রুদ্ধশ্বাস কয়েক ঘন্টা- একজন মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা

অরফিয়াস এর ছবি
লিখেছেন অরফিয়াস (তারিখ: রবি, ১৩/০৫/২০১২ - ৪:৫৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজকে গ্র্যাজুয়েশন এর শেষ পরীক্ষা ছিলো। স্বাভাবিক ভাবেই আজকের দিনটা অন্যরকম। আমার নরক থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দবার্তা। বিকেলে একটা পার্টিতে যাওয়া হলো, রাতে ফিরলাম হোস্টেলে প্রায় ১২টা বাজে তখন। সবকিছু ঠিক ছিলো, রাত ১টার দিকে জল ভরতে এক তলায় গিয়েছি, হঠাৎ দেখি দৌড়ে আসছে এক ব্যাচমেট। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই বললো, একজন জুনিয়র আত্মহত্যা করার জন্য ছাদে দাড়িয়ে আছে। শোনার সাথে সাথে আমার প্রথম বছরের প্রথম দিনের স্মৃতি চোখের সামনে যেনো ঝলসে উঠলো। আমি যেই রাতে প্রথম বর্ষের ছাত্রাবাসে উঠি, তার পরের দিন সকালে ছিলো আমাদের প্রথম ক্লাস। প্রচন্ড রেগিং (যাদের ভারতের উত্তর প্রদেশের রেগিং সম্পর্কে ধারণা নেই তাদের বোঝার উপায় নেই) এর মাঝ দিয়ে অপরাধীদের মতো দল বেঁধে যখন ক্লাসে যাচ্ছিলাম তখনো জানিনা সামনে কি অপেক্ষা করছে, সেই দুঃসহ কয়েকটা ঘন্টা পার হবার পরে যখন হোস্টেলে ফিরলাম, শুনি, আমাদের এক ব্যাচমেট নিজের রুমে আত্মহত্যা করেছে। সাথে সাথে দৌড়ে যাওয়ার আগেই সব শেষ। এখনও মনে আছে, ব্যাস, কয়েক ঘন্টার মাঝে মিডিয়া, পুলিশ, কলেজের প্রশাসন, আতংকিত অভিভাবক সব মিলিয়ে ভয়ংকর একটা অভিজ্ঞতা। নিজের দেশের বাইরে এসে কলেজের প্রথম দিন এধরনের ঘটনায় হতবাক আমি।পরবর্তী কয়েক ঘন্টার মাঝেই সেদিন ৭০০ ছাত্রের হোস্টেল ফাঁকা হয়ে গেলো, রইলো হাতেগোনা আমার মতো ২০-৩০ জন। এই স্মৃতি এখনও খুব একটা পুরনো হয়নি।

তাই আজকে এই কথা শুনেই দৌড়ে ছাদে গেলাম, তখনো সবাই ব্যাপারটা জানেনা। আর এভাবেই পরীক্ষা শেষ, সবার বাড়ি ফেরার তোড়জোড়, অনেকে ইতিমধ্যেই চলে গেছে। গিয়ে যা দেখলাম তাতে আতংকিত হওয়ার যথেষ্ঠ কারণ আছে, খুবই সংকীর্ণ ছাদের কার্নিশে এক ছেলে মাতাল অবস্থায় বসে আছে। ফোনে কথা বলছে নিজের মা-এর সাথে। জায়গা পরিবর্তন এতই অসংলগ্ন ভাবে করছে যেকোনো মুহুর্তে নিচে পড়তে পারে। আমাদের ছাদ ৫ তলায়, এরই মাঝে নিচে ছাত্ররা যে যা পেড়েছে নিয়ে এসেছে। বিছানার তোষক হতে শুরু করে লেপ-কম্বল সব স্তুপাকৃতি করে রাখা হয়েছে, নিচের কার্নিশগুলোতেও বিছিয়ে দেয়া হয়েছে এসব। কোনভাবেই তাকে মানাতে না পেড়ে, শেষপর্যন্ত বেশ কয়েকজন কার্নিশে নেমে গেলো তাকে ধরার জন্য। সমস্যা হচ্ছে কার্নিশ এতই সংকীর্ণ যে, যারা নিচে নেমেছে তাদের জন্য এখন আলাদা ভয়।

এরই মাঝে, চিফ ওয়ার্ডেন, প্রক্টর, ডিরেক্টর, পুলিশ সব এসে হাজির। কিন্তু কেউ সাহস পাচ্ছেনা কিছু বলার, অনেকবার চেষ্টা করা হলো তাকে মানানোর। এরই মাঝে প্রক্টর বললেন মোটা রশির ব্যবস্থা করতে, আমার কাছে একটা বেশ মোটা বড় রশি ছিলো রুমে, দৌড়ে গিয়ে নিয়ে আসলাম। কিন্তু এখন ভয় হচ্ছে সেই ছেলেকে না জানিয়ে কিভাবে তাকে রশি বাঁধা হবে? যারা মানব শিকল তৈরী করতে নিচে নেমেছিলো উপর থেকে তাদেরকে ধরে রাখা হচ্ছে, কিন্তু জায়গা সংকুলান হচ্ছেনা।

কোনভাবে চেষ্টা করে ধীরে-সুস্থে রশির একটা অংশ সেই ছেলেটিকে জড়িয়ে দেয়া হলো, আমরা কয়েকজন মিলে ধরে রাখলাম পিছন থেকে। কিন্তু ছেলেটির যথেষ্ট ওজন হওয়ায় এই সুরক্ষা কোনভাবেই যথেষ্ট নয়, আর এছাড়াও যারা নিচে দাড়িয়ে আছে কার্নিশের ধারে, তাদের অনেকেই এখন তাদের ভারসাম্য রাখতে পারছেনা ধাক্কা-ধাক্কিতে। এদিকে ফায়ার ব্রিগেডকে খবর দেয়া হলো, কিন্তু আসার কোনো নাম-গন্ধ নেই। এদিকে সেই ছেলেকে তার মা-বাবার সাথে কথা বলিয়ে মানানোর চেষ্টা চলছে ফোনে। অনেকবার নিচে পড়ার উপক্রম হলো, কিন্তু ছাত্ররা নিজেদের হাত দিয়ে কোনভাবে তাকে জড়িয়ে ধরে রাখার চেষ্টা করে চলেছে।

ফায়ার-ব্রিগেড আসতে এতই দেরি হচ্ছিলো যে, শেষ পর্যন্ত হোস্টেল থেকে জলের পাইপ নিয়ে আসা হলো। যেটা পেঁচিয়ে পুরো একটা ব্যারিয়ার তৈরী করা হলো কার্নিশের সবার চারপাশে। এবার আসল পদক্ষেপ, যেভাবেই হোক আমরা বুঝলাম আমাদের নিজেদেরই ওকে উপরে তুলে আনতে হবে। কিন্তু একবার যদি সে মাঝখানে ভর ছেড়ে দেয় তাহলে শুধু সেই ছেলেই না সাথে আরও কয়েকজনের নিচে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। এদিকে বাতাস এর বেগ বাড়ছে, ঝড়ের সম্ভাবনা। তাই ধীরে ধীরে রশি টেনে শক্ত করা হলো, পাইপ পুরো পেঁচিয়ে শক্ত করে রাখা হলো। এরপর একসময় প্রায় ১৫-২০ জনের সাহায্যে সেই ছেলেকে উপরে কোনমতে ধরে তুলে আনা হলো অর্ধেক সংজ্ঞাহীন অবস্থায়। সেই সাথে সমাপ্ত হলো রুদ্ধশ্বাস কয়েক ঘন্টার।

এই কলেজে আসার পর থেকে অনেক ছাত্রের আত্মহত্যার ঘটনা আমরা দেখেছি, প্রচন্ড মানসিক চাপ, বিরূপ পরিবেশ, শিক্ষকদের অসহনীয় অত্যাচার, জঘন্য পরিস্থিতি, তাতে অনেক পরিচিত মুখ হারিয়ে গেছে অসময়ে। প্রথম বর্ষ এর রেজাল্টের পড়ে হোস্টেলে ফিরে শুনেছিলাম, আমাদেরই এক ব্যাচমেট মেয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছে। একইভাবে দ্বিতীয় বর্ষে থাকতে দুইজন জুনিয়র আত্মহত্যা করেছিলো নানা কারণে। অসংখ্য মানুষের এভাবে চলে যাওয়া দেখে সবসময় একটাই প্রশ্ন মাথায় এসেছে, কিছু তো একটা ভুল হচ্ছে!! কিছু তো একটা সমস্যা এই শিক্ষা ব্যবস্থায় আছে!!

যারা থ্রি ইডিয়টস চলচ্চিত্রটি দেখে থাকবে শুধু বলতে পারি তারা আমাদের পরিস্থিতির ৫ শতাংশ হয়তো বুঝতে পারবে। বাস্তব এর থেকেও জঘন্য। যদি শিক্ষা নিতে এসে শিক্ষক ও সিলেবাসের চাপে একজন ছাত্রর আত্মঘাতী হতেই হয় তাহলে সেই ছাত্রটির যদি দোষ থাকে তাহলে একই দোষ থাকে সেই শিক্ষা ব্যবস্থারও।

অসংখ্য অভিভাবক তাদের সন্তানকে শিক্ষা গ্রহণ করতে দেশের বাইরে পাঠান, কিন্তু আমার নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে এতটুকু বলতে পারি, শেষ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আর একবার ভাবুন। ভাবুন যে, এই পদক্ষেপে সেই মানুষটির জীবন কিভাবে বদলে যাবে, সে কি তার নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য মানসিক ও শারীরিক ভাবে যথেষ্ঠ পরিপক্ক কিনা। নয়তো এই অজস্র অসময়ের মৃত্যু মিছিলে হয়তো পরবর্তী নামটা তারও হতে পারে।

আমি শুধু সেই বাবা-মা এর কথা চিন্তা করি যাদের সন্তান আজকে রাতে এই অবস্থায় ছিলো, আর চিন্তা করি দূরদেশ থেকে শুধু ফোনে কথা বলার মুহূর্তগুলোতে তাদের দুর্বিষহ অনুভূতি। একবার ভাবুন, আপনার সন্তান ফোনের অন্যপ্রান্তে আর আপনি জানেন যেকোনো মুহুর্তেই এটা তার শেষ কথা হতে চলেছে !!!!


মন্তব্য

অমি_বন্যা এর ছবি

অসাধারণ লাগলো। একটা কমন প্রবলেমকে খুব সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেছেন।

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ। এই সাধারণ সমস্যাটা নিয়ে আমরা মাথা খুব কম ঘামাই, আমাদের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আমরা শুধু নিজেদের পিঠ বাঁচানোর জন্য ভুলে যাই।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

রংতুলি এর ছবি

লেখাটা শেয়ার দিলাম! এই ভয়ংকর সত্য সবার জানা উচিৎ!

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ। হুমম সবার জানা উচিত।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হায় হায় হায়।

আপনাদের সবাইকে সাধুবাদ এমন একটা সাফল্যের জন্য।

অরফিয়াস এর ছবি

আসলে ঐ মুহুর্তে মাথায় কিছু কাজ করছিলোনা, শুধু অপেক্ষা করছিলাম ভালোভাবে সবাইকে উপরে তুলে আনার।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

পড়াচোর এর ছবি

ভাল লিখেছেন, খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা লেখা। আসল অবস্থা হয়ত আরো ভয়াবহ। ভিক্টিম ছাড়া এটা উপলব্ধি করার মত অবস্থা কারো থাকেনা । আমি বেশি দায় দিব কর্তৃপক্ষকে। চাইলেই এটা সামলানো সম্ভব ওদের পক্ষে।

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ।

আসলেই ভিক্টিম ছাড়া কারো পক্ষে অনুধাবন করাটা হয়তো সহজ নয়।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

শাফায়েত এর ছবি

রেগিং দেয়ার মানসিকতাটা আমি এখনো বুঝে উঠতে পারলামনা। জুনিয়রদের এভাবে কষ্ট দিয়ে,ভয় দেখিয়ে সিনিয়ররা কি প্রমাণ করতে চায়? উইকিপিডিয়াতে দেখলাম ভারত-পাকিস্তান আর শ্রীলংকাতে রেগিং প্রচলিত আছে,শ্রীলংকতাকে এটা বেশি। বাংলাদেশের কেও যোগ করেনি। আইউটি,জাহাঙ্গীরনগরে শুনেছি খুবই খারাপ ভাবে রেগিং করা হয়,সব বিশ্ববিদ্যালয়েই কমবেশি এটা চালু আছে।

অরফিয়াস এর ছবি

রেগিং এর প্রথাটা আসলে জুনিয়রদের সাথে সিনিয়রদের আলাপচারিতার একটি অংশমাত্র, কিন্তু এটিকেই যারা মাত্রাতিরিক্ত খারাপ ব্যবহারে পরিণত করে সমস্যাটা তাদের।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

এবিএম এর ছবি

লেখাটা ভালো হয়েছে। চলুক
কিন্তু যাদের বাইরে পড়তে যাবার স্বপ্ন আজীবনের(আমার মত), তারা উৎসাহ হারাবে। মন খারাপ
বাইরে যারা পড়তে যায়, তাদের অধিকাংশের অবস্থা কি এরকম?? চিন্তিত
আর একটা কথা, যদি কিছু মনে না করেন, এটা কোন ইউনিভার্সিটির ঘটনা ?
ভালো থাকবেন আপনি।

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ।

বাইরে যারা পড়তে যায় তাদের অবস্থা সবক্ষেত্রে এক না হলেও মানসিক চাপ কিংবা বিরূপ পরিস্থিতি সামলাতে হয় মোটামুটি সবাইকেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা সহনশীলতার মাত্রা অতিক্রম করে বৈকি।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সৌরভ কবীর  এর ছবি

ভয়াবহ ব্যাপার। বিষয়টি সামনে তুলে আনবার জন্যে অশেষ ধন্যবাদ।

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকেও।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

ইয়াসির এর ছবি

অন্ততঃ একটা জীবন আপাতত বাঁচলো। কিন্তু সেই একই মানুষ আবার একই উদ্যোগ যেন না নেয় সেটা নিশ্চিত করা জরুরী। কিছু জানতে পেরেছেন এ ব্যাপারে?

অরফিয়াস এর ছবি

আপাতত হাসপাতালে চিকিত্সকের তত্বাবধানে আছে। পরিবারের সদস্যদের খবর দেয়া হয়েছে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সাইদ এর ছবি

ভারতীয় যতজন সহপাঠী ছিল , তাদের সবাই র‍্যাগিং নিয়ে অনেক কিছু বলেছিল। কিন্তু আমি বুঝি না র‍্যাগিং বন্ধ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঠিক মত পদক্ষেপ কেন নেয় না??? বাংলাদেশে জাহাঙ্গীরনগর , শাহজালাল- এই দুইটা প্রতিষ্ঠানের র‍্যাগিং-এর ঘটনা শোনা যায়।
উপরে রাগিব ভাইয়ের কথার সাথেয় একমত। সিলেবাসের কারণে আত্মহত্যা এটা অনেকটা খেলো শোনায়। কারণ পড়াশোনার চাপ কম বেশি একই রকম আন্ডারগ্র্যাডে আমাদের এই অঞ্চল্গুলোর দেশগুলোতে।
অন্য কোন কারণ হয়ত আছে যেটা ঠিক মত পর্যবেক্ষণ করা হয় নি

অরফিয়াস এর ছবি

রেগিং কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে বন্ধ হয়না কারণ শিক্ষকরাও চায় ছাত্রদের মধ্যে একটা ভীতি কাজ করুক যাতে তারা শিক্ষকদের বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদ ঐক্যবদ্ধভাবে করতে না পারে।

আর ভারতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশের সম্পর্কে যদি কোনো ধারণা বা অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে এর সাথে অন্য দেশগুলোর তুলনা না করাই ভালো, আর বাকি কয়েকটা কারণ আমি রাগিব ভাই এর প্রশ্নের জবাবে দিয়েছি।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সাইদ এর ছবি

আপনার উত্তর এর জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু একটা জিনিস জানার অনেক কৌতূহল থেকেই যাচ্ছে- এগুলির প্রতিকারের কি কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে??

অরফিয়াস এর ছবি

সমস্যা তো আর একটি নয় অজস্র। আর এখানে শিক্ষকরা যখন সিন্ডিকেটের মতো আচরণ শুরু করে তখন সেটি দুর্নীতিযুক্ত রাজনীতিতে পরিনত হয়, এই অভিজ্ঞতা নতুন নয় কারোই।

একটা উধাহরণ দেই, বাংলাদেশের হোস্টেলের মেস এর খাওয়া ভালো নয় অতোটা এটা সবাই জানি, কিন্তু আমাদের হোস্টেলের খাওয়ার মান দেখলে কিংবা স্বাস্থ্যকর কোনো কিছুর দিক থেকে যদি এর পরিবেশকে বিচার করা হয় তাহলে হয়তো দেখা যাবে পৃথিবীর তাবৎ বিজ্ঞানীদের জন্য আমরা গবেষনার বস্তুতে পরিনত হবো যে, এই খেয়ে আমরা বেঁচে কি করে আছি !!! তাহলে তফাৎটা দেখুন, খারাপ সব জায়গাতেই, টাকা দিয়ে পড়বেন কিন্তু আপনার ঘাড়েই এসে সব চেপে বসবে, আমরা রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের নিয়ে চর্চা করি, সমাজের সমস্যা নিয়ে প্রতিকার চাই, কিন্তু গোড়াতে যে সমস্যা সেটা নিয়ে ভাবিনা, যদি শিক্ষাজীবন সঠিক না হয় তাহলে সে মানুষের জীবনে আর কি থাকতে পারে?

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

বিষয় নির্বাচন ভাল। চলুক

অরফিয়াস এর ছবি

এটি কালকে রাতের ঘটনা।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

দময়ন্তী এর ছবি

ফাইভ পয়েন্টস সামওয়ান মনে পড়ে গেল৷

র‌্যাগিং সবচেয়ে বেশী হয় শুনেছি আই আই টিগুলোতে৷ দিল্লী আর কানপুর একদম টপে৷ তবে এন ডি এ'তে যা হয়, তার তুলনায় এসব নস্যি৷

আপনি তো বোধহয় বি এইচ ইউ৷এই ঘটনার পরে আপনাদের প্রতিষ্ঠানে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না?

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

অরফিয়াস এর ছবি

ফাইভ পয়েন্টস সামওয়ান- আমরা নিজেরাই।

আইআইটি এর সাথে এনআইটি গুলোতেও কম হয়না বরং কোনো কোনো জায়গায় বেশি, আমারটা যেহেতু উত্তরপ্রদেশে এর অবস্থা আগে আরো ভয়াবহ ছিলো। তবে এখন রেগিং পুরো বন্ধ, আর এই ছেলেটির সমস্যা রেগিং ছিলোনা, নার্ভাস ব্রেকডাউন।

আমি এনআইটি এলাহাবাদ, আমাদের প্রতিষ্ঠানে এখন রেগিং সম্পূর্ণ নিষেধ, তেমন একটা দেখিও না, আমাদের ফার্স্ট ইয়ার পর্যন্ত ছিলো। এখন বেশিরভাগ সময়েই ছাত্ররা পরীক্ষা, শিক্ষক কিংবা পরিবারের প্রবল অমানুষিক চাপে পড়েই আত্মহত্যা করে। এখানকার পরিবেশও আসলে এতো জঘন্য যে কারো একবার নার্ভাস ব্রেকডাউন হলে খবর আছে, প্রতি বছর অনেকেই মানসিক ভারসাম্য হারাচ্ছে। আমাদেরই একটা ছেলে এখন উল্টা-পাল্টা কাজ করে বেড়াচ্ছে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

চরম উদাস এর ছবি

পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।

অরফিয়াস এর ছবি

হুমম মন খারাপ হওয়ারই মতন।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

বন্দনা এর ছবি

কতটা দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ আত্মহত্যার কথা চিন্তা করতে পারে, এই অনুভূতি বোধহয় আমরা কেউ বুঝতে পারবনা। জীবনের এই অপচয় খুব দুঃখজনক। আপনাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য একটা প্রাণ বেঁচে গেল, ভাবতেই অনেক ভালো লাগছে।

অরফিয়াস এর ছবি

মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ার থেকে আর খারাপ কিছু হয়তো নেই।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

বাহিরি এর ছবি

ছেলেটা এবার প্রাণে বেঁচে গেলো ঠিক ই কিন্ত আবার কবে নিজের জীবনে ফিরতে পারবে ভাবছি।

আমার বড় ভাই পড়তে গিয়েছিল দিল্লীতে, এক বছরের মাথায় ফিরে এসেছিল। তারপর নার্ভাস ব্রেকডাউন, কি যে সময় গেছে তখন...এখন পর্যন্ত আমরা ভাই-বোনরা কেউ জানিনা কি হয়েছিল। বাবা জানেন শুধু, এই ঘটনা নিয়ে কথা ও হয়নি কোনোদিন বাসায়। আমরা শুধু দেখতাম বড়ভাইয়া যেন কোনোকারনেই অস্থির না হয়। এরপর ও কোনোদিন পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। স্কিতযফ্রেনিক হয়ে গেছে পরে।

অরফিয়াস এর ছবি

আপনার ভাই এর জন্য সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।

পৃথিবীর যেকোনো দেশেই পাঠানো হোকনা কেনো পড়াশুনার জন্য, কিন্তু ভারতে আসার আগে ১০০ বার ভাবা উচিত, এই লেখাটি কিছুইনা, আমার এই কবছরের অভিজ্ঞতা বললে হরর চলচ্চিত্র থেকে খুব একটা কম হবেনা।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

মন খারাপ
হাততালি

অরফিয়াস এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

মানুষ মানুষের জন্যে। আপনাকে সাধুবাদ জানাই।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ। সম্মিলিত প্রচেষ্টাই সফল হয়েছে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

কল্যাণ এর ছবি

মন খারাপ

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

অরফিয়াস এর ছবি

মন খারাপ

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

কাজি মামুন এর ছবি

আমার নরক থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দবার্তা

চলুক চলুক চলুক

কিছু তো একটা সমস্যা এই শিক্ষা ব্যবস্থায় আছে।

সমস্যা শিক্ষা ব্যবস্থায় আছে বটে, তবে বেশী সমস্যা রাজনীতি ও কনসাল্টেন্সি নিয়ে ব্যস্ত শিক্ষকদের নিয়ে। একজন ছাত্রের মনের ভাষা ও প্রয়োজন বোঝার মত সময় তাদের নেই। একজন ছাত্রকে সন্তানতুল্য জ্ঞান করে তাকে গড়ে তোলার জন্য যে মানসিকতা থাকা দরকার, তা আস্তে আস্তে লুপ্ত হচ্ছে! অবশ্যই সব শিক্ষকের কথা বলছি না এখানে।

অরফিয়াস এর ছবি

আমি সেটাই বলি, শিক্ষক হচ্ছেন পথপ্রদর্শক আর সেটাই যদি না হতে পারেন তাহলে শিক্ষকতা করাই উচিত না, শিক্ষক হওয়ার মানসিকতা সবার থাকেনা।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সাবেকা  এর ছবি

এ তো দেখি ভয়াবহ অবস্থা মন খারাপ

অরফিয়াস এর ছবি

হুমমম সেটাই ।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

ধুসর জলছবি এর ছবি

এই পোস্টটা খুব দরকার ছিল। চলুক আসলেই পড়তে যাওয়ার আগে ভাল করে চিন্তা করে যাওয়া উচিৎ।

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।