দিশাদের ড্রয়িং রুমে বসে আছি প্রায় ঘন্টা দু'য়েক হবে। এর মাঝে দুইবার চা দেয়া হয়েছে। সবাই হুড়াহুড়ি ছোটাছুটি করছে। আমার দিকে কারো খেয়াল নেই।
দিশার মা একবার এসে - "স্যার, আপনাকে চা দেয়া হয়েছে?" বলেই অন্য দিকে চলে গেলো।
আমি বসে বসে চা খাচ্ছি। সাথে দেয়া চানাচুরের পিরিচ থেকে একটা একটা করে বাদাম মুখে দিচ্ছি। অপেক্ষা করছি কখন খামটা হাতে পাবো। খামটা হাতে পেলেই বিসিএস কম্পিউটার সিটি; এক গিগার আইপড কিনবো। বাকী টাকা দিয়ে সিল্কের পাঞ্জাবী...।
এর মাঝে দিশা এলো দৌড়ে - "স্যার, হ্যাভ য়্যূ সীন আওয়ার কাউ?"
দিশা সামনে ও-লেভেল দিবে । আমি ওকে ম্যাথ আর জিওগ্রাফি পড়াই। এই পড়ানোর পারিশ্রমিক আটকে আছে দুমাস ধরে। গত মাসে লজ্জায় চাইতে পারিনি। এবার তাই ড্রয়িং রুমে বসে আছি। টাকা না নিয়ে উঠবো না; এমন ভাব করছি। দিশার প্রশ্নে ধ্যান ভাঙলো
- দেখিনি, যাওয়ার সময় দেখে যাবো।
দিশা এবার ভুরু তুলে গড়মড় করে বলে
- য়্যূ মাস্ট নট মিস ইট, ...দ্য মোস্ট এক্সপেনসিভ কাউ অব দ্য ইয়ার।
- শিউর!
দিশা চলে যায়।
আমি বসে থাকি। সামনে রাখা সানন্দা-য় চোখ বুলাই। পূজা স্পেশালে শাড়ী পরার নানান বাহার দেখি। কারো আসার শব্দ শুনলে টুপ করে পাশ থেকে ইত্তেফাক হাতে নিই। এভাবেই সময় কাটে। আর কেউ আসে না, আমার খামেরও খবর নেই। বাইরে তখন যোহরের আজান দিচ্ছে। একটু পর দুপুরের খাবার সময়। আমি বুঝতে পারছি না - এসময় কারো বাসায় বসে থাকা ঠিক ভদ্রতা হয় কিনা! তবুও বসে থাকি। টাকাগুলো আমার খুব দরকার।
আরো কিছু সময় পরে খাম হাতে দিশার মা আসে হাসি মুখে
- 'স্যার, দুইমাসের টাকা আছে, পাঁচশ' কম। ঈদের গরু কিনতে গিয়ে অনেক খরচ হয়ে গেলো। ভাইবেন না - সামনের মাসে মিলায়ে দিমু নে...।'
'নাঃ আন্টি, কী যে বলেন, অসুবিধা নাই' - বলে বিনীত হয়ে হাসি দিয়ে খামটি হাতে নিই। ঘর থেকে বাইরে এসে খাম খুলে দেখি বেশীর ভাগ পঞ্চাশ টাকার নোট। সব গুলো নোট যেন একটু আগে কারওয়ান বাজারের মাছের আড়ৎ ঘুরে এসেছে!
খামটা পকেটে ঢুকিয়ে গেট পার হবো এমন সময় দিশার বাবা ইদ্রিস আলী আমাকে ডাকে
- 'স্যার গরুটা এক নজর দেখে যান'।
পাঁচশ টাকা কম পেয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। তবুও কাছে এগিয়ে যাই। গাবতলী হাটের সবচেয়ে দামী গরু; এক লাখ বিশ হাজার টাকা। ইদ্রিস আলী খুব যত্নে কোরবানীর গরুর গায়ে হাত বুলাচ্ছেন। গরু তার বড় বড় চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর যেন বলছে - '৫০০ টাকার জন্য মন খারাপ করিস না মানুষ'। তারপর যেন মিষ্টি করে একটা হাসি দিচ্ছে। চরম বিদ্রুপ মেশানো সে হাসি।
...সারা শহরের মানুষ হাসতে হাসতে খুন।
পত্রিকায় সবচে' দামী গরু ও তার ক্রেতার ছবি ছাপা হয়েছে। কিন্তু ক্যাপশন গেছে পালটে। ইদ্রিস আলীর ছবির নিচে ছাপানো হয়েছে - 'এই গরুটির দাম এক লাখ বিশ হাজার টাকা"। আর গরুর ছবির নিচে লেখা হয়েছে - "ইনি জনাব ইদ্রিস আলী যিনি পাশের গরুটিকে কিনেছেন।" পেপারটি হাতে নিয়ে দিশা ভেউভেউ করে কাঁদছে।
...কান্নার শব্দ আরেকটু বাড়লে আমার ঘুম ভেঙে যায়। বিজয় স্বরণীর জ্যামে বাস আঁটকে আছে। হঠাৎ রিনির ফোন কল
- কখন দেখা হবে?
- আইডিবি-তে চলে এসো বিকেল চারটায়।
- আইপড?
- হুম, আইপড। কেনো বিশ্বাস হচ্ছে না?
- য়্যূ আর সো সু-ই-ট ডিয়ার...
- আসলেই?
তখন জ্যাম ছাড়িয়ে বাসটা নড়েচড়ে উঠেছে।
মন্তব্য
- রিনি কে?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আপনি চেনেন?
- আমি কি দিশারেও চিনি?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
যাক, ইদ্রিস আলীরেও চিনতে পারছেন।
- নাহ, তবে আনোয়ার আলীরে চিনছি মনে হয়!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমিও চিনছি। আসাদ আলীর ভায়েরা ভাই।
- তাইলে দিশা আর রিনি কি দুই বোন?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
একটি ফুলে দু'টি ভ্রমর।
- দুটি ফুলই কি আনোয়ার আলী একেলা কুক্ষিগত করিবার মনোবাসনায়?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ফুল স্থীর, ভ্রমর উড়ন বিলাসী।
কপাল!
- অ্যাঁ... অ মোর গোপাল!!!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নামটাই অসাধারণ।
দ্ব্যর্থবোধক নাকি?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
জ্বী, সন্ন্যাসী মশাই ।
এন্টেনায় ধরল না !!
এন্টেনা ঠিক আছে। সম্প্রচারকারী স্টেশনের সমস্যা।
এইটা আগে পড়ছি।
কি মাঝি? ডরাইলা?
- আপনে আইছেন মেম্বার সাব?
আগে পড়লে পড়ছেন, অখন এইটার এট্টা মীমাংসা কইরা দ্যান দেহি!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
গতবার মাইর একটু বেশী হয়ে গেছিল। তাই রিনি, দিশা দুজনকেই ধূসর গোধুলীর জন্য বরাদ্দ করা হল।
কি মাঝি? ডরাইলা?
গল্পটি যাই হোক, মন্তব্যগুলো ফালতু।
প্রতিশোধের মারাত্মক আইডিয়া! তয় ঘটনা সত্য। এই গরুগুলার জন্যই দেশের এমুন অবস্থা।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আমি তো ভেবেছিলাম শেষমেশ টিচার আর সেলারিটা পাবে না। যাক পেয়েছে এতেই খুশি। হোক ৫০০ কম।
মন্তব্য: সুন্দর ও ভালোর মিশ্রণ। ভালো লেগেছে।
*********************************************
রক্তে নেবো প্রতিশোধ...
রক্তে নেবো প্রতিশোধ...
১.২ লাখের গরুতে আপনের ০.০০৫ লাখ টাকার দাবি ছাইড়েন না কুইলাম!
আর আইপড-এর কুরবানি কি হইয়া গেছে?
আর নয় অকারণ দুঃখ দুঃখ খেলা
এবার হাসিমুখ নিশিদিন সারাবেলা
'
=========================================
নিজেকেই নিজে চিনি না, পরকে চেনার মিছে বাহানা
আবারও পড়লাম। ঠিকাছে।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
খুব কম কথায় একটা তথাকথিত সমাজের চিত্র এঁকে ফেললেন।
খুব খুব নিখুত হয়েছে চিত্রটি।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
৫০০ টাকা ক্যানো, ২০০ টাকা কম পাওয়ার রেকর্ডও আছে। ব্যাপারটা সত্যিই অতি বিরক্তিকর। মন ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায়।
শিমুল, আরো ফ্রিকুয়েন্টলি গল্প চাই।
হাঁটুপানির জলদস্যু
এগুলা গরুতে চর্বি বেশী। মাংশ শক্ত। গরু কিন্তে হয় বাছুর দশা কাটিয়ে যারা সবে গরুত্বে পদার্পন করেছে তাদের। যাদের জীবনে অনেক স্বপ্ন ছিল। আমরা সেইসব টগবগে প্রাণবন্ত তরুণ চতুস্পদকে উপতা কইরা ফালাইয়া জবো কইরা ডেগচী ভইরা নল্লির ঝোল ....
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
সেইরকম গল্প!
তয়, রিনিটা ক্যাডা?
বলাই'দা: একমত।
এহেছান লেনিন: ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।
দ্রোহী মহোদয়/জলিল ভাই: সবিনয় কৃতজ্ঞতা।
পুতুল/লুৎফুল আরেফিন: অনেক ধন্যবাদ।
হিমু ভাই: চেষ্টা করছি। নিজ্ঞাপনেই জাকজমক
বদ্দা: মন্তব্যে জেনেসিস দিলেন নাকি? তবে পুরাটাই ঝোল - - -
আমার মাথা দেহি চুলকায় ...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান…
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
লেখাটা দারুণ হইছে। কিন্তু আউপড কিনে টাকা নষ্ট করবেন ভেবেই মনটা খারাপ লাগছে।
প্রিয় কোট:
মৃন্ময় আহমেদও সরেস মন্তব্য করতে পারেন! এই বোধ হয় প্রথম দেখলাম।
নাম নাই: "সে আমার কাছে রিনি/আমি যার কাছে ঋণী।"
বিপ্রতীপ: এখনও?
প্রকৃতি প্রেমিককেও ধন্যবাদ।
অরূপ ভাই: ঘটনা কি? 'চলবে' স্মাইলীটা কাজ করে না ? (চলবে)
ফাঁকিবাজ শিমুল। নতুন ঈদে পুরনো গল্প। মানি না, মানবো না...
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
সচলে এই প্রথম একটা পুরনো লেখা দিলাম। সবাই দেখি ধরে ফেলছে!!!
আমার একটা গরু ছিল জানল না তো কেউ...গরুর সিং ছিল না...লম্বা লেজ ছিল না...করত খালি ঘেউ ঘেউ...আমার একটা...।।
ধুগো এবং সেন্টু সাদাতকে চাইল্ড এবিউজ কেসে আসামী সাব্যস্ত করা হল।
দৃশা
- চিলড্রেনটা কে তাইলে?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এখানে কী আলোচনা হচ্ছে?
কালো গাউনের লোকজন নিয়ে আসলেই সমস্যা। খালি হাইকোর্ট দেখায়।
চমৎকার গল্প! বেয়াদবি মাফ করলে এই অধম অনভিজ্ঞ নবীন বলতে চায় - "একজন গরু বনাম একটি প্রাইভেট টিউটর" এই শিরোনাম দিলে আরো ভাল হত।
ফেরারী ফেরদৌস
নতুন মন্তব্য করুন