বড় হয়ে যাওয়ার একটা মস্ত অসুবিধে হল ইচ্ছেমত ছোটবড় হওয়া আর চলেনা, সারক্ষন বড় সেজেই থাকতে হয়। অথচ ছোটরা কি মজা করে চাইলেই বড় হতে পারে, আবার ছোটও। এই যে ভাইয়ার ছেলেটাকে দেখি বাবার শার্ট টাই গায়ে জড়িয়ে, রঙের বাক্স হাতে ঝুলিয়ে গম্ভীর গলায় বলে, 'অফিসিস যাই'। এদিকে টলমল পায়ে দুপা যেতে না যেতেই লম্বা কাপড়টায় পা বেঁধে দড়াম করে পড়ে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে 'মাটিকে মারো, মাটিকে মারো!!' তখন ধপাধপ মাটিতে দু ঘা লাগালেই দিব্যি খুশি হয়ে আবার অফিসিস যেতে শুরু করে। কি চমৎকার জীবন !
রমজান শুরু হয়ে গেলে কটা বছর আগেও কি দারুন খুশি হয়ে যেতাম। আর এখন ঈদের চাঁদ দেখা গেল মানেই নারী মহলে শুরু হল টেনশন। এর কাপড়, ওর জুতো, তার পাঞ্জাবী। কারো আবার জামা জুতো পছন্দ হল তো, সাইজে মেলে না, কারো রঙ পছন্দ হয়না, কারো জামা ঈদের আগের দিন রাতে দেবে বলেছে টেইলর, সত্যি দেবে কিনা তার দুশ্চিন্তা। তার ওপর ঈদের স্পেশাল রান্নার ঝকমারি। কেউ বলছেন, দুপুরে কাচ্চি খাব, কেউ শুনে নাক কুঁচকে বলে, ছোহ্, এইবার চাইনিজ হোক। ওদিকে আরেকজনের ফরমাশ পড়ে, মেওয়া দিয়ে গাজরের হালুয়া চাইই চাই সাথে ঘরে তৈরি আনারসের কেক। মানে দশভুজা হওয়ার খুব বেশি বাকি থাকেনা আর।
মাঝে মাঝে ভাবি, জীবন নিজেই কি ক্রমশ জটিল হতে থাকে নাকি আমরাই জটিল করে তুলতে থাকি ? উত্তর পাইনা। বয়েসের ফের নাকি জানিনা, আজকাল প্রায়ই পুরনো দিনের সাথে তুলনাটা চলেই আসে। কি চমৎকার ঝর্নার মত স্বচ্ছ একটা কাল পার হয়ে এসেছি। এরকম রমজানের আগের দিনের সন্ধ্যায় সব্বাই ছাদে গিয়ে আঁতিপাঁতি খুঁজে বের করতাম চাঁদটাকে। দেখতে পেলেই সোল্লাসে চিৎকার দিয়ে বিরাট এক স্যালুটের ভঙ্গিতে সালাম ঠুকে দিতাম। বাকি যারা আগে চাঁদ দেখতে পায়নি তারা একটু হেরো হেরো ভাব নিয়ে মুখ ঝোলালেও খুশি হয়ে উঠতে দেরী করত না। আর রোজা তো থাকতেই হবে, প্রেস্টিজের ব্যাপার! দুপুর থেকে পেটে হাত দিয়ে শুয়ে কুঁ কুঁ করলেও বিকেল হলেই সবাই হিসেব কষতে বসে কে কয়টা রোজা করল; যার সংখ্যা বেশি হয় তার গর্বের অন্ত নেই।
তখন আমাদের পাড়ার কারো বাসাতেই টিভি ফ্রিজ কিছুই ছিলনা। ইলেকট্রনিক জিনিষ বলতে খুব জোর ছোট রেডিও বা গান শোনার টুইন ওয়ান। গরমের দিনে রোজার সময় বিকেলে শরবতের জন্য আমরা বরফ কিনতাম। এখনকার চকবারের সাইজের টুকরো বরফ। আইসক্রিমওলারা বিকেলে বিকেল বিক্রি করতে আসত। টাকায় আটটা করে। এক বার ঠিক ইফতারের আগে খুব শিলা বৃষ্টি হল। আমরা হুড়মুড় করে শিল কুড়োতে লেগে গেলাম। তারপর গামলা ভর্তি শিল ধুয়ে তাই দিয়ে শরবত, আহ কি ফুর্তি।
সেসময় শহরে একটা মাত্র আইসক্রিমের কারখানা ছিল, এমতাজ আইসক্রিম। পাঁচ পয়সার টুকটুকে লাল আর দশ পয়সার গোলাপি রঙা আইসক্রিম পাওয়া যেত। আরেকটা ছিল নারকেল কুচি দেয়া সাদা রঙের মহার্ঘ কুলফি মালাই। এক টাকা দাম। ভয়ানক দামি জিনিষ আমাদের জন্য, চাইলেই খেতে পেতাম না। আইসক্রিমের ফেরিওলারা কাঁধে কাঠের চারকোণা বাক্স চাপিয়ে ফেরি করে বেড়াত দিনমান। ঝুম দুপুরে সেই প্রলম্বিত আইস্স্কিরিইইইমমম ডাক শুনলেই মন আনচান, জানলায় উঁকিঝুঁকি। দৈবাৎ মায়ের অনুমতি মিললে আহা এন্তার সুখ। একবার মা এমতাজ আইসক্রিমের মালিকের বাসায় কি কাজে যেন সাথে নিয়ে গেল। শুনলাম নাকি ওরা আত্মীয়। বসার ঘরে গল্প করার ফাঁকে প্লেটে করে এত্তগুলো কুলফি মালাই সামনে ধরে দিয়ে যেতে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। এইরকম ইচ্ছেপুরণও হয় মানুষের !!!
এমতাজ আইসক্রিমের রমরমা কদিন বাদেই ফিকে হয়ে গেল। শহরে নতুন এক আইসক্রিমের কারখানা খুলল, নাম নুরী আইসক্রিম। আগের মত ঘাড়ে বাক্স ঝোলান গরিবি কেতা নয়। রীতিমত চাকাওলা আইসক্রিমের গাড়ি। তাতে আবার রঙিন ছাতা আছে। আর আইসক্রিমেরও কি বাহার। আমের মত দেখতে প্লাস্টিকের ছাঁচে আম সুগন্ধি আইসক্রিম, ভ্যানিলা, চকলেট কতরকম ! আহা !! শহর জুড়ে সবার তাক লেগে গেল। কদিন ধুমসে সেই আইসক্রিম খেয়ে ছেলে বুড়ো সবার টনসিল ফুলে একাকার। জ্বরে কুঁ কুঁ করতে করতে ওষুধ নিতে ডাক্তার চাচার কাছে যেতেই বলে উঠলেন, 'খুব নুরী খাওয়া হচ্ছে বুঝি, অ্যাঁ ?'
আর সেসময় ঈদ পরবের রান্নারই বা কি বাহার ছিল ?! আমাদের গ্রামের বাসায় ছিল পেতলের সেমাই বানাবার মেশিন। ঈদের কদিন আগে আগে গ্রামের সব মহিলারা ধামা ভরে আটা এনে তাতে সেমাই বানাতে লেগে যেত। নুডলসের মত এইয়া মোটামোটা সেমাই। ঘন দুধে প্রচুর কাজু কিশমিশ মেওয়া আর ঘরে তৈরি ঘিয়ের সাথে এই হাতে বানান সেমাই ছিল ঈদের আসল খাবার। এত গুচ্ছের কুকিং শোর গমগমি ছিলনা বলে মা খালারা নানান দেশি রান্না জানতেও পেতেন না। সাবেকি হালের সাবেকি খানাই ঈদের টেবিলে সাজিয়ে দেয়া হত। তবে একটা মজা ছিল যে, ঈদের দিন সবার বাসা সব্বার জন্য উন্মুক্ত। আমরা ছোটরা দলবেঁধে সব বাসায় ঘুরতে যেতাম। নিতান্ত অচেনা বাসায় গিয়েও বসার ঘরে বসে পড়েছি কত। কেউ কিচ্ছু জিজ্ঞেস করত না। উল্টে নানান রকম খাবার খেতে দিত। একবার একটা বাসায় আমাদের সবাইকে চা খেতে দিয়েছিল আলাদা আলাদা কাপে। আমরা চমৎকৃত হয়ে গিয়েছিলাম।
ঈদের আরেকটা দারুন আকর্ষণ ছিল পটকা। ঝলমলে পটকার দোকানে বাবার আঙুল ধরে হাজির হলেই একবাক্স পটকা মিলে যেত। সেইগুলো সারাদিন ধরে ঠুস ঠাস করে ফোটাও, কেউ কিচ্ছুটি বলবে না। উল্টে প্রশ্রয় মিলত । আর ছিল ঈদি। ভাইয়া পেত একটা একশো টাকার নোট, আমি পেতাম পাঁচটা দুই টাকার নোট। ভয়াবহ বৈষম্য । কিন্তু তাইতেই খুসির সীমা সংখ্যা ছিলনা। আসলে হিসেব কিতেব না করে শুধু খুশির খাতিরেই খুশি হওয়াটা বোধ হয় ওই বয়েসেই সম্ভব। লাভ লোকসান বুঝে গেলেই ওই ভাবে খুশি হয়ে ওঠা আর হয়না।
আজকের দিনের ঈদে বাসায় ছোটদের হল্লা দেখে কি অদ্ভুত মায়া লাগে এক একটা সময়। ইচ্ছে করে সাইজে ছোট হয়ে ওদের দলে ভিড়ে গিয়ে ঠিক আগের মত ছেলেমানুষি করি। আগের মত বাবার আঙুল ধরে 'ঈদি' 'ঈদি' বলে হল্লা করি। অনেক রাত অব্দি চুলার ধারে বসে মার ঈদের রান্না দেখতে দেখতে ঘুমে ঢুলতে থাকি আগের মত। করা হয়না কিছুই। সেই দিনগুলো যেমন নেই, সেই আমিও তো নেই আর আগের মত। দায়িত্ব কর্তব্যের, উচিত অনুচিতের নিয়মজালে বাঁধা বড়দের দুনিয়ায় এলে আর ফেরা যায়না।
ছোট হওয়ার পক্ষে বড্ড বড় হয়ে গিয়েছি যে !
মন্তব্য
আমি প্রথম
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
বাহ ! ফাহিম ফার্স্ট ! হাততালি হাততালি। কিন্তু ভাইডি হিসাবে একটু ভুল করেছেন, এই বস্তাপচা ব্লগে কমেন্ট করা নিয়ে কোনই হুড়াহুড়ি নাই, ওটা তুলিরেখার ব্লগের জন্য বরাদ্দ।
তবে তিন তিনটি কমেন্টের জন্য
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
উঁহু, মন্তব্যের কোন কোটা নেই। যে কোন পোস্টে প্রথম মন্তব্যের মজাই আলাদা। তবে তুলিদি দই-সন্দেশ দিল, আপনি শুধুই ধনে-পাতা!
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
সেইরকম স্মৃতিময় লেখা (গুড়) (গুড়) আমি নিজেও ঈদ খুব মিস করি। ছোটবেলার মজা বড়বেলায় পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
.
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ব্যাপার কী, তিনবার করে কমেন্ট করা? দুষ্টুমি হচ্ছে? ঠাম্মিকে ডাকব, পাখার বাঁট দিয়ে দু'ঘা বসিয়ে দেবে?
আহা আহা, শান্ত শিষ্ট লক্ষ্মী ছেলেটাকে কেন খালি খালি মারতে যাব ? প্রথম কমেন্ট না পড়ে করেছিল, পরেরটা পড়েটরে করেছে। তারপরেরটা 'দান দান তিন দান' হিসেবে এমনিই করেছে। তাতে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হল বাপু ? মন চাইলে তোমরাও কর, আমি কিচ্ছুটি বলবনা।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
ঠিক। আমিই ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড- বাকিরা লাড্ডু।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ও এই কথা!!!!
@কৌস্তুভ, ভয় দেখাচ্ছেন? বেশ ভয় পেলুম।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ঐ উপরে যা যা খাবারের কথা বলা আছে সঅঅব আমারও চাই!
একদম রবিদাদুর ছেলেবেলার মত হয়েছে এই অংশটা, সত্যি!
আর লেখায় শুধু গুড় দিয়ে পোষাবে না, হালুয়া ফিরনি চিজকেক অ্যাপলপাই সবকিছু দিতে হবে...
সঅঅব খাবার চাই ! বেশ তো, দাওয়াত রইল, ঈদের দিন আপনি সবান্ধবে আমন্ত্রিত। কিন্তু রবিদাদুর কথা বললেন কি মনে করে ? কমেন্ট পরে হাসব না কাঁদব ভেবে পাইনা। এযে কোথায় লোকমান আলি কোথায় জুতার কালি হয়ে গেল।
ওসব অ্যাপলপাই টাই লাগবেনা। যা মিঠে কথা বলেছেন, মন ভরে গেছে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে মনটা খ্রাপ করে দিলেন।
প্রথম রোযায় দেশ থেকে ফিরলাম। কতো বছর আগের মতো ঈদ করা হয় না। হয়তো বেশী বড়ো হয়ে গেছি।
ভাল্লাগছে
ধন্যবাদ ফ্রুলিক্স। মন খারাপ টারাপ ভুলে যান। এইতো আর কটা দিন পরেই ঈদ। আগের মত হবেনা, কিন্তু যেটা হবে সেটাও মনে রাখার মত করে করুন । একদিন তাহলে এইদিনের কথা ভাবতেও ভালো লাগবে, তখন মন ভালো হয়ে যাবে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
এই যে আরেকজন কমেন্ট কেপ্পন। আমার পোস্ট এলেই পছন্দনীয় বাবুর আর হাত খোলেনা। আফসুস।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আশা'দি, আপনাদের অনেক হিংসে হয় এই একটা জিনিসের জন্য।
আপনাদের শৈশব অনেক বেশি রঙ্গিন ছিল। কত গল্পই না করা যায় সেই ছেলেবেলা নিয়ে।
আর আমাদের গুলো কী ভীষন রকমের রঙ্গহীন, ম্যাড়মেড়ে।
এ নিয়ে বলার মত কিচ্ছু নেই
অনেক অনেক ভাল লাগছিল পড়তে। শেষ হতেই মনে হল, যাহ্ শেষ হয়ে গেল ?!!
সবাই দেখি একই কথা বলে, তাহলে শৈশবও কি অ্যারিথমেটিক প্রগ্রেশনে বর্ণহীন হয়ে চলেছে? তাহলে গ্রেস্কেলে পৌঁছে গিয়ে তারপর কী হবে?
এক্কেবারে!
অনেক ধন্যবাদ ভাই বন্দনা । লেখাটা বেশ লম্বা হয়ে যাওয়ায় আমি এমনিতেই সঙ্কোচে ছিলাম । এই কথা শুনে কি যে ভালো লাগলো বলার নয়।
রঙিন-সাদা জিনিষটা বোধ হয় কিছুটা দেখার ওপরও নির্ভর করে। তখন আমাদের জীবনে এত অপ্রাপ্তি ছিল বলেই হয়ত প্রাপ্তিগুলো অনেক বেশি অর্থময় আর রঙ্গিন হয়ে উঠত আমাদের কাছে। এখনকার বাচ্চাদের টাইম মেশিনে করে ওই সময়ে নিয়ে গেলে ওদের কাছেও মনে হয় ওটা 'ভীষন রকমের রঙ্গহীন, ম্যাড়মেড়ে'ই বোধ হবে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আশাদি কি হচ্ছে, আপনি সব মন খারাপের গল্পের ভান্ডার খুলে বসেছেন যে বড্ডো।
আপনের বরফের কথা শুনে আমার মনে পড়ে গেলো বাটিতে করে বরফ কিনে আনার কথা, তখন আমরা বলতাম পাহেরা বরফ।ইস কীসব দিন ছিলো।
ঈদের আগের দিন, ভাইবোনদের দুহাত মেহেদি রাঙ্গিয়ে দিতো বড় আপু। ও মেহেদি দিতে দিতে আমি ঘুমিয়ে কাদা। সকালে উঠে দেখতাম দুহাত লালচে সব বিচিত্র নকশায় ভরা। সে কি আনন্দময় দিন ছিলো। অনেকদিন হয় মেহেদিতে রাঙ্গিয়ে দেয়ার কেউ নেই চাঁদ রাতে। কেমন যেন ফাঁকা লাগে তাই। আপনি বড্ডো পচা দিদি।
সচলে লেখালেখির এই একটা দারুন লোভের দিক আমার। এক একটা দারুন কথায় এত মন ভালো হয়ে ওঠে যে বলার নয়। এটা তেমনি একটা লাইন।
মেহেদির কথা সহ আরও অনেক কিছুই মাথায় ছিল লেখার সময়। কিন্তু সেসব লিখতে গেলে উপন্যাস হয়ে যায়। মেহেদির স্মৃতিটা আসলেও অনেক মিষ্টি।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
শেষ প্যারায় এসে
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
ধন্যবাদ মৌনকুহর। কিন্তু আপনি কান্দেন কেন ? এটা তো কান্নাকাটি বিষয়ক লেখা নয় তেমন। আমরা সবাইই মাঝে মধ্যে ছোট হতে চাই বোধ হয়। সেটাই বলা আরকি।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
চাই, কিন্তু পারি না...... সেজন্যই এই কান্নাকাটি।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
আপনার ছোট বেলায় কি শায়েস্তা খাঁ বাংলায় ঘোড়া দাঁপিয়ে বেড়াতো? পাঁচ পয়সায় আইসক্রিম!
লেখা খুবই ভালো লেগেছে।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
হা হা হা...লেখা পড়ে মনে হতেই পারে যে আমার বুঝি বয়েসের গাছপাথর নেই। কিন্তু শায়েস্তা খাঁ ! নাহ অতদুর পর্যন্ত যেতে হবেনা। এখনকার বাজারের আগুনদর দেখে অমন মনে হলেও এগুলো খুব বেশি দিন আগের কথা না কিন্তু । সত্তর আশির দশকের কথা।
মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
মিলে গেলো বহুকিছু। একটু যোগ করতে চাই - গান, “ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে ....” তখন রেডিওর চরম দাপটের দিন, গানটা শুরু হলে বুকে আনন্দের একটা সাড়াশী আক্রমন হতো। পটকার সাথে ‘তারাবাত্তি’ বলে একটা জিনিস ছিলো, আকাশের সব তারা হাতে করে নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম, হৈ হৈ রৈ রৈ ..... যোগ করতে গেলেতো ফুরোবেনা।
একেবারে ‘সুলুক সন্ধানী’’ লেখা হয়েছে
ঠিক বলেছেন তানিম এহসান। এই গানটার সাথে ঈদ কেন যেন সমার্থক হয়ে গেছে। এখনও শুনলে বুকের ভেতর ছলাত করে ওঠে। বোমা পটকার কথা আর কি বলব। একবার গ্রামে পটকার শব্দে পুলিশ এসে হাজির। ভেবেছে ডাকাতি হচ্ছে। তারপর তো সরকার থেকেই ব্যান হয়ে গেল। তারাবাত্তি আমিও খুব মিস করি । মন্তব্যে ধন্যবাদ।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
ছেলেবেলার ঈদ। আহ কি অসাধারন! তার চেয়ে অসাধারন লাগল আশাদিদির লেখাটা।
থেঙ্কু থেঙ্কু থেঙ্কু সাইফ জুয়েল।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আহা! পাঁচ পয়সার আইসক্রিম শুনে মনে পড়লো... সেই দিন আর নাই...
তবে আমি পাঁচ পয়সার পাই নাই, ১ টাকা, ২টাকার ছিল, স্কুলের সামনের ভ্যানগাড়ির। শিল কুড়ানোর মজাটা একটা জটিল জিনিস। কিন্তু আপনার ভাই তো দেখি চরম লাভ করতো ঈদীর ক্ষেত্রে!! ঈদীর ব্যাপারে বরাবরই আমার ভাগ্য খুব খ্রাপ, মানে খুবই খ্রাপ...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
হ্যা, এক টাকা দুই টাকার আইস্ক্রিম খেয়েছি ম্যালা ইস্কুলের সামনে দাঁড়ানো ভ্যানগাড়ি থেকে। কিন্তু তা বাড়িতে বললেই খবর হয়ে যেতো
শেষ রোজার দিনে টিভিতে যেই শুরু হত "ও মন রমজানের ঐ..." এক সেকেন্ডও আর ঘরে নেই আমরা। মূহুর্তেই হাওয়া। গলির মোড়ের একটা দোকানেই পটকা তারাবাত্তি পাওয়া যেতো কেবল। সেই দোকানে কি ভীড় কি ভীড়। তারপর... আহা... মায়ের পাঠানো লোক এসে ধরে না যাওয়া পর্যন্ত রাস্তাতেই...
বৃষ্টির দিনে ভাই বোনদের নিয়ে বাবার সাথে শীলও কুড়িয়েছি ম্যালা । ঘন্টা দুই পর টন্সিলের ব্যাথায় কোঁ কোঁ অতঃপর আম্মাজানের বকা এবং অষুধ এক সাথে খাওয়া
বন্দনার কথায় মনে পড়ে গেল ঈদের আগের রাতে হাতে মেহেদি দেওয়ার কথা। আহা ভুলেই গিয়েছিলাম...
আমার হাতে আলপনা এঁকে দিতো আমার বড় ভাই। আমি ঘুমিয়ে যেতাম আর সে আমার হাতে নকশা এঁকে হাত ধরে শুয়ে থাকতো যাতে নকশা নষ্ট না হয়ে যায়। সকালে উঠে হাতের লাল নকশা দেখে খুশিতে আমার লাফালাফি দেখার জন্যই দাদা অমনটা করতো। আহারে... কোথায় গেল সব??? :(
আসলেও বন্দনা, ওই গানটা রোজার শেষ দিনে টিভিতে বাজানোমাত্র ঈদ শুরু হয়ে যেত আমাদেরও। তবে বৃষ্টিতে ভেজার ক্ষেত্রে আমি বিশাল ছাড় পেতাম। মা কোনোদিন কখনই এজন্যে আমাকে বকেনি। বৃষ্টি পাগলা ছিলাম যে। উল্টে বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ে থাকলে মা- ই বলত, ওই বৃষ্টি নামল, এইবেলা ছাদে যাও, নইলে ধরে যাবে আবার। আহারে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
ধন্যবাদ যাযাবর। আসলেও সেইদিন আর নাই। ঈদির ক্ষেত্রে আমার চাইতেও কারো ভাগ্য খারাপ হতে পারে জেনে যারপরনাই আনন্দিত হলাম। সত্যি। বাবা চিরকাল ওই দশ টাকাই দিতেন, উনার ধারনা ছিল আমি তাইতেই মহা খুশি হই। হতামও। বড় হওয়ার পর অবশ্য একটু একটু খারাপ লাগত।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
মনটা খুউব ভালো হয়ে গেলো দিদি লেখাটা পড়ে! পাঁচ পয়সার আইসক্রিম সত্যিই খেয়েছো তুমি! কৌস্ত্তভের মত আমিও বায়না করে গেলাম, লেখায় যা যা খাওয়ার ম্যেনু দিয়েছো সবববগুলো আমারও চাইইইইইই.......আমি কিন্তু এখনো ঈদি পাই জানো! লেখার প্রশংসায় আর নাই গেলাম নতুন করে।
আর লোকজন আমাকে কিনা বলে পেটুক!
হুঁ খেয়েছি তো কত্ত পাঁচ পয়সার আইসক্রিম। খেয়ে মুখ ঠোঁট সব রঙিন হয়ে যেত। ঈদি তো আমি এখনও পাই। কিন্তু আয়ের চাইতে ব্যয় বেশি হয়ে যায় এই যা।
আর খাইদাই ? কৌস্তভর সাথে তোমারও দাওয়াত রইল। ঈদের দিন সক্কাল সক্কাল চলে এসো, তবেই পাবে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
গতবছরের ঈদবাড়ি এক্সপ্রেস পোস্ট-- বিষাদনগর ইষ্টিশনে......
লেখায় ।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
গ্রামের বাড়ির ঈদ !! ইশশ। বলতে গেলে আরেকটা পোস্ট হয়ে যাবে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
স্মৃতিমাখা মিষ্টি একটা লেখা
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ তাসনীম
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
বাপ্রে এ যে প্রায় আমাদের কালের লেখা!! সত্তর দশকের স্মৃতি। উপরে কে জানি বললো মন খারাপ করা লেখা। কিন্তু আমার তো মন দারুণ ভালো হয়ে গেল স্মৃতিময় লেখাটা পড়ে, এবং চমৎকৃত হলাম এই স্মৃতিগুলোর সাথে নিজের স্মৃতির মিল দেখে। লাল সবুজ আইসক্রিমগুলোর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। আমাদের শহরে পাচ পয়সার আইসক্রিম ছিল লাল, দশ পয়সার সবুজ বোধহয়। এগুলো একদম পাথরসম শক্ত। ঠান্ডা আর মিষ্ট বাদে আর কোন স্বাদ ছিল না। পঞ্চাশ পয়সার ছিল একটা কমলা রঙের, এটায় অরেঞ্জ ফ্লেভার। মালাই আইসক্রিম থাকতো সাদা, মুন্ডুর দিকে কিছু নারিকেল। আমার কেবল লাল সুবজ পর্যন্ত খাওয়া হতো। কমলা আইসক্রিম পরীক্ষা বা বিশেষ দিনে যখন বাসা থেকে আট আনা দেয়া হতো। আর সাদা মালাই আইসক্রিম, দূর থেকে চেয়েই দিন যেতো। এই আইসক্রিম নিজের পয়সায় খাবার জো ছিল না। বাবাকে ফুসলিয়ে যদি কখনো খাওয়া হতো। একটাকার কি বিশাল দাম ছিল। কতদূরে ফেলে এসেছি ওই সময়গুলো। আর কতো কিছু মনে পড়ে গেছে.....লিখতে হবে সময় করে। অসাধারণ লেখাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ, লেখালেখি জারি থাকুক।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ধন্যবাদ নীড় সন্ধানী । অনেক ধন্যবাদ এই দারুন কমেন্টের জন্য। তবু ভালো নিজের আমলের কাউকে পাওয়া গেল। নইলে তো মনে হচ্ছিল শিং ভেঙ্গে বাছুরের দলে ভিড়েছি।
আসলেও এক টাকার তখন কি বিশাল দাম ছিল। এখনকার বাচ্চাদের মত চাইলেই হাতে টাকা পয়সা পাওয়া যেত না। হটাত মটাত ওই সাদা আইসক্রিম দু একটা মিলে গেলে কি খুশিই যে লাগত। আপনার যা যা মনে আসছে তা আমাদের সাথে শেয়ার করে ফেলুন চট জলদি। জমিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করা যাবে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
মনে পড়ে ছোটবেলায় একবার লটারীতে আট আনায় ছয়টা আইসক্রীম পাইছিলাম।।। কি যে মজা লাগছিলো।
গতবার কোরবানীর ঈদে বাড়ি যাইনি, ওদিকে বাসায় রান্না করার কিছু নেই, কি খাব এই যখন ভাবছি তখন এক বন্ধু বড় ভাই বললো চল খাইতে যাই। একেবারেই অপরিচিত এক বাসায় ঢুকে গেলাম খেতে। পেট ভরে খেয়ে তবে বের হলাম। ভীষণ মজা হয়েছিলো।
আশাদি নিমন্ত্রণ দিবেন নাকি! সামনেই আবার ঈদ!!
লটারিতে আইসক্রিম !! হায়রে আজ পর্যন্ত একটা সুতাও পেলাম না। আমার সত্যিকারের রান্না খেয়ে এই বয়েসেই মরবার শখ না করাই ভালো।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
ওটাই প্রথম ওটাই শেষ ছিলো।
যাক প্রচ্ছন্ন একটা নিমন্ত্রণের আভাস পাওয়া গেলো!!!!
কী দারুণ, কী ঈর্ষনীয় একটা শৈশব ছিলো আপনার। লেখাটা চমৎকার।
ধন্যবাদ দিহান।
আশা করি এখনও আমার ওপর রেগে নেই। তবু মনে কষ্ট থাকলে আবারও দুঃখ প্রকাশ করছি।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
ঈর্ষনীয় একটা শৈশবের দারূণ বর্ণনা।
ধন্যবাদ।
এম আব্দুল্লাহ
মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা এম আব্দুল্লাহ।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
চমৎকার লাগল।
ধন্যবাদ saima । জেনে ভালো লাগলো।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
শৈশব কড়া নাড়ে............ .............খাওয়া দাওয়ার কথা-গল্প শুনলে আমার আবার ভীষণ ভালো লাগে.............ভুঁড়িয়াল মানুষ তো!!!!!!!!!
লতাদি, যাক নিয়মিত আপনার লেখা পাচ্ছি................ এরকম সব সময় চাই................
ধন্যবাদ কবি।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
কমেন্ট দিতে অনেক দেরী করে ফেললাম বর্ণিল শৈশবের কথা মনে করিয়ে দিলে আপু ।
ইয়ে...আমারও উত্তর দিতে অনেক দিতে দেরী হয়ে গেল ধন্যবাদ
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আমরাও ছোট বেলায় অনেক পটকা ফুটিয়েছি। আশে পাশের বাড়ির বিশেষ করে যাদের উপর রাগ থাকতো তাদের দরজার কলিং বেলের বাটনের সাথে আগরবাতীর টাইম ফিউজ সহ পটকা টেপ দিয়ে আটকে আগুন দিয়ে পালিয়ে যেতাম। তবে অবশ্যই খাওয়ার পর। আর আমাদের বেশ বড় গ্যাং ছিলো যার মূল উদ্দেশ্য ছিল পাড়ার বাড়ি বাড়ি ঘুরে আর বেশি খেয়ে খেয়ে খাবারে শর্ট ফেলে দেওয়া। ...অনেক কথা মনে পড়ে গেল পড়তে পড়তে। অতি উপাদেও লেখা
আরে বাহ, এত ইনোভেটিভ আইডিয়া দিয়ে দুষ্টুমি করার আইডিয়া তো কোনোদিন আসেনি মাথায়।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আবারো ঈদ ঢাকায় করতে হবে চিন্তা করে মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
নতুন মন্তব্য করুন