‘বুঝলেন , তখন বয়েস অনেক কম ছিল , এই ধরেন আপনাদের বয়েসের কাছাকাছি ।’
জাহাঙ্গীর সাহেব পান মুখে দিতে দিতে বলেন । তার পান মুখে দেয়া , বা তার এই গল্প শুরু করার জন্য একটা বাক্যকে নিয়ে টান দেয়া ,
এগুলো আমার পরিচিত , অনেক পরিচিত । গত তিনমাস ধরে আমি এই লোকটার সাথে এক ঘরে বন্দী হয়ে আছি । বন্দী বলাটা অনেকের কাছেই বাড়িয়ে বলার মতো মনে হবে , কিন্তু আমি একে বন্দী ছাড়া কিছু বলতে পারিনা । এই অজপাড়া গাঁয়ে চাকুরি নিয়ে আসার আগে আমি সত্যি সত্যিই স্বাধীন ছিলাম , অন্যান্য বেকারের মতো চাকুরির জন্য আমাকে ভো-চক্কর কাটতে হয়নি , আমি শুধু অপেক্ষায় থাকতাম যে সরকার বদলাবে , আর সরকার বদলালেই এই এনজিওটি আবার চালু হবে , আর চালু হলেই আমার চাকুরি নিশ্চিত । এ ধরনের এনজিওতে চাকুরি করার মতো সুপারিশ আমার আছে , আর শুধু সুপারিশই বা বলি কেন , এই সব এনজিও চালাতে হলে যেসব গুন লাগে তার সবগুলোই , মানে ঐ স্মার্টনেস , কিছুটা বামপন্থী বামপন্থী গন্ধ এর সবগুলোই আমি যথা সময়ে অর্জন করেছিলাম । সুতরাং এই চাকুরিটা আমার জন্য নিশ্চিত ছিল , আর নিশ্চিত চাকুরি থাকলে আপনাকে শুধু অপেক্ষা করতে হবে , আর কিছু নয় । সমুদ্রের সেই আলসে তিমি মাছটার মতো , যে শুধু হা করে শুয়ে থাকতো আর মাছের ঝাক ঘুরতে ঘুরতে এসে সেই খোলা মুখ দিয়ে ঢুকে পড়ত ।
এরকম স্বাধীন একটা জীবন ছেড়ে যখন আমাকে চাকুরিতে আসতে হলো , তখন প্রথম পোস্টিংটাই এই গন্ডগ্রামে পড়েছে , অবশ্য সবগুলোই খাপে খাপ মেলানো , এরকম গন্ডগ্রামে আমাকে চাকুরি করতে হবে ছয়মাস , তাহলেই আমি হেডঅফিসে একটা গুরুত্বপূর্ণ বদলি নিয়ে চলে যেতে পারব , এই ছয়মাস আসলে পূঁজি , রুটলেভেলে কাজ করার এই অভিজ্ঞতাটুকুকে সম্বল করে আগামীতে আমার তরতর করে প্রমোশন হবে কয়েকবছর , এবং যদি সরকার ঠিকঠাক টিকে থাকে , তাহলে হয়তো আমিও একটা ছোটখাটো এনজিওর মালিক হয়ে যাব কয়েক বছরে মাঝেই ।
এরকম সোনালী ভবিষ্যতের হাতছানি থাকায় আবারও আমি সেই আলসে তিমি মাছ হয়ে যাই , অথবা পেটপুরে খাওয়া অজগর ; ঝিমানো ছাড়া আমার কোন কাজ নেই আদতে , অথবা যতোটুকু আমি করতে চাই তার চেয়ে বেশি কাজ আমার কাছে আসবে না ; এরকম একটা সম্ভাবনা থাকায় আমি ইতরের মতো জায়গায় চলে আসি ।
কিন্তু আসার পরে আমার মোহভঙ্গ হয় , ছয়মাস আমার অনেক দীর্ঘ মনে হয় । যারা মনে করে গ্রাম অনেক সুন্দর , সেখানে শুধু সবুজ গাছ আর রাখালের বাঁশি , সেই মূর্খদেরকে আমি প্রতিদিন ভোরে উঠে একবার করে গালি দেই ; আমার মতো যদি ছয়মাস তাদেরকে একজায়গায় বসে থাকতে হতো , তাহলে নিশ্চিতই তারা বুঝতে পারতো , আসলে গ্রামে কোন সৌন্দর্য নেই , গ্রাম আসলেই একটা ইতর জায়গা ।
আর এই ইতর জায়গায় যদি আপনি জাহাঙ্গীর সাহেবের মতো একটা ইতরতম সিনিয়ার কলিগ পান , যে নিজেও কোন কাজ করে না , শুধু অধস্থনদেরকে অশ্লীল গালি দেয়াটাই যার কাজ , তাহলে আমি হলফ কেটে বলতে পারি , ঐ সব সৌন্দর্য পিয়াসীরা একদিন সকালে উঠে বাসে চড়ে যখন ঢাকায় ফিরতেন , তারপর আর কোনদিনই তারা এদিকে ফিরে আসতেন না ।
যাক , আমার দূর্দশা বলার জন্য এই গল্প নয় , আমার গল্প লেখার কারন এই লোকটার সাথে আপনাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেয়া ।
জাহাঙ্গীর সাহেব আর আমি একটা ঘরেই বসি , আমাদের ঘরে একটা ফ্যান লাগানো আছে , কিন্তু যেহেতু দিনের অধিকাংশ সময়েই বিদ্যুৎ থাকে না এবং থাকলেও এই ফ্যানটা এতো ঘটর ঘটর শব্দ করে যে মাথা ধরে যায় , তাই এই গরমে হাঁসফাঁস করতে করতে জাহাঙ্গীর সাহেবকে আমার সহ্য করতে হয় । এই লোকটা স্থূল , এই লোকটা আসলে একটা ইতর , আমি শুনেছি সে বাংলা মদ খায় প্রত্যেকদিন রাতে , এবং বাজারের ‘ধর এন্ড সন্স’ এর পেছনের যে গোপন ছোট কুটুরি আছে সেখানে সে মাসের প্রথম কয়দিন তিনতাসের জুয়াও খেলে ।
বাংলা মদ খাওয়া কিংবা জুয়া খেলার জন্য আমি লোকটাকে ইতর মনে করি এমনটা ভাবার কোন কারন নেই , কারন ওরকম আমরা সকলেই কমবেশি করে থাকি , যদিও আমার শহুরে রুচিবোধে বিষয়গুলোর জন্য আরেকটু উন্নত পরিবেশ কামনা করে , কিন্তু ঠিক এ কারনে আমি লোকটাকে ইতর বলতে চাই না । লোকটা ইতর কারন সে সবসময়ই নারীদের নিয়ে কটুক্তি করে থাকে ।
আমাদের এই এনজিওটার এই থানা লেভেলের অফিসে আমরা মাত্র কয়েকজন পুরুষ , বাদবাকী সবাই নারী , নারীর ক্ষমতায়ন বলে যে নতুন আইটেম বাজারে এসেছে আমাদের এনজিওটা সেটাও বিক্রী করে , তাই অফিসের কমগুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে এবং মাঠকর্মী হিসেবে নারীদেরকে এখানে নিয়োগ দেয়া হয় , নারীরা ঝামেলা কম করে , এরা জন্মগতভাবে বাধ্য ও মনোযোগী হয়ে থাকে , তাই তাদেরকে গুরুত্বহীন পদে নিয়োগ দিলে কম বেতনে সেই কাজটা তারা খুব মনোযোগ দিয়ে করে এসব অনেক বিচারই নিশ্চয়ই এই পেছনে আছে , কিন্তু মোদ্দা কথা হচ্ছে জাহাঙ্গীর এদেরকে নিয়ে সবসময় অশ্লীল রসিকতা করে ।
সামনে যতোটুকু , তার চাইতে বেশি করে একা একা অফিসে বসে , যখন আমি , যে কিনা তার চাইতে ২৪ বছরের ছোট , তার সামনে বলতে তার বিন্দুমাত্র আটকায় না । সুলেখা পালের যে পাছাটা অনেক বড়ো , কিংবা আখতারুন্নেসার এতো বড়ো স্তন নিয়ে তাঁর স্বামী কী করে সেই চিন্তার পাশাপাশি চিমশা বদরুন্নেসা বেগমের বুকটা কেন পুরুষ মানুষের মতো একেবারে সমতল , সব বিষয়েই সে কথা বলে । একই রুমে বসার কারনে এই লোকটার এসব ইতরামী আমাকে সহ্য করতে হয় , হয়তো পুরনো লোক হলে আমি সহ্য করতাম না কিন্তু যেহেতু আমি নতুন , এবং মাত্র কয়েকমাস পরেই আমি হেডঅফিসে চলে যাব , তাই এসব আমাকে সহ্য করতে হয় ।
সুতরাং আমি প্রতিদিন এই আবর্জনাগুলো শুনে যাই । যখনই জাহাঙ্গীর সাহেব বলেন -‘ ‘বুঝলেন , তখন বয়েস অনেক কম ছিল , এই ধরেন আপনাদের বয়েসের কাছাকাছি ’ তখনই আমি বুঝে যাই যে আরেকটি অশ্লীল গল্প শুরু হচ্ছে । বয়েসের প্রশ্ন আসা মানেই কোন একটা স্মৃতিচারন , যেগুলো শুনলে বমি পাবে আপনাদের , অধিকাংশই জাহাঙ্গীরের নিকটাত্মীয়াদের নিয়ে , তার মেঝচাচী যখন অকালবিধবা হলেন কিংবা পাশের বাড়ির লোকটা যখন বিদেশে গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল তখন তার মাঝবয়েসী স্ত্রীর বিভিন্ন গল্প , এগুলোই আসে । জাহাঙ্গীরের গল্পের কোন শেষ নেই , প্রতিদিনই একটা না একটা গল্প আসে আর আমাকে এগুলো হজম করতে হয় ।
নিশ্চিতভাবেই এখন এরকম একটা গল্প শুরু হচ্ছে , আপনাদের মাঝে যাদের সুরুচি প্রবল তারা এই বেলা ক্ষান্ত দিন , তাদেরকে আর গল্পটা শুনতে হবে না । আর যাদের আগ্রহ আছে , অথবা যারা এখন আমারই মতো কোন কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না , তাঁরা চাইলে আমার সাথে বসে বসে জাহাঙ্গীরের গল্প শুনতে পারেন ।
সমস্যা হচ্ছে ,এখন এই ভ্যাপসা গরমে জাহাঙ্গীর সাহেবের গল্পটা আমি মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারব না আর আমি না শুনলে তো আপনারাও শুনতে পারবেন না , তাই গল্পটা আগামী পর্বে বলতে হবে...।
মন্তব্য
নারীর ক্ষমতায়ন বলে যে নতুন আইটেম বাজারে এসেছে আমাদের এনজিওটা সেটাও বিক্রী করে
খুব ভালো লাগলো আরিফ ভাই । পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি।
পরের পর্ব নাজিল হয়েছে ।
ধুরো!!!
কিরো ??
হায় হায় আমার অফিসের সাদুল সাহেবের গল্পটা কোথায় পেলেন। ৬০ বছরের এই বুড়োর মুখে কোন লাগাম নেই। যে কোন জুনিয়র স্টাফ এমনকি ড্রাইভারের সামনেও ধুম করে বলে বসে - "ওই মাইয়াটারে দেখলে এই বয়সেও আমার যৌন উত্তেজনা টন টন করে জাইগা যায়, এখানে আপনেরা বয়সে ছোড বেশী কিছু বলতে চাই না...........হে হে হে।"
এ বিষয়ে ওনার মুখে সবচেয়ে প্রিয় শব্দ হলো 'যৌন' যেটা বিশেষ উচ্চারনে চিবিয়ে বলেন।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
যা সাদুল , তা ই জাহাঙ্গীর । সব অফিসেই দুয়েক পিস আছে ।
থাক, শুনলাম না।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
এটা ভালো করেছেন ।
চা খাইতে খাইতে গল্প বলবেন ?
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
চা খাওয়া বাদদিছি । আমি বিড়ি খাইয়াই গল্পে ফিরত যাই ।
বৃষ্টিতে ভ্যাপসা গরম কেটে গ্যাছে। এইবার আসেন গল্পটা শুরু করি।
আচ্ছা , শুরু হলো । দ্বিতীয় পর্ব দেখে নিন ।
হায় হায় ! যেদিন আপনে গল্প কইবেন, হেইদিন যদি আমি ঘুমাইয়া থাকি, তখন !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ঘুমাচ্ছেন না জাগনা আছেন ??
পরের অংশের অপেক্ষায় থাকলাম ......
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
পরের পর্ব প্রকাশিত ।
কি যন্ত্রনা, ক্রমশঃ চা-খোর লেখকের সংখ্যা বেড়েই চলছে
পাঠকের প্রতি এই নির্দয়তার প্রতিবাদ জানাই।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
সহমত, পাঠকদের সাথে এই অনাচার অত্যাচারের প্রতিবাদ জানাই।
আমিও নিন্দা জানাই ।
ধুর মিয়া, আপনেও ফাকি দিয়া কাইটা পড়লেন!? :-|
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
এই একাউন্টটি কোন মডারেটরের নয়। এই একাউন্ট থেকে মডারেশন করা হয়না, কিংবা এই একাউন্টের কর্মকান্ডের দায়ভার সচলায়তন নেবে না।
আরে না , ঘুইরা আসতে গেছিলাম , ফিরত আসছি ।
গরমের দোহাই না দিয়ে অন্তত চা খেতে যেতেন। পাবলিক বুঝে নিত...
আপনার লেখা সব সময়ই ভাল লাগে...
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
পাবলিক বুঝে ফেললে তো মজা নষ্ট !
ভাবছি প্রতিদিন এমন কত গল্প আসে আর মডুরামবৃন্দকে এগুলো হজম করতে হয় ।
তাও ভাল আমাদেরই মতো কোন কাজ খুঁজে না পাওয়াদের জন্য দু-চারটা ছাড় দিচ্ছেন
আগামী পর্বের অপেক্ষায়
হ !
আরিফ ভাই--প্লীজ এইটা অন্তত শেষ করেন--রিকোয়েস্ট---
করছি , হে: হে: হে: !
সচলায়তন চা-খেতে-গিয়ে-হারিয়ে-যাওয়া-গল্প সংকলন করবার প্রস্তাব জানাচ্ছি। মন্দ হবে না কিন্তু। অনেক মজার মজার সূচনা-গল্প পাওয়া যাবে।
এইটা দুর্দান্ত বলেছেন
একমত
...........................
Every Picture Tells a Story
ঠিক , তারপর সেগুলো থেকে হয়তো আগামী দিনে অনেকেই ভালো ভালো গল্প নামিয়ে ফেলতে পারবে ।
আরিফ, থামস্আপ কেমনে দিতে হয় জানিনা।
জানলে দিতাম।
অর্জুন মান্না
arjun.manna@gmail.com
ইমো দেয়াটা বড্ড ভেজাইল্যা । আমিও পুরোটা পারি না ।
একটা ব্র্যাকেটের মাঝে Y লিখলে হয়ে যাওয়ার কথা ।
দেখি হয় কি না :
চা খোর গ্রুপে আরেকটা নাম যুক্ত হইল।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
কার নাম ??
আমি তো আগে থেকেই এই ইমো-টা পারি।
এই যে,
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
নতুন মন্তব্য করুন