কিন্তু মূখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই মমতাকে যে বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে, সেগুলোর কতটুকু সাফল্যের সঙ্গে উৎরাতে পারবেন, সেটাই এই মুহুর্তের বড় প্রশ্ন।
বামবিরোধী ভোটের জয়
পশ্চিমবঙ্গের এই রাজনীতিতে বাম সরকারের বিরুদ্ধে এই নির্বাচনে সুস্পষ্ট কোনো রাজনৈতিক মতবাদ ও কর্মসূচির বিজয় হয়েছে বলে আমার মনে হয়নি। তৃণমূল কংগ্রেসের অর্থনৈতিক ও সামাজিক দর্শন দূর থেকে আমার কাছে স্পষ্ট হয়নি। মমতার পক্ষে বামফ্রন্ট মন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তকে বিপুল ভোটে পরাজিত করা ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সেক্রেটারি জেনারেল
ড. অমিত মিত্রের সাক্ষাতকার গতকাল শুনে আমার মনে হলো, তৃণমূল আসলে অর্থনৈতিক নীতিতে একটি মিশ্র অবস্থান নিতে যাচ্ছে। 'পরিবর্তন' এর স্লোগান তুললেও ঠিক কী পরিবর্তন তাঁরা করতে যাচ্ছেন এ ব্যাপারে তেমন বড় আকারের কোনো পরিকল্পনা তাঁদের আছে বলে মনে হয়নি।
সেক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের এই ভূমিধ্বস বিজয় ( গত নির্বাচনের ৩০ আসনের বিপরীতে এবার ১৮৪ আসন নিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্টতা, জোটের অন্য শরিক কংগ্রেস এবং আরেকটি বামদলের কথা বাদ দিলেও ) আসলে এসেছে বাম বিরোধী ভোটের ঐক্য থেকে।
সাধারণত নির্দিষ্ট ইস্যু ও কর্মপরিকল্পনা বিহীন দল ও নেতার পক্ষে যখন ভোটস্রোত তৈরি হয়, তখন সেই ভোট জোয়ার দ্রুতই হতাশ হয়ে যাওয়ার একটা বড় সম্ভাবনা থাকে।
যদি তা-ই ঘটে থাকে, তাহলে মমতা'র জন্য আগামীতে মূখ্যমন্ত্রীত্ব রক্ষা করা অনেক কঠিনই হবে।
অর্থনীতিই মমতার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ:
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থনৈতিক গতিশীলতা তৈরি করা। প্রায় ২ লাখ কোটি রূপি ঋণগ্রস্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই করুণ। রাজ্যের মোট রাজস্ব আয়ের ৯৬ শতাংশই ব্যয় হয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা মেটাতে। উন্নয়নের জন্য যদি মাত্র বাকি ৪% টাকা হাতে পাওয়া যায় তাহলে রাজ্যের উন্নতি হওয়া বেশ সময়েরই ব্যাপার। মাথা পিছু আয়ের দিক থেকে এই রাজ্য দেশের ১৭টি রাজ্যের মাঝে নবম।
এরকম অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে, যখন ভারতের অর্থনীতি দ্রুতই ভোগবাদিতার দিকে যাচ্ছে, সেখানে যদি দ্রুতই অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করা না যায়, তাহলে মমতার জনপ্রিয়তা দ্রুতই ফুরিয়ে যেতে পারে।
রাজ্যে এই মহুর্তে প্রয়োজন পড়বে অনেক অনেক বেশি বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগ কতটা আকৃষ্ট করতে পারবেন মমতা, সেই প্রশ্ন কিন্তু রয়েই যায়। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে সিন্ধুর- নন্দীগ্রামে যে কাণ্ড তৃণমূল কংগ্রেস করেছে, এতে করে বিনিয়োগকারীরা এই দলের অধীনে বিনিয়োগে কতটুকু আকৃষ্ট হবে, সেটা চিন্তারই কথা। রতন টাটাকে তাড়িয়ে দেয়ার পরে ভারতের বড় বড় শিল্পগ্রুপগুলো এই রাজ্যে বিনিয়োগে কতটুকু উৎসাহিত হবে সেটা সময়ই বলে দেবে।
তবে মমতার জন্য ভালো খবর হচ্ছে, ( সম্ভবত) রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন ড.অমিত মিত্র। এফআইসিসি'র সেক্রেটারি জেনারেল হওয়ার সুবাদে অমিত মিত্রের একটি সর্বভারতীয় যোগাযোগ রয়েছে, বড় বড় শিল্পগ্রুপের কর্ণধারদের সঙ্গে তার রয়েছে উঠাবসা। তাঁর দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রশ্ন উঠে নি। আমেরিকা থেকে অর্থনীতির উপরে পিএইচডি অর্জন করা অমিত মিত্রের দৃষ্টিভঙ্গি আধুনিক বলেই মনে করেন ভারতের ব্যবসায়ী মহল। এখন অমিত মিত্র যদি বাইরের বিনিয়োগ আকর্ষণ করে রাজ্যে শিল্পায়ন করতে পারেন, তাহলেই শুধু মমতার পক্ষে এই অর্থনৈতিক দীনদশা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়, মমতার দল কি কৃষক উচ্ছেদ করে শিল্পস্থাপনের জন্য জমি দিতে পারবে ? যদি তা-ই করতে হয়, তাহলে সিন্ধুর-নন্দীগ্রামের মতো প্রতিরোধ কি তৈরি করবে না বামফ্রন্ট? আর নীতির প্রশ্নেই বা তিনি কী করবেন? আর কৃষক উচ্ছেদ করলে, কৃষক উচ্ছেদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে তার যে ইমেজ অর্জিত হয়েছে, সেই ভাবমূর্তিরই বা কী হবে?
সব মিলিয়ে ব্যাপারটা যে খুব সহজ হবে এমন মনে হচ্ছে না।
মমতার দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ: দল আর সরকার
তৃণমূল কংগ্রেস খুব গুছানো দল নয় এখন পর্যন্ত। এদের অবস্থা আমাদের বিএনপির মতোই, সংগঠন নয়- জনগনের ভোট নির্ভরশীল ব্যক্তি ইমেজের উপর। কিন্তু বিপরীত দিকে বামফ্রন্টের রয়েছে ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন, যা গ্রামের পঞ্চায়েত পর্যন্ত বিস্তৃত।
সুতরাং মানুষের মাঝে মিশে যাওয়ার জন্য বামফ্রন্টের যে পরিমান সহজ রাস্তা আছে, তৃণমূলের পক্ষে সেটি করা শক্তই হবে।
আর সাংগঠনিক কাঠামো শক্ত না হওয়ায়, তৃণমূল কর্মীদের মাঝে দুর্নীতি-মাস্তানিটা বিস্তৃত হওয়ারও একটা সুযোগ রয়ে যায়। যদি তা-ই ঘটতে থাকে, তাহলে দ্রুতই মমতার জনপ্রিয়তার পারদ নিম্নমুখী হবে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
সরকার পরিচালনায় মমতার অভিজ্ঞতা খুব বেশি নয়, তৃণমূলের অন্যান্য নেতাদের মাঝেও খুব যোগ্য ও দক্ষ নেতার সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে প্রায় ৩ যুগ পুরোনো বামফ্রন্ট প্রশাসনের আগ-পাশ-তলায় নিজেদের লোক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সুতরাং বামফ্রন্ট প্রশাসন বনাম তৃণমূলের অনভিজ্ঞ নেতাদের টানপড়েনে সরকারের গতিশীলতা কতটুকু বজায় থাকবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
ঐ আসে মাওবাদীরা:
জঙ্গলমহল খ্যাত অঞ্চলে মাওবাদীদের বিস্তার পশ্চিমবঙ্গের কাছে একটা বড় আশংকার জায়গা। স্মরণ রাখা যেতে পারে যে সত্তর ও আশির দশকে নকশালবাড়ি আন্দোলনেও পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক উত্তেজনার বড় রেশ লেগেছে। মাওবাদীদের দমনে পশ্চিমবঙ্গ ও কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক সহিংস উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন মমতা, এখন তিনি কী করবেন?
দার্জিলিংয়ের আলাদা রাজ্য গঠনের অশান্তি সামলানোর মতো শক্তিশালী দল ও প্রশাসন কি মমতা তৈরি করতে পারবেন ? যদি তা না পারেন, তাহলে রাজ্যকে এগিয়ে নিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হবে তাঁকে, আর যদি জনপ্রিয়তার তুফান একটু স্থিমিত হয়, তাহলে পোড়খাওয়া বামফ্রন্ট নেতারা যে সেখান থেকে দ্রুতই ফায়দা তুলে ফেলবেন, এটা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশের যা জানা উচিত:
পশ্চিমবঙ্গে এতবড় একটি নির্বাচন হয়ে গেল, যার ফলাফল নিয়ে আমরা বাংলাদেশীরাও অনেক আগ্রহ দেখাচ্ছি।
গোটা নির্বাচন দেখে আমাদের আসলে বেশ কিছু জিনিস শেখার আছে। বামফ্রন্ট টানা ৩৪ বছর ধরে ক্ষমতাসীন থাকার পরেও তাঁদের বড় বড় নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস। বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি ঘটনা থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু বড় আকারে বামফ্রন্ট নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সম্পদ অর্জনের কোনো উদাহরণ নেই।
একই অবস্থা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও। নিজের বাড়ি তো দূরের কথা, একটা গাড়িও নেই তাঁর। সততার ক্ষেত্রে তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতাদের কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।
পশ্চিমবঙ্গ এককালে আমাদেরই অংশ ছিল। সেখানে যদি নেতানেত্রীদের মাঝে এই সততার চর্চা চলতে পারে, তাহলে আমাদের নেত্রীপুত্রের কমিশন ব্যবসা আর নেত্রভগ্নির শেয়ার ব্যবসার অভিযোগ আর গুঞ্জনে কেন কানপাতা দায় হয়?
আমরা পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় কত সুবিধাজনক অবস্থায়ই না আছি। আমাদের এখানে মাওবাদী কি গোর্খাল্যান্ড অলাদের আন্দোলন নেই, সাম্প্রদায়িক অশান্তি নেই..শুধু নেতারা যদি আরেকটু কম চোর হতেন, তাহলে হয়তো আমাদের আরো অনেকদূর যাওয়া সম্ভব হতো।
মন্তব্য
৩৪ বছর টানা সরকারে থাকলে যেকোন দলের কিছুটা বিছিন্ন এবং দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকেই এবং তার ফল বাম ফ্রন্ট পেয়েছে তবে তৃণমূল আসলে একটা জগাখিচুরি কোয়ালিসন বাম ফ্রন্ট বিরোধিতা করা ছাড়া এদের আর কোন বিষয়েই একতা নাই এখন যেহেতু সরকারে তাই দেখা যাবে নানা ইস্যুতে খাবলাখাবলী আরম্ভ কর দিবে অচিরেই ইতিমধ্যে ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি জামাত যেমন বিরোধী দল নিধনে মেতে উঠেছিল এরাও সেই কাজটাই করা আরম্ভ করেছে
সর্বনাশ! এ তো দেখি পুরাই বিএনপি-জামায়াত জোট!
৩৪ বছর ধরে একটা দল একনায়কতান্ত্রিক নয়, নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই নির্বাচিত হয়ে আসছে। আর কতো? মোর দ্যান এনাফ, নয় কি? দুনিয়ার সবচেয়ে সেরা শাসনে ও তো ৩৪ বছরে মানুষের অরুচি/পরিবর্তনের অভিলাষ জাগতে পারে, আর এতো রীতিমতো দুঃশাসন( অন্ততঃ শেষ টার্মে)
কিন্তু বামপন্থী দুঃশাসনের বিকল্প হিসেবে যে পরিবর্তন ঘটলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে তার সুফল আসলে কতোটুকু- সিদ্ধান্ত নিতে না হয় আমরা আরেকটু সময় নেই।
আপাততঃ আমার দুপয়সার ভাবনা-
১। পশ্চিমবঙ্গের উপর দিল্লীর নিয়ন্ত্রন বাড়বে, বাংলাদেশের জন্য এটি খুব একটা ভালো কিছু হবেনা।
২। সংখ্যালঘু মুসলমানরা আস্থার সংকটে ভুগবে, আফটার অল বিজেপি'র সাথে জোট গঠনের অতীত অভিজ্ঞতা আছে দিদি'র, যদিও এবার ঘোমটা টেনে মুখে বিসমিল্লাহ ও বলেছেন।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
দিদিকে ভালই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে....
ভালো হলো কি মন্দ হলো সেটা বলা মুশকিল। তবে রাজনীতিতে শক্ত একটা প্রতিদ্বন্দী থাকতে হয়। নাহলে ভুল থেকে শিক্ষা নেবার বিষয়টা ভুলে গিয়ে একদলতন্ত্রের পথ ধরে এগোয় দেশ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
বাম জোটে দূর্ণীতি নাই!
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
টুকে রাখার মত কথা
সিপিএম যে হারবে, তা আগেই বোঝা গেছিল| একটু চোখ কান খোলা রেখে চললেই দেখা গেছে সাধারণ মানুষের কি পরিমাণ ক্ষোভ জমা ছিল| আর সিপিএমের ন্যাতা ক্যাঁতারা যে কি পরিমাণ জ্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল সেটা বোঝা যায় ফল ঘোষণার আগে পরে বিমান বোস ও অন্য নেতাদের তড়্পানোর কথাগুলো শুনলে| ৭৭ এ সিপিএম যা ছিল আর এখন যা হয়েছে দেখলে মাথা ঘুরে যায়| পার্টি অফিসগুলোর ঝাঁ চকচকে হাল ঐ রাস্তায় কৌটো ঝাঁকিয়ে হয়েছে বললে শুধু ঘোড়া কেন ছারপোকারাও হো হো করে হাসবে| খেয়াল করে দেখবেন, সিপিএম ধুয়েমুছে গেলেও বামফ্রণ্টের অন্য শরিকরা কিন্তু সেভাবে ধুয়ে যায় নি|
নিরুপম সেন, অনিল বসু সাঁইবাড়ি খুনের মামলার যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত হয়েই প্যারোলে বেরিয়ে নাম ভাঁড়িয়ে এতদিন চালিয়ে গেল নিরুপম সেন তো দিব্বি শিল্পমন্ত্রী হয়ে কাটাল| দেখা যাক মমতা এদের আবার জেলে ফেরত পাঠাতে পারে কিনা|
আমি ৭৭ এর পালাবদলও দেখেছিলাম আর এটাও দেখলাম| ইচ্ছে আছে বিস্তারিত পোস্ট দেওয়ার| |
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
জলদি দ্যান
খুব ভালো আলোচনা।
বামফ্রন্ট যে এবার ভোটে নাস্তানাবুদ হবে এটা আমরা প্রায় সবাই ধরে নিয়েছিলাম। বিমান বোস এবং অন্ধ পার্টিভক্ত কয়েকজনেরাই কেবল আশা করেছিলেন যে এই দীর্ঘ তিরিশ বছরেও পাবলিকের যথেষ্ট মোহভঙ্গ হয় নি।
পশ্চিমবাংলার প্রত্যেকটা স্তরে সিপিএমই দোর্দণ্ডপ্রতাপ হয়ে বসতে চেয়েছিল, এবং অনেকাংশে সফলও হয়েছিল। একটা লেখায় আনন্দবাজার বলেছিল, “বরং, পশ্চিমবঙ্গ সবিস্ময়ে দেখেছে, কী ভাবে পারিবারিক ঝগড়ার সালিশি থেকে শুরু করে তাৎপর্যপূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত পর্যন্ত সর্বভূতে বিরাজমান সেই এক এবং অদ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান। ‘পার্টি’।” চাকরি পাওয়ার জন্য যেমন পার্টির নেতার সুপারিশ ছাড়া হত না, তেমনই সরকারি দপ্তরে একটা ফাইল পাশ করাতেও পার্টিকে তোষামোদ করতে হত।
কালকেই এখানে সামার প্রোজেক্ট করতে এসেছে কলকাতার একটা ছেলে। তার অন্যান্য কাজগপত্র না থাকায় কোনো পদস্থ অফিসার বা জনপ্রতিনিধির থেকে একটা ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট লাগবে। সে পাড়ার সিপিএম চেয়ারম্যান না কাউন্সিলরের কাছে ঘোরাঘুরি করল বেশ কয়েকদিন, তার কাজটা কিন্তু হল না। তখন সে একদিন মমতার বাড়ি গিয়ে অনুরোধ করল, পাড়ার ছেলে না হলেও কাজটা দ্রুতই হয়ে গেল। (মমতা যেহেতু রেলমন্ত্রী, অতএব সরকারি পদাধিকারী)
এইটা মাসকয়েক আগের ঘটনা। সে সময় পাবলিকে চটে আছে বুঝতে পেরে বুদ্ধবাবু বারবারই দলের কর্মীদের সতর্ক হবার, মানুষের প্রতি দায়িত্বশীল হবার, ক্ষমা চাইবার ইত্যাদি নির্দেশ দিচ্ছেন। কিন্তু তাও যে-কে সেই।
কালকেই আবার পড়লাম, এই সরকারি টালবাহানায় একজন শিক্ষিকাকে কিভাবে হেনস্থা করা হয়েছিল। সত্যি বলতে, এ সব আমাদের ছোট থেকেই নিয়মিত শুনে আসছি। এই এতদিনে, এসব পরিকাঠামো যাদের পরিকল্পনা করেই নষ্ট করা, সে আপদদের বিদায় করা গেল।
এটা খুবই ঠিক বলেছেন যে এটা মূলত বাম-বিরোধী ভোট। ফেসবুকে দুদিন আগেই বলছিলাম, “বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে মমতা ক্ষমতায় আসছেন, কিন্তু এটা প্রো-মমতা ভোটের চেয়েও বেশি, বুশের মতই সিপিএমের স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে মানুষের বিরক্তি। আর তাই মনে হচ্ছে, ৩-৪ বছর পরে ওবামার মতই মমতার প্রতিও আশাভঙ্গের মনোভাবই জমতে থাকবে...”
কথা হল, সিপিএম এত দিন ধরে যে কাজে-অনিচ্ছুক পার্টিভজা লোকজনদের পদ দিয়ে গেছে, দুম করে তো তাদের বরখাস্তও করা যায় না! মমতার চ্যালেঞ্জই হবে তাদেরকে দিয়ে কাজ করাতে পারা।
আরো দেখার ব্যাপার, এই অকর্মণ্যদের অপসারণ করে মমতা কি তৃণমূল-ভজা লোকদেরই বসান, নাকি সাহস দেখাতে পারেন নিরপেক্ষ কিন্তু কর্মঠ লোকেদের বসিয়ে। এটার আশা কিন্তু খুব বেশি দেখি না।
বুশ-বিদায়ের পরে যেমন বহু কোটি ডলারের ঘাটতি নিয়ে ওবামাকে হিমসিম খেতে হচ্ছে, যেটা তাঁর নিজের কোনোই দোষ না, তেমনই হাল মমতারও। অতএব এই বহুমুখী সমস্যা - দীর্ঘ তিরিশ বছর ধরে পুরো সমাজেরই মনোভাবেই ঘুণ ধরিয়ে দেওয়া, সব পরিকাঠামোর বারোটা বাজানো, অকর্মণ্য লোকেদের দিয়ে সব কাজের জায়গা ভরানো, এবং বিশাল ঋণের বোঝা - মমতা সামলাতে পারবেন কিনা তা চিন্তার বিষয়।
তৃণমূলের যে বিশেষ কোনো মতবাদ নেই, তা সত্যি, তবে সেটা চিন্তাজনক বলে মনে হয় না। সমস্যাটা হল, এই দলে এমন প্রচুর লোক এসেছে যারা প্রথমে ছিল সিপিএম বা কংগ্রেসে, নিজেদের মধ্যে খেয়োখেয়ি করে দল ছেড়েছে। তারা পশ্চিমবাংলার কল্যাণ করবে এমন কোনো মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে মোটেই আসেনি। দিদি তাদের সাদরে বরণ করে নিয়েছেন বটে, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে, কিন্তু তাদের দিয়ে করাপশন-হীন কাজ কতটা হবে সন্দেহ।
বুদ্ধ-র ইমেজ ক্লিন, আরো কয়েকজন নেতারও, কিন্তু অনেক টপ মন্ত্রী-নেতারই নামে কিন্তু প্রচুর কথা ওঠে। সরকারি দলের বলেই তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাটামলা তেমন হয় নি। তাবড় গুন্ডাদের আশ্রয় দিয়েও সুভাষ চক্কোত্তি পার পেয়ে গেছেন, উলটে সেটা নিয়ে খবর করায় একটা নিউজ চ্যানেলই বন্ধ হয়ে গেল। তিনি অবশ্য এখন পরলোকে। আর বামফ্রন্টের প্রায় প্রতিটা এমএলএ-কাউন্সিলর-চেয়ারম্যানই দুহাত ভরে লুটেপুটে খেয়েছে। আমাদের পাড়ায় গেলবার যিনি মহিলা কাউন্সিলর হলেন তিনি এক বছরের মধ্যেই জলাজমি বুজিয়ে মার্বেল-বসানো তিনতলা বিশাল ফ্ল্যাট হাঁকিয়ে ফেললেন।
লেখা আর মন্তব্য পড়ে একটা পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেলাম। ধন্যবাদ আপনাদের দুজনকেই
যতদূর জানি "গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বিশ্বের প্রাচীনতম কমিউনিস্ট জোট" হল কেরালায় ইএমএস নাম্বুদ্রিপাদের সরকার। আর একদম উঁচু লেভেলে দূর্নীতি তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও নিচুতে যথেষ্টই আছে -- কৌস্তুভ-দময়ন্তীর মন্তব্যে সহমত।
এখন সেখানে চলছে আজকের শাসকের বিরোধীহীন ভোটের জমানা। রং বদলায়, দিন বদলায় না।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নতুন মন্তব্য করুন