রাত-১
বিভৎস একটা দুঃস্বপ্নে ঘুম থেকে উঠে বসলাম, গলা শুকিয়ে গেছে, পাশেই রাখা জলের বোতলটা থেকে জল নেয়ার মতো অবস্থাটাও নেই, যেনো শেকড় গজিয়ে গেছে শরীরে। কোনমতে কাঁপা কাঁপা হাতে জলের বোতলটা নিলাম, চোখ বন্ধ করে মুখে দিয়ে ঢোক গিলতেই তীব্র যন্ত্রনায় সারা শরীর ফেটে পড়তে চাইলো, জল নয়, যেনো তপ্ত সীসা গলা বেয়ে নেমে যাচ্ছে। চিত্কার করে উঠতে চাইলাম, গলা দিয়ে গোঙানির মতো অস্ফুট কিছু শব্দ বের হয়ে এলো, ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম এবার, বুঝতে পারলাম স্বপ্ন দেখছিলাম।
রাত-২
প্রচন্ড গরম পড়েছে, ঘরের জানালাটা দিয়ে বাতাসটাও যেনো রেশনের চালের মতো মেপে মেপে ঢুকছে, হলদেটে চাঁদটার দিকে চোখ কুঁচকে তাকালাম। সামনের হালকা জঙ্গলে ঢাকা বাগানটায় গাছগুলোর সব অদ্ভুত ছায়া, নিজেকে অলীক পরাবাস্তবতার মাঝে আটকে পড়া এক জন্তু বলে মনে হচ্ছে। হঠাৎ মৃদু বাতাসে পাতাগুলো কেঁপে উঠতে মনে হলো কোনো প্রেতাত্মার দীর্ঘশ্বাস, আজকের রাতটাও নির্ঘুম কাটবে বোঝা যাচ্ছে।
রাত-৩
কালো, রোগা-পটকা, কিম্ভূত চেহারার যে লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে পরম তৃপ্তিতে দাঁত খোঁচাচ্ছে এর নাম "চুন্নু", হ্যাঁ, স্রেফ চুন্নু, এর আগেও কিছু নেই, পরেও কিছু নেই। একে দেখে মনে হচ্ছে দাঁত খোঁচানোর অলিম্পিকে যোগ দিতে যাচ্ছে। প্রচন্ড রাগে মাথার ডান পাশের শিরাটা দপ দপ করছে আমার। এবার চুন্নু মুখ খুললো।
"১০,০০০ লাগবো"
এতো ??
হ এতই, মেশিনের দাম বাড়ছে, ভাড়াও বাড়ছে।
নিবো তো একরাতের জন্য !!
একরাত আর দুইরাত, সব একই রেট।
ঠিক আছে।
সাথে কিন্তু খালি দুই দানা।
চলবে।
এবার কুতকুতে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে চুন্নু, আমার মোটা কালো চশমার ফ্রেমটা হয়তো পছন্দ হয়নি এর, কে জানে। এবার ধীরে ধীরে বলে, "কাহিনী কি? এইসব জিনিস কিন্তু খুবই রিস্কি, আপনের কি কামে লাগবো কন তো?" "সেটা আপনার জানার দরকার আছে কি?"- আমি বিকৃত মুখে বললাম। অনেক কষ্টে জিভের ডগায় এসে যাওয়া অশ্রাব্য গালিটা আটকালাম। "না, তবে সিনেমাতে যেমন দেহেন কাহিনী কিন্তু সেরম না, গুল্লি একবার বাইর হইলে কিন্তু কাহিনী উল্টায় যাইবো কইলাম।" আমি কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে দেখলাম, "জানি, মাথায় গুলি করলে কপালের ঠিক মাঝখানে যে সুন্দর একটা গোল ছিদ্র দেখায় তা পুরো কাহিনী না, গুলি বের হওয়ার সময় খুলির ঠিক পেছনে একটা বড়সড় গর্ত করে দেয়, মগজ আর রক্ত চারিদিকে ছিটকে বের হয়। জিনিসটা মোটেও সুন্দর না।" চুন্নু পুরো কথাটা মুখ হা করে শোনে, আমি একটা বড় প্যাকেট হাতে নিয়ে ওর সামনে থেকে উঠে আসি।
রাত-৪
রাস্তার এইদিকের বাড়িগুলোর চেহারা অন্যরকম, ঝা-চকচকে, আভিজাত্যের ছোঁয়া। এই বাড়িটায় কি করে ঢুকবো এটা বের করতে আমার পাক্কা এক মাস লেগেছে। আজকে অপেক্ষার শেষ। দোতলার ঘরটায় ঢুকলাম। অন্ধকারে দরজার উল্টো দিকের চেয়ারটায় বসে এখন আসল খেলার অপেক্ষা। প্রায় ঘন্টাখানেক পরে পায়ের আওয়াজ। খুলে গেলো সামনের দরজাটা। ঘরে ঢুকে লাইটের সুইচটা অন করতেই আমাকে দেখে চমকে উঠে পিছিয়ে গেলো সে। আমি ইশারায় আমার হাতে ধরা কালো যন্ত্রটার দিকে দেখালাম, চুপচাপ দরজা বন্ধ করে আমার উল্টো দিকে পেতে রাখা চেয়ারটায় এসে বসলো মানুষটা। ঠিক এই মুহূর্তটা অসংখ্যবার চিন্তায় নেড়েচেড়ে দেখতে চেয়েছি, কিন্তু না, এর সাথে কোনো মিল নেই। বাকরুদ্ধ মানুষটা জানে কি জন্য এসেছি আমি, জানে তার সময় শেষ। আস্তে করে উঠে গিয়ে ঠিক কপালের মাঝখানটায় নলটা ছোঁয়ালাম। দেখতে পাচ্ছি কপালের দুপাশ বেয়ে দরদর করে ঘাম পড়ছে তার। মুখে পৈশাচিক একটা হাসি এনে রিভলবার এর হ্যামারটা পিছন দিকে টানলাম, ক্লিক করে একটা শব্দ হলো, রাতের নিস্তব্দতায় সেটাই অনেক জোরালোভাবে শোনা গেলো। মানুষটার চোখ বন্ধ হয়ে গেছে, আলতো করে ট্রিগারটা টেনে দিলাম।
দরজা খুলে বের হওয়ার আগে পিছন ফিরে একবার দেখলাম, চেয়ারে ঠিক আগের অবস্থাতেই বসে আছে সে, বের হওয়ার আগে বললাম, "ভেজা প্যান্টটা বদলে নেবেন, নয়তো গন্ধ ছড়াবে !!!" কয়েক মুহুর্তের বিভীষিকায় থরথর করে কাঁপতে থাকা লোকটাকে দেখে হাসি পেলো।
রাস্তায় কেউ নেই, প্রচন্ড হাসিতে ফেটে পড়লাম আমি, কোনার সঙ্গীহীন কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে উঠলো দুবার। আজকেও আকাশে জন্ডিসে আক্রান্ত সেই হলদেটে চাঁদটা, বাস্তবতার অন্ধকারে হারিয়ে যেতে যেতে নিজেকে হঠাৎ খুব সুখী মনে হলো।
রাত-৫
বিভৎস একটা দুঃস্বপ্নে ঘুম থেকে উঠে বসলাম, গলা শুকিয়ে গেছে, পাশেই রাখা জলের বোতলটা থেকে জল নেয়ার মতো অবস্থাটাও নেই, যেনো শেকড় গজিয়ে গেছে শরীরে। কোনমতে কাঁপা কাঁপা হাতে জলের বোতলটা নিলাম, চোখ বন্ধ করে মুখে দিয়ে ঢোক গিলতেই তীব্র যন্ত্রনায় সারা শরীর ফেটে পড়তে চাইলো....... !!
মন্তব্য
জটিলতা আছে। ভালো।
চরিত্রটিকে একটু খুললে ভালো হতো না। যেমন খানিকটা ব্যাকগ্রাউন্ড দিলে ভালো হত। ভেবে দেখো।
ডাকঘর | ছবিঘর
তাপসদা , আসলে ইচ্ছে করেই চরিত্রটাকে এরকম রেখেছি, প্রতিশোধের একটা ইচ্ছে সবার মনেই থাকে, স্বপ্নে কিংবা বাস্তবে আমরা অনেকেই হয়তো এরকম খুঁজে বেড়াই !! কিন্তু জিনিসটা কখনই পরিষ্কার নয়, আবছায়া মনের মধ্যে হয়তো।
দুঃস্বপ্নের ঘোলাটে ভাবটা রাখতে চেয়েছি লেখায়।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ডাকঘর | ছবিঘর
ঘোলাটে ভাবটা পুরোপুরিই রাখতে পেরেছেন।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ধন্যবাদ
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
এই লিখার এর চেয়ে লাগসই আর কোন শিরোনাম হতে পারত না।
আপনার আগের লিখাগুলি বেশি পড়া হয়নি, শুরু করব দেখি আজ রাতে।
..................................................................
#Banshibir.
ধন্যবাদ|
লেখা ভালো লাগলে জানাবেন, যেকোনো সমালোচনা কাম্য| তবে আমি আপনার "ঐতিহাসিক" লেখাগুলোর ফ্যান| ভালো থাকুন|
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
রহস্যগল্পের প্রায় সমস্ত আমেজ পেলাম। ট্রিগার টেপার সময় যে শব্দ হবার কথা ছিল সেটাও পেয়ে যাচ্ছিলাম প্রায়
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ধন্যবাদ|
হ্যাঁ, ব্যাস, প্রতিপত্তিশালী অত্যাচারী কাউকে সারা জীবনের জন্য এইরকমের একটা ভয় ও অপমান হয়তো অনেকেই করতে চায়,যা বাকি জীবনটা তার মনে থাকবে, আমাদের মনের মাঝে এই প্ল্যান অনেকেরই হয়তো থাকে।
জীবনটাই রহস্যময়|
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
এটা স্বপ্ন, অলীক বাস্তব, গল্প বা দুঃস্বপ্ন কোনটাই নয়। এটা ঘোরতর বাস্তব। একমাত্র ট্যাগে বলা "ব্লগরব্লগর" টার্মটা ঠিক আছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ|
স্বপ্ন ও বাস্তবতার ঘোলাটে মিশ্রনটা প্রতিপাদ্য ছিলো, তাই শিরোনামটা এরকম। বেঁচে থাকাটা অনেক সময়ই দুঃস্বপ্নে পরিণত হয় কিংবা দুঃস্বপ্নটা ঘোর বাস্তবে| আর প্রতিশোধস্পৃহা অনেকেরই থাকে, স্বপ্নে কিংবা বাস্তবে তার প্রতিফলনটাই দেখাতে চেয়েছি|
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ষষ্ঠ পাণ্ডবের সাথে একমত।
ভাল লেগেছে।
ধন্যবাদ।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
স্বপ্নে স্বপ্ন স্বপ্ন-নয়।
এর চেয়েও আরো ভয়ঙ্কর মনে হয়।
ধন্যবাদ|
হ্যাঁ, আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমি বাস্তব নয়, দুঃস্বপ্নের চরম বাস্তবতায় বেঁচে থাকার চেষ্টা করে চলেছি|
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আপনার বর্ণনাভঙ্গি বেশ। একটা থ্রিলার গল্পের আমেজ পাচ্ছিলাম, শেষ-মেষ ক্রোধটাকে আটকায়ে দিলেন যে?
ধন্যবাদ।
ক্রোধ আটকে দেইনি, আসলে দেখুন, চরম পরিনতি কি হতে পারতো? খুন। কিন্তু তাতে সাথে সাথেই জিনিসটা শেষ হয়ে যেত, যেই মানুষটাকে শায়েস্তা করা দরকার তাকে সারাজীবন অন্তর্দহন এ বাঁচতে দেয়ার মতো শাস্তি আর কি হতে পারে। আর এ কারণেই গুলি না করে শুধুমাত্র বন্দুক ঠেকিয়েই জিতে গেলো গল্পের চরিত্রটা।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
দারুণ।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ভালো লাগলো
ধন্যবাদ তানিম ভাই
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
দারুণ!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
অসংখ্য ধন্যবাদ
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
নতুন মন্তব্য করুন