মায়াশহর

আশালতা এর ছবি
লিখেছেন আশালতা (তারিখ: শুক্র, ২৪/০৫/২০১৩ - ১:৩৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

খুব ভোর ভোর গাড়িটা থামতে ঘুম ভেঙে বাইরে তাকিয়ে চোখে পড়ল দুধারে নিয়নের সার দেয়া চওড়া কালো পিচের রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গেছে দূরে। এদিকে রাতে বোধ হয় বৃষ্টি হয়েছিল, পথঘাট সব ভেজা ভেজা। রাতের বাতিগুলো নেবেনি এখনও কিন্তু ওপাশের আকাশ লাল করে সূর্যটা উঠে আসছে। পাশ থেকে ভাইয়া অল্প একটু ধাক্কা দিয়ে বললে, আর কত ঘুমোবি, উঠে পড়, ঢাকায় চলে এসেছি। জানলার বাইরের শেষ দেখতে না পাওয়া নিওন বাতিজ্বলা পথটার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললাম, এই তবে ঢাকা!

এরপর কত কতগুলো দিন পেরিয়ে গেছে শহরটায় অথচ এখনও ঢাকা বলতে সেদিনের সেই রাস্তার ছবিটাই চোখে ভাসে কেন যেন। দরখাস্তের কাগজে স্থায়ী ঠিকানার ঘরে এই শহরের নাম লিখতে যেয়ে একেক সময় সেদিনের ভীতু মুখটা মনে পড়ে যায়। অজানা আতঙ্কে সেদিন অত বড় মেয়েটার মুখ শুকিয়ে আমসি। তা ভয় অবশ্য পাবারই কথা। সেসময়টায় লোকে হিল্লি দিল্লি করত নিশ্চয়; তার ঢের আগে চাঁদেও পৌঁছে গেছল ঠিক। কিন্তু আমাদের বাড়ির লোকেরা শহর ছেড়ে কক্ষনো কোথাও যেত টেত না। বিয়ে হয়ে এসে নতুন মামি মুখ বাঁকিয়ে বলতেন, তোমরা হলে সিন্দুকের মানুষ, সিন্দুক পরিবার। সেই সিন্দুক পরিবারের মেয়ে কথা নেই বার্তা নেই দুম করে ঢাকায় চলে আসবে এটা একটু বাড়াবাড়ি বৈকি। কিন্তু কি করে যেন পাকে চক্রে চলে এলাম ঢাকায়। পড়তে।

পড়তে? তা বটে! পড়ার তো নানান রকম থাকে। এখানে এসে বই পড়ার চাইতে আকাশ থেকে পড়াই হচ্ছিল বেশি। কুয়োর ব্যাং প্যাসিফিকে পড়ে দিশকুল হারিয়ে পড়াশুনো চুলোয় যাবার যোগাড়। একমাথা পাকাচুলো এক বুড়ো জিনস্‌ আর হ্যাট পড়ে ক্লাসে এসেই তিড়িং করে লাফিয়ে টেবলের ওপরে পা ঝুলিয়ে বসে ঝড়ের মত ইংরিজিতে কি কি যেন বলে যায়। সব্বাই গম্ভীর মুখে নোট নেয়। আমি ছোট শহরের ছোট মানুষ, শহুরে কায়দাকেতা বুঝিনা। হা করে কান্ড দেখি। টিচার বুঝি এইরকম হয়? আমাদের কলেজে ইংরিজি বলতে তো ছিলেন যতীন স্যার। আপনমনে বিড়বিড় করে সারাক্ষণ পড়া বলছেন। চুল দাড়ি জামা কাপড়ের কিছু ঠিক নেই। পরীক্ষার হলে কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে ‘তোদের দিয়ে কিচ্ছু হবেনা’ বলে ব্ল্যাকবর্ডে পুরো কোশ্চেন পেপার সল্ভ করে দিলেন। কলেজ জুড়ে হই চই, পাশের ক্লাস থেকে বাকি স্যারেরা দৌড়ে এসে ওনাকে ডায়াস থেকে টেনে নামাতে পারেন না। বিরাট হুলুস্থুল। এখেনে সেরকম কিচ্ছুনা। সবাই টকাটক ফিটফাট। অবাক কান্ড!

এ যে নিয়ম ছাড়া অদ্ভুত একটা যায়গা তা বুঝতে বেশি দিন লাগেনি অবশ্য। পৃথিবীর তাবত মানুষ সাদা আর কালো- গুড আর ব্যাড শুধু এই দুই রকমই- এই ধারণা কেটে গেলো চট করেই। সাদাকালো ছাড়াও মানুষ যে কত রঙা হয় তা দেখতে শিখিয়ে দিল শহরটাই। শুরু হল অন্য রকম একটা জীবন। এখানে বিরাট বিরাট মানবতার কথা বলা দীপু দি আছেন যিনি রুমমেটের টাকাপয়সা জামাকাপড় মায় খাবার দাবার সহ সবকিছু চুরি করে ফেলেন। কেলেকুচ্ছিত শিউলি আপু আছেন যে কিনা অসময়ে মুখ শুকিয়ে রুমে ফিরলে পড়া বাদ দিয়ে থালায় নিজের খাবার সাজিয়ে দিয়ে ধমকে বলেন, খাবারটা খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর। আছে ইতিহাস পড়তে আসা হাসিখুশি সুদর্শন আশিক নামের ছেলেটা। আড্ডায় সবাইকে জমিয়ে রাখলেও এক ভর দুপুরে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে ডাকাতি করতে গিয়ে খুন করে ফেলার ইতিহাস কনফেস করে ফেলে । কত কত মুখ, কত কত মানুষ এই শহরে। একেকটা মানুষ একেকটা গল্প। অগুন্তি গল্পের এই শহরে শুরু হল আমার শেকড় ছড়াবার গল্প।

প্রথম কটা দিন ঢাকা মানে কেবল ক্যাম্পাস-টিএসসি-বন্ধুদের আড্ডা। তবে মানে পাল্টাতে শুরু করল শিগগীরই। নতুন জায়গার ভয়টা কাটতে একা একা হেঁটে বেড়াবার পুরনো স্বভাব ফিরে এল আবার। ঘুরে ঘুরে শহর দেখাটা নেশার মত হয়ে গেলো। কি অদ্ভুত এক শহর সেটা। বাক্সের মত বাড়ি ঘর থেকে পিলপিল করে লোকজন বেরিয়ে এদিক সেদিন সারবেঁধে ছুটছে যেন পিঁপড়ে। কেউ কারুকে দেখেনা, কেউ কারুকে চেনেনা। ঠা ঠা রোদে ঝাঁকা ভরা কলা নিয়ে একটা লোকে হুড়ুম করে মাথা ঘুরে পড়ে গেলো তো গেলোই, পাশ কাটিয়ে সবাই চলে যাচ্ছে। লোকটা বলছে পানি পানি, একজনে এসে বললে, এই মিয়া সরে শোও না। রাস্তাজোড়া আলপনা মাড়িয়ে লোকে হেঁটে যায় দিগ্বিদিক। মানুষকে মানুষ ভাববার দায় যেন কারুর নেই।

ঝিম ধরা দুপুরগুলোয় ক্লাশ লেকচার পরীক্ষা ফেলে একা একা এদিক সেদিক চলে যাই। এলোমেলো হাঁটতে হাঁটতে মানুষ দেখি, চৌখুপি ঘরবাড়ি, চিলতে আকাশ দেখি আনমনে। মাঝে মধ্যে রোদে ভেসে যাওয়া আকাশে বিন্দু হতে থাকা প্লেন দেখি। আমাদের ছোট শহরে প্লেন টেন দেখা বিরাট ঘটনা ছিল। মাঝে সাঝে নামী মানুষ হেলিকপ্টারে চেপে আসতেন। তখন সক্কলে মিলে উঠোনে নয়ত ছাতে দৌড়ে গিয়ে দেখত যতক্ষন দেখা যায়। এখানে তো সকাল বিকেল পাখির মত প্লেন ওড়ে। চারদিকে এত আলো, এত শব্দ, এত আয়োজন - তবু কেন যেন শহরটা ভালো লাগেনা। বাড়ি যাবার বাসগুলো দেখলেই গলার কাছটা ভার হয়ে আসে। এত লোকে বাড়ি যায়...আহা!

এক দুপুরে হাঁটতে হাঁটতে তেষ্টা পেয়ে পানি খাব বলে সামনের দোকানের দরজা পেরিয়ে ঢুকতেই বিষম অবাক হতে হল। ভেতরটা একেবারে ঠান্ডা চুপচাপ। শহরের কোলাহল সেখানে সব থেমে গিয়ে শুধু ফ্যানের শাঁ শাঁ শব্দ; বাইরের পৃথিবীটা যেন এখান থেকে বহু দূরে কোথাও । থমকে গিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে চোখ বড় হয়ে গেলো। এ কোন যায়গা রে বাবা! চারপাশে রাশি রাশি জিনিষ স্তুপ করে রাখা। তাতে হেন জিনিষ নেই যা নেই। বিরাট বিরাট পেইন্টিং, ফুলদানি, হরিনের মাথা, মহিশের শিং, কারুকাজ করা কাঠের বাহারে জিনিষ সব। একপাশে নকশা করা চুলের কাঁটা-খাতাকলম-পাখা-পিকদানি-নটরাজ বিষ্ণু সব মজুত। শুধু বিশাল লম্বা দোকানটায় মানুষ জন কেউ কোথাও নেই। চারপাশে কেমন প্রাচীন প্রাচীন গন্ধ। এক লহমায় মনে হল যেন নানু বাড়ির চোরকুঠুরিতে দাঁড়িয়ে আছি।

নানুবাড়িতে নানারকম লোহার শস্ত্রে গাঁথা ভারি কাঠের দরজা দেয়া একটেরে পুরনো ঘরটায় ঘুটঘুটে অন্ধকার আর বাদুরের ভয়ে কেউ ঢুকতই না। একদিন বের করে ফেলেছিলাম সেটার দেয়ালে মই বেয়ে উঠে ছাতের এক কোনায় ছোট পাটাতনটা সরালেই নিচু ছাতওলা বিরাট একটা ঘর পাওয়া যায়। একেবারে আলিবাবার গুহার মত । ডাকাতের ভয়ে করা হয়েছিল কোন সময়। খড়খড়ির ফাঁক দিয়ে আসা আবছা আলোয় দেখা যেত ধুলো মেখে পড়ে আছে রাশি রাশি জিনিষপত্র। বিরাট ভারি লোহার সিন্দুকে ছিল তামাদি হয়ে যাওয়া কাগজপত্র, নানির রুপোর গয়না, পানের বাটা, ফুলতোলা নকশা করা বালিশ তোষক, পেতলের তৈজসপত্র। ছিল পালক লাগানো তীর বর্শা কোঁচ মায় তরোয়াল পর্যন্ত। আর ছিল ধুলো মাখানো অজস্র পুরনো বই। চোরকুঠুরিতে আধো অন্ধকারে সেসব বই কার কি কাজে আসে বুঝতে না পারলেও অদ্ভুত প্রাচীন গন্ধওলা সেই বইগুলোর লোভেই গরমের ছুটির দুপুরগুলো সেখানেই কাটত আমার। বিরাট শহরটার একদম মাঝখানে দাঁড়িয়ে সেই পুরনো গন্ধটা আবার ফিরে এলো হুট করে। এক ছুটে ফিরে গেলাম শৈশবের দিনগুলোতে।

প্রাচীন গন্ধটায় বুঁদ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই হটাত পাশ থেকে জটাজুটওলা থুত্থুড়ে এক বুড়ো এসে ‘কি চাই গো মা?’ জিজ্ঞেস করতে কি বলব ভেবে পেলাম না। পানি খেতে ঢুকেছিলাম সেটা ভুলে গেছি ততক্ষনে। বুড়ো কি ভেবে এদিক ওদিক থেকে খুঁজে পেতে কোত্থেকে একটা লম্বা কাঠের টুকরো হাতে দিয়ে মাছি তাড়াবার মত করে বললে, নিয়ে যাও। সেটা হাতে নিয়ে বাইরে এসে দেখি, মামুলি কাঠ নয়, কারুকাজ করা কাঠে একপাশে নিব দেয়া কলম সেটা। কি মনে হতে নাকের কাছে নিতেই চমকে গেলাম একেবারে। এ যে চন্দন! কি আশ্চর্য! চন্দন কাঠে কলম হয় নাকি! আর যদিবা হলই, এমন মহার্ঘ জিনিষ কেউ কারুকে এমনি এমনি দিয়ে দেয় নাকি! বিস্ময়ে আমার পলক পড়েনা। কোহিনূর কুড়িয়ে পেলেও বুঝি এর থেকে কম অবাক হই। বিস্ময়ের ঘোর কাটতে মনে পড়ল দাম টাম কিছু দেয়া হয়নি, মাছি তাড়াবার মত করেই তাড়িয়ে দিয়েছে বুড়ো। দাম সাধবার জন্যে আবার ফিরে গিয়ে দোকানটা আর খুঁজেই পেলাম না। পেলাম না তো তারপর আর কখনও পেলামই না। চন্দন কাঠের কলম থেকে গেলো শৈশব মাখানো অদ্ভুত এক দুপুরের সাক্ষী হয়ে।

পরে জেনেছি পয়সার হিসেবে সে তেমন মহার্ঘ কিছু ছিল না। কিন্তু ঘরের জন্য খুব মন কেমন করা একা মেয়েটার কাছে তখন চন্দন মানেই মায়ের গন্ধ। এক টুকরো কাঠই তাই সাত রাজার ধন। মার গয়নার বাক্সে এরকম লাল রঙা টুকরো কাঠ ছিল। মাঝে মাঝে পাটায় ঘষে টিপ দিতেন নয়ত গোসলের পানিতে মিলিয়ে দিতেন। কি দারুণ সুগন্ধে চারদিক ম ম করত তখন। জবার বিয়ের সময় একদিন এসে চাইতে মা দিয়ে দিলেন সেটা। ফি হাটবারে জবা, ডমরু, থুপিরা আর সব সাঁওতাল ছেলেমেয়েদের সাথে মিলে সেজেগুজে হাটে যেত। চন্দনের টিপ আর মহুয়ার মালা গলায় দিয়ে খিলখিল করে হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করত, হুই, যাবি নাকি তুই ? যাবিক? যাবিক? পাকা মহুয়ার হলদে আভায় কালো কালো মুখগুলো আলো হয়ে ঝলমল করত যেন।

না, আমার কোথাও যাওয়া হয়নি আর, হয়না। ওরকম ঝলমলে হাসিও দেখা হয়না আর। শেকড় ছড়িয়ে গেছে এই মায়াশহরের ইঁট কাঠে। রোজদিন কেবল ঘোরতর শহর হতে থাকা শহরটার সাথে অভ্যস্ত হতে হতেও মাঝে মাঝে ক্লান্ত চোখ পুরনো সেই চেনা আকাশটা খুঁজে ফেরে। স্বপ্নে দুঃস্বপ্নে জবা ডমরুরা মুখ টিপে হেসে বলে, যাবি যাবি ? প্রাণপণে ছুটেও তাদের ছুঁতে পারিনা আমি। পায়ে পায়ে জড়িয়ে যায় শেকড় বাকড়।

কদিন আগে রোজকার জ্যাম রাস্তায় আটকে থাকতে থাকতে চোখ পড়ল পথের পাশের ঝোপে। এ্যাকেশিয়া আর মেহগনি পাতার আড়াল থেকে হাসছে থোকা থোকা মহুয়া। পেকে এখনও হলদেটে রঙ ধরেনি কিন্তু অবাক চোখে ভালো করে তাকিয়ে দেখি সে মহুয়াই বটে। শহরের বিচ্ছিরি ধোঁয়া ধুলো দূষণ টুশন সব ছাড়িয়ে বেড়ে উঠে নিজেকে ছড়িয়েছে ঠিকঠিক। গাছের নিচের সাইন বোর্ডটা চোখ টানল। তাতে লেখা, মাদকদ্রব্যের খবর র‍্যাবকে জানান।

এই এত বছর পরেও এই শহরটা এখনও আমাকে অবাক করে।


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

আবারও ২ মাস ২৯ দিন পরে নাকি হে চিন্তিত

আশালতা এর ছবি

আরে কি বল! স্পেসটাইম ধরলে তো অনেক কমই হবে। খাইছে

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

ফাহিম হাসান এর ছবি

আপনি আর তাসনীম ভাই জুটি করে স্মৃতিকথা লিখতে থাকেন। জুটির নাম দিতে পারেন - "নস্টালজিক নিনজা" চাল্লু

আশালতা এর ছবি

জ্বী না। আমি সাথে জুটলে তাসনীম ভাইয়ের লেখা শিকেয় উঠবে। তখন 'স্মৃতির শহর' আর 'শিশুপালন' কই পাব? নিজের পায়ে কুড়ুল মারতে আমি রাজি নই। তারচেয়েও বড় কথা, তাসনীম ভাই আর আমি ! কিসে আর কিসে, সোনা আর সীসে !! গোটাদশেক কলম চিবিয়ে খেলেও ওনার মত লেখা তো আসবে না। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

তাসনীম এর ছবি

খুব ভালো লাগলো মায়াশহরের গল্পটা। আমি সতের বছর ধরে সেই শহর ছাড়া। অল্প সময়ের জন্য ফিরলে সে আমার সাথে একদম অচেনা ব্যবহার করে - স্কুলের লম্বা ছুটির পরে কিছু কিছু বন্ধু যেমন না চেনার ভান করে ঠিক সেই রকম। দোষটা সম্ভবত শহরের নয় - আমারই। কিন্তু প্রতিবারই অন্তত একবার হলেও আমার পুরানো শহরটাকে খুঁজে পাই। ফিরে যাওয়ার আগে অভিমানী বন্ধুর মতো একবার দেখা দিয়ে যায়। শহরের প্রাণ আছে।

মায়াশহরকে নিয়ে কেউ কিছু লিখলেই আনমনা লাগে, লম্বা একটা নিস্তরঙ্গ বিকেলের কথা মনে হয়। হঠাৎই অনেক হারিয়ে যাওয়া জিনিসের সন্ধান আমি পেয়ে যাই। সে হোক আধ খাওয়া পেপসির বোতল অথবা ধূলা জমা কোন বই।

এই লেখাটা ঘোর লাগিয়ে দিল।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

আশালতা এর ছবি

ধন্যবাদ তাসনীম ভাই। লিখে ফেলবার পর নিজের লেখা আমার কখনই ভালো লাগেনা। বেশিরভাগ সময়ই আমি নিজের লেখার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকি, কোনভাবেই পছন্দ হয়না, মুছে দেবার জন্যে হাত নিশপিশ করতে থাকে। কিন্তু পছন্দের লেখিয়েরা ভালো বললে বিরাট খুশি হয়ে যাই। আগে অবশ্য চোখে পানি টানি চলে আসত, আজকাল বড় হয়েছি, বুড়োও বটে; তাই কান্নাকাটি না করলেও একান ওকান হাসি দিই। হাসি

ঢাকা কে নিয়ে লিখবার ইচ্ছে আমার বহুদিনের। কিন্তু আপনার স্মৃতির শহর পড়বার পরে আর সাহসে কুলোয় না। কম্পিটিশন তো কোন ভাবেই না, কিন্তু সেটার সামনে নিজের লেখা বড্ড আলুনে ঠেকে। কিন্তু যে হারে লেখালেখি কমছে আমার এরপর হয়ত আর কখনও লেখাই হবেনা সেই ভয়ে জোর করে লিখেই ফেললাম। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

চরম উদাস এর ছবি

হাততালি

১৭/০১/২০১২
২৩/০১/২০১২
০২/০২/২০১২
২৬/০৩/২০১২
০১/০৪/২০১২
৩০/০৬/২০১২
২৬/১১/২০১২
২৪/০৫/২০১৩

ভাবতেছি পরের লেখাটার মুখ আমার নাতি পুতিরা দেখে যেতে পারবে কিনা চিন্তিত

আশালতা এর ছবি

খাইছে

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

বোধহয় ইচ্ছে করেই লিখেছেন। সেজন্য যেসব অংশ পছন্দ হয়নি সেগুলো নিয়ে মন্তব্য করলাম না হাসি

প্রসঙ্গত, তরোয়াল নাকি তলোয়ার?

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

আশালতা এর ছবি

ধরেছেন ঠিকই। কিছু জিনিষ আসলেই ইচ্ছে করে লেখা। সেগুলো নিয়ে জোর বিতর্ক হতেই পারে। আসলে এরপর মানুষটা এত বছরে তো ঢের বদলে গেছে । কিন্তু আমি সেই সময়কার একদম আনাড়ি একজন মানুষের প্রাথমিক ভাবনাটুকু বলতে চাইছিলাম বলেই ওভাবে বলা। যেমন ধরুন, শিউলি আপুকে 'কেলেকুচ্ছিত' বলছি। উনি চলতি অর্থে সেভাবে সুন্দরী বলে সজ্ঞায়িত হবেন না, কিন্তু আমার দেখা শ্রেষ্ঠ মানুষদের উনি একজন। কিংবা ঢাকায় কেউ কারুকে দেখেনা এই মন্তব্যটা নিয়েও অভিযোগ হতেই পারে। শহরটা তখন ওইভাবেই সামনে এসে ভাবনাগুলো এভাবে তৈরি হয়েছিল বলেই এরকম লেখা।

তবে লেখনভঙ্গি, ভাষার আড়ষ্টতা ইত্যাদি নিয়ে কিছু বললে অবশ্য আমি নাচার। না লিখতে লিখতে লোকের হাতেপায়ে যে এইরকম জং ধরে যায় নিজেই জানতাম না। নিজের সাথে রীতিমত মারামারি করে লিখতে হয়েছে, তার ছাপ লেখায় পড়েছে সেটা আমি বুঝি। মন খারাপ

এখন মনে হচ্ছে তলোয়ারটাই ঠিক শব্দ। কিছু শব্দ নিয়ে আমি প্রায়ই বিপাকে পড়ি। এটা তার একটা। ইয়ে, মানে...

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

অমি_বন্যা এর ছবি

এই অবাক করা শহরে আজ বৃষ্টির মধ্যেও জরুরী প্রয়োজনে বের হব। এই শহরে আমার নিজস্ব কোন শেকড় নেই, নেই তেমন কাছের কেউ তবুও শহরটি আমার বেশ আপন। এই শহরে কয়েক বছর পড়ার সুবাদেই তাকে চেনা আর সেই থেকেই ভালোবাসা। অনেক প্রতিকূলতা আছে এখানে তবে মায়ায় বেঁধে রাখার মত অনেক কিছুই আছে এই মায়াশহরের।

লেখা অনেক ভালো লাগলো।

অমি_বন্যা

আশালতা এর ছবি

ধন্যবাদ অমি_বন্যা। সত্যিই 'অনেক প্রতিকূলতা আছে এখানে তবে মায়ায় বেঁধে রাখার মত অনেক কিছুই আছে এই মায়াশহরের'। উঠতে বসতে অসংখ্যবার শহরটার পিন্ডি চটকিয়েও একটা সময় ঠিকই বুঝি কোথায় যেন মায়া পড়ে গেছে। এই জন্যেই তো মায়াশহর বলি। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

দময়ন্তী এর ছবি

কি মায়া মায়া লেখা
চলুক

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

আশালতা এর ছবি

ধন্যবাদ দমুদি। হাসি হাসি হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

স্যাম এর ছবি

নামটা খুব পছন্দ হয়েছে। 'যাদুর শহর' নামে একটা নাটক আর চিরকুট এর একটা গানও ছিল পছন্দের।

আশালতা এর ছবি

নাম পছন্দ হলে নিয়ে নিন। আরেকটা দুর্দান্তিস ব্যানার হোক। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

মৌনকুহর এর ছবি

ক্যাম্পাস ছেড়ে যাবার পর এমন স্মৃতি হয়ে যাবে সব-- আপাতত এইটুকুন ভাবতেই বুক ভার, মাথা 'ব্ল্যাঙ্ক'!
এখানেই সব কিছু, তবু, আসলেই, এই এত বছর পরেও, আজব লাগে শহরটা!

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

আশালতা এর ছবি

শহরটা তো আজিবই। এত এত মানুষ চারপাশে অথচ কি তীব্র একা একেকজন মানুষ। আবার ভীষণরকম সুখের ছবিও এই এখানেই দেখি। এখানে গল্প কখনও ফুরোয় না। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

কী অদ্ভুত মায়ায় ভরা লেখা। আপনার নাম হওয়া উচিত মায়াবতী।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

আশালতা এর ছবি

অ্যাঁ!..ইয়ে মানে... ইয়ে, মানে... আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

‌ঢাকায় আসার পর থেকে কেবলই মনে হচ্ছে নিজের শহরের চেয়ে মায়াময় আর কিছু নেই!

আশালতা এর ছবি

তোমারও এরকম মনে হয়?! আমি ভাবতাম আমি একাই বোধ হয় বুকের ভেতর ছোট শহরের সবুজ টুকরোটা নিয়ে ঘুরি। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

মর্ম এর ছবি

মায়াশহরটা 'মায়া'র তো, তাই নিজের হয় না! নিজের যে শহর সেটায় একসময় নিজের পায়ের ছাপ পড়ে অবিরত কি নিজের জুতোর, তাপ্পর একদিন 'ছিল' হয়ে গিয়ে 'নস্টালজিয়া'র আবাস হয়!

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

আশালতা এর ছবি

হ। মন খারাপ

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঢাকায় আছি।

এই এত বছর পরেও এই শহরটা এখনও আমাকে অবাক করে।

চলুক

আশালতা এর ছবি

ধন্যবাদ প্রৌঢ় ভাবনা। হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

তানিম এহসান এর ছবি

চলুক

লিখতে থাকুন জোরেশোরে।

আশালতা এর ছবি

আজকাল লেখালেখিতে ফিরে আসবার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু চারপাশের দুঃসংবাদ সময়টা অস্থির করে রাখছে। মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

কল্যাণ এর ছবি

লেখার মত একটা স্থায়ী ঠিকানা যে কবে হবে! কেয়ার অফ/ সচলায়তন লিখতে পারলে অবশ্য দারুণ হত। চলুক

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।