প্রকৃত নাম: “নানজিঙ! নানজিঙ!”
প্রকাশকালঃ ২০০৯
দৈর্ঘ্য: ১৩৩ মিনিট
বিষয়: নানজিঙ ম্যাসাকার, ধর্ষণ, নির্যাতন, গনহত্যা, চীন-জাপান যুদ্ধ
পরিচালক: চুয়ান লু
দেশ: চীন
ভাষা: ম্যান্ডারিন, ইংরেজি, জাপানিজ, জার্মান
আইএমডিবি রেটিংঃ ৭.৬/১০
মানুষের ক্রোধ-ভালোবাসা, জন্ম-মৃত্যু, এরকম অসংখ্য বিপরীতধর্মী অনুভূতি, সৃষ্টি এবং ধবংসের মুহূর্তগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ এর মাধ্যমে যখন একজন দক্ষ পরিচালকের হাতে চলচ্চিত্র হিসেবে উঠে আসে তখন মিশ্র অনুভূতির জটিল আবেগ বিশ্লেষণে এর থেকে আর ভাল মাধ্যম কি হতে পারে?
নানজিঙ এর যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত আরেকটি চলচ্চিত্র (দ্যা ফ্লাওয়ার্স অফ ওয়ার) বিষয়ে এর আগে লিখেছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় দেখা হয়েছিল “সিটি অফ লাইফ এন্ড ডেথ”। একবার নয়, একাধিকবার দেখেও এই বিষয়ে লিখতে ইচ্ছে হয়নি। চলচ্চিত্রটি দেখার পরে অনেকটা সময় বিষণ্ণতা গ্রাস করে। নিজের অজান্তেই বারবার দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
ছবিটি শুরুর অল্প সময় পরেই দর্শক নিজেকে, অসহায়ত্ব, হাহাকার, মৃত্যু, ধবংস- একরকম মিশ্র অনুভূতির মাঝে আবিষ্কার করবে। এই অনুভূতির উপলব্ধিটি আসবে আকস্মিক এবং এর প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট তীব্র। প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর পদধ্বনির মাঝে বেঁচে থাকার তীব্র আকাঙ্খার চিত্রায়ন এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে ছবিটিতে।
নিশ্চিত পরিনতি মৃত্যু জেনেও ধবংসপ্রাপ্ত শহরে কোনমতে লুকিয়ে থাকা গুটিকয়েক চাইনিজ গেরিলা যোদ্ধার মনোবলের যে চিত্রায়ন তা প্রশংসার দাবিদার। গেরিলা যোদ্ধা লু জিয়াঞ্জিয়ং এর চরিত্রটি মূল গল্পের অন্যতম প্রধান এবং এই চরিত্রে অভিনেতা য়ে লিউ এর অভিনয় এক কথায় অনবদ্য। হাতে গোনা কয়েকটি সংলাপ থাকলেও এই চরিত্রটিতে তার প্রতি মুহূর্তের অভিনয় ছিল আগ্রহের মূল বিষয়।
অপরদিকে চলচ্চিত্রটির ভারসাম্য ছিল জাপানিজ যোদ্ধা কাদকাওা এর চরিত্রটি। আগ্রাসী জাপানিজ সেনাবাহিনীর এই চরিত্রটি আসলে পুরো গল্পে ভাল-মন্দের সুপ্রাচীন দ্বৈরথটিকেই ফুটিয়ে তুলেছে। অভিনেতা হিদেও নাকাইজুমি, যুদ্ধকালীন সময়ে আগ্রাসী বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে নিজের ভেতরের ধারাবাহিক মানসিক দ্বৈরথের যে অভিব্যাক্তি তা যথেষ্ট ভালভাবে প্রকাশ করেছেন।
অন্যান্য চরিত্রে অভিনেতা/অভিনেত্রীদের অভিনয় শক্তিশালি এবং প্রশংসার দাবীদার। কাহিনীর চিত্রায়নে সেট নির্মাণ এবং স্থান নির্ধারণ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এই চলচ্চিত্র সেইক্ষেত্রে শক্তিশালী আবহ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। আর চলচ্চিত্রটি সাদাকালো হওয়ায় বিষণ্ণতার অনুভূতিটি আরও মর্মস্পর্শী হয়েছে। আবহসঙ্গীত এর অনন্যসাধারন মূর্ছনা এই অনুভূতিকে আরও গাড় করতে সক্ষম।
যুদ্ধবন্দী চাইনিজ যোদ্ধাদের গনহত্যার দৃশ্যগুলো একটানা দেখা কষ্টসাধ্য এবং দর্শকের চোখ ভিজে উঠবেই। নানকিং দখলের পরে জাপানিজ সেনাবাহিনী যে লাগামহীন গনহত্যা এবং গনধর্ষণ চালায় তা ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কজনক একটি অধ্যায়। আর চলচ্চিত্রে নারী নির্যাতনের যে দৃশ্যায়ন তা সত্যিকার অর্থেই নৃশংস এবং যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে দর্শককে গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করবে। যুদ্ধের কারনে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী এবং শিশু- এই সত্যটি নির্মমভাবে এই চলচ্চিত্রে ফুটে উঠেছে।
জাপানিজ সেনাবাহিনীর নৃশংসতার চিত্রায়ন এতটা ভয়াবহ এবং তীক্ষ্ণভাবে সরাসরি উপস্থাপনের হয়ত দরকার ছিলনা, তবে এটাও সত্যি যে চলচ্চিত্রটিতে সত্যিকার ভয়াবহতার কিয়দংশও উপস্থাপন যুক্তিসঙ্গত কারনেই হয়ত সম্ভব হয়ে উঠেনি। তবে এরকম একটি চলচ্চিত্র নির্মাণে পরিচালক চুয়ান লু, তার দক্ষতার জন্য ভূয়সী প্রশংসার দাবীদার।
যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত অন্যসব চলচ্চিত্রের সাথে “সিটি অফ লাইফ এন্ড ডেথ” এর তুলনা করলে একে আমি প্রথম সারিতেই রাখব। আমার পছন্দের অন্যতম সেরা একটি চলচ্চিত্র হয়ে থাকবে এটি। অসংখ্য বিপরীত এবং সাঙ্ঘর্ষিক পরিস্থিতির দোলাচালে দর্শক যখন প্রতিটি মুহূর্ত চলচ্চিত্রটির সাথে নিজেকে একাত্ম করতে বাধ্য হবে তখন সত্যিকার অর্থেই এর জন্য সাধারণ প্রশংসা কোনভাবেই যথেষ্ট নয়।
মূল পোস্টার-
ইউটিউব ট্রেইলার-
চলচ্চিত্র নিয়ে পূর্বের পোস্টগুলোর লিঙ্ক-
চলচ্চিত্র: দ্যা ফ্লাওয়ার্স অফ ওয়ার
মন্তব্য
দেখি যোগাড় করতে পারি কি না!
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
রিভিউ দারুন, এখন দেখার প্রত্যাশা।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
শহরটির নামের সঠিক উচ্চারণ 'নানজিঙ'। একে নানচিঙ, নানকিন বা নানকিং বলা ভুল। যদিও বহু ভাষায় হরহামেশা এই ভুল নামগুলোই লেখা হচ্ছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ পাণ্ডবদা, নামটি ঠিক করে দিলাম লেখায়।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
Chuan Lu এর সিনেমা গুলো দ্যাখা হয়নি। চাইনিজ সিনেমা আমার এমনিতেই অবশ্য কম দ্যাখা হয়েছে। আর রিভিউ গুড় হয়েছে
--
পিনাক পাণি
কিছু কিছু চাইনিজ এবং কোরিয়ান চলচ্চিত্র আসলেই অসাধারণ। দেখা শুরু করে দিতে পারেন ধীরে ধীরে। ধন্যবাদ।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
বেশী কষ্টের, শালার মানুষ খুব নিস্থুর প্রাণী।
facebook
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
এই ছবিটা দেখা হয়নি। দেখবো।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজু ভাই দেখে বইলেন কেমন লাগলো।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
'দেখতে হবে' লিস্টে যোগ করে ফেললাম। 'দ্যা ফ্লাওয়ার্স অফ ওয়ার' আপনার রিভিউ পড়ে দেখেছিলাম, সেটাতেও অসহ্য রকম কষ্ট ছুঁয়ে গিয়েছিলো।
__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
নতুন মন্তব্য করুন