ঠক করে পায়ের কাছে একটা ঢিল পড়ল। আমি চমকে তাকিয়ে দেখি ঢিলে উৎস পাশের বাড়ির ছাদ। একটা পুঁচকে মেয়ে দাঁত দিয়ে জিভ কামড়ে ধরে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।
আমি কিছু বলার আগেই বলল, ‘ আমারে মাফ কইরা দেন। আর হ’ব না।’
কথার গ্রাম্য টানে আর পরনের কাপড় দেখেই বুঝা যাচ্ছে কাজের মেয়ে। অন্য সময় হলে হয়তো একটা জোরে ধমক দিতাম, কিন্তু এই ভোরবেলায় আমি যখন ছাদে উঠে হাফপ্যান্ট পরে আমি ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করি, তখন কেন যেন ভোরের হিম হিম ভাবটা খুব ভালো লাগে। এই সময়ে আমি খানিকটা নরম। আর মেয়েটার জিভ বের করা দৃশ্যটা দেখেও হয়তো খানিকটা মজা লাগে। তবু গাম্ভীর্য বজায় রেখে জিজ্ঞেস করি. ‘ ঢিলাচ্ছিস কেন? ’
মেয়েটা কাঁচুমাচু মুখ করে বলে , ‘ ঢিলাই না, আম পাড়ি।’
আম গাছটি যদিও আমাদের বাড়ির তবু তার ডালপালাগুলোর বেশিরভাগই দেয়ালের ওপর দিয়ে পাশের বাড়ির সীমানায় পড়েছে। শীত কেটে যাচ্ছে, আমগাছটির মুকুলগুলো ধীরে ধীরে গুটিআম হয়ে যাচ্ছে, প্রতিদিন ভোরে ছাদে উঠলেও বিষয়টা আমি খেয়াল করিনি। আমি খেয়াল না করলেও যাদের খেয়াল করার কথা তারা দেখা যাচ্ছে ঠিকই খেয়াল করেছে। আম গাছটির মালিকানা যেহেতু আমাদের বাড়িঅলার , তাই সেগুলো রা করার একটা নৈতিক দায়িত্ব বোধ করি আমি। তাছাড়া এরকম ভোরবেলা এলোপাথাড়ি ঢিল পড়লে , দুয়েকটা যে আমার গায়ে লাগবে না কিংবা জানালার কাচই ভাঙবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আমি তাই হালকা হুশিয়ারি উচ্চারন করি,
‘ খবরদার , আর যেন ঢিলাতে না দেখি।’
মেয়েটি আমার কথা শুনে অবাক হয়, তারপর প্রশ্ন করে, ‘ না ঢিলালে আম খামু ক্যামনে ? গাছে উইঠা যামু ?’ গাছের মালিকানায় ফলের মালিকানা নির্ধারিত হয়, যদিও আসলে আমের মালিক প্রকৃতিই , তবু আমরা মানুষরা নিজ নিজ মতানুযায়ী প্রকৃতির সম্পদের মালিকানা দখল করে রেখেছি, এই পিচ্চি মেয়েটি দেখা যাচ্ছে এ ব্যাপারে কোন জ্ঞানই রাখে না! অন্যের গাছের আম খাওয়া নিয়ে তার কোন জড়তা নেই , সে সরল মনে জানতে চাচ্ছে, আম খাওয়ার কোন পদ্ধতিটা সে ব্যবহার করবে।
আমি হেসে জিজ্ঞেস করলাম , ‘ গাছে উঠতে পারিস ?’
‘পারি তো। আমাগো গেরামে কত্তো উঠছি।’ সে গর্বের সাথে জবাব দেয়।
আমি এবার বলি , ‘ তোর যা ইচ্ছা কর, কিন্তু খবরদার ঢিল মেরে আম পাড়বি না। ’
মেয়েটা কী যেন ভেবে আস্তে করে বলে , ‘ আচ্ছা,’ তারপর নিচে চলে যায়; আমিও রোজকার মতো বুকডন দেয়া শুরু করি, ‘ এক, দুই , তিন।’
ব্যাপারটা আমি ভুলেই যেতাম যদি না পরের দিন আবার তার গলা শোনা যেত। ‘ চাচা, আম খাইবেন?’ সে তার রিনরিনে গলায় চিৎকার করে জিজ্ঞেস করে। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি প্রশ্নটা আমাকেই করা হচ্ছে। যদিও বেশ কিছুদিন আগেই ত্রিশের ঘর পেরিয়েছি, তবু এখনও চাচা ডাক শুনে অভ্যস্ত হইনি। আমি তাই তাকে বলি , ‘ আমাকে বলিস?’ সে ত্রস্ত জবাব দেয়, ‘হ! খাইবেন?’
সকালে উঠে খালিপেটে একগ্লাস চিরতার রস খাওয়া আমার অভ্যাস , এমনিতে আমি টক ফল খুব পছন্দ করলেও এই ভোরে গুটিআম খাওয়ার কোন ইচ্ছে আমার নেই। আমি বলি, ‘ না , খাব না। তুই কি গাছে উঠেছিলি?’
‘না,’ সে জানায়। ‘ ঢিল মাইরা পাড়ছি।’
আমি বিরক্ত হয়ে বলি, ‘ তোকে না বলছি, ঢিল মারবি না।’
‘ আপনে আসার আগেই তো ঢিল মারছি, তারপর টুয়ায়া নিয়া আইলাম। আপনে খাইবেন?’ ঢিল মারার পেছনে এমন যুক্তি থাকলে আর ঢিল উপজাত দ্রব্যের আহ্বান থাকলে আর তাকে কী বলা যায়।
আমি আম খাওয়ার ব্যাপারে অসম্মতি জানিয়ে নিজের কাজে মন দেই।
দুই.
মাঝখানে বেশ কিছুদিন পেরিয়ে গেছে। মেয়েটিকে আর তাদের ছাদে দেখিনি। হয়তো সবাই ঘুম থেকে উঠার আগেই সে আম পেড়ে নিয়ে চলে যায়, আমি ছাদে থাকলে যেহেতু ঢিল মারা নিষেধ, সে তাই এই কাজটা আরো আগে করে ফেলে। অথবা হয়তো এই বাসার কাজই ছেড়ে দিয়েছে, ছিন্নমুল কাজের লোকেরা , বিশেষ করে এই বয়েসের পিচ্চিরা বেশিদিন এক বাসায় কাজ করতে পারে না। শিশুমন সবসময় চঞ্চল থাকে, আমরা গৃহকর্তারা তাদের কাছে আমাদের মতো মধ্যবয়স্কদের গাম্ভীর্য আর পরিপক্কতা আশা করি, সেটা যখন পাওয়া যায় না তখন একসময় সেই পিচ্চিকে ব্যাপক উত্তম মধ্যম উপহার দিয়ে দেশের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এই মেয়েটির ব্যাপারে এমনটা ঘটল না। একদিন সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে সিড়ি দিয়ে উঠছি, হঠাৎই পাশের বাড়িতে হইচই শুনে তাকিয়ে দেখি সে ছাদের একেবারে কিনারে দাড়িয়ে আছে, তার চোখেমুখে খ্যাপাটে দৃষ্টি, গরম গলায় বলছে ‘ ঝাপ দিমু কইলাম, আমি কইলাম ঝাপ দিমু।’
তার গৃহকর্তা আফসার সাহেব নিরাপদ দূরত্বে দাড়িয়ে কাকুতি মিনতি করছেন , ‘ এই , তুই ঘরে আয়। ঠিকাছে , তোরে টেলিভিশন দেখতে দিমু, তুই ঘরে আয়।’
আফসার সাহেবের কথা শুনেই বুঝলাম, ঘটনা বিকেল বেলার টেলিভিশন দেখা নিয়ে। ইদানীং সবকয়টি বাংলা টিভি চ্যানেলে বিকেল বেলা বাংলা সিনেমা দেখায়, ঘরে ঘরে কাজের মেয়েদের খুব প্রিয় অনুষ্ঠান এটি। বিকেলের দিকে কাজের চাপ কমে যায়, গিন্নী একটা ভাতঘুম দেন, ছেলেমেয়েরা ব্যস্ত থাকে কম্পিউটার নিয়ে , এই সময় কাজের মেয়েরা মন দিয়ে বাংলা সিনেমা দেখে।
বেচারা আফসার সাহেবের মুখ চিন্তায় ঘেমে গেছে। আমার ছাদ ছাড়াও আশেপাশের অনেকগুলো ছাদ আর নিচ থেকে কৌতুহলী অনেকেই তাকিয়ে দেখছে। মেয়েটি দাড়িয়ে আছে খুবই বিপজ্জনক জায়গায়, যে পাগলাটে মেয়ে , বলা যায় না ঝাঁপ দিয়েও বসতে পারে। তাহলে আর কেলেংকারির শেষ থাকবে না। আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে পরিচিতের গলায় বললাম , ‘ কি রে ,কী হয়েছে ?’ । ‘ আমি এগো বাসায় আর থাকুম না , আল্লাহর কসম থাকুম না।’ মেয়েটি আমাকে দেখে যেন গলায় জোর পায়।
আমি পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য বলি, ‘ আচ্ছা থাকিস না, বাড়ি চলে যাস।’
‘ বাড়ি যামু কেমনে ? বাপে তো আহে না।’
‘ আসবে , আসবে। এখন তুই বাসায় যা।’
‘ না , বাপ আইব না। আমি এগো বাসায় আর কাজ করুম না।’ সে গোয়ারের মতো তার সিদ্ধান্ত জানায়।
আমি আর কী বলতে পারি। এবার অন্যদিক থেকে কথা বলি, ‘ তোর বাপ যদি কালকে এসে দেখে তুই ঝাঁপ দিয়ে পড়ে গেছিস, তাহলে তার কেমন লাগবে বল?’
আমার কথায় সে খানিকটা থম ধরে। সম্ভবত মনে মনে বিষয়টাকে যাচাই করে। তারপর আমাকেই বলে , ‘ আপনি তারে একটা ফোন কইরা দিতে পারবেন ?’ আমি সুযোগ পেয়ে বলি , ‘ নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই।’
সে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বলে , ‘ বাজারে আফতেরাগো ভাইয়ে আছে না , হের কাছে মুবাইল আছে। হেরে কইলেই বাপে খবর পাইব।’
আমি স্বাভাবিক গলায় বলি যে আমি ‘আফতেরাগো ভাইয়ের’ কাছে রাতেই ফোন করব।
কথা বলার কারনেই কি না জানি না সে কিছুটা ধাতস্থ হয়। চোখের খ্যাপাটে ভাবটা মিলিয়ে যায়। একটু পরে কান্ত বিদ্ধস্থ ভঙিতে সে চলে যায় সিড়ি বেয়ে।
আফসার সাহেব এতোক্ষন কথা বলছিলেন না , আমাদের দুজনের কথোপকথন শুনছিলেন। এবার তিনিও হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন। জোরে একটা শ্বাস ফেলেন তিনি। তারপর বলেন , ‘ আপনি আসায় বাঁচলাম। আমার তো ভাই ভয়ে কোন কথাই আসছিল না।’
আমি হেসে প্রশংসাটুকু উপভোগ করি।
তারপর বলি , ‘ কী হয়েছিল? খেপলো কেন ?’
‘ আর বলবেন না। মাথা ব্যথা করছিল, বলেছিলাম একটু মাথাটা মালিশ করে দিতে। কেন তাকে টিভি দেখা থেকে ডাকলাম এই জন্য এতো তুলকালাম।’ হেসে বললেন তিনি।
‘ তাহলে দুটো প্যারাসিটামল খেয়ে শুয়ে থাকুন, পাগলিকে খেপিয়ে লাভ নেই।’ আমি হেসে বলি।
‘ না , প্যারাসিটামল খাব না, আপনার কাছে সিগারেট আছে? থাকলে একটা দিন , সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে।’ আমার কাছে খানিকটা বাধো বাধো লাগে। বয়েসে আফসার সাহেব আমার থেকে অনেক বড় , সরকারী চাকুরি থেকে রিটায়ার করার পরে এখন একটা বিদেশী জাহাজ কোম্পানির হেডঅফিসে এজিএম হিসেবে কাজ করছেন। সেই তুলনায় আমি ভার্সিটি ছেড়েছি খুব বেশিদিন হয়নি। এই বয়েসের একজনকে সিগারেট দিতে কেমন কেমন যেন লাগে। তারপরও পকেট থেকে সিগারেট বের করে তার ছাদে ছুড়ে দেই , তিনি ধরতে পারেন না , সিগারেট গড়িয়ে যায়। ম্যাচটা ছুড়ে দিলে অবশ্য লুফে নেন, এবার আর মিস হয় না।
তার ভাবগতিক দেখে মনে হয় অনেক বড় বিপদ থেকে বেঁচেছেন, এখুনি বাসায় ফিরতে চান না, আমার সাথে আলাপ জমাতে চান। আমি তাকে সেই সুযোগ দেই না , অফিস থেকে ফিরে গোসল না করলে আমার শরীর কুটকুট করতে থাকে, আমি তাকে সিগারেট খাওয়ার মাঝে একা রেখেই নিচে চলে আসি।
তিন.
এই পর্ব শেষ হওয়ার পরেও আরো তিন চারদিন কেটে গেছে। এক ছুটির দিনের দুপুরে আয়েশ করে ভাত খেয়ে বিছানায় শুয়ে খবরের কাগজ পড়ছিলাম। এই সময়টা আমার আর দীপার। সে নিজেও চাকুরি করে , সপ্তাহের অন্যান্য দিনে আমাদের মাঝে আসলে তেমন কথাবার্তা হয়ে ওঠে না, ছুটির দিনের সকালটাও সারা সপ্তাহের ঘরের জমানো কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকে সে, শুধু দুপুরের খাওয়ার পরে বেশ গল্পের সুযোগ পাওয়া যায়। এই সময়ে সে কুটুস কুটুস করে সুপারি খায়, সপ্তাহে এই একদিনই, আমিও বিছানায় শুয়ে পা দোলাতে দোলাতে তার সাথে গল্প করি।
এই সময় আচমকা কলিংবেল বেজে উঠল। এই অসময়ে কে আসতে পারে ভাবছিলাম, আমাদের কাজের মেয়েটা এসে জানালো পাশের বাসার ‘মেডাম’ এসেছেন। ঢাকা শহরে প্রতিবেশীদের মাঝে যাওয়া আসাটা মফস্বল শহরের মতো অবারিত নয়, তাছাড়া ছুটির দিনের না দুপুর না বিকেল সময়টাও কারো বাসায় যাওয়ার উপযুক্ত সময় নয়, সুতরাং কোন বিপদ আপদ হলো কি না সেটা ভাবতে ভাবতে দীপার পাশাপাশি আমিও শোয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
বিপদ নয় বটে , তবে আপদ বলা যায়।
এসেছেন আফসার সাহেবের স্ত্রী। সাথে সেই পিচ্চি কাজের মেয়ে। বিস্তর ভুমিকার পরে যে কথা জানা গেল, আফসার সাহেবের একমাত্র মেয়ে এবার এ লেভেল পরিক্ষার্থী। আফসার সাহেবের স্ত্রী তাই তাদেরকে নিয়ে সারাদিন টিউটরদের বাসায় বাসায় ছুটোছুটি করতে থাকেন। কিন্তু তার কাজের মেয়েটি একা বাসায় থাকতে ভয় পায়। এখন আমরা যদি কিছু মনে না করি তাহলে বিকেলটা যদি সে আমাদের বাসায় থাকে তাহলে কোন অসুবিধা হবে কি না।
কথা হচ্ছিল দুই গৃহিনীর মাঝে, আমার সেখানে ফোড়ন কাটা শোভা পায় না, তবু আমি কিছুটা অসাবধানতা বশতই মুখ খুলে ফেললাম, ‘ না , না অসুবিধে কী। থাকুক না । আমাদেরটার সাথে বসে বসে টিভি দেখুক।’ বলেই দেখলাম দীপার দুচোখে অসম্মতির চিহ্ন, সে কোন উটকো ঝামেলায় যেতে চায় না। কিন্তু কথার অসুবিধে এই যে , আপনি চাইলেও বলা কথা ফেরত নিতে পারেন না। সুতরাং আফসার সাহেবের কাজের মেয়েকে রেখেই আফসার গিন্নী প্রস্থান করলেন, চা খেয়ে যাওয়ার অনুরোধ রা করতে পারলেন না কারন একটু পরেই তাকে আবার টিউটরদের বাসায় ছুটতে হবে।
তিনি চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত মেয়েটা জড়সড় হয়ে দাড়িয়েছিল, দরজা বন্ধ করা মাত্রই তার মুখে খই ফুটলো।
সোজা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ আপনে ফোন করেইন্নাইক্কা?’
আমি বললাম , ‘ ফোন করেছি, তোর বাপ বলেছে কয়েকদিনের মাঝেই আসবে।’ আমাদের এই কথোপকথন দীপা অবাক হয়ে দাড়িয়ে শুনছিল।
আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘ কী ব্যাপার , কিসের ফোন?’
আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম ‘ সে আছে একটা ব্যাপার , তোমাকে পরে বলব।’ পিচ্চি কিন্তু দীপাকে জানাতে ভুল করল না, সে চোখ গোলগোল করে এক নিঃশ্বাসে বলল, ‘ চাচাজান আমারে কইসে আমার বাপের কাছে ফোন কইরা তারে আইয়া আমারে নিয়া যাইতে কইব।’
দীপা পিচ্চির সামনে কথা বাড়াল না , মুখ গম্ভীর করে শোয়ার ঘরে ঢুকল।
শোয়ার ঘরে ফিরে আমি ভেবেছিলাম আজকালকার যুগের এই টিউটর প্রীতি নিয়ে আর আফসার সাহেবের স্ত্রীদের মতো অভিভাবকদের নিয়ে বেশ একটা হাসিঠাট্টা করব।
দীপা সে সুযোগ দিল না। সে মুখ কালো করে বলল, ‘ তুমি চট করে মেয়েটাকে রাখতে রাজী হয়ে গেলে যে?’
আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘ তাতে কী হয়েছে? কী এমন ব্যাপার ? তাদের একটা অসুবিধা হয়েছে, এজন্যই তো।’
দীপা বললো, ‘ অসুবিধা না মাথা। তোমার তো মানিব্যাগট্যাগ কোথায় কী রাখো তার কোন হুশ নেই। শেষে যদি চুরিটুরি করে তাহলে বুঝবে মজা।’
আমি এসব জটিলতা ভালো বুঝতে পারি না। একটা ছোট কাজের মেয়ে যে কি না একটা বিকেল আমাদের বাসায় থাকবে সে কিভাবে আমাদের এই মধ্যবিত্ত বাসা থেকে চুরি করে ভাগবে বা চুরি করার মতো আদৌ কোন সম্পদ আমাদের বাসায় আছে কি না এসব নিয়ে তাই দীপার সাথে তর্ক করতে গেলাম না। এমনিতেই আমার অন্যায় হয়েছে অবশ্য, দীপা আর আফসার গিন্নীর কথার মাঝে কথা বলা উচিত হয়নি।
আমি তাই কথা ঘুরাতে দীপাকে সেদিনের ঘটনাটা বললাম। কিভাবে মেয়েটিকে তার বাপের কাছে ফোন করব কথা দিয়ে নিশ্চিত আত্মহত্যা থেকে বাঁচিয়েছি , সেটাই এমন ভাবে বর্ণনা করলাম যেন সুপারম্যানেরও সাধ্য ছিল না সেই আত্মহত্যা ঠেকানো। আমার অতিকথনের কারনেই কি না জানি না , অথবা হয়তো দীপার মনটা নরম বলেই সে শিউরে ওঠে। আমার উপর খানিকটা নরম হয় বটে , কিন্তু মেয়েটাকে না রাখার ব্যাপারে তার সিদ্ধান্ত আরো পোক্ত হয়, কী জানি যদি আমাদের ছাদ থেকেই লাফ দিয়ে বসে তাহলে যে আমাকেই জেলের ঘানি টানতে হবে সেকথা জানিয়ে দিতে ভুলে না।
চার.
সেই ছুটির দিনের পরে আরো কয়েকদিন গত হয়। এর মাঝে দেখা যায় রোজ বিকেলে আমাদের বাসায় সেই পিচ্চির আসাটা অবধারিত হয়ে গেছে। প্রতিদিন বিকেলে সে চলে আসে, যদিও এসময় আফসার সাহেব বাসায় থাকেন তবু নাকি তার সেই বাসায় একা থাকতে ভয় করে , প্রথম দিনের পরে দীপাও আর এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করে না।
আমি অফিস থেকে ফিরে প্রায়দিনই দেখি মেয়েটা একমনে টিভি দেখছে , ইদানীং দেখে মনে হয় তার আগের সেই উচ্ছ্বাসটাও আর নেই , হয়তো ঢাকা শহরের যান্ত্রিকতা এভাবেই আমাদের সবাইকে যেভাবে শুষে নিয়েছে ,মেয়েটাও সেই শোষন থেকে মুক্ত হতে পারছে না।
সে আর আগের মতো আমাকে জিজ্ঞেস করে না আমি তার বাপকে ফোন করেছি কি না, আমিও কান্ত শরীর নিয়ে শোয়ার ঘরে ঢুকে যাই , তার কুশল জিজ্ঞাসা করা হয়ে ওঠে না , ওসবের প্রয়োজনও বোধ করি না ।
মাঝখানে জন্মাষ্টমীর ছুটি সহ টানা তিনদিনের ছুটি পড়ে যাওয়ায় আমি আর দীপা রাজশাহী চলে যাই। অনেকদিন রাজশাহী যাওয়া হয় না , এরকম ছুটি পেলে তাই আমরা চটজলদি একটা ঢু মেরে আসার সুযোগ ছাড়ি না। দীপার এক কাজিনের বিয়ে পড়ে গেছে, এরকম একটা যুক্তি আমাদেরকে মাসের এই শেষ দিকেও রাজশাহী যেতে উৎসাহিত করে তুলে।
ফিরে আসি এক বিকেলে। সিড়ি দিয়ে উঠছি এসময় আমার বাড়িওয়ালির সাথে দেখা হয়। ভদ্রমহিলা বলেন, ‘ আফসার সাহেব আপনার মোবাইল নাম্বারটি চাচ্ছিলেন, আমি দেই নি।’ আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি, ‘ আফসার সাহেব? উনি নাম্বার দিয়ে কী করবেন?’
‘ ওহো, আপনাদের তো জানার কথা নয়। উনার বাসার কাজের মেয়েটি পালিয়েছে। আফসার সাহেব থানায় জিডি করা আর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ছাপানোর জন্য আপনার কাছে এসেছিলেন।’
একসময় পত্রিকায় চাকুরি করতাম এই খবরটি আশেপাশের অনেকেই জানে। বিভিন্ন সময় তাই বিজ্ঞাপন ছাপানো কিংবা অখাদ্য কবিতা ছাপানো কিংবা নিজের জেলা সমিতির বিজ্ঞপ্তি ছাপানোর জন্য তারা আমার কাছে আসে। তাদের বোধহয় ধারনা সাংবাদিকতা ছাড়ার এতো বছর পরেও আমার মতা আছে পত্রিকায় কিছু ছাপিয়ে দেয়ার। আমি তাই সেটা নিয়ে তেমন বিচলিত হই না। বরং পিচ্চি মেয়েটি হারিয়ে যাওয়ায় ব্যথিত হই। এই ঢাকা শহরে একবার মানুষ হারিয়ে গেলে আর ফিরে আসে না।
দীপার দিকে তাকিয়ে দেখি সে চোখমুখ শক্ত করে দাড়িয়ে আছে , সে কোন মন্তব্য করে না।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় দেখি দীপা দেয়ালের দিকে মুখ করে শুয়ে আছে।
আমি বুঝতে পারি কোন কারনে সে রাগ করেছে। রাগ করার লনগুলোর একটা হচ্ছে দেয়ালের দিকে মুখ করে শুয়ে থাকা। আমি পরিস্থিতি হালকা করার জন্য বলি, ‘ দেখলে , পুঁচকে একটা মেয়ে পালিয়ে গেল।’
দীপা মুখ ফেরায় না। শুধু অনুচ্চ শব্দে বলে , ‘ শুওরের বাচ্চা।’
আমি হতভম্ব হয়ে যাই। তারপর বেশ দৃঢ় গলায় বলি , ‘ ছিঃ , দীপা! বাচ্চা একটা মেয়ে !’
দীপা মুখ ঘুরিয়ে তাকায়। তারপর বলে , ‘ আমি মেয়েটাকে গালি দিচ্ছি না। তোমার ঐ আফসার হারামজাদা একটা শুওরের বাচ্চা।’
ঘটনার আকষ্মিকতায় আমি বিমূঢ় হই। ‘ আফসার সাহেব আর কী করল?’ আমি জানতে চাই।
দীপা এবার ততোধিক অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়। ‘ তুমি কিছু টের পাও নাই ?’
‘ না তো।’ আমি মাথা নেড়ে অজ্ঞানতা জানাই।
‘ ঐ আফসার শুওরের বাচ্চা যে এই ছোট্ট মেয়েটাকে রেপ করার চেষ্টা করতো, এটা তুমি টের পাও নাই ? বিকেলে তার বউ আর মেয়েটা বেরিয়ে যাওয়ার পরে সে মেয়েটাকে জ্বালাতো, মেয়েটা এজন্য কয়েকদিন ছাদ থেকে লাফ দিতে চেষ্টা করেছে, তুমি তার কিছু জানো না।’
আমি অবাক হতেও যেন ভুলে যাই। ‘ কী বলো এসব? কে বলেছে তোমাকে?’
‘ কেন এটাতো প্রায় সবাই জানে। তার বাসায় কাজের মেয়ে টিকে না। এজন্যই তো তার বউ মেয়েটিকে বিকেলে আমাদের বাসায় রেখে যেত।’
আমার মাথা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়। আমি প্রশ্ন করি, ‘ আফসার সাহেবের বউ জানে?’ দীপা গলায় বিষ ঢেলে বলে , ‘ জানেই তো, জেনে কী করবে । গরীব স্কুল মাস্টারের মেয়ে, আফসার সাহেবের আগের বউ তাকে ছেড়ে চলে গেলে একে বিয়ে করেছে, সে জেনেই বা কী করবে , কোথায় যাবে?’
আফসার সাহেবের দ্বিতীয় বিয়ে বা উনার স্ত্রীরও যে দ্বিতীয় বিয়ে , এই খবরটি আমার জানা ছিল , তাই তেমন চমকাই না।
দীপা এবার পুরো বিষ্ময় প্রকাশ করে বলে , ‘ সত্যি সত্যি তুমি টের পাওনি?’
আমি আবার বলি, ‘ সত্যি আমি একদমই বুঝতে পারিনি ।’
‘ আমি আরো ভেবেছিলাম তুমি মেয়েটিকে বাঁচানোর জন্যই বিকেলে আমাদের বাসায় রাখার ব্যাপারে রাজী হয়েছিলে। তুমি যে কিছুই বুঝতে পারো নি, সেটা বুঝিনি। সাধে কি তোমাকে মাঝে মাঝে বেকুব বলি।’
দীপা আবার দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে শোয়।
আমি সত্যিকারের বেকুবের মতো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি।
মন্তব্য
অনবদ্য একটি লেখা। আমাদের সমাজে প্রতিনিয়তই ঘটে যাচ্ছে এমন সব ঘটনা, আর আমরা শুধু দেখে যাচ্ছি - বলা চলে চোখে ঠুলি পড়ে বসে আছি।
বহুদিন পরে সচলায়তনে একটা গড়-গড় করে পড়ে যাবার মতো সুখপাঠ্য পরিপূর্ণ একটা ছোটগল্প পড়লাম।
"বিষয়বস্তু পুরানো" বলতে গিয়েও বললাম না; এই "শুয়োরের বাচ্চা"গুলো আসলে বিষয়বস্তু পুরানো হয়ে দেয় নি।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফ্লিকার | ইমেইল
সামাজিক গল্প
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
হ। সম্পূর্ণ রঙিন।
সেই আগের মতোই। অনেক আগেই গল্পের শেষটা ধরা যাচ্ছে।
এবং
শোয়ার ঘরে ফিরে আমি ভেবেছিলাম আজকালকার যুগের এই টিউটর প্রীতি নিয়ে আর আফসার সাহেবের স্ত্রীদের মতো অভিভাবকদের নিয়ে বেশ একটা হাসিঠাট্টা করব। ... (...) রয়ে গেছে।
সেই আগের লেখকেরই লেখা।
চেষ্টা চালিয়ে গেলে নিশ্চয়ই কোন একদিন লিখতে শিখে যাব, তাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, পৃথিবীতে এমন মানুষের উপস্থিতি।
কষ্ট হয়, মানুষের এই বিশ্রী রূপ দেখে।
গল্প ভাল্লাগলো,
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
কিছু বলার নেই।
যা বলার- তা সুনীল গাঙ্গুলী বলে দিয়েছেন, "সব শুয়োরের বাচ্চারাই সভ্যতার নামে জিতে গেলো "...
ভালো লেগেছে গল্প। (গৎ বাঁধা কথা হয়ে যায় আপনার ক্ষেত্রে, ন্যাকা ন্যাকা )
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
বস,
একটা শক্ত সমালোচনা করি। আপনার লেখার হাত খুব ভাল। আপনি যদি গরু রচনাও লেখেন সেটাও পড়ে মনে হবে, আহা কি লেখছে! কিন্তু এভাবে সেই প্রতিভার অপচয় হতে দেখলে খারাপ লাগে। এইরকম গল্পতো প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই পড়া যায়!! আপনি লিখবেন কালজয়ী সব গল্প! সেটাই আপনার প্রতি প্রত্যাশা।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
শক্ত সমালোচনার একটা নরম উত্তর দেই।
কালজয়ী গল্প বলে আলাদা কোন গল্প তৈরী হয় না। ওর জন্য আলাদা কোন ফর্মুলা নেই।
অনেকগুলো আটপৌরে লেখার কোন একটি কোন একসময় ভালো হয়ে যায়। না লিখলে তো বুঝা যায় না কোনটা ভালো হবে।
গল্পের নায়ক আপনে নিজে নাকি?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
গল্প তো গল্পই। লেখককে কি এর নায়ক হতে হবে ?
গল্পের নায়ক আফসার সা'ব।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
হ!
ভালো লাগলো।
..................................................................
ঐ যে হাঁটছি মুদ্রা দোষে নাকটা ঘষে
আড্ডা মানেই সেকেণ্ড হাফে খেলছি সোলো
গুজবো না শার্ট আমার পাড়া স্মার্ট পেরিয়ে
সে রোদ্দুরের স্মরণ সভাও লিখতে হল
ভাল লেগেছে কিন্তু আগে থেকেই আপনার লেখায় আমাদের প্রত্যাশার পারদ অনেক উপরে থাকে! আপনি লেখক বলেই অসাধারণ বললাম না...
হতাশাবাদীর হতাশাব্যঞ্জক হতশ্বাস!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
তর তর করে পড়ার মতন লেখা, মন থেকে হারিয়ে যাওয়া কিছু বাংলাও পেলাম. চিন্তা করছি সময় করে আপনার বাকি লেখাগুলোও পড়ে ফেলবো.
বাকীগুলো একটার চেয়ে আরেকটা দুর্বল।
হ ! কইছে আপনেরে !!
আরিফ ভাই,
অন্যদের কথা জানিনা---আপনার লেখার প্রতি আমার এক ধরনের পক্ষপাত আছে।
আপনি যাইই লিখেন---- কেমন একটা আলাদা টান তৈরি করে দেন।
আমি গল্পের বিষয়বস্তুর চেয়ে গল্প-বলার ভঙ্গিটাকে বেশি গুরুত্ব দেই। লক্ষ বছরের পুরনো এই মানব জমিনে কী আর নিত্য নতুন ফসল ফলে? আমাদের যা আছে, যা সনাতন, অথচ যেগুলো চোখ এড়িয়ে যায় কিংবা বলা ভাল, চোখ এড়িয়ে দিই---সেসবের মাঝে টেনে নিয়ে যেতে পারাটাই ক্ষমতা।
আপনি সেটা খুব ভালই পারেন
প্রণাম আপনার লেখনী কে
ভাল থাকবেন
দয়াদ্র মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
পৃথিবীতে নাকি মৌলিক গল্প লেখা যায় বারো প্রকার। এই সচলেই দুই বছর আগে শোমোচৌ এই ব্যাপারে একটা সুন্দর লেখা দিয়েছিলেন।
বারো প্রকার গল্পই বারোলক্ষবার বলা হয়ে গেছে।
এখন শুধুই বর্ণনা তৈরীর আপ্রান চেষ্টা।
আরিফ ভাই, কবে যে বড় হব আর আপনার গল্পের সমালোচনা করতে শিখব!
আমি আপনার লেখায় কোন স্টান্টবাজি খূঁজে পাইনা, চটকদারিতা নাই,অদেখা পাঠকের অভিব্যক্তি বদলে দেয়ার খায়েশও চোখে পড়েনা, ক্লাসিক লেখক হবার স্পৃহাও দৃশ্যমান না। কিন্তু এক ধরনের গোঁয়ার দায়িত্ববোধ টের পাওয়া যায়। ফাঁকিবাজি গোছের লেখা লিখেন হাতের ফাকে যাদুর কাঠি লুকিয়ে, সে বিষয়ে আমি অনেকের সাথে একমত। কিন্তু কেন লিখেন সেটাও ভেবে দেখার দরকার আছে। আমি মনে হয় কিছুটা আঁচ করতে পারি।
আপনি ধরেছেন সঠিক।
দয়াদ্র মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা।
বাহ !
বিস্তর ভুমিকার পরে যে কথা জানা গেল, আফসার সাহেবের একমাত্র এবার এ লেভেল পরিক্ষার্থী।
একমাত্র কী ? কিছু একটা মিসিং মনে হচ্ছে।
এডিট করেছিলাম দুইবার। কোন একসময় শব্দটা মিসিং হয়েছে। ঠিক করে দিলাম।
মনোযোগী পাঠকের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
ক্যাটেগরীতে 'অতি সাধারণ আটপ্রৌঢ়ে গল্প' লিখেছেন। তাই নিজে থেকে সেটা পূণরোক্ত করলাম না।
এই ধারণা নিয়ে নাটকও দেখেছি একাধিক। বিষয়টা কেমন বিশ্বাসযোগ্য মনে হতো না। অতপর নিজের আশপাশে সেরকম আভাস পেয়ে বুঝেছি এই পৃথিবীতে সবরকমের মানুষই আছে।
ভালো থাকুন আরিফ ভাই।
পৃথিবীতে মানুষের চেয়ে পশুর সংখ্যাই বেশি।
সেটা বিশ্বাস করা বা না করায় পশুদের কিছুই যায় আসে না, এটাই সমস্যা।
আপনাকে ধন্যবাদ।
একটানে পড়লাম, ভালো লাগলো
একটা শব্দ মিসিং, ঠিক করে দিয়েন
"আফসার সাহেবের স্ত্রী। সাথে সেই পিচ্চি কাজের মেয়ে। বিস্তর ভুমিকার পরে যে কথা জানা গেল, আফসার সাহেবের একমাত্র ... এবার এ লেভেল পরিক্ষার্থী। 'মেয়ে' হবেনা?
আরেকটা কথা, উপরের লাইনে জানা যায় আফসার সাহেবের মেয়ে একজন, কিন্তু নীচের লাইন পড়ে খটকা লাগলো
"এটা তুমি টের পাও নাই ? বিকেলে তার বউ আর মেয়েদুটো "
...........................
Every Picture Tells a Story
মনোযোগ দিয়ে পড়ায় কৃতজ্ঞতা।
দুইবার এডিট করতে গিয়ে কিছু ঝামেলা হয়েছে, ঠিক করে দিলাম।
আপনার লেখা বরাবরই পছন্দ করি (হয়তো সবসময় বলা হয়না)। একবার আপনার একটি লেখার জের ধরে আমিও একটু রাজনৈতিক মত জাহির করেছিলাম (তার ফল ভালো হয়নি বলাইবাহুল্য)।
এ লেখাটিও ভালো লেগেছে আপনার লেখার ভংগীর কারণে। অনেকেই হয়তো পড়তে পড়তে ধরে ফেলবেন যে কাহিনীর শেষটি কিরকম হবে। কিন্তু তারপরও আপনি আপনার কলমের জোরে সবাইকে টেনে নিয়ে যাবেনই গল্পের শেষটুকু অবধি। সেখানেই তো আসল মুন্সীয়ানা।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
পড়তে পড়তে শেষ ধরে ফেলা গেলে আমি সেটাতে কোন সমস্যা দেখি না।
গল্পকার ম্যাজিশিয়ান নন , শেষ পর্যন্ত চমক তৈরী করে রাখতে হবে এমনটা আমি মনে করি না।
শিশুরা কিন্তু শোনা গল্পই আরেকবার শুনতে চায়। আমরা পড়া উপন্যাসও আরেকবার পড়ি। অথচ কাহিনী আমাদের সবারই জানা।
এই জায়গায় দুটো বিষয় জরুরী। গল্পের কাহিনী আর গল্পের বিন্যাস।
দুটোতেই আমার খামতি খুব বেশি। বিন্যাস একসময় গিয়ে তাড়াহুড়ো হয়ে যায়, যে কারনে পাঠকের মন্তব্য আসে ,- আরেকটু বড় করা যেত।
এই দোষটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।
আমার কাছে মনে হয়েছে এই গল্পে বিন্যাসটা মোটামুটি আগের সীমাবদ্ধতা থেকে একটু উন্নত হয়েছে।
আর কাহিনীটা বহুল চর্চিত এই দায় স্বীকার করছি।
কল্পনা শক্তি আমার খুব দুর্বল, সমাজ থেকে তাই কাহিনী ধার নেই, আমাদের সমাজে নতুন কাহিনী খুঁজে পাই না , শুধুই চর্বিত চর্বন।
তবু চেষ্টা করে দেখি , যদি কোনদিন কিছুটা হলেও পারি।
...
--------------------------------
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
আমার কাছে কিন্তু গল্প ভাল লাগছে
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
আমার কাছেও মন্দ লাগে নাই।
আরিফ ভাই নিদ্রালু থেকে হাত-পা নাড়াইলে একটা বিশাল ঝাকুনি খাই। সজাগ হয়ে লিখলে কী হবে তাই ভাবতেছি।
সজাগ হইলেই তো চা খাইতে চাইবে , আর চা খাইলে তো আর পরের পর্ব আসবে না ।
অনেকদিন পরে আপনার গল্প পড়লাম। ভালো লাগলো।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
অনেকদিন পরে আপনার দেখা পেয়েও ভালো লাগলো।
আরিফ ভাইর লেখা সব সময়ই ভালো।
আরিফ ভাইর লেখায় যে জিনিস আমার সবচেয়ে বেশী ভালো লাগে সেটা হচ্ছে হঠাত ঘটনার নতুন মোড় নেয়া।
ভালো লেগেছে গল্পটা।
ধন্যবাদ আরিফ ভাই।
গল্পটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আপনার ব্লগে গিয়ে এর আগের গল্পটাও পড়লাম। পরে বাকিগুলোও পড়বো।
আমাদের চারপাশে হরদম ঘটে যাওয়া অথচ তেমন একটা মনোযোগ না পাওয়া, কিছুটা উপেক্ষিত ঘটনাগুলোকে এত সুন্দর ও সহজভাবে আপনার গল্পে তুলে এনেছেন যে খুব ভালো লাগলো।
চমৎকার।
আগে পড়া হয় নি, আজ অন্য এক লেখায় লিঙ্ক দেখে পড়লাম এবং খুবই মুগ্ধ হলাম। এর বিষয় অনেকের পুরোনো লেগেছে দেখলাম, আমার মত হলো দুনিয়ার বাইরের কিছু নিয়ে কল্পবিজ্ঞান হতে পারে, কিন্তু গল্প তো চেনা জগত নিয়েই হয়।
এমন গল্প যদি লিখতে পারতাম!
আমিও অন্য লেখায় কমেন্টে দেখে পড়তে এলাম। অনেক জানা গল্প আবারো নতুন সুরে পড়লাম। ভালো লাগলো।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
নতুন মন্তব্য করুন