বছর দুয়েক আগে যতগুলো যোগ্যতা আর মান নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান এম্বেসিতে ভিসার জন্য এপ্লাই করেছিলাম, ততগুলো কাগজ ঠিক একই ফাইলে সাজিয়ে আমার শেষ কৈশোরে দেখা মুগ্ধতা জাগানো বুক-ধড়াস স্নিগ্ধ-স্মিত মেয়েটির বাবার কাছে গেলে, তিনি অন্ততঃ দ্বিতীয় বিবেচনা মাথায় রাখতেন, এবং আমি নিশ্চিত আমাকে তিনি বলতেন – তুমি ‘প্রি-বিয়া-এসেসমেন্টে’ পাস করেছো। অস্ট্রেলিয়ান এম্বেসির মতো ‘প্রি ভিসা এসেসমেন্টেই’ মুখের উপর না বলে দিতেন না। সে-ই ব্যর্থতা শোক পেরিয়ে এবার যখন কানাডিয়ান ভিসার জন্য এপ্লাই করলাম, তারা আমাকে তিন দিনের মাথায় খুব সুন্দর করে বলে দিলো, তোমাকে ভিসা দেয়া হলে তুমি কানাডাতেই থেকে যাবে, বাংলাদেশে ফেরার কোনো সম্ভবনা তোমার নেই। সেই জন্য তোমাকে ভিসা দেয়া হলো না। ভিসা গাইডলাইনের তেরো নম্বর সেকশনে বলা আছে, তুমি যদি মনে করো তোমাকে প্রত্যাখান করার কারণগুলো যথেষ্ট পরিমাণে পাল্টেছে, তুমি ২য় চেষ্টা করে দেখতে পারো।
এবার আমি চোখে ধোঁয়া দেখি। আমার মনে হলো, আমার হতে-পারতো-শ্বশুর আমাকে বলছে, ‘তোমাকে জামাই করে নিলে, যথেষ্ট সম্ভবনা আছে, তুমি আমার বাড়ীতে ঘর জামাই থেকে যাবে, নিজের ঘরে আর ফিরবে না, এই জন্য আমি তোমার কাছে আমার মেয়ে বিয়ে দেয়া দূরে থাক, ঘরেই ঢুকতে দিবো না।‘
আমি কী করে বুঝাই, আপনার ঐ হীমপূরীতে দীর্ঘদিন থাকার বিন্দুমাত্র আগ্রহ আমার নেই, পাঠশালার বছর ঘুরলেই আমি ফিরে আসবো। আপনার ঘরের জ্ঞানকন্যা আমার সাথেই ফিরবে, আমার ঘরে-দেশে আলো-হাওয়া দিবে। অনেক ভেবে আরেকবার বুঝানোর চেষ্টা করি, এবং কোনো এক রহস্যজনক কারণে, তিনি/তারা বুঝেন। আমাকে প্রবেশপত্র দেন। আমি চোখ ভিজিয়ে ভেলা ভাসাই এপারে।
পশ্চিমা জীবনের গতি কিংবা স্থবিরতা নিয়ে যতোটা অহম কিংবা হতাশা শুনেছিলাম, তার বিন্দুমাত্রও আঁচ পাইনি গত দু’সপ্তায়। ব্যাগ-বাকশো খোলার আগেই ক্লাস শুরু হয়ে গেছে, ক্লাসের আগে মেইলে এসে গেছে এসাইনমেন্টের লিস্ট। আবার ছাত্র হয়ে মাস্টারের সামনে সুবোধ সাজি। থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। জরুরী দুটো জিনিস এখনো আয়ত্বে আসেনি, মোবাইল ফোন – বাসায় ইন্টারনেট। পকেটের ওজন এবং সম্ভাব্য চাপও মাথায় রাখছি। এক সময়কার নিত্য প্রয়োজন এখন সাময়িক বিলাস মনে হচ্ছে। খানিক গুছিয়ে উঠলে ফোন-নেট হাতে আসবে। তবে ক্রমাগত দৌড়ের উপর আছি, সকালে ঘুম থেকে উঠে বাস ধরি, তারপর ট্রেন। আবার খাতা কলম মন কান হাতের সংযোগের চেষ্টা। মাঝে মাঝে ঝিমিয়ে যাই, কী বলে প্রফেসার কিচ্ছু বুঝি না। নিজের মতো করে ১৮০ মিনিট বকবক করে হাতে ধরিয়ে দেয় ৩০ পৃষ্ঠার কেইস। বুঝি, আজ রাতেও ঘুমের মাত্রা কমে গেলো। বাসায় ফিরতে রাত। বেলা ডুবে পৌণে আটটায়, এভাবে সন্ধ্যাটা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে হারিয়ে যায়। আবার ভাবি, কাল সকালের দৌড়ের কথা। ঠান্ডাটা ঘুমের জন্য দারুণ, কিন্তু অমিত আহমেদ ফোনে বলছে – ‘এটা কোনো ঠান্ডাই না।‘
জানালার দিয়ে বাইরে তাকাই।
গাছের পাতা হলুদ হয়ে আসছে, পাতা ঝরছে।
আর ভাবছি, সময়টা আরও দ্রুত পার হোক...।
মন্তব্য
শুভ হোক আপনার প্রবাস জীবন ।
নিবিড়
ধন্যবাদ।
আশায় থাকলাম। আপনিও সুনীলের মতো হবেন।
=============================
তু লাল পাহাড়ীর দেশে যা!
রাঙ্গা মাটির দেশে যা!
ইতাক তুরে মানাইছে না গ!
ইক্কেবারে মানাইসে না গ!
কোন সুনীল?
মোটামতো এক অভিনেতারে বোধহয় চিনবেন... তুষার খান।
তিনি যখন প্রথম বিলাতের ভিসার আবেদন করছিলেন সেই অনেক বছর আগে, দেয়নাই। তারা বলছিলো একই কথা... তুমি থাইক্ক্যা যাইবা, আর ফেরত আসবা না।
তুষার ভাই চেইত্যা গিয়া পাসপোর্ট টাইন্যা ফেরত নিয়া বলছিলো শোনো... তোমগো মতো ফকিন্নি স্বভাব আমগো নাই, তোমরা এই দেশে ঘুরতে আইসা থাইক্ক্যা গেছো, দুইশ বছর আমগোরে জ্বালাইছো... ইতিহাস স্বাক্ষী... সবাইরে নিজেগো মতো চোর ভাইব্বো না... হুশ কইরা।
পরে তুষার খানরে ডাইকা নিয়া ভিসা দিছিলো।
ভালো থাকেন বিদেশে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
=============================
তু লাল পাহাড়ীর দেশে যা!
রাঙ্গা মাটির দেশে যা!
ইতাক তুরে মানাইছে না গ!
ইক্কেবারে মানাইসে না গ!
সচলায়তনে লীলেন ভাইর পরে আপনার কমেন্ট ভালো লাগে সচে বেশি।
তুষার খানকে জাঝা ।
ভালো থাকুন শিমুল ।
ধূ-র , পাতায়া আর যাওয়াই হলো না আপনি থাকতে থাকতে । কানাডাতে বোধহয় এ জন্মে হবে না । বহুদূর চলে গেছেন ।
সময় খুব কম , তবু যদি লেখালেখিগুলো নিয়মিত রাখেন .. আর কিছু না হোক ... প্রবাস জীবনের ডায়েরীগুলো... তবু হয়ত আগামীতে কিছু একটা হয়ে যাবে ।
আপনার কমেন্ট পেয়ে ভালো লাগলো। পাতায়ায় আপনার সাথে দেখা হলে ভালো লাগতো। দেখা হবেই...
অনেক ধন্যবাদ।
ঠাণ্ডার দেশে আপনার সময়টা খুব দ্রুত কেটে যাক, এই আশা করছি।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
ঠাণ্ডা নাকি খুব ঐখানে। একে বলে রাসায়নিক সাম্যাবস্থা। সেদিন অনেক কষ্ট কইরা গোসলের জন্য ঠাণ্ডা পানি যোগাড় করলাম। (লাইনের পানি গরম)। ফার্স্টে দুই এক মগ মাথায় দেওয়ার পর বেশ আরাম লাগছিল। তৃতীয় মগ মাথায় দেয়ার পর মাথা হঠাৎ গরম হয়ে গেল। আমি ভাবলাম কী ব্যাপার মাথা গরম হয়ে গেল কেন? চোখের সামনে তো কোন সুন্দরী মেয়ে নাই।
পরে বালতিতে হাত দিয়ে দেখি আবহাওয়াড় চোটে বালতির ঠান্ডা পানি গরম হয়ে গেছে।
তৃতীয় মগের পানিও গরম ছিল। আর এই গরম পানি আমার মাথায় পড়ছে।
ভাইজান- ভালৈয়াসেন তাইলে?
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
আপনি দুষ্টু হয়ে গেছেন। কার সাথে মিশেন?
হ, ভালাসি।
অনেকদিন আপনার খবর টবর নাই। লেখা পড়ে অবস্থা পুরোপুরি বুঝলাম না।
তাড়াতাড়ি নিয়মিত হন।
গপসপ করি ছোটবেলার মত।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
হ্যা, অনেকদিন লাইনের বাইরে আছি।
আপনি চায়ের কাপে গল্প তুলেন, আমরা ঝড় তুলবো।
ভাল থাকেন।
আপনিও...
ওয়েলকাম টু দ্য ক্লাব ...
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...
থ্যাঙ্কু
আপনি না শুনলাম জাপানে, কবে আবার ক্যানাডা গেলেন?
ভালৈ ট্রাভেলিং করতেসেন তাইলে। মেয়ের বাবার উদাহারনটা পড়ে হাসতে হাসতে পরে গেলাম।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
আমি কখনো জাপান ছিলাম না তো...
জাপানে আমার এক বন্ধু থাকে, একই মফস্বল শহরে বড় হইসি, টি স্টলে চা খাইছি, রাস্তার মোড়ে বাদাম খাইছি। সেও এখন ব্লগিং করে, ভালু ছেলে।
শুভ হোক প্রবাস জীবন।
ধন্যবাদ, পান্থ!
বাইচা গেলেন রে ভাই। এই দ্যাশে যেই গরম পড়ছে, এইবার তো মনে হয় গরমে আমার উপরে পার্সেল হয়া যাওনের সম্ভাবনা আছে।
শুভ প্রবাস জীবন।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
কোন্দিকে পার্সেল হইবেন?
আমরা এত গরমের মধ্যে থাকি, আমাদের জন্য কিছু ঠাণ্ডা পাঠালেই তো পারেন। তাতে আপনারও ভালো, আমাদেরও!
................................................................
তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার পকেটে আমি আছি যতটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই আমার করুণ ছায়া
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
ভাইরে, বৈশ্বিক উষ্ণতা ছাড়া এই দেশ আমাদের আর কিছু দিবে না...
ভালো থাকেন, সুখে থাকেন।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আপনিও ভালো থাকেন, সুখে থাকেন...
শিমুল
শীতে জনমে গিয়ে
আবার লেখালেকি বন্ধ করে দেবেন না
প্রবাস বসবাস ভালো হোক
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
বন্ধ হবে না।
পোস্ট লেখা এবং কমেন্ট লেখা
- হ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এবার লেখালেখিটা শুরু কর হে বালক।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ভাল থাইকেন শিমুল ভাই । "জ্ঞানকন্যা"রে নিয়া তাড়াতাড়ি ফিরা আসেন ! শুভ কামনা
আপনি ভালু না।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
- ই কুথা কিনু, স্যার?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
স্যার ভালু
শিমূল, কানাডার কোন দিকে আছো? লেথব্রীজ, আলবার্টা সাইডটাতে নাকি?
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
টরন্টোতে।
আপনি আসেন নাকি এদিকে?
শীতার্ত শিমুল অথবা কয়েকফোঁটা উষ্ণতা
গল্প লিখুকে কেউ
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
হায়!
মাত্র কয়েক ফোঁটা! ঈশ্বরী বড়ো কৃপণ।
অস্ট্রেলিয়া আপনাকে ভিসা দিল না! কন কি?
যাক, কানাডা অধিক ভাল দেশ, ভাল থাকবেন।
হু, দেয় নাই।
ভিসা ফি'টার জন্য এখনো মন কান্দে। ;(
হায় হায় এইটা কি কইলেন? আমরা তো সকাল বিকাল আফসোস করি কানাডায় জব নাই হ্যান নাই ত্যান নাই এইসব বইলা
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...
ধন্যাবাদ, আলবাব ভাই - আকতার ভাই।ও ধুসর গোধুলী।
হুম....নেট পাইছো?
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
একসময় কিন্তু একটু একটু করে এই শীত, এই শুভ্রতা এগুলোকে ঠিক ভালোবেসে ফেলবেন। তারপর কোন একদিন দেশে ফিরে এসে কোন একসময় আবার মন উচাটন করবে- ইস কয়েকদিনের জন্য যদি আবার ওসময়টাতে ফিরে যেতে পারতাম। ফেলে আসা স্মৃতির জন্য মানুষের হাহাকার চিরন্তন আর সেই সাথে বিস্ময়কর তার অভিযোজন ক্ষমতা। শুভকামণা রইলো।
যে রাতে গুঁজেছো চুলে বেগুনি রিবন বাঁধা ভাট,
সে রাতে নরকও ছিলো প্রেমের তল্লাট।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . (আবু হাসান শাহরিয়ার)
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
নতুন মন্তব্য করুন