ক্রাচের কর্নেল , যে "উপন্যাস" হতাশ করেছে

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: শনি, ০৭/০৩/২০০৯ - ৪:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক.
হুমায়ূন আহমেদ ৯৮ সালে একটা মজার কথা বলেছিলেন আমাদেরকে । উপন্যাসিক আর ইঞ্জিনিয়ারের মাঝে পার্থক্য । ধরা যাক , একটা টেবিল , টেবিলের উপর এককাপ চা , পিরিচের উপর দুটো বিস্কিট আর একটা সিগারেট রাখা । একজন ইঞ্জিনিয়ার সেটাকে বর্ণনা করবেন এভাবে - টেবিলের উপর সাদা কাপে চা রাখা । সিগারেটটি বেনসন ব্র্যান্ডের , এর পুরুত্ব এতো মিলিমিটার । বিস্কিটের ব্র্যান্ড নাবিস্কো , এতো ডিগ্রী এঙ্গেলে তা পিরিচের উপর স্থাপন করা ।

আর একজন লেখক বর্ণনা করবেন মাত্র দু'লাইনে - টেবিল সাঁজানো আছে সবকিছু । কার যেন আসার কথা ছিল...।

কেন যেন হুমায়ূনের এই কথাটি মনে রয়ে গেছে । একজন লেখক শুধু দৃশ্যের বর্ণনা দেবেন না , তিনি দৃশ্যের ভেতরের গল্প বলবেন , সাংবাদিক আর লেখকের মাঝে , ইঞ্জিনিয়ার আর লেখকের মাঝে এরকম পার্থক্যই পাঠক হিসিবে আশা করি ।

দুই .
শাহাদুজ্জামান এই সময়ের একজন শক্তিশালী গদ্যকার হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন । তাঁর নিজস্ব পাঠকগোষ্ঠী আছে , সেই পাঠক ঋদ্ধ পাঠক , তাঁরা গল্পকার শাহাদুজ্জামানের উপর আস্থা স্থাপন করেন ।

সেই শাহাদুজ্জামান যখন কর্নেল তাহেরকে নিয়ে একটি বিশাল উপন্যাস লেখার কথা জানান , তার নিয়মিত পাঠকদের সাথে আমরাও আশাবাদী হই । কর্নেল তাহের আমাদের সময়ের এক আইকন , যিনি ফাঁসীর মঞ্চে উচ্চারন করে গেছেন , "নি:শন্ক জীবনের চেয়ে জীবনে বড় কোন সম্পদ নেই ।"

উপন্যাসটি গত কয়েকবছর ধরেই আসছে আসছে বলে শুনছিলাম । প্রথম আলোর ঈদ সংখ্যাগুলোতে সেই উপন্যাসের খন্ড খন্ড প্রকাশ হচ্ছিল কয়েক ঈদ ধরেই । এক ধরনের অপেক্ষা ।

সেই অপেক্ষার কারনেই কি না জানি না , ১৮ তারিখে বইমেলায় বইটি এসে যে পরিমান বিক্রী হয়েছে বলে দেখলাম , তাতে করে বুঝতে পারি আমার মতো অনেকেই এই উপন্যাসের অপেক্ষায় ছিলেন ।

তিন.
এক রাতে পড়া শুরু হয় ৩৫০ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটি ।
শুরুটা শুরু হয় উপন্যাসের স্টাইলেই ।
"গল্পটি শুরু করা যাক লালমাটিয়ার ঐ শ্যাম্পুর বিরাট বিলবোর্ড থেকে । বিলবোর্ডটিতে দিনের শেষ আলো আছড়ে পড়ছে । তার ঠিক নিচে একা দাঁড়িয়ে আছেন লুৎফা ।"

তারপর ? কয়েক পৃষ্ঠা যাওয়ার পরেই এই সাবলীল বর্ণনা খেঁই হারিয়ে ফেলে ।
পড়ি , "
তাহের সমাজতন্ত্রের ব্যাপারে আকৃষ্ট হন তখনকার অনেক তরুণের মতোই । তবে এর সঙ্গে যুক্ত হয় ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামের ব্যাপারে তার কৈশৌরিক আকর্ষন । ফলে মার্ক্সবাদের সামরিক দিকটির ব্যাপারে তাহের বিশেষভাবে মনোযোগ দেন । কমিউনিজম প্রতিষ্ঠা করতে হলেও চাই যুদ্ধা , চাই অস্ত্র এই ধারনা তাহেরকে উদ্বুদ্ধ করে বেশি । "

পাঠক হিসেবে ভুরু কুঁচকে উঠে । এই যে লাইন বাই লাইন বর্ণনা , সেটা তো "ছোটদের কর্নেল তাহের" জাতীয় জীবনীগ্রন্থে পাওয়া যায় । এখানে উপন্যাস কোথায় ? গল্প কোথায় ? স্টাইল কোথায় ??

চার.
আমার কাছে পুরো বইটিকেই খুবই সাদামাটা ভাবে লেখা তাহেরের জীবনী মনে হয়েছে । মনে হয়েছে যেখানে যতো তথ্য পাওয়া গেছে সবগুলোই লেখক বইয়ের মাঝে ঢুকিয়ে দিতে গেছেন । অতিরিক্ত তথ্যের ভারে বইটি হয়তো প্রামান্য জীবনী হয়েছে , কিন্তু সাহিত্য হয়নি ।

তাহেরের চেষ্টা , তাহেরের বিল্পব আকাংখা , তাঁর পরিবারের বেদনা এগুলো কোথাও পাঠকের মনে রেখাপাত করে না ,কারন এগুলো লাইন বাই লাইন বর্ণনা করা হয়েছে মাত্র । তাহের আমাদের কাছে কোন উপন্যাসের চরিত্র হয়ে উঠেন না । তাহের তাই পাভেল করচাগিনের মতো হয়ে নতুন পাঠকের বুকে আলোড়ন তুলেন না ।

বিশেষ করে ৭ নভেম্বরের ঘটনাবলীর দ্রুত পটপরিবর্তনটিকে তাহের পক্ষ থেকে দেখার কোন উদ্যোগ লেখক নিতে পারেন নি ।
এখানে তাহেরকে ঘিরে রাখা চরিত্রগুলো ম্রিয়মান । তাঁদের চিন্তা , তাদের চেষ্টা এগুলো অনুপস্থিত ।

আমরা শুধু ঘটনাগুলো জেনে যাই । "বিকালে জাসদ এবং গণবাহিনীর উদ্যোগে বায়তুল মোকাররমে জনসভার সিদ্ধান্ত হয় । জিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রব এবং জলিলকে মুক্তি দেয়া হবে । জাসদ প্রত্যাশা করেছিল মুক্ত হয়ে জলিল এবং রব এই জনসভায় বক্তৃতা দেবেন এবং অভ্যুত্থানের পেছনে জাসেদর ভুমিকাকে স্পষ্ট করবেন । অভ্যুত্থানের সময় আত্মোগোপন করলেও সিরাজুল আলম খান জনসভা সংগঠনে নেমে পড়েন । বিকালে বায়তুল মোকাররমে বিশাল জনসমাগম হলেও অনেক বিলম্বে জলিল এবং রবকে মুক্তি দেওয়ার কারনে তারা সে সভায় যোগ দিতে পারেননি ।"

এখানে এরকম সাদামাটা বর্ণনায় পৃষ্ঠাগুলো উল্টে যেতে হয় পাঠককে । এখানে সিরাজুল আলম খান কোন চরিত্র হয়ে উঠেন না । আমরা কোন দৃশ্যকল্প তৈরী করতে পারি না যে সিরাজুল আলম খান কোন এক গোপন আশ্রয়ে বসে ছটফট করছেন , একসময় বাধ্য হচ্ছেন জনসভার জন্য বেরিয়ে আসতে । আমরা দেখি না জলিল আর রব ঘন ঘন দেয়ালঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন , তাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে সহস্র জনতা , তাঁদের খুব দ্রুত যাওয়া দরকার , বিল্পবের চূড়ান্ত মুহুর্ত সামনে ; অথচ জেলারের দেখা নেই ।
এমন উত্তেজনা , এমন বর্ণনা আমরা এই উপন্যাসের কোথাও পাই না ।

পাঁচ .
উপন্যাসটির নামটি সুন্দর হয়েছে , প্রচ্ছদটিও চলনসই ,কাগজ বাঁধাই এগুলোও সুন্দর ।
এই প্রজন্মের যারা কর্নেল তাহেরকে নিয়ে কোন লেখা আগে পড়েননি বা ৭ নভেম্বরের ঘটনাবলী জানেন না , সেই কিশোর তরুণরা এই বইটি পড়ে কিছু ধারনা পেতে পারেন ।

তবে যারা Anthony Mascarenhas এর the legacy of blood অথবা তাঁর অনুবাদ ( একসময় পেপারব্যাকে প্রচুর অনুবাদ পাওয়া যেত এই বইটির ) পড়েছেন , অথবা যারা কর্নেল তাহেরকে নিয়ে করা ওয়েব সাইট col-taher.com এ কখনো ঢু মেরেছেন , এই বইটি থেকে তাদের নতুন করে কিছু পাওয়ার নেই ।

শাহাদুজ্জামানের বইটি যে প্রত্যাশা নিয়ে পড়েছিলাম , সেই পরিমান হতাশই হয়েছিল ।
না ট্রাজিক হিরো , না বিপ্লবী; কোনভাবেই তিনি সেই মানুষটাকে ধারন করতে পারেন নি এই বইয়ে ।


মন্তব্য

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ফেসবুকে আমার স্ট্যাটাস দেখে "ডোবার ব্যাঙ" নামের একজন মন্তব্য করেছেন । প্রাসঙ্গিক মনে করে সেটিকে এখানে রেখে দিচ্ছি :

শাহাদুজ্জামান নিজে এটাকে বলেন “ডক্যুফিকশন”...কিন্তু সেক্ষেত্রেও আপনার পর্যবেক্ষণ যথার্থ বলে মনে করি...এটাতে ডক্যু বেশি; ফিকশন কম বা আদৌ নেই...বিষটা আসলে বহুরৈখিক...ডক্যু জরুরি, কিন্তু তারচে বহুগুণ বেশি জরুরি হলো সেই ডক্যু কোন প্রেক্ষাপটে কোন দৃষ্টিভঙ্গিতাড়িত হয়ে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে...

অন্যান্য প্রজেক্টের মত এক্ষেত্রেও রিলেটেড লোকজনের মুখে টেপ রেকর্ডার ধরে, ট্রান্সক্রিপ্ট ডাটা এনালাইসিস সেরে মাশাল্লা একটা রিপোর্ট আর বাই প্রোডাক্ট হিসেবে একখান বই নামিয়ে দিলাম; (সাম্প্রতিক শাহীন আখতার কিসিমের) এনজিও সাহিত্যের এই চালু প্রবণতার বাইরে গিয়ে লেখাটার পিছনে লেখকের আরো অধিক শ্রম ও মনযোগ দেয়া ফরজ ছিলো বলে মনে করি...

এনিওয়ে, ক্রাচের কর্নেল অবশ্যপাঠ্য...যদ্দিন এরচে বেটার কোনো জিনিস আমরা এই বিষয়ে না পাচ্ছি, ততদিন এটাই সেরা...

রাফি এর ছবি

পড়ি নাই বইটা এখনো; তার আগেই রিভিউ পড়ে ফেললাম।
মন্তব্য বইটা পড়েই করতে হবে।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

কঠিন, কড়া সমালোচনা আমার ভাল লাগে এটা অস্বীকার করবো না। এরকম লেখা পড়লে মনে হয় সমালোচক বইয়ের ফ্ল্যাপ এবং লেখক/প্রকাশকের সরবরাহ করা তথ্যের ওপর বিশেষ ভরসা করেননি। সুতরাং এটা স্বাধীন, স্বতন্ত্র, প্রভাবমুক্ত লেখা। সুতরাং লেখকের মিডিয়াটিমের মেম্বার না এরকম সমালোচকের লেখা আমার কাছে খুব উপাদেয় মনে হয়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, জাতীয় চরিত্র আমি ছাড়তে পারি না - আমি শক্ত সমালোচকের ভক্ত।

আরিফ জেবতিক আসর জমানো কত্থক। 'ছিল্লা কাইটা লবণ লাগায়া দেয়া'র টেকনিকটা তার রপ্ত থাকার কথা। সুতরাং সমালোচক হিসেবে তার ওপর আস্থা রাখা যায়।

উপন্যাসের ত্রুটি দেখিয়ে আরিফ যে যুক্তিগুলো তুলে ধরেছেন - সেগুলো বেশ পোক্ত। কোনো সন্দেহ নেই শাহাদুজ্জামান একজন ভক্ত পাঠককে সেই অনুপাতে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছেন যে অনুপাতে তিনি আগ্রহ জন্মিয়েছিলেন তার আগের লেখাগুলো দ্বারা।

আরিফ অবশ্য তার ভালো লাগার বিষয়গুলোর তালিকা দেন নাই। তাই মনে হচ্ছে তার ভালো লাগাকে মারাত্মক ভাবে প্লাবিত করে গেছে খারাপ লাগাগুলো। তবে সেরকম কিছু তালিকা থাকলে খারাপ হতো না। শাহাদুজ্জামানের আরো অনেক ভক্ত পাঠক আছেন। তাদের হতাশায় হানা দিয়েছেন আরিফ।

আরিফ একটা নতুন টার্ম ব্যবহার করেছেন এটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে - এনজিও সাহিত্য। অদিতি ফাল্গুনির একটা বই পড়ে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম যে এই বই প্রকাশিত হলো কি করে।

গল্প কল্পনার কষ্টটা আমাদের লেখকরা করতে চান না। স্বগত: সংলাপ কিংবা ধারা বর্ণনার কাছে আত্মসমর্ণন করে ফেলে সৃজনশীলতা। কয়েক বছর আগে একটা বাংলা সিনেমা দেখেছিলাম যেখানে একটি চরিত্রের শুধু সংলাপের মাধ্যমে ছবির নেপথ্য কাহিনীটা পুরা শুনিয়ে দেয়া হয় দর্শকদের। গত ঈদে কিছু টিভি নাটক দেখেছি যেগুলোতে প্লটের জন্য লেখকেরা কোনো মাথাই খাটাননি। সংলাপের জবাবে সংলাপ সাজিয়ে গেছেন।

উপন্যাসের ক্ষেত্রে গল্প তৈরি না করার কাজটা আরেকভাবে সারেন পরিশ্রম-বিমুখী লেখকেরা। সেটা হলো উত্তমপুরুষে বর্ণনা। এই বর্ণনার সুযোগ পেয়ে তারা কাহিনী কল্পনার, দৃশ্য নির্মাণে আলস্য দেখান। লেখকেরা বাস্তব ব্যবহারিক জীবনে মানুষ হিসেবে যতই অচল পয়সা হোন না কেন লেখালেখিতে অলসতা করলে আর লেখকের মর্যাদা থাকে কীভাবে?
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হিমু এর ছবি

লেখালেখিতে অলসতা নিয়ে শোমচৌদার বক্তব্য খুব ভালু লাগলো হো হো হো



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

শৌমচৌ্র মন্তব্যে উত্তম জাঝা! গুরু গুরু

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আরিফ অবশ্য তার ভালো লাগার বিষয়গুলোর তালিকা দেন নাই।

দিছি তো :


উপন্যাসটির নামটি সুন্দর হয়েছে , প্রচ্ছদটিও চলনসই ,কাগজ বাঁধাই এগুলোও সুন্দর ।

সবজান্তা এর ছবি

যাক, আমার কষ্ট কমে গেল !

"ক্রাচের কর্নেল" পড়ার পর আমার অনুভূতি নিয়ে লেখা একটা ড্রাফট এখনো অর্ধেক অবস্থায় আমার পিসিতে আছে, ভেবেছিলাম দিন দুয়েকের মধ্যে শেষ করে ফেলবো।

এখন কাজ সহজ হয়ে গেল, আমি বরং আমার মতটা এখানেই মন্তব্যের ঘরে বলে যাবো।


অলমিতি বিস্তারেণ

রণদীপম বসু এর ছবি

আমি এখন ঠিক বুঝতে পারছি না যে 'ক্রাচের কর্ণেল' না কিনে ভালো করেছি কিনা। যদিও 'গল্প, অগল্প, না-গল্প সংগ্রহ'টা ঠিকই কিনে এনেছি !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

কারুবাসনা এর ছবি

সমালোচনা পড়ে বইটা পড়ার ইচ্ছা আরো বেড়ে গেল।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।

সবজান্তা এর ছবি

এবার মেলার শুরুতে যখন শাহাদুজ্জামানের বই কিনছিলাম, আহমেদুর রশীদ ভাই জানালেন, আসছে বহু প্রতীক্ষা, জল্পনা-কল্পনার "ক্রাচের কর্নেল"। মেলা শেষের আগের দিন কিনে আনলাম বহু প্রতীক্ষিত এই বই।

ক্রাচের কর্নেল অর্থাৎ কর্নেল তাহেরের প্রতি একধরনের শ্রদ্ধা মেশানো ভালোবাসা যে লেখকের মনে আছে তা টের পাই, "ঃতে দুঃখ" পড়তে যেয়েই। যাই হোক, মেলা থেকে কেনা বইগুলির মধ্যে পঞ্চম বই হিসেবে পড়তে শুরু করি "ক্রাচের কর্নেল", গোগ্রাসে।

সত্যি কথাটা স্বীকার করতে আমি খুব লজ্জিত যে, বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে আমার জ্ঞান খুব গভীর নয়। কর্নেল তাহের কে ছিলেন জানতাম, জানা ছিলো তাঁর সাতই নভেম্বরের বিপ্লবের কাহিনী আর জিয়ার চিরন্তন বিশ্বাসঘাতকতার অংশটুকু। কিন্তু কখনোই এতো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতাম না বিপ্লব, প্রতিবিপ্লবের ইতিহাসটুকু কিংবা ইনু, রব অথবা সিরাজ শিকদারের কথা। এই বইটা পড়ার সময়টুকু আমি গোগ্রাসে গিলেছি না জানা অনেক কথা। সে হিসেবে লেখকের কাছে কৃতজ্ঞ, তাঁর সাবলীল গদ্যের কারণেই অনেকটা ইতিহাস একদম মাথায় গেঁথে গিয়েছে।

কিন্তু এ'টা কি আদৌ উপন্যাস ? এই প্রশ্নটা মাথায় আঘাত করেছে ক্রমাগত। আমি প্রথম দিন পৃষ্ঠা ত্রিশেক পড়ে, মুগ্ধচিত্তে আজিজে গিয়েছিলাম, সেখানে "শুদ্ধস্বরে" ভূয়সী প্রশংসা করেছি। প্রশংসা এখনো করি - তবে উপন্যাস হিসেবে নয়, সামগ্রিক লেখা হিসেবে।
আমার মত চ্যাংড়া পাঠকের কাছে ঐতিহাসিক উপন্যাস মানে প্রাচীনকালের চর্যাপদ নিয়ে সেই "নীল ময়ূরের যৌবন" কিংবা "প্রদোষে প্রাকৃতজন" অথবা সবচেয়ে বেশি দাগ রেখে যাওয়া সুনীলের সেই উপন্যাসত্রয়ী। সুনীলের সেই উপন্যাত্রয়ী ( কিংবা পরে লেখা আরো ঐতিহাসিক উপন্যাস, লালনের উপর কিংবা শিশির ভাদুরীকে নিয়ে) থেকে একটা স্বচ্ছ ধারণা হয় আমার মনের চোখে। "প্রথম আলো" পড়তে পড়তেই উপলব্ধি করি, স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যুগাবতার রামকৃষ্ণ - এরা নিছকই ইতিহাসের কেউ নয়, এরা সবাই উপন্যাসের চরিত্র। আর এই অভাবটাই সবচেয়ে বেশি বোধ করি "ক্রাচের কর্নেল"-এ।

কর্নেল তাহের পুরোটা সময় জুড়েই ছিলেন একজন ইতিহাসের লোক, তাঁকে বর্ণনা করা হয়েছে নিরাসক্তভাবে। তাঁর চিন্তা কিংবা যন্ত্রনা কিছুই সে অর্থে ফুটিয়ে তোলার দিকে বিশেষ মনোযোগ দেখা যায় নি। মাঝে মাঝের বিশাল অনুচ্ছেদগুলিতে শুধু ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। মজার ব্যাপার হল ইতিহাসটুকু খুব চমৎকারভাবেই লিখেছেন লেখক - কোথাও একরত্তি মেদ নেই। তবু মনে হয় উপন্যাসে এমনভাবে শুধু ন্যারেশনের স্টাইলে বর্ণনা না দিয়ে, চরিত্রগুলির মাধ্যমেই ইতিহাসকে ফুটিয়ে তোলা যেত।

পুরোটা বই পড়েছি একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে। তবে আপত্তি শুধু লেখাটিকে উপন্যাস বলা নিয়েই। নিঃসন্দেহে এ'টি চমৎকার ইতিহাসের পাঠ হতে পারে, তবে উপন্যাস মনে হয় নি একদমই !

তবু ব্যক্তিগতভাবে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই শাহাদুজ্জামানকে, তাঁর লেখার মাধ্যমে তিনি হয়তো প্রচুর অজ্ঞ পাঠককে ইতিহাসটুকু জানাতে পেরেছেন, পারবেন।


অলমিতি বিস্তারেণ

হিমু এর ছবি

দোমিনিকান রিপাবলিকের নৃশংস স্বৈরশাসক রাফায়েল ত্রুহিয়োর হত্যাকান্ড নিয়ে লেখা মারিও ভার্গাস ইয়োসা-র উপন্যাস "ফীস্ট অব দ্য গোট" এর ভঙ্গিটা আমার ভালো লেগেছে। খুব বেশি ঐতিহাসিক তথ্য সেখানে নেই, ত্রুহিয়ো, ত্রুহিয়োর হত্যাকারীরা, আর চারপাশের মানুষের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়েই গোটা উপন্যাসটা। খুব উঁচুমানের সাহিত্যিক বিবরণ, এমনটাও নয়, কিন্তু পড়া শেষ করার পর মনে হয়েছে, প্রত্যেকটা দৃশ্যে পাঠক নিজেও ছিলো। সুনীলের ইতিহাসনির্ভর উপন্যাসগুলিতে যেমন মাইকেল মধুসূদন বা রবীন্দ্রনাথ অনেক কল্পনায় আঁকা, ফীস্ট অব দ্য গোটে তা নয়। তারপরও স্বাদু। আমার কেন যেন মনে হয়েছিলো, ক্রাচের কর্ণেল ওরকম একটা ভঙ্গিতে লেখা হবে।

হাতে পেলে পড়ে দেখবো। সচলের কেউ যদি ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখার দুঃসাধ্য প্রকল্পে হাত দেন, তাহলে তাজউদ্দীনকে নিয়ে লেখার অনুরোধ রইলো।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

সবজান্তা এর ছবি

হিমু ভাই, এই যে নানা রকম বইয়ের নাম দেন, এইগুলা দিয়াই কি আপনার কাজ শেষ ?

একটু অনুবাদ শুরু করেন না ... ধীরে ধীরে করে ফেলেন আমাদের জন্য...


অলমিতি বিস্তারেণ

হিমু এর ছবি

ঐটা একটা মারাত্মক খাটনির কাজ।

ইংরেজি অনুবাদটা পড়ে দেখতে পারো। আর বইটা বিরাট। ছোটখাটো না।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সচলের কেউ যদি ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখার দুঃসাধ্য প্রকল্পে হাত দেন, তাহলে তাজউদ্দীনকে নিয়ে লেখার অনুরোধ রইলো।

- হিমুর এই অনুরোধটা জেনে বা না জেনে সুহান রিজওয়ান একদিন সত্যি সত্যি কাজটা করে ফেলে!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বইটার জন্য আমিও অপেক্ষা করছিলাম
মেলায় এসছে জানতাম না
শেষ দিন জেনে তাড়াহুড়া করে কিনলাম

কিন্তু তোমার রিভিউ পড়ে আগ্রহ কমে গেলো পড়ার
তাহেরকে নিয়ে উপন্যাস পড়ার জন্য বইটা কিনেছিলাম
তাহেরের জীবনী নয়

নীল এর ছবি

আমি অনেক আগ্রহ নিয়ে গত মেলা (২০০৮) থেকে অপেক্ষায় ছিলাম বইটির জন্যে। এখন, আরিফ ভাইয়ের এই লেখাটি পড়ে বইটি পড়ার আগ্রহ যেনো হারিয়ে ফেললাম।

সবজান্তা এর ছবি

আমার মনে হয় কেউ যদি এই পোস্ট পড়ার পর বইটা পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, সেইটা সম্ভবত ঠিক হবে না। যদি আপনি একদম কর্নেল তাহের বিশারদ না হয়ে থাকেন, তবে আমার ধারণা এই বইটা পড়তেও আপনার নেহায়েত খারাপ লাগবে না।

শাহাদুজ্জামানের লেখার মধ্যে এক ধরণের স্নিগ্ধতা আছে, যে'টা ব্যক্তিগতভাবে আমাকে বেশ ছুঁয়ে যায়।


অলমিতি বিস্তারেণ

নীল এর ছবি

ভালো কথা বলেছেন সবজান্তা।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

পড়েই দেখি।
কর্ণেল তাহের-এর সম্পর্কে এ প্রজন্মের আমরা খুব বেশি কিছু জানি না।
...হয়তো বইটা পড়লে এই অজ্ঞানতা কিছুটা দূর হবে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

তবু বইটা পড়বো। কিন্তু একটা খিটিমিটি থেকে গেলো।
বইটা আলাদা করে রেখেছিলাম অবসর মতো রসিয়ে পড়ার জন্য।

মুন্না ভাই (শাহাদুজ্জামান) বেশ কতেক বছর ধরেই ফাঁকি দিচ্ছেন। এনজিওর চাকরিটাই তারে খাইলো মনে হয়।

বিসর্গতে দুঃখ'র পর সত্যি বলতে তার সবগুলো বইতেই আমি একটু একটু করে হতাশ। হাড় কঙ্কাল নিয়া তিনি যে থিসিস পেপার লেখলেন সেইটা বাজারে ছাড়লেন... আমি পুরাটা পড়ার আগেই ভাবলাম টাকার অপচয় হইলো।
দেখা না দেখার চোখ সংগ্রহ হিসাবে ভালো। কিন্তু শাহাদুজ্জামানরে পাইলাম না।

এখন ক্রাচের কর্ণেলেও যদি এইরকম হয়, তাইলে তো চ্রম খ্রাপ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

বইটা নিয়া আমার আগ্রহ দেখে ছড়াজনৈতিক লেখক আকতার ভাই আমাকে বইটি কিনে দিয়েছেন। তবে এখনো পড়া হয়নি। আরিফ ভাইয়ের ভালো না লাগুক, আমি পড়বো। শাহাদুজ্জামানের প্রতি এক ধরনের মুগ্ধতা আছে। হয়তো পড়ে সেই মুগ্ধতাটুকু'র কিছুটা হারাবে হয়তো। তবুও পড়বো, নিজের মতো করে বুঝে নিতে।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

হিমু লিখেছেন:
সচলের কেউ যদি ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখার দুঃসাধ্য প্রকল্পে হাত দেন, তাহলে তাজউদ্দীনকে নিয়ে লেখার অনুরোধ রইলো।

একমত ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

হাসিব জামান এর ছবি

আমরা এই প্রজন্মের মানুষজন আসলে কর্নেল তাহের সম্পর্কে খুব বেশী জানি না। এর ওর কাছে শুনে থাকি। ইতিহাস জানার জন্যে হলেও বইটা পড়ব। তবে উপন্যাস এর মত না লাগ্লে কিছু স্কিপ করতে হবে হয়ত।
-----------------------------------------
ভালবাসা তুমি - প্রেয়সীর ঠোঁটে প্রগাঢ় চুম্বন;
ভয়হীন তবু, দেখলে দেখুক না লোকজন।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

সবাই যেভাবে বলছেন ," তবুও বইটি পড়ব" এতে করে নিজের লেখার উপরে এক ধরনের আস্থাহীনতা তৈরী হচ্ছে আমার । আমি এই বইটি পড়তে কাউকে নিরুৎসাহিত করছি না ।
প্রামান্যগ্রন্থ হিসেবে এই বইটি সংগ্রহ করতে এবং পড়তে পারেন ।
তবে এটাকে উপন্যাস হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সাথে আমি একমত নই ।

অনিশ্চিত এর ছবি

...অনেকাংশেই একমত।
তারপরও শাহাদুজ্জামানের লেখায় এখনও মানুষ মানুষ গন্ধ পাই। যেটা সমসাময়িক অনেকে লেখাটা পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে শঙ্কাও হয়- শাহাদুজ্জামান একদিন ফুরিয়ে যাবেন কিনা! কিন্তু যিনি 'ঃ-তে দুঃখ' কিংবা হাসপাতালের চিত্র নিয়ে নৃবৈজ্ঞানিক বই লিখে ফেলতে পারেন, তিনি এতো সহজে মিশে যাবেন বলে মনে হয় না।
‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ক্রাচের কর্ণেল এখনো পড়ি নাই, তাছাড়া শাহাদুজ্জামানের প্রায় সম্ভবত সব লেখাই আমার পড়া।
আমার নিজস্ব মতে শাহাদুজ্জামানের এখনো পর্যন্ত সেরা কাজ তার নেওয়া সাক্ষাৎকারগুলো... বিশেষ করে এস এম সুলতান, আকতারুজ্জামান ইলিয়াস, হাসান আজিজুল হক, ভিলেম ভ্যান সেন্ডেল এসব। আর কিছু অসাধারণ সাক্ষাৎকারের অনুবাদ। এগুলো তার কথা পরম্পরা বইয়ে পাবেন। এই বইটা এদ্দিন পাওয়া যাচ্ছিলো না, এখন পাঠক সমাবেশে পাওয়া যাচ্ছে।

তবে তার গল্পগুলোও অসাধারণ, সবচেয়ে মুগ্ধতা তার লেখার স্টাইলে... আমি প্রথম শাহাদুজ্জামান পড়ে সত্যিই তব্দা মেরে গেছিলাম।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আরিফ জেবতিক এর ছবি

এই বইয়ে বিহ্বল গল্পের শাহাদুজ্জামানকে পাওয়া যায় না ।

রানা মেহের এর ছবি

আরিফ ভাইয়া

এত অল্প কথায় যে এতো ভালো একটা রিভিউ করা যায়,
এই লেখাটা পড়ে বুঝলাম
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সুমন সুপান্থ এর ছবি

সমালোচনা দাঁড়াচ্ছে না আমাদের দেশে - এটা অনেককেই বলতে শুনি । আবার একটা বইয়ের কিঞ্চিত আলোচনায়ই অনেক আগ্রহী পাঠকও যে মুখ ফেরান , সেটাই তো সত্যি । এখন যেমন হচ্ছে ।
আরিফের আলোচনায়, তার হাতাশার জায়গাটা টের পাচ্ছি । উপন্যাস তো ইতিহাস নয় । ইতিহাস উপন্যাসের একটা উপাদান হয়তো । হয়তো শক্তিশালী উপাদানই, তবু, আখ্যান মাড়িয়ে ইতিহাসের সঙ্গে স্রেফ হেঁটে যাওয়াটা সু কম্ম নয়, লেখকের জন্য । শাহাদুজ্জামান হয়তো সেখানেই আটকালেন এইবার ! তাঁর 'কয়েকটি বিহ্বল গল্প', তাঁর' পশ্চিমের মেঘে সোনার সিংহ' পাঠকের সামনে যে শাহাদুজ্জামান কে দাঁড় করিয়েছিলো, ক্রাচের কর্ণেল সেটা পারেনি হয়তো ! এটা আমাদের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে ।
একটা 'উড়ুক্কু' উপহার দেন যে নাসরীন জাহান , তিনিই আবার হারাতে বসেন মনোযোগী পাঠকদের তালিকা থেকে ...!
তবু আশার কথা, এঁরা নিজের সঙ্গে প্রতারণা করা লেখক নন । পাঠকের সঙ্গে তো নয়ই । আর তার জন্যই আমদের দাবীও বোধকরি একটু বেশী !
বইটা সবাই পড়ি অন্তত , তারপর বাতিল করি । আর যাই হোক, শ্রমে ঘামে তিনি আমদের এক নায়ককে সামনে এনেছেন ।
চাইলে তিনি সমুদ্রে বিলাশের গল্পও শোনাতে পারতেন ... এই ক্ষমতাটুকু অন্তত তাঁর আছে (রুচি নেই হয়তো) ।

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

উন্মাতাল তারুণ্য এর ছবি

ইয়ে, মানে অনেক আগের লেখা খুচিয়ে তোলার জন্য দুঃখিত। কিন্তু গুগল বাবাজী যা খুঁজে দিল সেটা দেখে আমি একটু বিভ্রান্ত। 'অনীক শাহরিয়ার' কি আরিফ জেবতিকের ছদ্মনাম? নাকি এখানেও নীলক্ষেতের নীল-হলদে রঙ দেখা যাচ্ছে?!

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

শাহাদুজ্জামানের লেখা এবং ভাবনার একজন অনুসারী আমি। আরিফ জেবতিকের সমালোচনা পড়ে শিখলাম। মি চৌধুরীর মন্তব্য নিরোদ সি চৌধুরীর মতোই ঋজু, ইনিও লন্ডনে থাকেন কাকতালীয় ভাবে। তবে খোঁড়া যুক্তি হলো এ ধরণের ইতিহাস ছোয়া কাজ ফুলটাইম জব। সুনীল যে সুযোগ পেয়েছেন। শাহাদুজ্জামান ভাই কর্ণেল তাহেরের ইতিহাসটা কথকের ভঙ্গিতে বলেছেন। এটাকে প্রকাশক উপন্যাস বলেছেন, কারণ এটা একটা জনপ্রিয় বা পরিচিত ক্যাটেগরী। একজন কথক তার নিজের ভঙ্গিতে একটা প্রামাণিক বয়ান দিয়েছেন। উপন্যাস না হলেইবা ক্ষতি কী, এটার অস্থি থেকে উনার অনুমতি নিয়ে আরিফ নিজেই একটা নিশঙ্ক মৃত্যু লিখুক। এটা রিলে রেস হিসেবে নিলে ক্ষতি কী।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আরিফ ভাই আমার একটা সর্বনাষ করে দিছেন।
আমি মুন্না ভাইয়ের প্রবল ভক্ত। 'কথা পরম্পরা' 'কয়েকটি বিহ্বল গল্প' পশ্চিমের মেঘে সোনার সিংহ' পড়ে আর সুন্দরবন স্মৃতিতে যে মুন্না ভাইয়ের ভক্ত হয়ে গেছিলাম, তার কিছুটা হোঁচট খেয়েছি সুমন রহমানের সঙ্গে যৌথ সম্পাদনায় 'দেখা না দেখার চোখ' পড়ে। তারপর উনার গবেষণা প্রবন্ধটার বহি সংস্করণও ভালো লাগে নাই।
ক্রাচের কর্ণেল কিনেছিলাম দুবছর আগে। আরিফ ভাইয়ের এই সমালোচনা পড়ার পর আর বইটা পড়ার সাহস করি নাই।

এবার ভাবছি পড়ে ফেলবো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ধুম্রজাল এর ছবি

"ক্রাচের কর্নেল" বই পড়ে আমি খুব হতাশ হয়েছি। একটা ইতিহাস গদ্য আকারে লেখা যা কোনভাবে উপন্যাসের পযায়ে পড়ে না। অখাদ্য।
ফলে এত সু্ন্দর একটা প্লট এবং ইতিহাস অপঠিত থেকে যাবে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।