ঠিকানাগুলো পালটে যায় বারবার। পালটায় চার দেয়াল। ফেলে যাই ক্রমশঃ আপন হয়ে আসা অচেনা রাস্তা, চলতি পথ, পথের পাশের নিত্য দেখা মানুষ। ঠিকানার শেষ লাইন কেবলই নম্বর। অডেনের আননোন আইডেন্টিটি। পোস্টকোড; ৪৩২০ থেকে ১২১৬। তারপর ২০১৫০ থেকে এম১এল৩জি৫।
...ভালো থাকার চেষ্টা করি।
ভালো থাকার জন্য আজ আমি অনেক ভোরে উঠে ঠান্ডা বাতাসে হেঁটে যাবো। তারপর কফি চুমুকের পরে কিছু উজ্জ্বল মানুষের আসরে বণিকী তর্ক হবে। শিখে নিবো কীভাবে কথার মাঝে টুপ করে চশমা খুলে আঙুল তুলতে হয়। কীভাবে কথায় কথায় মুগ্ধ করতে হবে শ্বেতাঙ্গ উজ্জ্বলতর মেয়েটিকে। আগামীবার ওকে দলে টেনে প্রজেক্ট প্রেজেন্টেশনের জন্য একটা গুটি চালাচালি হবে। বন্ডের মতো ফেস ভ্যালু বেড়ে যাবে অপ্রত্যাশিত প্রিমিয়ামে। আমি আজ সারা দুপুরময় গুটি চালবো। অনেক আগে মাটিতে ছক কেটে ছয়ঘরা কিংবা আরেকটু বড়ো হয়ে দাবা খেলার কথা আমার তখন মনে পড়বে না। শেষ কবে দাবা খেলেছিলাম, কম্পিউটারের সাথে, মনে নেই প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম। আজ মনে পড়বে না। মনে পড়বে না - ফুটবল ক্রিকেটের আরিফ-বাবু-বাদশাদের নাম। আজ আমি স্টিভ-আমান্দাদের সাথে শিখে নিবো কী করে বাজারী হয়ে উঠতে হয়। কী করে মুখের কথায় কিনতে কিংবা বেচতে হয় ভুল সম্ভবনা। অথবা ক্যারিবিয়ান পিটারের সাথে একাত্ম হবো এন্টি রেসিজম ক্যাম্পেইনে। তারপর সাবওয়েতে বুধবারের পিজা স্পেশাল, ১ ডলার। এভাবে সময় যাবে...। আজ এখানে বিকেল বলে কিছু নেই। বিকেলের রোদ নেই। মেঘলা আকাশে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। ঠান্ডা বাতাসে আরো পরে নিজেকে গুটিয়ে আমি টিম হর্টন্সে যাবো। কাঁচ ঘেরা তাপ-শীত নিয়ন্ত্রিত ঘরে মিডিয়াম সাইজ কফিতে প্রতি চুমুকে উষ্ণ হবো। মাথার ভেতর ট্রায়াঙ্গুলার আর্বিট্রাজ। বিকিকিনি।
এসব শেষে ইচ্ছে করেই একেবারে শেষ ট্রেনে ঘরে ফিরবো। স্থির চোখে দেখে নেবো কসমোপলিটান নাগরিক সমাজ। সামনের সীটে সোমত্ত তরুণ-তরুণীর ব্যবধান-শুন্য-ইঞ্চি ঘনিষ্টতায়ও অবাক হবো না। ফ্রিডম টু লিভে বিশ্বাসী হবো মুহুর্তে। তাই ব্রডভিউ স্টেশনে টুলে বসা দুই তরুণীর বিশ সেকেন্ডব্যাপী চুম্বন দৃশ্যে নিজেকে ঝালিয়ে নিবো, মনটাকে ব্রড করবো। জেন্ডার ডাইভার্সিটি সেমিনারে অমনটাই শিখেছি গত সপ্তায়।
শহর ঘোরা শেষ বাস চলে যাবে তখন। তাই আমি হাঁটবো আবার এক অচেনা রাস্তায়। লেদারের জ্যাকেটে হাত ঢুকিয়ে স্মার্ট সেজে অলিগলি শেষে ঘরে ফিরবো ধীর পায়ে। আকাশের দুধশাদা চাঁদে আজ জ্যোৎস্না খূঁজবো না। স্ট্রীট লাইটের আলো সব শহরে সোডিয়াম কেনো হয়, তা ভেবে নেবো নিজে নিজে। তাই পালটে যাবে আমার নেভী ব্লু জিন্সের রঙ। অচেনা মনে হবে নিজেকে। এইভাবে অচেনা হয়ে কেটে যাবে আজ সারাদিন।
আইপড পড়ে আছে টেবিলের নিচে। জীবন মুচকি হাসার গান গেয়ে, লোভ দেখিয়ে ভন্ড সুমন সেখানে মরে গেছে কবে। আজ গান শুনবো না, তাই ভেসে আসবে না – ‘রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। ভালো থাকবো আজ, কারণ – সকাল কেটে গেছে অন্য কোথাও। মনে পড়বে না - গায়ে আজ নতুন জামার ঘ্রাণ নেই। ঘরভর্তি মানুষের গমগম স্বর – কোলাহল নেই। কৃষ্ণচূড়া কেটে ফেলা ঈদগাহ মাঠের পাশের মেলা নেই। নেই খেলনা পিস্তল, রঙীণ বেলুন, সাইরেন বাঁশী কিংবা লাল-মোরগ-চকলেট লোভ। কিছুই মনে পড়বে না আজ। পায়েশ সেমাইয়ের কথাও ভুলে যাবো। এসএমএস ইনবক্স খালি থেকে যাবে আজ। হতাশ হবো জেনেও বিটিভির আনন্দমেলা দেখার রাত জাগবো না। এইসব না হওয়ার দিনে আমি বুঝে নিবো – আজ আলাদা কোনো দিন নয়। আজ মঙ্গল অথবা বুধবার। অন্যসব দিনের মতোই সবকিছু সাদামাটা আজ।
ঘুমানোর আগে নিউজ চ্যানেলে দেখবো – কাল সম্ভাব্য টেম্পারেচার বারো অথবা তেরো। বৃষ্টি হবে। সকালে ছাতা নেবো কিনা ভাবতে ভাবতে আজ আমি ঘুমিয়ে যাবো। এভাবে আজ আমি সচেতনভাবে ভালো থাকবো খুব।
.
মন্তব্য
...
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
শিমুলীয় । পুরোটাই ।
অনেক ধন্যবাদ, আরিফ ভাই!
ভালো থাকেন শিমুল ভাই।
পুনশ্চঃ আপনার কাছে একটা লেখালেখির কর্মশালা করতে চেয়েছিলাম, খেয়াল আছে ?
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
সেদিন আপনার ডান পাশে বসে ছিলেন সবুজ বাঘ, আজ আগের কমেন্টে আরিফ ভাই।
লেখালেখি নিয়ে এইসব গুরু থাকতে আপনি অন্যজনের কাছে যাবার সাহস করে করেন কীভাবে!
অদ্ভুত সুন্দর লেখা!
....তবুও ভাল থাকুন, জোর করে ভাল থাকার চেষ্ট করুন!
থ্যাঙ্কু...
দিলেন তো কাঁদিয়ে!
আজ সকাল থেকে কিছু ভালো লাগছে না। থেকে থেকে মনটা যেন দেশে চলে যাচ্ছে।
আপনাকে কাঁদালাম, ভীষণ স্যরি...
আজ আমিও শিমুলকে কোন মন্তব্য করবো না। তবে একটি গল্প শোনাবো। ছোট্ট। আসলে গল্পও নয়, সেই ছাত্রকালে দেখা একটি ভারতীয় হিন্দী সিরিয়ালের একটা ঝাপসা অংশ। ঝাপসা বলছি, কেননা নিজের মতো করে বলছি।
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা জাতীয এক হাতুরে তাবিজ চিকিৎসক কাম ভবঘুরে টাউট প্রকৃতির একটা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন খুব সম্ভবত আনু কাপুর।
এ তাবিজ সর্বরোগহরা। সবজায়গা থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে জগতের সমস্ত রোগ একাই ধারণ করে আসা রোগীটির বেশি কথা শোনার সময় নেই চিকিৎসকের। এক কথা, রোগ যাই হোক যত হোক এই তাবিজ পানিতে চুবিয়ে প্রতিদিন সকালে একগ্লাস পানি খাবে। এক সপ্তাহের গ্যারাণ্টি। নইলে....ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে খুব ছোট্ট ও সহজ একটা শর্ত অবশ্যই মানতে হবে। সেটা কী ? তাবিজ ধোয়া পানি খাবার সময় পৃথিবীর আর যত কিছুই মনে হোক ক্ষতি নেই, শুধু বাঁদরের কথা মনে হতে পারবে না। বাঁদরের কথা মনে হয়ে গেলে এই তাবিজ কোন কাজ করবে না। অত্যন্ত মহার্ঘ তাবিজ রোগিকে বুঝিয়ে দিতে দিতে বারবার সতর্ক করিয়ে দিচ্ছে, হাতি ঘোড়া চেয়ার চামুচ গামছা গাড়ি কচু জিলাপী গাছ উকুন ইত্যাদি জগতের আর যা-ই মনে হোক ক্ষতি নেই। কিন্তু কোনক্রমেই বাঁদরের কথা মনে হতে পারবে না। ঘর থেকে রোগী বেচারা বেরিয়ে যাবার সময় আবারো সতর্ক করে প্রশ্ন করা হলো, কীসের কথা মনে হতে পারবে না ? যথার্থ উত্তর দিতে পেরে রোগী তো অত্যন্ত সন্তুষ্ট মনে চলে গেলো।
গল্পের পরের অংশ আর কি বলার দরকার আছে ? সে অংশের ছায়া, শিমুল, আপনার লেখাতেই দেখতে পাচ্ছি ! হা হা হা !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
দূর্দান্ত!
এই কমেন্ট-গল্প আমি জীবনে ভুলবো বলে মনে না।
অসাধারণ মন্তব্যের জন্য আপনাকে জাঝা ।
লোকে বলে আমান্দা নামের মেয়েরা ভালো হয়.....
খুশী হও মিয়া খুশী হও.......
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
শুনিয়া খুশী হইলাম।
দুর্দান্ত। তা ভাই পোস্ট কোড দেখে তো মনে হয় টরন্টোর আশেপাশে। কোথায় আপনি? ভিক্টোরিয়া পার্ক এভিনিউ-র আশেপাশে নাকি?
ভালো আমাদের থাকতে হয়, হয়তো জোর করেও, তবুও
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
- এসেছে ভালো না থাকার দিন...
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বিজনেস এডমিনে না মাষ্টার্স করতে গেছো?
বদলাতে হবে, অনেকটা বদলাতে হয় শিমুল ।।
-------------------------------------
সমুহ শোকেরা এলো ঝাঁক বেঁধে;
বিদায় জুবায়ের ভাই...
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ধাক্কা...
মন খারাপ হয়ে গেলো।
ইজি শিমুল, ইজি।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
ওকে, ইজি...
শালা পুঙ্গির ভাই, সকালে উঠেই মন খারাপ করে দিয়েছে।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নিজেরেই গাইল দিলেন মনে হইলো।
স্যারে বুঝলাম পুঙ্গির ভাই, কিন্তু পুঙ্গিটা ক্যাডা?
পাগলা বাউলে?
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
পুলাটা বুদ্ধিমান হয়্যা গেছেরে, সব কিছু বুঝে ফেলে।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
এই কমেন্ট পড়ে আমি ঈদের দিন ২০ মিনিট হাসছি।
আলবাব ভাই ইজ মাই ফেভারিট...
এইরকম একটা লেখা পয়দা করার জন্যও অন্তত বিদেশে বাস করা দরকার...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হইল কী সবার?
স্যার!
আমার লেখাগুলান আপনি লিখতেসেন ক্যানো?
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
তাহলে, আমার লেখাগুলো এবার আপনি লিখে ফেলেন। পাল্টাপাল্টি ।
অসাধারণ লেখনি!
--
অনেক শুভ কামনা।
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
আজকাল সচলে একবার ঘুরে যেতে আসলেও আপনারা না কাঁদিয়ে ছাড়ছেন না। কি হয়েছে সবার!!!! এতো কাঁদতে পারবোনা...নিজের মুড ঠিক করেন এবং আমাদেরটাও ঠিক রাখেন....একটু দয়া করেন....
কল্পনা
...............................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা
অসহ্য ভাল একটা লেখা ৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
সবাইকে ধন্যবাদ, পাঠ ও মন্তব্যের জন্য।
নতুন মন্তব্য করুন