একটি চুইট ছেলের জন্য গল্প

অরফিয়াস এর ছবি
লিখেছেন অরফিয়াস (তারিখ: শুক্র, ১৯/০৪/২০১৩ - ৪:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আগেকার দিনে পরিবারের নানী-দাদীরা বিশ্বাস করতেন, সদ্যভূমিষ্ঠ সন্তানের মুখে কয়েক ফোঁটা মধু দিলে নাকি সে বড় হয়ে মিষ্টভাষী/মিষ্টভাষিণী হয়। কিন্তু সদ্যভূমিষ্ঠ সন্তানের আনন্দে আত্মহারা পিতামাতা যদি মধু জোগাড় করতে মধুরভাবে ব্যর্থ হন তাহলে চিনি কিংবা স্যাকারিন এর প্রয়োগ ঠিক একই কর্ম সম্পাদনে ব্যবহৃত হতে পারে কিনা এই বিষয়ে তারা কিছু বলে জান নাই। কেউ এর প্রয়োগে আশানুরূপ ফল পেয়েছেন বলেও আমার অন্তত জানা নাই।

কিন্তু এখন কি আর আগের দিন আছে ? দিন বদলাইছে না ?! বদলে দাউ, বদলে যাউ এর যুগে এখন কয়েক পাতা বিদ্যা অর্জন করা ডাক্তারগুলো নাকি বলে সদ্যভূমিষ্ঠ সন্তানের মুখে মধু দেয়া উচিত না, এতে নাকি পেট ফাঁপে হেন তেন আরও কত্তো কি !! ব্যাটারা বোঝেনা রীতি-রেওয়াজ বলে তো একটা কথা আছে নাকি ? যাই হোক, এই মধু কিংবা চিনি কিংবা স্যাকারিন এর দোলাচালে কত শিশুর জীবন যে বদলে যায় তা যদি একবার এই জ্ঞানপাপীরা জানতেন তাহলে হয়তো এসব বলার আগে অন্তত দুবার ভাবতেন।

অবশ্য এসব বললেই কি আমাদের রেওয়াজ আমরা ভুলে যাবো? কাভি নেহি !

সেরকমই ভোলেননি রীতি-রেওয়াজে বিশ্বাসী মানুষ আমাদের শ্রদ্ধেয় মঞ্জুর সাহেব, রাজপুত্রের মতো সন্তান হলে মানুষ আনন্দে আত্মহারা হতেই পারে এটা দোষের তো কিছুনা! তিনিও হয়েছিলেন, তবে সেই সময়ে সন্তানের মুখে মধু নাকি চিনি দিয়েছিলেন তা আমার জানা নেই। কিন্তু সেই সময়ে যাই দিয়ে থাকেন তা যে চমৎকার কাজে দিচ্ছে তার উদাহরণ তার সুযোগ্য উত্তরাধিকারী আমাদের আন্ডালিভ পার্থ ভাই। বাপ হয়তো “সরকারী মাল, দারিয়ামে ঢাল” এর মতো একটু বেশিই চিনি ঢেলে দিয়েছিলেন, কিন্তু তার ফলে আন্ডালিভ এর চলনে-বলনে এত চুইটনেস যে কি আর বলবো !!

এদেশের আলো হওয়ায় উনি তরতর করে বড় হয়েছেন, শুধু বড় হয়েই ক্ষান্ত দেননি, বিলেত থেকে ব্যারিস্টারি করেছেন, স্যুট-টাই পড়া “ PSY এর মাদা-ফাদো জেন্টেলম্যান” হয়েছেন, তেল চিক্কন ত্বকে জেল্লা দিয়ে নানা কায়দায় ছবি তুলেছেন আর তাতে যেসব বাঙালি ললনা আগে “ম্যারি মি আফ্রিদি” বলে বুক চিতিয়ে লাইনে দাঁড়াত তাদের নতুন হিরো হয়ে গেছেন আমাদের আন্ডালিভ ভাই।

কিন্তু এই তো শেষ নয়, গুনের কেত্তন করতে গেলে যে রাত ফুরোয় ! উনি পিতার দেখানো মহান আদর্শে বলিয়ান হয়ে রাজনীতির মাঠও গরম করেছেন, মহান সংসদে ভাষণের ফাঁকে ফাঁকে ১০১ বার “মাননীয় স্পিকার” বলে হাওয়া গরম করেছেন, কত্তো কি। অবশ্য এসব তিনি করতেই পারেন। পরিবারতন্ত্রে মাঠ কিংবা সংসদ দুটোই গরম করা বংশপরম্পরার বিষয়। কিন্তু এসব করেই চুপ মেরে গেলে কথা ছিল, টেকাটুকা এদিক সেদিক করে গণতন্ত্রের আমদানি রফতানি করলেও খুব একটা গাইগুই করতাম না, কিন্তু উনি শেষপর্যন্ত তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে এদিক সেদিকে খালি “আমাকে বলতে দেন না, আমাকে বলতে দেন না প্লিজ” করে বেসামাল করে দিচ্ছেন।

এমনিতেই আমাদের অভ্যাস খারাপ, একবার বলা শুরু করলে আমরা থামতে চাইনা, আবার এই ভয়ে কাউকে বলতেও দিতে চাইনা, বলা-না বলার এই টানা হেঁচড়ার মধ্যে ফাঁকফোঁকর দিয়ে কেউ যদি একবার বলা শুরু করে তাহলে আর তাকে থামায় কে !! সে বলতেই থাকে, বলতেই থাকে, বলতেই থাকে...... উফফ। আন্ডালিভ ও তাই, তাকে থামায় কার এমন সাধ্য !

উনি বলেন আমরা শুনি, উনার সুমিষ্ঠ বচন আমাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে আমাদের চিত্ত আন্দোলিত করে, আমরা আবেগে বেসামাল হই, কাইল্লা আম জনতা আমরা তার মতো শুভ্র দেবদূতকে দেখে আনন্দিত হই, তার চোস্ত কেতাদুরস্ত ভাষা কিংবা হাব ভাবের কাছে নিজেদের অতি ক্ষুদ্র মনে হয়। এই মরার দেশে অনেক অনেক দিন পরে একজন পারফেক্ট জেন্টেলম্যান এসেছেন আমাদের গণতন্ত্রের ত্রানকর্তা রূপে, এই ভেবে আমরা আবেগে আপ্লুত হই। উনার আশেপাশে থেকে উনার চুইটনেসে মুগ্ধ হয়ে কারাগারের মাদারফাকাররা পর্যন্ত ব্রাদারফাকার হয়ে যেতে চায় !! কি চুইট অবস্থা ভাবুন একবার !

উনি বলেন, “দেখুন বিচার হতে হবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মানের”।

জনতা বলে, আহ্ মধুর, মধুর !

উনি বলেন, “আমিও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই কিন্তু.....”

জনতা বলে, ও মাই গড, কি চুইট করে কথা বলেরে !

উনি বলেন, “সরকার বিরোধী মত দমন করছে”।

জনতা বলে, ইসস পোলা তো নয় যেন আগুনেরই গোলা রে !

উনি বলেন, “বেয়াদব বো-লগারদের কানে ধরিয়ে বসিয়ে রাখা উচিত, কি সাহস সেগুলোর” !

জনতা শিউড়ে উঠে বলে, “ঠিক ঠিক, কানে ধরালেই হবেনা, চুইট করে পাছায় বেতও মারা উচিত ছিল”!

শুধু কেউ কেউ দীর্ঘশ্বাস ফেলি, ভাবি, সবাই কি আর এত্তো চুইট হয়!

এহেন অবস্থায় বাংলার আকাশ-বাতাসে, দিকে দিকে আজ একই রব ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়, “আন্ডালিভ পার্থ, ছেলেটা সিরাম চুইট আছে”!

এরকম মহাজাগতিক এক পরিবেশে এক বজ্জাত-বেজন্মা-ইতর “বো-লগার” ফট করে চুইট করে বলে বসে, “আচ্ছা চিনি চুরি করলে তারে কানে ধরাইবেন নাকি বেত মারাইবেন জনাব?”

আমরা ভ্রু কুঁচকে মাথা নাড়ি, আন্ডালিভ পার্থ ঠিক বলেন, “বো-লগার গুলোকে কানেই ধরানো উচিত, যত্তসব”!!

[ইহা লেখকের একটি চুইট কল্পনা, বাস্তবের সাথে মিল খুঁজতে যাবেন না পিলিজ]


মন্তব্য

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

সবাইক কি আর আমাদের মতো বলগার হবে রে?

সিরিয়াসালী কাল এইটা আমি শোনার পর ভাবসিলাম মতিকন্ঠের নিউজ। বাট যেহেতু এটা আন্দালিভের মতো চুইট পোলা কইসে, তখন মনে হইলো এদের কাছে তো আসলে সব স্যাটায়ার ফেইল

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

অরফিয়াস এর ছবি

হ দ্যা ইয়েস !

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

ঈয়াসীন এর ছবি

শরীর কিটমিট করতাছে, ওরে চটকাইতে মুঞ্চায়

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অরফিয়াস এর ছবি

শয়তানী হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

দেঁতো হাসি
হে হে হে... অর্ফিয়াস ভাই... আপ্নে না... হি হি হি... আন্দা ভাইত্তেও চুইট

অরফিয়াস এর ছবি

লইজ্জা লাগে

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অতিথি লেখক এর ছবি

“আচ্ছা চিনি চুরি করলে তারে কানে ধরাইবেন নাকি বেত মারাইবেন জনাব?”
হা হা হা...
চলুক

সুবোধ অবোধ

অরফিয়াস এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

কড়িকাঠুরে এর ছবি

আণ্ডা'র জন্য হ্যাঁ বলুন... খাইছে

অরফিয়াস এর ছবি

বলুন ,"হ্যাঁ" !!

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অতিথি লেখক এর ছবি

এক নতুন চুলকানির নাম আন্ডালিব। মহা পন্ডিতীয় ভাবের অধিকারী এই নাপিত নতুন বলদের জায়গা দখল করছে। মোর জ্বালা-----কৈ যামু
---মম রাজ্যের রাজা

অরফিয়াস এর ছবি

চলুক

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

মইনুল আজিজ এর ছবি

দেখে আর শুনে যেদেশে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেখানে আন্ডালিভরা তো মউক্ষা পাবেই।

খুব চুইট করে বলেছেন তো!

অরফিয়াস এর ছবি

দেঁতো হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল তো ভাল নাহ !!! আর কত

- দ্বিদল

অরফিয়াস এর ছবি

চিন্তিত

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

এজন্যেই তো তারা বলে "অতীত ভুল" চোখ টিপি

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

অরফিয়াস এর ছবি

আসলেই অতীত ভুলে এগোতে হবে সামনের দিকে ! চোখ টিপি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।