দশ বছর..

অরূপ এর ছবি
লিখেছেন অরূপ (তারিখ: রবি, ২৩/০৯/২০১৮ - ১১:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


দশ বছরে কতো কিছুই না হয়..
বয়স বাড়ে, বেতন বাড়ে, কারও ব্লাড শুগার, কারও ঘুমের বড়ি..

লিখতে গিয়ে বসে আছি, মাথায় ঘুরছে গান, "Ten years come and gone so fast"

---
"ব্রডগেজে দীর্ঘযাত্রায় ট্রেনের দুলুনি খূব বেশি করে টের পাওয়া যায়। দুলুনিতে শুধু বালক কেন, বয়স্কদেরও ঘুম পেয়ে যায়। মাঝেমধ্যে ঘুম ভাঙিয়ে বাবা আমাকে দর্শনীয়গুলো দেখান। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, রাজশাহীর বিখ্যাত চলনবিলের বিশাল বিস্তার। নাটোরে বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা খাওয়া হলো। আবার ঘুম ভাঙলো বাবার ডাকে। চৌকোনা এক ধরনের মিষ্টি কোনো স্টেশন থেকে কিনেছেন, আমাকে খাওয়াবেন। ঘুমচোখে বাইরে তাকাই। জানালার পাশে বসেছি বলে বাইরে মুখ বাড়ালে বাতাসের তীব্র ঝাপটা মুখে লাগে। হাত প্রসারিত করে দিলে বাতাসের তোড়ে হাতটা খুলে যাবে মনে হয়। মিষ্টি মুখে দিয়ে বাইরে মুখ বাড়িয়ে দেখি বেশ বড়ো একটা বাঁক নিচ্ছে ট্রেন। আমি পেছনের সবগুলো বগি দেখতে পাচ্ছি। রোদ পড়ে ট্রেনের ধাতব শরীর চকচক করে। ট্রেনের গতির প্রতিক্রিয়ায় রেললাইনের পাশে ধুলোর ছোটো ছোটো ঘূর্ণি। বালক বিস্ময়-বিহ্বল চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। তখন সে জানে না, এই দৃশ্য তার সারাজীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে। চোখ বুজলে এই ছবি অবিকল দেখবে সে বারংবার।

নিউ ইয়র্কের চলন্ত সাবওয়েতে বসে পুত্রের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, অনেক অনেক বছর পর, যখন বাবা আর কোথাও নেই, এই ট্রেনযাত্রা কি তার মনে পড়বে? যেমন আমার পড়লো?" (অনেককালের পুরনো একটি দিন ফিরে এলো)

ছবি: 
19/03/1970 - 11:51পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

মুস্তাফিজ এর ছবি

জুবায়ের ভায়ের এই বর্ণ্নাটুকু অদ্ভুত।

...........................
Every Picture Tells a Story

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

এই ট্রেনযাত্রা কি তার মনে পড়বে?

নির্দিষ্ট করে এইদিনের ট্রেনযাত্রার কথা হয়ত তার মনে পড়বে না, কিন্তু এইসব ট্রেনযাত্রার সাথে তার বাবার স্মৃতি প্রবলভাবে মিশে থাকবে। মানব স্মৃতির ডাটাবেস সিস্টেম খুব একটা বস্তুনিষ্ঠ বলে মনে হয় না। এই জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তিবর্গের কথা, অতি গুরুত্বপূর্ন ঘটনাবলী, তার অনেক কিছুই আর মনে নেই। কিন্তু পরিস্কার মনে আছে ট্রেনের কামরায় ভিক্ষে করতে আসা এক অন্ধ ভিক্ষুকের অবয়ব এবং কণ্ঠস্বর, হাতকাটা মহাশঙ্কর তেল বিক্রেতা সেই ছেলেটির ছুড়ি দিয়ে অসংখ্যবার কাটা হাতের শুকিয়ে যাওয়া ক্ষত, ইঞ্জিনের ধোঁয়ার কয়লা চোখে পড়া এক বালিকার তারস্বরে চিৎকার এবং সেই অপরাধে তার মায়ের অবিরাম পিটুনি, এ ধরনের আপাত গুরুত্বহীন কত ঘটনাবলী। তবে হ্যাঁ, এইসব গুরুত্বহীন সব ঘটনার স্মৃতির সাথে মিশে আছে এ জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন মানুষটির প্রবল উপস্থিতি। যখনই এরকম একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে, সাথে সাথে চোখের জলে এ কথাও মনে পড়ে যায় যে এই অতি গুরুত্বপূর্ন যাত্রায় বাবা আমাকে তাঁর সঙ্গী করেছেলন।

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

জানতাম,আজ তোমাকে সচলে পাবো। আমি সচলে আসিনা। ওদের তিনজনের না থাকাটা খুব বাজে!

--------------------------------------------------------------------------------

তাসনীম এর ছবি

দশ বছর হয়ে গেল...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সোহেল ইমাম এর ছবি

এই ছোট্ট লেখাটা পড়ার পর সারাদিন মনে হানা দিচ্ছে।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

আয়নামতি এর ছবি

দিন যাপনের নানান ছুতোনাতা এভাবে মনে করিয়ে দেয় হারানো প্রিয় জন। ভালো থাকুন জুবায়ের ভাই।

এক লহমা এর ছবি

শ্রদ্ধা

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

শেষ লাইনটা পড়ে বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠলো। আমি নিজেও সন্তানের দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝে এই কথাটা উচ্চারণ করি।
ওপারে ভালো থাকুন জুবায়ের ভাই!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

কর্ণজয় এর ছবি

তখন সে জানে না, এই দৃশ্য তার সারাজীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে। চোখ বুজলে এই ছবি অবিকল দেখবে সে বারংবার---

নিউ ইয়র্কের চলন্ত সাবওয়েতে বসে পুত্রের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, অনেক অনেক বছর পর, যখন বাবা আর কোথাও নেই, এই ট্রেনযাত্রা কি তার মনে পড়বে? যেমন আমার পড়লো?"
বাক্যটা আসলেই থমকে দেয়। নিজের স্মৃতি মনে পড়ে। যে দৃশ্য আমাদের বারবার মনে পড়ে। তার কিছু কথা শুনেছিলাম আনিস ভাইয়ের মুখে- লেখাটা পড়তে গিয়ে তার কথাও মনে পড়ে গেলো-

অতিথি লেখক এর ছবি

এ জীবনে কিছু মানুষের শূন্যতা পূরণ হবার নয় মন খারাপ

বোকা মেঘ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।