সম্প্রদায়বোধ এবং ধর্ম

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি
লিখেছেন শাহ্ আসাদুজ্জামান [অতিথি] (তারিখ: সোম, ২৬/০১/২০০৯ - ১২:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কথা হচ্ছিল বাঙালী মুসলমানর নামকরণের রীতি নিয়ে। সেখান থেকে সন্তানকে নিজের দলে টানবার প্রসঙ্গটা এল। লেখক অর্ঘ্য বললেন নামের এই রীতিটা সন্তান কে নিজের ধর্মীয় গোত্রে টানার প্রবণতারই ফল। অস্বীকার করিনি, কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল দলে টানবার এই আকাংখাটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। নইলে বিদেশের মাটিতে বসে সন্তানকে আমি বাংলা বলা কিম্বা ভাত খাওয়া শেখাই কেন, যেখানে তার বার্গার-পাস্তা খাওয়া এবং ইংরেজী-ফরাসী বলাটাই স্বাভাবিক?

সন্যাসী আমার এই generalization এ আপত্তি করলেন। বললেন ধর্ম একটি আরোপিত বিশ্বাস, আর খাদ্যাভ্যাস/ভাষা এইগুলো স্বভাবজাত। দুটোকে এক করে দেখা ঠিক নয়। এই খানে একটা তর্কের অবকাশ আছে বলে মনে হয়।

কেবল ধর্মই কি আরোপিত বিশ্বাস? আর ধর্মের মত সম্প্রদায়বোধ কি অন্য ধারণা থেকেও তৈরী হয়না?

৭০০ বছরে বেড়ে ওঠা ধর্ম বিশ্বাস যদি আরোপিত হয়, তবে মাত্র ৩৫ বছরে বেড়ে ওঠা নাগরিকত্ব যে সম্প্রদায়বোধ সৃষ্টি করে, তা কি আরোপিত নয়? আর আরোপিত হলেও বিশ্বের কোন খানে যদি বাংলাদেশের পতাকা দেখি, তবে মনে গর্ববোধ হয় কিনা? যদি বাংলাদেশ বিশ্বকাপে জেতে, তবে পুলকিত হই কিনা? যদি কোন বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়, তাহলে দুঃখিত হই কিনা? ঠিক একই ভাবেই, মুসলমান বলেই পৃথিবীর কোন মুসলমান নির্যাতিত হলে দুঃখ পাই কিনা। কিম্বা নিজ ধর্মীয় কেউ কোথাও পুরস্কার পেলে আনন্দিত হই কিনা?

আমরা সেকুলার রা ধর্মীয় গোত্রবোধকে সেকেলে বলে ভাবি, দোষারোপ করি। প্রশ্ন হল রাষ্ট্রসীমানা ভিত্তিক দেশাত্মবোধ কি একই দোষে দুষ্ট নয়?

আমার কথা হল, যখন একটি বিশ্বাস, মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মের সাথে একীভুত হয়ে যায়, তখন সেটা আর আরোপিত থাকে না, সেটা তার সংস্কৃতির একটা অংশ হয়ে দাড়ায়।

এজন্যই, আমার মা ইলিশ মাছ রাধেন বলেই আমার ইলিশ খাওয়ার অভ্যাস। আবার আমার মা ভোরে উঠে পূজা করেন বা কোরান পড়েন বলেই আমার ঐ ধর্মের প্রতি স্বগোত্রবোধ।

আমার ধারণা অপূর্ণ হতে পারে। আমার নিজেরই অনেক প্রশ্ন আছে। সেজন্যই লেখাটা দিলাম।


মন্তব্য

অনিশ্চিত এর ছবি

আপনার যুক্তিগুলো ফেলে দেবার মতো নয়; কিন্তু সমস্যা হলো- নাগরিকত্ব কিংবা খাবার যে উদাহরণ আপনি দেখিয়েছেন, তার সবগুলোই জাগতিক- পরলোকের সাথে যেগুলোর সম্পর্ক নেই। অপরদিকে ধর্মের মূল সুর পরলৌকিকতার, জাগতিকার সাথে সম্পর্ক যতোটুকু আছে সেটিও পরলোককে কেন্দ্র করেই। প্রশ্ন হচ্ছে, যার আলটিমেট টার্গেট পরলোক, সেটিকে দিয়ে জাগতিক বিষয়গুলোকে সম্পর্কযুক্ত করা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত? এক্ষেত্রে আমি সন্ন্যাসীদার সাথে একমত। জাগতিক বিষয়গুলো তাৎক্ষণিক দরকার বলে সেগুলোর ক্ষেত্রে কিছু স্বভাবজাত প্রবৃত্তির সৃষ্টি হয়; কিন্তু পরলৌকিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে 'আরোপিত' হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।

যাই হোক, আপনার সাথে একমত না হলেও এটুকু বলতে চাই- আপনি খুব চমৎকার ও সংক্ষিপ্তভাবে আপনার যুক্তিগুলো বলতে পেরেছেন, যেটাতে আমি পুরোপুরি অক্ষম। এরকম সরল ভাষায় যুক্তিপূর্ণ লেখা নিয়মিত পড়তে চাই।

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

মোটাদাগে একমত আসাদ জামানের সঙ্গে।
ধর্ম, জাতি, সম্প্রদায় এগুলো সবই ইমাজিনড কমিউনিটি

১. ধর্ম পরকালের জন্য সৃষ্ট নয়। ধর্মের কাজ যে ইহকালেই তার ভূরি ভূরি উদাহরণ তো কয়েক হাজার বছর ধরেই আছে। তার গঠন ইহকালে, প্রয়োগ ইহকালে এবং ফেরেশতা নয় মানুষের জন্যই তা অস্তিত্বমান। হাজার হাজার বছর ধরে শত কোটি মানুষ যার চর্চা ও লালন করে, তার ইহজাগতিক কার্যকারণ থাকবেই। নইলে তা টিকতোই না।

২. ধর্ম অলৌকিক নয়, মেটাফিজিকাল। অর্থাত ধর্মের মধ্যে ইতিহাস, মানুষ, জগত, নৈতিকতা ইত্যাদিকে একটা পরম ধরে নেয়া তাৎপর্য দেয়া হয়, যা প্রমাণিক নয়। এই মেটাফিজিক্সের চর্চাই আমরা করি, যখন কারণ ছাড়া নিজ জাতিকে বেশি ভালবাসি বা উচ্চস্থান দিই। যখন জাতীয় প্রতীক আমাদের আপ্লুত করে, যখন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ত গরম করে দেয়। এখানেই ধর্মের মেটাফিজিক্স আধুনিক ডোমেইনে ঢুকে পড়ে।

২, জাতীয়তাবাদ বা সাম্যবাদেরও পরকাল রয়েছে এবং তার মধ্যেও মেটাফিজিক্স রয়েছে। জাতীয়তাবাদ ও সাম্যবাদেরও প্রয়োজন জাগতিক জীবনের পরের জীবন_ ইতিহাসে ঠাঁই পাওয়ার আকুলতা, রয়েছে শহীদ-পবিত্র প্রতীক, পবিত্র গ্রন্থ (সংবিধান) ইত্যাদি। জাতির নামেই সকল জাতভাই এক বন্ধনে আবদ্ধ। জাতিরও রয়েছে অতীতের স্বর্ণযুগ (সোনার বাংলা, আর্য ভারত, আদি সাম্যবাদ, আব্বাসীয় স্বর্ণযুগ, আদি ইসরায়েল) এবং রয়েছে ভবিষ্যতে তাতে প্রত্যাবর্তনের আশাবাদ (প্রতিশ্রুত পূণ্যভূমি ইজরেল, হিন্দু ভারত, মুসলিম খেলাফত, ভবিষ্যতের সাম্যবাদী সমাজ, মিলেনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোল)। রয়েছে ধর্মের মতোই জাজমেন্ট ডে, যেদিন সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। যেমন ম্যাট্রিক্স ফিল্মের আদি মধ্য ও অন্তিম পর্ব।

৪. অনিশ্চিত বলেছেন,

জাগতিক বিষয়গুলো তাৎক্ষণিক দরকার বলে সেগুলোর ক্ষেত্রে কিছু স্বভাবজাত প্রবৃত্তির সৃষ্টি হয়; কিন্তু পরলৌকিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে 'আরোপিত' হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।

তাতক্ষণিক প্রয়োজন কি প্রবৃত্তিগত হয়? না কি স্থায়ি প্রয়োজনের চর্চাই প্রবৃত্তির অন্তর্গত হয়ে স্থায়িত্ব পায়? এক্ষেত্রে প্রবৃত্তি বলে চিরন্তন কিছুর শরণ নেয়ায় বিপদ আছে। তেমন চিরন্তন কোনো প্রবৃত্তি মানুষের নাই। অন্যদিকে ‌যাকে বলা হচ্ছে আরোপিত, তা-ই দেখা যাচ্ছে বেশি স্বভাবজ। মানুষ স্বতঃষ্ফূর্ত ভাবে ধর্মবিশ্বাস করে, কারণ সমাজ তা স্বতঃষ্ফূর্ত করে নিয়েছে। আবার স্বতঃষ্ফূর্তভাবে তাকে প্রয়োজন মতো বদলেও নিয়েছে।

তাই ধর্মকে যতই আমরা মানুষের সৃষ্ট ইহজাগতিক উপাদান বলে ভাবব, ততই এর গোড়াটা ধরতে পারবো। ধর্ম হয়তো একদিন থাকবে না, কিন্তু মানুষের সামূহিক বোধ, মানুষের সঙ্গে মানুষের, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের মিলনের আকুতি থাকবেই। সেটাই মানুষের অস্তিত্বের মেটাফিজিক্স। এ ছাড়া আমাদের উপায় কী?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধর্ম সংস্কৃতিতে প্রভাব ফেলতে পারে ঠিক ই তাই বলে ধর্মকে সংস্কৃতির অংশ হিসেবে মানতে আমি রাজি নই । খাওয়ার কথাটা যখন উঠছেই তখন বলি, আমি ভাত খাই বলে কেউ বার্গার খেলে তাকে খারাপ বা পাপী ভাবার তো কোন মানে হয়না তাইনা? কিম্বা তাকে ভাত খাওয়াতে বাধ্য করার ও কোন মানে নেই । আবার শুধুমাত্র আমেরিকান হওয়ার কারণে কারও সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরী হওয়াটাও বোধ করি সুখকর না । কিন্তু শুধুমাত্র অন্য ধর্মের অনুসারী হওয়ার কারণে তাকে পাপী বা কাফের ভাবার প্রবণতাটি মোটামুটি সব ধর্মের মানুষের মধ্যেই দেখা যায় । প্রায় প্রতিটি ধর্মই একদিকে যেমন "নিজ নিজ ধর্ম" পালনের কথা বলছে অন্যদিকে ভিন্ন ধর্মাবলম্বিদের দিকে সন্দেহের তীর ছুঁড়ে দিচ্ছে । যা ধর্ম ব্যাপারটিকে ভয়াবহ রকমের আন্তর্দ্বার্ন্ন্দ্বিক ও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে সচেতন মনে ।

অপরদিকে ভাবুন, আমার দেশাত্নবোধ কিন্তু ঐ বার্গার খাওয়া লোকটি বা আমেরিকান লোকটির প্রতি কোন রকম বিদ্বেষ তৈরী করছে না । সুতরাং দুটো ব্যপারকে তো একই মাপকাঠিতে দেখা চলবেনা, তাইনা?!

আবার প্রাকৃতিক প্রবৃত্তির কথাই যদি আসে, তবে দেখুনতো প্রাণীজগতে আর কোন প্রাণীর ধর্ম নামক কিছু আছে কিনা? খাদ্যাভ্যাস ও স্বজাতিপ্রীতি কিন্তু ঠিক ই আছে !

জানিনা ভাই, এই বিদঘুটে জিনিসটা নিয়ে যখনই ভাবতে বসি সবই এলোমেলো হয়ে যায় । এইবার চুপ যাই । আপনারা বলেন, আমি শুনি !!

রণদীপম বসু এর ছবি

অবশ্যই ধর্ম একটা ইহজাগতিক বিষয়। ইহজাগতিকতার প্রয়োজনেই ধর্ম নামক একটা ধারণা প্রবর্তন করা হয়েছে। সহজ চ্যালেঞ্জে যাতে এটা ধ্বসে না পড়ে সে জন্য একটা ভীতিজনক বিশ্বাস সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রমাণের উর্ধ্বে রাখা যায় এরকম মিথলজিক কিছু কাল্পনিক উপাদান সংযোজন করে তাকে একাধারে আকর্ষণীয় এবং পালনযোগ্য সামাজিক বিধিবদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। যুক্তিহীন বিশ্বাস এর প্রধান অবলম্বন।

অন্যদিকে দেশাত্মবোধ বা মানবিক আচরণে যে আবেগিক ব্যাপারটা জড়িত সেখানে ভীতিজনক বিশ্বাস অনুপস্থিত। যুক্তিবোধ এবং আবেগের মিশ্রনটাই প্রবল বলে মনে হয়।

সংস্কৃতি যদি হয় প্রবহমান জীবনেতিহাস এবং এর সামগ্রিক প্রাসঙ্গিকতা, সেখানে সবকিছুই সংস্কৃতির অংশ বৈ কি। শেষ বিচারে সংস্কৃতির শেকড়ে এর মাটিলগ্নতাই থেকে যায়, ধর্মীয় বোধ বা সম্প্রদায়বোধ সেখানে খুব গভীরে কি পৌঁছুতে পারে ?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

একটা ভীতিজনক বিশ্বাস সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রমাণের উর্ধ্বে রাখা যায় এরকম মিথলজিক কিছু কাল্পনিক উপাদান সংযোজন করে তাকে একাধারে আকর্ষণীয় এবং পালনযোগ্য সামাজিক বিধিবদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। যুক্তিহীন বিশ্বাস এর প্রধান অবলম্বন।

ধর্মগুলো যখন সৃষ্টি হয়, তখনকার মানব-জ্ঞানের প্রেক্ষিতে ঐসব মিথলজি কি খুবই অযৌক্তিক? পৃথিবী যে বিশ্বের কেন্দ্র নয়, এটাতো মানুষ জানলো এই সেদিন, কোপার্নিকাস-গ্যালিলিওর সময়ে। আর মানুষই যে জীবজগতের কেন্দ্রীয় জীব নয়, মানুষের সেবাতেই যে জীবজগতের সৃষ্টি নয়, সে ধারণা তো আরও নতুন, ডারউইনের সময় থেকে।
আমার মনে হয় ধর্মের স্রষ্টারা স্বাভাবিক জ্ঞান-বুদ্ধি থেকে জাগতিক ঘটনার ব্যাখ্যা দেবার প্রয়োজনেই এসব মিথের অবতারনা করেছিলেন। সেটা তাদের ধর্মের মূল সুর ছিলনা।
পরবর্তীতে ধর্মকে যারা ব্যবহার করেছেন গোষ্ঠীগত স্বার্থে, তারা ধর্মের মানবিক আহবানের চাইতে ঐসব মিথকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

অন্যদিকে দেশাত্মবোধ বা মানবিক আচরণে যে আবেগিক ব্যাপারটা জড়িত সেখানে ভীতিজনক বিশ্বাস অনুপস্থিত।

ভীতিজনক বিশ্বাস না হোক, ভীতি কি একেবারেই অনুপস্থিত? নাগরিকত্মের বোধটাকে প্রোথিত করবার জন্য কি আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই? আপনার পাসপোর্ট না থাকলে, মানে আপনি কোন রাষ্ট্রের অনুগত না হলে আপনার চলাচল সীমাবদ্ধ। আপনার অনেক মৌলিক আধিকার আপনার রাষ্ট্রসীমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

ধর্মগুলোর বিরুদ্ধে সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত যে অভিযোগ, সেটা হল জাগতিক ভিত্তিহীন /প্রয়োজনহীন বিশ্বাস। এটাকে সহজে বিভেদ-বিভক্তি তৈরীতে ব্যবহার করা যায়, এটা ধর্মগুলোর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। তবে, এ দুর্বলতা ভিত্তিহীন যেকোন বিশ্বাসের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, দায় শুধু ধর্মের একার নয়। হয়তো ধর্মগুলো অনেক পুরানো হয়েছে বলে, এর দুর্বলতার অনেক ব্যবহার হয়েছে বলে এখন সহজে চোখে পড়ে।

শেষ বিচারে সংস্কৃতির শেকড়ে এর মাটিলগ্নতাই থেকে যায়, ধর্মীয় বোধ বা সম্প্রদায়বোধ সেখানে খুব গভীরে কি পৌঁছুতে পারে ?

স্বীকার করি, মাটিলগ্নতা মানুষের সংস্কৃতির একটা বড় নিয়ামক। কিন্তু এই মাটিলগ্নতা কি মানুষের ইতিহাসে চিরন্তন? এর শুরু তো কেবল কৃষিজীবি হবার পর থেকে। তার আগে কি তাহলে সংস্কৃতি ছিলনা?

রণদীপম বসু এর ছবি

আমার মনে হয় ধর্মের স্রষ্টারা স্বাভাবিক জ্ঞান-বুদ্ধি থেকে জাগতিক ঘটনার ব্যাখ্যা দেবার প্রয়োজনেই এসব মিথের অবতারনা করেছিলেন। সেটা তাদের ধর্মের মূল সুর ছিলনা।

আপনি কিন্তু আসল কথাটা এখানেই বলে ফেলেছেন। এবার আপনি সমকালীনতা দিয়ে বিচার করুন তো, সময়ের প্রেক্ষিতে এসে যখন আমরা সৃষ্টির আরো অনেক রহস্য সম্পর্কে ধারণা পেয়ে গেলাম, তখন কি আর আমাদের পূর্বোক্ত ধারণায় স্বতসিদ্ধ হয়ে বসে থাকার উপায় আছে ? সভ্যতার ধারাবাহিকতায় তখন হয়তো মানুষ এই ধারণাটার উপর আস্থা রেখে একটা সমাধান খুঁজেছে উত্থিত প্রশ্নের। যেগুলোর উত্তর পেয়ে গেছি আমরা, জানার সাথে সাথেই তো পূর্বোক্ত ধারণা বাতিল হয়ে যায়। ধর্ম কি তা করেছে ? বিজ্ঞান কিন্তু তার পথ পরিক্রমায় বাতিল আর গ্রহণ করতে করতেই এগিয়ে যায় সামনে। কিন্তু ধর্ম তা করছে না কেন ? কেননা যে গ্যাড়াকলে সে আটকা, ওখান থেকে বেরোনোর কোন উপায় তার নেই। তাহলে তার অস্তিত্বটাই বিলীন হয়ে যায়। সমস্ত মিথগুলো সহ ধর্মগ্রন্থগুলোকে সর্বজ্ঞ স্রষ্টার অলৌকিক পুস্তক বলে চালানো হয়েছে, এখন এর সামান্য অংশও বানোয়াট কাল্পনিক এবং অসত্য বলে স্বীকার করে নিলে স্রষ্টার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাই স্বীকার করে নেয়া হবে, যা মানুষের সমকালীন জ্ঞানের চাইতে একচুলও বেশি নয়। অর্থাৎ স্রষ্টার অস্তিত্বই হুমকীর সম্মুখীন। তাহলে কী দাঁড়ালো এর অর্থ ?
আড়াই হাজার বছর আগের অনড় জ্ঞান দিয়ে বর্তমান জ্ঞানের সচল ব্যাখ্যা করার মতো পরিহাস আর কী হতে পারে বলুন !
অন্য যে কোন বিশ্বাসকে আপনি রিভিয়্যু করার সুযোগ পাচ্ছেন, সংস্কার করে নিয়ে সমকালীন হতে পারছেন। ধর্ম তা তো পারছে না ! অতএব দোষাদোষীর ক্ষেত্রে অন্য কিছুর সাথে ধর্মকে মিলিয়ে লাভ নেই। অতএব দুহাজার বছর আগের স্বপ্ন নিয়ে ধর্ম বিভোর থাকুক। সমকালীন চলমানতাকে বাধাগ্রস্ত করতে তাকে টেনে আনা কেন ?
আসলে টপিকসটার যে ব্যাপ্তি তা মন্তব্যের খন্ডাংশ দিয়ে আলোচনায় নামাও বিব্রতকর। পরে অন্য কোথাও এ নিয়ে আলোচনার আশা রাখি। তবে আমার এ লেখাটা প্রাসঙ্গিক হলে পড়ে দেখতে পারেন

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

আসলে টপিকসটার যে ব্যাপ্তি তা মন্তব্যের খন্ডাংশ দিয়ে আলোচনায় নামাও বিব্রতকর।

আপনি যদি এখানে টপিক বলতে মানুষের চিরন্তন যে দার্শনিক প্রশ্নগুলো, অথবা ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা স্বরূপ বিশ্লেষণ, তা ভাবেন, তাহলে তা ব্যাপক অবশ্যই, কিন্তু আমি এই ক্ষুদ্র পরিসরে আমার আলোচনাটাকে আরো একটু ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে ধরে রাখতে চাইছিলাম।

আমার প্রশ্ন ছিল ধর্মবিশ্বাস (যদি থাকে) এবং ধর্মাচার মানুষের মধ্যে যে সম্প্রদায়বোধ তৈরী করে, সেটা অন্য যেকোন বিশ্বাস, অভ্যাস বা প্রয়োজন ও করতে পারে। তাই সম্প্রদায়বোধের যে চরম রূপ, মানে সাম্প্রদায়িকতা, তার জন্য শুধু ধর্মকে দায়ী করা ঠিক নয়।

আপনি ধর্মকে যেরকম প্রশ্নবিরোধী একটা অন্ধ বিশ্বাস বলছেন, যার মানে দাড়ায় fundamentalism গোড়ামী, এরকম অন্ধ বিশ্বাস বা গোড়ামী কি ধর্ম ছাড়া অন্য কিছুকে দিয়ে হয়না? স্ট্যালিনবাদ কিম্বা মুক্তবাজার পুজিবাদ কি ঐরকমই একটা গোড়া বিশ্বাসে পরিণত হয়নি?

আর আজকের পালিত ধর্মগুলো কি শুরু থেকেই সব সময়ে এরকম গোড়ামীর বস্তু ছিল?

আরেকটা সম্পুরক প্রশ্ন ছিল, জাতীয়তা, ভাষা ইত্যাদির ভিত্তিতে সম্প্রদায়বোধ যদি নৈতিকতার বিচারে বৈধ হয়, তবে, ধর্মভিত্তিক সম্প্রদায়বোধ (সাম্প্রদায়িকতা নয়) কি বৈধ নয়?

প্রশ্নটা করলাম এইজন্য যে, আমি নিজে নাস্তিক বা নিদেন পক্ষে ইহজাগতিক হয়েও মাঝে মাঝে জুমা পড়তে যাই, যাই মুসলমান সম্প্রদায়ের এই দুঃসময়ে সহমর্মিতা প্রকাশের জন্য। নিজে নামাজ না পড়লেও, গত বছর এখানে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ছাত্ররা যখন আন্দোলন করছিল অন্যায্য ভাবে "টেররিজম" এর ভাওতা দিয়ে তাদের নামাজের জায়গা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল বলে -- তাদের আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলাম। এসব করেছিলাম একটা সম্প্রদায়বোধ থেকেই।

রণদীপম বসু এর ছবি

প্রশ্ন ছিল, জাতীয়তা, ভাষা ইত্যাদির ভিত্তিতে সম্প্রদায়বোধ যদি নৈতিকতার বিচারে বৈধ হয়, তবে, ধর্মভিত্তিক সম্প্রদায়বোধ (সাম্প্রদায়িকতা নয়) কি বৈধ নয়?

সম্ভবত আপনার এই প্রশ্নটাই আপনার আলোচনার মূল বিষয়। কিন্তু আমার কাছে প্রশ্নটিকে বিভ্রান্তিকর মনে হচ্ছে। মূলত দুটো শব্দই এই বিভ্রান্তির মূলে- 'নৈতিকতা' এবং 'বৈধ'।
এখানে 'বৈধ' শব্দটি আমার বিবেচনায় অপ্রয়োজনীয় বা প্রযোজ্য নয়। প্রশ্ন আসতে পারে অন্যান্য বিষয়ের সাথে ধর্মভিত্তিক সম্প্রদায়বোধ কতোটা নৈতিক ? আমার বিবেচনায় নৈতিকতার মানদণ্ডে সবচেয়ে নীচের অবস্থানটা হওয়া উচিৎ ধর্মভিত্তিক সম্প্রদায়বোধ।
সমাজ নামের যে ধারণাটা আমরা লালন করি তাও মূলত একটা সম্প্রদায়বোধ। প্রথমত আমাদের চিন্তাসূত্রটা এভাবেই আগানো উচিৎ যে আমরা কি সমন্বয়ের দিকে যাবো, না কি বিভক্তির দিকে যাবো। আবার সম্পুরক প্রশ্ন হবে, কার সাথে সমন্বয় বা বিভক্তি ? কোনটা বেশি নৈতিক এবং ঔচিত্য কোনটা ? কোন বিষয়টাতে নেতিবাচকতা কম ? এরকম ধারাবাহিক কিছু প্রশ্ন চলে আসবে।
সোজাসুজি উত্তর খুঁজতে গেলে কতকগুলো ফ্যাকটর আসবে। আমি কি ভুখন্ডগত সম্প্রদায়বোধ প্রাধান্য দেব, না কি ধর্মীয় সম্প্রদায়বোধ প্রাধান্য দেব ? বাংলাদেশ নামক ভুখণ্ডের অধিবাসীদেরকে সামগ্রিক প্রাধান্য দেবো, না কি ধর্মীয় বোধে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশের আংশিক জনগোষ্ঠী এবং ভিনদেশী আংশিক জনগোষ্ঠীকে একসাথে প্রাধান্য দেব দেশের বাকি জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে ? একই ভাবে ভাষাগত বিচেনাটাও তুলনায় চলে আসবে। আমি যদি আগে মুসলিম হই, তাহলে আংশিক বাংলাদেশী আংশিক মধ্যপ্রাচ্য এবং অন্যান্য মুসলিমরাই বাকি বাংলাদেশিদের থেকে প্রাধান্য বেশি পাওয়ার কথা। একই ভাবে ভাষাগত ভাবেও এটা প্রযোজ্য। এখন আমার নৈতিকতাই ঠিক করবে আমি আগে মুসলিম বা হিন্দু, না কি আগে বাংলাদেশী, বাংগালি, এশিয়ান, গ্লোবাল এবং মানুষ ইত্যাদি।
আমার মনে হয় বিষয়টা এক্ষেত্রে এসে নিজস্ব উপলব্ধির মধ্যেই বিশ্লেষণের দাবি রাখে। আমরা নিজেরা এখন আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমেই নিজে নিজে ঠিক করে নেই আমরা কী ? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর একান্তই নিজের মধ্যেই পেয়ে যাবেন সবাই। তা আর ঢাকঢোল বাজিয়ে বিতর্কে না নিয়ে নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়াটাই অধিকতর যুক্তিসংগত মনে হয়।
তবে চাইলে যে কেউ এ ব্যাপারে নিজের অবস্থান তুলে ধরে বিশ্লেষণধর্মী পোস্টও লিখতে পারেন। আমরা না হয় সেখানে আবার প্রয়োজনে নিজ নিজ মতামত পেশ করতে পারি।
এটা স্বীকার করে নিচ্ছি যে, আলোচনাটা অবশ্যই চিন্তাধর্মী এবং প্রয়োজনীয়ও।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

ধন্যবাদ রণদা। আপনার বিশ্লেষণের সাথে আমি অনেকাংশেই একমত।

প্রথমত আমাদের চিন্তাসূত্রটা এভাবেই আগানো উচিৎ যে আমরা কি সমন্বয়ের দিকে যাবো, না কি বিভক্তির দিকে যাবো।

আমার ঔচিত্য বা আদর্শও এটাই বলে যে সমাজের গতির দিকদর্শন সমন্বয়মুখী হোক।

কিন্ত একশ রকমের সম্প্রদায়বোধ আমাদের সমাজকে বিভক্ত করে রেখেছে, এটাতো বাস্তবতা। এটার স্বরূপ বিশ্লেষণ করতে চাইছিলাম বলেই বোধ হয় এই আলোচনা।
দ্বন্দ্ব সংঘাতের উপস্থিতি নিতান্তই বাস্তব। দ্বান্দিক বস্তুবাদও বলে যে দ্বন্দ্ব সংঘাতের মাধ্যমেই সমাজের বিবর্তন। এই বিবর্তন সমাজকে একদিন শ্রেণীহীন, বিভক্তিহীন করবে, এটা সবাই আশা করি, যদিও ঐ আদর্শ বিভক্তিহীন সমাজে দ্বান্দ্বিকতার অবসান ঘটবে কিনা এ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। যাক, সে অন্য প্রসঙ্গ।

নৈতিকতার প্রশ্নে আপনি যেভাবে সম্প্রদায়বোধের বিভিন্ন উপকরণ গুলোকে সাজালেন, আমিও হয়তো ওভাবেই সাজাবো। কিন্তু আমার ধারণা সময়ের প্রয়োজনেই এই বিন্যাসের অদল বদল হয়। এ প্রসঙ্গে ৪৭ পূর্ব এবং ৪৭-৭১ সময়ে বাঙালী মুসলমানের সম্প্রদায়বোধের বিবর্তনটা উদাহরন হিসাবে টানতে পারি।

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

অনিশ্চিত লিখেছেন:
ধর্মের মূল সুর পরলৌকিকতার, সেটিকে দিয়ে জাগতিক বিষয়গুলোকে সম্পর্কযুক্ত করা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত? জাগতিক বিষয়গুলো তাৎক্ষণিক দরকার বলে সেগুলোর ক্ষেত্রে কিছু স্বভাবজাত প্রবৃত্তির সৃষ্টি হয়; কিন্তু পরলৌকিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে 'আরোপিত' হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।

প্রথমতঃ ধর্ম পারলৌকিক নয়, ইহজাগতিক প্রয়োজনেই সৃষ্ট, এটা ফারক/রণদীপম আগেই বলেছেন।

ইতিহাস বিবেচনায় আমার কাছে ধর্মাভ্যাস, খাদ্যাভ্যাস, ভাষাভ্যাস, জাত্যাভাস, দেশাভ্যাস - এর সব গুলোই অভ্যাস, পার্থক্য শুধু পরিমাণগত - যেটা কোন অভ্যাস নৈমিত্তিক জীবনের কত অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোন অভ্যাস কতকাল ধরে চালু, এই দুয়ের সমানুপাতিক।

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

সম্প্রদায়বোধের কথা যখন এলই, সাম্প্রদায়িকতার কথা কিছুটা বলাও বোধকরি প্রাসঙ্গিক। বিশেষতঃ ধর্মের কথা বললে তো সাম্প্রদায়িকতার কথা না এসে পারে না।

আমার কাছে সম্প্রদায়বোধ আর সাম্প্রদায়িকতার পার্থক্য আছে। যেমন আছে জাতীয়তাবোধ আর জাত্যাভিমানের পার্থক্য। সীমানাটা এরকম -- সম্প্রদায়বোধ আমার কর্মোদ্দীপনার অংশ হতে পারে, অন্য সম্প্রদায়ের সাথে আমাকে যৌক্তিক দ্বন্দ্বে অবতীর্ন করতে পারে, আমার সম্প্রদায় শোষিত হলে শোষণমুক্তির আন্দোলনে সাময়িক স্পৃহা হতে পারে। আর এই বোধ যখন আমার সম্প্রদায়কে অন্য সম্প্রদায়ের চেয়ে শ্রেয় ভাবতে শেখায়, যখন অন্য সম্প্রদায়কে হেয় করার, অবদমিত করার, সেবাদাসে পরিণত করার, আক্রমণ করার, নিপীড়ন করার শক্তি যোগায়, তখন তা সাম্প্রদায়িকতা।

ধর্মের সম্প্রদায়বোধ যেমন সাম্প্রদায়িকতায় পরিণত হতে পারে, বিশেষতঃ কোন শোষক সম্প্রদায়ের গোপন বা প্রকাশ প্ররোচনায়, তেমনি পারে অন্য যেকোন রকমের সম্প্রদায়বোধও।

আমি হিন্দু তুমি মুসলমান নিয়ে যেমন সাম্প্রদায়িকতা হয়েছে, আমি বিএনপি তুমি আওয়ামী লীগ নিয়েও তেমনই সাম্প্রদায়িকতা কি হচ্ছে না? প্রথমটার পেছনে যেমন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শোষকের প্ররোচনা ছিল, দ্বিতীয়টার পেছনে কি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী কিম্বা দেশীয় পুজিপতিদের প্ররোচনা নেই? শেষমেষ দেশের মানুষের এত সংগ্রামের নাম তাহলে কেন হয় দুই বেগমের ঝগড়া?

অপ্রিয় এর ছবি

আসাদ জামান এবং ফারুক ওয়াসিফের সঙ্গে মোটাদাগে একমত।

কিন্তু ধর্ম পরকালের না ইহজাগতিক তারচেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ন যে ধর্ম মনোজাগতিক, মানুষের মনের উপর এর প্রভাব ব্যাপক। ধর্ম নামের এই অযৌক্তিক বিষয়টাই সাধারণ মানুষকে বেঁচে থাকার ও নিজের উর্দ্ধে উঠবার যৌক্তিকতা দেয়। তাই বিবর্তনের ধারায় আমাদের লেজ খসে পড়লেও মন থেকে অন্ধবিশ্বাস ও ধর্মভীতি খসে পড়েনি।

কিন্তু ধর্ম দিয়ে নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতিস্থাপন বা এর রাজনীতিকরন অবশ্য বর্জনীয়।

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

তাই বিবর্তনের ধারায় আমাদের লেজ খসে পড়লেও মন থেকে অন্ধবিশ্বাস ও ধর্মভীতি খসে পড়েনি।

একটু খিয়াল কৈরা হাসি, বিবর্তনের ধারায় লেজ খসে পড়তে যে সময় লেগেছে, অন্ধবিশ্বাস বা ধর্মভীতির অস্তিত্ব সেতুলনায় নিতান্তই সাময়িক।

কিন্তু ধর্ম দিয়ে নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতিস্থাপন বা এর রাজনীতিকরন অবশ্য বর্জনীয়।

আমি যা বলছিলাম, তাতে নিজস্ব সংস্কৃতি বলতে যা বোঝায়, ধর্মবিশ্বাস এবং ধর্মাচারও তার একটা অংশ। সবচেয়ে প্রধান অংশ হয়তো নয়। তবে একটা বড় অংশ নিশ্চই।
তবে এটা নিয়ে আপনার ব্যাখ্যা জানতে চাই, আমার ধারণা ঠিক নাও হতে পারে।

অপ্রিয় এর ছবি

একটু খিয়াল কৈরা , বিবর্তনের ধারায় লেজ খসে পড়তে যে সময় লেগেছে, অন্ধবিশ্বাস বা ধর্মভীতির অস্তিত্ব সেতুলনায় নিতান্তই সাময়িক।

মানব বিবর্তনের ইতিহাস প্রায় এক মিলিয়ন বছরের পুরানো, অন্ধবিশ্বাস, আধ্যাত্মিক বিশ্বাস ও আদি প্রাথমিক ধর্মগুলো প্রায় তার কাছাকাছি সময় থেকে শুরু। মানব মস্তিষ্কের বিবর্তন জৈব বিবর্তনের তুলনায় অনেক অনেক দ্রুতগতির, মাত্র ছয়/সাত মিলিয়ন বছরে আদিম গরিলা থেকে আপনি বা আমি!

আরবের ধর্ম আমি গ্রহণযোগ্য মনে করলে তা পালনে আমি কোন ক্ষতি দেখি না কিন্তু তার সাথে সাথে যদি আমি আরবের পোশাক পরা শুরু করি, আরবের খাবার খাওয়া শুরু করি তাহলে আমি নিজের সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হব যার পরিনতি ভয়াবহ। সেখানেই তা আর ধর্ম থাকে না, মৌলবাদে পরিনত হয়।

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

আরবের ধর্ম আমি গ্রহণযোগ্য মনে করলে তা পালনে আমি কোন ক্ষতি দেখি না কিন্তু তার সাথে সাথে যদি আমি আরবের পোশাক পরা শুরু করি, আরবের খাবার খাওয়া শুরু করি তাহলে আমি নিজের সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হব যার পরিনতি ভয়াবহ। সেখানেই তা আর ধর্ম থাকে না, মৌলবাদে পরিনত হয়।

খুবই একমত। ওটা আরবী-মার্কিনী মদদপুষ্ট মৌলবাদ, বাংলার লোকায়ত ইসলাম কিন্তু এসব শেখায়না।

আমার প্রশ্ন ছিল, মৌলবাদ কি শুধু ধর্মের নামেই হয়? যে স্থানিক জাতীয়তা ভিত্তিক সংস্কৃতির কথা বললেন, সেই জাতীয়তা কি মৌলবাদের উপকরণ হতে পারে না? হিটলার তাহলে কোন মৌলবাদে অন্ধ করেছিলেন জার্মানদের?

আমি যা বলতে চেয়েছিলাম তা হল ধর্ম মানেই মৌলবাদ নয়। আমার ধারণা, মৌলবাদের বাইরেও ধর্মের একটা সামাজিক রূপ আছে, যেটা একটা নির্দোষ সম্প্রদায়বোধের জন্ম দিতে পারে। এই ধারণাটাই যাচাই করতে চাইছিলাম। মত দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

BICCHU [অতিথি] এর ছবি

লেখকের লেখা ও অন্যদের মন্তব্য পড়েঃ

আমরা গোষঠী ভিত্তিক চিন্তার কত টুকু বাইরে যেতে পারি ? সে জন্যই কি আরব মুসলিম , ভারতীয় মুসলিম , ইন্দোনেশিয়ান মুসলিম আলাদা ধরমীয় সংস্কৃতি বহন করে না ? অথবা আমরা পশ্চিম ভারতীয় হিন্দুদের সংস্কৃতি-কে কি বাংগালী হিন্দু সংস্কৃতি বলতে পারি ? আসলে অনাদি কাল থেকেই মানুষ গোষ্ঠীভুক্ত প্রাণী । মানুষ "WE" বলতে বোঝে নিজ গোষ্ঠীকেই । বিশ্ব-কে তো GLOBAL VILLAGE বলে জানতে শিখেছে এই আজকে এসে।

আমি মূলতঃ যা বলতে চাই , তা হল--মানুষ ধর্মের চাইতে আঞ্চলিক সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয় অনেক বেশি । আর সে জন্যই একই ধর্মের মানুষ দেশে দেশে সংস্কৃতিগত ভাবে হয় আলাদা । আর আমরা যে এত ধর্ম ধর্ম করে চিল্লাচ্ছি ---তার মূল কারণ---আংরেজ বাবাদের নীতি(কিংবা দুর্নীতি !!) --DIVIDE AND RULE .

ধর্ম যে "পরকাল" নিয়ে কাজ করে তা কি আপনি বা আমি কেউ কি দেখেছি? বা কি কেউ জানে কেমন? আমরা কত জন জেল খেটেছি(তথাকথিত "ন্যাতা"-রা ছাড়া)? তবু তো জ়েলে যাবার ভয় পাই । সত্যিকারের সভ্য মানুষ ছাড়া কে আছে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নিজে থেকে, নিজেকে নিবৃত করে অন্যের রক্ত পান করে নিজে পরিপুষট হবার লোভ থেকে? আমার তাই মনে হয় --সমাজে ধর্মেরও প্রয়োজন আছে বৈ কি !(যত দিন না আমরা সবাই এক "GLOBAL VILLAGE" গোষ্ঠীর অর্ন্তভূক্ত হই এবং/অথবা আমরা সবাই মিলে "সভ্য" হয়ে উঠি ।)

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

আপনি লিখলেন:
সন্যাসী আমার এই generalization এ আপত্তি করলেন। বললেন ধর্ম একটি আরোপিত বিশ্বাস, আর খাদ্যাভ্যাস/ভাষা এইগুলো স্বভাবজাত। দুটোকে এক করে দেখা ঠিক নয়। এই খানে একটা তর্কের অবকাশ আছে বলে মনে হয়।

ঠিক এর পরেই লিখছেন:
কেবল ধর্মই কি আরোপিত বিশ্বাস?

"কেবল" শব্দটি পড়ে মনে হলো, ধর্ম যে আসলেই আরোপিত বিশ্বাস, তা আপনি মেনে নিয়ে আরও কিছু আরোপিত বিশ্বাসের সন্ধানে বেরুলেন।

আমার বক্তব্য "অতিথি লেখক" চমত্কারভাবে প্রকাশ করেছেন:
দেখুনতো প্রাণীজগতে আর কোন প্রাণীর ধর্ম নামক কিছু আছে কিনা? খাদ্যাভ্যাস ও স্বজাতিপ্রীতি কিন্তু ঠিক ই আছে !

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

হ্যা, সেটাই তো বলছিলাম, ধর্মই কি কেবল ----?
ঠিক যে খাদ্যাভ্যাস পশু পাখিরও আছে। গরু তার বাছুরকে খাওয়া শেখায়।

কিন্তু, ধরুন হল্যান্ডের গরু গমের ভুষি খায়, আর বাংলাদেশী গরু খায় চালের কুড়া। এখন হল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে এক গরু আমদানী করলেন, সে বাচ্চা দিল বাংলার মাটিতে। এখন ঐ হল্যান্ডী গরু-মা কি তার বাচ্চাকে হল্যান্ডী ভুষি খাওয়ানোর আকুতি বোধ করবে?

যেটা আমি মানুষ, আমার বিদেশে জন্মানো সন্তানের ক্ষেত্রে করি? ওটাকেই আরোপিত বলছিলাম।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

হ্যা, সেটাই তো বলছিলাম, ধর্মই কি কেবল ----?

ধর্ম - আরেপিত বিশ্বাস, তা তো আমি অর্ঘ্যের ব্লগের মন্তব্যেই লিখেছিলাম। আপনি তখন তাতে বাধ সাধলেন। অথচ এখন দেখতে পাচ্ছি, এ বিষয়ে এখন আপনার পক্ষ থেকে "তর্কের অবকাশ আছে বলে মনে" হচ্ছে না।

ধন্যবাদ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

আপনি যদি তর্কে জিতে বীণা বাজাতেই আনন্দিত হন, তাহলে, ধরুন আপনার কথা মেনেই নিলাম। তাহলেও কিন্তু এই পোস্টের মূল যে বক্তব্য, সেটা ভুল হয়না।

কথা হচ্ছিল ধর্ম অন্য অনেক আবেগের মতই একটা সম্প্রদায়বোধ তৈরী করতে পারে। এবং, ধর্মের সম্প্রদায়বোধ যেমন সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দিতে পারে, তেমনি অন্য ধারণাগুলোও পারে।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

আপনি যদি তর্কে জিতে বীণা বাজাতেই আনন্দিত হন...

বিতর্কে এমন ভাষার ব্যবহার আপত্তিকর বলে মনে করি।

এখন দেখা যাক, "কোত্থেকে আর কী ক'রে" এই বিতর্কের সূত্রপাত। অর্ঘ্যের ব্লগে আমার এই বাক্যটিতে আপনি আপত্তি করেছিলেন এবং বলেছিলেন এখানে বিতর্কের অবকাশ আছে:
খাদ্যাভ্যাস বা মাতৃভাষা শিক্ষার (প্রাতিষ্ঠানিক অর্থে নয়) মতো সহজাত প্রবৃত্তির সঙ্গে আরোপিত বিশ্বাস শিশুমনে প্রোথিত করার ব্যাপারটির তুলনা কীভাবে চলে, তা ঠিক বোধগম্য হলো না।

আপনার এই পোস্ট এবং মন্তব্যগুলো পড়ে একবারও মনে হলো না আপনি আমার বক্তব্য খণ্ডাতে পেরেছেন। আপনি যা করেছেন, তা হচ্ছে - অন্যান্য আরোপিত বিশ্বাসের তালিকা নিয়ে এসেছেন, যেসব বিষয়ে একটি অক্ষরও আমি লিখিনি।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

বিতর্কে এমন ভাষার ব্যবহার আপত্তিকর বলে মনে করি।

সন্ন্যাসীদা, আমি লজ্জিত এবং আন্তরিকভাবে দুঃখিত এমন অবিতার্কিক সুলভ আচরণের জন্য। ওটা একেবারেই ব্যক্তিগত আবেগ বা আত্মাভিমানের প্রকাশ। বিষয়ের বাইরে এই অযথা মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইছি।

যাহোক, মুল যে তর্ক হচ্ছিল সেখানে আসি। স্বীকার করছি, আপনি ভুল বলেননি যে ধর্ম আরোপিত বিশ্বাস, ভাষা আর খাদ্যাভ্যাস নিতান্তই প্রাকৃতিক। এটা নিয়ে তর্ক করার আসলে অবকাশ নেই। এই তর্কের জন্যও এই পোস্ট দেইনি। তবে তর্ক যে হচ্ছে, সেটা বোধহয় আমার উপস্থাপনার দুর্বলতার কারণে। মূল তর্কের উতপত্তি-সূত্রও বোধকরি এই পার্শ্ব তর্কের একটা কারণ। আপনি মোটা দাগে একমত না হয়ে চিকন দাগের এই দুর্বলতা টা ধরিয়ে দিলেন, সেজন্যে অবশ্যই ধন্যবাদ।

আমি এখানে বলতে চাইছিলাম সম্প্রদায়বোধের উপকরণ নিয়ে। বলছিলাম অন্য জীবের মধ্যে খাদ্য-ভাষা এসব প্রাকৃতিক উপাদান গুলো থাকলেও, মানুষের মত জটিল এবং উন্নত সামাজিক কাঠামো নেই। সম্প্রদায়বোধ এই সামাজিক কাঠামোরই একটা উপকরণ, সেজন্য অন্য জীবের মধ্যে সেটা মানুষের মত নেই। ওদের ভাষা থাকলেও, আমার ভাষা বাংলা আর তোমার ভাষা বিহারী-উর্দু, এজন্য তুমি আর আমি দুই সম্প্রদায়ের, এরকম বোধ নেই। একথা বোঝাতেই ঐ হল্যান্ডী গরুর গল্পটা টেনেছিলাম, একটু অনার্য ভাষাতেই।

আমি ধর্ম, ভাষা, জাতীয়তা, এমনকি খাদ্যাভ্যাস, এই সব কিছুকে সম্প্রদায়বোধের উপকরণ বললেও, সবাইকে এক কাতারে বোধ হয় ফেলিনি, বলেছিলাম -

ইতিহাস বিবেচনায় আমার কাছে ধর্মাভ্যাস, খাদ্যাভ্যাস, ভাষাভ্যাস, জাত্যাভাস, দেশাভ্যাস - এর সব গুলোই অভ্যাস, পার্থক্য শুধু পরিমাণগত - যেটা কোন অভ্যাস নৈমিত্তিক জীবনের কত অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোন অভ্যাস কতকাল ধরে চালু, এই দুয়ের সমানুপাতিক।

সূক্ষ্নভাবে আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দেবার জন্যে আবারো ধন্যবাদ।

বিপ্রতীপ এর ছবি

প্রতিটি মানুষ নিজেকে হিন্দু বা মুসলিম ভাবার আগে একজন বাংলাদেশী ভাবতে পারলে সেটাই জাতির জন্য সামগ্রিকভাবে বেশি লাভজনক। ব্যাপারটা মনে হয় ঠিক ধর্ম আর দেশাত্ববোধের তুলনা নয়, সমস্যাটা মনে হয় অন্য জায়গায়। ধর্মের মতো দেশাত্ববোধ কখনও মানুষকে মানসিকভাবে বিকলাংগ করে দেয় না। একটা ছোট্ট উদাহরন দেই। এই অন্তর্জালে অনেক মানুষ(?) আছে, যারা গলা ফাটিয়ে প্রমান করতে চায় একাত্তরে কিছু হয়নি, ৩০ লক্ষ মানুষ মরেনি, সবই মনগড়া...ইত্যাদি। কিন্তু দেখবেন, ওরাই আমার আপনার সাথে দাঁড়িয়ে গাজায় গণহত্যার জন্য হাহাকার করেছে। মানবতা থেকে করেনি, বরং করেছে ধর্মীয় টান থেকে...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

মন্তব্যে গুল্লি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

আনিস মাহমুদ এর ছবি

উদ্ধৃতি: ধর্মের মতো দেশাত্ববোধ কখনও মানুষকে মানসিকভাবে বিকলাংগ করে দেয় না।

মাত্রাহীন দেশাত্ববোধও মানসিক বিকলাঙ্গতার কারণ হতে পারে। স্মর্তব্য: হিটলার।

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

বিপ্রতীপ এর ছবি

ধর্মের ক্ষেত্রে এই উদাহরনটা অনেক বেশি...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

কথাটা অসত্য নয়। হয়তো সমাজে ধর্মের চাষ হাজার বছরের, আর জাতি রাষ্ট্রের চাষ শত বছরের, সেজন্যে। তবে, জাতি-মৌলবাদের উদাহরণ খুজতে বেশী দুর যেতে হবে না, চাটগায়ের পাহাড়ে গেলেই হবে। ধর্মাবেগের মত আরেকটা আবেগের ব্যবসার উদাহরণ হল মুক্তিযুদ্ধের আবেগ নিয়ে ব্যবসা।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ধর্মাবেগের মত আরেকটা আবেগের ব্যবসার উদাহরণ হল মুক্তিযুদ্ধের আবেগ নিয়ে ব্যবসা।

কি রকম?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

হাসান ভাই, আপনার প্রশ্নটা যৌক্তিক। তবে এটা নিয়ে এখন অযথা তর্ক করব না।
মুক্তিযুদ্ধ আমার আপনার সবার মনের শ্রেষ্ঠ এবং পবিত্রতম আবেগ। ওইটা এই প্রসঙ্গে না টানলেও চলত। তবে ঐ আবেগ নিয়ে সাম্প্রদয়িকতার যে কথাটা বললাম, সেটার উপস্থিতি আছে কি নেই সেটার বিচারভার আপনার উপরেই রাখলাম।

আনিস মাহমুদ এর ছবি

উদ্ধৃতি: হয়তো সমাজে ধর্মের চাষ হাজার বছরের, আর জাতি রাষ্ট্রের চাষ শত বছরের...

এই ধারণার সপক্ষে যুক্তি কী?

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

আজকের বহুল প্রচলিত আব্রাহামিক তিনটি ধর্ম, হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্ম, সবগুলো দেড় থেকে পাচ হাজার বছরের। জাতীয়তাবাদের জন্ম ইউরোপে ১৬০০-১৮০০ সালে।

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

আপনার ধারণা মিথ্যে নয় যে, আমি যে যুক্তিগুলো দেখিয়েছি, ধর্ম ব্যবসায়ীরাও সেই যুক্তি দেখিয়ে তাদের ধর্ম ব্যবসা জায়েজ করতে চায়। তবে পার্থক্য আছে। তাদের যুক্তিটা হল এই রকম -- আমাদের মত অন্য অনেকেও তো মৌলবাদী আর সাম্প্রদায়িক, তাইলে আমরা হইতে দোষ কি? বাহ, আরো অনেকে চুরি করে বলে কি আমার চুরি করা জায়েজ হয়?
আমি সব সাম্প্রদায়িক-ব্যবসাকেই ঘৃণা জানাই। হয়তো আপনার মতোই ধর্ম ব্যবসাকে একটু বেশী ঘৃণা জানাই। তাতে অন্য সাম্প্রদায়িক আবেগ নিয়ে ব্যবসা জায়েজ হয়ে যায় না।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- দুইটা লেখাই পড়লাম। পড়ে যেটা মনে হলো সেটা এক লাইনে বলার চেষ্টা করি-
একজন মানুষ সর্বপ্রথম তার পরিবারের বাসিন্দা এবং তারপর সমাজের।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

তানবীরা এর ছবি

ধূসর মোটা দাগে তাইই। কিন্তু অনেকেই পরিবারের বাইরে যেয়ে ভাবে, বদলানোর চেষ্টা করে। হুমায়ূন আজাদ, আহমেদ শরীফ উনারা কিন্তু পরিবারের বাইরে যেয়েই ভেবেছিলেন।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

হুম। পরিবার বা যে বিচরনক্ষেত্রে আমরা বেড়ে উঠি, তার মধ্যে বর্তমান ধারণা বা বিশ্বাসগুলো আমাদের মনে গেঁথে যায়। ঐ ধারণাগুলোর সাথে যখন বাস্তব কোন পর্যবেক্ষণের সংঘর্ষ হয়, তখন ঐ ধারণাকে যাচাই/পরিবর্তন করাটাই বৈজ্ঞানিক চিন্তা-ধারার মূল সূত্র।

বিপ্রতীপ এর ছবি

তবে, জাতি-মৌলবাদের উদাহরণ খুজতে বেশী দুর যেতে হবে না, চাটগায়ের পাহাড়ে গেলেই হবে।

পার্বত্য অঞ্চলের ব্যাপারটিকে ঠিক মৌলবাদের কাতারে ফেলার ব্যাপারে দ্বিমত পোষন করছি। কোন এলাকার মানুষ লাগাতার বঞ্চিত হতে থাকলে একসময় রুখে দাঁড়াবে-এটাই নিয়ম। যেমনটা কানসাট কিংবা ফুলবাড়িতেও ঘটেছে। কাপ্তাই লেকের মতো একটি লস প্রজেক্টের ফলে পাহাড়ীদের জীবনযাত্রায় অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একবার কাপ্তাই লেকের দিকে তাকিয়ে ভাবুন তো ওখানে একদিন ফসলের ক্ষেত কিংবা বাড়ি ছিল। অথচ পুনর্বাসনের বদলে প্রতিটি রাষ্ট্রনায়ক উল্টো বিভিন্নভাবে তাদের সাথে প্রতারনা করেছেন। এতে তারা বিশ্বাস হারিয়েই এমনটা করেছে।এখনও আমরা পাহাড়িদের দেখলে অন্যচোখে তাকাই। এভাবে 'তারা পাহাড়ি' এই জাতিগত সীমাবন্ধতাটুকু (আপনার ভাষায় 'মৌলবাদ') আমরাই তাদের মনে গেঁথে দিয়েছি বিভিন্নভাবে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

শব্দটা আসলে মৌলবাদ না হয়ে হবে সাম্প্রদায়িকতা। ভুলটা ধরার জন্য ধন্যবাদ।

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

বিপ্রতীপ লিখেছেন:
ধর্মের ক্ষেত্রে এই উদাহরনটা অনেক বেশি...

আরো কিছু উদাহরণ মনে পড়ল। আমাদের জানা ইতিহাসের পরিক্রমায়
ধর্ম-সাম্প্রদায়িকতার উদাহরণ বেশি, এটা ঠিক। তবে বর্তমান সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের একটা স্থিরচিত্র নিন। দেখুন সিংহলী বনাম তামিল, বাঙালী বনাম পাহাড়ী, পাহাড়ী নেপালী বনাম মাধেসী, আর্য ভারতীয় বনাম দ্রাবিঢ় ভারতীয়, আর্য ভারতীয় বনাম অহমীয়া/নাগা/মনিপুরী, এই সাম্প্রদায়িক সংঘাত গুলোর কোনটাই ধর্মের নয়।

তবে একথা অবশ্যই স্বীকার্য যে সাম্প্রদায়িকতা এই সংঘাতগুলোর বাহ্যিক বা আপাতদৃষ্ট কারণ। গভীরে গেলে সবগুলো সংঘাতের বাস্তব কারণ অর্থনৈতিক বৈষম্য।
কিন্তূ সম্প্রদায়বোধ একদিকে যেমন শোষিত শ্রেনী ব্যবহার করে, সম্ভবত সাময়িক প্রেরণার জন্য, অন্যদিকে শোষক শ্রেনীও ঐ বোধকে ব্যবহার করে সংকট জিইয়ে রাখার জন্য।

আনিস মাহমুদ এর ছবি

উদ্ধৃতি: তবে, জাতি-মৌলবাদের উদাহরণ খুজতে বেশী দুর যেতে হবে না, চাটগায়ের পাহাড়ে গেলেই হবে।

আপনি নিজে গিয়ে কি কখনো দেখেছেন পাহাড়িদের অবস্থা? তাদের সাথে থেকেছেন? জানেন তারা কেমন মানুষ?

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

আনিস ভাই, দেখুন, পাহাড়িদের সংগ্রাম নিয়ে আপনার যা ধারণা, আমারও বোধ হয় তাই। আমি বলছিলাম যে আমরা সমতলের বাঙালীরা জাতিগত সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করি পাহাড়ী-বাঙালী সংঘাতকে উস্কে দেবার জন্য। আর নিপীড়িত পাহাড়ীরা হয়তো এই পাহাড়ীত্ব-বোধ নিয়ে তাদের সংগ্রামে সংগঠিত হয়। এই সংগ্রামের মূল কারণ যে অর্থনৈতিক/বাস্তব বৈষম্য, সে বিষয়ে আপনার সাহে আমার দ্বিমত নেই।

অফ টপিক --
"হয়তো" বললাম এটা স্বীকার করার জন্য যে পাহাড়ীদের আন্দোলন নিয়ে আমার সম্মুখ অভিজ্ঞতা নেই। যা জানা তা শুধু পাহাড়ী কিছু বন্ধু যারা সংগ্রাম উতরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পেয়েছে, তাদের মুখে শুনে, বই-পত্রিকা পড়ে এবং ভেবে। সেক্ষেত্রে আপনার যদি সম্মুখ অভিজ্ঞতা থাকে, তা প্রকাশ করলে আমার এবং আর সব সচলের জানার সীমা নিশ্চই বাড়বে। করুন না।

দিগন্ত এর ছবি

মানবসভ্যতা যতদিনের, শ্রেণীভেদ মনে হয় প্রায় ততদিনের। শ্রেণী অনেকপ্রকার - অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, ধার্মিক ... এখন মানুষের বিবর্তনের পথে যে মানুষ ঠিকঠাক ভাবে নিজেকে নিজের শ্রেণীতে মানিয়ে নিতে পেরেছে তারা সুবিধা পেয়েছে। তাই মানুষ স্বভাবগত ভাবেই রেসিস্ট। সে তার সব কার্যকলাপে নিজের বায়াস ধরে রাখে - সেটা বাচ্চার নাম দেওয়া থেকে উৎসব পালন পর্যন্ত। গত কয়েকশ বছর ধরে, মানুষের এই ধারণা অনেকটা ধাক্কা খেয়েছে - কারণ উঠতে বসতে তাদের ভিন্ন ভিন্ন সংষ্কৃতির সাথে মানিয়ে চলতে হচ্ছে। যত সময় যাবে, ভিন্ন কালচারের মধ্যে নিয়ে সম্পর্ক বাড়বে আর আস্তে আস্তে এই রেসিজম লোপ পাবে। আমরা তার মাঝের একটা স্তরে বাস করছি, যখন কিছু কিছু "রেসিজম" এর মধ্যেই "রেসিজম" বলে চিহ্নিত হয়েছে আর কিছু সমাজের অঙ্গ বলে এখনও চলছে।

নামকরণের উদাহরণটার একটু বিস্তার করা যাক। ধরা যাক অর্ঘ্য নামটা উচ্চারণের ফলে তার মুসলিম পরিচিতি কিছুটা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে কিছু রেসিস্ট লোকে প্রতিবাদ করছে। কিন্তু নামকরণের ক্ষেত্রে এধরণের আরেকটা বায়াস সমাজে স্বীকৃত - মেয়েদের নাম আর ছেলেদের নাম। কেন মেয়েদের নাম আর ছেলেদের নাম আলাদা ধরণের হবে? এটাও তো এক ধরণের রেসিজম।

আচ্ছা এবার খাদ্যাভ্যাসের প্রশ্নে যাই। খাদ্যাভ্যাস কিন্তু বিবর্তনের পথে আসা একটা অঙ্গ যা আজ থেকে একশো-হাজার বছর পরেও থাকবে (পরিবর্তিত হবে), কিন্তু ধর্ম আরো ক'বছর থাকবে তা আমার সন্দেহ আছে। কারণ, একজন মানুষের ধর্মের কোনো প্রয়োজন নেই, কিন্তু খাদ্যাভ্যাসের দরকার আছে। একজন বিচ্ছিন্ন দ্বীপবাসী দ্বীপের উপকরণের সাহায্যে নিজের খাদ্যাভ্যাস ঠিকই তৈরী করে নেবে, কিন্তু তার ধর্ম লাগবে কিনা সে নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

মানবসমাজ থেকে রেসিজম দূর করতে এখনও অনেক সময় লাগবে। কিন্তু সবাই যদি এভাবে ভাবে যে অমুকে রেসিস্ট তাই আমিই বা কি দোষ করলাম, অথবা মেয়েদের নাম আর ছেলেদের নাম যদি আলাদা করা যায় তবে হিন্দু আর মুসলমান নাম কি দোষ করল - তাহলে এই অবশ্যম্ভাবী সত্য সমাজে আসতে দেরী হবে। তাই আমার মনে হয় শুধু "হিন্দু" নাম নয় - ছেলেমেয়ের নাম এবার থেকে "খ্রীষ্টান", "ইহুদী", "মাসাই", "চিনা" বা "জারোয়া" গোছের রাখা শুরু করুন। কিছু প্রতিবাদ আসবেই কিন্তু রেসিজম দূর করার এটাই পথ।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আনিস মাহমুদ এর ছবি

উদ্ধৃতি: মানুষের ধর্মের কোনো প্রয়োজন নেই

এই প্রসঙ্গে: A man without religion is like a fish without a bicycle.

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।