ইরান : স্তালিনের রাশিয়া অথবা আল-কায়েদার আফগানিস্তান কিংবা আরও বেশি কিছু

অরফিয়াস এর ছবি
লিখেছেন অরফিয়াস (তারিখ: মঙ্গল, ২১/০৮/২০১২ - ৯:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বেশ কিছুদিন যাবৎ মধ্যপ্রাচ্য সংক্রান্ত সংবাদগুলো অধিকাংশ স্থান দখল করে থাকছে। আরব বসন্তের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সিরিয়ার ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ এবং একই সাথে ইরানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল এর কূটনৈতিক সম্পর্কের লাগাতর অবনতি এই অঞ্চলটির একটি বিস্ফোরন্মুখ অস্থিতিশীল অবস্থাকেই নির্দেশ করে। একইসাথে পাশ্চাত্যের শক্তিশালী দেশগুলোর সাথে রাজনৈতিক দ্বন্দ এবং ইরানের পারমানবিক শক্তির পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়টি এই অঞ্চলটি ঘিরে ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যবর্তী "কোল্ড ওয়ার" এর মতো আরেকটি স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা করে দিয়েছে।হুরমুজ প্রনালীতে ইরানের নিত্যনতুন সমরাস্ত্র এবং যুদ্ধযানের সফল পরীক্ষা এবং একইসাথে আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো বিতর্কিত কিছু বিষয়ে ইরান নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান প্রকাশ করেছে। তারই জবাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমরশক্তির প্রদর্শন এই প্রনালীর আশেপাশের অবস্থানে দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। বেশকিছু শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজের বহর এবং নৌসেনাদের বেশ বড় একটি অংশ ইতিমধ্যে এই অঞ্চলে অবস্থানও নিয়েছে। একইসাথে সমমনা পরাশক্তিগুলোর সাথে বেশ কিছু যৌথ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ব্যাপারগুলোকে অনেকেই ইরানের প্রতি এই পরাশক্তির একটি আগাম সতর্কবার্তা বলে মনে করেছেন। এছাড়া ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ইরানের বর্তমান পারমানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অনমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো এই অঞ্চলটিকে খুব শীঘ্রই একটি যুদ্ধাবস্থার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

এই রাজনৈতিক বিষয়গুলোর সাথে আরও একটি বিষয় বর্তমানে বেশ আলোচিত হচ্ছে আর তা হলো ইরানের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার লঙ্ঘন। আর এই বিতর্কটি আরও উসকে দিবে "দ্যা টেলিগ্রাফ" পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন। ২০ আগস্ট, ২০১২ তে রবার্ট টেইট এর করা এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা গেছে, ইরানের বেশ কিছু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রায় ৭০ টির মতো উচ্চশিক্ষার কোর্সে সেদেশের নারীদের অংশগ্রহনের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সরকারীভাবে লিঙ্গবৈষম্যের এহেন পদক্ষেপ দেশটির নারীদের অধিকার সম্পর্কে একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। দেশটিতে সাংবিধানিকভাবেই নারীদের প্রতি বিভিন্ন রকমের বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে, আর একারণে বর্তমানে যখন নারীদের সমান অধিকারের আন্দোলনটি অগ্রসর হয়েছে, তখনই সরকারের এহেন সিদ্ধান্ত নারীদের অধিকারের বিষয়ে মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

নোবেল বিজয়ী খ্যাতনামা মানবাধিকার কর্মী শিরিন এবাদী বলেছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য হচ্ছে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যা শতকরা ৫০ ভাগের নিচে নামিয়ে আনা। ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৭টি কোর্সকে শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, বর্তমান সময়ে ইরানের নারীরা শিক্ষার দিক থেকে পুরুষদের থেকে বেশি অগ্রসর হয়েছেন, বিশেষ করে বিজ্ঞানভিত্তিক অনেক বিষয়েই যেখানে একসময়ে পুরুষ আধিপত্য ছিলো সেখানে এখন নারীরা এগিয়ে গেছেন সংখ্যা এবং ফলাফলের দিক থেকে। এই উন্নতিকে ইরানের পুরুষতান্ত্রিক সরকার ও সমাজ উভয়েই হুমকি হিসেবে দেখছে। ইংরেজি সাহিত্য ও অনুবাদ, হোটেল ব্যবস্থাপনা, পুরাতত্ত্ব, নিউক্লিয়ার ফিজিক্স, ইলেকট্রিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে নারীদের অংশগ্রহন রহিত করা হয়েছে। বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই এই ঘোষণার সাথে সংগতি রেখে তাদের ছাত্রীদের প্রতি নোটিশ জারি করেছে। ইউনেস্কোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, যেখানে নারীদের অবস্থান, নারী ও পুরুষ গ্রাজুয়েট অনুপাতে, ইরানে সারা বিশ্বের মাঝে সব থেকে বেশি সেই দেশটিতে সরকারের তরফ থেকে এরকম উদ্যোগ আর কিছুই নয় নারীদের অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। ইরানের শিক্ষামন্ত্রী এই উদ্যোগকে সমর্থন করে, এটি শুধুমাত্র নারী-পুরুষ শিক্ষার্থীর ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি পরিকল্পনা বলে জানিয়েছেন !!

ইরানে এধরনের বিষয় নতুন কিছু নয়। ইসলামিক শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আয়াতুল্লাহ খোমেনীর দেশটির ক্ষমতা গ্রহনের পর থেকেই মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটে চলেছে সরকারী পৃষ্টপোষকতায়। ইরানের "শাহ"দের হাত থেকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা অধিগ্রহনের পর দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন একটি নিয়মিত ঘটনা।রাজনৈতিক ইতিহাসবিদ এর্ভান্দ এর মতে পাহলভি রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে নতুন রাজনৈতিক পরিবর্তনে মানবাধিকার বিষয়ক কোনো উন্নতি হয়নি। ১৯৭১-১৯৭৯ সাল পর্যন্ত যেখানে মাত্র ১০০ জন রাজনৈতিক বন্দিকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল সেখানে ১৯৮১-১৯৮৫ সালের মাঝে ৭,৯০০ রাজনৈতিক বন্দিকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। অভ্যুত্থানের সময় ইসলামিক আন্দোলনকে দেশটির মার্ক্সিস্ট ও বামপন্থীরা সমর্থন করলেও পরবর্তিতে এদের অনেককেই হত্যা করা হয় কিংবা জেলে পাঠানো হয়। সমকামিতা, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক, শিশু অপরাধী, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক বন্দী এসব বিষয়েই ইরান সরকার চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ১৯৮৮ সালে পরিকল্পিতভাবে হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দিকে হত্যা করা হয়। রাশিয়ার লৌহ শাসক স্তালিনের রাজনৈতিক বন্দী নির্যাতন-হত্যা-দমনের মতই ইরানেও বিরোধী মতকে কঠিনভাবে দমন করা হয় এই সময়ে।বিরোধী পক্ষের সমর্থিত সূত্রের ভিত্তিতে, ১৯শে জুলাই, ১৯৮৮ থেকে শুরু হওয়া পাঁচ মাসব্যাপী এই দমন নির্যাতনে প্রায় ৩০,০০০ কর্মীকে হত্যা করা হয়। মানবাধিকার সংস্থা "এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল" এর মধ্যে ৪,৪৮২ জন নিহত রাজনৈতিক বন্দির তালিকা তৈরী করতে সমর্থ হয়েছিল। ইসলামিক আন্দোলনের নেতা এবং ইরানের প্রথম শীর্ষ নেতা খোমেনীর সরাসরি নির্দেশে এই কর্মকান্ড পরিচালিত হয়েছিল বলে প্রমান পাওয়া যায়।

খোমেনীর দেয়া একটি নির্দেশের অংশবিশেষ ছিলো এরকম-

«از آنجا که منافقین خائن به هیچ وجه به اسلام معتقد نبوده و هر چه میگویند از روی حیله و نفاق آنهاست و به اقرار سران آنها از اسلام ارتداد پیدا کردهاند، با توجه به محارب بودن آنها و جنگ کلاسیک آنها در شمال و غرب و جنوب کشور با همکاریهای حزب بعث عراق و نیز جاسوسی آنها برای صدام علیه ملت مسلمان ما و با توجه به ارتباط آنان با استکبار جهانی و ضربات ناجوانمردانهٔ آنان از ابتدای تشکیل نظام جمهوری اسلامی تا کنون، کسانی که در زندانهای سراسر کشور بر سر موضع نفاق خود پافشاری کرده و میکنند، محارب و محکوم به اعدام میباشند.» (رضایی و سلیمی نمین، پاسداشت حقیقت:147)

Translation:

"Since:

PMOI members do not believe in Islam, while pretending otherwise.
Due to their systematic military war in the northern, western and southern Iranian borders ...
Due to their cooperation with Saddam Hussein in war against Iran ...
Due to spying against Iran ...
Due to their connections with Western powers ([acting against Iran's independence]) ...

all those jailed PMOI members who continue supporting PMOI and its positions are considered militant enemies and need to be executed."

এতে পিপলস মুজাহিদিন অব ইরানের সকল গ্রেফতারকৃত সদস্যদের ইরান ও ইসলামের শত্রু উল্লেখ করে তাদের সবাইকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার কথা বর্ণিত হয়েছিল। পরবর্তিতে এই সকল রাজনৈতিক বন্দিকে স্বচ্ছ ও গ্রহনযোগ্য কোনো বিচারব্যবস্থার সম্মুখীন না করেই মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়া হয়। এরকম বিভিন্ন বিষয়ে ইরান সরকার প্রথম থেকেই বিতর্কিতভাবে সাধারণ জনগনের অধিকার লঙ্ঘন করে এসেছে।

ইরানের এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূলে রয়েছে দেশটির রাজনৈতিক মতাদর্শ। দেশটিতে ধর্মীয় শীর্ষনেতার প্রভাব সর্বোচ্চ এবং ইসলামী শরিয়া আইনের মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয়। দেশটিতে রাষ্ট্রীয়ভাবেই সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করা হয়ে থাকে। সরকারিভাবে দেশটিতে মূল জনসংখ্যাকে ধর্মের ভিত্তিতে চারভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। ইসলাম, ইহুদি, খ্রিস্টান এবং জোরাস্ট্রয়ান। কিন্তু অন্যতম বৃহৎ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বাহা ধর্মালম্বীদের সেই দেশে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়না। এমনকি বিভিন্নসময়ে এদের অনেককেই মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত দেয়া হয়েছিল। সংবিধানের ১৩নং আর্টিকেলে দেশটিতে তিনটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে সুস্পষ্টভাবে।

“Zoroastrian, Jewish, and Christian Iranians are the only recognized religious minorities, who, within the limits of the law, are free to perform their religious rites and ceremonies, and to act according to their own canon in matters of personal affairs and religious education.”

ইরানের সংবিধান বাহা সম্প্রদায়ভুক্তদের কোনভাবেই স্বীকার করেনা। একইভাবে তারা নাস্তিক জনগোষ্ঠীকেও স্বীকার করেনা।

ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্যের আরও কিছু নমুনা রয়েছে।

*President of the Islamic Republic of Iran, who must be a Shi’a Muslim (Article 1156)

*Commanders in the Islamic Army (Article 1447)

*Judges, at any level (Article 163 and law of 1983 on the selection of judges)

ইসলাম ধর্মালম্বী ব্যতীত দেশটিতে রাজনৈতিক পর্যায়ে ক্ষমতার অধিকারী হওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের থেকে সংসদে নির্ধারিত আসনে মাত্র একজন করে প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করতে পারে। কিন্তু তারাও কোনভাবেই মূল রাজনৈতিক পরিমন্ডলে কোনধরনের প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম নয়।

একইভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অন্যান্য অধিকারও এক নয়। যদি কোনো মুসলিম নারী-পুরুষ অবৈধ সম্পর্কের কারণে দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে শাস্তি হচ্ছে ১০০ চাবুক। কিন্তু এই একই কাজে যদি একজন অমুসলিম পুরুষ একজন মুসলিম নারীর সাথে জড়িত থাকেন তাহলে অমুসলিম পুরুষের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদন্ড। কিন্তু এই আইনের কোথাও একজন মুসলিম পুরুষ একজন অমুসলিম নারীর সাথে জড়িত থাকলে কি শাস্তি হবে তা উল্লেখ করা হয়নি !!

সমকামিতার ক্ষেত্রে এটিকে অপরাধ বিবেচনা করে মুসলিম অপরাধীর ক্ষেত্রে শাস্তি ১০০ চাবুক কিন্তু অমুসলিম অপরাধীর ক্ষেত্রে শাস্তি মৃত্যুদন্ড।

আর্টিকেল ১০৫৯ অনুসারে একজন অমুসলিম পুরুষ কখনোই একজন মুসলিম নারীকে আইনত বিবাহ করতে পারেননা। কিন্তু একজন মুসলিম পুরুষ একজন অমুসলিম নারীকে বিবাহ করতে পারবেন।

এছাড়াও ১৯৯৩ সালে বাহা সম্প্রদায়ভুক্তদের বিভিন্ন সামাজিক সুবিধা বঞ্চিত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশ জারি করা হয়েছিল যার কথাগুলো ছিলো এরকম-

· “They must be expelled from universities, either in the admission process or during the course of their studies, once it becomes known that they are Bahá’ís.”
· “Deny them employment if they identify themselves as Bahá’ís.”
· “Deny them any position of influence, such as in the educational sector, etc.”
· “A plan must be devised to confront and destroy their cultural roots outside the country.”

তিন লক্ষেরও বেশি সদস্যভুক্ত একটি সম্প্রদায়ের প্রতি এধরনের আচরণ রাষ্ট্রীয়ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত। এছাড়াও শুরু থেকেই এই সম্প্রদায়ের জনগনকে হত্যা-নির্যাতনের মাধ্যমে দমন করা হয়েছে নিষ্ঠুরতার সঙ্গে।

একইসাথে নারীদের ইরানে দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। ১৯শে জুন, ২০০৫ সালে টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আয়াতুল্লাহ খোমেনীর নাতনি জোহরা এস্রাগীর ভাষায় নারীদের অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়-

"Discrimination here [in Iran] is not just in the constitution. As a woman, if I want to get a passport to leave the country, have surgery, even to breathe almost, I must have permission from my husband."

ইরানে পরিবারের পুরুষদের অনুমতি ব্যতিরেকে নারী সদস্যরা কোনো সিদ্ধান্তই নিজেরা নিতে সমর্থ নন। এছাড়াও নারীদের বোরখা ও হিজাব পরিধানের ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থানে দেশটির সরকার। আইনের মাধ্যমে দেশে নারীদের হিজাব ও বোরখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। সেসময় অসংখ্য নারীকে গ্রেফতার পর্যন্ত করা হয়েছিল পোশাকের কারণে। শরীরের কোনো অংশ দেখা গেলে ৭০টি চাবুক কিংবা ৬০ দিনের জেল এর শাস্তি। ২০০৭ সালের এপ্রিল মাস থেকে তেহরানে পুলিশ ভয়ঙ্করভাবে নারীদের এই বাধ্যতামূলক হিজাব পরিধানের ব্যাপারে অভিযান শুরু করে। এই সময়ে নারীদের গ্রেফতার থেকে শুরু করে নানা ধরনের নির্যাতন করা হয়।

১৯৯৭ সালের পরে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কিছু পরিবর্তনের কারণে কিছু সময়ের জন্য নারীদের অবস্থার কিঞ্চিত পরিবর্তন হওয়া শুরু হয়েছিল। এসময়ে সমাজে নারীদের অংশগ্রহন বৃদ্ধি পায় দারুনভাবে। একইসাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা শুরু করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের নারী মানবাধিকার কর্মী শিরিন এবাদী নোবেল পুরস্কারও লাভ করেছিলেন। ১৯৯৭ সালের বিবাহ আইনের মাধ্যমে নারীদের পূর্বের থেকে বেশি অধিকার দেয়া হয় এবং পুরুষদের বিবাহ বিষয়ক স্বেচ্ছাচারিতা কিছুটা রোধ করা হয়। কিন্তু ২০০৭ এর পর থেকে আবার চাকা পেছন দিকে ঘুরতে থাকে। ২০০৮ সালে নতুন প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ আহমদিনেজাদ একটি আইন পাস করেন। এতে বিবাহিত পুরুষকে তার প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই দ্বিতীয় বিবাহ করার অধিকার প্রদান করে তবে প্রথম স্ত্রীকে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ সাহায্য দেয়ার ব্যাপারে উল্লেখ থাকে। পরবর্তিতে এই অর্থসাহায্যের বিষয়টি সংসদে বাতিল হয়ে যায়।

মাহমুদ আহমদিনেজাদ এর আমলে অস্থায়ী বিবাহ (ত্রিশ মিনিট স্থায়িত্ব থেকে শুরু) এর ফতোয়ার প্রয়োগও উল্লেখযোগ্য। এই ফতোয়ার ভিত্তিতে একজন পুরুষ চারটি স্থায়ী বিবাহ এবং যতখুশি অস্থায়ী বিবাহ করতে পারেন। এছাড়াও শরিয়া আইনের মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ের শাস্তি হিসেবে পাথর ছুড়ে হত্যা একটি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। এরকম বেশ কিছু ঘটনা ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রচারিত হয়েছে। ইরানের নারী অধিকার আন্দোলনের প্রতিবাদের ফলস্বরূপ বেশ কিছু এধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবারের সদস্যরা নিজেরাই এই ঘটনা গুলোর সাথে জড়িত। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নারীদের সাহায্য করতে অপারগতা প্রকাশ করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। ইরান ইতিমধ্যে নারী অধিকার রক্ষা আন্দোলনের শীর্ষস্থানীয় অনেক নারীকর্মীদের দেশ থেকে বিতারিত করেছে।

ইরানের আইন অনুযায়ী একজন নারীর জীবনের মূল্য পুরুষের জীবনের মূল্যের অর্ধেক। দুজন নারীর জবানবন্ধি একজন পুরুষের সমান। এরকমভাবেই নারীদের পুরুষদের থেকে নিচু শ্রেনীর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। আর এর পেছনে ব্যবহার করা হয়ে থাকে মধ্যযুগীয় আইন। বর্বর নির্যাতনে ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে অনেক নারী।

নারীদের নির্যাতনের উপরে একটি ভিডিও নিজ দায়িত্বে দেখুন। [নির্যাতনের বেশ কিছু অংশের সরাসরি (রক্তাক্ত) উপস্থাপন রয়েছে]

ইরান শিশু নির্যাতনের ক্ষেত্রেও এগিয়ে আছে। সাড়া পৃথিবীতে ১৮ (ছেলে) এবং ২১ (মেয়ে) বছরের নিচের সবাইকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হলেও ইরানে এই আইন পরিবর্তন করে ছেলে (১৫) এবং মেয়ে (৯) করা হয়। এর উপরের সবাইকে প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধী হিসেবেই বিচার করা হয়ে থাকে। এইক্ষেত্রেও নারীশিশুর বয়স নির্ধারণে অসঙ্গতি লক্ষ্যনীয়। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৩ জন শিশুর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। ২০০৩ সালে ইরানের পার্লামেন্টে এই আইন পুনরায় বিবেচনার জন্য তোলা হলে এই বিলে বিরোধিতা করে "গার্ডিয়ান কাউন্সিল অভ দ্যা কনস্টিটিউশন" । ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিল অভ দ্যা কনস্টিটিউশন এর ১২ জন সদস্যের, দেশের সংসদের উপস্থাপিত বিল এর বিরুদ্ধে
ভোট দেয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতা রয়েছে। শিশু অধিকার বিষয়ের এই প্রসঙ্গে ২০০৮ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমদিনেজাদকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,

"the legal age in Iran is different from yours. It’s not eighteen ... it’s different in different countries."

["ডেমোক্রেসি নাউ"]

১০ই ফেব্রুয়ারী, ২০১২ সালে ইরানের সংসদ শিশু মৃত্যুদন্ডের এই বিতর্কিত আইনটির পরিবর্তন করে। বর্তমানে উভয় লিঙ্গের জন্যই ১৮ বছর নির্ধারণ করে আলাদা আইনে বিচার করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।

মৃত্যুদন্ড কিংবা ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট এর ব্যাপারেও ইরানে রয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘন। এই শাস্তির হারও এখানে বেশি। ২০০৮ সালে সরকারী হিসেবে ৩৪৬ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। ২০০৯ সালে ২৫২ জনকে সরকারীভাবে মৃত্যুদন্ডের আসামি দেখানো হলেও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে আরও ৩০০ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। ২০১১ সালের প্রথমার্ধে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসেব মতে প্রতিদিন গড়ে ২জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। যার অধিকাংশের বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছিল। কিন্তু পর্যবেক্ষকদের মতে এই অভিযোগের ভিত্তি সন্দেহাতীত নয়। এছাড়াও ইরানে হাত কিংবা পা কেটে ফেলে শাস্তি দেয়ার ঘটনাও নিয়মিত।

ইরান সরকার যেকোনো প্রতিবাদ কিংবা সমাবেশকে শক্ত হাতে দমন করেছে। ১৯৯৯ এর জুলাইয়ে ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ৪০০ এর বেশি প্যারামিলিটারি হামলা করে। এতে প্রায় ১৭ জন নিহত হয়। ১,৫০০ এর মতো ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। ২০০৯ এর নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনে অসংখ্য সাধারণ মানুষ নিহত হয়। গ্রেফতার করা হয় অজস্র প্রতিবাদকারীকে। কারো কারো মতে নিহতের সংখ্যা ৩০ এর মতো এবং গ্রেফতারকৃত ২,৫০০।

১৯৮৫ এর সংবাদ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ আইনের মাধ্যমে খবর প্রকাশ এর উপরে সরকারী নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয় এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়।
"রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডার্স" ২০০৭ এর সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক জরিপে ১৬৯টি দেশের মাঝে ইরান স্থান পায় ১৬৬ নাম্বারে। ২০০৭ সালে ৫০ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়। ২০০০ থেকে ২০০২ সালের মাঝে বন্ধ করে দেয়া হয় ৮৫টি সংবাদপত্র। মানবাধিকার বিষয়ক ব্লগার কৌহার গৌদরাজি দুইবার গ্রেফতার হন। ৩১শে জুলাই, ২০১১ তে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন তবে তার অবস্থান সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মাধ্যমের কাছে কোনো খবর প্রকাশ করেনি ইরান সরকার।
এছাড়াও মোহাম্মদ সাদিঘ এবং বহমান আহমাদি নামক দুজন মানবাধিকার বিষয়ক কর্মী ইরান সরকারের রোষের শিকার হয়ে কারাগারে আছেন।

ইরান সরকারের রোষ এবং বৈষম্যের শিকার সেদেশের সমকামী এবং অন্যান্যরাও। ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭, নিউইয়র্ক এর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমদিনেজাদ বলেন-

In Iran we don’t have homosexuals like you do in your country. This does not exist in our country.

অন্যান্য মানবাধিকারের মতো এলজিবিটি (লেসবিয়ান,গে,বাই-সেক্সুয়াল,ট্রান্সজেন্ডার) অধিকারও ইরানে নেই। যার ফলে ইরানের সেক্সুয়াল মাইনরিটিদের ক্ষেত্রে চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। ইরানে সমকামীদেরকে সমাজে অস্বীকার করা হয়ে থাকে। আর এধরনের সম্পর্ককে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ইরানে একটি পরিসংখ্যানমতে প্রায় ১লক্ষের কাছাকাছি ট্রান্সজেন্ডার রয়েছে। ইরান সরকারের এদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে লিঙ্গ পরিবর্তনের অপারেশন এর সংখ্যায় শীর্ষস্থানে রয়েছে এই দেশটি থাইল্যান্ডের সাথে। প্রতিবছর এই অপারেশন ও হরমোন চিকিৎসার পেছনে বিশাল অঙ্কের খরচ করতে বাধ্য হচ্ছে এধরনের পরিবারগুলো।

এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে সমকামী দম্পতিকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে ইরানে। ২০১১ সালের শেষের দিকে এভাবেই ইসলামী পেনাল কোড ১০৮ ও ১১০ এর ভিত্তিতে ইরানে তিনজনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

ইরানে এধরনের অনেক নাগরিকই সরকারী নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে এরকমই ১২৫ জন নাগরিকের তথ্যের ভিত্তিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তৈরী করে তাদের “We Are a Buried Generation” রিপোর্টটি। বর্তমানে সমকামীদের অধিকার (LGBT) বিষয়ক ব্যাপারটি ইরানের মানবাধিকার আন্দোলন কার্যক্রমের অন্যতম একটি অংশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

এই লেখাটি ইরানের মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ক তথ্যের একটি ভগ্নাংশমাত্র। বর্তমানে ইরান মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে সাথে গোপনে মৃত্যুদন্ড দেয়ার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। পারমানবিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে টানা-পোড়েন শুরু হলেও ইরানের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে কোনো রকমের কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। একইসাথে বরাবরের মতো ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘ। কিন্তু প্রায় সকল দিক থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে প্রক্রিয়া ইরানের কট্টরপন্থী সরকার অব্যাহত রেখেছে তার সম্পর্কে আশু সমাধান সুদূর পরাহত মনে হয়।

রাশিয়ার স্তালিনের হাতে বিরোধীমত দমনের নৃশংস নির্যাতন-নিপীড়ন সমগ্র বিশ্বে কম্যুনিজম মতবাদকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে একই সাথে ব্যক্তিস্বার্থে চরমপন্থার দিকটি উন্মোচন করে। পাশ্চাত্য দেশগুলোর স্বার্থে ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং কট্টরপন্থীদের হাতে আফগানিস্থানের ক্ষমতা যাওয়ার পরে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমূল পরিবর্তন আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে বিমান হামলার পরে। সমগ্র বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের নামে পাশ্চাত্য শক্তির মহড়া চলে। বর্তমানে ইরানের এধরনের কার্যক্রম এমনই একটি নতুন চক্রের সূচনা করবে কিনা এরকম সন্দেহ উড়িয়ে দেয়া যায়না। ইরানে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে পাশ্চাত্য শক্তিগুলোর প্রবেশ হয়তো সময়ের অপেক্ষামাত্র। আর একইসাথে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীল একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে বিশ্বরাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘাতই হয়তো এর ভবিষ্যত।

এখন দেখার বিষয় দুটি পাগলা রাজার হাতে ইট দিলে কি ঘটে আর দাবার ঘুঁটি কে আগে চালে !!

[বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন মাধ্যম বিশেষ করে ব্লগ এবং সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতে ইরানের প্রশাসনিক কাঠামো এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমদিনেজাদকে আদর্শ বিবেচনা করে নানা ধরনের লেখা, ছবি এবং তথ্য ছড়ানো হয়ে থাকে। যার মাঝে ধর্মীয় শুদ্ধতার একটি আবেশ কৌশলে মানুষের মনে প্রবেশ করানোর চক্রান্ত থাকে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইরান সরকারের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যক্রম এড়িয়ে যাওয়া হয়। এখন এসব ছবি ও তথ্য যারা ধর্মীয় আবেগের বশবর্তী হয়ে প্রচার করে তাদের সবাই কি মধ্যযুগীয় এরকম সমাজ ব্যবস্থায় ফিরে যেতে আগ্রহী কিনা এই প্রশ্নটা থেকে যায়। আর নারী প্রচারকারীরা ইরানের নারীদের মতো দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকায় সন্তুষ্ট কিনা সেটাও যৌক্তিক প্রশ্ন বৈকি।]

পাদটীকা

  • ১.

    তথ্য সংগ্রহ-
    ১. এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
    ২. হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
    ৩. দ্যা টেলিগ্রাফ
    ৪. দ্যা গার্ডিয়ান
    ৫. “We Are a Buried Generation” [Discrimination and Violence against Sexual Minorities in Iran]
    ৬. Discrimination against religious minorities in IRAN- Report presented by the FIDH and the Ligue de Défense des Droits de l’Homme en Iran
    ৭. উইকিপিডিয়া


মন্তব্য

কৌস্তুভ এর ছবি

কয়েকটা পয়েন্ট:

১) ইরান সম্পর্কে পটভূমিটা আরেকটু স্পষ্ট করা উচিত ছিল। কেন শাহের হাত থেকে ইসলামী গোষ্ঠীর কাছে ক্ষমতা গেল, কোন সময়ে, সেটা দরকার। আর এখন ইরানের ক্ষমতার উৎস কী - চীনের সমর্থন, এবং তাদের তেলের ভাণ্ডার (যেটার গ্রাহক ভারতও), সেটা বলা দরকার।

২) "২০০৭ সালের এপ্রিল মাস থেকে তেহরানে পুলিশ ভয়ঙ্করভাবে নারীদের এই বাধ্যতামূলক হিজাব পরিধানের ব্যাপারে অভিযান শুরু করে। এই সময়ে নারীদের গ্রেফতার থেকে শুরু করে নানা ধরনের নির্যাতন করা হয়।

১৯৯৭ সালে এই অবস্থার কিঞ্চিত পরিবর্তন হয়। এসময়েই সমাজে নারীদের অংশগ্রহন বৃদ্ধি পায় দারুনভাবে।"

২০০৭ এর অবস্থা ১৯৯৭ এ কীকরে পরিবর্তিত হবে? ক্রোনোলজির সিকুয়েন্স ঘেঁটে গেলে খুব মুশকিল।

৩) খোমেইনির বাণী দিলেই যদি তো সাথে অনুবাদটাও দেওয়া উচিত ছিল, আমাদের কথা ভেবে।

৪) 'সাড়া পৃথিবীতে' টাইপের কিছু ছোটখাট বানান ভুল আছে।

অরফিয়াস এর ছবি

ইরানের রাজনৈতিক পটভূমি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত দেয়া উচিত ছিলো এটা জানি, কিন্তু তাতে আবার আরেকটা লেখার সমান দীর্ঘ হতো। তবে শাহদের আমলে যে পরিমান দুর্নীতি হতো কিংবা যতোটা পাশ্চাত্য ঘেষা আচরণ ছিলো তার থেকে বহুগুন বেশি অবনতি ঘটেছে এখন সব দিক থেকেই তারপরেও কেন রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলো এমন আমূল ভাবে সেটা আমার কাছেও পরিষ্কার হচ্ছেনা। আর যেহেতু আমি বর্তমান মানবাধিকারের বিষয়টির উপরে জোর দিতে চাইছিলাম, তাই আর রাজনৈতিক বিষয়ে গভীরে যাইনি।

তথ্য উপস্থাপনে যে অসঙ্গতি ছিলো সেটা ঠিক করে দিলাম। ক্রোনোলজির সিকুয়েন্সটা আগে পরে হয়ে গিয়েছিলো।

খোমেনীর অনুবাদ যেটা উইকিতে ছিলো তুলে দিলাম।

বানান ভুলগুলো চোখে পড়ছেনা এখন। দেখি আরেকবার দেখে ঠিক করে দিবো পরে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

দুর্দান্ত এর ছবি

ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরবার জন্য় ধন্য়বাদ। আসলেই সেখানে মানবাধিকার বলে কিছু অবশিষ্ট নেই।

***

ওসব লেখায় আহমেদিনেজাদকে যেভাবে ধর্মীয় শুদ্ধতার একটি আবেশে পরিবেশন করা হয়, এতে আপনি কোন ধরনের অসুবিধা দেখেন যদি বলতেন। সুবিধার জন্য় কিছু উদাহরন দেইঃ

- আহমেদিনেজাদ আসলে ধার্মিক নন, তবুও তাকে ধার্মিক হিসাবে দেখানো হয়।
- আহমেদিনেজাদ ও তার অনুসারিরা যেভাবে ইসলাম পালন করে, সেটা শুদ্ধ ইসলাম নয়, শুদ্ধ ইসলামের বানী নারী ও মানবাধিকার রক্ষার পক্ষে।
- ইরানী শরিয়া আইন ইসলাম পরিপন্থী।
- ইরান ইসলামের ভুল প্রয়োগ করেছে।

ওপরের কোন বাক্য়টি আপনার অসুবিধার কাছাকাছি বিবরন?

অরফিয়াস এর ছবি

আগের মন্তব্যটা থাকতো, এটা নতুন করে দিতেন, ঐটা মজার ছিলো।

নাহ শুধু আহমেদিনেজাদ বিষয়ক লেখাই নয়, ইরান বিষয়ক লেখাও। সেখানে ধর্মীয় শুদ্ধতা এবং ধর্মপ্রাণ এই দুটির মোড়কে তাদের এই অপকর্মগুলো ঢেকে পরিবেশন করা হয় এটাই সমস্যা। শরিয়া আইন তো অনেক ক্ষেত্রেই মানবতা পরিপন্থী, কিন্তু আমি যদি এই আইনের প্রচারকের ভালোমানুষী দেখিয়ে এই আইনের খারাপ দিকগুলো ঢাকতে চাই সেটা ঠিকনা এই আরকি।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

দিগন্ত এর ছবি

আমার সুবিধার মতামত - ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতির জন্য দায়ী পশ্চিমা বিশ্ব।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এর দায় সোভিয়েত ইউনিয়নের। তুদেহ পার্টি শুধু একটু কষ্ট করে ক্ষমতাটা নিয়ে নিলেই আর খোমেনি গং ক্ষমতায় আসতে পারে না। কিন্তু ব্রেজনেভ গং সেই ´সময় তুদেহ পার্টিকে বলেছে মৌলবাদীদের সহায়তা করতে। এই ইতিহাসটা মনে পড়লেই ব্রহ্মতালু জ্বলে যায়।

দিগন্ত এর ছবি

সব দায় সোভিয়েতদের আর কোনো দায় নেই ইরানীদের? এ তো আমাদের দেশের ইতিহাস হয়ে গেল - আমরা পিছিয়ে আছি ব্রিটিশদের জন্য গোছের।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অরফিয়াস এর ছবি

আমি কিন্তু অবাক হয়েছি রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য মৌলবাদীদের লেফটিস্টরা সমর্থন করেছে দেখে। মৌলবাদীরা ক্ষমতায় এসে তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বেশ ভালোই প্রতিদান দিয়েছে বলতে হবে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

দিগন্ত এর ছবি

এই খেলাটা একপেশে না। ঐ সময়ে পশ্চিমও মৌলবাদীদের ভালই সমর্থন দিয়েছে আর সময় বুঝে মৌলবাদীরাও পশ্চিমকেও ভালই প্রতিদান দিয়েছে। শাহের সাথে মার্কিণদের খাতিরের কারণে খোমেনী হলেন নাস্তিক সোভিয়েত বন্ধু, আর আফগান মুজাহিদিন ওসামা (বা মোল্লা ওমর) ছিল মার্কিণ বন্ধু।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অরফিয়াস এর ছবি

হুমম, তা, জানি। খেলার দান কবে কিভাবে উল্টে যায় সেটাই মজার। আগে পাকিস্তানকে সব থেকে বড় অর্থ সাহায্য দিতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এখন তারা সেটা বাতিল করছে ধীরে ধীরে। সেদিন খবরে পড়লাম খোদ পাকিস্তান সরকার নাকি জঙ্গিদের অর্থ সাহায্য দেয়া বন্ধ করে দিচ্ছে। এরা বসিয়ে বসিয়ে জঙ্গি আর বোমা নিয়ে খেলতে দিয়েছে, এখন যেমন পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে নিজের বাড়িতেও আঁচ লাগে সেরকমই নিজের দেশেই জঙ্গিরা সকাল বিকাল বোমা মারে। এখন নিজের পুটু বাঁচাতেই দৌড়াতে হচ্ছে এদিক-ওদিক।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি সব সময়ই নিজের স্বার্থ ছাড়া অন্যকিছু না দেখে কাজ করেছে। এখনও তাই করবে। তারা এতদিন মজা দেখেছে, কিন্তু হঠাৎ পুটু মারা খেয়ে এখন সামলে নিচ্ছে।

এদিকে রাশিয়াও বুড়ো বাঘ। জোর নেই কিন্তু হাঁকডাক আছে। তাই সিরিয়ার ব্যাপারে বিশ্ব একদিকে তারা আরেকদিকে।

রাজনীতির নোংরা খেলায় আসলে বুক-পিঠ নেই।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তারেক অণু এর ছবি

রাজনীতির নোংরা খেলায় আসলে বুক-পিঠ নেই। রেগে টং কি করি এই গাধাদের নিয়ে!

অরফিয়াস এর ছবি

কিছু করার নাই, অনুদা।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

দিগন্ত এর ছবি

আমেরিকায় এসে ইরানী জাতিগোষ্ঠীর যতজনের সাথে পরিচিত হয়েছি প্রায় প্রত্যেককেই আমার খুব ভাল লেগেছে। কিন্তু সবাই নিজের দেশ নিয়ে নিরাশাবাদী। আমার মনে হয় ইরানে হয়ত আরেকটা রেভলিউশন আসন্ন যাতে আবার এই ধরনের নিয়মকানুন উঠে যাবে। তবে সেই সময়েও পশ্চিমা চক্রান্তের অভিযোগ পিছু ছাড়বে না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অরফিয়াস এর ছবি

আমার পরিচিতর মাঝে যেকজন ইরানি ছিলো তাদের জীবনযাত্রা দেশে একরকম অন্যদেশে আরেকরকম। তবে যতক্ষণ না পর্যন্ত ধর্মীয় অনুশাসনের খারাপ দিকগুলো মানুষ স্বীকার করে নিচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত মনে হয়না বিপ্লব সম্ভব। এইযে মিশরেই দেখুন, এতো বিপ্লব করে মুসলিম ব্রাদারহুড এলো কিন্তু এদের প্রধানমন্ত্রী এসেই ঘোষণা করলো, শরিয়া আইনই হবে প্রধান আইন। এখন বিপ্লব যারা করেছিলো তারা দ্বিধাবিভক্ত এবং হতাশ!!

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সাইদ এর ছবি

মিশরের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত। ইরান আর মিশরের প্রেক্ষাপট একই রকম নয়। তবে মিশরের এই সরকার কদ্দিন ক্ষমতায় থাকে বা থাকতে দেয়া হয় এটাও দেখার বিষয়।

অরফিয়াস এর ছবি

ইরান আর মিশরের প্রেক্ষাপট এক না হলেও ইরানের ইসলামিক বিপ্লবও বিপুল সমর্থনের মাধ্যমেই এসেছিলো চিন্তা করে দেখুন মাক্সিস্ট আর বামপার্টিও সমর্থন করেছিলো পরিবর্তনের আশায় যদিও পরে সবাইকেই মাশুল দিতে হয়েছিল।

মিশরের সরকার কতদিন ক্ষমতায় থাকে এটা আসলেই দেখার একটা বিষয়।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

দিগন্ত এর ছবি

আমার তো ধারণা মুসলিম ব্রাদারহুড আগে থেকেই ইসলামী শাসনের পক্ষে ছিল ও জনগণ জেনেশুনেই তাদের এনেছে। যারা বিপ্লব করেছিল তারা যদি হতাশ হয় তাহলে সেটা তাদের সমস্যা যে তারা দেশের বাকি জনগণের মতের বিষয়ে কোনও ধারণা পোষণ করে নি।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অরফিয়াস এর ছবি

কিছু খবরে দেখলাম আন্দোলনকারীরা গণতন্ত্রের বদলে শরিয়া আইনের কথা শুনে মুখ আমসি করে বসে আছে!!

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

দিগন্ত এর ছবি

"গণতন্ত্রের বদলে শরিয়া আইনের" - আমার তো ধারণা দুটোই থাকছে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অরফিয়াস এর ছবি

দুটো পাশাপাশি চলতে পারবেনা, ইরানের অবস্থাই হবে শেষমেষ !!

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

ইরানে বিপ্লব হয়েছিল আয়াতুল্লাহ্-এর নেতৃত্বে আর মিশরের বিপ্লব কিন্তু এ জাতীয় কোন নির্দিষ্ট ব্লকের মানুষদের দ্বারা হয়নি।
ইরানে বিপ্লবের মাধ্যমে শাহদের হতে ক্ষমতা আয়াতুল্লাহদের মত ধর্মবাদীদের কাছে স্থানান্তরিত হয়েছিল। মিশরে কিন্তু এরকম নির্দিষ্ট কোন পক্ষ বিপ্লবের নেতৃত্ব দেয়নি। মিশরে আম-জনতা স্বত:স্ফূর্ত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হোসনিকে সরিয়ে দেয় এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের FJP ক্ষমতায় আসে। ৭৫% ভোটার ইসলামপন্থী দলগুলোকে ভোট দিয়েছে। এখানে, মিশরীয়রাই যদি শরিয়া আইন চাই, তাহলে, অন্যদের কিছু বলার অবকাশ থাকে কি?
প্রকৃত বাস্তবতা হল: মিশর বা, আরব রাষ্ট্রগুলোতে গণতন্ত্র প্রথা প্রতিষ্টার জন্য মুসলিম ব্রাদারহুড বা, 'ইসলাম ও আরব জাতীয়বাদের' ব্যানারের রাজনৈতিক দলগুলো হতে ভিন্ন বা, বিকল্প রাজনৈতিক দল কি প্রতিষ্টা পেয়েছে?
আমি বাস্তবতার কথা বলছি।

অরফিয়াস এর ছবি

চলুক

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

দিগন্ত এর ছবি

ইরানে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট হলে অনেক আগেই শাহ সরে গিয়ে খোমেনির আসার কথা। অভ্যুত্থানের দরকার হয়েছিল কারণ শাহের পেছনে সি-আই-এ আর আমেরিকা ছিল। মিশরে মার্কিনিরা সেভাবে কোনো নাক গলায়নি বা গলাতে পারেনি।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

স্বয়ম এর ছবি

মিশরের রাজনৈতিক অবস্থার দিকে ভালোভাবে নজর দিলে এক ধরনের শূণ্যতা লক্ষ্য করা যায় বিশেষত যখন আন্দোলন চলছে। মুসলিম ব্রাদারহুড ছাড়া কোনও সংগঠিত শক্তি নেই। মজার বিষয় হলো আন্দোলনের শুরুর ধাপে কিন্তু এই দল নিষ্ক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। তখন তূলনামূলক কম শক্তির ও সংগঠিত আঞ্চলিক ট্রেড ইউনিয়ন এর নেতৃত্ব দিয়েছে। আর আরেকটা বিষয় খুব খেয়াল করার দাবী রাখে, তা হলো মোবারকের বিরুদ্ধে যেদিন বিক্ষোভ শুরু হয় তার পরদিন তার জেনারেল তানতাবি জরুরিী সফরে হোয়াইট হাউজে উপস্থিত। এটা ভাবনার দাবী রাখে। এল বারাদীর আগমন, সম্প্রসারণ, িঅন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন, নির্বাচনের পন্থা, এরই মাঝে একাধিকবার বল্যাক আউট করে নির্বিচারে গুলি করে আন্দোলনকারীদের হত্যা, এর ভেতর থেকে মুসলিম ব্রাদারহুডের জয়ী হওয়া, নির্বাচন মেনে না নেওয়া, পুন নির্বাচনের আন্দোলন এবং এসবকে ছাপিয়ে বিশ্ব মুরুব্বি আমেরিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রব তোলা এসবকে খতিয়ে দেখা দরকার এ কারণে যে, এ আন্দোলনকে বিপ্লব হিসেবে যে আমেরিকা বা পশ্চিমা বিশ্ব চিহ্নিত করেছে সেই আমেরিকাই বিপ্লব সম্পন্নের চিহ্নায়ন দেখিয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয়টি অনেকাংশে জড়িত, সম্ভব হলে পরে আলোচনা করার ইচ্ছে আছে।
ধন্যবাদ

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অতিথি লেখক এর ছবি

ইরানের রাজনৈতিক বিবর্তনের ইতিহাস সম্পর্কে আরো জানতে "পার্সেপোলিস" মুভিটা দেখতে পারেন --

পার্সেপোলিস ট্রেইলার

আর দেশের কট্টোর মৌলবাদীরা যে "ইরানী ইউটোপিয়ার স্বপ্নে আচ্ছন্ন" এই ব্যপারটার সাথে পুরাপুরি একমত নই, কট্টোরদের ভিতর "শিয়া" সম্প্রদায়ের ব্যপারে যথেষ্ট বিরক্তি/নাঁক-শিটকানি বিদ্যমান -- বিশেষ করে ইরানের ঈমামতন্ত্র (১২ ইমাম), মসজিদে আলীর পোর্ট্রেট রাখা, টুপির/রুমালের সাথে সেলাইকৃত কারবালার মাটির টুকরা (নামাজের সময় সেজদা দেওয়ার জন্য, যা মোটামোটি সব ধার্মিক ইরানীর পকেটে পাওয়া যায়), ইরানের ঘরোয়া মদ (হোমব্রিউ ওয়াইন) উৎপাদনের সংস্কৃতি, এসব ব্যপারে দেশের কট্টোরদের ঘোর আপত্তি -- তবে নারীশিক্ষার মূলোৎপাটন, শরীয়া আইন এই দুইটা ব্যপারে তাদের জোর সমর্থন আছে, যা সবসময় ইরানী পলিসির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়।

-- রামগরুড়

অরফিয়াস এর ছবি

দেশের মৌলবাদীরা পুরোপুরি কারো স্বপ্নেই আচ্ছন্ন মনে হয়না। তারা সবার থেকে কুড়ায়, তারপরে মিলে-বেটে খাওয়ায়। যাদের থেকে একটু বেশি পাতে পায় তাদের গুণ একটু বেশিই গাওয়ার চেষ্টা করে। ইরানের প্রেসিডেন্ট কতো মহান সেটা দেখানোর জন্য অনেককেই আপ্রাণ চেষ্টা করতে দেখি, এটাতো উড়িয়ে দিতে পারছিনা। তবে সব মৌলবাদীরাই নারী স্বাধীনতা ও উন্নত নারী সমাজকে ভয় পায়। আমাদের দেশেও পায় তবে কিছু নারী নিজেরাই শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকতে উত্সাহী হওয়ায় তাদের জন্যই সমস্যা। আমি নিজেই অনেক শিক্ষিত নারীকে হিজাব-বুরখার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করতে দেখেছি শুধু তাই নয়, পুরুষের দাবড়ানিতে থাকতে তাদের মোটেও আপত্তি নেই।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

দুর্দান্ত এর ছবি

একজন খুব শক্তিশালি-মোটামাথা নেতা দেশের গুন্ডাপান্ডাদের ঘাড়ে চড়ে নাচবে আর তার ক্ষমতাকে বৈধতা দেবে আদর্শিক পুরোহিতেরা। সাধারন মানুষের হাড়-মাংস জ্বালিয়ে এদের রাজনৈতিক-আদর্শিক সিদ্ধি ঘটবে।

এসিরিয়ান-মিডিয়ান-আকিমেনিড-সেলুসিড-পারথিয়ান-সাসানিড-উমাইয়াদ-আব্বাসি-গজনবি-সাফাওয়ি-পাহলবি থেকে আজতক এই কাঠামোই চলছে।

দেশটার একটি বড় অংশ এই কাঠামোতে প্রজন্মান্তরে অভ্যস্ত। বাইরে থেকে গণতান্ত্রিক পরিবর্তন রপ্তানির চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু ফলাফল প্যালেস্টাইন বা মিশরের চাইতে ভিন্ন কিছু হবে কি? উপসাগরের ওপারের শক্তিরাও এখানে নিয়ামক। তারা ইরানের জুজু দেখিয়েই ক্ষমতায় আছে। ইরানে 'মানবাধিকার' এলে শুধু আহমেদিনেজাদ বা আয়াতুল্লাহ'র পায়ের নিচের মাটি সরে যাবেই, কিন্তু সেইসাথে তেলআবিব, রিয়াদ, আবুধাবি, দোহায়ও প্রচন্ড ভুমিকম্ব হতে পারে।

অরফিয়াস এর ছবি

আরব বসন্তের ঢেউ লাগতেও পারে। তবে ঢেউ লাগলেই যে সবাই দুলে উঠবে তা নাও হতে পারে। তবে সব জিনিসেরই একটা থ্রেশোল্ড পয়েন্ট আছে এর উপরে গেলে ভাঙ্গবে তো অবশ্যই। তবে সেটা কবে এবং কিভাবে সেটাই মুখ্য আলোচনার বিষয়।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

আরব বসন্তের ঢেউ লাগলেও অবস্থার পরিবর্তন হবে কি?
আমার তা মনে হয় না।
পরিবর্তন আসবে এটা ঠিক; আর তা হল: 'স্বৈরাচারী মুসলিম উগ্রবাদী শাসক' হতে ক্ষমতা 'গণতান্ত্রিক মুসলিম উগ্রবাদী শাসকদের' কাছে যাবে।

অরফিয়াস এর ছবি

ভালো বলেছ। আসলে সাধারণ জনগনের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

দুর্দান্ত এর ছবি

ইরাকে ও আফগানিস্তানের আমরা দেখেছি যে ইসলাম আদর্শিক কাঠামো সরিয়ে তথাকথিত সেকুলার প্রশাসনকাঠামো গড়ার পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় জনগণের নৃতাত্বিক পরিচয়। ইরাক এখন বস্তুত দুইটি (কেউ বলেন তিনটি) রাষ্ট্র।

ইরানে পারসিক (৬০%) ছাড়াও এখানে তুর্কি (আজেরি,তুর্কমেন, ১৬%) ও সেমেটিক (আরব, কুর্দি ১০%) ও আরো কিছু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি আছে। ইরানের আজেরিদের সাথে ইরাকের সুন্নি বা পাকিস্তানের মুহাজিরদের তুলনা করা চলে, যারা সংখ্য়ালঘু কিন্তু রাজনঐতিক ও অর্থনঐতিক বিচারে সাধারন ইরানির চাইতে এগিয়ে আছে। আজকের আসল ক্ষমতাধর নেতা খোমেনেই একজন আজেরি। কুর্দিদের ঘাটি হল তুরস্ক ও উত্তর ইরাক সংলগ্ন পুরো পশ্চিম ইরান, সীমানার পশ্চিমের ভাইদের তেলের চকমকানি এদেরও যে আলাদা হতে উস্কাবে না, সেটা নিশ্চিত নয়। উত্তর ও পশ্চিম ইরান মধ্য়-দক্ষিন ইরানের চাইতে শিল্পোন্নত ও তেল-গ্য়াস সম্পদের বলে মোটামুটি স্বনির্ভর।

ইরানে পশ্চিমা গণতন্ত্র আগমনের একটি বাইপ্রডাক্ট হিসাবে নতুন কিছু জাতি-রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটা অসৃাভাবিক হবেনা।

অরফিয়াস এর ছবি

আরবদের অংশটুকুও দেখলাম এই সরকারের বিপক্ষে, আর যদি মানবতার ঝান্ডা উড়িয়ে পশ্চিমারা ঢুকেই পড়ে শেষপর্যন্ত, তাহলে হয়তো বাই প্রডাক্ট হিসেবে আলাদা দু-একটা রাষ্ট্রই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে যাবে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ এবং পঞ্চতারকা!!!


_____________________
Give Her Freedom!

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই। হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

কৌস্তুভ এর ছবি

কয়েকজনের কাছে শুনেছি যে তাদের পরিচিত ইরানীদের হালচাল দেশের বাইরে এলেই পালটে যায়, পশ্চিমা খোলামেলা আবহাওয়ার স্বাদ তারা উপভোগ করে ষোলআনাই।
বস্টনে আমার পরিচিত একটি ইরানী ছেলে (তার ইরানী গার্লফ্রেন্ডও সে শহরেই, তবে হিজাবিনী, পরিচয় হয়নি সরাসরি) কিন্তু সেরকম নয়। তার বক্তব্য, দেখ, তোমরা পশ্চিমা মানসিকতার লোকজন ইরান সরকারের যে কাজগুলোকে নিন্দনীয় বা মানুষের অধিকারের পরিপন্থী বলে মনে কর, স্থানীয় লোকে কিন্তু তা মনে করে না, তাদের মানসিকতা অন্যরকম। সরকারের অধিকাংশ কনজার্ভেটিভ কার্যকলাপে অধিকাংশ জনতারই সায় আছে।
মানে পাকিস্তানের মত ব্যাপার আর কি...

অরফিয়াস এর ছবি

নাহ ভিন্নমতও আছে বৈকি। ছেলেরা স্বাধীনতা তো ঠিকই ভোগ করে। ছেলেদের সমস্যা তো কম। এখানে নারী প্রসঙ্গে বৈষম্য ভয়াবহ। চিন্তা করে দেখো উচ্চশিক্ষাকে সিঙ্গেল জেন্ডার এর আওতায় আনার প্রচেষ্টা কিরকম কট্টর এবং নারী অধিকার সর্বোপরি মানবাধিকার পরিপন্থী হতে পারে।

ঐ প্রতিবেদনেই আছে দেখো, আজকাল ইরানি ছেলেরা ধনী হতে চায় উচ্চশিক্ষা চায়না এদিকে নারীরা শিক্ষা চায়। এই বৈষম্যের মজাটা নিচ্ছে কিন্তু ঐসব পাবলিক যারা নারীদের দ্বিতীয় শ্রেনী করে রাখতেই পছন্দ করে পাছে তাদের কর্তৃত্ব চলে যায়।

ইরানি নারীরাও বাইরের বিশ্বে ভালোই স্বাধীনতা ভোগ করে। তবে ঐযে এক মন্তব্যে বলেছি দেখো, সেধে শেকল পড়তেও কিন্তু চায় অনেকেই তাদের কথা আলাদা। আর তাদের উদাহরণ দেখিয়ে যখন যুক্তি টানে কিছু পাবলিক তখন সামগ্রিকভাবে একটি ভারসাম্যহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। হিজাব এবং বুরখা সম্পর্কিত মুর্শেদ ভাইয়ের এক লেখাতে এমনি যুক্তি টেনেছিলেন একজন মনে আছে?

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

অরফিয়াস এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

পথের ক্লান্তি এর ছবি

ভাই, লেখায় তথ্য থাকলেও অনেক ব্যাপারে আপনি ইমোশন লুকোতে পারেননি, লেখার জায়গায় জায়গায় ন্যারেটিভ অংশগুলো দেখলে আপনি নিজেই বুঝবেন।
আসলে, ইরানে শরিয়া আইন বলবত। আর স্বাভাবিকভাবেই তা মানবাধিকারের পরিপন্থী, এই বিষয়ে দ্বিমত করার সুযোগ নাই।
কিন্তু একটা ব্যাপার, আইন আছে বটে, সেটা কি স্ট্রিকটলি এপলাইড কি না, তা পরিষ্কার হওয়া উচিৎ।

শরিয়া আইন চালু আছে সৌদি সহ বাদবাকি ওয়াহাবি ডকট্রিনভুক্ত আরব দেশগুলোতে এবং তাদের মানবাধিকারের অবস্থা যে কোনও সূচকে আরও বেশী খারাপ। এরা অনেক অনেক বেশী জংলী এবং অসভ্য। শরিয়া আইনের শৃঙ্খল সত্বেও বেশ কিছু ব্যাপারে ইরান উদার। যেমনটা আপনি বললেন, নারী পুরুষের উচ্চ শিক্ষার অনুপাতে ইরান অনেক এগিয়ে আছে। আবার, কয়টা আরব রাষ্ট্রের মানসম্পন্ন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আছে? ইজিপ্টের মিছু মিউজিক ভিডিও দেখি মাঝে মধ্যে কেবলের কল্যাণে। লেবানিজও। এর বাইরে? পক্ষান্তরে ইরানিয়ান মুভি ইন্ডাস্ট্রি পৃথিবীর শীর্ষ কয়েক মুভি ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম। ইত্যাদি ইত্যাদি। এটা নিছক একটা উদাহরণ।
নারী অধিকারের অবস্থা সৌদিতে আরও জঘন্য। আবার আমাদের শ্রমিক ভাইদের কাছ থেকে মাঝে মধ্যেই জানা যায় সৌদি সহ অন্যান আরবদের নিকৃষ্ট বর্ণবাদ সম্বন্ধে। গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরা এই সব রাষ্ট্রের ব্যাপারে সব পশ্চিমা গণমাধ্যম মুখে কুলুপ এঁটে থাকে(কদাচিৎ দুই একটা ব্যাতিক্রম ছাড়া)। কেবলই কি অপশক্তির লেজুড়বৃত্তি করার পুরস্কার, এই "সাত খুন মাফ" লাইসেন্স? সবার মাথাব্যাথা কেবলই 'ইরান'!
ইরানের অভ্যন্তরী সামাজিক অবস্থা সম্বন্ধে জণগণের অনাস্থা আছে কি-না, তা দূর থেকে পরিষ্কার বোঝার উপায় নাই। দেখেন, সেখানে আহমেদিনেজাদের দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার প্রতিবাদে আন্দোলন হয়েছে। তাহলে এই সামাজিক 'সেন্সরশিপের' বিরুদ্ধেও জনতার পথে নামা বাঞ্ছনীয় ছিল। যা হোক, বরং আরব স্প্রিং-এ অন্যান্য যে সব এভিল স্টেইট-এ আন্দোলন হয়েছে, সেগুলো কিন্তু কঠোর ভাবে দমন করা হয়েছে। বাহরাইনে সৌদি বাহিনী গিয়ে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে সেখানকার প্রতিবাদকারীদের দমন করেছে। অথচ এই বিষয়টা বড় সংবাদমাধ্যমে আসেইনি কিংবা খুবই তুচ্ছ আকারে দায়সারা ভাবে এসেছে। এপর্যন্তই। হাইলাইটেড ছিল কেবলই লিবিয়া। লিবিয়া লিবিয়া লিবিয়া! যা হোক, প্রসংগ ভিন্ন দিকে চলে যাচ্ছে।

সর্বোপরী, টেলিগ্রাফের সূত্র কতটা গ্রহণযোগ্য, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। ইরানে সম্ভাব্য হামলা আগ্রাসন জায়েজ করার মিশনে তথ্য যুদ্ধে টেলিগ্রাফও যে ছুপারুস্তম হয়ে ময়দানে নামেনি, তা-ই বা কে বলতে পারে! টেলিগ্রাফের আচরণ অনেকটা ডাকু শাহ্‌আলমের বাংলাদেশ প্রতিদিন/কালের কণ্ঠের মত এখন। এই যেমন, অলিম্পিকে চিনের সাফল্য দেখে টেলি রিপোর্ট করল, সেখানে শিশুদের প্রতি কি রকম না নির্যাতন করেই এই সব অর্জন! সাথে সুন্দর মত ক্রন্দনরত শিশুর মুখচ্ছবি জুড়ে দিয়ে সুন্দর একটা ফিনিশিং টাচ। তো, জাফর ইকবাল স্যার, মুনির হাসান প্রায়ই আশাবাদ ব্যাক্ত করেন, আমাদের ক্ষুদে গণিতবিদরা একদিন ম্যাথ অলিম্পিয়াডে সর্বোচ্চ সাফল্য পাবে। তো, এই আশা যেদিন সত্যি হবে, নির্ঘাত টেলিগ্রাফে আরেকটা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আসবে, এই সাফল্যের পেছনের করুণ কাহানী। থাকবে হয়ত প্রায়মারি স্কুলের ব্যাঁতানো ষন্ডা পন্ডিত মশায়, হাতে ইয়া বেঁত, বেঞ্চে দাঁড়ানো কান ধরে উঠবস করা আদুভাই, আর ১৩-এর নামতা না পারায় মাস্টার মশাইয়ের কাছে হাতে বেঁতের বাড়ি খাওয়া ১৩ বছরের দুরন্ত ফটিকের ছবি! কি নির্মম!!

কৌস্তুভ (অফলাইন) এর ছবি

১) ইরান বাকি আরবদেশগুলোর মত নয়। ইরানে ইসলাম এসেছে তুলনায় পরে, এবং ইরানী মানুষজন চিরকালই অনেক লিবারেল। সে জন্যই ওমর খৈয়াম মদ্য ও সাকী নিয়ে কাব্য লিখতে পেরেছিলেন।
সেটার আরেকটা প্রমাণ এই যে, তারাই একমাত্র বড়সড় শিয়া রাষ্ট্র, বাকিরা সুন্নী।
এমনকি শাহের সময়েও ইরানে মহিলাদের অবস্থা এবং সামগ্রিক পরিবেশ অনেক খোলামেলা ছিল। এই পশ্চাতপদসরণ হয়েছে শরিয়া-ব্রিগেড ক্ষমতায় আসার ফলেই।

২) পশ্চিমা বিশ্ব ইরান নিয়ে বেশি চিন্তিত, কারণ তারা পরমাণু অস্ত্রের বানানোর পথে সবথেকে এগিয়ে, এবং এ বিষয়ে তারা চীনের ও পাকিস্তানের সহযোগিতা পাচ্ছে। লাদেন যদি পরমাণু অস্ত্র ছাড়াই ৯-১১ করতে পারে তাহলে ইরান পরমাণু অস্ত্র সহ কী করতে পারে তা নিয়ে তারা চিন্তিত হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।

৩) চীন সংক্রান্ত টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনটা আপনার গায়ে লাগার কারণ বুঝলাম না। আগেও অনেকবার একাধিক সোর্সে এইভাবে শিশুদের মেডেল পাওয়ার রোবটে পর্যবসিত করার অভ্যাসের খবর পড়েছি। এটা প্রকাশ করার পেছনে পশ্চিমা মিডিয়ার স্বার্থ আছে বটে, কিন্তু খবরটা তো মিথ্যে নয়। আর সেটাই মূল ব্যাপার। ইরানে যে সম্প্রতি এতগুলো কোর্স থেকে মেয়েদের দূরে রাখা হল, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হোক আর যাই হোক, খবরটা তো মিথ্যে নয়।

অরফিয়াস এর ছবি

পশ্চিমা বিশ্ব ইরান নিয়ে বেশি চিন্তিত, কারণ তারা পরমাণু অস্ত্রের বানানোর পথে সবথেকে এগিয়ে, এবং এ বিষয়ে তারা চীনের ও পাকিস্তানের সহযোগিতা পাচ্ছে। লাদেন যদি পরমাণু অস্ত্র ছাড়াই ৯-১১ করতে পারে তাহলে ইরান পরমাণু অস্ত্র সহ কী করতে পারে তা নিয়ে তারা চিন্তিত হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।

চলুক

মুমিন বোঝেনা যুক্তি, তারা ঝান্ডা উড়াতে চায়।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অরফিয়াস এর ছবি

আপনি অনেক সুন্দর করে লিখেছেন আর আশা করি সেরকম ভাবে গলা ফাটিয়ে বলতেও পারেন। আমার লেখায় কোন ইমোশন খুঁজে পেলেন একটু জানাইয়েন। মানুষ হিসেবে মানুষের কষ্ট দেখলে ব্যথিত হওয়া ছাড়া আর কোনো ইমোশন আছে কিনা সেটা একটু জানালে ভালো লাগতো। কিন্তু চিমটি দিয়ে কথা পরিষ্কার না করা ভালো স্বভাব না।

আর আসেন ভাই কোলাকুলি করি, বাংলাদেশে পুলিশ টোকাই পিটায় আর একারণে দুনিয়ার আর কোনো দেশে টোকাই পিটাইলে আমাদের কথা না বলাই ভালো, এরকম যুক্তির ভাত আজকাল আর নাই আগে ছিলো, অন্য কিছু ভাবেন।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

জগাই এর ছবি

অফ যা

দিগন্ত এর ছবি

এইটার অপেক্ষায় ছিলাম। কেউ না কেউ বলবেই সবটা পশ্চিমা চক্রান্ত।
শেষের বিষয়টায় বলি, পশ্চিমে কিন্তু বেতের বাড়ি দিয়ে পড়ানোর কথা কেউ ভাবতেই পারে না (বাড়ি দিলে বাচ্চা পুলিশে নালিশ ঠুকবে), তাই তাদের কাছে এটা একটা বিরাট বিষয়। সুতরাং কোনো পশ্চিমা সংবাদপত্র তা নিয়ে রিপোর্ট করলে তা যেমন কিছুটা বাড়াবাড়ি তেমন ওটা থেকে ষড়যন্ত্রের গল্প বের করাও আমাদের জন্য বাড়াবাড়ি।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অরফিয়াস এর ছবি

কিন্তু বেতের বাড়ি কিন্তু মহৌষধ!! বড় হয়ে বুঝি কতো কাজে লেগেছে। পশ্চিমা দেশে প্রেসক্রাইবড বেতের বাড়ির ডোজের ব্যবস্থা করা যায়না? দেঁতো হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

দিগন্ত এর ছবি

এইটা কালচারাল ডিফারেন্স, আস্তে আস্তে মাঝামাঝি কোথাও আসবে। আপনি ভেবে দেখুন, বেতের বাড়ি কিন্তু দেশে কমে আসছে আর পশ্চিমেও একটু আধটু বাচ্চারা শাস্তি পাচ্ছে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অরফিয়াস এর ছবি

আরে মজা করলাম। শিশুদের কোনো ধরনের শারীরিক শাস্তিই আমি সমর্থন করিনা। দেশে প্রায়ই পত্রিকায় বিভিন্ন খবরে দেখি বেতের প্রহারে শিশু আহত। সেদিন দেখলাম বিশ্বভারতীর এক ছাত্রীকে তার মুত্র চাটতে বাধ্য করেছেন হোস্টেল ওয়ার্ডেন!!

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

চলুক
ধর্মকেন্দ্রিক/আর্দশিক রাজনৈতিক বিপ্লব অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানবতাবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়; ইরান-এর বাস্তব উদাহরণ।

অরফিয়াস এর ছবি

আসলে দেখো কোনো নির্দিষ্ট ধর্মকে ভিত্তি হিসেবে ধরে আন্দোলন হলে পট পরিবর্তন হয়তো হয় কিন্তু তাতে সামগ্রিকভাবে কোনো আহামরি পরিবর্তন হয়না। আর এর কারণ হলো, ভিন্ন মতাবলম্বীদের সেখানে কোনো প্রভাব নাই আর এর হাত ধরেই আসে নির্যাতন আর দমনের প্রচেষ্টা।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

প্রাক্তন ধুমপায়ী এর ছবি

বাংগালী মানুষজন কিভাবে পশ্চিমা প্রোপাগান্ডা গিলে সেটা দেখালেন, দেখলাম!

আপনার মত উদ্দেশ্যপ্রবণ লেখা লিখলে আমি বায়াসড রেফারেন্স ছাড়াই স্ট্যাটেস্টিক্সসহ এর চেয়ে বড় করে লিখে দেখাতে পারবো পশ্চিমা দেশগুলোতে কিভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। আফ্রিকান-ল্যাটিন-আরব-এশিয়ান-ভারতীয় কত কত লক্ষ-কোটি মানুষ বর্ণবাদি আক্রমন হয়, কত কত মানুষের ফ্রিডম অব রিলিজিয়ন লঙ্ঘিত হয়, কিভাবে মার্কন যুক্তরাষ্ট্রে গরীবদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নষ্ট হয়, কিভাবে ট্যাক্সের বেড়াজালে গরীব মানুষ আজীবন দিন এনে দিন খায় ইত্যাদি ইত্যাদি।

আপনার পোস্টের ও মন্তব্যে কথাগুলো মানলে বলতে হয় পশ্চিমা বিশ্বে বসবাসরত যেসব মানুষ কম্যুনিজম, সনাতন বা শরিয়া আইন চায়, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। বহু মানুষ শরিয়া আইনের জন্য পথে ঘাটে কান্না করে!

বহু মানুষ আছে যারা নারীদের ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া পছন্দ করে না, সুতরাং ওদেরও মন খারাপ, এখন যাই আমরা ভারতের পরমানু অস্ত্র নিয়ে ওদের মুক্ত করতে? মানবেন?

মানবেন সেসব যুক্তি???

ইরানে ধর্মব্যাবসা চলছে এটা সর্বজনবিদিত, ওখানে মানবাধিকার জনিত অনেক সমস্যাও আছে, অনেক মানুষের অভিযোগও আছে। কিন্তু ভুলবেন না যে, ওখানে একটা বিপ্লবের মাধ্যমে পরিবর্তন এসেছে। মানুষের সরাসরি উইল থেকে। রিগড ইলেকশনের মাধ্যমে বা পাপেট শো করে নয়! আপনার রেফারেন্স লিস্ট দেখে সত্যিই দুঃখ পেলাম ও ক্ষুদ্ধ হলাম!

পশ্চিমে মজেছেন ভাল কথা, তাই বলে প্রাচ্যে'র নৈতিক, নিষ্ঠ, নিরপেক্ষ বিবেক, বুদ্ধি কেন হারাচ্ছেন ভাই?

হিমু এর ছবি

বায়াসড রেফারেন্স ছাড়াই স্ট্যাটেস্টিক্সসহ এর চেয়ে বড় করে লিখে দেখান প্লিজ, পশ্চিমা দেশগুলোতে কিভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। আফ্রিকান-ল্যাটিন-আরব-এশিয়ান-ভারতীয় কত কত লক্ষ-কোটি মানুষ বর্ণবাদি আক্রমন হয়, কত কত মানুষের ফ্রিডম অব রিলিজিয়ন লঙ্ঘিত হয়, কিভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গরীবদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নষ্ট হয়, কিভাবে ট্যাক্সের বেড়াজালে গরীব মানুষ আজীবন দিন এনে দিন খায় ইত্যাদি। পড়ার আগ্রহ জানিয়ে গেলাম।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

পশ্চিমা বিশ্বে বসবাসরত যেসব মানুষ কম্যুনিজম, সনাতন বা শরিয়া আইন চায়, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।

হুবহু এই লজিক আমার ল্যাবের এক কানাডিয়ান কম্যুনিজম সমর্থক ছুঁড়ে দিয়েছিলো আমার প্রফেসরের দিকে। তবে ওখানে উদাহরণ ছিলো চীনের কম্যুনিজম। আমি আর আমার প্রফেসর বলছিলাম যে কমন গুডের নামে ফোর্স ইনফোর্স করা মাত্রই তা জাস্টিফায়েড না। চীনাজন বলছিলো তার দেশে সেই ফোর্স ভালই কাজ করছে, পারলে পশ্চিম সেই ধারণা থেকে ধার করতে পারে। তখন কানাডিয়ান বললো, এই যে চীনাজন ফোর্স অ্যাপ্লাই করতে চায়, পশ্চিমের লিবার্টি তাকে সেটা করতে না দিয়ে তার অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তখন আমার প্রফেসর বলেছিলো, ক্রিমিন্যাল অফেন্স না করলে আমার "অধিকার" আছে অন্যের ফোর্স থেকে নিজেকে রক্ষা করার। চীনাজনের "অধিকার" নেই নিরপরাধ অন্যের উপর কমন গুডের নামে ফোর্স অ্যাপ্লাই করার। ফলে চীনাজনকে সেই ফোর্স অ্যাপ্লাই করতে না দেয়াটা তার কোনো প্রাপ্য "অধিকারের" লঙ্ঘন না।

কম্যুনিজম কিংবা শরিয়া আইন যে (নিজস্ব বয়ানের) কমন গুডের নামে সকলের উপর ফোর্স অ্যাপ্লাই করতে চায়, কে নিজের গণ্ডিতে কী কী করতে পারবে ও পারবে না সেটা নির্ধারণ করতে চায়, তেমন চাওয়াটাকে কি "অধিকার" বলা যায়? আমি কাউকে না ঘাটিয়ে কী করবো না করবো, সেটা নির্ধারণ করে দেয়াটাই কি প্রাচ্যের নৈতিকতা? মনে হয় না। সুফি সাধক বাউলরা আপনার এই কমন গুডের নামে ফোর্স অ্যাপ্লাই করাদের ব্যাপারে অনেক আগে থেকে সচেতন। তাদের সেই দর্শনও তো প্রাচ্যেরই। কমন সেন্সের জন্যে পশ্চিমে মজা লাগে নারে ভাই।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আপনি বলেছেন,

"বহু মানুষ শরিয়া আইনের জন্য পথে ঘাটে কান্না করে!"

............"পশ্চিমে মজেছেন ভাল কথা, তাই বলে প্রাচ্যে'র নৈতিক, নিষ্ঠ, নিরপেক্ষ বিবেক, বুদ্ধি কেন হারাচ্ছেন ভাই?"

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

দিগন্ত এর ছবি

আরো একজন হাসি
আপনি লিখুন না আর সব মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে, কেউ তো আপনার গর্দান নিচ্ছে না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অরফিয়াস এর ছবি

আয় আবুল বুখে আয়। কোলাকুলি

জানেন ঠিক এরকম মন্তব্যের জন্য কালকে থেকে অপেক্ষা করছিলাম। এরকম না বললে কি আর চলে? সব কিছুতেই পশ্চিমা জুজু না খুঁজলে কি চলে? যেভাবে পশ্চিমারা আগে সবকিছুতেই "কমু"দের যোগসাজস খুঁজতো।

পশ্চিমে মজেছেন ভাল কথা, তাই বলে প্রাচ্যে'র নৈতিক, নিষ্ঠ, নিরপেক্ষ বিবেক, বুদ্ধি কেন হারাচ্ছেন ভাই?

আমার নির্বুদ্ধিতায় আমি নিজেই লজ্জিত। ভাই আমারে পারলে আলোর পথ দেখান। কয়টা "ইস্ত্যাতেস্তিক" দিয়া যান।

আপনার রেফারেন্স লিস্ট দেখে সত্যিই দুঃখ পেলাম ও ক্ষুদ্ধ হলাম!

ভাই ক্ষুদ্ধ হয়েছেন দেখে আমি নিজেও দুঃখ পেলাম, কিন্তু কি আর করা "সইত্য বচন" এ কারো জ্বলে গেলে আমার কি করার আছে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

যুক্তিবাদী  এর ছবি

সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে যদি পৃথিবীকে কয়েকবার ধংশ করার মতো পারমানবিক অস্ত্র থাকতে পারে তো ইরানের পারমানবিক অস্ত্র তৈরীর অধিকার থাকবে না কেন, এই মানবতাবাদীরা কোথায় থাকে যখন মধ্যপ্রাচ্যের কান্সার ইজরাইল পারমানবিক অস্ত্র তৈরী করে, ফিলিস্তিনে ফসফরাস বোমা ফেলে , হাজার হাজার মানুষ মারে । ইজরাইল যখন পারমানবিক অস্ত্র তৈরী করে মানবতাবাদীরা কি তখন অন্ধ ছিল ? তাছারা ইরান তো বলছে তারা বিদ্যুত উত্পন্ন করবে এমন কোনো প্রমান দেখান তারা পারমানবিক অস্ত্র তৈরী করছে বরং কিছুদিন আগেই আমেরিকা ইজরাইল সীকার করেছে ইরান পারমানবিক অস্ত্র তৈরী করছে না ।আমার তো মনে হচ্ছে ইরাকে যেমন গণবিদ্ধংসী ,গ্রহবিদ্ধংসী অস্ত্রের অজুহাতে সাম্রাজ্যবাদীরা (যাদের হাতে বিশ্বের ১/৩ গণবিদ্ধংসী অস্ত্র )তেলের লোভে হামলা চালালো তেমনি ইরানে হামলার এটা একটা অজুহাত দার করাচ্ছে ।হায়রে যাদের হাতে হাজার হাজার পারমানবিক অস্ত্র তারাই কিনা অন্যেরা পারমানবিক বিদ্যুত তৈরী করতে চাইলেও তাদের হামলা করতে চায় ।আসল কথা হলো ইরানের দোষ তারা সৌদি আরবের স্বৈরশাসকদের মতো আমেরিকা বা ইজরাইলের পা চাটে না তাই তাদেরকে হামলা করতে হবে ।

অরফিয়াস এর ছবি

"যুক্তিবাদী" ভাই, এই লেখার ভুমিকায় পারমানবিক বোমা নিয়ে একটা অংশ ছিলো মাত্র, সেখানে বর্তমান পরিস্থিতির একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, কারো পক্ষ নিয়ে কথা ছিলোনা। মূল লেখাটা ছিলো ইরানের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে। ইরানের পারমানবিক অস্ত্র তো বিশ্ব রাজনীতির একটা ঘুঁটি মাত্র, কিন্তু মানবাধিকার তো আপামর জনগনের সমস্যা, মানবাধিকার নিয়ে তো সরকারগুলো কখনোই খুব একটা বিচলিত না, তাই যা হাউকাউ করতে হয় তার সবই প্রায় ব্যক্তি ক্ষেত্র থেকে।

এখন কথা হচ্ছে, যারা নিজের দেশের এরকম হাল করতে পারে তাদের হাতে পারমানবিক অস্ত্র রাখতে দেয়া কতোটা যুক্তিসংগত। ইসরায়েল তার সীমানার চারদিক থেকে বছরের পর বছর ধরে শত্রু রাষ্ট্রের আক্রমন প্রতিরোধ করে এসেছে। এই রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকেই তাদের বেশ বড় কয়েকটা যুদ্ধ মোকাবেলা করতে হয়েছে। তখন কিন্তু এই মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোই কাছা বেঁধে ইসরায়েলকে পুটু মারতে গিয়েছিলো। এই পুটু মারতে গিয়ে উল্টো পুটু মারা খেয়ে কেউ কেউ করে চলে এসেছে। তো একটা রাষ্ট্র সারাজীবন তো এভাবে শত্রু খেদিয়ে টিকতে পারেনা। তাই তাদের অভ্যন্তরীণ রাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন লক্ষনীয়। তাদের দেশের সকল জনগণ সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। দেশের জন্য যেকোনো মুহূর্তে অস্ত্র নিতে প্রস্তুত। কিন্তু তাদের রাষ্ট্রের উন্নতি দেখুন। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে তারা এগিয়ে গেছে কিন্তু এসব ঝামেলার মাঝ থেকেই। যদি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলো শত্রু মনোভাবাপন্ন না হয়ে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতো তাহলে আজকে ইসরায়েল এর পররাষ্ট্রনীতি এরকম হতো না কিনা সেটা আলোচনা সাপেক্ষ। কিন্তু আজকে যদি ইসরায়েল এর হাতে পারমানবিক অস্ত্র না থাকতো তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো একটা দেশ যে আবার তাদের পুটুতে কামড় দিতে যেতনা তা হলপ করে বলা সম্ভব নয়। আর ইরানের সাথে ইসরায়েলের বৈরিতা এরকমই। কিন্তু ইসরায়েল এর মানবাধিকার পরিস্থিতির সাথে ইরানের তুলনা চলেনা। ইরান মানবাধিকার যেভাবে নিজ দেশেই লঙ্ঘন করে ইসরায়েল তা করেনা।

এখন প্রসঙ্গ হচ্ছে ইরানের, নিজ দেশে পারমানবিক পরীক্ষা নিয়ে সবার মাথা ব্যথা কেন? তর্ক সাপেক্ষে তারা তো নিজ দেশে পারমানবিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেই পারে। কিন্তু যেমন রাস্তার পাগলের হাতে লাঠি কিংবা ইটের ঢেলা দেখলে আমরা দূর দিয়ে চলি, সেরকমই উন্মাদ একটি রাষ্ট্রশক্তির হাতে পারমানবিক শক্তি অর্জন হতে দিলে সেটা বিশ্ব পরিস্থিতির জন্য কখনোই স্বস্তির হবেনা। আর ঠিক একারণেই ইরানের হাতে পারমানবিক শক্তি দেয়ার ব্যাপারে সবার সমস্যা।

আর আমি নিজেও জানি এতকিছু বলার পরেও আপনার কোনো কিছু মাথায় ঢুকবেনা, তবুও আমার বলার দায়িত্ব আমি বললাম। এবার যদি মনে হয়, ইরান স্বর্গ, তাহলে কালকেই টিকিট কাইটা ইরান যানগা।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনের মন্তব্যে খুবই অবাক হলাম। ইজরায়েলের প্রতি আপনার ভক্তির যুক্তিগুলোও বেশ আমোদজনক, তবে আপাতত সেদিকে না যাই। আপনি বললেন
"যারা নিজের দেশের এরকম হাল করতে পারে তাদের হাতে পারমানবিক অস্ত্র রাখতে দেয়া কতোটা যুক্তিসংগত।"

বেশ, বেশ। ইরানের রাষ্ট্রযন্ত্র অত্যন্ত মৌলবাদী তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু সেইটা দিয়ে যখন একটা দেশের সামরিক ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা এঁকে দেওয়া হয়, আর একই সাথে ইসরায়েলের সরকারের মত একটা আগ্রাসী সরকার যারা আন্তর্জাতিক টেররিজমকে একটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে, সেই রাষ্ট্রের পারমাণবিক ক্ষমতাকে বৈধতা দেয়া হয়----তখন সেটা হিপোক্রেসীর মত শোনায়।

আরো বললেন "সেরকমই উন্মাদ একটি রাষ্ট্রশক্তির হাতে পারমানবিক শক্তি অর্জন হতে দিলে সেটা বিশ্ব পরিস্থিতির জন্য কখনোই স্বস্তির হবেনা" আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গত ২০/২৫ বছরে কারা ঠিক উন্মাদের মত আচরণ করছে, আর কারা ফুলবাবুর মত আচরণ করছে, সেটা ঠিক পরিষ্কার না। ইরানীরা পারমাণবিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত ধুর্ততার আশ্রয় নিচ্ছে সন্দেহ নেই, কিন্তু আরেক দেশের ভেতরে গিয়ে বিমান আক্রণ চালানোর পরিকল্পনা প্রকাশ্যেই কোন দেশের রাষ্ট্রনেতা সম্প্রতি আলোচনা করেছেন, সেটাও দেখা দরকার।

ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় কোনো দোষ নেই, আর সাম্প্রতিক নারীদের শিক্ষা নিয়ে খবরটাতো রীতিমত অবিশ্বাস্য। তবে যখন আপনি ইরানের আরেক শত্রু রাষ্ট্র নিয়ে এরকম "ভক্তিপূর্ণ" কমেন্ট করেন, তখন কিন্তু অনেক অলস পাঠকই আপনার লেখাটার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলবে, এখানকার কিছু মন্তব্যের মতই।

---দিফিও

পথের ক্লান্তি এর ছবি

ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় কোনো দোষ নেই, আর সাম্প্রতিক নারীদের শিক্ষা নিয়ে খবরটাতো রীতিমত অবিশ্বাস্য। তবে যখন আপনি ইরানের আরেক শত্রু রাষ্ট্র নিয়ে এরকম "ভক্তিপূর্ণ" কমেন্ট করেন, তখন কিন্তু অনেক অলস পাঠকই আপনার লেখাটার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলবে, এখানকার কিছু মন্তব্যের মতই।

ঠিক তাই। ইরানের মোল্লাতান্ত্রিক রাষ্ট্রযন্ত্র তো কারও অবিদিত না। কিন্তু ইজরাইল সম্বন্ধে লেখকের সফট কর্নার বেশ অবাক করেছে। মোল্লাতান্ত্রির একটা রাষ্ট্র বিশ্বমানবতার হুমকি-- তা নাহয় মানা গেল(যদিও মোল্লা আয়াতুল্লাহ্‌দের জারিজুরি তো বর্ডার বন্দী)। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করেও আপনি ধর্মভিত্তিক কট্টর ডানপন্থী একটা আগ্রাসী রাষ্ট্রকে 'ক্যারেকটার সার্টিফিকেট' দিয়ে দিলেন:(

অরফিয়াস এর ছবি

'ক্যারেকটার সার্টিফিকেট' দেই নাই। আপনার কাছে মনে হলে কিছু করার নাই। আমার কোনো রাষ্ট্রের প্রতি সফট কর্নার নাই।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অরফিয়াস এর ছবি

ইসরায়েলের প্রতি ভক্তিতে গদগদ হয়ে আছি ভাই।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

দিগন্ত এর ছবি

আমার তো মনে হয়না ইরানের সমালোচনা করা মানে সাম্রাজ্যবাদের সমর্থন করা।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

স্যাম এর ছবি

চলুক

অরফিয়াস এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

প্রত্যয়  এর ছবি

আমি তো মনে করি লেখক ভুল কিছু বলে নি , ইসরাইল এর হাতে যদি আজকে পারমানবিক অস্ত্র না থাকত তাহলে তার চারদিকের দেশ গুলো--মৃত লাশের উপর শকুন যেভাবে হামলে পরে, ঠিক সেভাবেই হামলে পরত. আর ইসরাইল এর সন্ত্রাসের কথা বলছেন?? যারা এ কথা বলছেন তারা কি আমাকে বলবেন ইসরাইল যেদিন স্বাধীনতা ঘোষণা করে সেদিন কারা ইসরাইল এর উপর হামলা করেছিল?? করা ৬ দিনের যুদ্ধ শুরু করেছিল? যদি উত্তর গুলো না জানা থাকে তবে কিছু পড়া শোনা করে জেনে নিবেন, কোনো মুসলিম দেশে বাস করে এইসব সত্য কথা গুলো কোনো দিনই জানা হয় না, কারণ মুসলিম দেশ গুলো একটা বাচ্চা কে চোট বেলা থেকেই সেখান হয় ইসরাইল একটা মহা শয়তান রাষ্ট্র. আজকে যদি ধরা যায় যে ইসরাইল কাল থেকে ফিলিস্তিনিদের উপর দমন নিপীড়ন বন্ধ করলো, তাহলে কি কাল থেকেই ইসরাইল এ হিজবুল্লাহ র রকেট ছোরা বন্ধ হবে? হবে না. বন্ধ হবে যদি এখন ইসরাইল রাষ্ট্র টাকেই যদি বিলুপ্ত ঘোষণা করে সমস্ত ইহুদিদের বিতারিত করে সেই জায়গা আরব মুসলিম দের জন্য খালি করে দেয়া হয়...

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ। তবে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েল এর ব্যাপারটা এতোটা সরল আর নেই সেটা এখন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে শত্রুতাতে চলে গেছে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সাইদ এর ছবি

আপনার মন্তব্যের কিছু জিনিস এর বিষয়ে কিঞ্চিত দ্বিমত পোষণ করছি। সেটা হল ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা কি ঠিক মত হয়েছিল। ফিলিস্তিনি লোকদের উৎখাত করে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার পদ্ধতিটা আপনি কিভাবে দেখছেন?? তবে হ্যাঁ আপনি যদি এটা মনে করেন যে বৃটিশরা তাদের শাসিত ফিলিস্তিনি কাকে দিবে না দিবে সেটা তাদের ব্যাপার। তখন আর এটা নিয়ে বিতর্ক করার অবকাশ নাই।

প্রত্যয়  এর ছবি

তা বড় বড় সব যুদ্ধের পর যে কাটা ছেড়া হয়েছে দেশ গুলো নিয়ে তাতে তো কিছু ভুল ছিলোই, সেকন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার এর পর যে ইউরোপে কে কাটা ছেড়া হলো সেটাই কি সব ক্ষেত্রে সঠিক ছিল? না উপমহাদেশের এই কাটা ছেড়া টা? ৪৫ এ যে বাংলাদেশ এ হিন্দু জনগোষ্ঠী ছিল ৩৮%, ২০১২ তে এসে তা হলো ৯%, তো মুসলামনদের সতন্ত্র আবাস ভূমি তৈরী করার সার্থে ব্রিটিস রা এই ভূমি থেকে হিন্দু দের উত্খাত করার পথ ও কি তৈরী করে যায়নি? আর উত্খাত এর কথা যদি বলেন তবে আমি জানতে চাইব, এই ইহুদি দের কে একসময় এই আরব ভূমি থেকে প্রথম উত্খাত করেছিল কারা? কেন তাদেরকে ১৮৯০ এর দিক থেকে "হাগানাহ" এর সময় নিজ ভূমিতে ফিরতে হয়েছিল? ভাইযান আসল কথা তো ভিন্ন, আসল কথা হলো মুসলমান রা মধ্যপ্রচ কে দেখে নিজেদের পুণ্য ভূমি হিসেবে, সেখানে অন্য ধর্মের মানুষ এসে একটা আলাদা দেশ বানিয়ে ফেলবে এটা তারা কিছুতেই মানতে পারেনা, আর ওই উত্খাত বা খেদানোর কথা যদি বলেন তো বলব আরব রা এর আগে বহু জাতিকেই আরব ভূমি থেকে খেদিয়েছে (বাহাই, ইহুদি, ক্রিস্টান , কালদিয়ান), তো তখন আপনাদের মুখ গুলো বন্ধ থাকে কেন?

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

প্রত্যয়,

ইহুদি দের কে একসময় এই আরব ভূমি থেকে প্রথম উত্খাত করেছিল কারা?

ইহুদীদের প্রথম তাদের আদি নিবাস (দক্ষিণ লিভান্ত) হতে উচ্ছেদ (Mass Exodus) করে অ্যাসিরীয়রা ৭৩২ খ্রীস্টপূর্বে, এরপর দ্বিতীয়বার উচ্ছেদ করে ব্যাবীলোনীয়রা ৫৮৬ খ্রীস্টপূর্বে, শেষবারের মত "বৃহৎ ইহুদীদের উচ্ছেদ" (Great Mass Exodus) শুরু হয় রোমানদের সময় খ্রীস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে। ইসরায়েল রাষ্ট্র ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্টা করার আগে ইহুদীরা যে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল, এর কারণ রোমানদের সময় করা ইহুদী পূর্ণবাসন আভিযান। সবচেয়ে বড় উচ্ছেদ হয়েছিল ৭০ ও ১৩৫ খ্রীস্টপূর্বে, ৮০% ইহুদীকে এসময় হত্যা অথবা, উচ্ছেদ করা হয়।
ঐতিহাসিকভাবে, দক্ষিণ লিভান্তের আদিবাসীরা ছিল প্রথম খ্রীস্টাব্দ পূর্ব পর্যন্ত ইহুদী ও আরব বদ্বীপে প্রচলিত প্যাগান ও একেশ্ববাদী ধর্মের অনুসারী; তবে, অধিকাংশই ছিল ইহুদী ধর্মাম্বলী। খ্রীস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে রোমানরা দক্ষিণ লিভান্তের দখল নেয়ার পর ইহুদীর রোমান সাম্রাজ্যের নানা প্রান্তে জোরপূর্বক পাঠিয়ে দিতে থাকে; কারন ছিল ইহুদীরা রোমান সাম্রাজ্যে সবচেয়ে বড় মাইনোরিটি(রোমান সাম্রাজ্যের জনসংখ্যার ১০%), তাই, এদের একই প্রদেশে থাকা রোমান সাম্রাজ্যের জন্য সমস্যার কারন এবং এরা বারংবার বিদ্রোহ করে সমস্যা সৃষ্টিও করেছিল।
রোমান সম্রাট হাদ্রিয়ান ১৩৬ খ্রীস্টপূর্বাব্দে ইহুদীদের প্রকাশ্যে ধর্মপালন নিষিদ্ধ করে, ইহুদী ধর্মগ্রন্থ পুড়িয়ে ফেলা হয়, পবিত্র মন্দির ধ্বংস করা হয়। দক্ষিণ লিভান্তকে ইহুদীরা বলত 'জুদেয়া' বা, 'ইসরায়েল'। হাদ্রিয়ান 'জুদেয়া' ও 'ইসরায়েল' নামটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, রোমানরা দক্ষিণ লিভান্তের নতুন নাম দেয় 'ফিলিস্তিনা'। রোমানরা দক্ষিণ লিভান্তের নতুন নাম 'ফিলিস্তিনা' রাখে , এর কারণ হল: ২০০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দে দক্ষিণ লিভান্তের উপকূলীয় অঞ্চলে একটি জাতি বসবাস করত, যারা জেলে/নাবিক/নৌযোদ্ধা ছিল। ১৫০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দে এই জাতির একটি অংশ 'ফিলিস্টাইনস' নামে পরিচিত হতে থাকে। ১১৭৫ খ্রীস্টপূর্বাব্দে তৃতীয় রামেসিসের কাছে পরাজিত হবার পর অথবা, রামেসিসকে পরাজিত করে ফিলিস্টাইনরা 'ফিলিস্তিয়া' নামে দক্ষিণ লিভান্তে একটি নগর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। অপরদিকে, মেসোপটেমিয়ার উর নগরী হতে আব্রাহাম/ইব্রাহীম(আ:) (ইহুদীদের আদি পিতা/নেতা) ২০০০ খ্রীস্টপূর্বে দক্ষিণ লিভান্তে/বাইবেলীয় কেনানে বসতি স্থাপন করে। কালক্রমে ইহুদী ও ফিলিস্টাইনদের মাঝে বৈরীতা দেখা দেয়, যা ১০০০ থেকে ৭০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত চলতে থাকে। অ্যাসিরীয়রা ৭৫০ থেকে ৭০০ খ্রীস্টপূর্ব সময়ে ফিলিস্তিনিয়া নগররাষ্ট্রসহ দক্ষিণ লিভান্তীয় সকল নগররাষ্ট্র ও প্রশাসনিক স্থাপনা ধ্বংস করে। পঞ্চম খ্রীস্টপূর্বাব্দের মাঝে ধর্ম পালনে ব্যাতিক্রম ছাড়া পুরো দক্ষিণ লিভান্তীয়রা প্রায় একই প্রকৃতির সংস্কৃতি ও ভাষার জাতিতে পরিণত হয় (লিভান্তীয় সেমিটিক কালচার)। রোমান সম্রাট হাদ্রিয়ান 'ফিলিস্তিনা' নামটি ১০০০ থেকে ৭০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত চলতে ইহুদী ইজরালইট ও প্যাগান ফিলিস্টাইনদের মাঝে বৈরীতা থেকে নেয়া।
প্রথম শতাব্দীতে ইহুদীদের একটি নতুন গোত্র আর্বিভূত হয় দক্ষিণ লিভান্তে। এই নতুন গোত্র পরবর্তী খ্রীস্টান সম্প্রদায় নামে সারা বিশ্বে পরিচিতি পায়। ৩১৩ সালে রোমানরা খ্রীস্টান ধর্মকে স্বীকার করে নেয়, ৩২৪ খ্রীস্টাব্দ হতে রোমান সাম্রাজ্যে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পায় খ্রীস্টান ধর্ম, ৩৮০ সালে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয় এই ধর্মকে। খ্রীস্টান ধর্মের প্রচারক যিশুর মৃত্যুর জন্য ইহুদীদের দায়ী করা হয়। এর ফলে, রোমান শাসক গোষ্টী বিপুল উৎসাহে ইহুদী নিধন ও উচ্ছেদ শুরু করে। পরবর্তীতে, দক্ষিণ লিভান্তের ধর্মানুসারীদের সংখ্যাভিত্তিকক্রম দাঁড়ায়: ০১) প্রাচ্যীয় খ্রীস্টান ধর্ম, ০২) আরব বদ্বীপে প্রচলিত প্যাগান ও একেশ্ববাদী ধর্মসমূহ, ০৩) ইহুদী।
৩৯৫ খ্রীস্টাব্দে রোমান সাম্রাজ্য দু'ভাগ হয়। দক্ষিণ লিভান্ত পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য/ বিজান্টিয়াম সাম্রাজের অর্ন্তভুক্ত হয়। এই নতুন রোমান প্রশাসনও ইহুদী নিধন ও উচ্ছেদের কাজ অব্যাহত রাখে; সরকারীভাবে ইহুদীদেরকে যীশু হত্যার জন্য দায়ী করা হয়।
৬০২ হতে ৬২৮ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত সাসানিদ সাম্রাজ্য ও বিজান্টিয়ামদের মাঝে যুদ্ধ হয়। এসময় ইহুদীরা সাসানিদদের পক্ষ নেয়। ফলশ্রুতিতে বিজান্টিয়ামরা ইহুদীদের গণহত্যা করে।
৬৩৪ খ্রীস্টাব্দে আরবরা রাশেদীন শাসকদের অধীন দক্ষিণ লিভান্ত অভিযান করে। আরবদের অভিযানের সময় দক্ষিণ লিভান্তের ধর্মানুসারীদের সংখ্যাভিত্তিকক্রম দাঁড়ায়: ০১) প্রাচ্যীয় খ্রীস্টান ধর্ম, ০২) আরব বদ্বীপে প্রচলিত প্যাগান ও একেশ্ববাদী ধর্মসমূহ, ০৩) ইহুদী, ০৪) মুসলমান। আরবরা ইহুদীদের আদি-নিবাস দক্ষিণ লিভান্তে ইহুদীর গণহত্যা (Massacre) বা, উচ্ছেদ(Mass Exodus) করেছে বলে ইতিহাস স্বাক্ষী দেয় না। রাশেদীন ও উমাইয়াদের সময় আরব ব-দ্বীপ, মাগরেব ও উত্তর আরব হতে বিপুল পরিমাণ মুসলমান আরব ও কুর্দি আগমনের ফলে ও স্থানীয় লিভান্তীয়দের একটি বড় অংশ ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ায় একসময় দক্ষিণ লিভান্তে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ট হয়ে যায়।

ঐতিহাসিকভাবে, আরবরা কখনই ইহুদীদের দক্ষিণ লিভান্ত/জুদেয়া/ইসরাইল/জায়ন হতে ইহুদীদের বিতাড়ণ করেনি। দক্ষিণ লিভান্ত হতে আরবরা নয়, রোমান/বিজান্টিয়ামরা ইহুদীদের বিতাড়ণ করেছে।
ফিলিস্তিনি বলতে এখন যাদেরকে বুঝানো হয়, তারা কেউই দক্ষিণ লিভান্ত/ইসরাইল/প্যালেস্টাইনের বহিরাগত না।

"Zionism/ Lets go back to home"- এই ধারণার উপর বর্তমানের ইসরায়েল রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। Zionism-এর মত মতবাদের সূচনার কারণ হল রোমানদের কর্তৃক দক্ষিণ লিভান্তে ইহুদী নিপীড়ণ ও বিতাড়ণ। পরবর্তীতে, সারা ইউরোপেও ইহুদী নিপীড়ণ হয়: স্প্যানিশ ও পর্তুগীজ ইনকুইজিশান, ক্রসেডের সময় ক্রসেডারদের দ্বারা ইহুদী গণহত্যা, যীশুকে হত্যার জন্য দায়ী করে ইহুদী নিপীড়ণ।

যারা এ কথা বলছেন তারা কি আমাকে বলবেন ইসরাইল যেদিন স্বাধীনতা ঘোষণা করে সেদিন কারা ইসরাইল এর উপর হামলা করেছিল??

৯৭% ইসরাইলী ২০০০ বছর ধরে ইসরায়েলের/দক্ষিণ লিভান্তের বাইরে বসবাস করছে। ২০০০ বছর পর ওই ইসরাইলীদের বংশধর অন্যান্য দক্ষিণ লিভান্তীয়দের নিজেদের ঘর-বাড়ি হতে বের করে দেয় এবং নতুন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করে। এই রাষ্ট্র কি স্বাধীনতা পাওয়া রাষ্ট্র নাকি, অন্যায়ভাবে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র?

তা বড় বড় সব যুদ্ধের পর যে কাটা ছেড়া হয়েছে দেশ গুলো নিয়ে তাতে তো কিছু ভুল ছিলোই, সেকন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার এর পর যে ইউরোপে কে কাটা ছেড়া হলো সেটাই কি সব ক্ষেত্রে সঠিক ছিল? না উপমহাদেশের এই কাটা ছেড়া টা? ৪৫ এ যে বাংলাদেশ এ হিন্দু জনগোষ্ঠী ছিল ৩৮%, ২০১২ তে এসে তা হলো ৯%, তো মুসলামনদের সতন্ত্র আবাস ভূমি তৈরী করার সার্থে ব্রিটিস রা এই ভূমি থেকে হিন্দু দের উত্খাত করার পথ ও কি তৈরী করে যায়নি?

ভারত উপমহাদেশের দেশভাগের সাথে দক্ষিণ লিভান্তে ইসরায়েলের সৃষ্টির বৈষয়িক ও তুলনাযোগ্য মিল আছে কি? ভারতভাগের সময় বহিরাগত কোন জাতির জন্য কি আলাদা রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে?

কেন তাদেরকে ১৮৯০ এর দিক থেকে "হাগানাহ" এর সময় নিজ ভূমিতে ফিরতে হয়েছিল?

এই বাক্যের পাঠোদ্ধার করতে পারলাম না। হাগানাহ একটি ইহুদী জঙ্গি সংগঠন ছিল।

ওই উত্খাত বা খেদানোর কথা যদি বলেন তো বলব আরব রা এর আগে বহু জাতিকেই আরব ভূমি থেকে খেদিয়েছে (বাহাই, ইহুদি, ক্রিস্টান , কালদিয়ান), তো তখন আপনাদের মুখ গুলো বন্ধ থাকে কেন?

কথা হচ্ছিল ফিলিস্তিনিদের নিয়ে। আরবরা কাকে/কাদেরকে খেদিয়েছে সে ইস্যু নিয়ে ইজরায়েলীদের ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদকে কি বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করলেন? এক অন্যায় দিয়ে আরেক অন্যায়কে বৈধতা দেয়ার সেই পুরনো প্রয়াস।
এছাড়া, ফিলিস্তিনি/ দক্ষিণ লিভান্তীয়রা কাউকে খেদিয়েছে বলে তো ইতিহাসে পড়িনি। আপনি বোধহয় পড়েছেন। আমাকে উৎস বর্ণনা করলে একটু পড়ে নিতাম।

(অরফিয়াসের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এই পোস্টের মূল বিষয়ের বাইরে মন্তব্য করার জন্য)

অরফিয়াস এর ছবি

নারে ভাই, বরং ধন্যবাদ তোমার প্রাপ্য যথেষ্ট সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। ইসরায়েলের জন্ম ইতিহাস নিয়ে আসলেই নানা মত আছে, সুতরাং এর ইতিহাস তো জানা প্রয়োজন। তুমি বেশ তথ্য সমৃদ্ধ একটি ব্যাখ্যা দিয়েছ তাই তোমাকে ধন্যবাদ।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

হাসান এর ছবি

ব্রাদার, একটু নোয়াম চমস্কি, রবার্ট ফিস্ক আর নরম্যান ফিঙ্কলস্টাইন পড়লে ভালো হয়। একপেশে বক্তব্য আর কত! ওপাশটাও একটু দেখুন না! আপনার তথ্য উপাত্ত ভালোই; কিন্তু উপসংহারে আপনার মূল বক্তব্য(বিশেষ করে ইজরাইল বিষয়ক কমেন্টে) আর ইজরাইলি লবি ও রিপাবলিকানদের প্রেস নোটে তেমন কোনো ফারাক পেলাম না।

(btw এরা কেউই ছাগু না। কাজেই নো টেনশন। আর এরা পশ্চিমা জুজুবাজও না। সুতরাং ডাবল নো টেনশন।

অরফিয়াস এর ছবি

জ্ঞানচক্ষু উন্মোচন করার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা জানুন।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

দিগন্ত এর ছবি

আমি ১০০% নিশ্চিত এদের কেউই ইরানে নারীশিক্ষা বিষয়ে ইরান সরকারের পক্ষে থাকবেন না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হাসান এর ছবি

এবং আমি ২০০% নিশ্চিত এরা কেউই সেজন্য ইরানকে প্রি-এম্পটিভ এ্যাটাক করে ছারখার করার ইজরাইলি উপসংহারে ধুঁয়ো দিয়ে সাফাইও গাইবেন না।

তথ্য-উপাত্তে তেমন কোনো লাভ হয়না যদি তা দিয়ে এরকম চাইল্ডিশ উপসংহারে আসা হয়। আর সংবাদ, তথ্য উপাত্ত কীভাবে ম্যানিপুলেট করা যায় তা জানতে চমস্কির ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট দেখা যেতে পারে। আর পশ্চিমা বিশ্ব কীভাবে মিডল ইস্টকে পোট্রেট করে তা জানতে ফিস্ক দেখা যেতে পারে। আর ইজরাইলি মানবাধিকার কি মনোহর মধুর আর তাদের হলোকস্ট ব্যবসা কীভাবে ফিলিস্তিনিদের নির্যাতনের হাতিয়ার হচ্ছে সেটা জানতে নরম্যান ফিঙ্কলস্টাইন দেখা যেতে পারে।

ইরানের অবস্থাকে ইরানীদেরই ঠিক করতে হবে। সমাজকে সমাজের ভেতর থেকেই পাল্টাতে হয়। বাইরে থেকে স্বাধীনতা আমদানী একটা ভুয়ো কথা। আমরা অবশ্যই প্রতিবাদ করবো; প্রয়োজনে সাহায্যও করবো কিন্তু মূল কাজট তাদেরই করতে হবে। কালোরা নিজেরা(পড়ুন দাসব্যবসা আর কলোনিয়ালিজম) কিছু না করলে ঠিকমত এগোতে পারবেনা, পরে সাদাদের জন্য হুমকি হবে এই ধুঁয়োর কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? এই প্রবন্ধের প্রাবন্ধিকের বক্তব্যও ঠিক সেই গোছের।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

কিন্তু লেখক ইরানিদের নিজেদের অবস্থা নিজেরা ঠিক করার বদলে বাইরে থেকে স্বাধীনতা আমদানির পক্ষে কোনো সাফাই গেয়েছেন কি?

হাসান এর ছবি

সুস্পষ্ট মেসেজ নিয়ে আর পুনরাবৃত্তি করতে আগ্রহবোধ করছি না। এটাই শেষ কমেন্ট। বাকিটুকু যা ইচ্ছে ভেবে নেবেন।
-*-

বক্তব্য:

ইরানে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে পাশ্চাত্য শক্তিগুলোর প্রবেশ হয়তো সময়ের অপেক্ষামাত্র। আর একইসাথে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীল একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে বিশ্বরাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘাতই হয়তো এর ভবিষ্যত।

এখন দেখার বিষয় দুটি পাগলা রাজার হাতে ইট দিলে কি ঘটে আর দাবার ঘুঁটি কে আগে চালে !!

সাফাই:

এখন কথা হচ্ছে, যারা নিজের দেশের এরকম হাল করতে পারে তাদের হাতে পারমানবিক অস্ত্র রাখতে দেয়া কতোটা যুক্তিসংগত।

কিন্তু আজকে যদি ইসরায়েল এর হাতে পারমানবিক অস্ত্র না থাকতো তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো একটা দেশ যে আবার তাদের পুটুতে কামড় দিতে যেতনা তা হলপ করে বলা সম্ভব নয়। আর ইরানের সাথে ইসরায়েলের বৈরিতা এরকমই।

কিন্তু যেমন রাস্তার পাগলের হাতে লাঠি কিংবা ইটের ঢেলা দেখলে আমরা দূর দিয়ে চলি, সেরকমই উন্মাদ একটি রাষ্ট্রশক্তির হাতে পারমানবিক শক্তি অর্জন হতে দিলে সেটা বিশ্ব পরিস্থিতির জন্য কখনোই স্বস্তির হবেনা। আর ঠিক একারণেই ইরানের হাতে পারমানবিক শক্তি দেয়ার ব্যাপারে সবার সমস্যা।
-*-

আমার মনে হয় একে সাফাই ই বলে। যাইহোক ভিন্ন ভিন্ন সুসমাচার গোছের ব্যাখ্যা শুনতেও আগ্রহ নেই। কারণ যা ইচ্ছে ভেবে নেবেন।

অরফিয়াস এর ছবি

চমৎকার। হাততালি

তথ্য উপাত্ত নিয়ে পশ্চিমারা ম্যানুপুলেট করে তাই তাদের উপরে ভরসা নেই, মানলাম। কিন্তু যেই লেখকরা পশ্চিমা দেশেরই নাগরিক তাদের লেখায় এতো ভরসা কেন? যেখানে ইহুদি হয়েও ইহুদি হলোকাস্ট অস্বীকার করা নিয়ে যেই লেখকের বই এবং তাকে ঘিরে এতো কন্ট্রোভার্সি? কেন তারা আপনার পক্ষে বলে দেখে?

আর তাছাড়া, এই লেখকরা নিজেদের দেশের ভেতরে কিংবা বাইরে সরকারদের নিয়মিত তাদের অপকর্মের জন্য তুলোধুনো করে যাচ্ছেন, তাদের সরকার পক্ষ থেকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে কি? বরং এইরকম লেখক ইরানের মতো দেশে থেকে কি করতেন সেটাই মূল বক্তব্য, কারণ ইরানের সরকারের সমালোচনা করার কারণে ইতিমধ্যে অনেককেই ফাঁসিতে কিংবা জেলে যেতে হয়েছে। সেটা চোখে পড়েনা? নাকি তখন পশ্চিমা পরিসংখ্যান ভুল?

আর এইবার এই নাকি কান্না ছেড়ে লাইনে আসুন মহোদয়। দৌড়ে এসেছেন লেখায় অসঙ্গতি বের করার জন্য নাকি ইসলামী শরিয়া আইনের বিরুদ্ধে বলার জন্য? লেখাতে ইরানের অভ্যন্তরে পশ্চিমারা ঢুকে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করবে এটা আশা করা হয়নি, আরবি কিংবা উর্দুর জোরে হয়তো বাংলা ভাব সম্প্রসারণ একেবারেই ভুলে গেছেন। ওটাকে বলে আশংকা, যেভাবে পশ্চিমারা ভিয়েতনাম কিংবা কোরিয়াতে গিয়ে মানবাধিকার (!!) প্রতিষ্ঠা করেছিলো। যেভাবে তারা ইরাকে গিয়েও করেছিলো। এই কারণেই ইরানের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার সমস্যা পশ্চিমা শক্তির জন্য একটা উছিলা হতে পারে বৈকি, সেটাই আশংকা করা হয়েছে।

আর পুরো লেখাতে আপনার চুলকানি কি বিষয়ে তা জানা আছে। নারীদের পাথর ছুড়ে হত্যা কিংবা শিশুদের ফাঁসিতে ঝোলানো আপনার চোখে পড়ল না এসেছেন একটা বাক্য টুইস্ট করে ফাজলামো করতে। কেন শরিয়া আইনের বিরুদ্ধে বললে এতো জ্বলে কেন? ইসলামী শরিয়া আইনের বিরুদ্ধে লেখায় সরাসরি বিরুদ্ধাচারণ করায় তো হামলে পড়েছেন শকুনের মতো। পশ্চিমা পত্রিকার পরিসংখ্যান ম্যানুপুলেট করে লেখা লিখেছি, প্রমান করে দেখান। বহুক্ষণ ধরে নাচানাচি সহ্য করে যাচ্ছি, কিছু বলছিনা, কারণ মস্তিস্কের জায়গায় গোবর থাকলে তাদের কিছু বলেও লাভ নাই।

ইসরায়েলের পক্ষে সাফাই গেয়েছি তাই না? সত্যি বললে এতো লাগে কেন। যুদ্ধ শুরু করেছে এটা কি মিথ্যা নাকি? ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো আক্রমন করেছে বারবার এটাও কি মিথ্যা নাকি? ইসরায়েলের হামলা দেখেন তো ফিলিস্তিনি জঙ্গিদের বোমা হামলা দেখেন না? তখন কি হাউই বাজি দেখেন? অলিম্পিকে ইসরায়েলের ক্রীড়াবিদদের হোটেলে গিয়ে কারা গুলি করে মেরেছিল? কারা দিনের পর দিন রকেট আর গাড়ি বোমা মেরে নিরীহ নাগরিক মারে? ইসরায়েল গুলি করেলেই দোষ আর ফিলিস্তিন তো অবোধ শিশু? একপক্ষের দোষ বললে আরেকপক্ষের সাফাই গাওয়া হয়না রে আবুল। এটা আগে বুঝতে শেখেন।

শরিয়া আইনের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই যেভাবে দৌড়ে আসেন কাছা বেঁধে, তার জন্যই ইরানের সরকারের পতন দরকার। কারণ তাদের দেশের সরকারও আপনার মতো গুটিকয়েক লোকের তৈরী। এদের পতন ঘটা জরুরি সারা বিশ্ব থেকেই। নয়তো ধর্মান্ধ মৌলবাদ এরা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিবে প্লেগের মতো। আর আপনারা হবেন তার বাহক।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সাগর এর ছবি

ভাই আপনার লেজ তো বের হয়ে গেসে! কমে্নট পড়েই বুঝা যা‌য়! আপনি কী করে ফিলিস্তিনি বোমা আর রকেট হামলা কে ইসরায়েলের গণহত্যার সাথে তুলনা করলেন? নিচের লিনক দুইটা একটু দেখেন :

http://imeu.net/engine2/uploads/2/israeli-palestinian-fatalities-since-2000-ocha-2007.pdf

http://ifamericansknew.org/media/nyt-report.html

অরফিয়াস এর ছবি

জ্বি, কখনো লেজ দিয়ে কান চুলকে যাবেন আশা করি।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

ইসরায়েলের পক্ষে সাফাই গেয়েছি তাই না? সত্যি বললে এতো লাগে কেন। যুদ্ধ শুরু করেছে এটা কি মিথ্যা নাকি? ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো আক্রমন করেছে বারবার এটাও কি মিথ্যা নাকি? ইসরায়েলের হামলা দেখেন তো ফিলিস্তিনি জঙ্গিদের বোমা হামলা দেখেন না? তখন কি হাউই বাজি দেখেন? অলিম্পিকে ইসরায়েলের ক্রীড়াবিদদের হোটেলে গিয়ে কারা গুলি করে মেরেছিল? কারা দিনের পর দিন রকেট আর গাড়ি বোমা মেরে নিরীহ নাগরিক মারে? ইসরায়েল গুলি করেলেই দোষ আর ফিলিস্তিন তো অবোধ শিশু? একপক্ষের দোষ বললে আরেকপক্ষের সাফাই গাওয়া হয়না রে আবুল। এটা আগে বুঝতে শেখেন।

অরফিয়াস,
ইসরায়েলকে আরব রাষ্ট্রগুলো কি অযৌক্তিকভাবে আক্রমন করেছে?
ফিলিস্তিনিরা যখন বেসামরিক ইসরায়েলিদের আক্রমন করে, তখন তারা জঙ্গি/টেরোরিস্ট আর, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী যখন ফিলিস্তিনিদের আক্রমন করে ম্যাসাকার করে, তখন কি তারা জঙ্গি/টেরোরিস্ট নয়?
ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকরা নিরীহ আর, ফিলিস্তিনিরা তো জন্ম নেয় টেরোরিস্ট হিসেবে, তাই কি?
দুর্বল-সবলের লড়াইয়ে দুর্বল পক্ষের দোষ বর্ণনা করা আর সবল পক্ষের দোষ সম্পর্কে নিশ্চুপ থাকা কিন্তু কপটতা।
ফিলিস্তিনিরা ধোয়া তুলসী পাতা নয় কিন্তু অন্যায়ের পাল্লা ইসরায়েলের ভারী, যার তুলনায় ফিলিস্তিনির পাল্লাটি নেহায়েত ওজনহীন।
আমাকে আমার জন্ম-জন্মান্তরের আদি আবাসস্থল থেকে উচ্ছেদ করলে, আমি নিশ্চয় দখলকারীকে কোলে বসিয়ে চুম্মাচাটি করব না, তাই নয় কি?

ছাগলের ম্যাৎকারের জবাব দিতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে বিবেকশূন্য হয়ে কথা বলাটা ঠিক কি?
ছাগলদের ম্যাৎকারে বিবেকবানরা উত্তেজিত হবে, এটাই কিন্তু ওদের মূল অস্ত্র।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ইসরায়েল এর সমর্থক পথে ঘাটে বড় একটা দেখা যায় না। বাংলাদেশে প্রকাশ্যে ইসরায়েলের সমর্থক আছে জেনে অন‌্যরকম লাগছে। দেঁতো হাসি

অরফিয়াস এর ছবি

সুমন দা, আমি ইসরায়েলের কোনো প্রকাশ্য কিংবা লুকোনো সমর্থক নই। আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে ঠিক এই জিনিসটিই প্রমান করার চেষ্টা ছিলো কিছু মানুষের। "ইহুদি দালাল" প্রমান করার চেষ্টায় আমি নিজে মাথা গরম করে তাদের সফল করেছি বলেই মনে হয়। বাকি উত্তর উপরে রাজার প্রশ্নের জবাবে দিয়েছি।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অরফিয়াস এর ছবি

রাজা প্রশ্নটা সমর্থনের নয়, আমি ইসরায়েলের পক্ষে সাফাইও গাইছি না। মূল কথা হচ্ছে, এখানে মানবাধিকার এর প্রশ্ন যদি বলো তাহলে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েল দুই পক্ষই মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। ইসরায়েলের কথাই বলছি, তারা সুশিক্ষিত সামরিক বাহিনী দিয়ে তাদের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে নিরপরাধ সাধারণ জনগনকে গুলি করছে, হত্যা করছে এমনকি তাদের নির্দয় বুলেটের স্বীকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে শিশুরা। এমনকি যত্রতত্র সামরিক আর্টিলারি ফায়ার কিংবা জঙ্গি বিমানের আক্রমনে মারা যাচ্ছে নিরপরাধ মানুষ। এই কারণে ইসরায়েল অবশ্যই দোষী এমনকি তাদের প্রতি আন্তর্জাতিক আদালতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বিচারের ব্যবস্থা করাও প্রয়োজন মনে করি।

এবার আসি ফিলিস্তিনিদের বেলায়। জঙ্গি দল গুলো ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী মোকাবেলা করার জন্য বেছে নিচ্ছে আরবান ওয়ারফেয়ার স্ট্রাটেজি এবং টেকটিস এর সব থেকে জঘন্য পন্থা। তারা সিভিলিয়ানদের শিল্ড হিসেবে ব্যবহার করে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে। ঘনজনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে ইসরায়েলের সামরিক অবস্থানে লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। তার জবাবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী যখন আর্টিলারি ফায়ার করছে কিংবা রকেট হামলা চালাচ্ছে তার শিকার হচ্ছে ঐ এলাকার সাধারণ জনগণ।

তারা অনেক অল্পবয়সী শিশু কিংবা নারীকে ব্যবহার করছে সুইসাইড বোম্বার হিসেবে। তাদেরকে সীমান্ত এলাকাগুলোতে পাঠাচ্ছে বিভিন্ন অপারেশনে। এমনকি ইসরায়েলের অভ্যন্তরে বোমা হামলাগুলোও তারা অনেকক্ষেত্রে এধরনের বাহক দিয়ে পরিচালনা করছে। এছাড়াও দেখা যাচ্ছে গেরিলা পন্থায় হঠাৎ একটি এলাকায় ইসরায়েলের বাহিনী লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দ্রুত সরে পড়ছে তারা কিন্তু পরবর্তিতে পাল্টা হামলায় মারা যাচ্ছে সাধারণ জনগণ।

জঙ্গিদের এইসব গেরিলা পন্থার জন্য ফিলিস্তিন নিজেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত। যেখানে বেসামরিক জনগনকে কোনভাবে সামরিক যুদ্ধে ব্যবহার করা আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থী সেখানে জঙ্গিদলগুলো সুকৌশলে এই কাজটি করে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। ফিলিস্তিনি জঙ্গিদলগুলোর আন্দোলন কোনভাবেই গান্ধীর অহিংসা আন্দোলন তো নয়!!

এখন যদি আমি মধ্যপ্রাচ্যের সব থেকে সংঘাতপূর্ণ এই অঞ্চলটির মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে লিখতে যাই, তাহলে আমাকে দুই দিক বিশ্লেষণ করে তবে একটি লেখা দিতে হবে। তাতে অভিযুক্ত দুই পক্ষই। একজনের দায় বেশি একজনের দায় কম। কিন্তু দোষী তো দুই পক্ষই। এই সংঘাতের পরিস্থিতিটি এতটাই জটিল যে এটাকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিবেদনের প্রয়োজন যেটা এতোটা স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয়।

আর এই লেখাটি ছিলো ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যেখানে ইরানের সরকার নিজ দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত। একটি দেশের অভ্যন্তরীণ আইন এবং আন্তর্জাতিক আইনের পার্থক্যও এখানে দেখতে হবে। সেখানে কিছু মৌলবাদী ছাগু পরিকল্পিত ভাবে আলোচনাটিকে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল এর দিকে নিয়ে গেলো যাতে ইরানের ব্যাপারটি হালক হয়ে যায়। মূল আলোচনাটি সড়িয়ে দিয়ে এখানে মূল বক্তব্যটিকেই ঘোরালো করে দেয়া হলো।

আর মূল লেখাতে কোনভাবেই আমি ইসরায়েল কিংবা পশ্চিমা বিশ্ব কাউকে সমর্থন তো করিনি। এমনকি ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণও কিছু ছিলোনা। আমি কিছু প্রাপ্ত তথ্য উপস্থাপন করেছি মাত্র। সেখানে ইসলামী শরিয়া আইনের অপপ্রয়োগের চিত্রটি তুলে ধরার কারণে মূল আলোচনাটি কারো কারো চুলকানির হয়ে দাঁড়ালো।

আর তোমার মনে হচ্ছে আমি ইসরায়েলকে সমর্থন করছি তা হয়তো আমার যুক্তি উপস্থাপন এবং বাক্য গঠনের কারণে। সেটা স্বাভাবিক। রাগের মাথায় লেখা পরে আমার নিজেরও যুক্তিগুলো যথেষ্ট অমানবিক মনে হয়েছে। কিন্তু পরিবর্তন করিনি।
তবে এটা সত্যি মানবাধিকার লঙ্ঘনের উপরে লিখতে হলে আমাকে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন উভয় পক্ষের সমস্যা নিয়েই লিখতে হবে। এই বিষয়ে আমি কাউকে সমর্থন বা সফট কর্নার দেখাবো না। এখানে ইরানের ভুক্তভোগী জনগনের জন্য আমার সমবেদনা থাকলেও ঐ বিষয়ে কারো পক্ষের হয়ে লেখা সম্ভব হবেনা বিষয়টির জটিলতার কারণেই।

আশা করি আমার অবস্থান পরিষ্কার করতে পেরেছি।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

ঠিক কোন জায়গা থেকে ইসরাইলকে ফিলিস্তিনিরা আক্রমন করলে তোমার কাছে আইনসম্মত মনে হবে? তোমাকে সহজ করে দেয়।
ক) পাশ্ববর্তী আরব রাষ্ট্র হতে (এটি সম্ভব না। কারন: তৃতীয় দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে, যুদ্ধ বৃহত্তর হবে। এছাড়া, সামরিক দিক হতে পাশের রাষ্ট্রগুলো দুর্বল, বৃহত্তর যুদ্ধ সামলানোর অবস্থা কারোই নেয়।)
খ) গাজা হতে। (পৃথিবীর ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি। এছাড়া, গাজা ইজরাইলী অবরোধের শিকার। ইজরাইলের সাথে যুদ্ধ করার জন্য যে বৃহৎ সামরিক সরন্জাম প্রয়োজন, তা গাজায় আনা সম্ভব নয়।)
গ) পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম। (ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল এবং সরাসরি ইজরায়েল নিয়ন্ত্রণ করে। এখানে, ইজরায়েলের বিরুদ্ধে কোন প্রাতিষ্টানিক যুদ্ধ পরিচালনা করা অসম্ভব।)
তাহলে, ইজরায়েলের সাথে যুদ্ধ করার জন্য ফিলিস্তিনিদের একটি অপশন খোলা থাকে। আর তা হল: গেরিলা পদ্ধতি।

দু:খিত, আমি নিজ বাসভূমি হতে বিতাড়িত ফিলিস্তিনিদের সন্ত্রাসী/জঙ্গি বলতে পারছি না।

অসহায় ফিলিস্তিনীদের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগাচ্ছে আল-কায়েদা। উগ্রবাদীতা অসহায়-নিপীড়িতদের মাঝে বিস্তার লাভ করে। এটি খুব স্বাভাবিক।
ইসরায়েল প্রতিষ্টার সময় ইরগুন, লেহি, নিলী, হাগানাহ, প্যালমাস, বেইতার নামের এই সংগঠনগুলো ফিলিস্তিনি জনগণ ও প্রশাসনে চোরাগুপ্তা হামলা ও গেরিলা যুদ্ধ করত।

ফিলিস্তিন কোন রাষ্ট্রকাঠামো নয় যে এরা ট্রেডিশনাল পদ্ধতিতে যুদ্ধ করবে।

"পরাধীন জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম" আর "নিজ বাসভূমি হতে বহিষ্কৃত জাতির অধিকার সংগ্রাম" এক বিষয় নয়।

পোস্টের বিষয়ের বাইরের টপিক নিয়ে কথা বলার জন্য দু:খিত। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যু নিয়ে কোন এক পোস্টে কথা হবে।

ভাল থেকো। হাসি

অরফিয়াস এর ছবি

দেখো এখানে আইনসম্মত হওয়ার কিছু নেই। গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ কখনোই সাধারণ সামরিক কায়দা মেনে চলেনা এটা ঠিক। কিন্তু তার জন্য সাধারণ নাগরিক যারা হাতে অস্ত্র তুলে নেয় নি, তাদের বর্ম হিসেবে ব্যবহার করাও তো আর সমর্থনযোগ্য নয়। একদিকে স্বাধীন ফিলিস্তিন দাবিতে আন্দোলন অন্যদিকে এতে সাধারণ নাগরিকদের বলি হওয়া, দুটোই সমস্যা। এখন এই কারণেই এই বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করা এতোটা সহজ তো নয়।

আমি ফিলিস্তিন এর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি যেমন সমর্থন করছি কারণ এটা তাদের অধিকার একই সঙ্গে তাদের স্বাধীনতাকামী দলগুলোর গেরিলা পন্থায় সাধারণ নাগরিক এর শিকার হওয়াকে সমর্থন করতে পারছিনা। আবার এই স্বাধীনতাকামী দলগুলোর মাঝে সবাই যে একই আদর্শের তাও নয়, এদের অনেকেই জঙ্গিদল এবং সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডে জড়িত।

আবার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী দলগুলো যেহেতু প্রচলিত সমর পদ্ধতিতে যুদ্ধ করতে পারছেনা তাদের সমস্যার কারণে তাই প্রতিরোধ করতে তারা বেছে নিচ্ছে বসতিপূর্ণ এলাকা। আবার এই এলাকায় ইসরায়েলের অভিযানগুলোতে নিহত হচ্ছে সাধারণ জনগণ। তো তুমি চিন্তা করে দেখো এই কারণগুলো একটার সাথে আরেকটা জড়িত। আজকে ইসরায়েল হামলা বন্ধ করলেই ফিলিস্তিনিরা বন্ধ করতে পারবেনা কারণ তাতে তাদের স্বাধীনতার দাবি পূরণ হয়না। আবার ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার দাবি পূরণ করতে গেলে ইসরায়েলিদের দাবি পূরণ হয়না। আবার ইসরায়েলের সবাইকে এতো বছর পরে এই স্থান থেকে সড়িয়ে নিয়ে যাওয়াও সম্ভবপর নয়। তাহলে আপাতদৃষ্টিতে এখানের কোনো সমাধানই দেখা যাচ্ছেনা !! তাহলে এই সংঘাতের কি কোনো শেষ আছে? আর তাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও কি কোনো শেষ থাকবে?

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

হাসান এর ছবি

সংশোধনী -

কিছু না করলে ==> কিছু করলে

হবে।

রায়হান আবীর এর ছবি

লেখাাটা প্রকাশের সাথে সাথেই পড়েছিলাম, আজ এসে মন্তব্যগুলো দেখে গেলাম চলুক

অরফিয়াস এর ছবি

মন্তব্য আর কি দেখবেন? আমারে তো ইহুদি দালাল বানায় দিলো। শয়তানী হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

স্বয়ম এর ছবি

লেখাটি ভালো লেগেছে, বেশ তথ্য বহুল এবং কিছু প্রচলিত বিভ্রান্তি কেটেছে যা মূলত ইরানকে মডারেটইসলামিক কান্ট্রি হিসেবে সামনে দাঁড় করিয়ে এক ধরনের আফিমে বুঁদ করে দেয় সাধারণ মানুষকে। আরো রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিশ্লেষণ সম্পৃক্ত হলে পূর্ণাঙ্গ হতো। সামনে পাবো বলে আশা রাখি।
ধন্যবাদ।

অরফিয়াস এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।