১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলো, তখন একটা মজার ব্যাপার দেখা যেত। রাজপথে কর্মসূচি দিত বিএনপি, আর সেই কর্মসূচি সফল করে দিত আওয়ামী লীগ। সেকালে হরতাল ডাকার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা পল্টনে দলীয় অফিসের সামনে জড় হয়ে বসে থাকতো, আর ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে মিছিল করে রাজপথ গরম করে রাখতো আওয়ামীলীগ। সবগুলো মিছিলই ছিল ‘শান্তি মিছিল’, সে মিছিল থেকে গুলিটুলি করে লোকজন মারা হয়েছে একাধিকবার। তা শান্তি বজায় রাখতে একটু গুলিটুলি চালাতে হয় বৈকি, যুদ্ধের পরেই তো শান্তি আসে, অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ণ ফ্রন্ট।
আশা করেছিলাম, এবার নতুন আওয়ামী লীগ সরকারের শুভ বুদ্ধি উদয় হবে, তারা শান্তি-অশান্তি, কোনো মিছিলই করবেন না। বিএনপির যে অবস্থা, এরা নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করার একটা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিই শেষ করতে পারে না, বাংলা মোটরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাপায়, এই দল পুরো ঢাকা শহরে হরতাল পালন করে ফেলবে এমন সাংগঠনিক শক্তি এখন আর তাদের নেই। যে দলের ছাত্র সংগঠনের সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদক মাসের পর মাস ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের দলের কর্মীদের ভয়ে ঢুকতে পারে না, তাদের দ্বারা আর যাই হোক, বড় আকারে হরতাল পালন করা সম্ভব হবে না।
কিন্তু আওয়ামী লীগ হচ্ছে গণমানুষের উপকারি দল, তারা তাদের প্রতিদ্বন্ধিকেও সাহায্য করে, সুতরাং এবারও তারা বিএনপির কর্মসূচিকে আলোচনার জায়গায় সফল ভাবে নিয়ে আসতে পেরেছে। তবে এবার শান্তি মিছিল হয়নি, এবার নেমেছে ‘শান্তিরক্ষী বাহিনী’। এই বাহিনী রাস্তাঘাট অলিতে গলিতে শান্তি রক্ষা করতে করতে মানুষের ঘরবাড়িতেও শান্তি নিশ্চিত করতে গেছে। গলির মধ্যে মির্জা আব্বাসের বাড়িতে ঢুকে তারা এমন শান্তি নিশ্চিত করেছে, টেলিভিশনে এই নির্যাতনের চিত্র দেখেই আমি অসুস্থ বোধ করছি, যাদের উপর এই ‘শান্তি’ প্রয়োগ হয়েছে তাদের অবস্থা না জানি কী !
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গণমাধ্যমে প্রায়ই বিজ্ঞাপন দেন। ‘স্বপ্ন আপনার, বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের,’ অথবা ‘ত্বক আপনার, ফরসা করার দায়িত্ব আমাদের’ ধরনের এসব বিজ্ঞাপনের বেশ চল রয়েছে।
আওয়ামী লীগের এসব মারদাঙ্গা চিন্তাভাবনা যারা করেন, তারা এখন অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বিজ্ঞাপন দিতে পারেন,‘কর্মসূচি আপনার,সফল করার দায়িত্ব আমাদের।’
এবার সবচাইতে মজার ব্যপার হচ্ছে হরতাল নিয়ন্ত্রনে র্যাবকে মাঠে নামানো। বিএনপির নেতারা হয়তো হাতকামড়ে ভাবছে তাদের তৈরী এই সংস্থাটিকে তারা কেনো আওয়ামী লীগের হরতালগুলো মোকাবেলা করতে মাঠে নামায়নি। শান্তিপূর্ণ মিছিলকে তাড়া করে কারো বাড়িতে ঢুকে একজন বৃদ্ধা মহিলার হাতের ফাঁক দিয়ে একজন যুবককে পেটানোর যে দৃশ্য আমি টেলিভিশনে দেখেছি, এমন নির্মমতা শেখার জন্য আলাদা সংস্থার সত্যি প্রয়োজন আছে।
তবে এসব র্যাব পুলিশের চেয়ে বেশি তেলেসমাতি দেখিয়েছে হালজমানার সবচাইতে শক্তিশালী সংগঠন-ছাত্রলীগ।
এটিই বর্তমান বিশ্বের একমাত্র সংগঠন যার কোনো দায়দায়িত্ব কেউ নেয় না। এরা খ্যাপা ষাড়ের মতো রাস্তা দাপড়ে বেড়ায়। আওয়ামী লীগ বলেছে এই দল তাদের অঙ্গ সংগঠন নয়, সুতরাং ছাত্রলীগের কাজকর্মের জন্য তাদেরকে দায়ী করা যাবে না। আইন অনুযায়ী কথাটি সত্যি।
কিন্তু প্রকাশ্য দিবালোকে বড় বড় লাঠি নিয়ে রাজধানী শহরের কেন্দ্রস্থলে তারা যখন একজন সংসদ সদস্য শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির উপর হামলা করে, এবং পুলিশ যখন সেই হামলায় মদদ দেয়, তখন আমাদেরকে কী ভাবতে হবে ? ছাত্রলীগের দায়দায়িত্ব না হয় আওয়ামী লীগের সরকার নিল না, কিন্তু একজন সংসদ সদস্যের নিরাপত্তার দায়িত্বও কি সরকার নেবে না? ঐখানে দায়িত্বপালনকারী পুলিশ কর্মকর্তা আর পুলিশের সামনে মার খাওয়া সংসদ সদস্যের মাঝে, প্রটোকলে কার অবস্থান কোথায়? হয় ছাত্রলীগ, নয় পুলিশ, অন্তত এমপির নিরাপত্তা; কোনো না কোনো দায়িত্ব তো সরকারকে নিতে হবে। ‘ছুটে নাকো হাটে না, কাউকে সে কাটে না’ এমন নির্বিষ অবস্থান নেয়া তো সরকারের পক্ষে সম্ভব না।
একটি কৌতুক
আমার এক সহকর্মী অনুযোগ করে বললেন, এখন আপনার লেখায় কৌতুক দেওয়া হয় না, এর কারন কী ?’
আমি মুচকি হেসে বললাম,‘ আপনাকে একটি কৌতুক শোনাই। আজ পত্রিকার মূল পাতায় খবর ছাপা হয়েছে যে, ছাত্রলীগ এখন স্বতন্ত্র সংগঠন, এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো যোগসূত্র নেই। সুতরাং ছাত্রলীগের গুন্ডামির দায়ভার আওয়ামী লীগ নেবে না।’
তিনি হেসে বললেন,‘ থাক, থাক। কৌতুকের দরকার নেই। কৌতুক তো দেখি এখন সংবাদপত্রের মূল পাতায় ছাপা হয়।’
ঈশপের গল্প
এখন শোনাই একটি ঈশপের গল্প। দুজনের মাঝে কে বেশি শক্তিশালী এ নিয়ে, বাতাস আর সূর্যের মধ্যে তর্ক হচ্ছিল। এমন সময় সামনে দিয়ে একজন পথিক হেটে যাচ্ছিল।
বাতাস বলল, ‘আমি শক্তিশালী। আমি এখুনি তা প্রমান করে দেখাচ্ছি। ’ বাতাস প্রচন্ড বেগে লোকটির উপর দিয়ে বয়ে যেতে লাগলো। লোকটি ভয় পেয়ে নিজের জামাকাপড় আঁকড়ে ধরে দাড়িয়ে পড়ল।
এবার সূর্য বলল, ‘ ছ্যা! ছ্যা! শক্তি কাকে বলে এখন দেখো।’ সূর্য লোকটির গায়ের উপর তাপ বাড়াতে লাগলো। গরমে ঘেমে নেয়ে লোকটি তার শরীরের সব কাপড় চোপড় খুলে ফেলল। সূর্য এবার হেসে বাতাসকে বলল,‘ দেখলে তো শক্তি কারে কয়। একেবারে কাপড় চোপড় খুলিয়ে ছাড়লাম।’
ফুটনোটে শিক্ষা
ঈশপের গল্পের অর্ন্তনিহিত শিক্ষা থাকে। এই গল্পের শিক্ষা কি এ নিয়ে আমি কথা না বাড়াই। শুধু চুপি চুপি বলি, হরতালে র্যাব-পুলিশ-ছাত্রলীগের মাঝে কে বেশি শক্তিশালী এ নিয়ে প্রতিযোগিতা হতে পারে। কিন্তু প্রতিযোগিরা কাকে উলঙ্গ করছে, সময় যাওয়ার আগে এ ব্যাপারে চিন্তা করারও দরকার আছে।
মন্তব্য
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
কাক চক্ষু মুদিয়া তার সম্পদ আড়াল করে, ঠিকাছে। কিন্তু অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?
-----------
চর্যাপদ
-----------
চর্যাপদ
"ছাত্রলীগ গুন্ডামি করছে" এই সত্যটি যে স্বীকার করেছে আসুন তার জন্য শোকর গুজার করি।
খুবই দঃখজনক ঘটনা। আজকে দুপুরে স্থানীয় একটি পত্রিকায় বেশ বড় করে(ছবি সহ !) হরতালের খবরটি এসেছে। যথারীতি নেগেটিভ খবর। তিন বছর পর হরতাল' ব্লা ব্লা ব্লা, সাথে বিনপির এক নেতা ধরাশায়ী জাতীয় ছবি।
বাংলাদেশ হরতাল, মিছিল ছাড়া চলছে এইটা কেমন দেখায়! আম জনতার আলোচনার একটা বিষয়তো দরকার(বিদ্যুত সমস্যা বা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে আর কতই কথা বলা যায়? ) তাই বিরোধী দলগুলানকে ধন্যবাদ, অনেকদিন বাদে দেশের 'ভাবমূর্ত' আবার ফিরিয়ে আনার জন্য আর সেই সাথে সরকার বাহাদুরকেও, 'নতুন বোতলে পুরানো মদ' ঢালার জন্য।
তবে সেনাবাহিনীর প্রধানদের জন্য এইটা একটা চরম উৎসাহব্যাঞ্জক ঘটনা বটে । আর মাত্র বছর দুয়েক পর তেনারা আবার বীর বিক্রমে নুতন ধরনের গনতন্ত্র বাস্তবায়নের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার সমূহ সম্ভাবনা দেখতে পেলেন!
কয়েকদিন আগে জামায়াত বললো, শিবির তাদের না!
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আসলে 'কেউ কারো নয়', লাভ দ্যাটস ক্রাই!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
এ ভ্রমণ, কেবলই একটা ভ্রমণ- এ ভ্রমণের কোন গন্তব্য নেই,
এ ভ্রমণ মানে কোথাও যাওয়া নয়।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমি আগেও বুঝতাম না এখনো বুঝি না
আওয়ামিলীগ আর বিএনপিকে মানুষ কোন বুদ্ধিতে আলাদা দল বলে?
আলাদা দল বলে, কারণ তারা বানান করে পড়তে শিখে গেছে যে !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
লীলেন্দার কমেন্টে লাইক্স দিস
আমি আগেও বুঝতাম না এখনো বুঝি না
আওয়ামিলীগ আর বিএনপিকে মানুষ কোন বুদ্ধিতে আলাদা দল বলে?
_________________________________________
ৎ
_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!
_____________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ভাই রে... ট্যাকা পয়সার যা দাম, তাতে তো জামা কাপড় কেনার উপায় নাই। তাইলে শক্তি পরীক্ষা হবে কি দিয়া?
--- থাবা বাবা!
নতুন মন্তব্য করুন