দিকে অগ্নিদৃষ্টি হেনে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় রাজিব। কাছে ঘেঁষে দাঁড়ায় দামী জার্মান শেফার্ড। গায়ে শ্যাম্পুর গন্ধ। অনবরত মাথাটা দুলিয়ে দুলিয়ে সে রাজিবের আদর নিতে সচেষ্ট হয়। কিন্তু রাজিবের সেদিকে মন নেই। প্লে-ষ্টেশনের শোকে সে কাতর আজ অনেকদিন যাবৎ। মনে মনে দোয়া পড়তে থাকে যেন বাবার হাতে দ্রুত কিছু টাকা আসে। জিনিসটা তাকে কিনে দেয়।
২.
দোয়াটা এভাবে কবুল হোক সেটা রাজিব চায় নাই। কিন্তু হয়ে গেল। ২৪ জন লোক মারা গেছে! ইস্। রাজিব খুব দুঃখিত হয়। টিভিতে ওদের ছবি দেখে মনটা আরোও খারাপ হয়ে যায় তার। বাবাকেও দেখেছে, সাক্ষাৎকার দিতে। জানে, বাবা হয়তো আজকে রাতেই বলবে - রাজিব, চলো আমরা কালই তোমার প্লে-ষ্টেশন কিনতে যাবো। আগেরবার, এরকম একটা দুর্ঘটনার পরই বাবা তার আইপডের শখটা মিটিয়েছিলেন।
কিন্তু আজ রাজিবের মনটা ভীষণ খারাপ হয়েছে। এবারে সে যাবে না বাবার সাথে। এখন তো আর সে ছোট্ট নেই। বুঝতে পারে স-ব। আর বুঝে শুনে এটা সে করতে পারে না। সেদিন মামা বাড়িতে গিয়ে বড়দের বেশকিছু কথাবার্তা কানে এসেছে। সবাই বাবার নামে কি সব বলছিল। মা খুব কাঁদছিলো। বাবার প্রতি রাজিবের মনটা কেমন বিষিয়ে যায়। বাবা কি সত্যিই এমন?
৩.
পাশের ঘরে রাজিবের বাবার মোবাইল ফোনটা বাজতে থাকে। তার কথাগুলো শোনা যায় এ ঘর থেকেও।
হ্যালো। জ্বী বলেন …. জ্বী থ্যাঙ্ক য়্যু। না না ক্যাশ বেটার। লোক পাঠাবো নে’ আমি …. শোনেন, ইন্স্যুরেন্সের লোককে সব ঠিকঠাক বলবেন। আপনার কথা আর আমাদের কথায় যেন ফারাক না হয়। … কাল-পরশুর মধ্যেই রিপোর্ট দিয়ে দেবো। আশা করি কোনও সমস্যা হবে না। … … সেটা তো হবেই। এতোগুলো শ্রমিক মারা গেল। আরেকটু সাবধান হতে পারতেন। ওদের ক্ষতিপূরণটা দিয়েন ঠিকঠাক। গরীব মানুষ। টাকা তো অনেকই পাবেন।… আরেকটা কথা। ব্যবসায় লস যাচ্ছিল এটা কোনওমতেই প্রকাশ করা যাবে না। লস হইলেই আগুন – এই জাতীয় থিওরী বাজারে চালু হয়ে গেলে প্রবলেম! মনে থাকে যেন। … জ্বী জ্বী … খোদাহাফেজ।
ফোনটা রেখে সে রাজিবকে ডাক দেয় 'রাজিব'।
'আসছি' বলে রাজিব বাবার ঘরের দিকে রওনা হয়। করিডোরটা পার হবার সময় ঝুলিয়ে রাখা ছবিগুলোর দিকে চোখ পরে রাজিবের। সব বাবার ছবি। একটা ছবি রাজিবের খুব প্রিয়। বন্ধুদের আসলেই ওটা দেখায় সে। একজন শ্রমিককে ইট-কাঠের স্তূপ থেকে টেনে বের করার চেষ্টা করছে বাবা। বাবার মাথায় লাল হেলমেট। গায়ে খাকি পোষাক ঘামে ভেজা। অদূরে দাঁড়ানো ফায়ার সার্ভিসের বিশাল গাড়ি থেকে পানির নল নিয়ে ছুটছে কয়েকজন কর্মী। ছবিটা বাবাকে একজন সাংবাদিক উপহার দেন। এই ছবিটা যতোবার দেখে ততোবারই বাবাকে নিয়ে গর্ব হয় রাজিবের! কিন্তু আজকে কেন জানি সেটা হলো না। বাবাকে এই কথা বলতে পারবে সে? ভাবতে ভাবতে সে দ্রুত আগায় বাবার ঘরের দিকে।
ছবি-সূত্র: ইন্টারনেট
মন্তব্য
ভাল লাগলো গল্পটি। এমনি করেই আমাদের চোখের সামনের সুন্দর মানুষগুলো অসুন্দর হয়ে যায়!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ধন্যবাদ ভাই, আপনি সুন্দর মানুষটাকেও দেখতে পেরেছেন বলে।
মানুষের শেষ বিন্দুটুকুও ধারন করে না এমন হোমো সেপিয়েন্স নেই বলেই আমারও ধারনা।
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
ভালো লাগলো।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
খুশি হলাম। ধন্যবাদ
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
— ঠিকাছে।
বাস্তবের রাজীবরা অবশ্য তেমন বিদ্রোহ-টিদ্রোহ করে না।
কি মাঝি? ডরাইলা?
একটা উদাহরণ তাহলে দেওয়া হলো। রাজিবরা শিখতেও পারে
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
বাস্তব থেকে দূরে নয় বলেই মনে হয়।
চমত্কার লাগলো।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিজেকে জয় করার অর্থ বিজয় না পরাজয়?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
না দূরে নয়। আমি অল্প-বিস্তর নিশ্চিত।
মিয়াভাইকে ধন্যবাদ। আপনার অনুগল্প জোস লেগেছে সঙ্কলনে টিপক হইলো না কি!)
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
আমি একটু কনফিউজড, মানে প্রতিটা দুর্ঘটনায় রাজীবের বাবার ভূমিকাটা ভালো বুঝতে পারি নি।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
১ম কথা, প্রতিটা ঘটনাই দুর্ঘটনা নয়। না হওয়াটাই বেশি বাস্তব সম্মত হবে।
২য় কথা, রাজিবের বাবার ভূমিকা না হলেও অন্ততঃ রাজিবদের বাবাদের ভূমিকা থাকে সেই ঘটনাগুলোতে।
বোঝাতে পারলাম নাকি যেই লাউ ... ..
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
জটিল!
খুব ভালো লাগল।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
পরিবর্তনশীল, আপনাকে ধন্যবাদ।
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
গল্পটা একেবারে অলৌকিক নয়, কি বলেন?
ধন্যবাদ কমেন্টানোর জন্য ..
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
নতুন মন্তব্য করুন