ইন্টারনেট আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইন্টারনেট এর কারণে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের পাশাপাশি আমাদের জীবন যাপনের যে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে তার বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু উদ্ভাবনের শুরু থেকে এই ইন্টারনেটের অসাধারণ শক্তিকে ভয় পেয়েছে নানা প্রতিষ্ঠান এবং সরকার। বারবার ইন্টারনেটের উপরে বিধিনিষেধ এর শেকল পড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে, এখনও হচ্ছে। মূলত ইন্টারনেটের বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাবের যুক্তি দেখিয়ে বারংবার চেষ্টা করা হয়েছে তথ্যের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র এই ইন্টারনেটকে একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ পরিস্থিতিতে নিয়ে আসার। বিগত বছরগুলোতে ইন্টারনেট মানবাধিকার পরিস্থিতি হতে শুরু করে বিভিন্ন দেশের সরকারের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি প্রকাশের অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়। উইকিলিক্স এর মতো প্রতিষ্ঠান যখন দুর্নীতিবাজ অত্যাচারী সরকারগুলোর হাজার হাজার গোপন নথি জনসমক্ষে ফাঁস করে দেয়া শুরু করে তখন বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্র এবং প্রতিষ্ঠানগুলো এর বিরুদ্ধে একজোট হয়ে দাঁড়ায়। একইভাবে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশে বিভিন্ন আন্দোলনে যখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে তখনও সরকারগুলো তথ্যের অবাধ সরবরাহের বিরুদ্ধে যুক্তি প্রদর্শন শুরু করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো সবসময়ই মুক্ত এবং স্বাধীন একটি ইন্টারনেট ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার জন্য। বিভিন্ন বিধিনিষেধ জারি করে চেষ্টা করেছে ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতার উপরে হস্তক্ষেপ করার, চেষ্টা করেছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত জগতে হস্তক্ষেপ করার।
ইন্টারনেট আমাদের মানবসভ্যতাকে প্রযুক্তিগত উন্নতির পাশাপাশি আরও অনেক কিছুই দিয়েছে। তার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো সরকারের শ্যেন দৃষ্টি এড়িয়ে নিজেদের তথ্য সংক্রান্ত অধিকার এবং স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার সংরক্ষণ করার। বর্তমান বিশ্বে নানা ঘটনা বিশ্লেষণ করে অন্তত সাধারণ নাগরিক হিসেবে এতটুকু বোঝা সম্ভব সাধারণ জনগনের এই মুক্ত স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্র ইন্টারনেট এখন অনেক সরকারেরই চক্ষুশুল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে বিশেষ করে ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞার খড়গ অনেকবার নেমে এসেছে। ইউটিউব বন্ধ করে অসংখ্য মানুষের গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যাঘাত ঘটানো হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু যদি আন্তর্জাতিকভাবেই আইন করে এই ক্ষমতা সরকারের কাছে তুলে দেয়া হয় যে, সরকার যখন খুশি নিজের মতো করে অধিকার খাটিয়ে ইন্টারনেট এর সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে তাহলে বুঝতে বাকি থাকেনা কি অপেক্ষা করছে সামনে।
‘ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স (ডব্লিউসিআইটি)’ শীর্ষক সভায় ইন্টারনেটের বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে সোমবার দুবাইতে আলোচনায় বসেছে ১৯৩টি দেশের প্রতিনিধিরা। প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করে যাচ্ছে গুগলের মতো নানা প্রতিষ্ঠান। যখন অনলাইনে সক্রিয় দুই বিলিয়ন মানুষের অর্থাৎ পৃথিবীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকার-অনধিকার সংক্রান্ত বিষয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এবং সিদ্ধান্তের ক্ষমতা গুটিকয়েক মানুষের হাতে চলে আসে তখন সেটার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হবেই।
মুক্ত ইন্টারনেট ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে নানা দেশের সরকার বিধিনিষেধ জারি করে নিয়ন্ত্রণ করছে। এখন ৪২টি দেশ তাদের অভ্যন্তরীণ ইন্টারনেট কার্যক্রম ফিল্টার করে, শুধু তাই নয়, গত দুবছরে বিশ্বে প্রায় ১৯টি আইন করা হয়েছে অনলাইনে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। The International Telecommunication Union (ITU) ইন্টারনেটকে নিয়ন্ত্রনের এরকমই কিছু উদ্দেশ্য নিয়ে এবারও সভায় বসেছে। শুধু তাই নয় কিছু প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হলে, সরকারের কাছে একচ্ছত্র ক্ষমতা থাকবে দেশের অভ্যন্তরীণ ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করার এবং এতে উপস্থাপিত সকল তথ্য নিজের ইচ্ছামত ফিল্টার/সেন্সর করার। অনেক সুবিধা এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে ব্যবহার করতে হলে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে এমনকি দিতে হতে পারে অতিরিক্ত খরচ।
ইন্টারনেট ব্যবহার নীতিমালার আলোচনার ক্ষেত্রে শুধু সরকারের প্রতিনিধিদের কাছে একচেটিয়া ক্ষমতা থাকতে পারেনা। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে এরকম ভাবে কোন সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বিশ্বের যেকোন দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে মেনে নেয়া অনুচিত। ইন্টারনেট সংক্রান্ত কোন সিদ্ধান্তে এর ব্যবহারকারীদের মতামতও গ্রহণ করা উচিত। তাই গুগল তাদের ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই হয়তো গুগল এর হোমপেজে ইতিমধ্যেই এটি লক্ষ্য করেছেন।
তাই অনুরোধ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের, নিজেদের মূল্যবান সময়ের কিছু মুহূর্ত খরচ করে এই পিটিশনটি সমর্থন করুন। সারা বিশ্বের ব্যবহারকারীরা এক হলে অবশ্যই আশা করা যায় যে, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার আগে সরকারগুলো দ্বিতীয়বার অন্তত চিন্তা করবে।
দরকারী লিঙ্কগুলো-
A free and open world depends on a free and open web.
মন্তব্য
(Y)
অ্যাড করলাম আমার ভয়েস।
সৌরভ কবীর
(ধইন্যা)
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
(Y)
এটা দেখি জাতিসংঘের একটা নতুন প্রকল্প। জাতিসংঘ পুরা পৃথিবীর সবকিছু’র দায়িত্ব নিতে চেয়ে সবকিছু লেজেগোবরে করে ফেলে।
হুমম দেখা যাক এবার কি করে!
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ডব্লিউসিআইটি লিক্স নামে একটি সাইট এই কনফারেনসের সাথে সংশ্লিষ্ট দলিলাদি হুইসেল ব্লোয়ারদের থেকে সংগ্রহ করে যাচ্ছে। এখানে লিংক দিইয়ে দিলামঃ ডব্লিউসিয়াইটলিক্স
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
ধন্যবাদ লিঙ্ক সংযোজনের জন্য। (Y)
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
(Y)
(ধইন্যা)
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আমাদের দেশটাও তো ইউটিউব বন্ধ করে "free and open Internet" এর কবরে এক পা দিয়ে রেখেছে :'( যাই হোক, আমার আওয়াজও যোগ করলাম।
মিনজহাজ.রাতুল
নতুন মন্তব্য করুন