আমি খুব ভাল ভাবে জানি, তাঁর জন্য লেখা হবে না কোন গদ্য-কবিতা, শহীদ হিসেবে ইতিহাসে লেখা থাকবেনা মানুষটির নাম, মানবাধিকারের বুলি কপচিয়ে মুখে ফেনা তুলবেনা কোন আন্তর্জাতিক অধিকারবেশ্যা, সুশীল-কুশিল, ডান-বাম, উপর-নিচ সবাই মুখে কুলুপ এঁটে নিজেদের নিরপেক্ষতা জাহির করবে নিশ্চিত, তাঁর জন্য মিছিল হবেনা, কোন স্লোগান হবেনা, হবেনা অবরোধ-হরতাল। রাজনীতির খেলায় আবুল কাশেম একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র।
বাংলাদেশ রেলওয়ের নিরাপত্তাকর্মী আবুল কাশেম নিহত হয়েছেন নাশকতাকারীদের বোমা হামলায়। মুখে বোমা মেরে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে তাকে দায়িত্বপালনকালে। নিজের জীবন দিয়ে তিনি রক্ষা করেছেন কিছু ভীত-সন্ত্রস্ত সাধারন মানুষকে, যারা তারই মত জীবিকার তাগিদে মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে এই মৃত্যুপুরীতে ঘুরে বেড়ায়।
দেশ কাগজে-কলমে স্বাধীন হয়েছে ৪২ বছর। কিন্তু সিন্দাবাদের বুড়োর মত ঘাড়ে চেপে থাকা নষ্ট রাজনীতি থেকে মুক্ত হয়নি স্বদেশ। ৪২ বছরে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে বিনা কারনে। শুধু ২০১৩ সালেই দায়িত্বপালনকালে নিহত হয়েছেন নিরাপত্তাবাহিনীর অনেক সদস্য। তাদের জন্য কোন রাজনীতি হয়নি। তাদের জন্য লেখা হয়নি কোন শোকগাঁথা। মানবাধিকার-কারবারিরা তদবিরে ব্যস্ত হয়নি দিনরাত। কোন সুশীল লেখকের কলমের কালি শেষ হয়নি তাদের কথা লিখতে গিয়ে। জাতিসংঘ থেকে আসেনি বিচারের দাবি। নষ্টদের অধিকারে চলে যাওয়া সমাজে মানবাধিকার শুধু কসাই-কাদের এর কথা বলে, তাদের কাছে আবুল কাশেমের মত সাধারন মানুষের মৃত্যু "জাস্ট এন এক্সিডেন্ট"।
আমাদের পচে যাওয়া রাজনীতি শুধু দলীয় স্বার্থ দেখে, এদেশে লাশেরও আছে আলাদা মূল্য। যে লাশে ফায়দা বেশি সেই লাশের নিলামে অগ্নিমূল্য। তাই বিশ্বজিৎ এর মৃত্যুতে আমাদের চোখের জলে সমুদ্র তৈরি হলেও, ব্লগার রাজীব কিংবা নিরাপত্তাকর্মী আবুল কাশেমের মৃত্যুতে চোখের জল ফেলার মত মানুষ নিতান্তই হাতে গোনা। কারন তাতে রাজনৈতিক ফায়দা নেই, কথার মারপ্যাঁচে মানবাধিকার নেই, আছে শুধু প্রাণহীন নিথর একটা দেহ আর কিছু অধরা স্বপ্ন।
আবুল কাশেমের সন্তানদের বলা হবেনা পিতার বীরত্বের কথা, বলার প্রয়োজন নেই, এই দেশে জন্ম নেয়ার জন্য তাদের ভোগান্তির এভাবেও শেষ থাকবেনা,
সহধর্মিণীর কাছে বলতে যাওয়ার কোন মানেও হয়না।
আবুল কাশেম একজন শহীদ, নিজের জীবন দিয়ে যিনি আরও মানুষের জীবন বাঁচিয়ে যান, তাকে আমি শহীদ ছাড়া আর কিছু বলতে রাজি নই। ৪২ বছর ধরে যে যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন অসংখ্য নাম না জানা মানুষ, তাদের নামের তালিকায় তিনিও একজন। তাদের জন্য আমার শ্রদ্ধা ছাড়া আর কিছুই দেয়ার নেই।
কেউ আমার হয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে জানিয়ে দিলে ভাল হয়, আপনাদের এই নির্লজ্জ কর্মকাণ্ড আর নিরপরাধ মানুষ হত্যার পাশবিক উৎসবে আমি আর কিছু করতে না পারি ছ্যার ছ্যার করে মুতে দিলাম।
মন্তব্য
"আবুল কাশেম একজন শহীদ, নিজের জীবন দিয়ে যিনি আরও মানুষের জীবন বাঁচিয়ে যান, তাকে আমি শহীদ ছাড়া আর কিছু বলতে রাজি নই। ৪২ বছর ধরে যে যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন অসংখ্য নাম না জানা মানুষ, তাদের নামের তালিকায় তিনিও একজন। "
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এই মৃত্যুর মিছিল আর কতদিন চলবে জানি না। তবে রাজনীতির এই যে চরিত্র এটা যত সকাল বন্ধ হবে ততই সেটা রাজনীতিবিদের জন্য ভালো, দেশের জন্যও ভালো। নইলে সামনে এমন দিন আসবে সাধারণ মানুষ রাজনিতিক দেখলেই হাতের কাছে যা পাবে তাই নিয়ে তাদেরকে ধাওয়া করবে। তাই এখনই সময় ভালো হয়ে যান। মানুষের জীবন এতো সস্তা না। এদেশের রাজপথে আর কোন রহিম, করিম, আবুল কাসেমের লাশ দেখতে চাই না।
- জেগে উঠার দিন
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
তুমি আধম হইয়াছ তাই আমি উত্তম হইতে সমস্যা আছে !!!!
- জেগে উঠার দিন।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
সে জোব্বা পরা কোন আইনজীবি না, কালো টাকার মালিক পতিত স্বৈরাচারও না, ডলার ইউরোর সাপ্লাইতে চেকনাই চেহারার রাজাকারও না। অতএব তার মৃত্যুতে কেউ শোক করবে এমনটা ভুলে যান।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
শ্রদ্ধা আর লজ্জায় মাথা নত হওয়া করছি তোমার কাছে, তোমার পরবর্তী প্রজন্মের কাছে?
মাসুদ সজীব
নতুন মন্তব্য করুন