শেষ রাতের শীতবস্ত্র

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: রবি, ২৭/০১/২০০৮ - ৭:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মফস্বলে এ সময়টায় খুব শীত পড়ে। আসার সময় বৌ যত্ন করে জ্যাকেট, শাল, সুয়েটার গুছিয়ে দিয়েছিল। সাথে দিয়েছিল তুশকা কাশির সিরাপ। দু'তিন দিনের ব্যাপার - তবুও সতর্কতা, যদি ঠান্ডা লেগে যায়! শেষ মুহূর্তে বড় মেয়ে যত্ন করে গলায় মাফলার জড়িয়ে বলেছিল - একদম অবহেলা করবে না!

দুই.
অবহেলা করার সময়টুকুও নেই। ভীষণ তাড়াহুড়া। অনেকগুলো মিটিং করতে হচ্ছে। টেবিল মিটিং, পথসভা, সমাবেশ, মহাসমাবেশ - পত্রিকার ভাষায় জনসংযোগ। মফস্বলে মিটিংয়ের চেয়ে কাজ বেশী, কোলাকুলি বেশী। এবার সময়টাও খুব গোলমেলে। তবে ভাগ্যজোরে শীত সিজনে ইলেকশন, কিংবা ইলেকশন সিজনে শীত! আহ্, কী অপূর্ব সমন্বয়! তাই শীতবস্ত্র বিতরণ চলছে জোরেশোরে। মাইকিং হচ্ছে, পোস্টারিং হচ্ছে। নামের আগে জনদরদী, সমাজসেবক, এলাকার নয়নমণি যোগ হচ্ছে হরহামেশা। শীর্ণ শরীরের হাড্ডিসার মানুষের হাতে হাসিমুখে রিলিফ তুলে দিয়ে বেশ তৃপ্তি পাওয়া যায়। পাশ থেকে সাঙ্গপাঙ্গের দল বলে দেয়
- "জিনিস নেও, তয় ভোটের সময় নিমক হারামী কইরো না..."
শুনে নেতা মুচকি হাসে।
দরকারী কথাগুলো দরকারী মুহূর্তে বলা খুব প্রয়োজন।

তিন.
শীতকালে হাঁসের মাংস খুব স্বাদ হয়। ঘন মসলা দিয়ে রান্না করা তরকারীটাও ভালো ছিল। খিদের চোটে গপগপ করে খাওয়ায় বারবার ঢেকুর উঠছে। লবঙ্গ দিয়ে রং চা বানানো হয়েছে। ডাকবাংলোর বৈঠকখানায় বসে নেতা আস্তে আস্তে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। গলাটা ঠিক রাখতে হবে। এই শীতে গলা বসে গেলে সমস্যা। চিৎকার করে ভাষণ না দিলে হাততালিও আসে না তেমন।
...রাত প্রায় এগারোটার মতো। পরদিনের প্রোগ্রাম ঠিক করে কর্মীরা ঘরে ফিরে গেছে। দলের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক বসে আছে - যদি দু'চুমুক লাল পানি পাওয়া যায়, শীতের রাতে শরীরটা গরম হতো খুব! কিন্তু নেতার ভাবভঙ্গী সুবিধার ঠেকছে না। বুঝতে পেরে নেতা নিজেই বললেন
- ঢাকায় আইসো, তখন জমবো নে। বুঝো না, এখন ইলেকশনের সময় কোন দিক দিয়ে কোন কথা বের হয় আবার...!
- তাইলে গেলাম আজকে। সাধারণ সম্পাদক চেয়ার ছাড়ে।
- ঠিক আছে যাও, কালকে সকাল সকাল চলে আইসো। বাকী সব ঠিক আছে তো?
- ঠিক মানে? পুরা ঠিক! কোন টেনশন কইরেন না।
দুজনেরই ঠোটের কোণায় তখন লুকানো হাসি।

চার.
শেষ রাতের দিকে ক্যামন যেন একটা খোঁচাখুচিতে নেতার ঘুম ভেঙে যায়। গায়ের উপরের লেপটা কে যেন টান দিয়ে নিতে চাইছে। ঘুমঘুম ভাব নিয়ে নেতা বলেন
- অ্যাই, কী হইছে?
- খুব শীত করতাছে।
ডিমলাইটের হাল্কা আলোয় নেতা দেখে - পাশে শোয়া মেয়েটি শীতে কুঁকড়ে আছে। খানিকটা মায়াও হয় - অনভ্যস্ত শরীরের উপর ধকলটা বোধ হয় একটু বেশী হয়ে গেছে।
নেতা কিছু বলার আগে জড়ানো গলায় মেয়েটি আবার বলে - খুব শীত করতাছে, লেপের এই পাশটা একটু দিবেন!

____
১৬ জানুয়ারী, ২০০৭ ।


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- নেতা কি এতোদিনেও লেপের কোণার একটা অংশ দেয় নাই?

সেদিনের মতোই লাগলো!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

বস, দিনকাল ঝামেলার মধ্যে যাচ্ছে। অনেকদিন লেখা দিই না। ভাবলাম - পুরনো একটা তুলে দিই। হাসি

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

একেবারে বাস্তব মনে হলো গল্পটি। খুব চমত্কার!

শীতকালে হাঁসের মাংস খুব স্বাদ হয়।

কী মনে করিয়ে দিলেন এটা! কালই যাচ্ছি হাঁস কিনতে!

এবং শেষে একটু মশকরা। গল্পটির নাম হতে পারতো "শেষ রাতে শীতবস্ত্রহরণ" দেঁতো হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ধন্যবাদ হে সন্ন্যাসী মশাই।
হরণে কামরাঙার প্রভাব ব্যাপক। দেঁতো হাসি

শেখ জলিল এর ছবি

পড়েছিলাম আগে। তবে আবার পড়তে খারাপ লাগেনি। ভালো কিছু বারবার পড়া যায়...

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

সবিনয় কৃতজ্ঞতা, জলিল ভাই। জেনে ভালো লাগলো খুব।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

উপাদেয় হয়েছে। শীতকাল পাচ্ছি, হাঁসের মাংস পাবো কোথায়? গল্পের কথাই বলছি। তৃপ্তিভরে খেয়ে ঢেঁকুর তুলছি। হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অনুভূতিশূন্য কেউ একজন এর ছবি

দারুণ গল্প। এভাবে সব মুখোশ খুলে দিতে ইচ্ছে করে।

সৌরভ এর ছবি

শিমুল পুলাটা গল্প লিখতে পারে না একদম।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আজকাল টিভিতে একটা নাটক দেখায়, 420-নামক।
দেশের বর্তমান পটভূমিতে নেতা গড়ার আদ্যোপান্ত দেখানো হচ্ছে নাটকটিতে।
আপনার গল্পের নেতার চরিত্র কেন এবং কিভাবে এমন হলো তার একটা জবাব পাওয়া যায় নাটকটিতে।

বরাবরের মতোন খুব ভালো লিখেছেন।

বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আশীর্বাদ পেয়ে ভালো লাগলো, প্রিয় জুবায়ের ভাই।

অশুকেএ সৌরভ : গল্প হয় না, মুখোশও খুলে না। বিভ্রম এ সময়, বড় বিভ্রম।

লুৎফুল আরেফিন: হ্যাঁ, ডাউনলোড করে ফোর টুয়েন্টি দেখছি নিয়মিত। এই পর্যন্ত যা করেছে দূর্দান্ত। মেটামরফসিসটা বাস্তব। উৎসর্গ দেখলাম - "পঞ্চাশের দশক থেকে নিবেদিত প্রাণ রাজনৈতিক কর্মীদের।"
হা হা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।