বিচ্ছিন্ন ভাবনা-২ :ব্লগিং লেখকের জন্য ক্ষতিকর না লাভজনক

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: বুধ, ১৩/০৬/২০০৭ - ১১:৫৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:
ব্লগিং কনসেপ্টটা আমাদের দেশে নতুন।ইনফ্যাক্ট দুনিয়াজুড়েই নতুন একটা ব্যাপার। ওয়েব লগের কল্যানে,হুট করে কোন কিছু লিখে ফেললেই চট করে পাঠকের সামনে চলে আসছে।হোক না খুব ছোট্ট একটা পাঠক গোষ্ঠী,তবু তো পাঠক।আজ যে লেখা ২০ জন পড়ছেন,বছর কয়েক পরে সেই পাঠকই হয়তো ২০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এটি লেখকের মাঝে একধরনের উৎসাহ সৃষ্ঠি করছে।এখানে প্রকাশের ঝামেলা নেই,চিঠি আর ফ্যাক্স করে লেখা পাঠিয়ে কবে সেটা ছাপা হবে সেই অপেক্ষা নেই,তরুন আর নবীন লেখকের জন্য পত্রিকার সম্পাদকের দফতরে গিয়ে তদবিরের ব্যাপার নেই,সুতরাং চাপমুক্ত লেখালেখি।এটা ব্লগিংয়ের একটা ভালো দিক। আরেকটি ভালো দিক হচ্ছে দ্রুত পাঠকের প্রতিক্রিয়া পাওয়া,সেটা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ নেয়া;লেখক নিশ্চয়ই এই প্রক্রিয়ায় চাইলেই লাভবান হতে পারেন,সমৃদ্ধ হতে পারেন। এতো গেল একদিক।অন্যদিকে এতে করে লেখকের মাঝে একধরনের হামবড়া ভাব চলে এসে লেখককে ক্ষতি করতে পারে।উৎসাহ পেতে পেতে অতি আত্মবিশ্বাস লেখককে ধ্বংস করতে পারে।মানহীন গদ্য আর কাব্য লিখতে লিখতে পরিচিত সার্কেলে প্রশংসা প্রাপ্য হতে পারেন।তখন লেখক হয়ে যান কুয়োর ব্যাঙ।নিজেকে মনে করেন উন্নতমানের লেখক,শেষ পর্যন্ত এটা তার ক্ষতি করে,তার অপার সম্ভাবনাকে অংকুরেই বিনষ্ট করে। আরেকটি সমস্যা সৃষ্ঠি হয় সেটি হচ্ছে অতিলেখন সমস্যা।প্রতিটি ইস্যুতে,প্রতিটি ব্যাপারে লেখক তখন লিখতে বসে যান।সেটি তার ভাবনার স্রোতকে তেজস্বী না করে বরং অনেকগুলো সরু নালার মাঝে ছড়িয়ে দেয়। ভয়ংকর সমস্যার সৃষ্টি করে বাক্যগঠন,শব্দ চয়ন,প্রকাশভঙ্গির মতো মৌলিক শৈলীর।যা ইচ্ছা লেখা যায় বলে লেখক তখন শব্দ চয়নে অসংযত হয়ে পড়েন,যা ইচ্ছা বাক্য লিখে বসেন।ব্যকরনকে দৃষ্টিকটুভাবে এড়িয়ে যান অবচেতনে। যেহেতু লেখক আর পাঠকের মাঝখানে সম্পাদক বলে কেউ থাকেন না,তাই লেখকের সেই দীনতা সরাসরি পাঠকে আঘাত করে।পাঠক সাধারনত:লেখার বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেও,লেখকের ব্যকরনগত ত্রুটি নিয়ে কথা বলতে অস্বস্থি বোধ করেন,তাই লেখক এ বিষয়গুলোতে সচেতন হন না,আর দীর্ঘমেয়াদিভাবে নিজের ক্ষতি করেন।

মন্তব্য

ভাস্কর এর ছবি
তর্কের বিষয় হিসাবে আমার ব্যাপারটারে গুরুত্বপূর্ণ লাগছে...তয় আমি লেখার মানের ব্যাপারে কোন দন্ড বসাইতে রাজী না। ----------------------------------------------------- বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!

স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লেখার মানের ব্যাপারে দন্ডটা হয়তো সঠিক কনসেপ্ট নয়।কিন্তু জাঝা সমৃদ্ধ কবিতা লিখে যদি ৫০টা কমেন্ট পাওয়া যায়,তখন বিষয়টি একটু ভাবতে হয় বৈকি।
হিমু এর ছবি
আসলে সমালোচনাকে কিভাবে নেন ব্লগার, সেটা একটা গুরুত্বপুর্ণ ব্যাপার। লেখার বিপরীতে ভালো সমালোচনা আসছে কি না, সেটাও দেখার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। পাশাপাশি আমার মনে হয়েছে একজন ব্লগারের উচিত একজন ব্যস্ত পাঠক হওয়া। এতে করে তিনি নিজেকে অন্যের পাশে রেখে দেখতে পারেন। তবে ফিডব্যাকের ব্যাপারটিই পাল্টে দিয়েছে অনেককিছু। ব্লগিং এর আরেকটা বিপদ আমার ক্ষেত্রে হয়েছে, আমি এখন বড়সড় কিছু লিখতে পারছি না :(( ...।
আরিফ জেবতিক এর ছবি
বড়সড় কিছু লিখতে আসলেই সমস্যা হবার কথা।পাঠক ফোরামে লিখে লিখে আমার এমন মুসিবত দাড়িয়েছে,৭৫০ শব্দের গল্পের উপর লেখা যায় না।যাই লিখি হাজার শব্দ পর্যন্ত ভাবটা টানটান রাখতে পারি না।
উৎস এর ছবি
আমার আগে কোন লেখার অভ্যাস ছিল না। স্কুল কলেজের পরীক্ষার খাতা ছাড়া কোথাও লিখি নি। সে হিসেবে আমার জন্য কিছুটা লাভজনক হয়েছে। কারন বাস্তব কর্মক্ষেত্রে রাইটিং স্কিল খুব জরুরী, যে কাজই করি না কেন। আর তর্কাতর্কি করে আত্মবিশ্বাস তৈরী হয়, আবার ভুল ধরা পড়লে কিভাবে মান সন্মান ঠিক রেখে ভুল স্বীকার করতে হয় এটাও শেখার চেষ্টা করছি। সমস্যা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় এগুলো জানার কোন উপায় নেই। তবে অতিলেখন একটা সমস্যা হতে পারে, কিন্তু কেউ এ সমস্যায় পড়েছে এরকম দেখছি না।
হিমু এর ছবি
আমি রাগ ইমনকে অতিলেখনের সমস্যায় আক্রান্ত বলে মনে করি।
আরিফ জেবতিক এর ছবি
ঠিক@হিমু।আবার কৌশিকের ক্ষেত্রেও এই কথাটি খাটে।
অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
আমার মত নন-লেখকদের সুবিধাই হওয়ার কথা। সামহোয়্যারইনে যে পরিমাণ আউলফাউল যুক্তি দেখায়া পার পাইয়া গেছি, নেক্সট টাইম জিআরই দিলে এনালাইটিক্যাল রাইটিংয়ে চোখ বন্ধ করে 6 এ 6।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

উৎস এর ছবি
আমার জিআরই এনালাইটিকাল ৭৮০/৮০০। সুতরাং তর্কানোর আগে সাবধান।
অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
ওইডা তো পুরানা আমলের কাহিনী। এখন চাপাবাজি সিস্টেম করেছে। যুগের চাহিদা। যুক্তির দিন শ্যাষ! প্রস্তুতি ছাড়াই সাড়ে 5। তা ও ওইডা সামহোয়্যারে ঢোকার আগের স্কোর ;)

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

উৎস এর ছবি
কিন্তু আমার কাছে নতুনটাই কঠিন মনে হয়। সত্যিকার অর্থে গ্র্যাড স্কুলের জন্য নতুনটা বেশী জরুরী।
হযবরল এর ছবি
আমি নতুন আমলের। আমার একটা টপিক আছিলো বোরখা। পক্ষ এবং বিপক্ষের যুক্তি দেখাইয়া একটা পক্ষ নেওয়া। উফ একটা কান্ডই হইছে কিবোর্ডে।
হযবরল এর ছবি
কৌশিক খুব ভাল কবিতা লিখেন। কিন্তু উনি একটা নির্দিষ্ট প্রডাকশন রেইট মেইনটেইন করতে গিয়ে একই কথা বার বার একই ভাবে বলেন। আমি বাজারের ফর্দ টাইপ কিছু পোস্ট দিয়েছি সামহোয়্যারে, এই আমার দৌড়। একটা সার্থক ছোট গল্প লিখবার বাসনা নিয়ে প্রতি রাতে ঘুমাই। একদিন হবে নিশ্চয়ই, ব্লগারুদের সাথে থেকে থেকে।
সুমন চৌধুরী এর ছবি
লেখার মান রাখার দায় শেষ পর্যন্ত লেখকেরই। ....................................... ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি
ধুত্তোরি, এতাক্ষণ ধরে একটা মন্তব্য টাইপ করলাম, হাওয়া হয়ে গেলো। কোনো মানে হয়!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আরিফ জেবতিক এর ছবি
জুবায়ের ভাই,ব্যাপার না। আমি কালকে হিমুর কমেন্টের জবাবটা ৩ বার লিখেছিলাম,তারপর বাদ দিয়েছি।
মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি
দেখি, আবার হয় কি না। যে ভাবনাগুলি আমাকে গত কিছুদিন ধরে খুব ভাবাচ্ছিলো, আরিফ সেই বিষয়ে আলাপের সূত্রপাত করলেন। আমাকে ঠিক লেখক গোত্রভুক্ত করা চলে কি না জানি না। তবে হযবরল যেমন বললেন, একটি সার্থক সৃষ্টিশীল রচনা লেখার বাসনা নিয়ে প্রতি রাতে ঘুমাতে যাই। হয়ে ওঠে না। ব্লগের নগদ মজায় মজে সময় ফুরায়। ঘুমাতে যাওয়ার সময় ওই বাসনার সঙ্গে একাকার হয়ে থাকে কিছু গ্লানি। সকালে আরেকটি দিন শুরু হয় বাসনার নবায়ন করিয়ে। এইভাবে দিন যায়। আসলে আমার ভাবনাগুলি গুছিয়ে লিখতে গেলে মন্তব্য হিসেবে ঠিক মানাবে না বলে মনে হয়। দৈর্ঘ্যের কথাও মনে রাখতে হয়। সুতরাং একটা আলাদা পোস্ট এই বিষয়ে লেখার ইচ্ছে। অবশ্যই আরিফের অনুমতিসাপেক্ষে। ভাবনা ছিনতাইয়ের দায়ে পড়তে চাই না। :)

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আরিফ জেবতিক এর ছবি
বস,এইখানে ভাবনার ছিনতাই পাইলেন কই?আমার ভাবনাটা বললাম,মানে আমার কনফিউশনটা।এবার আপনারটা শুনি।ভিন্ন পোস্টে হলে তো আরো ভালো।
মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি
আরিফ, অনুমতি পেয়ে নিশ্চিন্ত! ;) কিন্তু আজ বোধহয় আর হলো না। লেখাটা পরে লিখতে হবে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আরিফ জেবতিক এর ছবি
হোক।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।