প্রখর রোদে ব্রন্মতালু গরম হইয়া উঠিয়াছিল , গুলশান মোড়ে দাড়াইয়া বাসের অপেক্ষা করিতেছি , এই সময় দেখলাম আমার বন্ধু আজিজ হেলতে দুলতে রাস্তার ওপার দিয়ে যাচ্ছে । বহুদিন তার সাথে দেখা নাই , সেই ৯৭ সালে তার সাথে শেষ দেখা হইয়াছিল ।
বিটিভিতে এরশাদের গানের জন্য যেমন জান তড়পায় , তেমনি আজিজের জন্যও জান তড়পাইতেছিল ।
আমি ছুটিয়া গিয়া তাকে ধরিলাম ।
বলিলাম - বন্ধু মোখলেস , কেমন আছ ?
আজিজ ভুরু কুঞ্চিত করিয়া বলিল - এহ্হে , জেবতিক না ? ইদানিং ভেজাল ইয়াবা খাইতেছ নাকি ! আমাকে মোখলেস ডাকিতেছ কেন ?
আমি বলিলাম , শুনিয়াছি তুমি নাম পরিবর্তন করিয়াছ ! মুখফোড় ব্লগে লিখিয়াছে ।
আজিজ বিরক্ত মুখে বলিল - আমিও শুনিয়াছি যে সে আবোল তাবোল লিখিয়া লোকজনকে বিভ্রান্ত করিতেছে । এসব হলুদ ব্লগিং বন্ধ রাখিতে কইও তাকে , নইলে মানহানির মামলা ঠুকিয়া দিব । আগামীতে দিনকাল ভালো হইতেছে , আগে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট সরকারের হাতে ছিল , এখন নাই । এখন তাই সরকার আর হাইকোর্টের চিন্তাভাবনা বড় মিল হইয়াছে । বাঙাল মুখফোড়কে হাইকোর্ট দেখাইতে দুই মিনিটও লাগিবে না।
আমি বলিলাম- ওহহো ! তাহলে তো বড্ড মিসটেক হইয়া গেছে । দাড়াও , মুখফোড়ের ব্যাপারে মডুদের কাছে আবেদন জানাইতে হবে ।
আজিজ বলিল - চলো , কোথাও বসি । বহুদিন পরে তোমার সাথে দেখা । একটু আড্ডা মারা যাউক ।
আমি খুশী হইলাম । মুখফোড়ের মুখে শুনিয়াছি , আজিজ কাবাব পরোটা খাওয়ায় । সাথে একটা কোক হইলে এই গরমে জমিয়া যায় । আমি তাহার সাথে সাথে রেস্তোরায় ছুটিলাম ।
মুখফোড় সবসময় বাড়িয়ে বলে না । আজিজের নাম পরিবর্তন না হইলেও স্বভাবের উন্নতি হইয়াছে । সে কাবাব পরোটা ফালুদা কোক আরো কী কী জানি অর্ডার দিয়া বসিল । গুলশানের এই দিকে নতনু এসি রেস্তোরাগুলোতে অনেক নামের খাবার থাকে , সবগুলার নামও জানি না , অন্যের পয়সায় খাইলে সেই নাম নিয়া হয়রান হইতেও টাইম পাই না ।
কাবাব চিবাইতে চিবাইতে বলিলাম - তাহা হইলে তুমি নাম পরিবর্তন করো নাই । ভালো করিয়াছ । তা , এই গুলশানে দুপুর বেলা কী করিতেছ ?
আজিজ কোকে চুমুক দিয়া কহিল - চাকুরি খুজিতে আসিয়াছি । আমার ম্যাডাম গুলশানে অফিসে বসেন , উনার কাছে আসিয়াছিলাম ।
আমি বলিলাম - কিন্তু আমি তো শুনিতে পাইয়াছিলাম , তোমার ম্যাডাম তহবিল তসরুপ করিয়া ধরা খাইয়াছে , তুমি তাহার অনেক কুকান্ডের সাথে থাকার কথা ছিল , তোমারও চাকুরি গিয়াছে । তোমার স্থলে নতুন লোক নেয়া হইয়াছে ।
আজিজ খ্যাক খ্যাক করিয়া হাসিল ।হাসির দমকে তাহার কোক ছিটকাইয়া পড়িয়া আমার শার্ট ভিজিল ।
হাসি থামিলে বলিল - মুখফোড়ের সাথে থাকিতে থাকিতে তোমারও মস্তিস্ক গিয়াছে । ম্যাডামের বিরুদ্ধে যা হইয়াছিল , তাহা তো ষড়যন্ত্র । ম্যাডাম অচিরেই তাহার চাকুরি ফিরত পাইবেন ।
আমি বলিলাম - সে না হয় হলো , কিন্তু তোমার চাকুরি কিভাবে ফেরত দিবেন ?
আজিজকে আত্মবিশ্বাসী দেখায় । সে কহিল -এসব নিয়া চিন্তা করিতে হইবে না তোমার । আমি ছাড়া ম্যাডাম শূন্য । তিনি আমাকে কোন না কোন কাজে লাগাইবেন । উনার পোষা লালু ফালু ভুলুকেও কাজে লাগাইয়াছেন , আর আমি তো আজিজ।
-কিন্তু কী প্রকারে ? আমি সংশয়ী হইয়া জিজ্ঞাসী ।
আজিজ ব্যাখ্যা করে - তুমি কি দেখিয়াছ ম্যাডাম আজকে বলিয়াছেন , যাহারা আজিজের জায়গায় আছে , তাহারা বিশ্বাসযোগ্য নহে , তাহাদের পদত্যাগ চাই । কেন বলিয়াছেন , কারন ঐ পোস্ট খালি করিয়া ওখানে আমার মতো কাহাকে বসাইবেন বলিয়াই না বলিয়াছেন ।
আমি বুঝিলাম । এক্ষনে কহিলাম - তাহা হইল মুখফোড় তোমার নামে বদনাম করিয়া বেড়াইতেছে কেন ? তুমি নাকি লজ্জায় নামও পাল্টাইয়া ফেলিয়াছ ?
আজিজ বলিল - আরো ছো: ছো :! সেটা অন্য কোন আজিজের কথা বলিয়াছে । আজিজ নামের মাহাত্ব্যে বাজারে নকল আজিজের চালান আসিয়াছিল কয়েকজনা , উহাদের কথা বলিয়াছে । ব্যাটা মুখফোড় আর মানুষ হইল না , যার নামের পিছনে ফোড় , সে তো ফোড় করিবার জন্য উন্মুখ থাকিবেই । তাহার কথা কানে লইও না ।
আমি নিশ্চিত মুখে কাবাব খাইতে লাগিলাম । ঘড়ি দেখিয়া আজিজ ব্যস্ত হইয়া উঠিল । বলিল- আমার যাইতে হয় , তুমি খাওয়া শেষ করিয়া বিল দিয়া উঠিও । পরে দেখা হইবে ।
আমি হা হা করিয়া উঠিলাম । বলিলাম - কী কও ! কী কও !! মুখফোড় তো বলিয়াছিল তুমিই নাকি বিল মিটাও । লজ্জা আর অনুতাপে তুমি অনেক বদল হইয়াছ ।
আজিজ উঠিতে উঠিতে বলিল -
"আবার মুখফোড়ের দোহাই দেও ! তাহাকে বলিয়া দিও , সে যেন মার্কা দেখিয়া আসল আজিজ চিনিয়া নেয় । রাজাকার প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজ থাকিয়া শুরু করিয়া আজিজ মোহাম্মদ ভাই , কাহাকেও কি নাম বদলাইতে দেখিয়াছ নাকি শুনিয়াছ ?
আসল আজিজরা নাম বদলায় না । হায়া শরম থাকিলে আজিজ হওয়া যায় না ।"
আজিজ চলিয়া গেল । আমি আসন্ন বিল আর বাসভাড়ার মাঝের জটিল হিসাব মিলাইতে ব্যস্ত হইলাম ।
মন্তব্য
জটিলস্য।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
থেংকুস্য ।
জব্বর হইয়াছে আরিফ ভাই। আসলেই আসল আজিজদের কোনো হায়া শরম নাই।
এ তো দেখি বিবৃতি পাল্টা বিবৃতি কালচার হয়ে গেলো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
রাজনীতির মাঠ গরম হচ্ছে , কিছু আছর তো ব্লগেও পড়বে ।
পাল্টা আজিজও চরম হইছে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
পাল্টা কমেন্টটাও গরম হইছে ।
পত্রিকায় দেখিলাম কোন এক আজিজের পকেটে নাকি এই চিরকুট পাওয়া গিয়াছে, নিকট অতীতে তাহা কাজে লাগাইয়া ম্যাডামপুত্র এখন ব্রিটেনের রেস্টুরেন্টে কারি খাইতেছে, আর অন্য ম্যাডাম আম্রিকা-ব্রিটেনে বিয়া খাইয়া মন্ত্রী-মিনিস্টারদের সাথে বৈঠক পর্যন্ত করিতেছে। খালি আজিজদেরই কপাল পুড়িল! ইহা কেমুন 'পাকিস্তানী' বিচার?
এমন বিচারের মুখে ঝাটা !
উদ্ধৃতি:
সে কাবাব পরোটা ফালুদা কোক আরো কী কী জানি অর্ডার দিয়া বসিল ।
কোলকাতা হলে না হয় ফালুদা হত, ঢাকায় ফালু ভাই হবার কথা না?
.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...
.......................................................................................
Simply joking around...
ফালু ভাইয়ের কথা সরাসরি কইলে সমস্যা ।
লা-জবাব!
ও... আজিজ তাইলে তোমার বন্ধু? ঠিকাছে, জানা থাকলো।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
হ, পুরোনো দোস্তরা তো কোন কাজে আসে না , তাই নতুন ও উদীয়মান আজিজদের সাথে দোস্তালি পাতাইতে চাচ্ছি ।
মজা পাইলাম। আজিজীয় না হলেই আরিফীয় মজা।
ভাবছি এবার নির্বাচন কমিশনের সিট খালি হলেই দৌড়ে গিয়ে বসে পড়ব ।
আজিজ জেবতিককে জাঝা।
হাঁটুপানির জলদস্যু
আসল আজিজীয় ভুড়ি গজাইয়াছে , এখন টাক পড়িবার আশে আছি ।
আজিজবাজি চরম হইসে! পুরা আগুন! হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ
- পুর্যা আজিজ!!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
জেবতিক বাহাই, বালাই দেহাস্লাইন।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
মফিজের পর আরেকটি নাম পচানোর ষড়যন্ত্র রুখতে হবে!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
পালটা আজিজে ডবল গড়াগড়ি...
=))
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
চ্রম
=============================
তু লাল পাহাড়ীর দেশে যা!
রাঙ্গা মাটির দেশে যা!
ইতাক তুরে মানাইছে না গ!
ইক্কেবারে মানাইসে না গ!
নতুন মন্তব্য করুন