রাসেল আমাদের সাথে বিকেলে খেলতো না। স্কুল শেষে বাড়ী গিয়ে খেয়ে, একটু শুয়ে আবার মাস্টারের কাছে পড়তে বসতো। বুঝতাম না - বিকেলে খেলার সময় মাস্টার কেনো পড়াবে? পড়ালেখা তো রাতে করতে হয়! আবার শুনতাম, রাতে মাস্টার নিজে পড়ালেখা করে। মাস্টার কলেজে পড়ে, থাকে রাসেলদের কাঁচারী ঘরে। ক্লাস টু-থ্রি পড়ুয়া মন এসব জটিলতা বুঝতো না। কেবল ভেবে নিতো, রাসেলদের খুব কঠিন একজন মাস্টার আছে যে শিখিয়ে দেয় কীভাবে খাতায় মার্জিন টানতে হবে, কীভাবে হাতের লেখা সুন্দর করতে হবে। টিফিনের সময় সবুজ মাঠের আকাশে কাগজের প্লেন উড়িয়ে আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখতাম, সেই কাগজের প্লেনের পেছনে লেজ বানিয়ে উপরের দিকে তুলে দিলে, দেখতে আরো একটু সত্যি প্লেনের মতো মনে হয়, আকাশে আরেকটু বেশি সময় নিয়ে ভাসে, সেটা আমাদের দেখিয়েছিল রাসেল। আর রাসেল শিখেছিলো তার মাস্টারের কাছে। এসব মিলিয়ে নানাভাবে রাসেলদের মাস্টারের গল্প শুনি। আরও অনেকদিন পরে কোনো এক দুপুরে দূর থেকে দেখি হ্যাংলা শরীরের এক তরুণ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায়, রাসেল বলে – ‘উনি আমাদের লজিং মাস্টার’। এতোদিনের কল্পিত মানুষটিতে মিল পাই না, কারণ – এরকম অল্প বয়সের মানুষ মাস্টার হয় কীভাবে? ক্লাস ফোরে সেই মাস্টার চলে গিয়েছিলো অন্য কোথাও, অন্য কলেজে কিংবা নিজের দেশে। মাস্টার না থাকায় রাসেলের পরীক্ষা ভালো হয়নি।
আমার শৈশবে এসব যখন ঘটছিলো, তার চৌদ্দ পনেরো বছর আগে শেখ জলিলের জায়গীরনামা শুরু। লেখকের জবানীতে - সিদ্ধান্ত নিজের ছিলো না, ‘বাবা ঠিক করলেন- আমাকে জায়গীর করে অন্যের বাড়িতে পাঠিয়ে দেবেন'| কারণটা স্পষ্টতঃ অর্থনৈতিক। রাসেলদের মাস্টার তাও কলেজের ছাত্র ছিলো, কিন্তু শেখ জলিল তখন মাত্র ক্লাস সিক্সের ছাত্র। বুঝা যায়, পরবর্তী দশক সময়ে অর্থনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে। ‘জায়গীর’এর পরিবর্তে ‘লজিং মাস্টার’ মানুষের মুখে জায়গা করে নিয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে লজিং মাস্টারের সামাজিক অবস্থান। কিন্তু শেখ জলিলের সময়টা অন্যরকম। অর্থনৈতিক মন্দার বছর তখন, তাই হাটকয়েড়া গ্রামের মাজম মেম্বারের গেরস্থ বাড়িতে শান শওকত কিংবা নামের বাহার থাকলেও ভেতরের সংকট প্রবল হয়ে উঠে। দশ-এগারো বছরের জায়গীরকে বারোমাসী কামলার সাথে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়। এটাই হয়তো বাস্তবতা। রিলিফের আটা-চিনি-দুধ হাতিয়ে নেয়া শাসক শ্রেণীর ছড়ি সমাজ নিয়ন্ত্রণ শেষে ক্লান্ত বিকেলে এসে পড়ে জায়গীরের উপরে।
ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পেয়ে, সমগ্র জেলায় ফার্স্ট হয়ে, ক্ষণিক আদৃত হলেও উঠতি কিশোরটিকে যেতে হয় নতুন জায়গীরবাড়ীর সন্ধানে। গন্তব্য কুড়িপাড়া, সঙ্গী জনৈক লতিফ ভাই –
"দু'জন মিলে সারাদিন হাঁটি। সমতল ছেড়ে যখন পাহাড়ে উঠলাম তখনই দুপুর গড়িয়ে গেলো। পাহাড়ি পথ আর ফুরায় না। সমতলে মানুষ, এরকম হাঁটাপথে অভ্যস্তও তেমন ছিলাম না। মাঝে মাঝে থামি, তৃষ্ণায় বুক ফেটে যায়। পেটে ক্ষুধা, রাস্তার পাশের টিউবওয়েল থেকে পানি খাই আবার হাঁটি।"
বদলে যায় রাজা, থেকে যায় ছায়া। তাই প্রথম দিনেই তামাক ক্ষেতে পানি দিয়ে, শরীরে ব্যথা-পেটে খিদা নিয়ে কৌতুহলী রাত শেষ হয়। লতিফ ভাইয়ের সাহসে মধুপুর গড় পেছনে ফেলে শেখ জলিল ফিরে আসেন। শেষ হয় একদিনের জায়গীর জীবন। প্রশ্ন জাগে, লতিফ ভাই না থাকলে শেখ জলিল কি ঐ জায়গীর বাড়ী ছাড়তে পারতেন? বয়স এবং প্রতিকূল সময়ে মানুষ সহনশীল হয়ে উঠে, কষ্ট হলেও মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সীমাবদ্ধতা থেকে বের হওয়ার সুযোগ বেশি ছিলো কি? আগের মাজম মেম্বারের বাড়ীর কামলাদের নাম মনে থাকলেও কুড়িপাড়ার এ পরিবারটির পরিচয় অস্পষ্ট রেখেছেন লেখক। হয়তো স্মৃতিভ্রম, তবে এতো সময় পরে এসেও সামাজিক দায়ের কৌশল হলে সেই সীমাবদ্ধতার কথাটিই মনে করি আবার। অবশ্য, জায়গীরপ্রভুর নাম-সাকিন জানা পাঠক হিসেবে খুব জরুরী কিছু নয়।
‘যদি কেউ রাগ করে, যদি কেউ মারে ধরে, ভয় শুধু ভয়, শুধু ভয়, ...বাড়ছে না বয়স, পনেরোতে গেছে আঁটকে’ – অঞ্জন গেয়েছে আরও পরে। শেখ জলিল ঐ বয়সে খয়েরপাড়ার লালু সরকার আর হরিপুরের হাতেম আলী আকন্দ বাড়ী শেষে বোর্ডিং স্কুলের গন্ডি পেরুনোর সময়। সাথে চলছে জায়গীর জীবন। বয়ঃসন্ধির উৎসুক সময়, শরীরি নিষিদ্ধ আলাপ-অভিজ্ঞতা, খানিক দূরন্তপনায় রাস্তার পাশে বুট পুড়িয়ে খাওয়া, সিরাজ-উ-দ্দৌলা নাটকে মোহনলালের পার্ট, ভাটার ইট চুরি করে কনক সিনেমা হল অথবা যাত্রাপালায় প্রিন্সেসের গায়ে কাগজ ছুড়ে মারার ইচ্ছেটুকু আঁটকানোর সাধ্য ছিলো না কারো। মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর ‘আমি এক দূরন্ত যাযাবর’ গলায় চেপেছে তারও আগে। এসব দিন যাপনের গল্পে উনিশ’শ ছিয়াত্তরের গণবাহিনীর উৎপাত এবং পরিণতি প্রসঙ্গও আসে।
অধুনাপতিত এক সাপ্তাহিক সম্পাদক একবার লিখেছিলেন, চুয়াত্তরের দূর্ভিক্ষ বাংলা সাহিত্যে তেমনভাবে আসেনি। তার সে আফসোস কলামে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব স্পষ্ট থাকলেও শেখ জলিলের জায়গীরনামা পড়তে গিয়ে আবার মনে পড়ে গেলো, সাথে যোগ হলো এবার গণবাহিনী প্রসঙ্গ। এরশাদের প্রথমদিকের সময় এসেছে এভাবে –
"উনিশ শ’ বিরাশি সাল। এরশাদের সামরিক শাসন সবেমাত্র শুরু হয়েছে। চারদিকে থমথমে গুমোট পরিবেশ। লোকজনের কথাবার্তাতেও নিচু স্বর। রাস্তাঘাটে মহিলাদের চলাচলেও চলছে খবরদারি। পরীক্ষার হলগুলোতে চলছে কঠোর নিয়ন্ত্রণ। এমতাবস্থায় শুরু হলো আমার এইচএসসি পরীক্ষা।"
জায়গীর জীবনের শেষ অধ্যায় ঢাকা শহরে।
গ্রামের মেঠো পথের বদলে ইট সুরকির দালান। হাঁফিয়ে সিঁড়ি ভেঙে উঠা। চারদিকে শহুরে মানুষ, শহুরে ভাষা, তবুও ভেতরে কোথায় যেনো সেই গ্রামীণ মন। স্যান্ডেল পরে কলেজে যাবার, বিকেলে নিচ থেকে বন্ধুদের ডাকাডাকি, এসব ঘটনার মাঝে একটা ‘হারানো দিন’ ভাব আছে। দৃশ্য কল্পে মনে হয় ‘নীল আকাশের নীচে’ বা ‘প্রফেসর’ সিনেমার নায়ক। সাদাকালো জীবন, মনের ভেতরে রঙীন ইচ্ছা। তবে সব কিছুর প্রকাশের ভঙ্গী বদলেছে, বদলায়নি জীবনচর্চা। শেখ জলিল এই সময়কে ভিন্নভাবে দেখেছেন, দেখার চেষ্টা করেছেন অন্য চোখে। বলেছেন, নিজের যাপন বদলানোর কথা। ধারণা করি, বয়সটাই অমন। নানান সংকটেও আশাবাদী থেকেছেন। স্থায়ী জায়গীরের বদলে বেড়েছে প্রাইভেট টিউশন। প্রসঙ্গতঃ চলে আসে পড়ন্ত কৈশোরের অপ্রকাশ্য প্রেম-বিরহের কথা। সে-ই কবে কুতকুত খেলতে গিয়ে একটু বয়সী দোলার সাথে জড়াজড়ি, স্পর্শ, না-ভোলা-স্মৃতি। পালাক্রমে আফরোজার প্রতি মুগ্ধ বিষ্ময়, শ্যামলা বর্ণের মেয়ে ঝিনুক, শান্ত মেয়ে সাথী, স্মার্ট বিরু, অথবা ইমা। এসব মুগ্ধতা শেষতক ভালোলাগাই রয়ে গেছে, ভালোবাসা হয়নি, কিংবা শেখ জলিল বাঁধনে জড়াতে চাননি। বরং এড়িয়েছেন শেফালী কিংবা সাদমাকে বিয়ে করার বণিকী প্রস্তাব।
জায়গীরনামার গল্প করতে গিয়ে লেখক নিজের জীবনের গল্প বলেছেন সাবলীলভাবে। এসেছে নানান চরিত্র। বানোয়াট নয় বলেই হয়তো প্রতিটি ঘটনা গল্পের ব্যাপকতাকে ছাড়িয়ে যায়। তবে শেখ জলিল প্রথম দিকের ঘটনা বিস্তারে আত্মকেন্দ্রীক থেকেছেন, কেবল নিজের গল্প বলেছেন। বিশেষ করে মফস্বল জীবনের সময়কে ছাড় দিয়ে গেছেন। তাই নিজের মাঝেই টেনেছেন স্মৃতির শেষ রেখা। এ রেখা তার শাখা প্রশাখা বিস্তৃত করতে পারতো, এখনো পারে – যদি জায়গীরনামায় স্মৃতিছুরি চালানো হয়। জলিল ভাই কি অমন করবেন?
খুব সম্ভবনা থাকে – আত্মজীবনীর এসব চেষ্টায় চাপা পড়ে কষ্টের কথা, বেদনার কথা, হতাশার কথা, লজ্জার স্মৃতি। সেটা হতে পারে সচেতন লেখনী কৌশল কিংবা ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা। ‘জায়গীরনামা’ এদিক থেকে অনেক মুক্ত।
স্মৃতি হাতড়ে সাত বছরের জীবন এসেছে রঙীণ কাঁচের ছোঁয়াচবিহীন ভাবে। ঘটনা বর্ণনে চাতুর্য্য নেই, আছে নিটোল সারল্য। জীবন সংগ্রাম তাই স্পষ্ট হয়ে উঠে। হার-না-মানা দৃঢ়তা আসে নগর জীবনের নিত্য সংকটে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে যাওয়ার বলাকা এক্সপ্রেসে শেখ জলিল তাই একা থাকেন না, সাথে থাকে সংগ্রামী অভিজ্ঞতা, আশাবাদী প্রত্যয়।
যার পুরো প্রেরণাই জায়গীরনামা।
মন্তব্য
সত্যি বলতে কি, শেখ জলিলের লেখার প্রকরণ আমাকে মুগ্ধ করেনি। কিন্তু তিনি যে জগতের কথা লিখেছেন তাতে ভঙ্গিমা ততো মুখ্য নয়, সারবস্তুর ওজনেই সে তার সব দুর্বলতা মুছে দেয়। এ এক সামাজিক দলিল, এমন সময় ও সমাজের, যার কথা আমি অন্তত জানতাম না। তীরন্দাজের সমুদ্রজীবন নিয়েও আমার সেই অনুভূতি। নাগরিক বাংলা সাহিত্য আজ যে পুনরাবৃত্তির আবর্তে পথভ্রষ্ট তাতে এমন লেখা শুধু ব্লগজগতে নয়, ছাপা সাহিত্যের আঙ্গিনায় প্রকাশিত হওয়া দরকার।
মুলতঃ জায়গীরনামার চিন্তাটাই আমার কাছে চমত্কার লেগেছিলো । এ এক অন্য জীবনের সরল স্বীকারোক্তি । জলিল ভাই সহজ করে লেখেন , এইটাই তার লেখনীর আকর্ষনীয় দিক বলে আমার মনে হয় । অন্য দৃষ্টি ভঙ্গিতে বর্ণিত পাঠ পতিক্রিয়ায় জায়গীরনামাকে আরো ভালো লাগলো ।
পাঠপতিক্রিয়ায় আসলে লেখক অনেক উপকৃত হন । আপনার চমত্কার লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ শিমুল ভাই ।
--------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
রিভিউ সিরাম হইছে। আফসোস রেটিং কর্তে পার্লাম না।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
সেই রকম রিভিউ হয়েছে। দেখি কবে পড়া শুরু করা যায়।
জলিল ভাইকে বহুবার বলেছি জায়গীরনামা বই আকারে প্রকাশ করতে
এবার অনুরোধ করব
সেই বইয়ে যদি কোনো ভূমিকা কিংবা পরিচিতি দেয়া হয় তবে যেন সেটা শিমুলের এই লেখাটাই হয় সেই বইয়ের ভূমিকা কিংবা পরিচিতি
০২
জায়গীরনামা জন্য এর চেয়ে ভালো পরিচিতি লেখা বোধহয় সম্ভব না
শিমুলের রিভিউ এতোই চমত্ কার যে গত বইশেলায় প্রকাশিত অমিত আহমেদের 'গন্দম'-এর ভূমিকা পড়ে তখনই ইচ্ছে জাগছিলো এরকম একটি সুন্দর ভূমিকা যদি আমার কোনো বইয়ে থাকতো! এ আলোচনায় শিমুল সে অভাব পূরণ করে দিলেন।
জায়গীরনামা বই আকারে প্রকাশের ইচ্ছা আছে। বর্তমানে এর পরিবর্ধন এবং সংযোজনের কাজ চলছে। আশা করি পাঠকগণ আগামী বইমেলায় জায়গীরনামা পাবেন।
সুন্দর মতামতের জন্য মাহবুব লীলেন এবং অনন্য রিভিউ-এর জন্য আনোয়ার সাদাত শিমুলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
ধন্যবাদ শিমুল আপনার এই শ্রমসাধ্য লেখার জন্য। জায়গীরনামার কিছু কিছু পর্ব পড়া হয়েছে, সব নয়। আপনার লেখা পড়ে পুরোটা পড়ার ইচ্ছে হচ্ছে। তবে আমি যতটুকু পড়েছি তাতে অন্ততঃ দু'টো কারনে শেখ জলিলকে স্যালুট করা যায়। এক, তাঁর এই হার না মানা মনোভাবের জন্য। দুই, যথাসম্ভব সৎ থেকে আত্মজীবনি লেখার জন্য।
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সচলায়তনে এর আগেও পাঠসমালোচনা এসেছে। এবার আরো বিস্তারিত ভাবে আলোচনায় ব্রতী হয়েছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল।
শেখ জলিল রচিত জায়গীরনামার বিশ্লেষণ বা আলোচনা করতে গিয়ে শিমুল যথেষ্ঠ বিশ্লেষণাত্বক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। এ রচনাটি যে তাঁর মনোযোগ আকর্ষণে সমর্থ তা আলোচনাতেই প্রতিভাত। যদিও এখন এমনটি খুব একটা চোখে পড়ে না। সে প্রেক্ষিতে শিমুলের এমন উদার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসাটা যথেষ্ঠ সম্মান দাবী করে।
জলিল ভাইয়ের জায়গীরনামা আত্মজীবনীমূলক রচনা হলেও অনেক জায়গায় তিনি যথেষ্ট রক্ষণশীল কিংবা বলা যায় সংযত। আত্মজীবনীমূলক রচনা রক্ষণশীলতা বা সংযম সমর্থন না করলেও আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে তা করতে লেখক বাধ্য হয়েছেন বলা যায়। কারণ আমরা কিংবা আমাদের সামাজ সত্য কথন সবসময় মেনে নিতে অক্ষম। কোনো অতীত সত্য প্রকাশ পেলেও পরবর্তীতে তা ব্যক্তিজীবনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। জায়গীরনামা পড়তে পড়তে দেখা যায় অনেক জায়গায় লেখক তাঁর আপন উচ্ছ্বাসকে দমন করতে তেমন কোনো রাখঢাক করেননি। কোনো কোনো জায়গায় বর্ণনার বিস্তার কেন এড়িয়ে গেছেন তাও তিনি উল্লেখ করেছেন। কাজেই ঘটনা বা বর্ণনা বিস্তৃতির যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও লেখকের এড়িয়ে যাওয়া খুব একটা অযৌক্তিক বলে মনে হয় না। আর সে কারণেই বোধকরি পাঠকের খানিকটা পাঠতৃষ্ণা জেগেই থাকে।
ধন্যবাদ আনোয়ার সাদাত শিমুল।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
দারুণ। শুধু এটুকুই বলি।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
যেমন সিরিজ, তেমনই সেটার এ্যানালাইসিস
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
জলিল ভাইয়ের গদ্যের সরলতা বেশ আকর্ষনীয় ।
আর জীবনযাপনের সরল স্বীকারোক্তিতেই লুকিয়ে থাকে সত্যিকারের সৃষ্টিশীলতা ।
ধন্যবাদ শিমুল, আবারো ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ধন্যবাদ শিমুল আপনার এই সুন্দর রিভিউ এর জন্য আর আরেকটা ধন্যবাদ কারণ আপনার এই লেখা টা পড়ে জায়গীরনামার মত সুন্দর সিরিজ টা খুজে পেলাম ।
নিবিড়
-
লীলেন ভাইয়ের কথাটা জলিল মামুকে ভেবে দেখার অনুরোধ জানাই।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভাবছি মামু। শুধুই ভাবছি আর ভাবছি!
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
শিমুলের লেখার স্টাইলের ব্যাপারে আমার ভেতরে সবসময় একটা চমক কাজ করে। ছোট ছোটা বাক্যে অনেক কিছু বিশ্লেষণ না করেও সব পরিষ্কার করে বলে দেয়ার এক অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। এজন্যে হয়তো তাঁকে আমার ঈর্ষা করা উচিৎ। আর বুক রিভিউ করার সিদ্ধহস্ততার ব্যাপারে বোধ করি কারোরই দ্বিমত নেই।
এরপর আমি যা বলতে চেয়েছিলাম তা বিভিন্ন জনের মহাজনী মন্তব্যের মধ্যে যদি সব চলে আসে, আমি আর কী বলবো ?
তার চেয়ে ফাঁকি দিয়ে কেটে পড়াই উত্তম পন্থা হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিৎ নয় ?
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
জলিল ভাইয়ের জায়গীরনামা পড়ে মুগ্ধ আমিও, তার সহজ সাবলীল ভাষায় এতো কঠিন জীবন উপস্থাপনের ক্ষমতা দেখে। অসাধারণ একটা লেখা ওটা।
আর আপনার রিভিউ নিয়ে নতুন করে বলার কিছুই নেই, শিমুল। অতি অতি চমৎকার।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
দারুন, শিমুল ভাই
জায়গীরনামা ভালো লাগার অন্যতম কারণ এর সহজ সরল প্রকাশভঙ্গী। আর জলিল ভাইয়ের হার-না-মানা সংগ্রামী মনোভাবকেও শ্রদ্ধা জানাই।
লীলেন ভাইয়ের সাথে আমিও একমত।
_______________
বোকা মানুষ
আমার অতিপ্রিয় একজন মানুষের লেখার আলোচনা করেছেন আরেকজন অতিপ্রিয় মানুষ।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
শিমুল
এক কথায় - প্রচন্ড ভালো
আপনার লেখার কথা বলছিনা, ওটা না বললেও চলবে।
কিন্তু যে উদ্যোগটা নিয়েছেন,
সেটার জন্য অনকে অনেক ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
শিমুলের চমত্ কার আলোচনা আর সবার সুন্দর সুন্দর মন্তব্য পড়ে খুব আলোড়িত হচ্ছি। বই প্রকাশের ইচ্ছে আছে, সাথে এ আলোচনাকে ভূমিকা হিসেবে রাখারও..
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
শিমুল
এক কথায় - প্রচন্ড ভালো
আপনার লেখার কথা বলছিনা, ওটা না বললেও চলবে।
কিন্তু যে উদ্যোগটা নিয়েছেন,
সেটার জন্য অনকে অনেক ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য
রানা'র এই মন্তব্যের পর আর কিছু বলবার নেই শিমুল। কেবল প্রত্যাশা যে বেড়ে গেছে সেটা জানিয়ে যাই ।
---------------------------------------------------------
'...এইসব লিখি আর নাই লিখি অধিক
পাতার তবু তো প্রবাহেরই প্রতিক...'
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
খুব ভাল একটা কাজ করলেন। বাংলা সমালোচনা সাহিত্যের অমানিশা ঘুচলো বলে।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
জায়গীরনামা আর এই লেখা... দুইয়ে মিলে কি আর বলবো...
একটা কথাই বলা যায় কেবল...
সোনার হাতে সোনার কাঁকন, কে কার অলঙ্কার...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
সবাইকে ধন্যবাদ।
জায়গীর প্রথার সাথে আমি ছোটবেলা থেকেই পরিচিত। আমি প্রাইমারিতে পড়ার সময় থেকেই দেখতাম আমাদের বৈঠকঘরে কাতলাসেন আলিয়া মাদ্রাসার একজন করে ছাত্র থাকতেন, আমরা যাঁর কাছে সন্ধ্যায় পড়তে বসতে বাধ্য থাকতাম। এঁরা হতেন আলিম, ফাজিল অথবা কামিলের ছাত্র। প্রতিজন এক, দুই বা তিন বছর করে থাকতেন। কামিল পাশ করার পর চলে যেতেন। আমার দাদা '৯২ সালে মারা যাবার পর থেকে বাবা বা কাকা কেউই আর এরকম দায়িত্ব নেন নি।
আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে, এই জায়গীর ভদ্রলোকগণ কখনোই আমাদের বাড়ির কোনো কাজ করে দিতে বাধ্য ছিলেন না। তাঁদের কাছে কখনো সেটা প্রত্যাশাও করা হতো না। বড়োজোর কখনো ইচ্ছে হলে তাঁরা আমাদের সঙ্গে পুকুরে মাছ ধরায় অংশ নিতেন অথবা কখনো বাজারে গেলে বাড়িতে দ্রুত পৌঁছা উচিত এমন সওদাপাতি অর্থাৎমাছ-মাংস-শবজি নিয়ে এসেছেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কেন তাদের রাখা হতো? সেটা মাত্র পারলৌকিক মঙ্গলের আশায়। আমার ধার্মিক দাদা ভাবতেন যে, তাঁর বাড়িতে থেকে-খেয়ে কেউ আজীবন আল্লার কালাম চর্চা করার উপযোগিতা অর্জন করছেন, এটা অনেক পুণ্যের কাজ, যার ফল তিনি পরকালে পাবেন । আমি জানি না, সেটা তিনি আদৌ পেয়েছেন কি না!
যাহোক, এই অভিজ্ঞতা পুঁজি করে জলিল ভাইয়ের জায়গীরনামা পড়তে গিয়ে আমি প্রায় চমকে গেছি এই চিত্র দেখে যে, তাঁকে ওই বাড়ির খেতখামারের কঠোর কাজ অর্থাৎ কামলার কাজও করতে হতো। বালক বয়সে তাঁকে এরকম কষ্টের ভিতর দিয়ে বড়ো হতে হয়েছে, এই টেক্সট না পড়লে তা কখনো জানতেই পারতাম না।
জলিল ভাই তাঁর 'জায়গীরনামা'য় আমাদের সমাজজীবনের একটি অধ্যায় খুবই যোগ্যতার সাথে সরল ভাষায় ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। স্যালুট তাঁকে।
আর এই টেক্সটার বিশ্লেষণ করে শিমুল ভাই অবশ্যই ধন্যবাদার্হ্য প্রতিপন্ন হলেন।
................................................................
তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার পকেটে আমি আছি যতটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই আমার করুণ ছায়া
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
নতুন মন্তব্য করুন