পরীক্ষা দিতে বসে একটা শব্দ কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না। কতক্ষণ কলম পেন্সিল কামড়ে লাভ না হতে পাশের বান্ধবীকে গুঁতোলাম-
-এই, ঐ শব্দটা যেন কি রে ?
- কোনটা ?
- ওই যে শুকনো করে লম্বামত...
- ??!
- আরে, ওই...যেটা বেশ সরু সরু... গাছের ডালে পাওয়া যায়...
- !!!
- আহ্..., ওই যেটা দিয়ে পুলিশরা মারে... ওই যে...
এই পর্যায়ে এসে অপরপক্ষের ধৈর্যচ্যুতি ঘটায় হিসহিসিয়ে বললে, তোরই মাথায় মারা দরকার, লাঠি দিয়ে...
এইবার ইউরেকা বলে চিল্লিয়ে উঠে 'হ্যাঁ হ্যাঁ ! লাঠি লাঠি !' বলতে আরেকজন যে দৃষ্টিতে তাকাল তাতে আমার ছাই হয়ে যাবার কথা। কিন্তু অভ্যাসেই গায়ে লাগলো না। লাগবেই বা কিসে। প্রায়ই এটা ওটা ভুলে যাবার বাতিক তো আমার বহু পুরনো। ইংরেজি লিখতে বসে টি এর মাথা না কাটা, আইএর মাথায় ফোঁটা না দেয়া এগুলো তো নিয়মিত ছিল। পড়াতে বসে দাদু খালি মাথা নাড়তেন। বলতেন, সেই এক লোক ছিল, যে রোজ বাইরে থেকে ফিরে ঘরের কোণায় ছড়িটা রেখে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে যেত। একদিন তাকে ভুলোরোগে ধরল তারপর থেকে রোজ ঘরে ফিরে ছড়িটাকে বিছানায় শুইয়ে নিজে সারারাত ঘরের কোণায় দাঁড়িয়ে থাকত। আমি শুনতাম নির্বিকার মুখে। কথায় বলে দুকান কাটা হাঁটে পথের মাঝ দিয়ে। কাজেই আমার ভুলো রোগের বীজ জলবাতাস পেয়ে মহীরুহ হয়ে উঠতে সময় লাগলো না। আমি তাই প্রায় নিয়মিতই ঘরে চাবি রেখে তালা মেরে দিই, জুতোটা ছাতাটা হারাই, দরকারি কাজ ভুলে গিয়ে ভণ্ডুল করে ফেলি, মায় মাঝে মধ্যে নিজের বাড়ির রাস্তা ভুলে শুকনো মুখে রিকশায় বসে ঘেমে একশা হই।
এইসব কাণ্ড করে নাস্তানাবুদ হতে হতে কলেজকালের এক বান্ধবীর কথা ভেবে বড্ড হিংসে হয় এক একদিন। ওর মাথায় বোধ হয় একখানা অন অফ সুইচবোর্ড আছে। ইচ্ছেমত কথা ভুলে যাবার এমন গুণ আর দেখিনি কোথাও। যে মানুষটার সাথে একসাথে জীবন কাটাবে বলে জীবন মরন প্রতিজ্ঞা করল, মোটা মানিব্যাগওলা আরেকজনকে বিয়ে করে দুদিনেই তাকে বেমালুম ভুলে গেলো কিভাবে যেন। বরং আমাদের গোমড়া মুখ দেখলে বলত, মানুষ যে কিসে এত কষ্ট পায় বুঝিনা বাপু। তার নাকি ভারী দুঃখ যে, করবার মত তেমন কোনও দুঃখই তার নেই ! ভুলে যাবার এমন গুণ থাকাটা সুবিধেরই বটে। এক একদিন তাই মনে হয় ওর মত হলে বোধ হয় মন্দ হতোনা। কিছু মানুষের মুখ, কিছু কথা, কিছু হাসি ইচ্ছেমত ভুলে যেতে পারলে ওর মতই সুখী হয়ে ওঠা যেত হয়ত খুব সহজেই।
কিন্তু তা হয়না। আমার মতই আমার ব্রেনও অপদার্থ। সে বান্ধবীর ক্লাস ফোরের রোল নাম্বার এমনকি তার এক্স বয়ফ্রেন্ডের বার্থ ডেট মনে রেখে দেয়, কবে এক নীল পাখি ঘাড় বেঁকিয়ে অদ্ভুত করে তাকিয়েছিল সেই দৃশ্য টুকে রাখে অথচ এটিএমের কি সচলের পাসওয়ার্ডের মত কাজের জিনিষ ভুলিয়ে দিয়ে বসে থাকে। অবশ্য মাঝে মধ্যে কিছু কিছু বিষয়ে ঘটে একেবারে উলটো ব্যাপার। সেসব জিনিষ চাইলেও ভুলে যাওয়া যায়না। সমস্ত অনুভূতি নিয়ে সুতীব্র আবেগে তা জেগে থাকে ভেতরে, সবসময় ।
মাথার ভেতর এরকম ঝকঝকে স্মৃতি নিয়ে প্রায়ই জেগে ওঠে একটা বই । সাধারণ নিউজপ্রিন্টে ছাপানো মলাটহীন ছেঁড়াখোঁড়া কিন্তু অসাধারন একটা বই।
বাসার লাইব্রেরিটা ছিল জগাখিচুড়ির যথার্থ উদাহরণ। ফাল্গুনী, আশুতোষ নিমাই থেকে শুরু করে ডেল কর্নেগি, কিরো, বঙ্কিম, আনোয়ার হোসেন, হুমায়ুন আহমেদসহ আর সবাই ছিল পাশাপাশি। তখনও মাসুদ রানা নিষিদ্ধ তালিকায় ছিল, আর নিষিদ্ধ ছিল সেই বইটা। সেটা থাকত সবার নিচে । সাইজে প্রায় একখানা নিউজপেপারের সমান তবে মোটাসোটা। মা কখনওই সেটা হাতে নিতে দিত না। কারণটাও বলত না। একদিন ঝাড়মোছ করতে গিয়ে ওটায় হাত পড়তে হটাত বললে, এখন তো বেশ বড় হয়েছ, এখন এটা দেখতে পারো।
আর যায় কোথা। লাফিয়ে উঠে টেনে নিয়ে পাতা খুলে বসলাম। আর বসতেই এক ধাক্কায় থমকে যেতে হল । ওইটুকু জীবনে এরকম শক্ত ধাক্কা আর খাইনি। বড় বড় পাতা জুড়ে ছবির পর ছবি। যুদ্ধের ছবি। ধ্বংসের ছবি। হত্যার ছবি। মানুষের ওপর মানুষের ঘৃণার ছবি।
যে যুদ্ধের গল্প শুনেছি পড়েছি এতদিন, সেই যুদ্ধ তার ভয়ংকর রূপ নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াতে ছোট্ট বুকটা ধুকধুকিয়ে উঠে শিউরে গেলো। মা কতক্ষণ নিস্পলকে ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে শুধু বলল, আহ্ ! ছোট্ট একটা শব্দে তীব্র কষ্ট এক বেরিয়ে এল। কেমন একটা বিষণ্ণ গলায় আস্তে আস্তে বলতে লাগলো সেই সব দিনরাত্রির গল্প। এই গল্পগুলো বলতে গেলেই মা কেমন হয়ে যেত। গল্পগুলোর কিছু আগেও শুনেছি। সেদিন আরো অন্যরকম হয়ে গেলো। গুলি খেয়ে গ্যাংগ্রিন হয়ে মাংস খসে খসে পড়া নানার যন্ত্রণাদগ্ধ চিৎকার, ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড়ানো বড়মামার আতঙ্কিত দীর্ঘশ্বাস, ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রাণ হাতে পালানোর অবিশ্বাস্য কাহিনী, ঘাসপাতা খেয়ে কোনরকমে বেঁচে থাকা- সবগুলো গল্প যেন ছবিগুলোর হাত ধরে একসাথে সত্যি হয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো ।
যুদ্ধের একমাত্র প্রাপ্তি খসখসে কালো কম্বলটা জড়িয়ে ছোটমামা প্রায়ই যুদ্ধের গল্প বলতেন। বলতে বলতে কোথায় হারিয়ে যেতেন যেন। হয়ত বদলে যাওয়া দেশটার সাথে নিজেদের স্বপ্নটাকে মেলাতে পারতেন না। গল্পগুলো তাই শেষ হতোনা প্রায়ই। কিন্তু মামার ছলছলে হয়ে ওঠা চোখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হতোনা। অনেকক্ষণ পর দৃষ্টিটা ফিরিয়ে এনে মাথায় হাত দিয়ে বলতেন, তোমরা মানুষ হয়ো মা। মানুষ হয়ো। মরে যাবার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত রোজদিন কম্বলটা সাথে রেখেছিলেন। সামান্য একটা কম্বল কেন অসামান্য হয়ে গিয়েছিল বুঝতে আমার অনেক দিন লেগেছিল।
উনিশশ' একাত্তর দেখা হয়নি আমার। অসংখ্য বইয়ের পাতায় দেখেছি তার চেহারা। কিন্তু তার সাথে পরিচয় মায়ের মুখেই। কত দিন সেইসব গল্প শুনে শুনে শিউরে উঠেছি বারবার। সেগুলোকে সত্যি বলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হত। সেই অদ্ভুত বইটার ছবিগুলো, যন্ত্রণায় বিকৃত হয়ে যাওয়া সেই মৃত মানুষগুলো যেন নিঃশব্দে চিৎকার করে বলে উঠছিলো, আমরা কেবল গল্প নই, আমরা সত্যি। তীব্রতম ভয়ংকর এক সত্যি।
প্রতি বছর মার্চের দিকে ক্যালেন্ডারের পাতা এগুলেই আমার মনে পড়ে যায় ওই ছবিগুলো, ওই না দেখা মানুষগুলো। অনেককেই বলতে শুনি, আরে দূর, এইসব গণ্ডগোলের অতীত টেনে বেড়িয়ে আর কি লাভ ? আমাদের এখন সামনে তাকানো উচিত। আমি পারিনা। আমি ভুলতে পারিনা। এই দিনটা থেকেই যে আমাদের স্বাধীন হবার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠা অনন্য ইতিহাসের শুরু তা আমি ভুলে যেতে পারিনা কিছুতেই।
আমার কেবলি সব মনে পড়ে যায়।
মন্তব্য
'স্মৃতি বড় উচ্ছৃঙ্খল, দু'হাজার বছরেও সব মনে রাখে...'
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
সেটাই তো সমস্যা। ইচ্ছেমাফিক ভুলে যেতে পারলে বড় ভালো হত।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
বেশ হাসিখুশি গল্পটা দুম করে গম্ভীর হয়ে গেলো। তবে কিনা আমাদের অনেক বাসাতেই ঐ বইগুলো থাকে না, সেই ছবিগুলো কেউ দেখে না। স্বাধীনতা শব্দটি কি করে আমাদের হোলো, একথা মনে করিয়ে দেবার চাইতে ভুলিয়ে দেবার চেষ্টাই বেশি।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
হুম, অনেকদিন ধরেই মনে হচ্ছিল লিখতেই ভুলে গেছি, সেই হিসেবে লিখেছি যে, আমার জন্যে এইই ঢের। লিখবার সময় আমিও খেয়াল করেছি যে মুডটা একদমই বদলে লেখাটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আর বদলাতে ইচ্ছে করল না। আরও অনেক কিছুর মত এটাও এলোমেলোই রেখে দিতে ইচ্ছে করল।
শেকড়ের কথা কেউ ভুলিয়ে দিতে চাইলেই আমরা ভুলব কেন ?! আত্মসম্মান যার থাকবে সে নিজেই নিজের মায়ের কথা, মাটির কথা জেনে নেবে। যাদের থাকবেনা তারা জানবে না।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আপনিও আজকাল বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ফাঁকিবাজি শিখে ফেলেছেন দেখি !
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
দুইমাস ( ১ মাস ২৪ দিন কাটায় কাটায়) পর পোস্ট দিয়ে আমাকে ফাঁকিবাজ বল্লেন
ইয়ে, মেটাল্যাব না কি যেন এক পোষা জিনিষ আছে আপনার, আমার তো আর তা নেই। বরং আমার প্রাগৈতিহাসিক প্রসেসরে প্রায়ই সমিস্যা দেখা দেয়। কাজেই আমি বাই ডিফল্ট ফাঁকিবাজ এবং অলস। কিন্তু তাই বলে আপনি আমায় বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পালিয়ে যাবেন ?
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
তীব্রতম এই সত্যিটাকেই বুকে যত্ন করে লালন করছি
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
শুরুর দিকে ভুলে যাওয়ার, হারানোর কথাগুলো পড়তে পড়তে খুব পছন্দের একটা কবিতার কথা মনে পড়ে গেল কেন যেন, সেটা ভাবতে ভাবতে আরেকটু নিচে নামতেই... তীব্রতম ভয়ংকর এক সত্যের মুখোমুখি হতে হলো। ধন্যবাদ লেখাটার জন্য।
আর যে কবিতার কথা ভাবছিলাম, সেটা নাহয় দিয়েই যাই...
"One Art"
- Elizabeth Bishop
The art of losing isn't hard to master;
so many things seem filled with the intent
to be lost that their loss is no disaster,
Lose something every day. Accept the fluster
of lost door keys, the hour badly spent.
The art of losing isn't hard to master.
Then practice losing farther, losing faster:
places, and names, and where it was you meant
to travel. None of these will bring disaster.
I lost my mother's watch. And look! my last, or
next-to-last, of three beloved houses went.
The art of losing isn't hard to master.
I lost two cities, lovely ones. And, vaster,
some realms I owned, two rivers, a continent.
I miss them, but it wasn't a disaster.
-- Even losing you (the joking voice, a gesture
I love) I shan't have lied. It's evident
the art of losing's not too hard to master
though it may look like (Write it!) a disaster.
কবিতা আমি খুব একটা পড়ি না। বুঝিনা বলেই আসলে। কিন্তু এই কবিতাটা এত অদ্ভুত সুন্দর যে পড়ে কতক্ষণ কথা খুঁজে পেলাম না। চুপ হয়ে যেতে হল। অনেক অনেক ধন্যবাদ অপ্র।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আমার এক আত্নীয় আছে যার বাবাকে পাকিস্তানি আর্মি '৭১-এ হত্যা করে। এই ব্যাটা এখন পুরা পাকি-জামাতিপ্রেমী।
****************************************
সেই লাইনটার মত বলতে ইচ্ছে হল 'সে যে কাহার জন্ম নির্নয় না জানি !'
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
লেখায় ।
মাসুদ রানার কথা আসতে মনে পরে গেল এই লেখার শিরোনামে তার একটি বইয়ের কথা।
ধন্যবাদ আবুল।
মাসুদ রানার সেই বইটা ছিল সম্ভবত রানা সিরিজের দশ নাম্বার বই। বাসায় যেটা ছিল সেটা একদম টাটকা ফার্স্ট এডিশন। দারুণ লেগেছিল পড়তে। আমি অবশ্য খাদক শ্রেণীর পাঠক ছিলাম বলে রানা, কুয়াশা, বনহুর, দস্যু মোহন সবই গপাগপ গিলে ফেলতাম।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
নাগিনী, বাহ্রাম, পাঞ্জা - এগুলি?
****************************************
বাহ্রাম পড়েছি কিছু, বাকি গুলো পাইনি তাই খাইনি। তখন তো নিজের বই কিনবার ক্ষমতা ছিলনা। তাই ছাপার অক্ষরে হাতের কাছে যা পেতাম তাই পড়তাম।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
খুব সুন্দর। কিন্তু খুব ছোট লেখা।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ছোট !! কই ?!
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
কি বলব বুঝতে পারছি না
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
ঠিকই ধরেছেন দমুদি। আমি আসলে খালি একা একাই ব্লগর ব্লগর করে যাই তো, তাই তাতে বেশির ভাগ সময়েই বলার কিছু থাকেনা। ব্যাপার না। আপনি পড়েছেন, সময় দিয়েছেন এতেই আমার ভারী আনন্দ হল।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
চেষ্টা করে মনে করে যায়, কিন্তু চেষ্টা করে ভুলে যাওয়া যায় না।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
এত সুন্দর সুন্দর কথা যে আপনি কই পান আল্লা জানে। আমার তো ধারণা ছিল খালি সন্ন্যাসী মন্ন্যাসি মানুষেরাই এইরকম কথা বলতে পারে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আসলেই কিছু বলার নেই!
টিভিতে ছবি দেখছি, বইতে লেখাতে পড়ছি, আর কিছু মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যাচ্ছে বহু বহু গুণ। সে মানুষগুলো না থাকলে আমাদের এভাবে চোখে আঙ্গুল দিয়ে মনে করিয়ে দেবার কাজটা অনেক কঠিন হত।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
কিছু মানুষ সব সময়েই ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে বেরিয়েছে বলেই আমরা এতদুর আসতে পেরেছি।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
"চেনা দুঃখ, চেনা সুখ, চেনাচেনা হাসি মুখ" এর বাইরে আজ সবই বড্ড ক্লিশে এবং আত্মমুখী। ইতিহাস অনেক কিছুই ছিনিয়ে নিয়ে আমারদের নীরব ব্যাথাতুর উষ্ণতা দিয়ে গেছে। তাই সেই উষ্ণতা হয়তো 'মামা' তাঁর কালো কম্বলে খুঁজে বেড়াতেন।
ডাকঘর | ছবিঘর
হয়ত।।।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
১৯৭১ পেরিয়ে আসা মানুষেরা অনেকেই বুকে অভিমান নিয়ে বেঁচে থাকেন, এক সময়ে চুপ করে হারিয়ে যান। শুনেছি আমার দাদা নাকি এক সময় বেশ ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। কিন্তু ১৯৭১ এর পর থেকে তিনি আর কোন মৌলভীর পিছে দাড়ান নি বা তাকে নামাজ পড়তেও আমি দেখিনি। কেন? তার উত্তর তার কাছে জিজ্ঞেস করার বয়স হবার আগেই তিনি অভিমান নিয়ে অন্য পারে চলে গেছেন।
আমাদের সবার পরিবারেই ১৯৭১ নিয়ে অনেক গল্প কষ্টের পাথরের নিচে চাপা নিয়ে রাখা আছে। সেগুলো কি পারিবারিক ইতিহাস হিসেবেও সংরক্ষণ করা উচিত নয়?
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
সংরক্ষণের তাগিদটা আসলে আমি আপনি বলে করানো যাবেনা। সেটা অনেকেরই ভেতর দৃষ্টিকটু রকমের কম। আমি অনেক পরিবার দেখেছি যারা একাত্তর কে বিরক্তিকর একটা ঝামেলার বছর মনে করেন। এখনও তাদের মানসিক আনুগত্য ভারত নয়ত পাকিস্তানের প্রতি ন্যস্ত। এমনকি দু একজন এখনও আছেন যারা এখনও নিজেদের নেম কার্ডে পাকিস্তানের পতাকা দিয়ে রাখেন। অথচ এই দেশের জলহাওয়ায় বেঁচে থাকে তারা। কেউ জেগে থেকে ঘুমোলে তাকে জাগায় সাধ্য কার ?
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আমার খুব কিছু একটা করতে ইচ্ছা করে। ক্লাস এইটে যখন বছরের শুরুতে বই পাওয়া যাচ্ছিল না আমাদের ক্লাস টিচার একটা বছরব্যাপী প্রজেক্ট ধরিয়ে দিয়েছিলেন। ১৯৪৮ -১৯৭১ পর্যন্ত কি হয়েছিল আসলে পত্র পত্রিকা, বই ভিডিও যা পাওয়া যায় ঘেটে ঘুটে একটা স্ক্র্যাপ বুক বানাতে হবে। ১৯৯৬ এর পুরো বছরটা সেই যে বাংলাদেশের ইতিহাস খঁজার অভ্যাস হয়েছিল সেইটা এখনো বহাল আছে। হইতে পারে বছর শেষে ১০ টা বোনাস নাম্বারের জন্য কাজটা শুরু করেছিলাম, কিন্তু সারা জীবনের জন্য আমার পুরা চিন্তা চেতনা পালটে দিয়েছে এই ছোট্ট একটা জিনিস। আব্বা আম্মাকে জ্বালায় মারতাম মুক্তিযুদ্ধের বই, কি বিভিন্ন পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা যোগাড় করে দেয়ার জন্য।
আমার ইচ্ছা করে কোন একটা প্রতিযোগিতা শুরু করি, মুক্তিযুদ্ধের সত্যি গল্প লেখ। সবাই বাবা, চাচা, দাদু, নানা, এমনকি বাড়ির কাজের লোকের মুখে থেকে শুনে নানান গল্প লিখে জমা দিবে। সেগুলোর বিশাল আর্কাইভ তৈরি হবে আর পুরস্কার হিসেবে সবচে সুন্দর গুছানো বা লোমহর্ষক গল্পগুলো একসাথে করে বই বইমেলায় বই বের হবে, খন্ড খন্ড আকারে। আমরা যুগ যুগ ধরে এইসব বই সংগ্রহ করে রাখব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
একা করা দুরহ। আর কেউ কি কোনভাবে সহায়তা করতে পারেন না?
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আমরা সচলায়তনের পক্ষ থেকে স্কুল পর্যায়ে করতে পারি কাজটা। একটা ছোটোখাটো স্পনসর পেলে আরো ভালো হতো, সেরা তিনজনকে ক্যাশ টাকা পুরস্কার দেয়া যেতো।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচীর মত অল্প কিছু স্কুল নিয়ে শুরু হতে পারে। এক্সট্রা কারিকুলার একটিভিটিতে উৎসাহ দেয় এমন স্কুল গুলোতে সপ্তাহে একদিন একটা ক্লাস পিরিয়ড বরাদ্দ করা যেতে পারে, প্রতিদিন একজন স্টুডেন্ট তার লিখে নিয়ে আসা গল্প সবাইকে পড়ে শোনাবে। ৩ মাস বা ৬ মাস প্রজেক্ট শেষে সবগুলো গল্প জমা দেয়া হবে প্রতিযোগিতার জন্য।
সম্ভাব্য স্পন্সর কারা হতে পারে? বাজেটই বা কত লাগতে পারে? পরবর্তীতে বই প্রকাশ করা গেলে তার আয় থেকে প্রারম্ভিক খরচ তুলে আনা যাবে কি?
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
সঠিক।
খুবই চমৎকার আইডিয়া।
চমৎকার আইডিয়া।
এবিষয়ে যেকোন উদ্যোগে সাথে আছি।
স্পনসরের ব্যাপারে যেকোন সহায়তা করতে পারবো।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
অনেক ধন্যবাদ। উৎসাহ পাচ্ছি। প্রথম পদক্ষেপ কিন্তু এই সচলেই নেয়া যায়। সচলেরা যারা ৭১ দেখেননি, তারা বাবা মায়ের মুখে শোনা কাহিনী গুলো লিখুন। সবার অংশগ্রহণে একটা সিরিজ শুরু হোক। এরপর এই উদাহারণ গুলো দেখিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষদের বুঝানো সহজ হবে উদ্যোগটা আসলে কি।
আর গল্প সংরক্ষণের চেয়েও যেটা বড় উদ্দেশ্য তা হলো, নিজেদের ইতিহাস সমন্ধে গর্ববোধ, অনুভূতি তৈরি করা। আমরা যতই ইতিহাস সংরক্ষণ করি না কেন নতুন প্রজন্মের কাছে তা কিছু শব্দে আটকা কিছু ফ্যাক্টস মাত্র, অনেকের কাছেই আমাদের সংগ্রামের ইতিহাস যে ভীতি, শিহরণ, ঘৃণা, জয়ের গর্ব, উল্লাস, ভালোবাসা কোন অনুভূতিই বহন করে না, (এরাই নিঃশঙ্কচিত্তে স্টেডিয়ামে পাকি পতাকা দোলাতে পারে। ) এই তীব্র অনুভূতির সাথে এদের পরিচয় করিয়ে দিতে পারে কাছের একজন মানুষের কাছে থেকে শোনা তার জীবনের ঘটনা, তখন স্বাধীনতাকে আর এত দূরের জিনিস মনে হয়না। শুধু আর্কাইভ নয় আবেগ সৃষ্টি করাও এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
খুব সহজ একটা পুরস্কার হতে পারে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আজীবন ফ্রী প্রবেশাধিকার।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
দারুণ ! দারুণ আইডিয়া ! সাথে আছি ।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
পরীক্ষা না শেষ ? এখনও "মৃত্যুময় ঈষৎ(অফলাইন)" চলছে কেনু ??
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
মনে পড়লেই ভালো, ভুলে গেলেই মহাবিপদ। আমাদের অনেকেই ভুলে গেছে। ভুলে গেছে বলেই দেশের এই অবস্থা।
লেখায়
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
না, আমরা ভুলে যাবনা। যতদিন শক্তি থাকবে সবাইকে মনে করিয়ে দিতে থাকব।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
facebook
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আমার চার মামাই মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধ থেকে ফেরত আসার পরে তাঁরা সবাই একটি করে সার্টিফিকেট পেয়েছিলেন।
বড় মামা ভাল পদেই একটা সরকারি চাকরি করতেন। ফিরে এসে সেই চাকরিটা আর পান নি। রাগ করে আর কোনো চাকরির জন্য আবেদনও করেননি। সার্টিফিকেট ছিড়ে ফেলে দিয়ে জিদ করে বলেছিলেন, 'ট্রাক চালিয়ে বৌ বাচ্চার ভরণ পোষন করবো তাও---'
দুই বছর ট্রাক চালিয়ে শেষে আর্কিটেক্ট বাবা আর উকিল শশুরের র ইজ্জত রক্ষার্থে ড্রাইভারি করায় ক্ষান্ত দিয়ে ঢাকায় জন্ম বোড় হয়ে ওঠা ড্যাশিং যুবকটি গ্রামের বাড়ি চলে গিয়ে কৃষক হয়েছেন।
ছোটবেলায় তাঁর কাছে যখন যুদ্ধের গল্প শুনতে চাইতাম তিনি আদর করে থুত্নি নাড়িয়ে দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে যেতেন। বড় হয়ে একবার চেপে ধরায় গলার রগ ফাঁটিয়ে বললেন, আমি কোনো যুদ্ধ করিনি।আমি কিছুই জানিনা। যা ভাগ।'
কিসের যে রাগ বুঝিনা। কারন উনি কিছুই বলেন না।
মেঝো মামা মাঝে মাঝে কিছু বলেন বটে, তবে তা বেশির ভাগই হতাশার কথা।
যে স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলাম সেই স্বপ্ন---' মুক্তিযুদ্ধ ফেরত বেশিরভাগ যোদ্ধাদের চিরাচরিত সেই আফসোস।
সেঝো মামা সার্টিফিকেটটা ছিড়ে ফেলার জন্য অবশ্য এখন খুন আফসোস করেন। উনি সব চেয়ে ভাল আছেন।
না দূর্নীতি করে নয় বা যোদ্ধা পরিচয়ের সফল সুযোগ নিয়ে নয়। এম্নিতেই কাজ কারবার করেই ভাল করেছেন বরাবর।
তারপরেও উনার মুখেও যুদ্ধদিনের গল্প খুব বেশি শুনতে পাইনা। এটার কারনও বুঝিনা।
৭১ এ ছোট মামার বয়স ছিল ১৬/১৭।
ঢাকা গোপালগঞ্জ বরিশাল অঞ্চলে বহু গেরিলা আক্রমনে সরাসরি অংশগ্রনকারী।
শুধু ইনি-ই মাঝে মাঝে টুকটাক কিছু বলেন। তারপরেও কন্ঠে একটা অভিমান একটা শ্লেষ ঝরেই শেষ পর্যন্ত।
এটাও আমার কাছে বিস্ময়কর।
মুক্তিযোদ্ধাদের এই অভিমান শুধু আমার মামাদের ক্ষেত্রেই দেখিনি। অনেক অচেনা অপরিচিত যোদ্ধাদের সাথে স্বল্প আলাপের মধ্যেও পেয়েছি বার বার, "কি হবে আর বলে?" বা " শুনেই বা কি করবে?" জাতীয় কথা।
আমি এখনো এই অভমানটুকুকে বুঝতে যাই। চেষ্টা করেও পারিনা। আর হয়তো দেড় দুই দশক। তারপর সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা সত্যি করেই হারিয়ে যাবেন চীরতরে। যাবার আগে কি কেউ খোলাসা করে বলে যাবেন, কী অভিমান তাঁদের?"
আমি সত্যি জানতে চাই।
"১৯৭১ এর পর থেকে তিনি আর কোন মৌলভীর পিছে দাড়ান নি বা তাকে নামাজ পড়তেও আমি দেখিনি। কেন? তার উত্তর তার কাছে জিজ্ঞেস করার বয়স হবার আগেই তিনি অভিমান নিয়ে অন্য পারে চলে গেছেন।"
শিশিরকণার মন্তব্যের সূতো ধরে এত্তো কথা বললাম। বিশাল কমেন্টের জন্য দুঃখিত।
আশা'দির লেখার তারিফ নাই বা করলাম আর, তবে মনটা সত্যি খারাপ করে দিয়েছো।
নিজের ভিতরে ভীষণ তাগাদা অনুভব করি, এইসব সোনার মানুষগুলো হারিয়ে যাবার আগেই তাদের কথাগুলো সঞ্চয় করে রাখতে। তারাই একমাত্র জানতেন দেশের জন্য কীভাবে দিতে হয়। দেশকে নিয়ে কিভাবে স্বপ্ন দেখতে হয়। আমাদের এই প্রজন্ম জানি কেবল হা-হুতাশ করতে, দেশের জন্য পুরস্কারের লোভ না করে কিভাবে কিছু করতে হয় এইটা কেবল তারাই আমাদের শেখাতে পারবেন।
তাদের কে বলতে হবে, কারন আমরা শিখতে চাই, আমাদের পরের প্রজন্মকে শেখাতে চাই কিভাবে দেশ গড়তে হয়। সাহস, পরিশম, আত্মত্যাগের পরে বিজয় আর সাফল্য অর্জনের জ্বলন্ত উদাহারণ, আমাদের সামনে তাদের চে' ভালো আইডল কে আছে?
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
@বন্দনা
বিশাল কমেন্ট পড়ে ভালো লাগলো। মনের দিকে একা যে নই সেটা জানতে বরাবরই বড় ভালো লাগে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
'অসাধারণ', 'অসামান্য', 'অনবদ্য' এইসব বিশেষন ব্যবহার না করে শুধু এইটুকু বলি, মনের ভেতরটা এমন করে নাড়িয়ে দিয়ে যাবার ক্ষমতা সকলের থাকে না। আশা করি আশালতা তার নিজের ক্ষমতাটা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আছেন। আমরা যারা বিস্মরণ-প্রবন জাতির খাতায় নাম লিখিয়েছি--তাদের মাঝে মাঝেই এমন শক্ত নাড়া দেবার প্রয়োজন।
শুভেচ্ছা নিরন্তর!
অনিকেতদা, আদৌ আমার কোনও ক্ষমতা আছে কি নেই সেইসব কাটাছেঁড়ায় আমি যাইনা কখনওই। আমি জানি আপনার অতিরঞ্জনের অভ্যেস আছে, তবু মাঝে মাঝে যখন নিজেকে খুব ক্ষুদ্র লাগে, নগন্য মনে হয়; সেই নাজুক সময়গুলোয় মনে হয় ভাগ্যিস আপনার মত কিছু পাঠক আমার জীবনে ছিলেন !
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আপনার লেখায় বলা ছোটমামার মত মানুষগুলি কেবলি অনেক অনেক অভিমান নিয়ে হারিয়ে যাচ্ছেন। উনাদের ভেতরে জমে থাকা কথাগুলি সংরক্ষণের এখনো সময় আছে, আমরা পারব কি?
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটির জন্য। ভাল থাকবেন।
এখনও সময় ফুরিয়ে যায়নি। এখনও সবাই মিলে চেষ্টা শুরু করলে পারব নিশ্চয়।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
যদিও আমি সচলে এখনো অচল। তাও আমি যে কোন কাজ লাগতে পারি উদ্দ্যোগে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারলে খুশি হবো।
এগিয়ে চলুক আগামী সম্ভাব্য সকল আলোকের দিকে।
লেখাটির জন্য কৃতজ্ঞতা।
ধন্যবাদ প্রখর রোদ্দুর। আপনার নিকটা পড়লেই কেমন যেন প্রখর রুদ্র প্রখর রুদ্র লাগে আর ফেলুদার কথা মনে পড়ে যায়।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
সোন্দর
ধইন্যা
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আমার আব্বা মুক্তিযুদ্ধ নয়, তবে '৫২-র ভাষা আন্দোলনের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। সবচেয়ে দূর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হল এটা আমি স্পষ্ট করে জানতে পারি তাঁর মৃত্যুর পর - যেদিন তার মরদেহ শেষবারের মত গোসল করিয়ে দিচ্ছিলাম। গোসল করানোর সময় খাটিয়ায় শোয়ানো অবস্থায় হঠাৎ লক্ষ্য করি তার মাথায় (চুল প্রায় উঠে গেছিল তখন) একটা আড়াআড়ি খুব পুরনো কালো দাগ। পরে আম্মাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম '৫২-র আন্দোলনের সময় একবার সমাবেশে ভাষন দেয়ার সময় ভাষার দাবীর বিরোধী তৎকালীণ এক মৌলবাদী ছাত্র সংগঠনের হামলায় তিনি প্রচণ্ড ভাবে আহত ও প্রহৃত হন। বিশেষ ভাবে মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যান এবং জীবন সংশয় ঘটে। সেই দাগ আর যায়নি।
সে সময় এই ব্যাপারটা আমাকে ভীষন ভাবে নাড়া দিয়েছিল এই ভেবে যে, এত কিছু ঘটেছিল বাবার জীবনে অথচ আমি তার ছেলে হয়ে তার প্রায় জানাজার নামাযের আগে পর্যন্ত কিছুই জানলাম না। উনিও জানি না কোন অভিমানে কোনদিনও কিছু বলেননি। জীবিত অবস্থায় তাকে দীর্ঘকাল পেয়েছি এত কাছে, অথচ এসব জানতে হল কিনা তার মৃত্যুর পরে, পরের মুখে শুনে আর পরে ইতিহাসের বইয়ে পড়ে!
****************************************
আমাদের সবারই এমন ছোট-বড় অনেক গল্প আছে। কী আজব জাতি আমরা আমাদের গর্বের ইতিহাস লুকিয়ে রাখি। এ জন্যই তো রাজাকার-পাকি গুলা এসে আমাদের সামনে ড্যাং ড্যাং করে নাচতে পারে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
@ মন মাঝি
কী আর বলব ! স্তম্ভিত হয়ে কথা ফুরিয়ে গেলো। আমারই ক্ষোভে আফসোসে হাত মুঠি পাকিয়ে যাচ্ছে আপনার না জানি কেমন লেগেছিল ! সমবেদনা রইল বললে হয়ত আপনাকে আঘাত দেয়াই হবে, তবু বলি, জেনে কষ্ট লাগলো।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
একটা পোস্ট দিচ্ছি লেখা আর সহযোগিতা আহবান করে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
অবশ্যই দিন। সাফল্য কামনা করছি।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
বিস্মরণ শিরোনামে অবিস্মরণীয় এক গল্প।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
পড়ার আর শেয়ার দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকুন।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আপনার এটিএম কার্ড আর সাথে পিন নাম্বারটা আমারে পাঠায়ে দেন। আপনে কষ্ট করে ক্যান পিন নাম্বার মনে রাখবেন, ক্যান কষ্ট করে টাকা তুলতে যাবেন, কন দেখি!
লেখার বাকি অংশ নিয়ে (আমার) মন্তব্যের কিছু নেই।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হাহাহা আমার এটিএম কার্ড বা পিন কোড কোনটা নিয়েই সুবিধা করতে পারবেন না তো। পাসওয়ার্ড মনে রাখার যন্ত্রণার চাইতে ব্যাগে টাকা ভরে ঘোরা অনেক সহজ আমার জন্য। আরও বেশি সুবিধের হল জ্যান্ত এটিএম সাথে নিয়ে ঘোরা।
আর না করা মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আমি সচলের ফাঁকিবাজ লেখকদের একজন।
মন্তব্যের ক্ষেত্রে আরো ফাঁকিবাজ।
কত লেখা ভালো লাগে, কত আশ্চর্য অনুভূতির সুগন্ধে মনের দেশের আকাশবাতাস ভরে যায়, আমার মন্তব্য আর লেখা হয় না।
এই লেখা চোখে পড়ল তাসনীম ভাইয়ের ফেসবুকের শেয়ার থেকে।
গন্তব্য অন্যদিকে ঘুরে যাবার আগেই মন্তব্যটা করে যেতে চাই।
গল্পের জন্য চোখে জল আনা শুভেচ্ছা।
আর আপনার জন্য অশেষ শ্রদ্ধা।
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
আপনাকে কি বলব বুঝে পাচ্ছিনা। প্রশংসা সবারই ভালো লাগে। আমারও। কিন্তু আমাকে কেউ ভালো বল্লেই আমি ভয়ানক ঘাবড়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই। এজন্যে কালকে আপনার মন্তব্যটা দেখেও কিছু লিখতে পারিনি। আজকে সাহস জুটিয়ে এসে বলে যাচ্ছি, ধন্যবাদ। অনেক ধন্যবাদ।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আমি বরাবরই আপনার লেখার মুগ্ধ পাঠক। কি অবলীলায় আপনি পাঠকের মন চুরি করেন। এ লেখাটি পড়ে কেন যেন মনে হলো আপনি পেরুচ্ছেন একটি সমান্তরাল সিঁড়ির ধাপ, উজ্জ্বল উত্তরণের পথে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
হুম, সিঁড়ির ধাপ ? মন্দ বলেননি। আসলেও বোধ হয় তাইই করছি। তবে উঠছি নাকি অতলে নামছি বুঝতে পারছি না।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
, সাথে আছি এবং থাকব।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
ঘচাং।----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
অনেকদিন পর লিখলেন!
শুরুটা পড়ে মজাদার একটা কমেন্ট করবো ভাবছিলাম। কিন্তু শেষটায় এসে থমকে গেলাম। একাত্তরের খুব কাছাকাছিতে জন্মেছি বলেই কিনা জানি না, ওই সময়ের যে কোন গল্পেই থমকে যাই।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
এত এত ফাঁকিবাজের ভিড়ে এক মাস চব্বিশ দিন খুব বেশি না, কি বলেন ?
কি জানেন, মাঝে মধ্যে মনে হয় ছাই ছাতা লিখতে টিখতে কিছুই আর পারিনা। জাতের রাইটার না হলে কি হবে রাইটার্স ব্লকের ভাব ধরে থাকি আরকি।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
অসাধারণ।
_________________
[খোমাখাতা]
ধন্যবাদ নিটোল।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
৫ ভোট দিছি, এখন ইমো দিয়ে কেটে পড়লে চল্পে?
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
নতুন মন্তব্য করুন