বউ, বাটা, বলসাবান এর আয়নায় দেখা নজমুল আলবাব

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: শনি, ১২/০৪/২০০৮ - ২:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নজমুল আলবাবের লেখা ছোটগল্প পড়ার সুযোগ পেয়েছি বিভিন্নভাবে; ব্লগ, রাইটার্স ফোরাম এবং এক সময় বন্ধুসভার পাতায়। অল্প কথায় গল্প বলার কৌশলে তার লেখা পাঠকের মনে জায়গা করে নেয়, সে স্বীকৃতিও তিনি পেয়েছেন প্রায় বছর দশেক আগে। তবে এবার গল্প সংকলন 'বউ, বাটা, বলসাবান' পড়তে গিয়ে আলবাবের গল্প গাঁথা এবং বলনশৈলী জানার সুযোগ হয়েছে এক মলাটে তেরোটি গল্পে।

নজমুল আলবাবের গল্প শরীর বিস্তারে বপু নয়। অন্ততঃ ছয়টি গল্প বেশ পরমাণু সদৃশ। বাকীগুলো তুলনামূলকভাবে বড়ো, তবে নির্ঝঞ্ঝাট ও বাহুল্য বর্জিত। নাম ভূমিকার 'বঊ বাটা বলসাবান' শব্দ সংখ্যায় তিনশ'রও নিচে, অথচ প্রথম পাঠেই মুগ্ধ করে। আরোপিত সামাজিক সংলাপ কিংবা ধারাভাষ্য নেই, সাবলীলভাবে বলে যাওয়া কথা- 'বল সাবান কিংবা বাটার জুতা বদলানো অসম্ভব, কিন্তু বঊ বদলানো কোনো ব্যাপারই না'। ঠিক পরের গল্পটি, 'বিভিন্ন মিতভাষণ'ও কাছাকাছি পর্যায়ের - দর্শক হয়ে বলে যাওয়া, খুব কাছে থেকে দেখা মানুষ - তাদের আচরণ নিয়ে টুকটাক করে বলে যাওয়া। লেখকের ভাষায় - 'যখন যে ঘটনা ঘটেছে চোখের সামনে অথবা মনে, তখনই মাথায় জন্ম নেয়া শব্দ আর বাক্যগুলো অবিকল বেরিয়ে গেছে কলমের ডগা দিয়ে'।

গল্পের প্লটের জন্য লেখক নিজের চারপাশকেই বেছে নিয়েছেন, এজন্যই আমরা দেখি তার বেশিরভাগ গল্প উত্তম পুরুষে বলা - হয়তো আলবাব এভাবেই সাবলীল বোধ করেন, আর গল্পগুলো মূলতঃ সংসারের চৌকাঠে এবং এর মানুষগুলো ধারণ করে। 'কাল ঘুম নেমে আসে তার চোখে' এবং 'বুকের ঊপর সাপের রাস্তা...' এ দুটি গল্পের কথক পরিপূর্ণ সংসারী মানুষ, তবে নানান জটিলতা ঘিরে রাখে চারপাশ এবং এ জটিলতার সমাধান চরিত্রটি দিতে পারে না। তাই আমরা দেখি জহির শুক্রবার বিকেলে ঘর থেকে বের হয়ে যায় - রুপা একা কান্না লুকায়, কিংবা সুমনার স্বামী হতভম্ব হয়ে রাত জাগে। এখানে মূল চরিত্রের ব্যর্থতা - না পারার কষ্ট, পাঠকের সমুদয় সমর্থন আদায় করে নেয় গল্প শেষ হওয়ার আগেই। এসব সীমাবদ্ধতা আরো স্পষ্ট হয় - 'আমার কোনোদিন দুধ চা খাওয়া হবে না' গল্পে, মোকাম্মেল নামের মানুষটি তার মধ্যবিত্ত সীমানা ডিঙাতে পারে না। চারপাশের চতুর মানুষদের কাছে সে বারবার হেরে যায়; মুহিভাইয়ের বাক্স বয়ে নেয়া, আপন সংসারে গুরুত্বহীন হয়ে থাকা, এবং শেষে বাণিজ্যে দৌড়ে ছোটোভাইয়ের কাছে হেরে মোকাম্মেল পাঠকের কাছে সকরুণ প্রশ্ন রেখে যায় এই বলে যে - আমার বৌও ক্ষেপেছে। কাঁদতে কাঁদতে বলেছে, যে লোক বৌয়ের রিকশাভাড়া দিতে পারে না তার আবার এত লম্বা কথা কেন? এ প্রশ্নের ঊত্তর পাঠকেরও জানা নেই, কারণ মোকাম্মেল সৎ , নীতিবান - নির্লোভ মানুষ। চাতূর্য্যের জীবনে ঠেলে দেয়া নয় বরং নির্মোহ থাকার সুস্পষ্ট ইংগিত গল্পে পূর্ণতা দেয়।

এ পাঁচটি গল্পের তুলনায় 'সে রাতে পূর্ণিমার সাথে আমি তোমাকেও দেখেছি' নিতান্তই ভালোবাসার গল্প, প্রেমের গল্প। এখানেও আলবাব সংসারী মানুষের কথা বলেন, মুমুর সাথে অদ্ভুত পূর্ণিমা দেখা শেষে হাসপাতালে অনাগত সন্তানের অপেক্ষায় পায়চারি। অথচ প্রবল ইচ্ছা সত্বেও মুমুর গাল ছোঁয়া হয় না, বলা হয় না পাশে থাকার কথা। কারণ, চেনা-অচেনা কতোজন তখন মুমুকে ঘিরে ধরে। সে-ই সামাজিক বেস্টনী, চৌকাঠ ভালোলাগা। অন্যদিকে 'ব্যক্তিগত ব্যাখ্যান' গল্পে দেখি - শৈশব-কৈশোর স্মৃতির দুমদাম হানা। শোলক বলা কাজলাদিদির মতো বেলা'দি-বড় আপুকে খুঁজে ফিরে অপু, কল্পনায় আসে সবুজ প্রকৃতি, রঙীন পেন্সিল আর আকাশী জামা কিংবা উজ্জ্বল আকাশের স্বপ্ন। এ বাসনা নিশ্চিতভাবে হারানো সময়কে ফিরে পাওয়ার আকাঙ্খা, এবং দ্রোহের আগুনে বর্তমান পোড়ানোর খেদ।

তবে 'দেয়ালে দাগ', 'হাবিব আলীর পতাকা পূরাণ', 'আমাদের ক, খ, গ, ঘ, এবং ঙ' গল্প তিনটিকে আলাদা করে রাখা যায় বিষয় বৈচিত্র্য এবং ভিন্নতার জন্য। 'হাবিব আলীর পতাকা পূরাণ' গল্পের হাবিব আলী বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ঊছিলায় ওড়ায় পেয়ারে পাকিস্তানের পতাকা, এবং শেষে আমরা দেখি - হাবিব আলী অপার্থিব এক ভালোলাগায় নতজানু হয় চাঁদতারা খচিত পতাকার সামনে। কী ভয়ংকর এক বাস্তবতা, নিপুঁণ লেখনীতে উঠে আসে পাঠকের সামনে। গল্পটি সম্ভবতঃ ১৯৯৯ সালে লেখা, তবে আশ্চর্যজনকভাবে গল্পের সত্যতা আমরা দেখেছি চার/আট বছর পরে বিশ্বকাপ ক্রিকেট মৌসুমে - হয়তো দেখবো দু'হাজার এগারো সালেও, হাবিব আলীদের বংশ বিস্তার ও সাম্প্রতিক প্রবণতা সে ইংগিতই দেয়! অন্য গল্প 'আমাদের ক, খ, গ, ঘ, এবং ঙ' রাজনৈতিক প্রেক্ষিতের প্লট তবে সেটা অনেকদিন পরে পারিবারিক সংকট উত্তরণে বর্ণিত - আব্বা দাদাজানের কথা শুনেছিলেন। আমাদের সময় এখন সবসময় সূর্যরাঙা, আমরা ভালো আছি, ভালো থাকি...। এখানেও দেশের রাজনৈতিক কৌশলের ছাপ পাঠক পায় পরোক্ষভাবে। তবে আচমকা থেমে চমক দিয়েছে 'দেয়ালের দাগ'। বন্ধুর খোঁজে গিয়ে হতভম্ব হওয়া রনজুর প্রতিক্রিয়া পাঠক না জানলেও দেয়ালের ওপাশে ছাপান্নটি দাগ দেয়া মানুষটির কষ্ট পাঠককে স্পর্শ করে। গল্পটি আরো বড়ো হতে পারতো - 'চিলেকোঠার সেপাই'য়ের ওসমান যেমন বন্ধু কবিরকে খুঁজে পায়নি, তেমনি রনজু কাহিনীও আরো বিস্তৃতি পেতে পারতো - হতে পারতো একটি বড়সড় গল্প।

নজমুল আলবাব বড় গল্পের স্বাদ মিটিয়েছেন 'এই মেঘ, রাত ও রৌদ্র'তে। কবি ময়নুল মোশাররফ গৎবাঁধা যাপিত দিনে শাহানার ফ্ল্যাটে হাজির হয়। ঠিক একইভাবে আমরা দেখেছিলাম - এক বৃষ্টিময় দুপুরে অপু গিয়েছিলো শাহানার ফ্ল্যাটে - 'বৃষ্টি পিয়াসি আমি আর শাহানা' গল্পে। দুটো গল্পেই দ্বিধাময় মনে নায়ক ফিরে আসে। তবে পাঠকের সাথে শাহানার পরিচয় হয় আরো আগে 'আপন ভূমিকা' গল্পে, যেখানে- ইউরোপ প্রবাসী স্বামী পায় শাহানা, ...আর কারো হুতাশ হয় - সব শালারাই বুঝি রুচি বদল করার জন্য বারবার ফিরে আসে। এই 'আপন ভূমিকা'কে প্রথম পর্ব ধরলে একটি চলমান স্রোত আমরা দেখি পরের দু'গল্পে বয়ে গেছে। শাহানা ফিরে আসে লন্ডন থেকে, দেয়ালে তার মেয়ের ছবি - অপু কিংবা ময়নুল শাহানার ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়, অথচ কাছে যেতে পারে না। অপু তাকিয়ে থাকে শাহানার সে-ই আশ্চর্য সুন্দর তিলটার দিকে আর ময়নুল ভুলে কবিতার খাতা রেখে আসে শাহানার বাসায়। তিনটি গল্পে শাহানাকে পাই বলে নয়, শাহানার বদলে যদি মোনা কিংবা রুপাও নাম হতো - পাঠক ঠিকই যোগসুত্র টেনে নিতো, আর বলতো - শাহানা আখ্যান আরো লম্বা হোক উপন্যাসের পাতায়। নজমুল আলবাব কি বিষয়টি নিয়ে ভাববেন?

এই তো গেলো আলবাবের গল্পের মানুষদের গল্প।
কিন্তু তিনি গল্প বলেন কীভাবে? আলবাবের ভাষায় জটিলতা নেই, ভীষণ সাবলীল বর্ণনা, তবে - কৌশলে আলবাব খুব নির্মম। চোখ বুলিয়ে বাকল স্পর্শের উপায় নেই, বরং পুরো মনোযোগ নিয়ে গল্পের নির্যাস দেয়ায় লেখক উদার। আলবাব গল্প শুরু করেন কিছু বিক্ষিপ্ত কথা বলে, মনে হতে পারে অপ্রয়োজনীয় তথ্য, মনে হতে পারে নামগুলো মনে রাখার দরকার নেই। অথচ খেই হারালে আবার মন দিতে হয় প্রথম থেকে। 'আপন ভূমিকা' আর 'কালঘুম নেমে আসে তার চোখে' গল্পদুটি এ কৌশলের সেরা উদাহরণ। প্রথমদিকের সৃষ্ট জটিলতা খুলতে থাকে পরের বাক্যে বর্ণনে এবং শেষ লাইন পর্যন্ত চলে এ খেলা। আগে যেমন বলেছি - 'দেয়ালের দাগ' গল্প আচমকা থামিয়ে আলবাব পাঠককে চমকে দিয়েছেন। এর বাইরে হুট করে চমকানোর বা ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা আর কোনো গল্পে আমরা দেখি না। 'বিভিন্ন মিতভাষণ' উত্তম পুরুষে বলা - বাগানের নির্জনে পেয়ারা গাছ পাওয়া, আশফাক ভাইয়ার গেমস তৈরি কিংবা সিপ্রাদি'র পায়েশ রান্না শেষে, গল্পের একেবারের শেষ বাক্যের আগের বাক্যে আমরা জানতে পারি - কথক একজন মেয়ে! প্রথম তিন প্যারায় কোনো ইংগিত না থাকায়, এবং লেখক পুরুষ বলে পাঠকের কাঠামোবদ্ধ মন ভেবে নেয় - এ পুরুষের গল্প। শেষে চমকানোর সুযোগ থাকলেও তা নগন্য হয়ে যায় অন্য কারণে - 'সন্তানের মন নাকি মায়েরা বোঝেন সবচে' সহজে'। এই শেষ লাইনের বিশ্লেষণে আগের প্রতিটি চরিত্র-ঘটনা বোঝা পাঠকের জন্য আবশ্যিক হয়ে ওঠে; এ কৌশলটির কথা বলছিলাম একটু আগেই।

লেখক আলবাব মূল কাহিনীর একজন হয়েও কাহিনীতে অংশ নেন না, বরং দর্শক হিসেবে খুটিনাটি জেনে পাঠকের কাছে যেনো চুপিসারে আসেন গল্পের ভান্ডার নিয়ে যেখানে জীবন্ত থাকে - আব্বা-আম্মা-দাদাজান-বড়ভাই- আমাদের সংসার ও চারপাশ। আলবাব গল্প লিখেন ছোট ছোট বাক্যে। তাড়াহুড়ো থাকে না। চোখে খটকা লাগলেও আসোলে/বল্ল/নরোম এর মতো ভিন্ন বানান তিনি নিজের করে নিয়েছেন।

শেষে যেটা না বললেই নয় - নজমুল আলবাবের গল্পগুলোয় 'আমরা'র প্রাধান্য ব্যাপক। সে কারণেই যৌথ জীবন যাপনের সংশয় সংকট সত্ত্বেও চরিত্রগুলো আমাদের আপন হয়ে উঠে, সাথে গল্পগুলোও।
_

আগ্রহী পাঠকের জন্য নজমুল আলবাবের ৩টি গল্পের লিংক:
- বউ, বাটা, বলসাবান
- বিভিন্ন মিতভাষণ
- বৃষ্টি পিয়াসি আমি আর শাহানা


মন্তব্য

পরিবর্তনশীল এর ছবি

দারুণ পর্যালোচনা।
গল্পগুলো পড়ছি।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

স্বপ্নাহত এর ছবি

তিনটি গল্পই পড়া।

অসাধারণ!অসাধারণ!!অসাধারণ!!!

---------------------------

থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

অতিথি লেখক এর ছবি

আলবাব কে?ওনাকে চিনতাম না।ব্লগেও অবশ্য তখনো আসিনি।বইমেলায় সচল পাঠক এক মামাকে আলবাবের গল্পের বইটা কিনতে দেখলাম।ব্লগের এসেও দুএকবার বউ, বাটা, বলসাবান এর কথা শুনলাম।কৌতুহলবশত পড়লাম।ভলো না মন্দ লাগল তা বলার কোন দরকার নাই।আগ্রহী পাঠক পড়লেই বুঝতে পারবেন।
eru

-------------------------------------------------
সুগন্ধ বিলোতে আপত্তি নেই আমার
বস্তুত সুগন্ধ মাত্রই ছড়াতে ভালবাসে।

তাসিফ আহসান দীপ্ত এর ছবি

নজমুল আলবাব এর গল্প পড়েছি।
বউ, বাটা, বলসাবান বইটিও আমার সংগ্রহে আছে।

অসাধারণ একজন ছোটগল্প লেখক। কবিতার ঢঙে লেখা সব মনখারাপ করা কথন।

তীরন্দাজ এর ছবি

বইটি বইমেলায় কিনেছিলাম। পড়াও হয়েছে। সহজ ভাষার গাথুনিতে নিদারুন সত্য কথাগুলো শোনার এক অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আলবাবের গল্প কিংবা কবিতা নিয়ে অন্য কোনদিন আলোচনা করা যাবে ।
এখন আমি দেখছি, আনোয়ার সাদাত শিমুল কি করে ক্রমশঃ দক্ষ ক্রিটিক হয়ে উঠছেন ।

xxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxx
...অথবা সময় ছিলো;আমারই অস্তিত্ব ছিলোনা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অমিত আহমেদ এর ছবি

এই কথাটাই বলতে যাচ্ছিলাম!


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍বলতে দ্বিধা নেই, সচল হবার আগে নজমুল আলবাব-এর নাম কখনও শুনিনি। এর পরে তাঁর বেশ কয়েকটি অসাধারণ গল্প পড়ে ভক্ত বনে গেছি তাঁর।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিজেকে জয় করার অর্থ বিজয় না পরাজয়? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমি নজমুল আলবাবের গল্পের ভক্ত, সে ঘোষণা আগেই দিয়েছি। বইটা সংগ্রহ করার আগ্রহ আছে। কবে কীভাবে হয়ে উঠবে জানি না। আপাতত যে ক'টা পড়া আছে তাই আর শিমুলের আলোচনা পড়েই তৃপ্ত থাকি।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ভালো লেখকের সমালোচনায় ভালো একজন সমালোচক ।
সোনায় সোহাগা ।

-----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।

নিঝুম এর ছবি

সচলে সবার লেখার সাথেই মোটামুটি একটা ধারনা প্রায় প্রতিদিনই পাচ্ছি।কয়েকজনের লেখা তো পড়লেই বুঝি, এটা কার লেখা।সেক্ষেত্রে আর নাম জানার দরকার হয় না। তবে আনোয়ার সাদাত শিমুল ছিলেন আমার সচলে সবচাইতে বড় চমক।"অন্যরকম ক্যারিয়ার প্ল্যানিং" গল্প থেকে আমি তার একান্ত ভক্ত। তার এমন কোন লেখা নেই যেটা শুধু একবার পড়েছি।তাকেই আমি প্রথম গল্পের " বস" মানা শুরু করলাম।এরপর আমার আরেকটি বড় ধাক্কা ছিল কনফুসিয়াস এর " সমান্তরাল" পড়ে। আহ্‌ কি সেই গল্প। একবার না,দুইবার না , অগণিত বার পড়েছি এই গল্প।মানুষকে জোর করে পড়িয়েছি। অসাধারণ এক গল্প।কনফুসিয়াস যদি জীবনে তার সব গল্পও জঘন্য লিখেন,ওয়াক থুইং টাইপ লিখেন, তাতেও তিনি কেবল এই গল্পের জন্য অনেক দিন বেঁচে থাকবেন বলেই আমার বিশ্বাস।

আজকে আবার অন্য আরেক "বস" এর দেখা পেলাম।শিমুল ভাই অন্যভাবে পরিচয় করিয়ে দিলেন।

নজমুল আলবাব।একে একে তার সমস্ত লেখাই পড়লাম। কোন কমেন্ট করতে মন সায় দেয় নি।শুধু বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে গেলো।এই লেখক সচলে থাকতে আমি কি? এইসব লেখকদের লেখার সামনে নিজেকে তুচ্ছ,শীর্ণ আর এইটুকু মনে হোলো।

আবারো ধন্যবাদ শিমুল ভাইকে, এই অসাধারণ লেখক কে নতুন করে পরিচয় করে দেবার জন্যে।

--------------------------------------------------------
শেষ কথা যা হোলো না...বুঝে নিও নিছক কল্পনা...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

নিঝুম তো একটা পোস্টই লিখে ফেললেন!
আপনার গল্পের বই প্রকাশিত হলে প্রথম রিভিউটা আমি লিখার আশা করছি। চোখ টিপি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- নজমুল আলবাব, স্বনামেই যিনি পরিচিত। তাঁকে নিয়ে, তাঁর লেখনী কিংবা প্রকাশিত বউ বাটা বলসাবান পাঠোত্তর যে প্রতিক্রিয়া শিমুল দেখালেন, তব্দা খেয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। শিমুল বলছিলেন, তাঁকে সামনাসামনি দেখে অনেকে হতাশ হয়েছেন। অনেক পক্ক আর বয়স্ক ভেবেছিলেন যে! আমি বলি, মোটেও জনগণকে দোষ দেয়া যায় না। যার এতো সুনিঁপুন ভাষায়, প্রাঞ্জল উপস্থাপনায় কোনো লেখক আর তাঁর বইয়ের পাঠ-প্রতিক্রিয়া লেখার ক্ষমতা আছে, তাঁকে বয়সের তুলনায় অনেক এগিয়ে রাখবেন যেকেউ।

নজমুল আলবাবের জন্য অভিনন্দন রেখে যাই প্রতিটা পদে, ঠিক তেমনি অভিনন্দন তোলা থাকে প্রিয় শিমুলের জন্য। আমি জানি ত্রিশ পার হওয়া শিমুল কী রূপে আবির্ভাব হবেন আমাদের মাঝে। তাঁর জন্য অভিনন্দনটা সেদিনের, আজকে আগাম দিয়ে রাখলাম।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আপনিও!!!!

শেখ জলিল এর ছবি

অসাধারণ!
...শিমুলের লেখা পড়ে শুধু বলতে হয়- সমালোচনাও একটা উৎকৃষ্ট সাহিত্য হতে পারে সবসময়।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা ।

নজমুল আলবাব এর ছবি

এই লেখাটা আর মন্তব্য পড়ে আমার কেমন যেন ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে...

দেয়ালের দাগ নিয়ে দুটু কথা বলি, এই গল্পটা লিখি ২০০১ সালের প্রথম দিকে, নয়ত ২০০০ সালের শেষে। তখন লেখালেখি নিয়ে সিরিয়াস ছিলাম। গল্প, গল্পের বুনট, ভাষা, গঠন নিয়ে ভাবতাম। গল্পটা ছাপা হয় সম্ভবত ২০০১ এপ্রিল অথবা মে মাসে বন্ধুসভায়। কারণ গিয়াস ভাই লিখিনা কেন, বড় হয়ে গেছি টাইপ ভৎসর্না করেছিলেন। তাকে দেবার জন্যই লেখা হয়েছিল।

ছোটগল্পের শেষ হইয়াও হইলনা শেষ, সব কথা না বলা, একটা ধাক্কা মারো পাঠককে এই বিষয়গুলো তখন শুনছিলাম খুব। সেই শোনা গুলোকে ব্যবহারের একটা চেস্টা ছিল। আমার বলার ভঙ্গিতে একটা পরিবর্তন আনার চেস্টাও করেছিলাম।

দেয়ালের দাগ আমার এক জীবনের শেষ গল্প। ২০০১ এর পর আমি আর লিখিনি। সচেতনভাবে গল্প লেখা থেকে দুরে থেকেছি। টুকটাক কবিতা লেখার চেস্টা করেছি, অসংখ্য নিউজ লিখেছি এরপর কিন্তু গল্প লেখা হয়নি। কিংবা লিখিনি।

ছয় বছর পর ব্লগের দেখা পেলাম এবং আবার একটু একটু করে লেখালেখিতে ফিরে আসলাম। তবে সেই প্রস্তুতি, সেই ভাবনা এখন আর নাই। গল্পের ভাষা, বয়ন এইসব কেতাবি বিষয় আমাকে আর ভাবায়না। যেভাবে শব্দ এবং ঘটনা দেখি সেভাবেই বর্ণনার একটা প্রয়াস এখন আমার মাঝে আছে। এই বর্ণনায় সাহিত্য কতটা হয় কিংবা হলো সেটা নিয়ে ভাবি না, এবং ভাবতেও চাইনা।

সবাইকে ধন্যবাদ।

আর শিমুলকে কি বলবো?
শোন শিমুল, তুমি আমার গল্পগুলোকে আমার চেয়েও বেশি পড়তে পারো। এইভাবে আমি পারিনা। আমার প্রিয় একজন লেখক তুমি, এবং অতিঅবশ্যই প্রিয় মানুষ। আমিওতো তোমার প্রিয় মানুষ মনে হয়! কি বলো? তো সেই প্রিয় মানুষ যখন ব্যবচ্ছেদ করে, সেই ব্যবচ্ছেদে কোন কষ্ট থাকেনা। বরং একধরনের যত্ন অনুভুত হয়। আমি তোমার এই লেখার পরতে পরতে সেই যত্নের ছোঁয়া পেলাম। এই যত্ন আমার জন্য আরামদায়ক, কিন্তু পাঠকের জন্য হয়তো নয়। তারা আরেকটু কঠিন কাটাছেঁড়া আশা করতেই পারেন।

তোমারেওকি ধন্যবাদ দিতে হবে?

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ধন্যবাদ আলবাব ভাই।
তুলনার সুযোগ কম ছিল। আপনার আগামী বই নিয়ে একেবারে তুলাধুনার আশা রাখি ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।