তার মানে সবাই বালছাল বানাইলে আমাকেও বালছাল বানাইতে হবে?
এগজ্যাক্টলি তাই। সৌরভদা তার বিচ্ছিরি শরীর দুলিয়ে একটা হাসি দেন।
এই তো তুমি লাইনে আসছো। ধরো, তুমি এক জায়গায় ডিমের ব্যবসা করতে আসছো। ঐখানে আরো চার-পাঁচজন দোকানী ডিম বেঁচে। এখন তোমার ডিম যদি ওদের চেয়ে বড় আর সুস্বাদু হয়, আবার দামেও কম হয়---তোমার কি মনে হয়---ওরা তোমারে ঐখানে ব্যবসা করতে দিব?
আমি ডানে-বাঁয়ে হালকা মাথা নাড়াই।
ভিতরে ভিতরে একটা ক্রোধ যে কাজ করছে না---তা না। কই নাটক বানানোর স্বপ্ন নিয়ে ভাই’র কাছে এলাম----ভাই লাগাইসে ডিমের ব্যবসার গল্প। এইভাবে আর্ট হয় নাকি?
সৌরভদা একটা সিগারেট ধরান। আমাকে অফার করেন। আমি বলি, আমার অভ্যেস নেই।
- কালকে আমাদের একটা মিউজিক ভিডিওর শ্যুটিং আছে বান্দুরা। যাবা নাকি আমাদের সাথে? নাটক বানাইতে চাও। কিছু লাইভ শ্যুটিং দেখো। পরে কাজে লাগবো।
আমি উনাকে বলি না যে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে তিন-চারটে ভিডিও ফিকশন বানানোর অভিজ্ঞতা আমার আছে। শ্যুটিং এর অভিজ্ঞতা আমার নেহাৎ কম না সোনা। আমায় কেন বান্দুরা নিয়া যাইতে চাও---সেটাও বুঝি মামা। ফ্রি-তে একটা স্পটবয় পাওয়ার ফন্দি।
উনি মনে হয় আমার ভেতরটা পড়ে ফেললেন। বললেন, প্রফেশনাল শ্যুটিং আর ভার্সিটির নাটকের শ্যুটিং এর আকাশ-পাতাল ফারাক। কালকে চলো মিয়া। আরে খরচ যা লাগবো প্রডাকশন তো দিতেসেই।
আমি আরেকবার চেষ্টা করি।
ভাইয়া, গল্পটাই তো শুনলেন না।
ভাইয়া সিগারেটটা শেষ করে পা দিয়ে দলে দেন। আমি তৎক্ষণাত এর একটা সিম্বলিক সিগনিফিক্যান্স দাঁড় করাই। ভাই কি আমার আশা-আকাংক্ষাকেই দলে দিলেন না? সিম্বলটা যদিও খুব ক্লিশে হয়ে গেলো, তবু দাঁড় করাতে পেরে আমার ভালো লাগে। নিজেকে নিজের কাছে মেকার মেকার মনে হয়।
শোনো মিয়া, তোমরা এই লাইনে নতুন আসছো। কখনো কাউরে গল্প শুনাবা না। দেখবা সে নির্ঘাত তোমার গল্প মাইরে পরের ঈদে একটা নাটক কী টেলিফিল্ম দাঁড় করাইসে।
তাইলে আমি কী শুনাবো? আমার হাতে তো পয়সা-ও নাই যে একটা কিছু বানায়ে চ্যানেলে জমা দিব। বেকার মানুষ। টিউশনি করে খাই। গার্লফ্রেণ্ড নাই। তাও মাসের শেষে চলতে পারি না। এর-ওর কাছ থেকে ৫০০-১০০০ টাকা ধার করে চলি। আমার বন্ধুগুলাও বেশি ভদ্র টাইপের। মুখ ফুটে ফেরত চাইতে পারে না। আমিও পারতপক্ষে ফেরত দিই না।
শর্টফিল্ম-টর্টফিল্ম বানাই। সে-ও ঐ বন্ধুদের ক্যামেরা আর লাইট হাওলাত করে। আমার যোগ্যতা কেবল ঐ গল্প বলাতে। কেউ যদি আমার গল্প মেরেও নাটক বানায়, আমি রা কাড়বো না। কিছু টাকাপয়সা পেলেই আমি খুশি। আর এই লাইনে কিছু পরিচয়-প্রসংগ হোক। নাটক আজ হোক কাল হোক বানানো যাবে।
তুমি কিছু খাও।
না ভাই, আমার খিদে নেই।
মিথ্যে কথা। সকাল থেকে কিছু খাই নাই। খিদেয় পেটে পাহাড় নাচছে। ভদ্রতাবশত সেটা বলাও যাচ্ছে না।
চিকেন খাবা? এরা চিকেনটা খুব ভালো বানায়। দশ টাকায় এর চেয়ে ভালো চিকেন তুমি ঢাকা শহর কোথাও পাবা না।
ভাই থামেন। আমারে এইসব শিখান লাগবো না। চারুকলার সামনের চিকেন খাইয়া ভার্সিটি লাইফ পার করসি। এখন উনি আসছে মা’র কাছে মাসীর গল্প নিয়া। বাল।
তোমার এই সময় আমিও পার করসি, বুঝলা? মাথার ভিতর খালি গল্প ঘুরতো। আমার বাপ ছিল নেশাখোর মানুষ। নেশা করে বাসায় এসে মা-রে খালি পিটাইতো। আমার বাপ-মা রে নিয়াই গল্প লেখা যায় কয়েক হাজার। সেই গল্প নিয়া নাটক বানাইলে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার নিশ্চিত।
এই শুরু হইলো। সব বড় ভাই-র গল্পই এরকম। তারা কীভাবে বছরের পর বছর স্ট্রাগল করসেন, মাটি কামড়ে পড়ে থাকসেন---তারপর ভাগ্যরে শিকে ছিঁড়সে---এইসব বালছাল। শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত। সৌরভদা’র গল্প যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে কিছুক্ষণ পর উনি বলে বসবেন---উনার কাছে দারুণ একটা প্লট আছে। স্ক্রিপ্টিং এর কাজ চলতেসে। খুব শিগগিরই এই গল্প নিয়া সিনেমা বানাবেন তিনি। একদিন সেই সিনেমার রিভিউ লিখবে রজার ইবার্ট। ‘মাটির ময়না’র পর বাংলাদেশে আরেকটা ‘কান’ এলো বলে। অন্তত অস্কারটা তো আসেই।
মিডিয়ার মানুষদের আমার এই কয়দিনে খুব ভালো চেনা হয়ে গেছে। কাজ যা-ই করুক, সেটাকে ফুলায়ে-ফাঁপায়ে অস্কার অব্দি নিয়ে যাইতে এদের জুড়ি নাই।
টিএসসি’র সড়কদ্বীপে একদল ছেলেপেলে বেশ জোর গলায় তর্ক করছে। তর্কের ভেতর থেকে মাঝে-মধ্যেই হিচকক, টারান্টিনো, নিও নয়ার----এইসব শব্দ উড়ে উড়ে আসছে। তার মানে স্বপ্ন দেখার ভূত কেবল আমার মাথে-তেই চাপেনি, আরো অনেকের মাথাতেই আজকাল এই ভূত সওয়ার হয়েছে।
সৌরভদা?
হুঁ?
বান্দুরা যেতে কতোক্ষণ লাগে?
মন্তব্য
গল্পটা মনে হলো শুরুই হলো না বা হতে হতে শেষ হয়ে গেল। অবশ্য সেটা আমার পাঠ পদ্ধতির ত্রুটিও হতে পারে।
অজ্ঞাতবাস
অবজার্ভেশন ঠিক আছে, বদ্দা। আমারও লিখে তাই মনে হইসে
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
ভালোই লাগল।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
হ, ঘটনা এইরকমই
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
facebook
দারুণ ! কিন্তু একটু বেশী তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো মনে হল !
কস্ট না কর্লে কৃস্ট কিভাবে পাওয়া সম্ভব! তারচে' আমি বলি কী, বান্দুরাই ঘুরে আসুন
এভাবেও তারাও একদিন আপআর এই স্ট্রাগলের গল্প শুনবে , খারাপ না ।
শেষ !
নতুন মন্তব্য করুন