ফ্লিকারে ঘাটতে গিয়ে বছর দেড়েক আগে একটা ছবিতে চোখ আটকে গেল। কি সুন্দর রং, কি চমৎকার আলোছায়ার খেলা। ওস্তাদলোকের কাজ ভেবে আর বেশী মাথা ঘামাইনি। তার বেশ ক'মাস পর খেয়াল করলাম অনেকেই এরকম অসাধারন ছবি তোলেন। ছবিগুলোতে কেমন যেন অতি নাটকীয়তার একটা উপস্থিতি থেকে যায়। রহস্যের সমাধান করতে আরও মাস তিনেক লাগলো। অনেক গবেষনার পরে জানা গেল, একটা বিশেষ কায়দায় তোলা এসব ছবি, যাকে সংক্ষেপে বলে HDR।
HDR হল হাই ডাইনামিক রেন্জ এর অ্যাক্রনিম। আমরা চোখে যতো রং আর আলোছায়া দেখি ক্যামেরা তার অনেকটাই দেখতে পায় না কারিগরি সীমাবদ্ধতার কারনে। ৪০ এর দশকে চালর্স উইকফ এই কায়দায় প্রথম ছবি তোলেন এটম বোমার বিস্ফোরনের, যা লাইফ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ছাপা হয়। সফটওয়্যার দিয়ে এই কাজ করার বুদ্ধি আসে ১৯৯৩ সালের দিকে, ২০০৯-এ এসে এটা এখন ছেলেখেলার মতো হয়ে গেছে।
HDR এর ক্যামেরার সীমাবদ্ধতা কাটানো হয় মজার কায়দায়। একটা ছবির জন্য একই দৃশ্যের কমপক্ষে তিনটি, বেশী হলে সাতটি ছবি তোলা হয়। একটি ছবি তোলা হয় সাধারন এক্সপোজারে (মানে সাধারন ছবি তুলতে যতোটা আলো লাগে তা ব্যবহার করে)। বাকি ছবি গুলোর অর্ধেক ওভার এক্সপোজ (+১, +২. +৩ ইত্যাদি) আর অর্ধেক আন্ডার এক্সপোজ (-১, -২, -৩) করা হয়। যদি সাতটা ছবি তোলা হয়, তবে আলাদা আলাদা সাত রকম ঔজ্জ্বল্যের আলো ও ছায়া দিয়ে ছবি তোলা হবে। এতে কি লাভ? সাতটা ছবিতে ক্যামেরা সাতরকম রেন্জ এ আলো-ছায়া দেখতে পারবে, যেটা একটা ছবিতে দেখানো সম্ভব নয়। এবার এই সাতটি ছবিকে ডিজিটালী হিসেব কষে জুড়ে দিয়ে একটি ছবিতে রূপান্তরিত করলে অনেক বেশী আলো-ছায়া (শেড) সমৃদ্ধ ছবি পাওয়া যাবে।
বোঝা গেল না?
চলুন তিনটা ছবি দিয়ে কেমন করে একটা HDR করা যায় দেখে নেই।
এই ছবিটা তোলা হয়েছে সাধারন নিয়মে (ধরি এটা এক্সপোজার ০)
একই ছবি তোলা হয়েছে ছায়া/অন্ধকার রংগুলোকে ধরার জন্য (এক্সপোজার +১)
একই ছবি তোলা হয়েছে অতিউজ্জ্বল রংগুলোকে ধরার জন্য (এক্সপোজার -১)
এবার দেখুন HDR করার পর ছবি কি অসাধারন হাল!
এখন প্রশ্ন হল HDR করতে কি প্রয়োজন?
প্রথমেই লাগবে সফটওয়্যার, সেরা হল ফোটোম্যাটিক্স, পাবেন এখানে। এরপর প্রয়োজন এমন একটা ক্যামেরা যেটাতে এক্সপোজার কমপেনসেশন করা যায় বা ম্যানুয়াল মোডে ছবি তোলা যায়। সেই অপশন না পেলে ম্যানুয়াল মোডে যান। তারপর তিনটি আলাদা আলাদা শাটার স্পীডে ছবি তুলুন (ISO রাখুন ১০০তে) । লক্ষ্যনীয়, প্রত্যেক শাটার স্পীডের মধ্যে দুই ধাপ পার্থক্য থাকতে হবে।
যারা ক্যাননের DSLR বা PowerShot সিরিজের ক্যামেরা ব্যবহার করেন, মেনুতে তারা অটোএক্সপোজার ব্র্যাকেটিং (AEB) বলে একটা অপশন পাবেন। এই অপশন ব্যবহার করতে তিন রকম এক্সপোজার দিয়ে HDR করা সম্ভব। নিকনেও থাকার কথা, ব্যবহার করি না বলে নিশ্চিত করা গেলনা।
তিনটি (দরকারে ৫টি বা ৭টি) ছবি একই ভঙ্গিতে তুলুন, ট্রাইপড ব্যবহার করলে ভালো হয়। এবার এখান থেকে ফাবিও সাসোর টিউটোরিয়াল ফলো করে তৈরি করুন আপনার HDR। উল্ল্যেখ্য এই লেখাটিতে ফাবিওর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
যারা ল্যান্ডস্কেপ এর ছবি তোলেন তাদের অবশ্যই উচিত HDR এ কিছু ছবি তোলা (এটাকে ফাঁকিবাজি ধরার কিছু নাই!)। আকাশে পেঁজা তুলোর মতো নানা রঙের মেঘ কিংবা গোধূলীর লাল কিংবা ভোরের সোনা আলোর হাজারো শেড ছবিতে তুলতে চাইলে এই পদ্ধতির জুড়ি নাই।
আর এই ছবিগুলো পাওয়া ফ্লিকারে। এসব দেখার পরে কি HDR না করে বসে থাকা যায়?
ফোটোম্যাটিক্স এর টিউটোরিয়াল ইউটিউবে
মন্তব্য
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
খুব সুন্দর বর্ণনা। দেখি এরপর একটা এইচডিআর করার চেষ্টা করব। ফাবিওর সাইটের খোঁজ প্রথম পাই আমার ডোমেইনগুলোর জন্য হোস্ট খোঁজার সময়। তারপর সেখানেই ঘাঁটি গাড়ি। তখন এইচ ডি আর দেখে অবাক লাগলেও ক্যামেরা ছিলনা
HDR নিয়ে লেখা আসছে, বুঝেছিলাম আগের পোস্টেই। এটা নিয়ে ম্যাটল্যাবে কাজ করেছিলাম এক কালে। প্রায় তিন বছর আগে হবে হয়তো। নতুন অ্যালগরিদমের খোঁজে গুঁতাগুতি। একটা ভাল ডিভিডি পেয়েছিলাম একটা বইয়ের সাথে। কাজটা শেষ করা হয়ে উঠলো না।
এমনিতে পিপি-বিরোধী হলেও এই দিকে আবার আমি পিপি-র ভক্ত খুব। চোখে দেখা দৃশ্যের সাথে ছবির মিল ঘটানো নিয়ে সে কী উত্তেজনা নিয়ে কাজ করেছিলাম!!
*r
আমার করা একটা জন্তরমন্তর।
হাঁটুপানির জলদস্যু
রঙগুলো চমৎকার আসছে !
----------------------------
--------------------------------------------------------
- ছবি দেইখা মাথা আউলাইয়া গেছে। ক্যামেরা এইবার আমি কিনুমই কিনুম আল্লাহ্ চাহে তো।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
HDR ?
বেশ কয়েকজন সেটা স্বীকার করেছে। পিপি না করলে এমন ছবি শুধু সানফ্লাওয়ারটা হতে পারে, অন্য একটাও না।
উপরে HDR-করা ছবিগুলোতে আলো-ছাঁয়া-রঙের জাদু দেখে আমি পুরা বেদিশ হয়া গেলাম।
-----------------------------
--------------------------------------------------------
আমি ফুটোশপে এইচডিআর কইরতে পারি।
এসব বললে হবে না ভাই, একটা টিউটোরিয়াল ছাড়েন। আচ্ছে GIMP তে HDR করা যায় নাকি? সফটওয়্যারটা আমার পছন্দ হয়েছে।
ধুর াল...
আমি কিছুই পারি না... HDR দেইখা আমার এখন ইচ্ছা হইতেছে পরীক্ষার ইয়ে মাইরা ক্যামেরা নিয়ে বসি।
বাই দ্য ওয়ে, আমার সাইবার শট w50. এক্সপোজার চেঞ্জের অপশন কি আদৌ আছে ? থাকলে কোন টপিকের আন্ডারে থাকবে ?
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
W-50 তে আছে কিনা জানিনা, তবে আমার W-120 তে ম্যানুয়াল এক্সপোজার আছে। এক্সপোজার পরিবর্তনের জন্য শুটিং মোড প্রোগ্রামে (ডায়ালে P for Program) দিয়ে মেনু থেকে EV অপশনে যেতে হবে। ওইটাই ম্যানুয়াল এক্সপোজার।
চমতকার ছবি
ভবিষ্যতে কোন সময় চেষ্টা করব।
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
লোকটা খুবই খারাপ .... এ্যাত কাজের মাঝে এরকম লোভনীয় জিনিষপত্র ছাড়ে ... মনে হয় সব কাজ বাদ দিয়ে আমার বুড়া Powershot A70টা নিয়ে বের হয়ে পড়ি।
অবশ্য পোস্টে কোন তারকা খালি রাখি নাই। আর আপনার প্রথম HDRটা বেশ কিছুদিন আমার অফিসের উবুন্টুর ডেস্কটপ ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
তাই নাকি মিয়াভাই? শাহেদ ভাই এর টা নিয়ে ট্রাই দেন। Powershot A510 আপনারটার চেয়ে ভালো।
আমার একটা ক্যানন পাওয়ার শট আছে। আপনার এই লেখাটা দেখে আমারো এইরকম করতে ইচ্ছা হচ্ছে।
মিয়া আপনার ফ্যান হয়ে যাচ্ছি।
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
দারুন জিনিষ জানলাম ...
আমি HDR বুঝতামনা। মাঝে মাঝে চেষ্টা করেছি, বাস্তব সম্মত হয়নাই, তাই বাদ দিয়েছিলাম। গত শুক্রবারে সোনারগাঁও গিয়েছিলাম আবারো। ফিরে এসে এটা করলাম, কিছুটা পেরেছি।
...........................
Every Picture Tells a Story
ফটোগ্রাফিতে একেবারে নবিস আমি। তারপরও সফ্টওয়ারটি ডাউনলোড করে দেখব, কিছু করতে পারি কি না।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
লেখা সব পড়তাছি। ক্যামেরা কেনার আশা করতে করতে দশ বছর চলে গেল। এখনও ক্যামেরাই কিনতে পারি নাই। সবার দোয়া চাই। সবচেয়ে বড় সমস্যা হইল প্রতিবছর নতুন নতুন চমক নিয়া ডিজিটাল আসছে। আমি যেদিন থেকে আশা করতেছি সেসময় ডিজিটাল এত উন্নতিও করেনি। এখন এসএলআর বাদ। ডিএসএলআরের দিকেই ঝোঁক।
HDR এর কথা জানলাম এই প্রথম।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
এই সিরিজটা প্রথম পাতায় নিয়মিত আসতে থাকলে তো ক্যামেরা না কিনে উপায় থাকবে না দেখছি ।
সফটওয়্যারটা ডাউনলোড করলাম। মোবাইলের ৩.২ মেগা পিক্সেলের ক্যামেরা দিয়ে ১.৫, ১, ০.৫, ০, -০.৫, -১, -১.৫ এক্সপোজারে সাতটা ছবি তুলে এইচডিআর ট্রাই করে দেখলাম। ঘরের মধ্যে তোলা ছবি, তার উপর আবার আমার হাত কাঁপে খুবই। তাই এইচডিআরের মর্ম ভাল বোঝা গেল না। তবে নিঃসন্দেহে কাল ভালভাবে চেষ্টা করব দিনের আলোয় কয়েকটা ছবি তুলে।
সিরিজটার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। খুবই কাজে দিচ্ছে।
সেটাই। আসলে উত্তেজনার বশে করে ফেললাম একটা। করার পর বুঝলাম- যে ছবি তুলেছিলাম, তাতে এইচডিআরের ইফেক্ট পাওয়ার কথা না। আলোছায়া থাকতে হবে। দেখি, কাল আকাশ-রোদ সহ কিছু ছবি তুলে আবার চেষ্টা করে দেখব। "সু'হাস"-এর ছবিগুলো দেখলাম। পুরাই পাঙ্খা!
HDR শিখলাম । আমিও চ্যাষ্টা করুম GIMP দিয়া ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
আহারে, এরা কী যে কয়, বুঝি না কিছু !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আমি ট্রাই করছিলাম কয়েকটা, এত কুৎসিত হইছিল, লজ্জায় ডিলিট করে ফেলছি...
টিউটিরিয়াল টা দেখে ছিলাম আগে। আসলে এটা সরাসরি ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে ৭টি ফটো না তুলেও আপনি ফটোশপ বা গিম্প ব্যবহার করে একটা ইমেজ দিয়েই করতে পারেন। সেখানে ব্রাইটনেস এন্ড কন্ট্রেসের ব্যাপার গুলো একটু ভালোভাবে বুজতে হবে আর কি। তবে একটা ব্যপার আছে, অরিজিন্যাল ফটোর সাথে নরমাল গ্রাফিক্সের তুলনা আসলেই হয়না। তবুও বললাম আর কি!
অরুপ দা কে ধন্যবাদ।
আবার পড়বো কেম্রাটা কিনার পর।
আর জবাব হবে ছবি দিয়ে।
দারুণ সিরিজের জন্য শুভেচ্ছা।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
কি জানি একটা দাঁড়াইল শেষ পর্যন্ত-
ঠুয়া মারা উচিত একটা!! :@:@:@
এই রকম একটা ছবি তুলে আবার বলে "কি জানি একটা দাঁড়াইল"!!
(অপূর্ব!!)
নতুন মন্তব্য করুন