সেই যে কবে ঈদগাহ মাঠের কৃষ্ণচূড়া গাছটিকে ভালোবেসেছিলাম। পুকুরপাড়ের আমগাছ কিংবা ঘরের পেছনের সোনালু গাছ কিছুই নেই আর। সব ভালোলাগা ভালোবাসাগুলো ফ্যাকাশে হয়ে গেলো সময়ের সাথে সাথে। এক হাঁটু ধুলো নিয়ে সন্ধ্যায় পড়ার টেবিলো ঢুলোঢুলো চোখ, হারিকেনের আলো ভাগাভাগি নিয়ে খুনসুটি। মায়ের চোখ রাঙানি দেখে দাদার খাটে নিরাপদ আশ্রয়। আজ সব স্মৃতি। সব নকশীকাঁথায় নিপুণ গাঁথুনি। কৃষ্ণচূড়া-আমগাছ-সোনালু গাছগুলো নেই। বৈদ্যুতিক আলোর চাকচিক্যে হারিকেনগুলোও নিভে গেছে একে একে।
কৈশোর উত্তীর্ণ যৌবনের প্রথম সকালে উদভ্রান্তের মতো এলোমেলো হেঁটে গেছি লক্ষ্যহীন পথে। নি:শ্বাসের কালো ধোঁয়া মিশে গেছে মনের সবুজে। ইট পাথরেরে শহরে বিশ্বস্ত মুখ খুঁজেছি দিনরাত। 'হাত বাড়ালেই বন্ধু মিলে হাত বাড়ালেই সুখ, সুখের ঘরে হামলে পড়ে অসহ্য অসুখ'। এ অসুখে আক্রান্ত চেনাজানা স্বজনগুলোও পাল্টে গেলো একদিন। অবিশ্বাসের শ্যাওলায় ঢেকে গেছে বিন্দু বিন্দু করে জমানো বিশ্বাসের জলাভূমি। হলুদ খামের চিঠি পাই না অনেক দিন। ই-মেইলগুলোও খুব সংক্ষিপ্ত, দায়সারা আনুষ্ঠানিকতা। মোবাইল ফোনে তিরিশ সেকেন্ড পালসের আগেই কথা শেষ হয়ে যায়। চারপাশে শুনি কেবল সুখী মানুষদের সুখের গল্প। বেগুনী-নীল-আসমানী স্বপ্নগুলো নাকি আকাশ থেকে নেমে চুপচাপ হেঁটে চলে তাদের ঘরের ঈষাণ কোণে। কেবল সাদা-কালো বৃত্তে বন্দী আমি নস্টালজিক দিন দিন প্রতিদিন। সন্ধ্যায় নিষিদ্ধ আড্ডায় বেসামাল গলায় চিৎকার করি শহীদ কাদরী - তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা, ভয় নেই এমন দিন এনে দিবো'। আসলে কিছুই আনতে পারি না। ঘুম পাড়ানি মাসিপিসিকে ডেকে আনে রিলাক্সেন, সেডিল। আন্ত:নগর ট্রেনের সাথে স্বপ্নে দৌড়েছিলাম কতোকাল আগে! আর এখন স্বপ্ন মানেই সিঁড়ি থেকে পড়ে যাচ্ছি আমি। পড়ে যাচ্ছি সাপের গর্তে। কিলবিল করা সাপগুলো জড়িয়ে যাচ্ছে আমার পায়ে। নড়তে পারছি না একদম। অস্থিরতায় ঘুম ভেঙে যায়। কানে আসে প্রার্থনার পবিত্র আহ্বান। সাড়া দিই না। মন থেকে সাড়া দিতে পারি না।
বিছানায় এপাশ ওপাশ করে বেলা বেড়ে যায়। দুপুরের ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে হেঁটে যাই সবুজের সন্ধানে। - - - মনের সবুজ ফিরে আসে না। খাঁ খাঁ করছে মৃত সবুজের প্রাঙ্গণ, মরুভূমির বিরান জনপদ। জল সঞ্চারণ নেই একদম। অনেক আগেই সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে গেছে নীল আকাশ। গোমড়া মুখভার আকাশকে ঢেকে দিচ্ছে বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড। কেবল মনের দু:খগুলো জমাট বেঁধে আছে। কবিতার খাতায় ঝলমল করছে বিষন্নতার পংক্তিমালা। বিভ্রান্ত সময়ে অস্থির চারপাশ ;একাকী - নি:সঙ্গ - বিষন্ন।
১৭/০৫/২০০৫
মন্তব্য
যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ।
(সচলায়তনে আজকাল মন খারাপ করা লেখার জোয়ার বয়ে যাচ্ছে)
কি মাঝি? ডরাইলা?
দ্রোহী পূরাণের অনুপস্থিতিই হয়তো এর মূল কারণ।
হ্যা।
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
দ্রোহী নিজেই পুরানো হয়ে গেছে। পুরাণ দিয়ে আর কি হবে.... সুপারভাইজারের সাথে সমস্যা হচ্ছে। গত হপ্তায় ব্যাটার হোগা মেরে দিয়েছি। ব্যাটা এখন আমাকে দেখলেই দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি আছি মজায়।
কি মাঝি? ডরাইলা?
কর্ছে কি?
ছি ছি ছি, এসব কী?
হাঁটুপানির জলদস্যু
এক মুহুর্তে ফিরিয়ে দিলে সহজ চোখে তাকিয়ে থাকা......
আহা,সত্যিই যদি ফেরত পাওয়া যতো সেই সহজ চোখ,সহজ তাকানো,সহজ দিন ।
এই লেখা,তার বাক্য ও শব্দসমুহ,শব্দের বিন্যাস- ফিরিয়ে নিলো বারো বছর পেছনে ।
শিমুল জানে
-----------------------------------------
মৃত্যুতে ও থামেনা উৎসব
জীবন এমনই প্রকান্ড প্রচুর ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
"সবুজ যখন বাঁধে বাসা গাছের পাতায় বনে
মনে তখন দুঃখ লুকায় অন্তগহীন কোনে..."
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
হুমম!
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
নতুন মন্তব্য করুন