বইটা শেষ করার পর পপীপ আমাকে বলল, 'কী-ই? কেমন মনে হয়?'
আমি হাসি। জোরালো হাসি নয়, হালকা হাসি।
পপীপ জোর করে কথা আদায় করতে চায়। 'হাসলে হবে না, তোমাকে বলতে হবে।'
আমি বললাম,'জাকির তালুকদার আমার প্রিয় লেখকের তালিকায় আছেন, বেশ ভালো ভাবেই আছেন। সমসাময়িকদের মাঝে যাদের লেখা পড়ে আরাম পাই, সেই তালিকায় জাকির তালুকদার আছেন। তবে তার মুসলমানমঙ্গল পড়ার পরে বিরক্ত হয়েছিলাম। সেটা এই বেলা এসে কাটল।'
পপীপ মনে হয় খানিকটা অবাকই হয়। 'বলো কী? মুসলমানমঙ্গল তোমার ভালো লাগেনি? বেশ সুনাম টুনাম শুনেছিলাম কিন্তু বইটার।'
আমি বলি, 'সুনাম শুনলে আমি কী করব বলো? অন্যদের হয়তো ভালো লেগেছে, আমার ভালো লাগেনি। অন্যের মুখে ঝাল খেয়ে কি ভালো-মন্দ বলব নাকি? নিজে চেখে দেখলাম, ভালো লাগেনি।'
পপীপ বলে, 'আচ্ছা, সে কথা থাক। জাকির তালুকদারের 'পিতৃগণ'নামের এই নতুন উপন্যাসটা,যেটা এবছর, এই ২০১১ সালে বেরিয়েছে, সেটা তাহলে ভালো লাগল কেন সেটা বলো।'
আমি একটু চুপ করে থাকলাম। কেন ভালো লেগেছে, সেটা বলতে গেলে সাতকাণ্ড রামায়ন পড়ে শোনাতে হয়। তার প্রয়োজন দেখি না।তবে পপীপ, যে এই বইটার একটা চরিত্র মাত্র, সে এত সহজে ছাড়বে বলে মনে হয় না।
আমি তাই বলতে শুরু করি,
'পটভূমিটা চমৎকার। হাজার বছর আগে বরেন্দ্রভূমির ভূমিসন্তানরা পরাক্রমশালী পাল রাজাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন নিজেদের স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৩৭ বছর। কিন্তু লড়াইটা শুধু লড়াই নয়, এখানে আরেকটা বিষয় আছে। মানে এই স্বাধীনতা অর্জন করেছিল বঞ্চিত লাঞ্ছিত কৈবর্ত সম্প্রদায়। এই অনার্য গোষ্ঠিরই আমি উত্তরসূরি, এই মাটির ভূমিসন্তান। সুতরাং নিজের ইতিহাস পড়তে ভালো লাগারই কথা।'
পপীপ আমাকে প্যাচে ফেলতে চায়,`নিজের ইতিহাস? বলছ কী? তাহলে তো মুসলমানমঙ্গলও তোমার ভালো লাগার কথা। জন্মসূত্রে তুমি মুসলমান, তাই না? ওটাও তাহলে পিতৃপুরুষের ইতিহাস আর গৌরব কাহিনী।'
আমি একটু দ্বিধায় পড়ে যাই। পপীপ চরিত্রটাকে জাকির তালুকদার খুব শক্ত করে তুলতে পারেননি 'পিতৃগণ' উপন্যাসে। সে কেবলই একজন কবি, কৈবর্ত সম্প্রদায়ের পক্ষে কোনো লেখাপড়া জানা লোক না থাকায় এই পপীপ, যে ছোটবেলা ক্রীতদাস হয়ে চলে গিয়েছিল পাল সাম্রাজ্যের রাজধানীতে, সেখানেই তাকে কৌশলে লেখাপড়া শেখায় মন্দিরের এক সেবাদাসী। সেই পপীপের বর্ণনার সূত্র ধরেই জাকির তালুকদার উপন্যাস লিখেছেন, এর বাইরে পপীপকে খুব শক্তপোক্ত কোনো চরিত্র মনে হয়নি। কিন্তু পপীপই এখন আমাকে যুক্তির জালে আটকাতে চাচ্ছে।
আমি সেই জাল কেটে বেরিয়ে আসতে চাই। 'মুসলমানমঙ্গল হচ্ছে মুসলমানদের জাতীয়তাবাদী ইতিহাস। আজকাল আবার এসব খুব চলছে। মানে মুসলমান নাকি বাঙালি, নাকি দুটোই নাকি কোনটা আগে; এসব আর কি। তবে ধর্মের জাতীয়তাবাদে আমার বিশ্বাস নেই, তাই হয়তো মুসলমানমঙ্গল আমার ভালো লাগেনি। সেই কবে কোন কালে কোন মুসলমান বিজ্ঞানী কী আবিস্কার করেছিলেন, সেই রেফারেন্স দিয়ে মাদ্রাসার ছাত্রদের হয়তো অনুপ্রাণিত করা যায়, কিন্তু আমি সেই জাতিসত্ত্বাটা ঠিক নিজের মনে করি না। আমি ভূকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, তাই পিতৃগণ আমার কাছে অনেক বেশি আপন উপন্যাস মনে হয়।'
'শুধু এটাই? আর কোনো কারণ নেই?' পপীপ জানতে চায়।
'আছে তো। পটভূমিটার কথাই তো তুমি পুরোটা বলতে দিলে না। আসো, আমি বরং জাকির তালুকদারের নিজের মুখেই শোনা যাক পটভূমির খানিকটা। লেখক এই উপন্যাস লেখার কারণ হিসেবে বলছেন,
`আমাদের অধিপতি শ্রেণীর রচিত ইতিহাসে এই মহান বিপ্লব তেমন একটা জায়গা পায়নি বললেই চলে। যেটুকু জায়গা পেয়েছে, সেটাও নিন্দার্থে। যেন সাম্রাজ্যবাদী বহিরাগত আর্য-প্রতিনিধি পালসম্রাটদের বিরোধিতা করে ভূমিপুত্ররা মারাÍক অন্যায় কাজ করেছেন। আমাদের ইতিহাসকাররা প্রত্যেকেই এ ঘটনার কথা জেনেছেন সন্ধ্যাকর নন্দীর ‘রামচরিতম’ কাব্য থেকে। কিন্তু কেউ-ই মনে রাখেননি যে, কবি হিসেবে সন্ধ্যাকর নন্দী যত বড় মাপেরই হয়ে থাকুন না কেন, শ্রেণীগত অবস্থানের কারণে পক্ষপাতদুষ্ট হওয়াটাই ছিল তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক। তিনি ছিলেন পালসম্রাট রামপালের সভাকবি। রামপাল ছিলেন তাঁর পোষ্টা বা প্রতিপালক। সেই কবির কাব্যে রামপাল মহান, অজেয় ও সর্বগুণে গুণান্বিত একজন নৃপতি। অন্যদিকে ভূমিপুত্রদের নেতা দিব্যোক হচ্ছেন একজন ‘কুৎসিত নৃপ’। দিব্যোককে গালি দেওয়া হচ্ছে ‘উপধিব্রতিনা’ বলে; যার অর্থ খলনায়ক। এতেই ক্ষান্ত না দিয়ে তিনি দিব্যোককে দস্যু বলছেন, ভূমিপুত্রদের বিদ্রোহকে বলছেন ‘অলীক ধর্মবিপ্লব’। বলছেন ‘ভবস্য আপদম’। নিজের দেশ নিজের মাটি নিজের আত্মার ওপর যাঁরা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাঁরা এভাবে ইতিহাসে বারবার চিহ্নিত হয়েছেন দস্যু বলে। আর্যদের ইতিহাস, তুর্কি-মোগল-পাঠানদের ইতিহাস, ইংরেজদের ইতিহাস, পাকিস্তানিদের ইতিহাস এই একই কথার প্রতিধ্বনি।'
তো, এখানে জাকির তালুকদার এই ইতিহাসকে পুনর্নিমান করতে চেয়েছেন। তিনি ভূমিপুত্রের উত্তরসূরি হিসেবে ভূমিপুত্রের দৃষ্টি থেকে ঘটনাটি দেখতে চেয়েছেন। এই চেষ্টাটা আমার ভালো লেগেছে।''
আমি এইটুকু বলে থামি। পপীপ হো হো করে হেসে ফেলে।
আমি বলি, 'হাসো কেন?'
পপীপ হাসি থামায়, যদিও তাঁর চোখমুখে হাসি লেগেই থাকে। সে বলে,'তুমি আসলে জাতীয়তাবাদের দৃষ্টি থেকে উপন্যাসটিকে বিচার করতে গেছ। ধু-র, এটা কি সাহিত্যালোচনা হলো? এসব ভক্তি প্রেম নিয়ে তুমি আবার বই আলোচনায় নেমেছ।'
এই তুচ্ছতাচ্ছিল্যটা আমার ভালো লাগে না। আমি বলি,'জাতীয়তাবাদের চোখ থেকে দেখলেই বা ক্ষতি কী?'
সে তর্ক করে,'কিন্তু সেটা তো বইয়ের আলোচনা হলো না।'
আমি বলি, 'হবে না কেন, অবশ্যই হয়। আচ্ছা, জাতীয়তাবাদের আলোচনা না হয় বাদ দাও। উপন্যাস হিসেবেও এই বইটি আমার পছন্দ হয়েছে। সমকালীন এসব উপন্যাস যা লেখা হচ্ছে, প্রায় সবগুলোতেই রেফারেন্সের কপচাকপচি, না হয়েছে উপন্যাস, না হয়েছে ইতিহাসের বই। এই তুলনায় জাকির তালুকদারের এই বইটি উপন্যাসই। এখানে প্রেম আছে, কাম আছে, বিরহ আছে, দ্রোহ আর বেদনা আছে।'
'আর চরিত্রগুলো?' পপীপ উস্কে দেয় আমাকে।
'চরিত্রগুলোর সবগুলো যে খোলতাই হয়েছে এমনটা নয়। মানে শেষের দিকে এসে মনে হয়েছে জাকির তালুকদার লিখতে লিখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তাড়াহুড়ো করেই শেষ হয়ে গেছে। দিব্যোক চরিত্রটা আরেকটু বড় হলেও হতে পারত, যেহেতু ইতিহাস আশ্রয়ী লেখা, সুতরাং প্রথম নৃপতি দিব্যোক আরো মনোযোগ পেতে পারতেন। ভীম চরিত্রটাও ঠিক মতো ধরতে পারলাম না, এর আগেই শেষ কৈবর্ত রাজা যুদ্ধে শহীদ হয়ে গেলেন।'
পপীপ বলে, 'তুমিই না বললে এটা উপন্যাসই হয়েছে। সেক্ষেত্রে দিব্যোকের চরিত্রটা না এনে বরং ভূমিদাসদের চরিত্র, মনে করো এই আমাকে বা আমার বাবা, যে নিজেও একজন ভূমিদাস, সন্তানের জন্মের জন্য আত্মবিক্রয় করেছে সেই চরিত্রগুলোতো ভালো।'
আমি এই দাবিকে অস্বীকার করতে পারি না। 'তা বটে। ভূমিপুত্রদের ইতিহাসে ভূমিপুত্রদের চরিত্রগুলো অনেক ভালোই হয়েছে। বিশেষ করে বট্যপ, মল্ল, দেবদাসী ঊর্ণাবতী এদের অনুভব করা যায়। তাছাড়া ভূমিমালিক রামশর্মা, পাল রাজার মন্ত্রী ভট্টবামন এই চরিত্রগুলো খুব জ্যান্ত ছিল।'
'আর সমাজ জীবনটা?' পপীপ আবারও প্রশ্ন করে।
'সেই সময়ের সমাজ জীবন নির্মানেও জাকির তালুকদার স্বার্থক। বিশেষ করে গাও দেবতা ঘেরা সমাজ জীবন, ভূমিদাস, রাজার সেপাইদের অত্যাচার, মন্দিরের নামে গ্রামের মালিকানা বদল..এগুলো। অর্থকড়ির হিসেবে কার্ষাপন এবং আরো কী কী যেন, এগুলোর ব্যবহার ভালো লেগেছে।'
'ভালো লাগল না এরকম দুয়েকটি কথাও বলো। সব ভালো লাগলে তো হবে না।' পপীপ আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলে।
আমি বলি,'রাজনীতির অংশটুকু আরেকটু বিস্তৃত হতে পারত। পাল রাজা যুদ্ধ করছেন, এই সময়ে দিব্যোক তাঁর রাজধানী ঘেরাও করে দখল করে ফেললেন, এই সময়টুকুর আরেকটু বেশি বর্ণনা আশা করেছিলাম।'
'হু, বুঝতে পারলাম। এখন আমি উঠব।' পপীপ যাওয়ার জন্য উঠে, আমি মনে মনে হাঁপ ছাড়ি।
দরজায় গিয়েও সে কী জানি মনে করে ঘুরে দাঁড়ায়। 'আচ্ছা, এককথায় বলো তো, এই বইটা কি অন্যদের পড়ার জন্য তুমি পরামর্শ দেবে?'
আমি কোনো দ্বিধা না নিয়েই বলি,'অবশ্যই দেব। বরেন্দ্রভূমিতে সংগঠিত হাজার বছরের পুরোনো এই স্বাধীনতার লড়াইটা আমাদেরই ইতিহাস। লেখক এই ইতিহাস স্বার্থকভাবে তার উপন্যাসে আনতে পেরেছেন। এই বইটা পড়লে ইতিহাসও জানা যায়, আবার খুব সুন্দর করে লেখা একটা উপন্যাসও পড়া হয়। জাকির তালুকদারের বর্ণনা ভঙ্গি তো তুমি জানোই। খুবই মিহি বর্ণনা, পড়তে ভালো লাগে।'
পপীপ বলে, 'তাহলে তো বইটা কিনতে হয়। কোথায় পাওয়া যাবে?'
আমি বলি,' বইটি প্রকাশিত হয়েছে রোদেলা প্রকাশনী থেকে। আজিজে নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। ৩০১ পৃষ্ঠার এই বইটির দাম ৩৫০ টাকা। মুদ্রন এবং বাধাইটাও বেশ ভালো। কিনলে লাভই করবে।'
'হু।' মাথা ঝাকিয়ে বলে পপীপ। তারপর দরজা খুলে বেরিয়ে যায়।
মন্তব্য
একটি ভালো বইয়ের ওপর আরো ভালো একটি আলোচনা।
পিতৃগণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে জাকির তালুকদারের পূর্ববর্তী বই মুসলমানমংগল বিষয়েও বলা হলো।
আলোচনার উপস্থাপনা ভঙ্গিটা এক কথায় অসাধারণ। বহুদিন এরকম আকর্ষণীয় বই আলোচনা পড়া হয় নি।
আরিফ জেবতিককে ধন্যবাদ না দিয়ে উপায় নেই। তো দিলাম একটা বড়সড় ধন্যবাদ!
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
বড়সড় ধন্যবাদটা নিলাম।
এত্তো বড় ধন্যবাদ দেয়ার জন্য আপনাকেও একটা ছোটখাটো ধন্যবাদ দিলাম বস।
পাল দের নিয়ে পড়ছি। কতগুলো শব্দ খুব খটকা লাগিয়ে দিচ্ছে। পাল-কম্বোজ-খিলজী-আর্য। এই উপন্যাসটা পড়তেই হবে। এটা বিদেশে পাবো কিভাবে?
হুট করে পড়লে এই শব্দগুলো একটু যন্ত্রনা দেবেই। তবে শব্দগুলো বহুল প্রচলিত, একটু খোঁজ করলেই সব উদ্ধার হয়ে যাবে।
বিদেশে বই পাঠানো এখন ঝামেলার, আমাদের মাননীয় সরকার বাহাদুর টাকা বাড়িয়ে ফেলেছেন। তবু ফরিদের বইমেলাই একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য অবলম্বন।
চমৎকার গ্রন্থালোচনা, একটানে পড়ে ফেললাম। আর আলোচনার ভঙ্গিটাও দারুন।
বইটা কী অনলাইনে পাওয়া যাবে, কেনারতো কোন উপায় নেই আমার?
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
উপায় নাই কেন? অনলাইনে কিনবেন
পিপিদা, অনলাইনে কোথায় বাংলা বই কেনা যায়? অ্যামাজন? দাম কত?
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
http://www.boi-mela.com/
রোদেলা প্রকাশনী নামে কোন প্রকাশনী এই ওয়েবসাইটে নেই। আর এখানকার সার্চ অপশনও কাজ করে না।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
ভাল লাগল!
ধন্যবাদ।
এক কথায় বলতে হয় দারুণ রিভিউ!! পড়তে হবে।
অট: বস আপনাকে ববস এর জন্য কনগ্রাচুলেশনস!!
ধন্যবাদ।
দারুণ লাগলো আলোচনাটা। জাকির তালুকদার পড়া হয় নি। পড়তে হবে।
'মুসলমানমঙ্গল' এর উপর কি সচলে কোন আলোচনা আছে? লিঙ্ক দেয়া যাবে?
সুহান রিজওয়ানের একটা পাঠপ্রতিক্রিয়া আছে সচলে। গুগুলরে জিজ্ঞেস করলে আরো কয়েকটি হাজির করবে।
তবে আলোচনা পড়ে কি আর আসল বইয়ের মজা পাবেন?
বরং আসল বইটাই পড়ে ফেলুন সুযোগ বুঝে।
বইটা পড়া হয়নি
কিন্তু আলোচনা পড়ে এখনই পড়তে ইচ্ছা হচ্ছে
তাহলে তো আলোচনাটা কাজে লেগেছে বলতে হয়।
জাকির তালুকদার সাহেবের 'মুসলমানমঙ্গল' কিন্তু আমার বেশ লেগেছিলো। বইটায় হয়তো রাজনৈতিক-সামাজিক বিশ্লেষণগুলো একটু অতিসরলীকরণ করা হয়েছিলো- কিন্তু আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম এই জাতীয় ইতিহাস আশ্রয়ী উপন্যাস দেখে। কারণ সাম্প্রতিক বাংলাদেশে এইরকম উপন্যাস খুব একটা কেউ লেখেন না। " মুসলমানমঙ্গল" পড়েই আগ্রহী হয়েছিলাম তালুকদার সাহেবের গল্প পড়তে। তার গল্পগুলোও ভালোই লেগেছিলো।
'পিতৃগণ' পড়িনি। কিন্তু এই চমৎকার রিভিউটা পড়ে পড়তে ইচ্ছে করে।
মুসলমানমঙ্গল নিয়ে আপনার একটি আলোচনাও সচলে পড়েছিলাম, মনে পড়ছে। মুসলমানমঙ্গলও কিন্তু প্রশংসিত একটা বই, যদিও আমার কেন জানি ভালো লাগেনি। কেন ভালো লাগেনি, সেটার একটা কারণ খুঁজেছি ছোট্ট করে এই লেখায়।
মুসলমানমঙ্গল ভালো লাগলে পিতৃগণ অনেক বেশি ভালো লাগার কথা আপনার।
রোদেলা প্রকাশনীর বই এখনো বইমেলা ডট কমে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু কোন সুনির্দিষ্ট বইয়ের প্রয়োজন হলে ইনফো@বই-মেলা তে মেইল ছাড়লে সহায়তা করার চেষ্টা করব।
জেবতিক ভাইরে ভুলভুলাইয়া ধুন্ধুমার রিভিউর জন্য ধন্যবাদ।
আপনি যে এখনও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন, সেটাই আমাকে অবাক করে। ধন্যবাদ।
এমন চমৎকার ও অভাবনীয় খোশমেজাজী গ্রন্থালোচনা মন কেড়ে নিল। শুনেছি ইমদাদুল হক মিলনের লেখা 'ভূমিপুত্র' নামে একটি উপন্যাস আছে। সেটির উপজীব্য কি কে জানে!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
'ভূমিপুত্র'কে অনেকেই ইমদাদুল হক মিলনের সেরা কাজ বলে ধরে নেন। অনেককেই বলতে শুনেছি যে মিলন বেঁচে থাকবেন এই উপন্যাসের কারণেই।
তবে ভূমিপুত্রের বিষয় ভিন্ন। পড়ে দেখুন, খারাপ লাগবে না।
ক্রীতদাস মানে হলো যে দাসকে কেনা হয়েছে। বাংলায় মানুষ কেনাবেচার চল কি কোনকালে ছিলো? দাস ছিলো, মন্দিকে সেবাদাসি ছিলো, তাদেরকে উপহার হিসেবে এদিক ওদিক পাঠানোর চল ছিলো এটা জানি। কিন্তু পশ্চিমের দাসপ্রথার চরিত্র কি ওগুলোতে ছিলো?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
জাকির তালুকদার 'ক্রীতদাস' শব্দটিই ব্যবহার করেছেন। যদিও সঠিক হবে, আত্মবিকৃত দাস। 'ক্ষুদ্রঋণ' এর টাকা সংগ্রহ করার জন্য যখন কেউ নিজেকে বিক্রী করে। সাধারণত বাঙলায় এই ধরনের বিক্রী শেষ পর্যন্ত চিরকালীন বিক্রী হিসেবেই এসেছে, কারণ সুদের মারপ্যাচে এই দাসদের মুক্তি পাওয়াটা অসম্ভবই ছিল, বিশেষ করে যেখানে রাজপুরুষরা জড়িত।
পপীপের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছে। তাঁর বাবা আত্মবিক্রী করেন, কিন্তু বাবার শ্রমে ঋণ পরিশোধ হয় না এমনকি সুদটুকুও পুরো পরিশোধ হয় না, এই অজুহাতে পপীপকেও ৭ বছর বয়েসে শ্রমদাস হিসেবে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
এটাই গল্পের কাহিনী।
বাংলাদেশে ক্রীতদাস প্রথা ছিল। ধরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেয়া, খোজা বানিয়ে বিক্রি করা সবই ছিল। বাংলা সাহিত্যে এর কিছু কিছু বর্ণনা পাবেন অমিয়ভূষণ মজুমদারের "মধু সাধু খাঁ" আর শওকত ওসমানের "দুই দুয়ারী"-তে। শওকত ওসমানের ক্ষুদ্রায়তণ উপন্যাসটির নাম নিয়ে একটু সংশয় আছে, তবে নামটা এর কাছাকাছি, তাই খুঁজে পেতে সমস্যা হবার কথা না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মনুসংহিতায় (৮, ৮১৫) তে সাত ধরনের দাসের মধ্যে ক্রিতদাসের উল্লেখ পাই। কিন্তু মনু'র নীতি ভারতে নাকি পারস্য/কাজাখস্তানে বেশী প্রযোজ্য সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে। সে যাই হোক
এখানে পৃ ১৮৫ তে দাস বেচাকেনার দলিলাদির ওপর একটা ছোট আলোচনা পাওয়া যেতে পারে। পাল ও সুলতানি আমলে সংকলিত গুজরাতি তালপাতার বই 'লেখপদ্ধতি' তে কি ধরনের দাস কেনাবেচায় কোন দলিল প্রযোজ্য এবং তাতে কার কার সই-অনুমতি লাগবে এমনকি তার হিসাবরক্ষন কিভাবে করা উচিত, তার আলোচনা আছে। এগুলো থেকে আমার ধারনা হয় ভারতে একটি বাজারভিত্তিক দাসশিল্প বজায় ছিল এবং সেটার একটি আনুষ্ঠানিক কাঠামো ছিল।
ইতিহাসের এই সময়টা নিয়ে সত্যেন সেনের কয়েকটা উপন্যাস আছে। "বিদ্রোহী কৈবর্ত", "পুরুষমেধ" এই দুইটার নাম মনে আছে। আরো একটা ছিলো যেটার নাম মনে করতে পারছি না। "পাপের সন্তান"ও একই পটভূমিতে রচিত কিনা মনে নেই। কেউ কি একটু সাহায্য করবেন। এই বইগুলির সবগুলোই মুক্তধারা বের করেছিলো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পুরুষমেধ আর পাপের সন্তানটা পড়িনি।
বিদ্রোহী কৈবর্তটা পড়েছিলাম অনেক আগে, সেই বইয়ের সঙ্গে জাকির তালুকদারের তথ্যের মিল আছে।
পড়ার তালিকায় আরেকটা বই যুক্ত হলো...
দারুণ লিখেছেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
@ Arif Jebotik, Little Magazine Aboho-er agami songkha Zakir Talukder Songkha hisebe prokasito hobe. Apnar gronthalochonata capte chay
খুব দুঃখ পেলাম এই কথা জেনে যে আজকাল লেখকেরাও ইতিহাসের অ আ ভুলে গেছেন।পাল রাজারা কখনোই আর্য ছিলেন না গোপালের জীবন কাহিনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তিনি ছিলেন বরেন্দ্রর অধিবাসী এবং কখনোই কোন আর্য রাজবংশ থেকে তার আগমন ঘটেনি তিনি এই বাংলা ভুখন্ডেরই বাসিন্দা ছিলেন।
উপন্যাসটি পড়ে যা মনে হয়েছিল, ঠিক সেই কথাগুলোই বলে দিলেন। মনে হয়েছে উপন্যাসটি আরো বড় আরো বিস্তৃত হতে পারত।
আপনার পর্যবেক্ষন অসাধারন! বইটা আগেই পড়া ছিল, দেরীতে হলেও আজ আপনার লেখাটি পড়লাম। শওকত আলী'র প্রদোষে প্রাকৃতজন, সত্যেন সেনের বিদ্রোহী কৈবর্ত বই দুটি পড়েছিলাম আগে। তুলনা করা উচিত নয়, করছিও না, কিন্তু পিতৃগন আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে। আমি আমার পরিচিত সবাইকে পরামর্শ দিয়েছি বইটা পড়তে আর কয়েকজনকে উপহার দিয়েছি ।
নতুন মন্তব্য করুন