অমিত আহমেদের সাথে বিরিয়ানী সন্ধ্যা (সচিত্র ২য় পর্ব)

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: সোম, ২০/১০/২০০৮ - ৫:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

-

সন্ধ্যায় বিরিয়ানী খাবো ভেবে ভেবে দুপুরে খাইনি কিছু।
পেটে খিদায় চোঁ চোঁ। কিন্তু অমিতের কাছে রোজার কথা শুনে খাবারের নাম মুখে নিতে সাহস পেলাম না।
'বুঝলা শিমুল, রোজার মাস সিস্টেমটা এক্সিলেন্ট একটা জিনিস। শরীর মন অর্থ সব কিছুর জন্যই ভালো।'
আমি হু হু করি। আর ঘড়ি দেখি, বলি - 'আজ ইফতার কয়টায়? সাতটা পনেরো?'
অমিত বলে, 'সাতটা সতেরো।'
এরপর সে বিড়বিড় করে কী যেনো পড়ে। মনে হয় তজবী জপছে। আমার ধারণাই ঠিক হলো, অমিতের ডান হাতে ডিজিটাল কাউন্টার। আধুনিক তজবী। আমাকে দেখিয়ে বলে, 'খুবই দরকারী জিনিস, কমফোর্ট্যাবল।'

ভিক্টোরিয়া পার্কের সবুজ ঘাসে আমরা কোনাকুনি হেঁটে যাই। অমিতই পথ দেখায়।
আমি ভাবছি আরও ঘন্টা খানেক সময় বাকী আছে। খিদা সামলাই কীভাবে?
অমিত জিজ্ঞেস করে, 'তুমি কি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছো?'
বললাম, 'না, তেমন না। এই ধরো, দশ পনেরো মিনিট।'
'আসরের নামাজ পড়েই তো বের হইছো মনে হয়, নাকি?'
'হুমম, ওরকম সময়েই।'
'আমিও নামাজ পড়ে রওনা দিছি।'
তারপর আমরা সামনে আগাই। ডানে ডেন্টোনিয়া পার্ক পার হই। অমিত জিজ্ঞেস করে, 'সামনে নাকি সুন্দর একটা মসজিদ হচ্ছে?'
আমি জানাই, আমিও শুনেছি, বাংলা কাগজ/দেশের আলো পত্রিকায় পড়েছি। কিন্তু দেখিনি।
অমিত জিজ্ঞেস করে, 'শুক্রবারে জুম্মার নামাজ কোথায় পড়ো?'
বলি, ঐ সময় তো আমি ক্যাম্পাসে থাকি।
এরপর ক্যাম্পাসের প্রেয়ার রুম নিয়ে কথা হয়। মুসলিম স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনে জয়েন করেছি কিনা অমিত সেটা জিজ্ঞেস করে। আর বলে, বিদেশ মানেই অন্য রকম। এখানে এসে মানুষ পালটে যায়। বিশেষ করে সাদা চামড়ার পোলা মাইয়্যাদের সংগ খুবই খারাপ। এরা আমার মতো সহজ সরল ছেলেকে একেবারে বিগড়ে দিতে পারে।
এরকম নানান সতর্কবাণী দিয়ে অমিত আমাকে সাহস দেয়, বলে - 'তেমন ভয়ের কিছু নাই। সময়ে সব বুঝে যাবা। খালি উপরওয়ালার উপর আস্থা রাখবা। মনে রাখবা তুমি কোত্থেকে আসছো। তোমার শেঁকড় কোথায়। এইসব একেবারে ভুলবা না।'

এইবার অমিত আমার বাসা নিয়ে জানতে চায়। বাড়ীর মালিক ঈমানদার মানুষ, আমাকে ভালো ইফতার দেয় শুনে অমিত বলে, 'তুমি আসলে খুব লাকী, বিদেশে এরকম পাওয়াই যায় না।'

ইফতারের প্রসঙ্গে আমার খিদা আরো চাঙ্গা হয়ে উঠে।
অমিতের এইসব কথাবার্তা ভালো লাগে না আমার।
এতোদিন পরে দুই বন্ধুর দেখা। কোথায় ব্লগ নিয়ে কথা বলবো, গল্প লেখা নিয়ে কথা বলবো, টুকটাক নিষিদ্ধ আলাপে মাতোয়ারা হবো। এবং আমার অনেকদিনের ইচ্ছা, অমিতের মতো যোগ্য বন্ধু পেলে হাল্কা শরাবী হবো। এসব চিন্তা মুহুর্তেই মাটি চাপা পড়ে গেলো।

ডেন্টোনিয়া পার্কের বেঞ্চিতে বসে আমাদের গল্প হয়। আমার পেটের মধ্যে ডজন খানেক ইঁদুর লাফালাফি করছে। যদি জানতাম অমিত রোজা রাখবে তাহলে আমিও রোজা রাখতাম। পেটের আগুনে সান্ত্বনা পেতাম খানিক। কী আর করা!

এখানে এসে বেশ কাঠবেড়ালী দেখি, গাছ থেকে নিচে নেমে কাছে চলে আসে। সাদা একটা কাঠবেড়ালী কাছে এসে ঘুরঘুর করলে আমি অমিতকে জিজ্ঞেস করি, 'অমিত এইটা কাঠবেড়াল, নাকি বিড়ালী?'
অমিত বুড়া আঙুলে তজবী কী টেপা বন্ধ করে। উলটা আমাকে জিজ্ঞেস করে, 'তুমি কি সাদা মেয়েদের সাথে ফ্রেন্ডশীপ করতেছো?'
আমি তো অবাক! কোথায় কাঠবেড়াল, আর কোথায় সাদা মেয়ে...
বললাম, 'না তো, কেনো?'
অমিত বলে, 'ব্লগে এরকম কী যেনো লিখলা। বদ্দাও উস্কানি দিলো।'
আমি মাথা নাড়ি, 'না না, ওরকম কিছু না।'
'তবুও খেয়াল রাইখো, শাদা মাইয়্যাগুলা কথা বলার সময় গায়ে হাত দেয়, পিঠে চাপড় দেয়। এগুলা সবই উস্কানি।'
আমি গম্ভীর হয়ে বলি, 'আরে ধুর, আমি ম্যাচিওর্ড না?'

তখন রিমাইন্ডার বেজে উঠে অমিতের পিডিএ থেকে।
অমিত বলে, 'চলো উঠি। আজানের ৩ মিনিট আছে'।
সামনে হাঁটি।
'শিমুল, জিন্সের প্যান্ট কি দেশ থেকে কিনছো?'
বলি, 'হ্যা, নিউ মার্কেট থেকে।'
'ফিটিং করা লাগছে না?'
'হু, তা তো লাগেই। একেবারে পুরা তো ফিট হয় না'।
'তা যখন করলাই, নিচটা এতো লম্বা রাখলা কেনো?'
'মানে?' আমি অবাক হই, কারণ - এর থেকে ছোট করলে তো খুবই বাজে দেখাবে?
অমিত বলে, 'এখন ধরো তুমি নামাজ পড়বা, প্যান্ট নিচে গুটাতে হবে। ঝামেলা না?'
আমি দেখি, অমিতের প্যান্ট পায়ের গোড়ালির উপরে। প্রথম দেখায় ফ্যাশন কিংবা কেয়ারলেস ভাবলেও এখন বুঝি, কেনো অমিত পায়ের গোড়ালির উপরে উঠানো প্যান্ট পরে...'।
দুম করে তখন আমার মাথায় ক্লিক করলো, অমিত কেনো দিনে দেখা করতে চায়নি, কেনো ইফতারের পরে আড্ডা দিতে চেয়েছে...।'

এই অমিত কেনো এরকম হলো, কী জাদুমন্ত্রে অমিত পালটে গেলো; এ ভাবনা আমার মাথায় কাজ করে না। স্বপ্ন কিংবা দুঃস্বপ্ন মনে হয়। সেবার বই মেলায় আলবাব ভাইয়ের কাছ থেকে আমাকে ডেকে নিয়ে আড়ালে ফিশফিশ করে অমিত বলেছিল, 'যাবা নাকি আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টিতে?'
কোথায় এবং কখন জিজ্ঞেস করলে অমিত বলেছিল এ-লেভেলসের তামান্না-মৌটুসী আরও কে কে থাকবে। চিটাগাং যাওয়ার কারণে সেই পার্ট মিস করেছি। ধারণা ছিলো, টরন্টোতেও এরকম কিছু ইয়ো ইয়ো পার্টির দাওয়াত পাবো। মজমা হবে। কিন্তু এ কী! অমিত আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?

'ওজু করবা? নাকি করা আছে?' বায়তুল আমান মসজিদের সামনে এসে অমিত জিজ্ঞেস করে।
অমিতের এ প্রশ্নে আমি ইতিউতি করি।
অমিত জিজ্ঞেস করে, 'নামাজ পড়বা না?'
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকি। বলি, 'আসলে গোসল করি নাই, শরীর একটু নাপাক আছে...'।
অমিত যেনো আকাশ থেকে পড়লো, 'ছিঃ শিমুল, ছিঃ। আসছো শুক্কুরে শুক্কুরে ১৫ দিন হয় নাই, এর মধ্যেই...?'
আমি অমিতের ভুল ভাঙানোর চেষ্টা করি, বলি অমিত যে রকম ভাবছে সেরকম কিছু নয়, সকালে উঠলেই ঠান্ডা লাগে, গোসল করতে ইচ্ছা করে না। গত চারদিন গোসল করি নাই, সাথে আরো কিছু অস্পষ্ট শব্দ এবং চোখের ইশারা যোগ করি, যাতে অমিত বুঝে যায় আমার এ শারীরিক অপবিত্রতায় গন্ধম ইফেক্ট নেই। আমি অমিতকে বুঝাই, স্বর্গের উদ্যানে এখনো নিপাট ব্রহ্মচারী হয়ে আছি।
অমিত হেসে বলে, 'আগে বলবা না? আমারে তো টেনশনে ফালায়ে দিছিলা মিঞা, আমার ভালো একটা বন্ধু কুপথে চলে যাবে ভেবে...।'
ভাবলাম, নামাজ পড়া থেকে মুক্তি বোধ হয় পেলাম।
কিন্তু, অমিত হাল ছাড়ে না। গোসল না করে কীভাবে বিশেষ ওজু করা যায়, শার্টের বাম দিকের কোণা ডান হাতে টেনে এনে আধ বিঘত পরিমাণ জায়গা পানিতে ভিজিয়ে কোন দোয়া পড়লে গোসলের মতো পবিত্রতা চলে আসবে সে তরিকা এবং ফজিলত অমিত আমাকে শেখায়। আমি অমিতকে অনুসরণ করি। মাথার ভেতর ঘুরঘুর করে - এ কোন নতুন অমিত?
হিন্দি সিনেমার জমজ ভাইয়ের কথা মনে পড়ে।
ভাবি, একেবারে এক্সক্লুসিভ কথা জিজ্ঞেস করি, যাতে নকল অমিত হলে ধরে ফেলি...। কিন্তু, জিজ্ঞেস করা হয় না। আজান ভেসে আসে, আমি রোজা না রেখেও ইফতারে শামিল হই। হাঁটু গেঁড়ে কোন বিশেষ ভঙ্গিতে খানাহ-পিনাহ করতে হয়, কীভাবে ডান হাতে গ্লাস নিয়ে বাম হাতে নিচ থেকে ঠেস দিতে হয়। এসব জীবন চর্চায় অমিত আমাকে দীক্ষা দেয়। কেবলই ভাবি, হায় - বিরিয়ানী সন্ধ্যা কোথায় গেলো?

অমিত বিরিয়ানীর কথা ভোলেনি।
ড্যানফোর্থের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আমি বাঙালি পাড়া দেখি।
বাংলা দোকান , সাইন বোর্ড। মারহাবা স্টোর, সরকার ফুডস, প্রিয়তা স্টোর, ঢাকা কনভেনিয়েন্স, ঢাকা কাবাব কিংবা সোনালী ব্যাংক; দেশের টাকা পাঠান সহজে।
অমিত আমাকে দেখায় কোথায় কী আছে।
'ঘরোয়া বিরিয়ানী' পার হয়ে গেলে আমি আঙুল তুলি, 'এখানে খাবার ভালো না?'
অমিত ঠিক ভালো মন্দ বলে না। বলে, গেছিলাম একবার। তবে সামনে চলো, সামনে আরেকটা ভালো আছে।
চোখে পড়ে এটিএন মিউজিক। আমি জিজ্ঞেস করি, 'তুমি ইভা রহমানের গান শুনছো?'
(আমি আবার ইভা রহমানের ফ্যান, এটা অমিতকে বলেছি কিনা জানি না)।
অমিত জবাব না দিয়ে এটিএন মিউজিকের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ডানে ইভা রহমানের বিশাল পোস্টার, ভেবেছিলাম সেদিকে যাচ্ছে। কিন্তু না, বামে জাকির নায়েকের বক্তিমার সিডির পোস্টারের সামনে অমিত মনোযোগী পাঠক। আমি আড়চোখে ইভা রহমানের গোলাপী শাড়ী দেখি। একটু মুটিয়ে গেছে মনে হচ্ছে।
অমিত মাথা নাড়ে, 'নাহ, এইটা তো আছে আমার কাছে।'
আমি ভাবি, অমিত কি জাকির নায়েকের ফ্যান হয়ে গেলো?

এভাবে রাস্তা সিগনাল পার হয়ে অমিত আমাকে নিয়ে যায় 'মক্কা বিরিয়ানী হাউজ'এর সামনে। জিজ্ঞেস করি, 'এটা কি ঘরোয়া বিরিয়ানীর চেয়ে ভালো?'
অমিত বলে, 'অলমোস্ট সেম, তবে ব্র্যান্ড নেম বলে একটা ব্যাপার তো আছে। তুমি মার্কেটিং্যের ছাত্র না?'
আমি এইবার বিরিয়ানির কাস্টোমার নিয়ে ভাবি, ব্র্যান্ডিং নিয়ে ভাবি।
এসবের কী জবাব পাওয়া যায়?

অমিত মুরগীর বদলে ছাগলের বিরিয়ানি অর্ডার দিলো।
ইচ্ছে ছিলো, মুরগী খেলে কী সমস্যা জিজ্ঞেস করি। কিন্তু, মুরগী থেকে চিকেন এবং চিকেন থেকে চিক'এ আলোচনা পৌঁছে গেলে অমিত আমাকে আবার হেদায়েত করবে, এই ভয়ে কথা বলি না। খাসির টুকরায় কামড় দিয়ে অমিত জিজ্ঞেস করে, শিমুল জিওম্যাট্রি কেমন বুঝতা?
বললাম, ভালো লাগতো না। আমি তো কমার্সে ছিলাম।
'বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল রহস্য বুঝো?' এই প্রশ্নের জবাবে বলি জিওগ্রাফীতেও আমি ভালো না।
অমিত কেনো এসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে তা আমার মাথায় ঢুকে না।
-

প্রিয় সচল বন্ধুরা, আপনারা ভাবছেন - আমি এসব গল্প করছি, সত্যি নাকি চাপাবাজী?
কী করে বুঝাই আপনাদের?
যেবার জার্মানী গিয়ে ধুসরের সাথে শালী-বাণিজ্য করে আসলাম, সেবারও আপনারা অনেকে আমাকে বিশ্বাস করেননি। কেউ কেউ বলেছেন, ফটো না দিলে বিশ্বাস নাই। একবারও তারা ভাবেননি, মানিব্যাগ হারিয়ে আমি কোন বিপদে পড়েছিলাম।
আর ছবি দিলেই কী হয়? অবিশ্বাসীরা কী আর লাইনে আসবে?
অমিত যখন, এই কিছুদিন আগে, ব্যাংকক ট্যুরের ছবি দিলো তখন অনেকেই বলে দিলো - এগুলো ফটোশপে করা। হায়, কী আর বলি! অবশ্য অমিত যে ফটোশপের কাজ ভালো পারে সেটা নিজেই স্বীকার করলো খাওয়ার টেবিলে। আমি ফটোশপের কিচ্ছু পারি না, ঐ বিরিয়ানীর ছাগ-হাড্ডির কসম লাগে, এইটা বিশ্বাস করেন সকলে...।

আমাকে এইবার চাপাবাজ যাতে বলতে না পারেন, সেইজন্য পোস্টে ফটো দিলামই দিলাম।

খাবার টেবিলে মনে হলো, ছবি তোলা দরকার।
দেশ থেকে অমিতের জন্য আনা 'পূর্ণমুঠি' দিলাম।
অমিত খুশি হলো।
এখন এইসব ঘটনা বিশ্বাস করাতে হলে বিরিয়ানী-বোরহানী-পূর্ণমুঠি-এবং আমি এক ফ্রেমে আসতে হবে।
অমিত এদিক ওদিক ট্রাই করে, ফ্রেমে আঁটে না।
আমি হাসিমুখে পোজ দিয়ে বসে আছি।

-

শেষে অমিত বিরক্ত হয়, ধুর মিয়া, মোটার মোটা হইসো - ফ্রেমেই তো আসো না।
মোটা গালি শুনে মন খারাপ লাগলেও মুখে হাসি ধরে রাখি।
শেষে অমিত ছবি তুললো দুটা। আমাকে দেখালো। এক ছবিতে বিরিয়ানী-বোরহানী-সালাদ-পূর্ণমুঠি আছে। আমার একাংশ আসছে, মাথা নেই। অন্য ছবিতে কেবল আমার মাথা। বললাম, হায়! এরকম কেনো?
অমিত বলে, দেখি মাথাটা ফটোশপে কিছু করতে পারি কিনা।

তবে, অমিতের ছবি তুলতে আমার কষ্ট হয় না।
একে ফটোজেনিক লুক, তার উপর শুকিয়ে গেছে, এটা আগেই বলেছি। ক্যামেরা ফ্রেমে চমৎকার মানিয়ে যায়। আমি চেয়ারে বসেই ছবি তুলি। ডানবাম করতে গিয়ে গ্লাসের পানি পড়লো ক্যামেরার লেন্সে। এরপরে ছবির এই অবস্থা।

-

এই ছবির মানুষটি অমিত আহমেদ না, তার হাতের বইটি এডিট করা হয়েছে, এমন কুৎসাও রটাবেন মন্দজনেরা। সেই তর্ক দূরে রাখি। বলি, অমিতের সাথে তারপর কী কথা হলো...

এর মাঝে অমিতের মোবাইলে ফোন এলো। এস এম মাহবুব মুর্শেদ ভাই। খাবার সময় বেশি কথা বলতে হয় না, তাই সামান্য মাসলা মাসালা বলে ফোন আমার কাছে দিলো। আমি মুর্শেদ ভাইয়ের সাথে কথা বলি, 'অমিতের সাথে ইফতার করতেছি, বস!'

দুষ্টলোকদের কথা বলছিলাম উপরে। অমিত অভিযোগ করলো, ব্লগে আমার বেশিরভাগ বন্ধুই নাকি দুষ্টু। আমি নাকি জাপান-জার্মানের কতিপয় বাঁদর-ব্লগারের সাথে বেশি বেশি ঘনিষ্ঠতা দেখাই। এমনকি শালী বিষয়ক কমেন্ট করে নিজের ইমেজ খারাপ করছি। অমিত খবর পেয়েছে, অনেক শালীসমৃদ্ধ ব্লগার আমার লেখায় কমেন্ট করে না। আমার মতিগতি দেখে তারা নাকি শালী হারানোর শংকায় আক্রান্ত। কমেন্ট নসিহতের পাশাপাশি অমিত এবার আমার লেখা নিয়ে আলাপ করে। আমি বোরহানীতে চুমুক দিয়ে মনোযোগ দিই, ভাবি - এমনটাই তো চেয়েছিলাম। বন্ধু মানুষ, একে অন্যের লেখা নিয়ে আলাপ করবো।

কিন্তু, অমিত দেখি আমার লেখা নিয়ে খুবই বিরক্ত। গল্পের নামে আমি যা লেখার চেষ্টা করি এগুলো সবই মূল্যহীন। এগুলোর মাঝে সমাজ নেই, নীতি নেই, আদর্শ নেই। জিজ্ঞেস করি, ব্যাপারটা কী রকম?
অমিত বলে, আমার লেখায় শিক্ষণীয় কিছু নেই। মনে দাগ কেটে প্রভাব ফেলার কিছু নেই।
জিজ্ঞেস করলাম, অমিত নিজেই বা সেরকম কয়টা লেখা লিখেছে, তাহলে আমারও ব্যাপারটা বুঝতে সুবিধা হয়। সে স্বীকার করে, তারও সেরকম কোনো লেখা নেই। তবে এখন পড়ালেখা করছে। এই কথা বলেই ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করলো সে। ইন্টারন্যাশনাল কুরিয়ারের সীল। ৩টা বইঃ
হামিদুর রহমানের উপন্যাস 'ফুটন্ত গোলাপ'।
কাশেম বিন আবু বকরের 'বোরকা পরা সেই মেয়েটি' আর 'বিলম্বিত বাসর'।

অমিতের মতো দূরন্ত লেখকের হাতে এই বই দেখে আমি আবার তব্ধা খাইলাম। জিজ্ঞেস করলাম, 'তুমি য়ে-ই সব বই পড়ো?'
অমিত দেখি উলটা খ্যাপা, 'নাক সিটকালা কেনো?'
বললাম, 'এই সব ছাইপাশ...', কথা শেষ করতে পারি না। অমিত জিজ্ঞেস করে, 'তুমি কাশেম বিন আবু বকরের বই পড়ছো? নাকি না পড়ে কথা বলতেছো?'
হাসি দিয়ে বলি, 'বাসর রাত' উপন্যাসটা পড়ছিলাম।
অমিত যেনো জোশ পেয়ে যায়, বলে - 'মনে আছে কিছু? কী নিয়ে লেখা?'
স্ম্বৃতি হাতড়ানো লাগে না, মুহুর্তেই বলে ফেলি, "শেষ প্যারাটায় নায়ক নায়িকার বিয়ে হয়ে গেছে, নায়ক বলছে - আসো এবার কাছে আসো, দেখি কে কতো বেশি কামড় দিতে পারে..."
অমিত মাথা নাড়ে, 'বাহ! এই না হলে শিমুল! তোমাদের সমস্যা কী জানো? মনের ভেতর ময়লা, উপন্যাস পড়বা আর সিলেক্টেড লাইন খুঁজবা, তাইলে আসল জিনিশ কই পাইবা?'
জিজ্ঞেস করি, কাবিআ বকরের বইয়ের ভালো দিক কি?
অমিত এবার খিলাল দিয়ে দাঁতের ফাঁক থেকে খাসির গোশের ছুটাছাটা বের করে, বলে - 'তোমাকে দেখতে হবে সাহিত্য মানুষের জীবনকে কেমন প্রভাবিত করছে। আজিজের চিপায় সাদা-কালো কাউয়া মারা বা কাফকা-কামু-বোদলেয়ার মুখস্ত করে যারা বই লিখে তাতে পাঠকের কি?'
বললাম, 'বকরের বই পড়ে মানুষ কী জীবন দীক্ষা পায়?'
এরপর অমিত শরিয়ত সম্মত প্রেমের গল্প করে। সেখানে শরীরি ব্যাপার কীভাবে আসতে পারে তা বলে। পর্দার মধ্যে থেকেও প্রেম মহব্বত হলে আমাদের ইয়াং জেনারেশন কিভাবে ধ্বংসের কাছ থেকে ফিরতে পারে তা নিয়ে কথা বলে।

আমি তখন রবি কবির কাছে ধর্না দিই। 'তোমার ভাষা বোঝার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলি'।

জিজ্ঞেস করলাম, 'এই বইগুলা পাইলা কই? কে দিলো?'
অমিত এবার পোস্টেজের প্যাক দেখায়। প্রেমিকা, স্যরি, প্রেরিকার কী যেনো নাম মনে পড়ছে না। চিনলাম না। কিন্তু এটা জানলাম, অমিতের মারাত্মক ফ্যান। কিন্তু, অমিতও আগে একটু ডি-জুইস জেনারেশন নিয়ে লেখালেখি করছে। এইটা ঐ ফ্যান লাইক করে না। সে চায় অমিত 'উজ্জীবন' লেখা লিখুক। এসো তরুণ সত্যের পথে, আমাদের পতাকা হাতে, সংগঠনকে আঁকড়ে ধরো। এই টাইপ বিপ্লবী লেখা লিখুক সে।

এবার অবাক হই, বলি - কাহিনী কী? ডিটেইল বলো।
অমিত বলে, "সব উপরোয়ালার লীলাখেলা। মানুষ কখন কীভাবে পালটে যায় টের পাওয়া যায় না। সামান্য চ্যাটে এম এস এনে টুকটাক আলাপ করে আমাকে পালটে দিলো, ম্যান!"
হায়, এ কী কথা?
এতোক্ষণে, নতুন অমিতের কাহিনী বুঝলাম।
কে সেই অপরূপা কণ্যা, কুহেলিকা ছায়া?
তাহলে অমিতের জি-টকের বাদবাকী এতো এতো টুনটুনি পাখীর কী হবে? আমি হাত পাতি। উহু, অমিত করুণা করে না। বরং তার আরেক ফ্যানকে আমার কাছে গোছানোর চেষ্টা করে। বারবার বলে, 'ভয় পাচ্ছো কেনো? বোরখা পরে না তো?'
আমি রাজী হই না। বলি, যেই প্রোফাইল দিছো, বোরখা লাগবে না, এমনিতেই ভয় পাইছি। আসলে ঐটাইপের সাথে আমার রাশি মিলে না।'
এবার অমিত আমার জন্য নন-মুসলিম পাত্রী অফার করে। আমার সাথে নাকি খাপে খাপে মিলবে। তবে বুঝিয়ে সুঝিয়ে মুসলিম করে নিতে হবে।
আমি পাত্তা দিই না, 'ধুর মিয়া, অনেক লম্বা প্রজেক্ট। বাদ দাও। তৃণা টাইপ কেউ থাকলে বলো।'
অমিত এবার বিধর্মীকে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করলে কয়টা কুরবানীর সওয়াব পাওয়া যাবে তা নিয়ে কথা বলে। এই কথায় কথায় আমরা মক্কা বিরিয়ানী থেকে বের হয়ে আসি। (বিলটা অমিতই দিয়েছে, আমি নাকি তার মেহমান। মেহমানের খেদমত না করলে পরকালে...)

আলাপে আলাপে আমরা আবার রাস্তা ধরে হাঁটি।
গন্তব্য - কাছের কফি শপ।

তখন দেখি আমাদের বিপরীত দিক থেকে সালোয়ার কামিজময় এক পড়ন্ত বাঙালী কিশোরী আব্বু-আম্মুর সাথে হেঁটে আসছে। কার দিকে তাকিয়ে আছে সে? আমার দিকে নাকি অমিতের দিকে?

____

(আগামী পর্বে সমাপ্য)


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

নামাজ, ইফতারি, রোজা, আসর, ডিজিটাল তসবী, নাপাক, মক্বা বিরিয়ানি, কাসেম নিব বকর, ইভা রহমান--- কেমন যেন সন্দেহ সন্দেহ লাগছে খাইছে

বাকীটা পরের কিস্তিতে পড়তে হবে।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আনোয়ার সাদাত শিমুল লিখেছেন:
অমিত বলে, "সব উপরোয়ালার লীলাখেলা। মানুষ কখন কীভাবে পালটে যায় টের পাওয়া যায় না। সামান্য চ্যাটে এম এস এনে টুকটাক আলাপ করে আমাকে পালটে দিলো, ম্যান!"

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

ফোটুংগুলি দারুণ!
জলে ভর্তি ছবিটা একেবারে হায়ার ডাইমেনশনের! মনে হচ্ছে টাইম- ট্রাভেলার! হো হো হো)

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- তাইতো বলি, অমিত এরকম হয়া গেলো ক্যান? চিন্তিত

হাদিসে আছে, "যে ব্যক্তি নিজের সমালোচনা করতে পারে সেই সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান।"
অমিত দেখি নিজে নিজেই কয় শুকায়া গেছেগা। এতোক্ষণে বুঝলাম এই কথা বলার আসল কাহিনী।

জাপান-জার্মান সমিতির সদস্যদের 'বাঁদর' বলায় তেব্র নিন্দা বয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। দেখি, আগে স্যার এসে একটা হালাল বিবৃতি দিক। তারপর নেক্সট কর্মসূচী।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

সৌরভ এর ছবি

দাড়ান স্যার। এক্টা আন্তঃমহাদেশীয় বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এই ঘটনার নিন্দা আমরা সহিংস করবো নাকি অহিংস করবো।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- হ
প্রয়োজনে পুরা পৃথিবী অচল করে দেওয়া হবে। এন্টার্কটিকাতে গম সাপ্লাই বন! (মেম্বররে ডায়াল করুম?)
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

হিমু এর ছবি

আচ্ছা, মেম্বারের হৈলো কী? সে তো বহুদ্দিন ধরে গায়েব। মাঝে একদিন আইসা ঢুক্লো কিভাবে মুখরা রমণী বশীকরণ করতে হয় সে বিষয়ে পরামর্শ নিতে। বল্লাম, যা বলে তাতেই রাজি হয়ে যান। তারপর সেই যে কাটলো, আর তো দেখা মেলে না!


হাঁটুপানির জলদস্যু

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাহারওয়ালী বশ হৈছে ঠিকই কিন্তু ঘরওয়ালী নাকি বেলুনচালান কর্ছে। আরো লেটেস্ট খবর জানে সৌরভ স্যার। স্যারেরে বেনজিন মারতে থাক।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

হিমু এর ছবি

হ্যাঁ, "শেঁকড়" এর কথা ভুললে চলবে না। "শেঁকড়"-এই শক্তি। ভেষজ গুণের অবহেলা করা ঠিক্না একদম।

অমিতের হাবভাব আমার কাছেও ইদানীং আবছা ঠ্যাকে। সেদিন গুগল্টকে এসে ধরেছিলো। জিগায় ফেসবুকে ছবি দেওয়া শরীয়তসম্মত কি না। বলতে পারলাম না ঠিক্মতো। একটু পরে কোত্থেকে খোঁজ নিয়ে এসে বললো, হ্যাঁ যায়। তবে আঁকা ছবি দেওয়া যাবে না। আমারে বললো ফেসবুকে সুজন্দার করা ক্যারিকেচারটা ফালায় দিতে। দিলাম মন খারাপ

চিন্তায় ফালায় দিলা ভায়রা।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সৌরভ এর ছবি

ঘটনা আসলেই মনেহয় খারাপ। অমিত মাস তিনেক আগে আমার কাছে আইপির পাছা লুকানোর সফটওয়্যার চাইসিলো।

কালকে শুনলাম, তথাকথিত(!) মুক্তচিন্তার বিরুদ্ধে সচলায়তনে অতিথি নিকে যেসব আধা-তিন-কোণা কমেন্ট হয়, সেগুলান নাকি কে জানি আইপির পাছা লুকায়ে করতেসে।

তার্মানে? মন খারাপ


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

সৌরভ এর ছবি

জ্ঞানী স্যারেরা(!) এইটারেই কি "মেটামরফোসিস" কয়? চোখ টিপি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

আলমগীর এর ছবি

বিরানির কাহিনী কইতে লাইগা এই গোবেচারা মানুষটারে পচাচ্ছেন কেন?

দেখি আগামী পর্ব পড়ে তারপর একটা বিবৃতি দিব।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আগামী পর্বের শেষে 'গোবেচারা অমিতকে পচানো' সিদ্ধান্তের বিবৃতি পেলে খুশি হতাম, হে ঈশ্বর পাঠক।

আলমগীর এর ছবি

তার আগে সেন্সর করা কিছু কাটপিস:
একেতো সারা দিন কিছু খাই নাই, তারপর বিরিয়ানি এমন জোশ বানাইছে যে হালায় তিন প্লেট মারার পরও মন ভরতেছিল না। তার উপর বোরহানিটা যা হইছে না, আলজিভা ধইরা টান মারে।
রাস্তায় বার হইয়াই আমার এক নাম্বার চাপলো। অমিতরে কই, কাছে ভিতরে কোন পাবলিক টয়লেট আছে?
-না, জরুরত কোনটা? ছোট না বড়?
আমি কানি আঙুল তুলি। অমিত আমারে একটু আন্ধার মতো দেইখা দুইটা বিল্ডিয়এর চিপা দেখাইয়া দেয়।
- ওই মিয়া লগে কুলুখ আছে?
কুলুখ কী জিনিষ, অমিত?
কিছু না কয়ে পকেট থেকে, ভাঁজ পড়ে যাওয়া টিস্যু পেপার বের করে দেয়।

কায়দা করে এক দেয়ালে এংগেল করে ছেড়ে দেয়ার পর, ভাজ করা টিসুটা কেবল শেষ করছি আর অমিতের ধমক।
- ধুর মিয়া, চল্লিশ কদম হাটলা না? গলা খাকরি দিলা না?
আর কী কী করতে হইব, একবারে কও, বার বার বেইজ্জত হইতে ইচ্ছা করে না।
-লড়া চড়া কর। গলা খাকরি দিয়া এদিক ওইদিক মিলাইয়া চল্লিশ কদম হাঁট।

লড়া চড়া করার পর আর চেইন লাগাইতে পারি না।

কেমনে কী করুম এখন?

নজমুল আলবাব এর ছবি

আপনারে এত কিছু কে বল্লো?

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

আলমগীর এর ছবি

আমারে কে বল্লো মানে? আপনে কি এসব কাহিনী সত্য মনে করছেন নাকি? মানিকজোড়রে চিনেন নাই।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

পরিস্থিতি উলটা দিকে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে অনেক ইট পাটকেল আমার জন্য অপেক্ষা করছে। শেষ পর্ব আসছে আগামীকাল। সে-ই পর্যন্ত জামিন চাই।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

সেরম হইছে। পড়ি আর হাসি। পাশের কলিগে কয়, কী মিয়া মুচকি মুচকি হাসো ক্যান। কিছু বলি না। পড়ি আর হাসি।

কীর্তিনাশা এর ছবি

অতি উত্তম কাহিনী। শেষ পর্বের অপেক্ষায় .......

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

অমিত আহমেদ এর ছবি

লেখা আর মন্তব্য পইড়া হাসতেই আছি।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

যাক, একটা ছেলে অন্তত দ্বীনের পথে আসলো। তবে ছবি ফটোশপির নিন্দা জানাই। অমিতের দাঁড়ি (দাড়ি?) না থেকে পারেই না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আপনেও দেখি একই জায়গায় কোপ মারছেন !! চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

হো হো হো
পরের পর্ব পড়ে নেই, তারপর বাকি মন্তব্য হাসি
_______________
বোকা মানুষ মন খারাপ

রাশেদ এর ছবি

ইয়া খুদা! একটা মানুষ পরহেজগার হয়ে গেছে, সেইটা শিমুলের সহ্য হইলো না! হে মুমিন বান্দা! রোজা রাকার জন্য রয়েছে রাইতের বেলা কেলাবিংসহ ৭০ টি উত্তম জাঝা! পরকালের জন্য বসে থাকতে হবে না!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

দুইটা কথা আপনার জন্যঃ

০১.
রাইতের বেলা কেলাবিং কিরম?

০২.
হে হে। জা-ঝা লিখলে উত্তম লিখতে হয় না। উত্তম ডিফল্ট। চোখ টিপি
গান শুনেন

রাশেদ এর ছবি

০১. জাঝাওয়ালা পাবলিক ভালো জানে। আমি জানুম কেমনে! দেঁতো হাসি :D

০২. হোকে। সিকার আচে কত কিছু। খাইছে

আপ্নের দেয়া গান, হুশিয়ার হয়ে সাউন্ড কমিয়ে ক্লিক করলাম! চোখ টিপি

------------

শোনা শোনা লাগতেছে গানটা।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

বটম্লাইনে অশ্লীল কথা বলার জন্য আপনার ফাঁসি দাবী করছি চোখ টিপি

রাশেদ এর ছবি

বিয়া দেয়া নাকি ফাঁসির মতই, জ্ঞানী লুকেরা বলে! ঐ ফাসির ইন্তেজাম করেন। এ লেভেলের কয়েকটা মেয়ের নাম দেক্লাল, খারাপ হবে না মুনে হয়! চোখ টিপি আর নাইলে বিজলি তো আছেই!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হুম। আসল পয়েন্টে ঠিকই হিট করছেন। আমার শত্রুর যন্ত্রণায় আর পারি না। খালি বাগড়া দেয়...

রাশেদ এর ছবি

তরবারী কই! শত্রুর বংশনাশ করে দেয়া হইবেক!

ধুসর গোধূলি এর ছবি
জ্বিনের বাদশা এর ছবি

অমিতের দাড়ি কই? চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আমি আগেই সন্দেহ করছিলাম, লোকজন এরকম ফটোশপের দোষ দিবে। বলাই'দা দিলো আগে, এবার আপ্নিও?

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আমি কই ফটোশপের দোষ দিলাম? ... আমার কমেন্টে ফটোশপের ফও তো কেউ দেখাইতে পারবোনা চোখ টিপি

আমার মইধ্যে একটু "মজিদে" ভর করছিলো, আর কিছু না
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অতিথি লেখক এর ছবি

ওফ কাশেম বিন আবুবকর নামক বকরীটার কথা অনেক দিন পরে মনে করায় দিলেন । হেসেই যাচ্ছি হো হো হো

ঢাবির ঘটনা- আমি বইমেলা থেকে একটা কবিতার বই কিনসি দেখে আমার তৎকালীন বন্ধু বর্তমানকালীন আসামী আমারে দিলো হালকার উপর ঝাপসা ঝারী। তাও সববার সামনে ইজ্জতের প্রেস্টিজ পাংচার করে দিয়ে রেগে টং । তার বক্তব্য হলো - খাতায় মুখস্ত লিখে ভালো নাম্বার পাইলেই ভালো হওয়া যায় না তার জন্য দরকার ভালো বই, প্রবন্ধ পড়া যা মনকে প্রসারিত করে ইত্যাদি ইত্যাদি । এই সব *** মার্কা প্যানপ্যানানী কবিতা পড়ে লাভ নাই। চাল্লু

আমি বল্লাম ঠিকাসে আমি কঠিন বই পড়তে পারিনা তোমারে কিনে দেই তুমি পড়ে বুঝায় দিও আমাদের। সে যুগপৎ মাস্টারী ও মাস্তানীর সুযোগ পেয়ে সাথেসাথে রাজী। আমার আপার চেম্বারে তখন ভিসুভিয়াসের অগ্নুৎপাত চলতেসে

আমি আর আমার বান্ধবী গিয়ে কোনার ছাগুদাড়ী প্রকাশনী থেকে কিনলাম ইসলামী প্রেমের বই "উশৃংখল প্রগতি" - বাই কাশেম বিন আবুবকর। গিফট পেপারে মুড়িয়ে তা পরদিন সর্বসমক্ষে তাকে দেওয়া হলো ডিপার্টমেন্টের করিডোর এ গড়াগড়ি দিয়া হাসি

পরবর্তীতে কি হইলো ? জানতে চাইলে লিখবোনে
মাউস টিপে হাত ব্যথা করতেসে

সবাই ভালো থাকেন

তানিয়া

সৌরভ এর ছবি

হেহে তানিয়া আইসা হাজির। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করার জন্যে আপনাকে সত্তরটা বেহেশত বরাদ্দ।

রিকোয়েস্ট ফরওয়ার্ডেড, আপার নামে বরাদ্দ দিয়েন@মাউলানাসাহেবফ্রমপুরাতনথাইল্যান্ডবর্তমানকানাডা

এইবার কই যাবে অমিত আহমেদ? ঘুঘু দেখেছো, জা-কা-জা ভায়রা-ভাই পরিষদ দেখো নি। আমাদের পরিষদকে দুষ্টু বাঁদর বলার সাধ মেটানো হবে।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

ধুসর গোধূলি এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

সরি ধুগোদা আসলেই নিজের গল্প এভাবে টানিয়া আনা উচিত হয়নাই ---- কি করি বলেন নামের দোষ আমার না

তানিয়া

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আপনি কি হাবলাহনু, সম্মানিত উটুরামের দেশে থাকেন নাকি? চিন্তিত

আনেন আনেন, এই জাতীয় (এবং বিজাতীয়) সবকিছুই টানিয়া আনেন। তবে টানিয়া সোলাইয়েন না। (ফিতাকৃমির বৈজ্ঞানিক নাম কি?) দেঁতো হাসি

সেন্টু খাইয়েন না, মজা না করলে বুড়া হয়ে যাবো তাড়াতাড়ি। হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

তানিয়া এর ছবি

হে হে ভাইডি মোটেও সেন্টু খাইনাই হাসি

এইটা হইলো আলাপ চালাইবার ট্রিক্স চোখ টিপি

ভালো থাইকেন

সুমন চৌধুরী এর ছবি
রণদীপম বসু এর ছবি

শিমুল, চরিত্রহনন পর্বটা ভালো হয়েছে । কিন্তু আগামী পর্বে চরিত্রটা ফিরিয়ে দেয়া হবে তো ?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হায় হায়! এসব কী বলছেন?
চরিত্র হনন কোথায় করলাম?

মানীর মান উপরওয়ালা নিশ্চয়ই রাখবেন। দেখা যাক, পরের পর্বে কী হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

তার্পর ---

যখন মোড়ক খুলে বইটা বের হইলো তখন তার ও অন্য বন্ধুদের তাব্দাখাওয়া চেহারা দেখে আমরা মেয়েরা হেসে পার পাইনা। ও ভেবেছিলো ফুকো বা সাঈদ কিংবা নিদেনপক্ষে স্টিফেন বেষ্ট এর থিওরীর বই। চেহারার ট্রান্সফর্মেশান -- প্রথমে বেকুব হাসি -- বিব্রত কাশি -- তার্পর চক্ষের আগুনে তোরে ভষ্ম করি টাইপ চাহনি শয়তানী হাসি

ততক্ষনে পোলাপাইন মজা পায়া গেছে। অপু আর রবি তৎক্ষনাৎ সিদ্ধান্ত নিলো যে তার এই বই পড়ে আমাদের বুঝাইতে হবে। হো হো হো আমাদের ডিপার্টমেন্টে সদ্য যোগদেয়া লেকচারার স্যার ততদিনে স্টাডিগ্রুপ নামক নিরাপদে নারীশিশু অবলোকনের যুগান্তকারী ফর্মুলা উদ্ভাবন করে ফেলসেন। চোখ টিপি আমরা সেই ফর্মুলায় অনুপ্রানিত হয়ে ঠিক করলাম এই বই কে স্টাডিগ্রুপের কায়দায় পড়া ও বুঝাতে হবে এবং এই প্রস্তাব ১৪-১ ভোটে পাশ হলো।

ঠিক হলো প্রথম তিন চ্যাপ্টার এর রিভিউ (চুম্বক অংশ সহ) তাকে করতে হবে । গাইগুই করে পিছলানোর অনেক চেষ্টা করলো তবে -মর্দ কা বাত হাতীকা দাত - জাতীয় কথাবলে ছেলেরা তাকে আটকালো। এরমাঝে আরেক বান্ধবী হলের এক আপার কাছ থেকে বইটা যোগাড় করে আনলো ওই বইয়ে আবার অনেক লাইন মার্কার দিয়ে হাইলাইট করা দেঁতো হাসি । আমাদের পায় কে? সাস্টেইনেবল ডেভলাপমেন্টের গুষ্টিকিলিয়ে আমরা বইনিয়ে ব্যাস্ত

যথারীতি সেই নির্ধারিত দিনে আমরা ক্লাস বাদদিয়ে টিএসসিতে হাজির কিন্তু যার জন্য অপেক্ষা তারই দেখানাই ... তখনও ঢাবিতে হাতেহাতে মোবাইল নাযিল হয় নাই । সোলেমান মামুকে বলেকয়ে টিএসসি থেকে ফোনে জানা গেলো বই পড়ে ওরনাকি ডায়রিয়া হইসে। গড়াগড়ি দিয়া হাসি

আমরাকি বসে থাকতে পারি? মহাউৎসাহে ওর বাসায় গিয়ে চুম্বক অংশ রিডিং পড়ে শোনানো হলো । পরবর্তী ৩ বছর ওকে দেখলেই বলা হতো "কিরে এতো দেরী--- তোর তো প্রগতি হইলোনা" গড়াগড়ি দিয়া হাসি

অমিত আহমেদ এর ছবি
অমিত আহমেদ এর ছবি

তানিয়া তুমি থাকো কই?
রেগে টং


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

অতিথি লেখক এর ছবি

বাংলাদেশ আর কানাডার মাঝামাঝি দেঁতো হাসি যেখান থেকে আপনি কানেকটিং ফ্লাইট নেন

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

তানিয়া, আপনি যা বললেন, তা-নিয়া আরো ডিটেইল পোস্টান।

অতিথি লেখক এর ছবি

শিমুল ভাই পোষ্টাইতে ভয় লাগে !! এতসব ভালোর মাঝে আমার ফাউল লেখা কে পড়বো ??? তার উপর গৃহশান্তি বলে একটা বিষয় আছেনা চোখ টিপি -- মামাশ্বশুরের ভাগিনা কমেন্ট এখনও দেখেনাই -- দেখলে পুরা খবর শয়তানী হাসি

শেষপর্বে আপনার টুইস্টটা খুউব ভালো হইসে। জাঝা
ভালো থাকেন

তানিয়া

অতিথি লেখক এর ছবি

বড়ই মজা পাইলাম ।
নিবিড়

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

ধারাবাহিক লেখা, ধারাবাহিক নাটক ইত্যাদি আমার ধারার সাথে খাপ খায় না। তবে এটি পড়ছি।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
Life is what happens to you
While you're busy making other plans...
- JOHN LENNON

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

পরিবর্তনশীল এর ছবি

এই পর্ব অতিরিক্ত শাটাশাটি হইছে। দেঁতো হাসি সেই চান্সে বলে রাখি অনেকদিন পর আপনাকে পুরাপুরি পাইলাম। আরো লিখেন।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।