১৮ই জানুয়ারী। রোজ বুধবার। বেলা বারোটা।
পাঠক নিশ্চয়ই খানিকটা নড়েচড়ে বসেছেন। ভাবছেন, এইদিন এই সময়ে বুঝি লেখকের জীবনে খুব উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটে গেছে। প্রিয় পাঠককে হতাশ করে বলতে হচ্ছে, অধমের জীবনে এ্যাডভাঞ্চারাস বা থ্রিলিং কিছু সচরাচর ঘটে না। কুয়োর ব্যাঙ হলে যা হয় আর কি।
যাহোক, সেদিন সকালে বুয়েট গেসিলাম একটা কাজে। গিয়ে দেখি, অফিস বন্ধ। মেজাজটাই গেলো খারাপ হয়ে। ভাবলাম, যাবার পথে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টটা ঘুরে যাবো নাকি। ছোটবেলা থেকেই এই ফেস্টের নাম শুনে আসছি। কখনো "হচ্চেটা কি" দেখতেও ওভাবে ঢুঁ মেরে আসা হয়নি।
সিদ্ধান্তটা যে ভুল ছিল না, টের পেলাম ঘণ্টা তিনেক পর। ততক্ষণে আমি "Mausams" নামের একটি চমৎকার indie film দেখে বের হয়েছি মাত্র। ফিল্ম ফেস্ট শুনলেই যেমন গুরুগম্ভীর সব ফিল্মের কথা মাথায় আসে, এটা মোটেও তেমন কিছু না। সিঙ্গাপুর প্রবাসী একদল ভারতীয় নির্মাতার প্রচেষ্টার ফসল এই চমৎকার এন্টারটেইনিং ফিল্মটি।
শুরুতেই বলে নিই, ইন্ডি ফিল্মমেকারদের কাজের প্রতি আমার এক ধরণের দুর্বলতা আছে। বুয়েটে থাকতে (এখনো আছি যদিও,৪-২, তাই থাকা না থাকা এই মুহূর্তে সমান অর্থ বহন করছে) এরকম দু-চারটে কাজের সাথে জড়িত ছিলাম বলে বেশ ভালো করেই জানি, মোটামুটি জিরো বাজেট নিয়ে এরকম একটা কাজ সুসম্পন্ন করতে কী পরিমাণ ডেডিকেশন আর স্যাক্রিফাইসের প্রয়োজন হয়।
নির্মাতা শিল্পা ক্ষ্ণা শুক্লার প্রথম প্রচেষ্টা এটি। সকল অভিনেতা-অভিনেত্রীরও তাই (দেখে যদিও এদের কাউকেই একদমই এ্যামেচার মনে হয়নি)। শো শুরু হবার ঠিক আগে আগে শিল্পা ও তার হাজব্যান্ড দর্শকদের সাথে নিজেদের ইন্ট্রোডিউস করিয়ে নিলেন। ভদ্রলোক নিজেও এ ফিল্মে অভিনয় করেছেন এবং ফিল্মের একজন প্রোডিউসারও বটে।
শিল্পার কথাবার্তা বেশ চমৎকার। ঝরঝরে ইংরেজি বলেন মহিলা। উনার জবানীতেই আমরা জানতে পারি, নিজেদের ফ্রেন্ডসার্কেলের মধ্যে থেকেই অভিনেতা-অভিনেত্রী জুটিয়ে কাস্টিং ও কাস্টিং ডিরেক্টরের বাজেটটি সেভ করেছেন তারা। এটা অবশ্য ইন্ডি ফিল্মের খুব কমন একটা বৈশিষ্ট্য। নোলান যখন তার প্রথম মুভি "Following" নির্মাণ করেন, তখন তার অস্ত্র ছিল ধারালো স্ক্রিপ্ট আর কাস্ট করা বন্ধু-বান্ধবদের সাবলীল অভিনয়। উইকএন্ডে আর উইকডের সন্ধ্যাগুলোয় ফাটিয়ে কাজ করেছেন তারা। স্বাভাবিক। ইউনিটের সবাই যখন কর্পোরেট জবে ব্যস্ত, তখন উইকএন্ড আর উইকডে'র সন্ধ্যেগুলো স্যাক্রিফাইস না করে উপায় কী?
সত্যি বলতে কি, মোটামুটি সব ইন্ডি ফিল্মমেকারের গল্পই ঘুরেফিরে এইরকম। কিন্তু, নিজের গল্পই যখন অন্য একজনের মুখে শুনি, মানুষটি যত দূর দেশেরই হোক না কেন, হঠাৎ করেই তার প্রতি এক ধরণের আত্নীয়তা অনুভব করি আমি।
এইখানে ফিল্মের প্লটটা একটু ঝালিয়ে নেয়া দরকার। প্লট যথেষ্টই সাদামাটা। শালিনি একটি কর্পোরেট হাউসে মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করে। শুরুতে নিজের কাজ নিয়ে তাকে আপাত সন্তুষ্টই মনে হয়। খানিক বাদে আমাদের কাছে খোলাসা হয়, যে সে তার ক্যারিয়ার ও পার্সোনাল লাইফ নিয়ে বেশ বোরড। শী নীডস সামথিং এক্সাইটিং ইন লাইফ। এজন্য তাকে ঈশ্বরের দরবারে প্রার্থনাও করতে দেখা যায়। শালিনির বান্ধবী পল্লবী। হাসিখুশি গোলগাল মেয়ে। নিজেকে সে 'তামিল বিউটি' দাবি করে। তার জীবনের ৯৯%ই ওকে, খালি বিয়ের বয়সটা পার হয়ে যাচ্ছে। দিনের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ তার কাটে ম্যাট্রিমনি সাইটগুলোতে পছন্দের বর খুঁজে বের করার অপচেষ্টায়। তাদের সাথে 'ডেট'ও হয় তার এবং যে কোন কারণেই হোক, ডেটগুলো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
এই পল্লবীই একদিন বাসার পুরনো জিনিসপত্র ঘাটতে গিয়ে কলেজ লাইফে লেখা শালিনির একটি স্ক্রিপ্ট খুঁজে পায়। খানিকটা দোনোমোনো করে হলেও শালিনি এই স্ক্রিপ্ট নিয়ে একটা নাটক মঞ্চায়িত করার সিদ্ধান্ত নেয়। নাটক নাহয় হবে, কিন্তু পাত্র-পাত্রী হবে কে? ঐ যে, শালিনির কলেজ লাইফের বন্ধু-বান্ধবরা। মোবাইল-ফেসবুক এর যুগে পুরোনো বন্ধুদের খুঁজে বের করতে তো আর শাওলিন সকারের নায়কের মত এপাড়া-ওপাড়া ঘুরে বেড়াতে হয় না।
প্লটটা খুব দুর্দান্তিস কিছু মনে হচ্ছে না, তাই তো? আমারও মনে হয়নি। ফিনিশিংটাও আপনি হয়তো প্রেডিক্ট করতে পারবেন। তারপরও গল্প যতোই এগিয়ে যায়, ক্যারেক্টারগুলো তাদের নিজস্বতা দিয়ে আপনাকে প্রভাবিত করতে শুরু করবে। এই ধরণের 'ফ্রেন্ডস ফরএভার' টাইপ ফিল্মে যেই সমস্যা থাকে, দেখা যায় সবগুলো ক্যারেক্টারই একই ছাঁচে ঢালা, একটা থেকে অন্যটাকে আলাদা করা যাচ্ছে না, এই ফিল্ম সেই ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। প্রতিটা চরিত্রই আলাদা করে আপনার মনে আসন গেড়ে নেবে। এইখানেই এই ফিল্মের সার্থকতা। বোনাস হিসেবে নিয়মিত বিরতিতে "মজাদার জোক্স, বাচ্চারাও দেখতে পারো" টাইপ ফান এবং 'পান' তো আছেই।
সাউন্ড, এডিটিং, সিনেমাটোগ্রাফি---এসব নিয়েও কিছু বলা দরকার। আমি সামান্য দর্শক। আমার কাছে ফিল্ম দু'প্রকার-সৎ ফিল্ম ও অসৎ ফিল্ম। Mausams কে আমার কাছে একটি অনেস্ট ফিল্ম মনে হয়েছে। স্টোরি টেলিং খুব অনন্য কিছু না হলেও প্রেজেন্টেশান চমৎকার। সব মিলিয়ে ফিল্মটিকে আমি ১০ এ সাড়ে ৮দেব। ৮ লজিক্যালী, বাকি হাফ মার্ক্স সুন্দর হাতের লেখার জন্য
ফিল্মটির IMDB লিঙ্ক পেলাম না. তাই ফিল্মের ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দিয়ে রাখলাম।
টরেন্ট বা অন্য কোথাও এর লিঙ্ক পাওয়া যাবে কিনা জানি না। তবে ঢাকায় বা অন্য কোথাও কোন ফিল্ম ফেস্টে যদি এই ফিল্মের শো হয়, মিস করবেন না। বিশেষত, যারা এন্টারটেইনিং ফিল্ম পছন্দ করেন, তারা তো কখনোই না। কমপ্লিট হোম এন্টারটেইনমেন্ট।
আর এবারের ফিল্ম ফেস্টে কেউ নতুন কোন মুভি দেখে থাকলে জানাতে ভুলবেন না
মন্তব্য
একটা মিসটেক হয়ে গেলো।
এই স্টেটমেন্টের কপিরাইট সম্ভবত সচল অনিন্দ্য রহমানের। কার্টেসি দিতে ভুলে গেছি
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
আজ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের শেষ দিনে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার শোতে দেখে এলাম
"নোবেল চোর"
"নোবেল চোর" নিয়ে কিছু বলুন না
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
কি বলব বলুন তো ? না বুঝি সিনেমার টেকনিক্যাল দিক,না বুঝি তার এস্থেটিক আপীল।
মুভিটা ভালো, মন্দ না মোটামুটি---এটুকু জানান অন্তত
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
...... ফিল্ম নিয়ে আরও লিখুন।
ডাকঘর | ছবিঘর
হবে দাদা হবে
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
মুভিটা দেখার ইচ্ছা রাখি।
লেখা ভালো হয়েছে। কিপিটাপ।।
তুই ব্যাটা এতো এতো মুভি দেখিস, কোন একটাকে নিয়ে সচলে এসে একটু গালগুপ্পো ঝাড়লেও তো পারিস
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
লেখা ভাল লেগেছে। কিন্তু
কিছু বললেন না তো !!
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ঐ যে বললামঃ
"আমার কাছে ফিল্ম দু'প্রকার-সৎ ফিল্ম ও অসৎ ফিল্ম। Mausams কে আমার কাছে একটি অনেস্ট ফিল্ম মনে হয়েছে।"
আমি যখন অন্য কাউকে একটি ফিল্ম সাজেস্ট করতে যাবো, তখন আমার কাছে উপরোক্ত একটি গুণই যথেষ্ট মনে হয়. তাই আর সাউন্ড, এডিটিং, সিনেমাটোগ্রাফি নিয়ে খুব মাথা ঘামালাম না।
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
ভালো লাগলো।
বাংলার এক মহান গুরু সুদূর আম্রিকা থেকে একদা তোকে ফিল্ম তৈরিকেই মহান পেশা হিসেবে নেয়ার গুরুপদেশ দিয়েছিলেন- ইয়াদ হয়।
গুরুজনে করহ মান্য।
গুরুর সাথে অনেকদিন কথাসাক্ষাৎ নাই। গুরু আমাদের লাস্ট কাজটা দেখেছেন কিনা, তাও বলতে পারছি না।
দাঁড়া, গুরুকে ইনবক্সে একটা মেসেজ পাঠাইয়া লই
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
লেখাটা ভাল লেগেছে।
ধন্যবাদ প্রৌঢ়দা
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
ইন্ডি মুভি দেখা হয় না, দেখার ইচ্ছে রইল।
আবারো, একই জিজ্ঞাসা। আপনাকে কি আমি ব্লগবাড়ির বাইরে চিনি?
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
নতুন মন্তব্য করুন