গতকাল আরো ৩১ জন শ্রমিক মারা গেছেন। আশঙ্কা করা যায়, এই মৃতের সংখ্যাটা আরো বেশি হবে, এখনও সব তথ্য পরিস্কার হয় নি। গার্মেন্ট শিল্পের অস্থিরতার জন্য আমরা গার্মেন্ট মালিকরা প্রায়ই বিদেশী শক্তি, ধান্দাবাজ শ্রমিক নেতা, স্থানীয় জুট ব্যবসায়ী চক্রকে দায়ী করি।
কিন্তু হা-মীম গ্রুপে মারা যাওয়া ৩১ জন শ্রমিকের ব্যাপারে কারে দায়ী করা হবে?
দায়ী করা হবে আল্লাহকে, কারন আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়া গেছেন, আমাদের বাকিদের কী করার আছে? আল্লাহ ছাড়া এই মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করা হবে না। অথচ দায়ী করার কথা।
হা-মিম দেশের একটি অনেক বড় গার্মেন্ট গ্রুপ। এই বিশাল গ্রুপটি দেখভালের জন্য ডজন ডজন বড় কর্তা আছে। তাদের বড় বড় ভবন এবং সেই ভবনগুলো আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে ঝকঝক করে। এসব নিরাপত্তা, শ্রমিক কল্যান ইত্যাদি দেখার জন্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার, বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ, বিদেশে প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত লোকজন নিযুক্ত আছে।
তারপরও যখনই আগুন লাগে, তখনই দেখা যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আতঙ্কগ্রস্ত শ্রমিকরা হয় অন্যশ্রমিকের পায়ের নিচে চাপা পড়ে অথবা উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা যান।
তাহলে আসল কারন কী?
আসল কারন হচ্ছে, শ্রমিকের নিরাপত্তার ব্যাপারে আদৌ কোনো সিরিয়াস কাজ কোনো গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতেই হচ্ছে না।
যখনই কাজের প্রেশার থাকে ( কাজের প্রেশার থাকে কারন বেশি কাজ করার ব্যাপারে আমরা মালিকরা খুবই আগ্রহী, উৎপাদন ক্ষমতার চাইতে বেশি কাজ নেয়া এই দেশে রেওয়াজ।) তখনই নিরাপত্তার বিষয়টি পুরো উপেক্ষা করা হয়। মাসিক ফায়ারড্রিল করার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ মাসেই এই ড্রিল করা হয় না।
সবগুলো সিড়ি কারখানা চলার সময় খোলা থাকার কথা থাকলেও, আগুন লাগলেই দারোয়ানরা সিড়ি বন্ধ করে দেয়; এটা নিয়মিত ঘটনা। এটি করা হয় কারন দারোয়ানদেরকে কেউ কখনো জোর দিয়ে বলে নি যে আগুন লাগলে সিড়ি খোলা রাখতে হবে। অগ্নি নিরাপত্তা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য শ্রমিকদের মাঝ থেকে সক্ষমদের নিয়মিত প্রশিক্ষন দেয়ার কথা থাকলেও, এটি প্রায় পুরোপুরি ইগনোর করা হয়।
আর রাষ্ট্রের কথা কী বলব?
আইন আছে ভবনের ছাদে টিনশেড কোনো স্থাপনা থাকতে পারবে না। মাঝখানে এটি নিয়ে বেশ তোড়জোড় চলছিল, সরকার নোটিশ টোটিশ পাঠাচ্ছিল। কিন্তু আমাদের মহান বিজিএমইএ'র চাপে এই উদ্যোগ থমকে গেছে। এখনও ৭ তলার অনুমোদন নেয়া হচ্ছে, তারপর কমদামে ছাদে টিনশেড আরেক তলা তৈরী করা হচ্ছে। এতে বড় সমস্যা হচ্ছে আগুন লেগে যদি নিচে নামার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, ছাদে শ্রমিকরা উঠতে পারছে না, উদ্ধারকাজও চালানো যাচ্ছে না। এই অন্যায় স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার ব্যাপারে রাষ্ট্র ও সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই।
দুর্ঘটনাকে তখনই দুর্ঘটনা বলা সম্ভব যখন সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও নিয়তি আমাদের মাঝ থেকে কাউকে কেড়ে নেয়। কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কেয়ার না করার কারনে যেসব মৃত্যু ঘটে, সেগুলো দুর্ঘটনা নয়। এগুলোকে হত্যাকান্ড হিসেবেই চিহ্নিত করতে হবে।
এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে কি আমরা উদ্ধার পাব না?
এসব প্রাণনাশের জন্য কি আমাদেরকে অনেক বড় কোনো উদ্যোগ নিতে হবে?
নাহ্, তেমন কিছুই করতে হবে না।
ছোট্ট একটা উদ্যোগ নিলেই এসব সমস্যার সমাধান হয়।
একটা গার্মেন্ট মালিককে গ্রেফতার করা হোক, একটা ভবন মালিককে গ্রেফতার করা হোক; আমি লিখে দিচ্ছি, একমাসের মাথায় সব গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি সিধা হয়ে যাবে। এর আগে কিছুই হবে না। নিরাপত্তা ব্যবস্থার নামে এসব চোখ দেখানো ঝকঝকে ফায়ার এক্সটিংগুইশারগুলো খালিই থাকবে, দারোয়ানরা ঠিকই সময়মতো গেট বন্ধ করে রাখবে।
রক্ত মাখানো পোশাক পরা কোনো ব্যবসায়ী গোষ্ঠি আর সরকারের ফ্যাশন হতে পারে না।
মন্তব্য
গ্রেফতার করা হোক। অথবা গণধোলাই।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
"একটা গার্মেন্ট মালিককে গ্রেফতার করা হোক, একটা ভবন মালিককে গ্রেফতার করা হোক; আমি লিখে দিচ্ছি, একমাসের মাথায় সব গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি সিধা হয়ে যাবে। এর আগে কিছুই হবে না।" -
সহমত ...
----------------------------------------------------------------
নির্জলা নৈবেদ্য
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
গ্রেফতার করা হোক ।
নিম্নবিত্ত মানুষের ৩৩ টি প্রান ঝরে যাওয়ায় আমাদের গায়েই লাগছে না!!
এরা যদি মধ্যবিত্ত হত কিংবা সেনাবাহিনীর একজন লোক হলেও তো রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষনা হয়ে যেত (সেরকম ঘটনা আমরা পূর্বে দেখছি)।
"দুর্ঘটনাকে তখনই দুর্ঘটনা বলা সম্ভব যখন সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও নিয়তি আমাদের মাঝ থেকে কাউকে কেড়ে নেয়"
ভাল বলছেন।
গার্মেন্টস সেক্টরকে লালন, পালন, শাসন কোনটাই কোন সরকার করেনি। এই সেক্টরের আয় নিয়ে বাকোয়াজী বাদে কিছু দেখি না। একটা ফ্যাক্টরী কিরকম হওয়া উচিত তার কমপ্লায়েন্স করে আমেরিকানরা। আমাদের সরকারের কোন নজরদারী নাই। কোন নীতিমালা নাই, কোথায় কিরকম ভবনে গার্মেন্টস হতে হবে, কিরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা হতে হবে। কোন রকমের গাইড নাই।
হা-মীম গ্রুপের বিশাল ফ্যাক্টরী হয়তো কমপ্লায়েন্স পাশ করেছে। কিন্তু কমপ্লায়েন্স পাশ করার সময় যে ফ্যাক্টরীর গেট সটান খোলা থাকে অডিটর চলে যাবার পরেই সেই গেট বন্ধ হয়ে যায়। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীকে জেলখানা বানাবার কারণ কি জানতে চেয়েছে কোন সরকার?
তদন্ত করা হোক হা-মীম গ্রুপের সিড়িতে কতোটা তালা খোলা ছিল। কতোটা গেট বন্ধ ছিল।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
এ ভ্রমণ, কেবলই একটা ভ্রমণ- এ ভ্রমণের কোন গন্তব্য নেই,
এ ভ্রমণ মানে কোথাও যাওয়া নয়।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমি যতদুর জানি আপনিও একজন গার্মেন্ট মালিক।আপনি যে সব নিয়ম কানুন গুলোর কথা লিখেছেন তার সবগুলো কি মানা হয় আপনার কারখানাতে?
"একটা গার্মেন্ট মালিককে গ্রেফতার করা হোক, একটা ভবন মালিককে গ্রেফতার করা হোক; আমি লিখে দিচ্ছি, একমাসের মাথায় সব গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি সিধা হয়ে যাবে। এর আগে কিছুই হবে না।" -
এটার সাথে একমত।
আপনার জানা ঠিকই আছে। এবং আমার ফ্যাক্টরিতে আমার জানামতে নিরাপত্তার নিয়মগুলো মানার চেষ্টা করি আমরা। সব যে খুব কঠোর ভাবে মানা হয়, এমন নয়। তবে বেসিক বিষয়গুলো, যেগুলো মেনে চলতে আসলে অভ্যাস ছাড়া আর কিছুরই দরকার হয় না, সেগুলো মানার ব্যাপারে একটা আগ্রহ আছে। সকাল ৮টায় গেট খোলার পরে গেটের তালা জমা দেয়া হবে প্রোডাকশন ম্যানেজারের দপ্তরে, বন্ধ করার আগে আবার তালা চলে যাবে গেটে-এসব ছোটখাটো নিয়মের জন্য তো কোনো ঝামেলা নেই। আমাদের ছোট ফ্যাক্টরি, তাই মেনটেন করা অপেক্ষাকৃত সহজ। দুইবার আগুন লেগেছে, সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে কমবেশি, কিন্তু আল্লাহর রহমতে শ্রমিক-কর্মচারীরা সময়মতো বের হতে পেরেছেন, এদিক দিয়ে কোনো ক্ষয়ক্ষতি নেই।
এখন সমস্যাগুলো বলি:
১. আমার ফ্যাক্টরি আছে শেয়ার বিল্ডিংয়ে( আরো গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি আছে একই ভবনে), যেখানে এতদিন খোলা ছাদ ছিল। কিন্তু বাড়িওয়ালা এখন ছাদে টিনশেড করে অন্য একটি ফ্যাক্টরিকে ভাড়া দিচ্ছে, আমরা প্রতিবাদ করলে লাভ হচ্ছে না, কারন ছাদের মালিক/ভাড়াটিয়া তো আমরা নই।
২. শেয়ার করা ভবনে মোট ৪টি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি আছে। এরমাঝে নিয়মিত ফায়ারড্রিল হয় ২টায়। বাকি ২টাতে ড্রিল হয় না। এখন ধরা যাক, পুরো ভবনে বড় করে আগুন লাগলো, তখন যে ২টা ফ্যাক্টরিতে ড্রিল হয় না, এই ফ্যাক্টরিগুলোর শ্রমিকরাও একই সিড়ি ব্যবহার করে নামবেন। এখন তারা যদি ভীত হয়ে অতিরিক্ত দ্রুততায় নামেন, তাহলে অন্যরা ঠিকই পায়ের নিচে চাপা পড়বেন, প্রশিক্ষন কোনো কাজে আসবে না।
এসব জায়গায় সরকারি হস্তক্ষেপ শক্তভাবে দরকার।
ধন্যবাদ আরিফ ভাই।
আমরা সবাই জানি বুঝি আমাদের কি করতে হবে কিন্তু করি না।
টিভিতে দেখলাম আগুন লাগার কারণে প্রতিষ্ঠান দুই দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, ১৫ আর ১৬ তারিখ। ১৬ তারিখ বিজয় দিবসের বন্ধ না?
গার্মেন্টস মালিকেরা অবতার, তারা আমাদের কৃতার্থ করেছেন ডলার এনে। তাদের কীভাবে গ্রেফতার করি আমরা? সেটা রাষ্ট্রদ্রোহীতা হবে না?
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
ফ্যাক্টরী ডিজাইন করি বলে দেশের গার্মেন্ট সেক্টরে খানিকটা কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে আমার। কাজ করতে গিয়ে একটা অভিজ্ঞতা সব জায়গাতেই কমন ছিল। স্টাফদের নিরাপত্বা থেকে শুরু করে আরাম আয়েশের সব ব্যাবস্থাই তারা করে। ফায়ার স্টেয়ার-ফায়ার এস্টিঙ্গুইশার থাকে। কিন্তু সেগুলো কেউ ব্যাবহার করে না বা করতে পারে না।
একটা ফ্যাক্টরী চালু হবার পর এক বায়ার এসে অভিযোগ করলো যে শ্রমিকদের এন্টারটেইনমেন্ট নেই। সাথে সাথে মালিক পুরো ফ্লোরে মিউজিক সিস্টেম বসিয়ে দিলেন। আমরা যখন ভিজিটে যাই তখন দেখি বাজনা বাজে। এক বার জরুরী কাজে যেতে হল, আর যাবার আগে কাউকে জানানো হয় নি যে আমি ওদের ফ্যাক্টরীতে যাচ্ছি। গিয়ে দেখি বাজনা বন্ধ। জিজ্ঞেস করাতে বুঝলাম যে বাজনা বন্ধই থাকে। কোন ভিজিটর এলে কেবল বাজে।
ফায়ার এস্টিঙ্গুইশার লাগানোর তিন বছরের মাথায় এক দিন গিয়ে হঠাৎ চেক করে দেখি এক বছর আগেই সেটার ডেট এক্সপায়ার হয়ে গিয়েছে!
বায়ারদের দেখানোর জন্য মালিকের ফরমায়েশে ফ্যাক্টরী লাগোয়া কম্পাউন্ডে শ্রমিকদের জন্য ডর্ম ডিজাইন করেছিলাম, সেটা বানানোও হলো, কিন্তু আজ ৪ বছরেও সেখানে কোন শ্রমিককে থাকার অনুমতি দেয়া হয় নি।
ফ্যাক্টরীতে সব ধরনের ব্যাবস্থা করা ছিল, তার পরেও চালু হবার দুই মাসের মাথায় তার ওয়াশিং প্লান্টে আগুন লাগে, কিন্তু কেউ আগুন নেভাতে পারে নি, কারন কেউ যন্ত্র চালাতে যানে না। পুরো প্লান্ট পুরে ছাই। কোন কাগজে বা মিডিয়াতে খবর পর্যন্ত আসে নি।
এই ফ্যাক্টরীর মালিক ৮০ দশকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বাম ছাত্রনেতা!
আর কি বলবো!!!
--- থাবা বাবা!
বলা হয় বাংলাদেশ থেকে এমন একটিও নীলের চালান ইউরোপে যায়নি, যেটাতে কৃষকের রক্তের দাগ লেগে না ছিল! আফসোস, এত বছর পরেও, বাংলাদেশ থেকে আবারও যখন সেই ইউরোপেই কোনো চালান যাচ্ছে, তখনও সেটাতে সেই রক্তের দাগ! এ বার রক্তের দাগ কৃষকের নয়, শ্রমিকের! এবং দায়ী বিদেশি প্রভুরা নয়, আমরা নিজেরাই!! সবার আগে তাই নিজেকেই শত ধিক্কার জানাই!!
কুটুমবাড়ি
কথা সত্য। দারুণ মন্তব্য।
ফাহিম হাসান
পুরোপুরি সহমত। গার্মেন্টস মালিককে গ্রেফতার ছাড়া এর আর কোনো সল্যুশন নাই। কিন্তু এইটা এই বাংলাদেশে হবে এই রকম স্বপ্ন দেখাও এখন কষ্টকর।
অনন্ত
আগুন লেগেছে রক্তে, মাটির গ্লোবে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
লেখাটির সাথে ভীষণ রকমের সহমত। চরম হতাশাজনক। একই ঘটনা বার বার ঘটে যাচ্ছে, কখনো লঞ্চডুবিতে, কখনো আগুনে, কখনো ভবন ধ্বসে, কখনো ট্রেন/বাস দুর্ঘটনায়, কিন্তু কোন পরিবর্তন নেই। মানুষের লাশ আজ সবচেয়ে সহজলভ্য বস্তু।
পুরানো ফ্যাক্টরি বিল্ডিং-এ নতুন করে ফায়ার এস্কেপ করাটা যদি বেশি কষ্টের হয়, তাহলে অন্তত একটা স্মোক ডিটেকটর আর এস্টিঙ্গুইশার তো রাখা যায় খুব সহজেই।
আগুন লাগলে গেট কেন বন্ধ করতে হবে, এইটা আমি বুঝলাম না।
আপনার বক্তব্যের সাথে একমত। কিন্তু এটা সম্ভব নয়...কারণটাও আপনি লিখে দিয়েছেন...
ছাদের টিনশেড স্থাপনা রাখার জন্য যেই সংগঠন সরকারকে চাপ দিতে পারে, সেই সংগঠনের কেউ গ্রেফতার হলে এর পরের আগুনটা সরকারের গদিতে লাগতে পারে।
আমরা নাশকতা আবিষ্কার করতে পারঙ্গম, কিন্তু ক্ষোভের বা দুর্ঘটনার কারণ বের করে দোষীদের শাস্তি দিতে পারি না। ন্যায়-বিচার স্থাপনার তেমন কোনো নজির আমরা দেখাতে পারিনি, শুধু গার্মেন্টস নয়, সমাজের অনেক কিছুতেই।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
সাবেক সরকার মালিকদের খুশি করে গেছেন। এই সরকারও করছে। আগামী সরকারো তাই করবে। দল-মার্কা নির্বিশেষে তারা টাকাওলাদের সেবক। তাই আগুন পোড়া মানুষদের দেখার কেউ নাই।
________________________________________
দেবাশিস মুখার্জি
[db.mukherjee.blog@gmail.com]
বাস্তবে সরকার হয়ত সেটা করতে পারবে না। দুঃখের ব্যাপার হল এধরনের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ কত সহজভাবে পার পেয়ে যায়। ২৩ টা মৃত্যু x ১ লক্ষ টাকা। ‘দানবীর’ হিসাবে ফ্রি মিডিয়া পাব্লিসিটি। আবার দেখলাম সরকার ১০ হাজার করে টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে - যাবতীয় আচারানুষ্ঠানের জন্য। সো নাইস অভ সরকার। কিন্তু মৃত্যুকূপ বানিয়ে অনেকটা ইচ্ছাকৃত মৃত্যুর ব্যবস্থা করা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টাকাটা না নিয়ে জনগনের ট্যাক্সের টাকা থেকে দিয়ে দেয়া।
আমার হেলথ এন্ড সেইফটির ব্যাপারে খুব খুতখুঁতে একটা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করা আদৌ কোন জটিল ব্যাপার না। এমন কী মৃত্যু এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ফায়ার এক্সটিংগুইশার আছে কিনা না সেটাও ব্যাপার না। আগুন লাগলে অ্যালার্ম বাজবে, পরিষ্কার এক্সিট পথ নির্দেশ করা থাকবে, শ্রমিকরা জানবে অ্যালার্ম বাজলে কী করতে হয়, অ্যাসেম্বলি পয়েন্টে জড় হবে – অ্যাজ সিম্পল অ্যাজ দ্যাট। এবং এটার জন্য ব্যাপাক কিছু আয়োজনেরও দরকার নেই। কাজে যোগদানের সময় একটা ওরিয়েন্টেশন এবং ৪/৬ মাসে একটা আধ ঘন্টার ড্রিল। প্রডাকশনে প্রায় কোন ইম্পেক্টই নেই বলা যায়। (তারপর এধরনের ঘটনার প্রেক্ষিতে লস্ট টাইম ইঞ্জুরি বলে একটা ব্যাপারতো আছেই - মালিকরা সেটাও মাথায় রাখে না হয়ত)।
কিন্তু এখন শ্রমিক যদি একটা টিশার্ট নিয়ে যায় এই ভয়ে নেমে আসার সময় গেট বন্ধ করে মেরে ফেলতে হবে এটা সুস্থ মস্তিস্কে চিন্তা করাও বেশ কঠিন মনে হয়। এবং গেট বন্ধ করে মেরে ফেলতে হবে এই ব্যাপারটা বিজিএমইএ, সরকার, মিডিয়া সবাই বছরের পর বছর মেনে নেয়াটাও চমকপ্রদ। অদ্ভুত।
এধরনের ঘটনার জন্য ক্যারোট এন্ড স্টিক দুটাই ব্যবহার করতে হবে হয়ত সরকারকে। এধরনে দূর্ঘটনায় ক্যাসুয়্যাল্টির জন্য খুব চড়া ফাইন/স্যাঙ্কসন। আবার বছরে সবচেয়ে ভাল হেলথ এন্ড সেইফটি্র জন্য পুরস্কার। বিজিএমইএ সরকার যৌথ ভাবে এটা করতে পারে।
এনার্জি সেক্টারে এই ক্যারোট এন্ড স্টিক ভীষণ সফলভাবে বহু দশক থেকে কাজ করে আসছ...।
নতুন মন্তব্য করুন