...এরপর একজন উজ্জ্বল তরুণ উঠে দাঁড়ান এবং বিনম্র কন্ঠে বলল, প্রভু আমাদের ‘বন্ধুতা’ বিষয়ে কিছু বলুন। আল মোস্তফা - প্রেরিত সে পুরুষ, কবিতার মতো বিমূর্ত ও গভীর দৃষ্টিতে তাকালেন তরুণের দিকে।
তারপর ধীরে ধীরে স্পষ্ট উচ্চারণে বলতে লাগলেন -
“বন্ধু তো সেইজন, যে ধারণ করবে তোমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর।
তাকে দেখেই তোমার চোখে মুখে জাগবে ধ্বনিত ধ্বৈত। তুমি বুঝতে পারবে আলো, আলো আসছে...।
তার নিজস্ব ভূমিতে তুমি শস্য রোপন করবে গভীর ভালোবাসায় আর সঠিক সময়ে শস্য উত্তোলন করবে অবারিত কৃতজ্ঞতায়। সে হবে তোমার ঐশ্বর্য যা তোমাকে দান করবে জীবনের উষ্ণতা। তুমি তোমার দুচোখ তৃষ্ণার মতো তুলে ধরবে তার দিকে আর সেই হবে তোমার তৃষ্ণা নিবারণী। যখন সে তোমার হৃদয় উন্মুক্ত করবে তোমার কাছে যত অন্ধকারই হোক তা, তুমি ভয় পেয়ো না আর বন্ধুকে কখনো ‘না’ বলো না। যখন সে মৌন তখন কিছুটা সময় তাকে একা থাকতে দাও। তার নিজস্বতাকে তুমি তছনছ করো না। শরতের স্নিগ্ধ আলো হয়ো... বৈশাখের খরতাপ হয়ো না।
বন্ধুতা তো সেই স্বর্গীয় অমরাবতী যেখানে অপার্থিব আনন্দের মধ্যে পাখিডাকা নিস্তব্ধতায় জন্ম নেয় স্বপ্ন, ইচ্ছে, আকাঙ্ক্ষা। বন্ধুতায় কখনো দূরত্ব সৃষ্টি হলে ভেঙে পড়ো না। সাময়িক দূরত্বে বরং অনুভূতি আরো স্পষ্ট হয়, যেমন সমতল থেকেই সবচেয়ে ভালো দেখা যায় পাহাড়চুড়ো। বন্ধুতায় কখনো প্রাপ্তির প্রত্যাশা রেখো না। ওটা তবে বন্ধুতা নয়।
বন্ধুতা তো এক সংজ্ঞাহীন, বেহিসেবি অনুভূতির আশ্চর্য অনুবাদ। তুমি তোমার সবচে ভালো যা কিছু তা উৎসর্গ করো বন্ধুর জন্য। সে যদি তোমার আবেগে ভাটা দেখে - জানিয়ে দাও এরপরই জোয়ার আসবে। তাকে কখনো মৃত্যু, হাহাকার, ধ্বংস দেখিও না। বন্ধুর ভেজা হাতের আঙুল ছুঁয়ে তুমি বেঁচে উঠো, তোমার হাত বাড়িয়ে তাকে বাঁচিয়ে তোলো।
তোমার দুঃসময়ে তাকে সহযোগিতার সুযোগ দাও কিন্তু নিজেকে কখনো মূল্যহীন করো না। আর দুজন পরস্পরকে আলোকিত করো। যে আলোর ভেতরে সব রঙের উৎসার ঘটে।
সে আলো অনিঃশেষ ও শান্তিকামী।
এসব কিছুই জীবনকে দেয় কোমল সকাল, স্নিগ্ধ সজীবতা -
এসব নিয়েই বন্ধু ... তবে এই বন্ধুতা।”
___
(প্রকাশঃ বন্ধুসভা, প্রথম আলো। বুধবার, ২ আগস্ট ২০০০)
মন্তব্য
দুর্দান্ত লাগলো...
---------------------------------
জানিনা জানবোনা... কোন স্কেলে গাইছে কোকিল
গুনিনা আমি গুনিনা...কার গালে কটা আছে তিল
আহ ! অসাধারণ ! হাসান মোরশেদ ভাই এর করা জিবরানে প্রফেটের অনুবাদ এর আগেও পড়েছি। এক কথায় তুলনাহীন - যেমনটা মূল কবিতা, তেমনি অনুবাদ।
আচ্ছা, এই অনুবাদ কি গ্রন্থাকারে বের হয়েছে ?
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
সত্যিই অসাধারন!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ভাল লাগল।
- এই খলিল জিব্রান বন্ধুতা নিয়ে আরও লিখেছেন-
হাসান দাদা আর শিমুলকে সহ সকল সচল-আধাসচল-অসচলকে বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
অসাধারণ !!!!!!!!!!! আপনাকে ধন্যবাদ এমনর চসৎকার অনুবাদ উপহার দেয়ার জন্য।
মূর্তালা রামাত
বাঁধ ভাঁঙ্গা অনুবাদ সত্যি ভাব বস্তুকে অনেক স্পট করল। আর তাই পাঠক ভূমিকায় স্থির থাকতে পারলাম না।
ভালো হয়েছে, অনুভূতি নাড়ার মতো ভালো।
মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....
আমি হেন দিবস, তেন দিবস এই সবের বিরোধী। তবে এই অনুবাদ পড়ে বাকরুদ্ধ।
আমারো প্রশ্ন এই অনুবাদ কি বই হিসেবে পাওয়া যাবে?
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
দুর্দান্ত। খুবই চমৎকার। ভালো লাগল খুব।
কিছু কিছু লেখা একঝলক ঠান্ডা বাতাসের মতোই মন ভীষনভাবে ছুঁয়ে দেয়। এই লেখাটাও তেমনি।
খুব খুব ভালো লাগলো।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
অসাধারন !!!
------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
পচা লেখা।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
আমি তো পুরনো লেখা খুঁজে পেস্ট করেই শেষ।
সবাই যে বলছেন, বই আকারে 'দ্য প্রফেট' এর বাংলা পেতে, এ ব্যাপারে প্রিয় মোরশেদ ভাই কী বলেন? ঃ)
মোরশেদ ভাই এরকম একটা আকাম (!) করেও তথ্যগোপন করে ছিলেন, শিমুল ভাই ফাঁস করে ভালো করলেন।
লোকটা তো দেখি বেশ কাজের!
................................................................
জেতা মৎস্য গিলে বকে মনুষ্য খায় বাঘ-ভালুকে
রহস্য বোঝে না লোকে কেবল বলে জয়।
(দীন দ্বিজদাস)
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
পোস্টের লেখক, অনুবাদকসহ সকল সচলদের বন্ধুদিবসের শুভেচ্ছা।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
আবার পড়লাম . . . .
যে রাতে গুঁজেছো চুলে বেগুনি রিবন বাঁধা ভাট,
সে রাতে নরকও ছিলো প্রেমের তল্লাট।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . (আবু হাসান শাহরিয়ার)
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
আফসোস! বড় বেলার বন্ধুরা সব সুযোগ পেলেই ইয়ে মারা দেবার তালে থাকে। ছোটবেলাতেই ভাল ছিলাম যখন ছিল না কোন স্বার্থের টান!
অনুবাদকের কথা কী বলবো? চেনা বামুনের পৈতা লাগে না। আর মাওলানা শিমুলতো মজলিশে শুরার সদস্য। কী বলতে কী বলে আবার কোন বিপদে পড়ি!!
কী ব্লগার? ডরাইলা?
নতুন মন্তব্য করুন