মুক্তির মশাল জ্বালিয়ে দিয়ে গেছে ২৬ বছর বয়সী এক বিক্ষুব্ধ তিব্বতী তরুণ, জামপা ইয়েশি। (ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে, যন্তর-মন্তর এলাকায়) স্বাধীন তিব্বতের দাবিতে আগুনে আত্মাহুতি দিয়েছে সে| অগুনিত আত্মত্যাগের ভিড়ে আরেক ধাপ এগিয়ে গেছে সে, বেঁচে থাকা অসংখ্য মানুষের মনে এনে দিয়ে গেছে মুক্তির তীব্র আকাঙ্খা। গল্পের ফিনিক্স পাখির মতো তার ছাই থেকে জন্ম নেবে আরো অজস্র প্রতিবাদী প্রাণ| কতোটা তীব্র অনুভূতিসম্পন্ন হলে নিজেকে এভাবে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া যায়? হয়তো এভাবেই মুক্তির মশাল এগিয়ে চলবে আরও বহুকাল-বহুদুর|
হিমালয়ের কোলের ছোট্ট এই ভূখন্ডটিকে নিয়ে রক্তাক্ত রাজনীতি কিংবা সমরনীতি চলছে সেই বহুকাল আগে থেকেই| ১২৩৯ সালে মোঙ্গলদের আগমন, এরপরে ১৮ শতাব্দীর কুইং রাজত্ব। সবক্ষেত্রেই রক্তাক্ত হয়েছে শান্ত এই ভূখন্ডটি| কখনো আগ্রাসী যুদ্ধবাজ নেতার কারণে, কখনো রাজনীতির কূটকৌশলের কারণে| এরপরে উপমহাদেশের রাজনীতিতে নতুন পরাশক্তি ব্রিটিশদের আগমন| ১৯০৪ সালে, ফ্রান্সিস ইয়ংহাসবেন্ড এর নেতৃত্বে বিশাল সৈন্যদল আক্রমন করে তিব্বত| ব্রিটিশদের ভয় ছিলো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া তিব্বত-এ তাদের প্রভাব জারি করছে| শুধুমাত্র অনুমানের বশবর্তী হয়ে এই আক্রমনে প্রাণ হারায় ১,৩০০ এরও বেশি স্থানীয়| কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে সংখ্যাটা ৫,০০০ এর বেশি|
এরপর ১৯০৬ সাল থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত চলে এই অঞ্চলের কর্তৃত্ব নিয়ে চীন-এর ধরপাকড়। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামতের তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন চুক্তিতে তিব্বতকে চীনের অংশ হিসেবে দেখানো হয়| এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং চীনের গৃহযুদ্ধের দাপটে এই অঞ্চলের কর্তৃত্ব নিয়ে লড়াই কিছুটা স্তিমিত থাকে| কিছু কিছু অঞ্চল তখন বিক্ষিপ্ত ভাবে দালাই লামার অধীনে ছিলো| কিন্তু এরপরেই এই সমস্ত অঞ্চলের উপর একক কর্তৃত্ব স্থাপনের জন্য উঠেপড়ে লাগে চীন| ১৯৫০ সালে পিপলস লিবারেশন আর্মি তিব্বত প্রবেশ করে| ১৯৫১ সালে দালাই লামার প্রতিনিধিদের সাথে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয় যাতে তিব্বত একটি যৌথ শাসন ব্যবস্থায় পরিচালিত হওয়ার প্রস্তাব ছিলো| কিন্তু চীন প্রশাসনের জমি বন্টনের দাবির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ১৯৫৬ সালের জুন মাসের মধ্যে| ধীরে ধীরে এই বিপ্লব লাসা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়লেও শক্ত হাতে দমন করা হয় ১৯৫৯ সালের মধ্যেই| ১৪তম দালাই লামা এবং তিব্বতের অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা ভারতে পালিয়ে যান এই সময়ে| ১৯৫০ সালের পরবর্তী বছরগুলোর অস্থিতিশীলতার সুযোগে সিআইএ তিব্বতের বিপ্লবীগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ,অস্ত্র এবং অর্থ সাহায্য দেয়া শুরু করে|
১৯৫০ সালের পর থেকেই তিব্বতের রাজনৈতিক পরিস্থিতির মূল টানাপড়েন শুরু হয়| একদিকে সমাজতান্ত্রিক চীনের আগ্রাসন অন্যদিকে পুঁজিবাদী পাশ্চাত্যের কূটনীতি| পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা তিব্বতী বিপ্লবীদের সাহায্য করা শুরু করে নিজেদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ চীনকে শায়েস্তা করার জন্য| এদিকে একই সাথে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থাও তিব্বতী বিপ্লবীদের সাহায্যের হাত বাড়ায়| সশস্ত্র বিপ্লবে সাহায্যদানকারী এই দেশগুলোর মূল লক্ষ্য কখনোই এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের স্বাধীনতা ছিলনা, মূল অভিসন্ধি ছিলো চীনকে নাজেহাল করার| তাই বিপ্লবীদের গোপনে সশস্ত্র সংগ্রামে সাহায্য করা ছাড়া এরা রাজনৈতিক ভাবে কখনই চীনের এই আগ্রাসনকে মোকাবেলা করার ইচ্ছা দেখায়নি|
কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে আসে ১৯৬০ সালের দিকে| পরবর্তিতে মার্কিন প্রধানমন্ত্রী রিচার্ড নিক্সন কর্তৃক চীন এর প্রতি ভিন্ন রাজনৈতিক পন্থার কারণে ১৯৭০ সালের শুরুর দিকে এই সাহায্য সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়| ১৯৯৮ সালের ২রা অক্টোবর, নিউইয়র্ক টাইমস কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দালাই লামা প্রশাসনের বরাত দিয়ে বলা হয় যে, প্রতিবছর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা প্রায় ১.৭ মিলিয়ন ডলার অর্থসাহায্য দান করতো তিব্বতী বিপ্লবীদের|
১৯৫০ সালের পূর্ববর্তী ইতিহাস বিবেচনায় আনলে দেখা যায়, তিব্বতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিলো সব সময়েই উত্থান-পতনের মাঝে| ১৯১২ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত সময়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এই পুরো সময়টাই ছিলো তিব্বত এর স্বাধীনতাকামী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের মধ্যে টানাপোড়েন| তবে কুইং রাজত্বের পতনের পরে মঙ্গোলিয়া এবং তিব্বত উভয়েই নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করে| এছাড়াও তিব্বত এর শাসন ক্ষমতা কখনই একছত্র ভাবে কোনো দেশের কিংবা রাজত্বের অধীনে ছিলোনা| বিভিন্ন সময় ক্ষমতার হাত বদলের মাঝে তিব্বত স্বাধীন ভাবেই নিজেদের ভূখন্ড পরিচালনা করতো| যেহেতু দেশটির অধিকাংশ বাসিন্দা কৃষিজীবী এবং বৌদ্ধ লামা, সেহেতু সামাজিকভাবে তিব্বতে সবসময়ই একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকতো| কিন্তু ১৯৫০ সালের চীন কর্তৃক ক্ষমতা দখলের পর থেকে তিব্বতের সামাজিক ও রাজনৈতিক উভয় পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে| চীন কর্তৃক তিব্বত অধিগ্রহণ ছিলো সম্পূর্ণ অবস্থানগত সুবিধা আদায় এবং খনিজ সম্পদের আশায়| চীন নিজেদের অবস্থান দৃঢ়ভাবে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তিব্বতের আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিপুল পরিবর্তন সাধন করে| সাংস্কৃতিক দিক থেকেও তিব্বতের প্রাচীন পন্থাকে পরিবর্তন করার প্রয়াস দেখায়| বিভিন্ন সময় তিব্বতের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দেশ থেকে বহিষ্কার করে দিয়ে রাজনৈতিক পটভূমি সম্পূর্ণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে চীন|চীন এর প্রশাসন, তিব্বত সবসময়ই তাদের নিজেদের অংশ ছিলো বলে দাবি করে এসেছে|যেকোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে তারা| এমনকি তিব্বতের স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সবসময়ই পুঁজিবাদী পাশ্চাত্যের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছে তারা| কিন্তু চীনের শাসনের এই সময়টিতে তিন মিলিয়নের বেশি তিব্বতী নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে| যাদের অনেকেই মারা গেছে নয়তো পালিয়ে গেছে| এই সংখ্যাই বলে দিচ্ছে এই ভূখন্ডটির আসল পরিস্থিতি|
কিন্তু স্থানীয় তিব্বতী বাসিন্দারা প্রথম থেকেই চীন এর এই কর্তৃত্বের বিরোধিতা করে আসছিলো| বর্তমান সময়ে এই আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে| শুধুমাত্র ২০১১ সালের মার্চ মাসের পর থেকেই ৩০ জন তিব্বতী নিজেদের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছে স্বাধীন তিব্বতের দাবিতে| ছাত্র, বৌদ্ধ লামা হতে শুরু করে সাধারণ গৃহিনী অনেকেই এভাবে আত্মাহুতির পথ বেছে নিয়েছেন নিজেদের দাবি সমগ্র বিশ্বের কাছে তুলে ধরার জন্য| যার মধ্যে জামপা ইয়েশি অন্যতম| এছাড়াও ২৭ মে, ২০১২, প্রথমবারের মতো তিব্বতের রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে ঝোকাং মন্দিরের সামনে দুজন যুবক নিজেদের গায়ে আগুন লাগায়| যার মাঝে ১৯ বছর বয়সী দর্জি সেতেন মারা যায় এবং অপরজন গুরুতরভাবে আহত হয়| এর কিছুদিন পরেই ৩০ বছর বয়সী তিন সন্তানের জননী রেচক একইভাবে স্বাধীন তিব্বতের দাবিতে নিজের জীবন দান করে|
বর্তমানে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে এই আত্মাহুতির সংখ্যা| শুধু তাই নয়, আগের থেকে আরও তীব্র হয়েছে স্বাধীন তিব্বতের জন্য এই আন্দোলন| তিব্বতের ধর্মীয় নেতা ১৪ তম দালাই লামা অবশ্য স্বাধীন তিব্বতের দাবি থেকে সরে এসে এটিকে চীনের অধীনে স্বায়ত্বশাসন দেয়ার জন্য বলেছেন বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সভায়| কিন্তু সাধারণ তিব্বতীরা স্বাধীনতার দাবি থেকে সরে আসেনি একবারের জন্যও| অপরিসীম সৌন্দর্যের পৃথিবীর সর্বোচ্চ এই ভূখন্ডটিতে এখন প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মিছিল| স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনকারী জনতার অনেকেই আত্মত্যাগ করছেন নির্দ্বিধায়|বিশ্বের কাছে নিজেদের দাবি তুলে ধরার জন্য নিজেকে মুক্তির মশালে পরিনত করতেও দ্বিধা করছেনা এই প্রতিবাদী মানুষগুলো। বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা তিব্বতী সাধারণ ছাত্র-জনতা বহু বছর ধরে এই আন্দোলন করে আসছে কিন্তু এখনো বিশ্ব নেতৃবৃন্দ হস্তক্ষেপ করার কোনো ইচ্ছা পোষণ করেনি| দিনে দিনে তাই বেড়ে চলেছে শহীদের সংখ্যা|
তাই এখনই সময় সকল মুক্তিকামী মানুষ এক হয়ে সাধারণ তিব্বতবাসীদের এই ন্যায্য আন্দোলনকে সমর্থন দান করে আরও শক্তিশালী করার| একটি স্বাধীন ভূখন্ডের স্বাধীন মানুষ কোনভাবেই আগ্রাসী শক্তির কাছে পরাস্ত হতে পারেনা| তিব্বতের চরম মানবাধিকার অবমাননা সমগ্র সভ্য সমাজের কলঙ্ক| মানুষের স্বাধীনতা হরণ করে যুগে যুগে আগ্রাসী শাসকগোষ্ঠীর এই শোষণ-নির্যাতন প্রতিরোধ সাধারণ মানুষকেই করতে হবে| যদি জামপা ইয়েশির মতো অসংখ্য স্বাধীনতাকামী প্রাণের প্রজ্জ্বলিত মুক্তি মশাল আমরা বহন করতে ব্যর্থ হই, তাহলে হয়তো একদিন দাসত্বের শৃঙ্খল আমাদের নিজেদেরও হতে পারে| সেদিন হয়তো বলার জন্য আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবেনা|
Full list of self-immolations in Tibet
Legal Materials on Tibet, Third Edition
50 years of the national uprising Tibetan solidarity march through the streets of London
Tibetan New Year and Hunger Strike at the UN Headquarter in NYC
মন্তব্য
কিছুই বলার নাই। বলার মতো ভাষাও নেই। ...... প্রতিবাদের এই ভয়ানক দৃশ্য দেখে বারবার শিউরে উঠি।
হয়তো প্রতিবাদে সুর মেলাতে পারি - মুক্তি চাই, বলে...
-- ''মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হল বলিদান লেখা আছে অশ্রু জলে"--
ডাকঘর | ছবিঘর
ঠিক এই লাইনগুলোই মাথায় ঘুরছিলো আজকে সারাদিন|
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
অনেক ভালো একটি লেখা। মুক্তিকামী মানুষের মুক্ত হওয় ার সংগ্রামের এই ভাষার কাছে মাথা নত হয়ে যায়।
মুক্তিকামী মানুষদের আত্মত্যাগ এর প্রতি শ্রদ্ধা।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
মানুষ কতটা মরিয়া হলে, কতটা দৃঢ়চেতা হলে আগুনে নিজেকে পোড়াতে পারে স্বেচ্ছায়!! শেষ ছবিতে যুবকটির এক্সপ্রেশন দেখে গায়ের রোম খাড়া হয়ে গ্যাছে ভাই!
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
এই মানুষগুলোর স্বাধীনতার প্রতি আবেগ দেখলে আসলেই রোম খাড়া হয়ে যায়।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
জামপা ইয়েশি এবং তাঁর মত প্রত্যেকের প্রতি এবং
লেখাটি খুব ভাল লাগল।
ধন্যবাদ দাদা।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
দেব মুখার্জি
[db.dev.m@gmail.com]
--------------------------------------------------------------
দেব এর উঠোন॥ফেইসবুক॥গুগলপ্লাস
ধন্যবাদ।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
এই দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মুক্তিকামী মানুষগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই আর নিজেকে জানাই ধিক্কার। এদের জন্য কিছুই করতে পারছিনা বা পারবো না। বড়জোর প্রেসক্লাবের সামনে একটি ব্যানার হাতে নিয়ে দাঁড়াতে পারবো। কে জানে হয়ত তাও পারবো না যেমন চিত্র প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যায় শাষক বাহিনীর অঙ্গুলি হেলনে।
যার যার জায়গায় থেকে যদি মুখে মুখে এই মানুষগুলোর কথা ছড়িয়েও দিতে পারেন, তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও কাঁধে কাঁধ মেলানো হলো।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজরুল ভাই,
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
মুক্তি দেখতে এত দুরে না যেয়ে পাশের দেশের রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখেন চোখ খুলে। নাগরিকত্ব নেই, ফ্রি মুভমেন্ট রাইটস নেই, বিয়ে করার অনুমুতি লাগে এবং ২ সন্তানের বেশি নিতে পারে না রোহিঙ্গারা! তাদের রক্ষায় কিছু করেন। আপনার আমার বাঙ্গালী পরিচয় ওদেরও পরিচয় সেজন্যই এভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, সুতরাং ওদের নিয়ে বলুন।
তিব্বত নিয়ে পোস্ট দেখা যায় এই ফোরামে কিন্তু রোহিঙ্গাদের নিয়ে নাই!!! এর কারনটা কি নিজেদের প্রশ্ন করুন।
তিব্বত নিয়ে লেখা দেখে যেভাবে তেড়েমেড়ে এলেন তাতে তো মনে হচ্ছে বেশ গরম হয়ে আছেন রোহিঙ্গাদের নিয়ে। তা ভাই, রোহিঙ্গা সমস্যা তো আজকের না, এতদিনে যখন কেও লিখলোনা, কষ্ট করে দুলাইন নাহয় আপনিই লিখে দিন। রোহিঙ্গাদের জন্য যখন এতো মন পোড়ে আপনার তাহলে বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে আদিবাসীদের যে অত্যাচার করা হয়েছে স্বাধীন দেশে তা নিয়ে কিছু মনে হয়না? যেভাবে তাদের হত্যা করে, বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিয়ে, জায়গা দখল করা হয়েছে সে নিয়ে কিছু জানা আছে কি? নাকি কেউ কিছু একটা করছে সেটা দেখে খুঁত না বের করলে ভালো লাগেনা?
আমি আমার ব্লগে তিব্বত নিয়ে লিখি আর যে দেশ নিয়ে লিখি সেটা আমার পছন্দের বিষয়বস্তু, আপনার পছন্দ না হলে পড়ার কষ্ট করার দরকার নেই। কিন্তু ফ্রিতে উপদেশ বিলাতে আসবেননা দয়া করে। মানবাধিকার নিয়ে অনেকদিন ধরে লিখছি যখন পর্যাপ্ত তথ্য ও সময় হাতে আসবে আপনার বলার দরকার হবেনা, তখন রোহিঙ্গাদের নিয়েও লিখবো।
আর এতো যখন রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা করে গলা শুকিয়ে যাচ্ছেন, এটা জানা আছে তো- বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে সমস্ত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির আছে তার সবগুলো সন্ত্রাস ও সমাজ বিরোধী কার্যকলাপের আখড়া? এদের অধিকাংশ, দেশের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে জড়িত, নিষিদ্ধ ড্রাগ এবং অস্ত্র সরবরাহ হচ্ছে এই ক্যাম্পগুলোর প্রধান ব্যবসা। যদি মনে হয় তারপরও রোহিঙ্গাদের নিয়ে লেখা দরকার তাহলে লিখবো বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে এদের অসামাজিক কার্যকলাপ নিয়ে, সেখানে এসে নাহয় চেঁচিয়ে যাবেন।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
শুধুই হুমায়ুন আহমেদ পাঠক - ক্যান ভাইয়া মুক্তি দেখতে তিব্বতে যাওয়া যাবেনা কেন একটু ক্লীয়ার করেন। হিউম্যান রাইটস কি ওদের জন্য নাই। নাকি আপনার আপত্তি আছে তাতে? আর থাকলে কেন?
- রোহিঙ্গাদের প্রতি সমবেদনা আছে। এরপর বলি - অরফিয়াস তিব্বতীদের নিয়ে লিখেছে। তো ওর দায় কেন শুধু 'বাঙালি' হওয়ার জন্য সব্বাইকে নিয়েই লিখতে হবে। আপনিও আমাদের সাথে আসেন না - শুধুই হুমায়ুন আহমেদ পাঠক, আপনি শুরু করেন রোহিঙ্গাদের নিয়ে, আমরাও জয়েন করব আপনার সাথে। ঠিক কিনা বলেন। শুধু শুধু অন্যেরে উপদেশ দিলে বঙ্কিমের 'বাবু' প্রবন্ধ ইয়াদ আসে যে বড়......
শুধু রোহিঙ্গা কেন , আরও কত কিছু আছে যার প্রতিবাদ ঠিক মত হচ্ছেনা। আমরা তো যারযার জায়গা থেকে কোন কিছুর প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছি। তাইনা। আপনিও শুরু করুন না, আমরাও সাথে সাথে জয়েন করি আবারো। কিন্তু সেটা না করে একটা বর্বর আগ্রাসনের প্রতিবাদের পোস্টে এসে অন্য লাইনে ঝাড়ি ঝাড়লে ক্যামনে হবে জনাব । এই প্রশ্নটা কি আপনি নিজের কাছে করেছেন যে - আমি কি করেছি? অন্যের কাধে ভর দিয়ে শুধু ঝাড়লে কি ভাবে হবে ভাইয়া, বলেন।
ডাকঘর | ছবিঘর
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
শেষ ছবিটা!!! আপনাকে ধন্যবাদ এরকম কিছুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ায়। দারুন লেখা।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
দুঃখিত, তর্কাতর্কিতে আপনার মন্তব্য এড়িয়ে গেছি, আপনাকে ধন্যবাদ ক্রেসিডা।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
সারা পৃথিবীর মুক্তিকামী গণমানুষের মুক্তি চাই।
জামপা ইয়েশির প্রতি শ্রদ্ধা। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
আপনাকে ধন্যবাদ।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
এত বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কূট চালের বলি তিব্বতীরা । তাঁরা কী করবে আর- বিপ্লব? শান্তিপ্রিয় মানুষেরা বন্দুক তুলে নেবে কাঁধে? লড়াই করবে বিপ্লবে গড়ে ওঠা আর এক রাষ্ট্রের সাথে?
মানুষের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করা এক মানুষ কীভাবে ভুলে যায় আর এক মানুষের অধিকার? নিজেদের শক্তির পরখ কেন করে শান্ত জনপদে? কী নির্লজ্জভাবে এক শক্তি আর এক শক্তির স্বার্থ বাঁচিয়ে পথচলে...
স্কুলে পড়েছিলাম- হাতে বন্দুক থাকলে নিরীহ মানুষেরও চোখ যায় পাখির দিকে....
ওরা আর কী করবে...?
কড়িকাঠুরে
বিপ্লব এর সব থেকে বড় শক্তি হচ্ছে মানুষের হৃদয়। এতোটা বড় মারনাস্ত্র আর কিছু নেই। বিপ্লবী তিব্বতীদের হৃদয়ের শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
১) 'জম্পা ইয়েশি' আর সুইসাইড বম্বারের মধ্য়ে পার্থক্য় হলে জম্পা একটা খুন করে, আর সুইসাইড বম্বারেরা বহু। কিন্ত এই দুজনের মিল হল এরা চুড়ান্তবাদি। জম্পার মত চুড়ান্তবাদি কেন সচলায়তনের সহমর্মিতা পাবে?
২) মুক্তিকামি বলতে কোন কোন তিব্বতের অধিবাসিদের কথা হচ্ছে? কেন্দ্রীয় ও মধ্য় তিব্বতে চীনসমর্থন প্রবল। খাম্পা ও আমদো (দালাই লামা এই এলাকার) জমিদারদের মধ্য়ে যারা কমিউনিস্ট পারটির বড় পদের বদলে জমিদারি টিকিয়ে রাখতে পছন্দ করছে, ভুমি পুনর্বন্টন ঠেকিয়ে রাখছে, তারা কিন্তু সংখ্য়ায় অনেক কম। আমরা যদি আমাদের দেশে সালাউদ্দিন কাদেরের মত লোকেদের আর ছাগুদের পছন্দ না করি, তাহলে কি কারনে তিব্বতীদের জন্য় ধর্মীয় চুড়ান্তবাদের মদদদাতা জমিদারদের আধিপত্য় চাইবো?
১) দিন পাল্টে যায়। ১৯১০ এ তিব্বতিরা চিংহাই ও সিচুয়ানের কিছু অংশ দখল করে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। আজকে তারা বেইজিংকে সামরিক আগ্রাসনের দোষ দেয়। দালাই লামারা পরের মাল খেয়ে দিগদারিতে ওস্তাদ। ১৩তম দালাই ১৯০৪ এ রাশান পয়সায় সুরে মঙগোলিয়াকে ফুসলানোর দোষে তারা ব্রিটিশদের ধাওয়া খেয়ে মঙগোলিয়ায় পালিয়ে গিয়েছিল। ১৯০৮ এ আমেরিকান মাল খেয়ে চিং সম্রাটের সাথে বামফারির অপরাধে তাকে ধরতে যখন চীনারা ধাওয়া করে, তখন সে দারজিলিং ব্রিটিশদে কোলে গিয়ে ওঠে। ১৯১০ এ ব্রিটিশ মাল খেয়ে চিংহাই ও সিচুয়ানের দখলের চেষ্টা আগেই বলেছি। প্রতিদানে চিংহাই এর মাফুশিয়াং আর সিচুয়ানের লিউ ওয়েনহুর রিপাবলিকান ছাপামারা আইক্কাওয়ালা বাঁশ জোটে জোটে তার কপালে। ৪৩শে জাপানি মাল খেয়ে সে ভারত-চীন রাস্তার প্রজেক্ট আটকে দেয়।
৩) ভারতে অবস্থিত তিব্বতী সাম্প্রতিক আন্দোলন কতটুকু জাতীয় মুক্তির আন্দোলন আর কতটুকু বেইজিং সমরথিত পন্চেম লামার শনৈ শনৈ গ্রহনযোগ্য়তা ঠেকাতে ভারত-সমরথিত দালাই লামার শো-ডাউন? ভারতে অভিবাসি তিব্বতিরা আগে ব্রিটিশদের ক্রিড়নক ছিল, এখন হয়েছে ভারতের খেলনা। (৭১ এর ১ নম্বর সেক্টরে তিব্বতি প্য়ারাট্রুপারে ব্য়াবহার দ্রষ্টব্য়)। ভারত নিজে কিন্তু দক্ষিন তিব্বত (অরুনাচল) দখল করে আছে, সেখানে চলছে সামরিক ছত্রছায়ায় দিল্লীর প্রশাসন। সেখানে মুক্তান্চল গঠন করে দালাইলামা ও তার দল অধিষ্ঠিত করা হচ্ছেনা কেন? ভারতীয় সেনাবাহিনী আর পশ্চিমা খনিজ করপোরেটের চাইতে নিশ্চই ভারতে অভিবাসি তিব্বতিদের অরুনাচলের ওপর বেশী দাবী আছে।
৪) ১৯১২ সালের চীন থেকে তিব্বতের স্বআধীনতালাভের যে গপ্পো এখন ভারতীয় মিডিয়া প্রচার করে, তার দলিলি ভিত্তি কি?
আপনার এতগুলো প্রশ্নের উত্তরে কিন্তু একটাই প্রশ্ন করবো- চীন এর তিব্বত অধিগ্রহণ সমর্থন যোগ্য কিনা? যদি সমর্থন যোগ্য না হয় তাহলে চীন এর পক্ষে সাফাই গাওয়ার কোনো কারণ দেখিনা !!
কথাটা একদমই সমর্থন যোগ্য নয়। একজন সুইসাইড বোম্বার এর সাথে যদি কোনো মানুষের একক অহিংস আত্মাহুতি আপনি মিলিয়ে ফেলেন তাহলে সমস্যা। সকল আন্দোলনেরই একটি শাখা থাকে "চূড়ান্তবাদী"। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময়ও ছিলো। ব্রিটিশদের বিভিন্ন স্থাপনায় বোমা হামলা করে ব্রিটিশ ভিত নড়িয়ে দিয়েছিলো এই চূড়ান্তবাদী বিপ্লবীরা যার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের আন্দোলনকে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। ভগৎ সিং প্রমুখ এর আন্দোলন খোদ মহাত্মা গান্ধীও সমর্থন করেননি। কিন্তু তাই বলে এই আন্দোলন তো থেমে থাকেনি। কিন্তু যেই সকল তিব্বতী নিজেদের জীবন উত্সর্গ করছে অন্য কারো কোনো ক্ষতি না করে তাদের আন্দোলনকে কোন দৃষ্টিতে চূড়ান্তবাদী বলা যায়। এখানে অবশ্যই এই আন্দোলনকে সুইসাইড বোম্বার এর সাথে তুলনা করা চরম আপত্তিজনক। আর যদি শুধু রাজনৈতিক কিংবা জমিদারি সমর্থন এর মূল উদ্দেশ্য হত তাহলে সাধারণ ছাত্র কিংবা বৌদ্ধ লামা কিংবা সাদাহ্রণ গৃহিনী নিশ্চয়ই আত্মাহুতি দিতে এগিয়ে আসতো না। তিব্বতে চীন এর প্রবেশ অবশ্যই স্বাধীনতার পরিপন্থী এবং তিব্বতীদের উপর চাপিয়ে দেয়া তাদের নিয়ম যতই ভালো হোকনা কেন অবশ্যই সমর্থন যোগ্য নয়। একটি পাখিকে শোনার খাঁচায় রেখে ভালো খাওয়া দিলেও সেটা খাঁচাই থাকে।
চীন এর সমর্থন কখনোই প্রবল ছিলোনা, হ্যাঁ এটা ঠিক সরকারী হিসেব অনুযায়ী চীন তিব্বত অধিগ্রহনের পরে অনেক উন্নতি হয়েছে কিন্তু তা কখনই স্থানীয়দের স্বাধীনতার পরিপূরক নয়। এছাড়াও তিব্বত এ প্রাচীন কাল থেকেই জমি/ভূমি ব্যবস্থা দালাই লামা কিংবা বৌদ্ধ মঠ হতে নিয়ন্ত্রিত হতো। এতে স্থানীয়দের যদি কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে এখানে সমর্থন না দেয়ার কারণটা কি? বৌদ্ধ লামাদের সাথে ছাগুদের তুলনা কতোটা যুক্তিসংগত সেটা নিয়ে আর তর্কে যাচ্ছিনা। আর চীন এর প্রশাসনের ভূমি বন্টন এর বিরুদ্ধেই কিন্তু সর্বপ্রথম আন্দোলন শুরু হয়। তাহলে এই ভূমি বন্টনে যদি খোদ স্থানীয়দের সমস্যা থাকে তাহলে কি বলার থাকে?
দালাই লামার ভূমিকা অনেক সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো, কিন্তু দালাই লামার ভূমিকা দিয়ে সমগ্র তিব্বতী বিপ্লবীদের মানসিকতা কি করে যাচাই করা সম্ভব? এছাড়া বর্তমান দালাই লামা নিজেও স্বাধীন তিব্বতের দাবি করছেন না, কিন্তু তাই বলে সাধারণ তিব্বতীদের আন্দোলন কি থেমে গেছে? আর তিব্বতকে নিয়ে যে প্রথম থেকেই রাজনীতি হয়েছে বিভিন্ন পরাশক্তির তা তো লেখাতেই উল্লেখ আছে।
আপনি মনে হয় লেখার নিচের লিঙ্কগুলো খেয়াল করেননি। এতে লিগ্যাল মেটারিয়ালস অন তিব্বত নামের লিঙ্কটাতে জাতিসংঘ কর্তৃক অসংখ্য সংরক্ষিত দলিল আছে, যদি ইচ্ছে থাকে একটু দেখে আসলে ভালো হয়।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
তিব্বত চীনের অংশ। সেটা জাতিসংঘের দলিলাদিতেই স্পষ্ট। ১৯৫১ সালের ১৭ দফা চুক্তিতে তিব্বত চীনের স্বায়ত্বশাসিত অংগরাজ্যে পরিনত হয়েছে, সেই অনুযায়ী তিব্বত তার প্রতিরক্ষা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভার কেন্দ্রীয় সরকারের উপর ন্যাস্ত করেছে। ঠিক যেরকম ভারতের প্রদেশগুলো দিল্লীর কাছে এই বিষয়গুলো অউটসোর্স করেছে।
চীন সরকার ও সেনাবাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘণ করছে। আন্দোলন হতে হয় সরকার বিরোধী আন্দোলন হোক। মুক্তিকামনা আর স্বাধীনতা চাইবার অধিকার সমগ্র তিব্বতের ত্রিশ লাখ মানুষের। ইতিহাস দেখিয়েছে ইয়ুথ কংগ্রেস, আল-শাবাব, তালেবান, শিবির এসব দেশপ্রেম প্রশ্নসাপেক্ষ।
সরকারের আচরনের প্রতিবাদে একজন মানুষ যখন গায়ে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি দেন, তখন তাকে 'সাধারণ গৃহনী' বলা কি উচিত হবে? খুব উচুদরের ব্রেইনওয়াশ ব্যাতিত এধরনের চুড়ান্তবাদি কাজ সম্ভব?
দুর্দান্ত'দা, সরকার বিরোধী আন্দোলন কেন একটা জাতির মুক্তির লড়াই হয়ে উঠতে পারেনা? আচ্ছা যদি এটাই মেনে নেই যে তিব্বত কাগুজেভাবে চীনের। কিন্তু এরপর যখন একটা বিশাল দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র সেই দেশেরই ( ঐ সাপেক্ষে, চীন এর পার্ট তিব্বত) একেবারে প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষদের উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালাতে শুরু করে তখন কি অবস্থা হয়! একেবারে হুট করেই কি ত্রিশ লাখ মানুষ একই পতাকার তলে চলে আসতে পারেন! স্বাধীনতার ইন্ধন যে ভাবে তিব্বতে বাসা বেধেছে তাতে এটা কিন্তু স্পষ্ট ওরা আর চীনের বুটের নীচে থাকতে চায়না। তাহলে যদি একটা জাতি স্বতঃস্ফুর্তভাবে স্বাধীনতা চায় তাদের উপর মানবাধিকার লঙ্খনের দায়ে, তাহলে আপত্তি কোথায়।
তিব্বতীদের নীরব সংগ্রাম ( আচ্ছা নাই হয় হিংস্রই ধরে নিলাম ! ) এর সাথে কি তালেবান এর তুলনা চলে??? তালেবান = তিব্বতী ? এটা কি ধরণের সরলীকরণ!!
কাজটা নিশ্চয়ই চুড়ান্তবাদি। ইনফেক্ট ভয়ানক! তবে এই আত্মহুতি কিন্তু একদিন এর লড়াই নয়। শুরুটা খোদ তিব্বত থেকেই শুরু হয়েছে।
আসলে তিব্বতীদের নানা সময়ের দোষত্রুটি ( আপনি অনেকগুলি বলেছেন), তাদের সময়, সভ্যতা - সব কিছুর নিরিখে বলা চলে একটা জাতি যদি এখন স্বাধীন হতে চায়, মানবতার বিচার চায় তাহলে এই একবিংশ শতাব্দীতে বসে কেন আমরা তাদের সমর্থন করব না। হতে পারে ওদের পেছনে ভারত, আমেরিকা, ইংল্যান্ড ইত্যাদি নান দেশের ইন্ধন রয়েছে, সমর্থন রয়েছে। কিন্তু ওদের স্বাধীনতার স্বপ্নটা তো ভুল নয়, তাইনা। ইতিহাস কিন্তু গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে এই ধরণের সংগ্রাম দেখে আসছে প্রতিনিয়ত। তাই তিব্বতীদের এই লড়াই আমার কাছে বিচ্ছিন্ন কোনকিছু বলে মনে হয়না।
ডাকঘর | ছবিঘর
ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যাপারে আপনার কী মত? সেভেন সিস্টার্সদের কারও কারও বিচ্ছিন্ন হবার আকাঙ্ক্ষাগুলো? বা কাশ্মীরী মুসলমানদের কারো কারো? কিংবা বার্মার রোহিঙ্গাদের "আরাকান ইসলামী প্রজাতন্ত্রের" আকাঙ্ক্ষাগুলো? এদেরও বহু দোষত্রুটি নিশ্চয়ই আছে। আছে বহির্ইন্ধন। কিন্তু তাদের স্বাধীনতার স্বপ্নটাকে ভুল বলবেন কি? কিংবা তিব্বতীদের স্বপ্নের চেয়ে তাদের স্বপ্ন কোনো অংশে ছোটো মনে করেন কিনা যদি বলতেন, তাতে আমার আগ্রহ জানিয়ে রাখলাম। না বললেও ক্ষতি নাই।
কাশ্মীর নিয়ে সমস্যা দুই দেশের মধ্যে গড়ে দেওয়া একটা সমস্যা এবং ভারত-পাক এই দুই দেশের কুটনৈতিক লড়াই যাদের মধ্যেখানে পিষছেন হাজারো কাশ্মীরি। ভারতীয় সেনা নির্বিচারে এদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। যদি একান্তই আমার ব্যাক্তিগত মত নিতে চান তাহলে আমি কাশ্মীরকে একা দেখতে চাই। না ভারতের না পাকিস্তানের!
এরপর আসেন, ভারতের যে বিচ্ছিন্ন আন্দোলন এর কথা আপনি বললেন এগুলি আন্দোলন কম, সন্ত্রাস বেশী! এবং সন্ত্রাস ও স্বাধীনতার আন্দোলন এর মধ্যে পার্থক্য আছে বৈকি। এবার আপনি বলতে পারেন যে সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া স্বাধীনতা আসেনা, তো ওরা করলে দোষ কী? এক মিনিট থামেন! জ্বী, দোষ আছে। আমি সেভেন সিস্টারের একটা রাজ্যের বাসিন্দা। এখানকার, বড়ো জঙ্গি বলেন, উলফা বলেন, এনেলেফটি, এটিটিএফ –ইত্যাদি ইত্যাদি নামধারী জঙ্গীদের আন্দোলন এর সাথে আমি সরজমিনে পরিচিত। এদের এগুলি কোন একটা জাতির আন্দোলন নয়। এরা কোনদিন এদের স্বগোত্রের সমর্থন পান নি। টুকটাক বিচ্ছিন্নভাবে ওরা কিছু মানুষকে কাছে টেনেছেন ওদের কার্যকলাপে। এবার বলি আপনি যদি এদের ইতিহাস জেনে থাকেন ( বলেছেন যখন, জানেন নিশ্চয়ই ) তাহলে আপনার ভালোই জানার কথা এরা বেশীর ভাগই উপজাতি এবং এরা উপজাতিদের মুক্তির দাবি জানায় এবং রাস্ট্র চায়, রাস্ট্র ক্ষমতা চায়। কিন্তু পূর্বত্তোরের রাজ্যগুলিতে এই সমস্ত উপজাতি জঙ্গীদের জঙ্গিপনায় সবচেয়ে অত্যাচারিত হলেন উপজাতিরাই। কি বীভৎস সেইসব ঘটনা তা আপনাকে উদাহারণ দিতে গেলে লিখে দেওয়া সম্ভব নয়। ওদের থেকেই ওরা চাঁদা নেয়, ওদের ঘড়ে এসেই ওরা ভাত খায়, পশুদের জবাই দেয় আবার ওদের ঘড়ের ইজ্জতেই হাত দেয় – এই হল আপনার নর্থ-ইস্ট এর আপনার বলা ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ এক্টিভিটি। এরা স্বাধীনতা চায় না, সন্ত্রাস চায়। নির্বিচারে কমন পিপল খুন করে, লুট করে, বিস্ফোরণ ঘটায় রাস্তায়, বাসে, ট্রেনে পাবলিক প্লেসে – শত শত মাসুম মানুষ এর জান নেয় – এরা কি আন্দোলনকারী? কখনো এই সন্ত্রাস দেখার আপনার সুযোগ হয়েছে কিনা জানিনা। আমার আছে, অনেক অভিজ্ঞতাই আছে, গাড়িতে গোলাগোলি থেকে শুরু করে বোমা বিস্ফোরণ সব। --- তো এদের এগুলি কি দোষ এর পর্যায়ে পরে নাকি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস?
ওগুলি ‘স্বাধীনতার স্বপ্ন’ নয় স্রেফ সন্ত্রাসী আগ্রাসন। এদের সাথে তিব্বতীদের মিল খুঁজছেন কোথায় থেকে? সরলীকরণ করাটা কোন উদ্দেশ্যে সেটা জানতে পারি কি? ওখানে মানবাধিকার লঙ্খিত হচ্ছে বুটের নীচে। সেখানে ওরা করছে আন্দোলন আর তার সাথে আপনারা তালেবান থেকে শুরু করে টেরিরিস্টদের মিশিয়ে দেবেন একই কাতারে। সরি টু সে, এটা কোন ধরণের বিবেক বুঝলাম না।
ডাকঘর | ছবিঘর
আপনার যুক্তিটা জানলাম। আপনার চোখে কারও কারও স্বাধীনতার স্বপ্নই নাই মনে হইতেছে। কিছু কিছু লোক স্রেফ টেররিজম কইরা বেড়াইতেছে। মোটের উপর ওইসব জনগোষ্ঠি বড় রাষ্ট্রের অধীনেই রাজিখুশি আছে তাইলে। ভালো কথা। আপনেই নিশ্চয়ই ভালো জানবেন।
আমি এখানে কোনো অবস্থানই এখনো নেই নাই, সরলীকরণ পরের কথা। কেবল প্রশ্ন করলাম। আপনি অবস্থান নিচ্ছেন দেখে জিগাইলাম। আপনি তিব্বতীদের সাথে অন্যান্যগুলা যদি পার্থক্য করেন, যুক্তিগুলা কী দিবেন সেটাই আগ্রহ ছিলো। যুক্তি দেয়ার পর মনে হয় দুঃখ পাইতেছেন আপনার যুক্তি মাথায় নিয়া আমি কেনো ঘুমাইলাম না (যদিও আমি কোনো অবস্থানই প্রকাশ করি নাই)? যুক্তি দেখানের পর কি একটু গরম দেখানরও নিয়ম আছে নাকি ভাইডি?
ভুল জায়গায় সরি বললেন। বরং - "সেখানে ওরা করছে আন্দোলন আর তার সাথে আপনারা তালেবান থেকে শুরু করে টেরিরিস্টদের মিশিয়ে দেবেন একই কাতারে" - আমি যেইটা বলি নাই সেইটা আপনারা নামে আমার মুখে গুঁইজা দেয়ার জন্যে একবার সরি বলে গেলে সেইটাই না ঠিক হয়! কিন্তু সেই আশা আপাতত করতেছি না। যেমন হোক উত্তর দিছেন, সেই জন্যে ধন্যবাদ।
আমি আশা করি আমার আগের মন্তব্যে স্বাধীনতার লড়াই আর টেরিরিজমটার একটা রূপরেখা দিতে পেরেছি মনে হয়। আমি একবারের জন্যও বলিনি যে কোন জনজাতি ( উপজাতি ) কোন বড় রাষ্ট্রের অধিনে 'রাজিখুশি' আছে। আমি এবং আপনি পারটিকুলার একটা রিজনের কথা বলছিলাম, তাই না। উত্তরে লক্ষ্য করেছেন কিনা জানিনা আমি কিন্তু রোহিঙ্গাদের নিয়ে কিছু বলি নাই। কারণ এদের নিয়ে আমার কোন ভালো ধারণা নাই। দেখুন একটা রাষ্ট্রের ভেতর অনেক প্রব্লেম থাকে, হাজারো সমস্যা। ভারতের মতো বৃহৎ সংসদীয় গণতন্ত্রে ১২৫ কোটির দেশে যে এই ধরণের সমস্যা থাকবে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু তাই বলে একটা বিচ্ছিন্নতাবাদী ( কেন তা উপরে বলেছি) সন্ত্রাসীদের স্বাধীনতার 'স্বপ্ন'কে মেনে নেওয়ার কোন যৌক্তিকতা দেখিনা। এখানে অনেক সমস্যা আছে। মানুষ গণতান্ত্রিক উপায়ে লড়াই করছে। সমস্যা কোথায় নেই। আর ভারতের এই উত্তরপূর্বের জন্য গভঃ বিশেষ প্যাকেজ দেয় আলাদাভাবে। তাছাড়া তারপরেও এখানকার উপজাতিরা যে কিছুটা পিছিয়ে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা ( মূলত এখানে, গোটা নর্থইস্টে উপজাতিরাই অনেক সংখ্যায়, অন্যান্যদের চেয়ে) । এর কারণটা আবার শুধুমাত্র সরকারী বঞ্চনাই নয়, ওদের জীবনযাত্রায়ও আছে, সে আরেকটা প্লট। ভারতের সংবিধানে উপজাতিদের উন্নয়নের জন্য অনেক সংরক্ষণ আছে। আসেলে মূল কথা হল এগুলি ঠিকঠাক ইউটিলাইজ হয়না। সমস্যাটা এখানেই। ভারতের আমলাতন্ত্র এর জন্য বহুলাংশে দায়ী।
আপনি বলেছেন এরা বা এদের স্বপ্ন স্বপ্নই নয় বলে আমি মনে করি এবং এই আমি ভালো জানি - কিছু জানি আর না জানি এই অঞ্চলের সমস্যা এবং এদের কার্যকলাপ নিয়ে মোটামোটি জানি এই কথা বলতে পারি।
উঁহু। ভুল বুঝতেছেন। আমি গরম নরম কিছুই দেখাই নাই। আর দুঃখ পামু কোন দুঃখে। আমার কথা আপনাকে মানতে হৈব এই দিব্যি আপ্নারে দিলাম কই?
আবারও ভুল বুঝতেছেন। আপনার মুখে দিয়া দেই নাই। ওটা 'আপনি' নন, আপনারা - বলতে গিয়ে আমি একটা সমষ্টি বুঝাইয়াছিলাম ( যদিও আপনি বলেন নাই)। আপনাকে কোন একটা অংশে ফেলা মোটেই আমার উদ্দেশ্য নয়। তো নির্দ্বিধায় থাকেন ওটা আপনার মুখে গুজি নাই। আর সরি বলাটা আপনার প্রতি কোন অপরাধ বোধ থেকে আমার বলা কথা নয়। ওটা আপনার প্রতি আমার সম্মান প্রদর্শনই ছিল। যেহেতু দীর্ঘ একটা সময় ধরে সচলে ব্লগিং করতেছি তাই আপনাদের সম্পর্কে ( লেখা , কমেন্ট = ভার্চুয়াল ) একটা ধারণা হয়েছে তাই না।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
ডাকঘর | ছবিঘর
অধিকাংশ দেশের সরকার তাদের আদিবাসীদের প্রতি বিমাতা সুলভ আচরণ করে। ভারতে সেটা নর্থ-ইস্ট, অরুনাচল, নাগা ল্যান্ড, দার্জিলিং, কাশ্মির এসব জায়গায় হয়েছে। এদের প্রত্যেকটি অঞ্চলে স্বাভাবিক প্রদেশের তুলনায় অর্থ সাহায্য থেকে শুরু করে সব ধরনের বিমাতা সুলভ আচরণ করা হয়েছে। সরকারের প্রতি অসন্তোষ এখান থেকেই সৃষ্টি। এই অসন্তোষ এখন সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে যদি রূপ নেয় তাহলে এর পেছনের অনুঘটক হিসেবে সরকারের কর্মকান্ড দায়ী। ইরম চানু শর্মিলা ১১ বছর ধরে অনশনে আছেন কি কারণে? এর আগে তাকে নিয়ে লিখেছিও এখানে। মনিপুরে ভারত সরকারের যে চরম আগ্রাসন এর পরিপ্রেক্ষিতে যদি তারা স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করে তাহলে কি অযৌক্তিক হবে?
একইভাবে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে বিমাতাসুলভ আচরণ করা হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে "শান্তিবাহিনীর" জন্ম। এখন তাদের গেরিলা যুদ্ধের জন্য আমরা তাদেরকে দায়ী করতে পারি, দেশের সৈন্যবাহিনী পাঠিয়ে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করতে পারি, নিজের দেশের মানুষকে গুলিতে মারতে পারি। কিন্তু এর পেছনের কারণের প্রতি আমাদের কোনো দৃষ্টিপাত নেই। যদি সরকার এর বিমাতাসুলভ আচরণ না থাকতো তাহলে কি এই ধরনের সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের উত্পত্তি হতো? এই প্রশ্নটা মনে হয় সবার আগে করা উচিত!!
এবার দেখা যাক পার্বত্য অঞ্চলগুলোর বর্তমান অবস্থা। এখনো কি সরকার তার স্বাভাবিক আচরণে এসেছে নাকি এখনো বিমাতাসুলভ আচরণ বিদ্যমান? খোদ পাহাড়িদের জিগ্গেস করলে এখনো তাদের অসন্তোষ শোনা যায়। পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ এখনো হচ্ছে। পাহাড়ি মেয়েরা ধর্ষিত হচ্ছে। কল্পনা চাকমা'র ঘটনা এতো বছর পরেও মিমাংসা হয়নি। তাহলে আপনি কি এই অঞ্চলের মানুষগুলোর থেকে সামগ্রিক সহযোগিতা আশা করবেন নাকি বৈরীতা??
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আপনার যুক্তিটা ঠিকই লাগছে। মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা জাতিভেদে তফাৎ করেন নাই দেখে ভালো লাগলো। অন্যের দেশের সংখ্যালঘু নিয়ে বলা সহজ। নিজের দেশেরটা নিয়ে বলতে বিশেষ ধরনের বিবেক লাগে। সেই বিবেকটাই থাকা দরকার।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
লেখাতে দেখবেন, উল্লেখ আছে, তিব্বত এর রাজনৈতিক কাঠামোর কোনো একক স্থিতিশীলতা ছিলো খুব কম সময়ের জন্য। বারবার হাতবদল হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিছু কিছু এলাকা ছাড়া বাকি এলাকাগুলো দালাই লামার অধীনে পরিচালিত হতো। তিব্বতে কখনই অভ্যন্তরীণ কোনো কারণে বড় ধরনের কোনো রক্তপাত হয়নি। যে ধরনের সাংঘর্ষিক ঘটনা হয়েছে তার সবগুলোই বাইরের কোনো শক্তির অধিগ্রহনের ফলে। আর তিব্বত যদি চীন এর অংশই হতো তাহলে সেখানে "পিপলস লিবারেশন আর্মি" পাঠানোর কি প্রয়োজন ছিলো কিংবা সেখানে রক্তপাতের কি কারণ ছিলো? এছাড়াও যে চীনের হিসেবেই ৩ মিলিয়ন মানুষের মিসিং স্ট্যাটেস্টিক দেখানো হচ্ছে এর পেছনের কি কারণ থাকতে পারে? শান্তিপূর্ণ এই ভূখন্ডে সেনা অধিগ্রহণ কি সমর্থনযোগ্য?
তাহলে ব্রিটিশ সৈন্যদের হাতে ধরা পড়ার পরে সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করাটাও ব্রেইন ওয়াশের মাঝে পড়ে?
স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া কি ব্রেইন ওয়াশ নাকি দৃঢ় সংকল্পের মানসিকতা? এখানে খেয়াল রাখবেন আগুনে আত্মাহুতি দেয়া এই মানুষগুলো কিন্তু কোনো সুফল ভোগ করছেনা এমনকি জানতেও পারছেনা তিব্বত এর ভবিষ্যত কি !!
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
শত্রুর হাতে ধরা পড়ে সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা হল অপেক্ষাকৃত কম বেদনাদায়ক মৃত্যুর পন্থা বেছে নেয়া, শত্রুর অত্যাচার সইতে না পেরে দলের তথ্যাদির গোপনিয়তা রক্ষা করার পন্থা, এর অডিয়েন্স মিডিয়া নয়। গায়ে আগুন দেয়া ও সুইসাইড বম্বিং এর অডিয়েন্স হল মিডিয়া ও পাবলিক। এখানে লোক দেখানো বেদনাটাই যেহেতু অস্ত্র, তাই যত নাটকীয় করা যায় ততই ভাল।
পার্থক্যটা বোঝা যাচ্ছে?
এখন আপনি নিজের সাথে দরকষাকষি করছেন। আগে ঠিক করুন, জাতিসংঘের স্বীকৃত নথি নাকি সিটিএ-এর বক্তব্য - কোনটিকে আপনার বক্তব্যের ভিত্তি হিসাবে ব্যাবহার করবেন।
আমি আপাতত দ্বিপাক্ষিক চুক্তিকে আমার মতামতের ভিত্তি ধরছি। একটি রাজনৈতিকভাবে ক্ষুদ্র, মৌলবাদি, ও সন্ত্রাসের সমর্থক দলের বক্তব্যকে আপাতত অগ্রাহ্য করছি।
আপনি যেটাকে সেনা অধিগ্রহন বলছেন, চীন ও ম্যাঙ্গো তিব্বতিরা (১৯৫১ সালের চুক্তিতে) সেটাকে বলছে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা। যতক্ষন চীনা সৈন্য তার দেশের সীমানার ভেতরে থাকছে, তাতে কারো কিছু বলার নেই। ম্যাঙ্গো তিব্বতি ইয়ুথ কংগ্রেসের কাজকামকে কিভাবে দেখতে পারে, সেটা বুঝতে তাপসদার কিছু কথা কোট করলামঃ
"এরা কোনদিন এদের স্বগোত্রের সমর্থন পান নি। টুকটাক বিচ্ছিন্নভাবে ওরা কিছু মানুষকে কাছে টেনেছেন ওদের কার্যকলাপে। এবার বলি আপনি যদি এদের ইতিহাস জেনে থাকেন ( বলেছেন যখন, জানেন নিশ্চয়ই ) তাহলে আপনার ভালোই জানার কথা এরা বেশীর ভাগই উপজাতি এবং এরা উপজাতিদের মুক্তির দাবি জানায় এবং রাস্ট্র চায়, রাস্ট্র ক্ষমতা চায়। কিন্তু পূর্বত্তোরের রাজ্যগুলিতে এই সমস্ত উপজাতি জঙ্গীদের জঙ্গিপনায় সবচেয়ে অত্যাচারিত হলেন উপজাতিরাই। কি বীভৎস সেইসব ঘটনা তা আপনাকে উদাহারণ দিতে গেলে লিখে দেওয়া সম্ভব নয়। ওদের থেকেই ওরা চাঁদা নেয়, ওদের ঘড়ে এসেই ওরা ভাত খায়, পশুদের জবাই দেয় আবার ওদের ঘড়ের ইজ্জতেই হাত দেয়"
***
"অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিছু কিছু এলাকা ছাড়া বাকি এলাকাগুলো দালাই লামার অধীনে পরিচালিত হতো।"
আর সেই দালাইলামা পরিচালিত হতেন বেইজিং এর দ্বারা। বেইজিং এর বেড়াল বাইরে গেলে লাসার দালাই/পাঞ্চেম ইদুরেরা মাতবর হয়েছে কখনো কখনো, কিন্তু সেটাই বরং ব্যাতিক্রম।
***
আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ও এর আগের আন্দোলনকে উদাহরন হিসাবে দেখুন। পাকিস্তান ছয়দফা মেনে নেয়নি, আমরা সেটা আন্দোলন করে আদায় করার চেষ্টা করেছি, যার নিষ্ফলতা আমাদের শসস্ত্র সংগ্রামের পথে ঠেলে দিয়েছে। আধুনিক চীনা সংবিধানে তিব্বতের স্বায়ত্বশাসন দেয়াই আছে, সেখানে তিব্বতিরা চীন রাষ্ট্রের ভেতরে আলাদা জাতি হিসাবে স্বীকৃত। তাহলে এই আন্দোলনের সফলতায় যে নতুন রাষ্ট্র গঠিত হবে, সেখানে তিব্বতিদের নতুন কোন অধিকার প্রতিষ্টিত হবে? দুটো - স্বকীয় পররাষ্ট্র ও সামরিক বাহিনী - এই দুটো গঠিত হলে তিব্বতিদের কতটুকু লাভ? যদি সেটা চীন-বান্ধব হয়, তাহলে তো পরিবর্তন খুব কিছু হলনা। যদি সেটা ভারত-বান্ধব হয়, তাহলে তো তিব্বতের কোন লাভ হোক আর না হোক, ভারতের প্রভাববিস্তৃতি সমগ্র হিমালয়ে ব্যাপ্ত হল।
এখন ভেবে দেখুন স্বাধীন ভারত-বান্ধব তিব্বত বাংলাদেশের জন্য কতটুকু মংগলজনক?
না দর কষাকষি করছিনা, উপরে দেয়া অংশটুকুর প্রথম প্যারা লক্ষ্য করুন। সিটিএ এর বক্তব্যকেই মানদন্ড ধরছিনা।
এই অংশটুক আবার পড়ুন !!
আপনি যেই বিষয়গুলোর সাথে তিব্বতীদের আন্দোলনকে তুলনা করে চলেছেন সে বিষয়ে আমি একমত নই। তিব্বতীরা নিজেদের আন্দোলনে আত্মাহুতি দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু যে আগ্রহী নয় তাদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে যাচ্ছেনা। তারা গুলি-বোমা-বন্দুক এসব নিয়ে দৌড়াচ্ছে না এখন। কিংবা কাউকে অপহরণ করে দাবি আদায়েরও চেষ্টা করছেনা। তাই তাদের আন্দোলন আপনি যেভাবে সাধারণ সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সাথে তুলনা করছেন সেখানে আমার দ্বিমত। এছাড়াও এই আন্দোলনের পেছনের মূল উদ্দেশ্যটাও ভিন্ন। তিব্বতীদের আত্মাহুতির পেছনের উদ্দেশ্য স্বাধিকার আন্দোলন, সাধারণ সন্ত্রাসবাদীদের আন্দোলনের পেছনে কোনো কারণ থাকেনা শুধুমাত্র সন্ত্রাস সৃষ্টি করে নিজেদের দাবি আদায়ের প্রচেষ্টা থাকে।
আপনার তথ্যের উপর ভিত্তি করে আপনি যেমন বলে যাচ্ছেন যে সাধারণ তিব্বতীরা স্বাধীনতা চায়না কিংবা এই আন্দোলন সমর্থন করেনা, তেমনি আমি আমার তথ্যের উপর ভিত্তি করে বলছি সাধারণ তিব্বতীরা এই আন্দোলন সমর্থন করে।
তিব্বত সম্পর্কিত আপনার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা সেটা নিয়ে তর্ক হতে পারে কিন্তু যেভাবে আপনি তিব্বতীদের আত্মাহুতিকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে তুলনা করতে শুরু করেছেন সেখানে তর্কের জায়গা দেখছিনা। আর সেনা আগ্রাসনকে যেভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে চীনের অংশ হলেই তিব্বতের উপর অত্যাচার জায়েজ হয়ে যাচ্ছে।
এখানে প্রশ্ন থাকে, দালাই লামার পরিচালনায় সাধারণ তিব্বতীরা সন্তুষ্ট কিনা? যদি সন্তুষ্ট থাকে তাহলে বাইরের লোকের কি সমস্যা?
যদি চীন এর কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা এবং জমি পুনর্বন্টন এ সাধারণ তিব্বতীরা খুশি হতো তাহলে এই কার্যক্রমের শুরুতেই আন্দোলন দানা বেঁধে উঠতো না।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আপনি সমগ্র আন্দোলনটির মাঝে শুধু ভারতের ইন্দন খুঁজে পাচ্ছেন দেখে ওই একটা কথাই মনে হলো, যখনই চীনের বিরুদ্ধে তিব্বতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ গেছে তারা উত্তর দিয়েছে "এই সব কর্মকান্ড পুঁজিবাদী দেশগুলোর চক্রান্ত, যাতে চীনের শক্তি খর্ব হয় ও প্রভাব সীমিত হয়ে পড়ে।"
যদি কুইং রাজত্বের হাত থেকে মুক্তির পরে মঙ্গোলিয়া স্বাধীনতা লাভ করতে পারে তাহলে তিব্বতের স্বাধীনতায় আপনার সমস্যা কি শুধু ভারতের প্রভাবের কথা চিন্তা করে? মঙ্গোলিয়াও একসময় কুইং রাজত্বের হাতে ছিলো তাহলে মঙ্গোলিয়া দখলে চীনের তোড়জোড় দেখা যায়না কেন? এটা কি শুধুমাত্র অবস্থানগত দিক থেকে চীনের কাছে তিব্বতের গুরুত্ব দেখে !
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
এমন আরও অনেক প্রান ঝরবে
অশ্রু গড়িয়ে পরছে অশ্রু পরবে
যা চাচ্ছে সবাই আসছে ওই আসবে
স্বাধীনতা চাইছে সবাই স্বাধীনতায় ভাসবে।
jatra shuru
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
নতুন মন্তব্য করুন