• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

আমাদের ভাষা আমাদের সংস্কৃতি - শেষ পর্ব

আরশাদ রহমান এর ছবি
লিখেছেন আরশাদ রহমান (তারিখ: বিষ্যুদ, ১১/১০/২০০৭ - ১১:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একবার প্রবাসে কোন এক অনুষ্ঠানে পশ্চিম বাংলার এক শিল্পী বলেছিলেন বাংলাদেশের বাঙালিদের গর্ব একুশ যেদিন তাঁরা ভাষার জন্য জীবন দিতেও দ্বিধাবোধ করেনি। বলেছিলেন হিন্দির আগ্রাসনে সেই ভাষার অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে এবং আমাদের এই প্রাণ প্রিয় মাতৃ ভাষাকে হিন্দি আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে হবে। ভাষা সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তারপর তিনি একুশ নিয়ে একটি গান গেয়েছিলেন। অনুষ্ঠানের পরবর্তি গায়িকা বাংলাদেশের বাঙালি, ভারতীয় সেই শিল্পীকে কোনরকম সাধুবাদ না জানিয়ে বলেছিলেন, তিনি শিল্পী সুতরাং তাঁর কোন নির্দিষ্ট ভাষা নেই, তাঁর এবং দর্শক শ্রোতাদের ইচ্ছেমত ভাষাতেই তিনি গাইবেন। তারপর দর্শকদের আনন্দ দিতে হিন্দি গানের সাথে হিন্দি ছায়াছবির অঙ্গভঙ্গি করতেও ছাড়েনি। বাংলাদেশের শুধু শহরেই নয় গ্রামে গঞ্জেও হিন্দির অবাধ বিচরণ। এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে আর কিছুদিন পরে শত ইচ্ছা থাকলেও হিন্দি চর্চা অন্য যে কোন বিদেশী ভাষা-সংস্কৃতির মতই শুধু মাত্র ব্যক্তিগত ইচ্ছানুযায়ী চর্চা করার কথা চিন্তাও করা যাবেনা। কেননা এর চর্চা প্রতিদিন প্রতিনিয়ত আবশ্যিক ভাবেই চলবে। এমন একটি দিন খুঁজে পাওয়া যাবেনা যেদিনটি সম্পুর্ণভাবে হিন্দি প্রভাবমুক্ত।

প্রবাসী বাঙালিরাও হিন্দি প্রভাব মুক্ত নয় বরং তাঁদের অবস্থা আরো জটিল। যে যেই দেশে বসবাস করবে সেই দেশের ভাষা ও সংস্কৃতিই তাঁর প্রধান ভাষা, শিল্প-সংস্কৃতি হওয়াটাই স্বাভাবিক। ব্যস্ততা এবং অবস্থানগত কারণে ফেলে আসা দেশের শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার সময় বের করা অনেক সময় দুস্কর হয়ে দাঁড়ায়। আমার এক ভারতীয় বন্ধুর ছোট্ট ছেলে রোদ্দুর। সবে কথা বলতে শিখেছে। চার মাস কলকাতা বেড়িয়ে এসেছে। অনেক শিশুদের মতই কোক-পেপসি দেখলেই খেতে চায়। রোদ্দুরকে চোখে চোখে রাখতে হচ্ছে যাতে কোক-পেপসিতে চুমুক না দেয়। দরোজার বাইরে রোদ্দুর একটি কোকের কৌটা আবিস্কার করে চুমুকের অপেক্ষায় ওর চোখ দুটো যখন জ্বলজ্বল করছে ঠিক তখনি আমি ওকে বাধা দিলাম। আমি ওকে বলছি কৌটোটা আমাকে দিতে, বলছি কে না কে যেন খেয়ে বাইরে ফেলে রেখেছে ওতে চুমুক দিওনা। আর রোদ্দুর তখন খুব রেগে আমাকে বললো "নেহি"। রোদ্দুর প্রবাসে থেকে নেহি বলতে শিখেনি, শিখেছে পশ্চিম বাংলায় হিন্দির প্রসারতার কারণে। আমার আরেক বাংলাদেশের বন্ধুর বৌ ভারতীয়। পূর্বপুরুষ বাঙালি কিন্তু বড় হয়েছে দিল্লিতে। ও যখন প্রথম প্রথম বাংলা বলতো তখন তাতে হিন্দি শব্দ থাকতো প্রচুর। উচ্চারণের ভিন্নতাতো আছেই। ওর মনের অজান্তেই দুই ভাষার সংমিশ্রন হতো। ওর পরিস্থিতি সম্পুর্ণ ভিন্ন। ওর এই ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা অসচেতনতা থেকে নয়। কিন্তু আমার দেখা সিংহভাগ প্রবাসী বাঙালি বাংলার চেয়ে হিন্দি চর্চাই বেশী করে। বাঙালি মালিকানাধীন দেশীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে থাকে হিন্দি চলচ্চিত্রের নায়ক নায়িকাদের ছবি এবং সারাক্ষন চলতে থাকে হিন্দি গান কিংবা ছায়াছবি। বাড়ীতেও একই অবস্থা। ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে যেটুকু সময় বাসায় কাটানো হচ্ছে তার সিংহভাগ যাচ্ছে হিন্দি ছায়াছবি, হিন্দি নাটক কিংবা হিন্দি গানে। সাত আট বছরের শিশু কন্যা হিন্দি নিম্বুরা গানের হুবুহু রপ্ত করতে পেরেছে এই খবর বলতে চোখ মুখ উজ্জল হয়ে ওঠে গর্বিত পিতা-মাতার। প্রবাসী বাঙালিরা যে ভাবে হিন্দি চর্চা করছে তাতে শিশুরা ভাবছে হিন্দিই তাঁদের ফেলে আসা দেশের পূর্বপুরুষের ভাষা ও সংস্কৃতি।

আমার খুব দুঃখ হয়, খুব ভয় হয় আমাদের বাংলাদেশের বাঙালিদের কথা ভেবে। যখন সহস্র কোটি রোদ্দুর প্রতিনিয়ত হিন্দি ছায়াছবি, নাচ-গান আর নাটকের মাঝে বড় হবে তখন তাঁদের ভাষাকি আমাদের এই বাংলা থাকবে? যখন ঐ রোদ্দুরেরা গল্প কবিতা নাটক লিখবে তা কতটা বাংলা ভাষা, শিল্প-সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হবে তা বোঝার ক্ষমতা আমাদের কারো কি আছে? বর্তমানে যে লেখক, কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী কিংবা নাট্যকার হিন্দি প্রভাবিত তা নিতান্তই অসচেতনার জন্য। কিন্তু আজকের যে শিশু বড় হয়ে গল্প কবিতা নাটক লিখবে এবং তাতে হিন্দির যে প্রভাব পড়বে তার কারণ তাদের পূর্বপুরুষের ধর্মান্ধতা, অশিক্ষা এবং অসচেতনতা। তাঁরা যখন তাঁদের মাতৃভাষায় কথা বলবে তা শুনে হয়তো মনে হবেনা বাংলা। মনে হবে বাংলা নয়, বাংলা এবং হিন্দির মতো কোন এক ভাষা।

এই অশুভ ভবিষ্যত বদলাতে হবে আমাদেরকেই। বদলাতে হবে আমাদের বর্তমান জীবন ধারা। কোন কিছু দেখার বা শোনার নেই বলেই সর্বক্ষন হিন্দি চর্চা করলে চলবেনা। আমাদের শিশুদেরকে জড়াতে হবে বিভিন্ন গঠনমূলক দৈনন্দিন কার্জক্রমে। পিতা-মাতাকে আরো বেশী সময় দিতে হবে তাঁদের সন্তানদেরকে যাতে হিন্দি ছাড়া যদি কিছু দেখার বা শোনার নাই থাকে তাতে অন্তত কিছুটা সময়ের জন্য হলেও হিন্দি প্রভাব মুক্ত থাকা যাবে। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী, নীতি নির্ধারক, নাট্যকার, অভিনেতা-অভিনেত্রী কিংবা ব্যবসায়ীদের উপর এর দায় ভার চাঁপিয়ে দিলে চলবেনা। সচেতন হতে হবে আমাদেরকে। আমাদের শিক্ষা, সচেতনতা এবং ধর্ম নিরপেক্ষতাই তাঁদের অশিক্ষা, অসচেতনতা এবং ধর্মান্ধতায় আঘাত হানবে।


মন্তব্য

দুর্বাশা তাপস এর ছবি

এখানে ধর্ম ব্যাপারটা কেন আসল বুঝলাম না, উর্দু হলেও নাহয় বোঝা যেত। একটু বুঝিয়ে বলবেন কি? অন্যসব ক্ষেত্রে একমত। লোকজন হিন্দি সিনেমা, সিরিয়ালে কি পায় বুঝিনা, আমারতো ওইসব ন্যাকামি মার্কা জিনিস দেখলেই গা জ্বলে।

==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

আরশাদ রহমান এর ছবি

দুর্বাশা তাপস, আমার দেখা কিছু লোক যারা প্রচলিত বাংলা শব্দ ব্যাবহার না করে আরবী এবং কোন কোন ক্ষেত্রে উর্দু শব্দ বলতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করে। আমি যা লিখেছি আত আমার অভিজ্ঞতা থেকে তার আপনার বা অন্য কারো সাথে নাও মিলতে পারে। ধর্ম কেন আসলো দু একটা উদাহরণ দিচ্ছি। যেমন আমি বেশ কয়েখন কে চিনি যারা ধন্যবাদ বলার বদলে যাযাকাল্লাহ বলে। আমি জিজ্ঞেস করেছি ধন্যবাদ বলতে অসুবিধা কি তাঁরা বলেছি ইসলামী রীতি অনুযায়ী তাঁরা ধন্যবাদ না বলে "যাযাকাল্লাহ" বলা উচিত বলে মনে করে। আরেক ভদ্রলোক মিলাদ পড়াতে গিয়ে বলেছিলো "আপনাদের সন্তানেরা যখন প্রথম কথা বলতে শিখে , যখন মা বাবা কিংবা অন্য কোন শব্দ উচ্চারণ করে তখন অনেকেই খুশি হন। কিন্তু মা বাবা ন বলে যদি কোন আরবী শব্দ বলে তাহলে সেইটাই সব চাইতে খুশির"। এই রকম আরো অনেক উদাহরণ আছে

সুজন চৌধুরী এর ছবি

হুম ঠিক।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......

আরশাদ রহমান এর ছবি

ধন্যবাদ সুজন চৌধুরী।

দুর্বাশা তাপস, আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন কিনা জানিনা। আমি কোরান শরিফের বাংলা বেশ কয়টা রাখি মিলিয়ে দেখার জন্য। বাংলা অনুবাদের মধ্যে একা হচ্ছে প্রাক্তন বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের করা সহজ সরল বাংলা অনুবাদ। দু একজন পেয়েছি যারা না পড়ে কোনো রকম ভালো মন্দ বিচার না করে আগে থেকেই ধরে নেয় ঐ অনুবাদ পড়া ঠিক হবেনা।

অয়ন এর ছবি

হাবিবুর রহমানের বইটা আমি পড়েছি। বাংলাদেশের মোল্লাদের ওই বইটা অপছন্দ করার যথেষ্ট কারণ আছে। বইটা এতোই সহজভাবে লেখা যে ম্যানিপুলেট করার কোন সুযোগই নাই। এই কারণে মনে হয় অনেকে ওই বইটার উপর বেজায় ত্যক্ত।

দুর্বাশা তাপস এর ছবি

আপনার কথা ঠিকাছে। আমি বলছিলাম কি, যেহেতু আপনি মূলত হিন্দী ভাষার কথা বলছেন সেক্ষেত্রে হিন্দির সাথে ধর্মটাকে রিলেট করা একটু কষ্টকর হয়ে যায়, এই আরকি। হাবিবুর রহমানের অনুবাদ নাকি বেশ ভাল, বন্ধুদের কাছে শোনা, আমার ঠিক ওই ব্যাপারে আগ্রহ নাই :)।

==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

আরশাদ রহমান এর ছবি

আপানার কথা বুঝতে পেরেছি দুর্বাশা তাপস। ধন্যবাদ আপনাকে।

আরশাদ রহমান এর ছবি

ঠিক বলেছেন অয়ন। ধন্যবাদ।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ইংল্যান্ডে অবস্থা খুবই জটিল ।
ধর্মীয় পরিচয়টাই বড়,জাতিস্বত্বা নয় । বাচচাকাচচারে মুসলমান বানাতেই মা-বাপের যতো প্রানান্ত,বাংগালী পরিচয়েরই দরকার নাই । একদিকে আরবী আরেকদিকে হিন্দী । চমৎকার কম্বিনেশন । সে সাথে আছে পাকিদের সাথে ঘনিষ্ঠতা । এই জেনারেশনের অনেককে দেখছি-ইংরেজীর পর বাংলার নয়,উর্দু-হিন্দীই যেনো দ্বিতীয় ভাষা ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

প্রবাসীদের পোলাপান নিয়া কান্নাকাটির কোন মানে হয় না। তাদের বাপ-মা'র ইমিগ্রেশন সিদ্ধান্তের কারনে তাদের জীবনে আইডেন্টিটি নিয়া নানান তোলপাড়। আমেরিকাতে দেখছি চাইনিজ-কোরিয়ান গোছের সেকেন্ড জেনারেশানের অনেক পোলাপান নিজেদের কিভাবে ব্যানানা হিসেবে ডিফাইন করে (banana - yellow on the outside, white on the inside)। সেরকম উপমহাদেশের পোলাপানের একই প্রবলেম - to be a coconut, or not to be a coconut। আর কোকোনাট কেনো? Coconut - brown on the outside, white on the inside।

বাপ-মা যদি 'বাঙ্গালি হও বাঙ্গালি হও' নিয়া বেশি ঘ্যানর ঘ্যানর করে তার ফলাফল হয় একেক রকম। কোন কোন পোলাপান বিদ্রোহ করে। আরোপিত দেশী পরিচয় অসহ্য তাদের কাছে। আর কেউ কেউ ট্রাই করে কিছু ধইরা রাখার। বিয়া শাদীর সময় বাঙ্গালী অবাঙ্গালী কোন প্রেফারেন্স থাকে না অনেকেরই - মনের মিল হইলেই হইলো। আমার চেনা প্রচুর বাঙ্গালী সেকেন্ড জেনারেশানের পোলাপান ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানী, শাদা, চাইনিজ বিয়া করছে। এবং 'তাদের' পোলাপানের - মানে তৃতীয় জেনারেশানের - কাছে কিছু আশা করাটাই অবান্তর। ইমিগ্রেশান হইলো ওয়ান-ওয়ে স্ট্রিট - একটা দেশে আইসা চাকরি বাকরি করুম, পয়সা বানামু, কিন্তু পোলাপান এইখানে বড় হইয়া আমেরিকান বা বৃটিশ না হইয়া খাস বাঙ্গালী হইবো - এই ধারনাটাই আজগুবি। আইডেন্টিটি ক্রাইসিস-এর চরম আকার ৭/৭ এর লন্ডন বম্বিং মতন ঘটনা।

আর পাকি-ভারতীয় ফ্রেন্ড থাকাটা ওদের কাছে খুবই স্বাভাবিক - সবাই ব্রাউন, সবাই এশিয়ান ভাই ভাই। ৭১ বা ৫২ ওদের কাছে তেমন আবেগের কিছু না। হওয়ারও কথা না। আর ওদের প্রধান মিডিয়াম ঘরে বাইরে, অন্তরে আর বাহিরে একটাই - ইংরেজী। উভয়েরই বাঙ্গালী বাপ-মা, এরকম সেকেন্ড জেনারেশান দম্পতিও প্রধানত ইংরেজীই বলে। হিন্দি বা বাংলা বা আরবী সে যাই হোক - একটা পাতলা আবরণের বেশি কিছু না।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

হাসান মোরশেদ এর ছবি

মুস্তফী সাহেব,আপনার আমার মতো দু একজন বানানা কিংবা কোকোনাট হইতে ঠিক স্বস্তি বোধ করিনা বলেই(ক্রমশঃ বিরল হয়ে যাচ্ছি জেনেও) এইসব নিয়ে ব্লগাব্লগি করি,আরশাদ রহমান পোষ্ট লেখেন তার শংকা জানিয়ে । একে আপনি কান্নাকাটি বলতেই পারেন ।
আপনি যা জানালেন,বাস্তবতা তো তাই । সে আমি ও জানি,আপনি ও জানেন, প্রবাসে যারা আছেন সকলেই জানেন । কেনো অহেতুক কান্নাকাটি? কান্নাকাটি না করে গো উইথ ফ্লো- হয়ে গেলে তো এই সব কথাবার্তারই দরকার নাই ।
তবে প্রশ্ন রাখা যায়,নিজের ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে যদি প্রবাসে এতো সচেতন হওয়া যায়,তাহলে জাতীয় পরিচয় কি দোষ করলো? খ্রীষ্টানদের দেশে নিজেকে মুসলমান বলে আরো বেশী আলাদা করা গেল,ইংলিশের দেশে আমি বাংগালী হতে সমস্যা কি? সন্তানকে রমজান আর ঈদ চেনানো গেলে ৫২,৭১ চেনানো যায় না কেনো? খ্রীষ্টান ইহুদীরা মুসলমানের শত্রু সেই শিক্ষা দেয়া গেলে,আমার ভাষা সংস্কৃতির শত্রু কে সেই শিক্ষা কেনো দেয়া যাবেনা? ধর্মীয় গ্রন্থ মুখস্থ করানো গেলে,জাতীয়তাবাদের ইতিহাস কেনো পড়ানো যাবেনা?

আশা করি কান্নাকাটির কার্যকারন বুঝা যায় :)

-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

হাসান ভাই,

আমার অভিজ্ঞতায় যা দেখছি তাই শুধু বলতে পারি। সেকেন্ড জেনারেশানের যে অসম্ভব ধর্মীয় সচেতনতা বাড়ছে, এইটার নানাবিধ কারন আছে - তার মধ্যে পিতা-মাতার প্রভাবটা গৌণ। হ্যাঁ, বাপ-মা নামাজ কোরান শিখাইতে চায় - এইটা সবাই চায়। কিন্তু ধর্ম নিয়া যে ভয়ানক গোঁড়ামি শুরু হইছে এখানে পোলাপানের মধ্যে - বৃটেনের মুসলমান কিছু মেডিকাল ছাত্ররা কি পাগলামি করতাছে তা নিয়া খুব শিগগিরই লেখতে চাই - এই গোঁড়ামিটা কিন্তু বাপ-মা প্রদত্ত না। এর পিছনে আছে ৯/১১, আছে ইরাক যুদ্ধ, মসজিদ মক্তবে ওয়াহাবি পীর-হুজুরদের তত্‌পরতা, এইখানের নানা ক্যাম্পাসে হিজবুত তাহরীর জাতীয় গ্রুপের ক্রিয়া-কলাপ, ৯/১১ আর ৭/৭ এর পরে মিডিয়ার 'মুসলিম মানেই খারাপ' - এই প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে পোলাপানের রিয়্যাকশন - অনেক অনেক কিছু। পোলাপান এখন ধর্মের ব্যাপারে বাপ-মায়ের থেকা অনেক অনেক বেশী এড্‌ভান্স, অনেক অনেক বেশী সিরিয়াস, অনেক অনেক বেশী গোঁড়া। গ্লোবাল ইসলাম বা উম্মাহ্‌র যে গ্ল্যামার এদের কাছে, বাংলা বা বাঙ্গালীত্বের সেই সমপরিমান আপীল নাই।

এইটা আমার অভিজ্ঞতায় কইলাম। আপনের দৃষ্টিকোণ অবশ্যই ভিন্ন হইতে পারে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

আরশাদ রহমান এর ছবি

ধন্যবাদ হাসান মোরশেদ। আমেরিকা এবং কানাডাতেও একই অবস্থা।

সুবিনয় মুস্তফী, প্রবাসীদের বেলায় কথা ঠিক। যে যেই দেশে থাকে সেই দেশের ভাষা শিল্প সংস্কৃতিই তার প্রধান হয় তা আমার লেখায় বলছি। দুই এক প্রজন্ম পরে যে যেখান থেইকাই আসুকনা কেন পূর্বপুরুষের ভাষা সংস্কৃতি ভুইলা যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মনে রাখার চেষ্টা করাও দোষের কিছু না। যে প্রবাসীরা সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা করে, বাংলা চর্চা করে তাঁদের পোলাপান ঐ দেশীর মত হিইবো জাইনাও করে। আমার প্রবাস জীবন খুব একটা কমনা। পড়শুনা শেষ কইরা দেশের ফিরা গেসি আবার প্রবাসী হইছি ।প্রবাসী হওয়ার কারণ অনেক রকম এবং প্রাবাসে একেকে জনের আচরণও একেক রকম। কিন্তু লেখার মূল বিষয় বাংলাদেশে বসবাস করা বাঙালীগো লইয়া। আমার কাছে মনে হইছে বাংলারে আমার বেশ অবহেলাই করি। ধন্যবাদ।

ঈদের শুভেচ্ছা।

আরশাদ রহমান এর ছবি

হাসান মোরশেদ এর মন্তব্যের সাথে একমত। পুরোপুরি। প্রবাসীদের নিয়ে অন্য সময় লেখার ইচ্ছা ছিলো তবে সুবিনয় মুস্তফী সাহেবের মন্তব্যে হাসান মোরশেদ এর মন্তব্য যথার্থ।

আরশাদ রহমান এর ছবি

সুবিনয় মুস্তফী, একটা ঘটনা শুনেন, এক পিচ্চি বাংলাদেশই ঠাকে প্রবাসী না। বাপ মা নামকরা ইংরাজি ইস্কুলে পড়ায়। পিচ্চির সাথে গল্প করতেছিলাম। কি প্রসঙ্গে জানি আমি ৫৬ সংখ্যাটার কথা বললাম। ঐ পিচ্চি কয় সে ৫৬ কি জানেনা! বলে আমি ইংরেজী পারি আর হিন্দি পারি। আমি কই তুমি হিন্দি পার তো বাংলা পারনা কেন। কয় হিন্দিতো সোজা আমআদের টিচারও হিন্দি পারে। বাংলা পারিনা কারন আমিতো পড়ি ইংলিশ মিডিয়ামে। আমি জানি ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া পোলাপানের সংখ্যা অনেক কম কিন্তু বাচ্চার কথা শুইনা মনে হইলো বাংলা না জানাটা যেন স্ট্যাটাস বাড়ায়। দোষতো বাচ্চার না দোষ বাপ মায়ের অসচেতনতা। আমি আমার চেষ্টা ঠিকি কে যাবি যাতে আমার পোলাপান জানে বাংলা কি। হিন্দি বা অন ভাষা জানাতো ভালো কথা কিন্তউ তা বাংলা বাদ দিয়া জানতে দিমুনা। আর আমাগো দেশের অনেকে হিন্দিটাও ভালো কইরা জানেনা :)

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

একমত। পিতা-মাতার ইচ্ছায় আমিও ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্র ছিলাম - কেজি থেকা একদম ও-লেভেল এ-লেভেল শেষ করা পর্যন্ত। মিডেল ক্লাস বাপ-মার কষ্ট হইছে অনেক - বাকি ভাই বোন বাংলা মিডিয়ামে পড়ছে, কারন এতো টাকা ছিল না। কিন্তু সারা জীবন ইংলিশ বাংলা সব রকম বই পড়ছি দেদারসে - বইমেলা থেকা ব্রিটিশ কাউন্সিল পর্যন্ত দৌঁড়াইতাম ছোটকাল থেকাই। দুঃখজনক হইলেও সত্যি যে বাংলা জানা বা না জানাটা এখন অনেকাংশেই ফ্যামিলি আর স্কুলের ভিতরের কালচারের উপর নির্ভর করে। আর এইটাও ঠিক যে নিজ দেশে ভিনদেশী বানানোর একটা খুব বাজে কারখানা তৈরী হইছে ইংলিশ মিডিয়াম দিয়া - এবং এইখানে সরকার, উপরতালার লোকজন প্রত্যক্ষ পরোক্ষ মদদ দিতাছে। এই নিয়া তাদের কোন শরমও নাই।

-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

আরশাদ রহমান এর ছবি

শরম কেমনে থাকবো ঐটাতো স্ট্যাটাস সিম্বল!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।