মতিঝিল শাপলা চত্বর আমার বাসা থেকে খুব বেশি দূরে না। অফিস আওয়ারের হাঁটার গতি হলে পাঁচ/ছয় মিনিট আর হেলেদুলে হাঁটলে মিনিট দশেক। তাই মতিঝিলে কোন ঝামেলা হলে চক্ষু কর্ণের বিবাদভঞ্জন করা অতি সহজ। হরতালে যখন ঐদিকে ধুমধাম আওয়াজ হয় তখন আমি ঘরে বসেই শুনি! মিটিং- মিছিলে সারাক্ষণ না হলেও মাসের অনেকটা সময় জুড়ে মতিঝিল, পুরানা পল্টন, কাকরাইল, স্টেডিয়াম সরগরম থাকে। ঝামেলা পোহাতে হয় আমাদেরই, যেদিকেই যাই পুলিশের ব্যারিকেড নয়তো কোন পার্টির অবরোধ। মাঝে মাঝে বন্ধুদের মজা করে বলি, আমি ভাই রাষ্ট্রপতির প্রতিবেশি। তবে বাস্তবিক অর্থেই, প্রতিবেশি হওয়ার ঝামেলা কম পোহাতে হয়না।
বিগত সরকারের আমলে যেদিন আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয় সেদিন ওই হামলার পরে এবং রাতে ঐদিকে পুরো এলাকার নানা দৃশ্য নিজ চোখে দেখা। পুলিশের দাঙ্গা বাহিনীর সামনে থেকে দৌড়াতেও হয়েছিল ভয়ে। কিন্তু ৫ই মে, ২০১৩, হেফাজতে ইসলাম নামের সংগঠনটি মতিঝিল ও আশে পাশের এলাকাতে যে তাণ্ডব করলো তা আসলেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছিলনা। বিভিন্ন ছবি দেখে মনে হচ্ছিল শহর ঢাকা সদ্য কোন যুদ্ধাবস্থা থেকে উঠে এসেছে।
[কৃতজ্ঞতাঃ ছবিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক থেকে সংগৃহীত, পুরো কৃতিত্ব চিত্রগ্রাহক রাহুল তালুকদার এর।]
ঢাকা নিয়ে আমার মত নগরবাসীর অভিযোগের অন্ত নেই। ঢাকার ধুয়ো,ধুলো,দূষণ,অভাব,পিকেটিং,মারামারি,দুর্ঘটনা ইত্যাদি সব কিছু মিলেই ৩৬৫ দিনের অশান্তিপূর্ণ পরিবেশের মাঝেই বেঁচে থাকা, তবুও ঢাকাকে ঘিরেই আমাদের স্বপ্নগুলো গড়ে উঠে। যে শহরে জন্ম সে শহর নিয়ে মানুষ আবেগপ্রবন হবে সেটাই স্বাভাবিক। হাজার অভিযোগের ভিড়ে এই শহরকে যে আমি ভালবাসি এটাতো সত্যি। কিন্তু আমার এই ভালবাসার শহরে যেভাবে আগুন দিয়ে গেল কিছু অমানুষ তাতে তীব্র ক্রোধ নিজের অনুভূতিকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে নিয়েছে।
চারিদিক কয়েক ঘণ্টার ব্যাবধানে সম্পূর্ণ ছারখার করে দেয়া এই অমানুষরা কোন দাবি আদায়ের পক্ষে নেমেছে? সেটা কি কোন সভ্য সমাজের দাবি হতে পারে? দাবি আদায়ের জন্য এহেন ধবংসাত্মক কর্মকাণ্ড কোন সভ্য সমাজের চিত্র হতে পারে? এ কোন শতাব্দীতে আছি আমরা?
বায়তুল মোকাররম একটি অসাধারণ স্থাপত্যকর্ম। আমি কোন ধর্মে বিশ্বাসী সেটা তো মুখ্য নয়ই আমি আদৌ ধর্মে বিশ্বাস করি কিনা সেটাও মুখ্য নয়, আমার কাছে মুখ্য বায়তুল মোকাররম এর সৌন্দর্য এর স্থাপত্যকলা। প্রতিদিনের যাতায়াতের পথে আমি মুগ্ধ হয়েছি এর দিকে তাকিয়ে। বাবার সাথে বিভিন্ন কাজে অজস্রবার গিয়েছি বায়তুল মোকাররম এর পাশেই অবস্থিত দোকানগুলোতে। কিন্তু সেই অপার সৌন্দর্য এর নিদর্শনে কি কুৎসিত ভাবে হামলে পড়েছে এই অমানুষগুলো তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়।
বায়তুল মোকাররম এর পাশের ফুটপাতে অবস্থিত বইয়ের দোকানগুলোতে কি নির্মম জিঘাংসায় আগুন লাগানো হয়েছে! অমানুষদের কাছে বইয়ের পাতার কি মুল্য আছে? মনুষ্যত্ব বিবর্জিত এই উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা জানে কি করে ধবংস করতে হয়, জ্ঞানের মহিমা এদের মস্তিষ্কে কি করে প্রবেশ করবে?
২৪ ঘণ্টার ব্যাবধানে একটি চির পরিচিত শহরের চিত্র বদলে দিয়ে একে ধবংসস্তুপে পরিনত করার এই অধিকার হেফাজতে ইসলামকে কে দিয়েছে? যারা মনুষ্যত্বের হেফাজত করতে ব্যার্থ তাদের দিয়ে আর কোন কিছুর হেফাজত সম্ভব নয় এটা আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারি, এর জন্য আমার রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি কিংবা ধর্ম কোন কিছুর জ্ঞানের প্রয়োজন হয়না।
এরা উপাসনাস্থলের পবিত্রতা নষ্ট করে এদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়, ধর্মগ্রন্থের কছম দিয়ে পথ চলে কিন্তু সুযোগমত সেই গ্রন্থেও আগুন দিতে পিছুপা হয়না। এরা না কোন রাজনীতি করতে চায়, না কোন ধর্ম রক্ষা করতে চায়। এরা চায় দেশকে-জাতিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে তাহলে সব থেকে বেশি ফায়দা হয় তাদের।
যাদের কারনে আমার পরিচিত এই নগরীর চিত্র এভাবে বদলে গেল, যাদের কারনে মানুষ আতঙ্কে দিন কাটায়, তাদের দাবির স্বপক্ষে কথা বলা প্রতিটা মানুষের আমি বিরোধিতা করি, তাদের পক্ষের প্রতিটা শব্দকে আমি ঘৃণা করি।
ধর্ম হেফাজতের নামে যারা মনুষ্যত্বের অপমান করে, যারা মানব ধর্মেরই কোন মুল্য দেয়না, তাদের দিয়ে আবার কিসের হেফাজত?
গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সরকার ব্যাবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার আড়ালে যারা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করে সাধারন মানুষের জীবনকে আতঙ্কগ্রস্থ করে, দেশকে একটি সংঘাতময় ও সংকটজনক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে, যেকোনো সুবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ মাত্রই প্রতি পদক্ষেপে এদের প্রতিহত করা উচিত।
যারা নিজেদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে এই দানবীয় শক্তির উত্থানে নীরব কিংবা তাদের সমর্থনে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে চলেছেন তাদের জন্য Martin Niemöller এর একটি বহুল প্রচলিত কবিতা দিয়ে শেষ করছি।
First they came for the communists,
and I didn't speak out because I wasn't a communist.Then they came for the socialists,
and I didn't speak out because I wasn't a socialist.Then they came for the trade unionists,
and I didn't speak out because I wasn't a trade unionist.Then they came for the Jews,
and I didn't speak out because I wasn't a Jew.Then they came for the Catholics,
and I didn't speak out because I wasn't a Catholic.Then they came for me,
and there was no one left to speak for me.
আজকে হেফাজতে ইসলাম নাস্তিকদের বিচারের কথা বলে রাজনীতির ময়দান গরম করতে এসেছে, এদের সহায়তা সমর্থন দিচ্ছে জামাত-শিবির, বিএনপি, কালকে তারা আপনার বিরুদ্ধে আসবে, ততদিন আপনি অপেক্ষা করবেন কি?
মন্তব্য
মজা লন নাকি?
ইট পাথরের শহর ভাঙ্গা'র দুঃখ বুঝেন আর মানবহত্যা বুঝেন না???
মজা লই রে ভাই, আজকাল মজার বড় অভাব। তো ভাইজান, শুনলাম পুলিশ গানশিপ থিকা একশন মুভির মত গোলাগুলি কইরা পঞ্চাশ হাজার মারছে, পঞ্চাশ হাজার আহত হইছে আর পালাইতে পারছে মাত্র পঞ্চাশ জন। তুরাগ আর পদ্মা মেঘনায় নাকি জলের থিকা লাশ বেশি। একটু বিস্তারিত বইলা যাইয়েন ভাইজান। বড় কষ্টে আছি।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
@বুঝতে হবে - কী বুঝতে হবে আপনি ছাগু অথবা ধর্মোন্মাদ হেফাজতী শয়তান ... কোনটা??
উনি বুঝে নিতে বলেছেন।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
বুঝেনই তো
মানব হত্যা? যারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশের কথা বলে, ধর্মের কথা বলে বিনা উসকানিতে এমন তান্ডব চালায় তারা আর যা ই হোক মানব নয়। এ অমানুষদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন না করার তীব্র প্রতিবাদ জানাই আমি।
-পামাআলে
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ভাই, মাদ্রাসার হুজুররা জন্মের পর থেকেই পঁচানী খায়, পরেও পঁচাইতে পারবেন। আপনি যা কইছেন সেইগুলা আর নতুন কিছু না। তয় এইবার পরিস্থিতি ভাল ঠেকতেছে না, সরকার শেষে আইসা পুরা লেজে-গোবরে করে দিছে -- এইবারটা মনে হয় একটু বেশীই ভেজাল কইরা ফালাইছেগা।
-- রামগরুড়
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
অরফিয়াস-ভাই, আপনার ডিসপ্লে-পিকচার হাজার শব্দের সমান। কঠিন সময়ে সেই অমর লাইনটা বারবার মনে পড়ে -
সম্রাট দাশুগুপ্ত
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
তারা যা খুশি তাই করবে, একটা দেশের রাজধানীরে ভেঙে চুড়ে পুড়ায়ে ধ্বংসায়ে দিবে। জনগন এবং সরকারকে মুখ বুজে সহ্য করতে হবে। বুঝছেন?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজু ভাই, দেশের অবস্থা অবিশ্বাস্য লাগে।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আপনার প্রথম ছবির চিত্রগ্রাহক হলেন রাহুল তালুকদার। ফেসবুকে তার কাছে এই ছবিটা ব্যবহার করার অনুমতি চাইছিলাম, উনি কোন উত্তর না দেওয়াতে ব্যবহার করিনি। rahultalukder91 লিখে সার্চ দিলে উনাকে খুঁজে পাবেন আশা করি।
ধন্যবাদ তথ্যের জন্য। আমি রাহুল তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করেছি, উনি চাইলে ছবিটি মুছে দেয়া হবে আর অনুমতি দিলে ছবিটি থাকবে।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আমরা আর কতদিন ধর্মের নামে নির্যাতিত হব..............কবে কাটবে এই অন্ধকার । র্ধমান্ধদের সাথে সাথে আমাদের সুবিধাবাদী নির্লজ্জ রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদেরও চিনে নিতে হবে ।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
'যারা মনুষ্যত্বের হেফাজত করতে ব্যার্থ তাদের দিয়ে আর কোন কিছুর হেফাজত সম্ভব নয় এটা আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারি, এর জন্য আমার রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি কিংবা ধর্ম কোন কিছুর জ্ঞানের প্রয়োজন হয়না। ' ঠিক বলেছেন ভাই, আমি আজকে ফেসবুক এ আমার এক বন্ধুর স্ট্যাটাস দেখে মর্মাহত হয়ে আপনার এই লেখাটা শেয়ার করলাম।।।।।।।।।।। দীর্ঘ ১৫ বছরের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে গেছে।।।।।।।।। ইদানীং পরিচিত মানুষদের নতুন চেহারা দেখতে পাই ।।।।।।।।লেখার জন্য
ধন্যবাদ আপনাকেও। সত্যের জন্য যদি বন্ধুত্ব নষ্ট হয় তাহলে তা নষ্ট হওয়ারই দরকার ছিল।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত এক নগরী। যারা একটি দেশে এরকম অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে, তারা কাদের পক্ষে কাজ করছে আমার জানা নেই। ঘৃণা!
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
হটাত করে এই হেফাজতের এত শক্তি আর অর্থের উতস কোথায়? এটা কি ফাসির রায়ের আগে সা কা চৌ এর শেষ চেষ্টা? কেউ কি একটু রিসার্স করবেন ব্যপারটা নিয়ে। মাথার মধ্যে থিওরিটা গুতোগুতি করছে। র্ধমান্ধদের সংখ্যা বেশী হয়ে গেছে দেশে ধর্মিকের চেয়ে। আট বসর দেশে যাই না। যাব যাব করছিলাম কিন্তু দেশে গেলে আমার হেফাজতটা কে করবে বলতে পারেন?
প্রশ্নগুলোর উত্তর কি পেয়েছেন ইতোমধ্যে?
এত পয়সা এই জ্বালাও পোড়াও তে না খরচ করে একটু দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে খরচ করুক।
বিভীষণ মহাশয়
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
সময় এসেছে সচেতন হবার। হেফাজত যেভাবে চলছে তাতে সামনের দিনগুলোতে আরও ভয়ানক কিছু দেখতে হবে । এদের প্রতিহত করার দায়িত্ব আজ শুধু সরকারের নয় , এখন সারা দেশের মানুষকেই এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আর তা না হলে একদিন আপনি আমি আমরা সবাই এই বিধ্বংসী মানুষগুলো দারা আক্রান্ত হব।
হেফাজতের এই রকম তাণ্ডবে একজন মানুষ হিসেবে আমি ক্ষোভে স্তম্ভিত, একইসাথে সামনের দিনগুলো নিয়েও শঙ্কিত।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
we need a V, we need a dark knight. But actually, we need ourself, around us.
যদিও গল্প শেষের অপেক্ষায় এখনো শিরোনামেই পড়ে আছি । দেখা যাক ।
তালেব মাষ্টার
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
নতুন মন্তব্য করুন