এগুলো হলো বিজ্ঞাপন নিয়ে কিছু জনপ্রিয় কথা।
ব্যবসায় প্রশাসনের ছাত্র হিসেবে বিজ্ঞাপন বিষয়ে অল্পস্বল্প পড়ালেখা করেছি। বিভিন্ন সময়ে নজর রাখার চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনগুলোর দিকে। (এইটুকু পড়ে বিজ্ঞাপন-পেশায়-জড়িত প্রিয় পান্থ রহমান রেজা তেড়ে না আসলেই হলো!)
আল রাইজ আর জ্যাক ট্রাউট যেমন বলেন, আমরা একটা ওভার কম্যুনিকেটেড সমাজে বসবাস করছি। এখানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলা হচ্ছে। ফলে শব্দ এবং অর্থ দুটোরই অপচয় হচ্ছে। এই ব্যাপক কোলাহলে দর্শক-শ্রোতা-পাঠক মনোযোগ রাখছে না। এক গবেষণায় (তথ্যসুত্রটা খুঁজে পেলে পরে দেবো) দেখা গেছে টেলিভিশনের দর্শক গত রাতে দেখা মাত্র ৬% বিজ্ঞাপন পরদিন স্মরণ করতে পারে, বাকী ৯৪% বিজ্ঞাপন মানুষ ভুলে যায়।
আগে কোনো এক পোস্টে লিখেছিলাম, বিলবোর্ড আমাদের শহরকে নোংরা করে ফেলেছে। শক্তি কবিও সম্ভবতঃ লিখেছেন, মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে। পত্রিকার পাতা ভর্তি বিজ্ঞাপন। টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে চলছে সংবাদ-বিনোদন।
যাক, কথা না বাড়িয়ে শিরোনামে আসি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপন কেমন হওয়া উচিত। ঔচিত্যের প্রসঙ্গে যদি আপত্তি থাকে তবে প্রস্তাবনা রাখি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপনে কী থাকলে ভালো হয়।
এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন আসে, বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞাপন দেয় কেন?
আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো - কখনো বিজ্ঞাপন দিয়ে বলে না, "এসো এসো আমার ক্লাসে এসো।"
বিজ্ঞাপন দেয় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
বিক্রেতার সংখ্যা বেড়ে গেলে, ক্রেতার নজর আকর্ষণে সজোরে চিৎকার করতে হয়। জানাতে হয় পণ্যের কথা, পণ্যের গুণের কথা। প্রতিদ্বন্ধী বিক্রেতার পণ্যের তুলনায় আমার পণ্য কেন ভালো - সেটাও বলতে হয়। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা/জ্ঞান কতোটুকু সৃষ্টি করছে, আর কতোটুকু বিপনন করছে - সে তর্ক এখন থাক।
প্রায় পাঁচ ডজন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, অসংখ্য ভর্তিচ্ছু ছাত্র; সব মিলিয়ে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা মন্দ নয়। বাজার প্রতিযোগিতামূলক হচ্ছে, তাই বিজ্ঞাপনও দিতে হচ্ছে হরহামেশা। বছর তিনেক আগেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিজ্ঞাপন দিতো - ভর্তি চলছে। সেখানে বিভিন্ন বিভাগ ও বিষয়ের সাথে নামকরা প্রফেসরদের, যারা ওখানে পড়ান তাদের, নামের তালিকা ছাপানো হতো। থাকতো ক্রেডিট ট্রান্সফার, বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তি; এসব প্রসঙ্গ। এগুলো থাকতো মূলত ছাপা সংবাদপত্রে।
যতোটুকু মনে পড়ে, ২০০২-০৩ এর দিকে টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিয়ে নজর কাড়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। এমনও হয়েছে, দেখেছি - এক চ্যানেলে এক ঘন্টায় ৭/৮বার স্ট্যামফোর্ডের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়েছে। অনুষ্ঠান স্পনসরও করেছে তারা।
এরপর হুট করে ছাপা বিজ্ঞাপনে আসে, মেধাবীদের জন্য স্কলারশীপ, ওয়েভার; এসব। কিন্তু, কিছুদিন পরে এ শব্দগুলো হয়ে যায় - ডিসকাউন্ট!
এ যেন পণ্য বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন, ডিসকাউন্ট ফর সিবলিংস, ডিসকাউন্ট ফর ফিমেইল স্টুডেন্টস!! হায়!!!
আরো পরে যোগ হয় - ফ্রি ল্যাপটপ।
এভাবেই চলছিল।
বছর খানেক বা তারও একটু আগে গ্রীণ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এক টিভি বিজ্ঞাপনে আবার চমক দেখায়। ভবিষ্যৎ পেশার লোভনীয় অফার। আপত্তি ছিল, বিজ্ঞাপনের মডেল নির্বাচনে। হয়তো, তারা সঠিক টার্গেট মার্কেটকেই নির্বাচন করেছে। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বললে আমাদের মনোজগতে যে চেহারা ভাসে, বিজ্ঞাপনের ছাত্রটি মোটেও সেরকম নয়। বরং উঠতি ডিজুস জেনারেশনের আদর্শ প্রতিচ্ছবি। আর ছাত্রীটি? ক্লাস সেভেন নাকি এইট? বড়বড় বিলবোর্ডে তাদের ছবি দেখা যায়। তিন পর্বের ধারাবাহিক টিভি বিজ্ঞাপনগুলো দেখুন এখানে-
এ প্রসঙ্গে, আরেকটু যোগ করি। অল্প কিছুদিন বিদেশে থাকার সুবাদে সেখানকার কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপনও দেখেছি। তবে বিজ্ঞাপনগুলো ছিলো - চাকরির বাজার সংক্রান্ত তথ্য সমৃদ্ধ। যেমন একটা কলেজের বিজ্ঞাপনে দেখেছিলাম, ওরা বলেছে - " পাশ করার পরে আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা গড়ে ছয় মাসের মধ্যেই চাকরী পায়।" আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চয়তা দিচ্ছিলো, এমবিএ করার পরে ১ বছরের মধ্যে বর্তমানের চেয়ে ২৫% বেশি বেতনের চাকরি পাওয়া যাবে, নইলে সব টিউশন ফি ফেরত দেয়া হবে।
আজ ভাবনা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠলো বনানীস্থ ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার দুটো বিজ্ঞাপন দেখে। একটা ছাপা হয়েছে প্রথম আলোয়। ঐ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করার পরে একজন গাড়ি কিনেছেন। বিজ্ঞাপনে গাড়ির সাথে সুন্দরী নারীও আছে।
অন্যটি ছাপা হয়েছে ডেইলি স্টারে। বলা হচ্ছে, সৌলফ্রেন্ড পাওয়া যাবে ওখানে -
দেখে ভাবছি, শিক্ষা-গবেষণা কিংবা ক্যারিয়ার নয়, এবার ফ্রয়েড রাজত্ব শুরু করলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপনে।
মন্তব্য
ডিটেইলসে গেলাম না !
এগুলো এখন বিষাক্ত নিকোটিনের মত। 'ধূমপান মৃত্যুর কারণ' কিংবা 'ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর' ক্ষুদে কথাবার্তার প্যাকেটজাত সুদৃশ্য মোড়কাবৃত এক একটি স্টিক। একবার জ্বালিয়েই দেখুন না !
সুখপাঠ্য এবং মজাদার পোষ্ট। দারুণ হয়েছে। সিরিজটা এক্সটেন্ড করা যায় না ?
ধন্যবাদ।
আগামীতে লক্ষ্য করার মত কিছু আসলে অবশ্যই সিরিজ হতে পারে
সৌলমেইট না আত্মারবন্ধু/বান্ধবী পাওয়া যাবে বলছে, বড়ই স্পিরিচুয়াল লেভেলের কথাবার্তা !!!
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ও! ঠিক করে দিচ্ছি!!! ধন্যবাদ।
মারে মারে !! কি পইরা এরা পড়তে আসছে !! পোশাকের বাহার কি ! কিন্তু "ভার্সিটির" বিল্ডিং এর এমন বেহাল অবস্থা কেন ! নাকি প্রকৃতির সান্নিধ্যের জন্য বাইরেই পড়ান হইবেক ! সউলফ্রেন্ড বলতে মনে হয় বুজাইছে যে - এখানে "পড়তে" আসলে মরবা, তার পরে ভূত হইয়া অন্য আত্মাদের মিট কইরা অগো মেট হইবা ! সুগভীর ইল্মের কথা !
ফেসবুকে প্রথমে দেখে মনে করেছিলাম কেউ মজা করে বিজ্ঞাপনটা বানিয়েছে।
লেখাপড়া শেষ করে কোথায় কী হওয়া যাবে না যাবে সেই বিষয়ে কিন্তু কোন কথা নাই। আমাদের সব থেকে বড় ক্যাম্পাস! এসি রুম! এগুলো থাকে বিজ্ঞাপনে। কিন্তু আড়াই মাসের অতি ক্ষুদ্র সেমিস্টার থেকে তারা কী জানতে পেরেছে আর কী শিখতে পারবে সেটা কিন্তু কোথায় দেয় না।
আমার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে! তাই ঢাক-ঢোল যাই পেটানো হোক তাও আমার কাছে পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয় সবার উপরেই থাকবে।
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
শেষ দুটো ছবি একটু "ফ্রয়েডীয়" লেভেলে চলে গেলেও, দুটোরই মূল বক্তব্য, আমাদের দেশের ভার্সিটি ভর্তিচ্ছুদের কিছু অন্যতম চাহিদাকেই হাইলাইট করছে।
প্রাইভেট ভার্সিটির এমবিএ(বিশেষত এক্সিকিউটিভ এমবিএ)কে অধিকাংশই দেখেন চাকুরিজীবনে উপরে ওঠার ধাপ হিসাবে, আর গাড়ি এখনো বাংলাদেশে "ওপরে ওঠারই" চিন্হ।
আর যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা মূল লক্ষ্য হচ্ছে তার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং গড়ে তোলা---সমমনা ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে, শিক্ষক-ছাত্রের মধ্যে, বিভিন্ন চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠান-ছাত্রছাত্রীর মধ্যে। প্রত্যন্ত মফস্বল বা গ্রামের কোনো ছাত্রছাত্রীর জন্য ব্যাপারটা আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ, ঢাকার কোনো একটা নামী দামী সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে (বা বেসরকারী) পড়াটা যে আসলে একপ্রকার শ্রেণী-উন্নয়ন, সেটা তার বাবা-মাও বোঝেন। ২য় বিজ্ঞাপনটা সেটারই একটা ডিজুসকৃত ভার্সন মনে হচ্ছে।
আর বিজ্ঞাপনে নারীর উপস্থিতি নিয়ে বলার কিছু নেই, দর্শকের চোখ টানতে করা হয়েছে এই আর কি। এটা না থাকলে হয়তো আপনিও এটা নিয়ে লিখতেননা, আমিও গ্রীন ইউনিভার্সিটি বা ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ-এশিয়ার নামও নামও জীবনে শুনতাম না দেয়ার ইস নাথিং কল্ড ব্যাড পাবলিসিটি।
ভ্রাতা, সানি লিওনের মতো মানুষদেরকে মডেল ব্যবহার করলেই তো পারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। আপনার আমার সবার চোখ আটকে যেত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপনে। কতবার লিখতাম শুনতাম সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কথকতা! আফটার অল দেয়ার ইস নাথিং কল্ড ব্যাড পাবলিসিটি!
আর আপনার এমন যুক্তিগুলির সাথে যায় এমন আরো কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপন দেখতে ইচ্ছে করছে। আশা করি সঙ্গে নিজের নাম উল্লেখ না করে প্রসার লাভের সুযোগ হারাবেন না।
সৌরভ কবীর
সচলে দিফিও নামে লিখি, ক্যাপচার ঝামেলা এড়ানোর জন্য অতিথি একাউন্টে মন্তব্য করেছিলাম, ভুলে শেষে নাম দেয়া হয়নি।
সানি লিওনের কথা বললেন, তা আপনিই কি আজ থেকে ২০ বছর আগে ভেবেছিলেন, যে ভার্সিটির এরকম ডিজুস বিজ্ঞাপন দেখবেন, অথবা, বলিউডে সানি লিওনের মত ব্যাকগ্রাউন্ডের মত একজন নায়িকা পাবেন? তাই ভবিষ্যতে আপনার ইচ্ছেমত বিজ্ঞাপন আসবে কি আসবে না, সেটা ভবিষ্যতের হাতেই তোলা থাক।
আমার মন্তব্যে আমি এই ধরনের বিজ্ঞাপন গুলোকে কিন্তু সমর্থন করিনি, কিছু বাস্তবতা তুলে ধরেছি মাত্র। আর বিজ্ঞাপন কিন্তু নির্মাতা সম্পর্কে যতটুকু বলে, এর ভোক্তা দর্শক সম্পর্কেও ততটুকু না হলেও অনেক কিছুই বলে। চাহিদা শুন্য হলে এই ধরনের বিজ্ঞাপনের সংখ্যাও প্রায় শুন্য হত।
আপনি একটা এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে পারেন---আপনি দুটা ভার্সিটি খুলুন, প্রথমটায় পাশ করার পর সকল ছাত্র-ছাত্রীর একটা গ্যারান্টিড চকচকে, হাই ফাই, উচ্চ বেতনের চাকরী থাকবে, কিন্তু পড়াশোনার অবস্থা ভালো হবে না, আর ২য়টায় পড়াশোনার ব্যাবস্থা ভালো কিন্তু পাশ করার পর চাকরী পেতে কষ্ট হবে। আপনার কী ধারণা, ছাত্র-ছাত্রী আর তাদের বাবা-মা রা কোনটায় হুমড়ি খেয়ে পড়বেন?
এমবিএ টাইপের প্রফেশনাল ডিগ্রীর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরো বেশী সত্য।
বলিউডে কে নায়িকা হবেন সেটা নিয়ে আমার মাথায় কোন টনক নেই। ভারতীয় চলচ্চিত্রে আজ থেকে ২০ বছর আগে সিল্ক স্মিথার মতো অভিনেত্রী পনেরো বছর অভিনয় করে ফেলেছেন। বিশ বছর আগে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপন কেমন ছিলো আর আজকের বিজ্ঞাপন কেমন এটি নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা বরং প্রাসঙ্গিক হবে।
আমি বাংলাদেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের উপর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম ভর্তি হবার আগে। চার-পাঁচ বছর পরেও আমি সেটার এখনো অনেক কিছু মনে করতে পারি। মনের অজান্তেই প্রেরণা দেয় এসব। না চাইলেও মনে থাকে। শিক্ষার্থীর জীবনে তার বিশ্ববিদ্যালয় অনেক কিছু। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিজ্ঞাপনগুলি শিক্ষার্থীদের জীবনে সন্দেহাতীতভাবে গভীর ভোগবাদী প্রভাব ফেলবে। অধঃপাতের এই আশঙ্কা থেকেই এই ব্লগ লেখা বলে মনে হয় আমার, মুখরোচক আলোচনার উদ্দ্যেশ্যে নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমরা এমন এক জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছি যেখানে যার তার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় খুলবার প্রস্তাব দিয়ে বসতে পারি। আসুন আমরা নিজেরা যে অধঃপাতে আছি এটি মেনে নিয়ে সম্ভব হলে সচেতন হই।
সৌরভ কবীর
ভাবছি আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবো
বিজ্ঞাপনটা দেখে আমিও তাই ভাবছি !!
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আমি কোনদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো না...
facebook
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপনেও নারী’কে পণ্য হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে; এইসব দেখার কেউ নাই? একি অবস্থা!
বিব্রতকর হলেও কাউকে না কাউকে এই সব বিষয় নিয়ে লিখতে হবে, এড়িয়ে যাবার উপায় নাই। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া বিষয়টি সামনে আনার জন্য।
সাউথ এশিয়া ইউনির এ্যাড দেখে মাথা ঘুরায় পড়ে গেলাম, এও সম্ভব!!!
আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যবসা করবে ঠিকাছে কিন্তু পাশাপাশি জাতি গঠনে, মানবসম্পদ গঠনে, শিক্ষাপ্রসারণে কেন বিশেষ বা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে না সেটা ভেবে পাই না। যেখানে তারা ৫-৮ লাখ টাকা নিয়ে থাকে ৪ বছরে। নকল করার মহোচ্ছব ছাড়া আর কিছু শুনি না, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের কাছ থেকে। এভাবে কতদূর!!
_____________________
Give Her Freedom!
গত কালকে অলিম্পিকের ফাকে দেখানো বিজ্ঞাপনের যেইটুকু মনে আছে, তা হইল এরিজোনার সিনেটর নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দী একজন আরেকজনকে গাল মন্দ করছেন। গত কয়েক মাস ধরে চলা এইসব বিজ্ঞাপন দেইখা ধন্দে পড়তে হয়, কার বিজ্ঞাপন, কারন প্রার্থী 'ক' পয়সা দিয়ে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন প্রার্থী 'খ' জীবনে কি কি আকাম করছেন, ভাইস ভার্সা। ভাবছিলাম এইগুলা খালি স্থানীয় রিপাব্লিকান পার্টির অভ্যন্তরীন কাদা ছুঁড়াছুড়ির চল। কিন্তু কালকে দেখি প্রেসিডেন ওবামা সাহেবও এইরকম গাল মন্দ করা বিজ্ঞাপন দিতেছে। কি দুনিয়া!
একদিক ভোটারের জন্য ভালো, সব প্রার্থীরই পশ্চাৎদ্দেশ উন্মুক্ত।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
প্রাসঙ্গিক আরেকটা পোস্টের লিঙ্ক। ঐ ছবিটাও দুইদিন পর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপনে কাজে লাগতে পারে।
একটু ভিন্ন একটা প্রসঙ্গ নিয়ে বলি।
অধিকাংশ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় গুলির নাম গুলি এই পদের কেন? উত্তর-দক্ষিন-পূর্ব-পশ্চিম, আম্রিকা-এশিয়া এই চারদিক আর দুই মহাদেশের যত প্রকার পারমুটেশন কম্বিনেশন হওয়া সম্ভব, কোনটাই বাদ যায় নাই। আন্তর্জাতিক বাজারে সহজে নাম উঠাবার চিন্তা থেকেই কি এই রকম নামকরন?
উইকিতে পাশের দেশ ভারতের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলির নাম দেখছিলাম। আমাদের দেশের মতো এতো লাগামছাড়া নাম তেমন চোখে পড়লো না। নিজের দেশ বা অঞ্চলের নামে নামকরন করতে এতো লজ্জার মূল কারন বোধহয় সেগুলি 'টার্গেট ভোক্তা' কাছে খুব একটা 'পশ' মনে হয় না।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মলগ্নের শুরু থেকে মূল ভোক্তা উচ্চবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত শহুরে। তাদের কাছে আব্দুল্লাহ আল মুতি শরফুদ্দিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে ইংরেজি হাল-ফ্যাশনের নাম (সাথে যদি কোন বিশেষ স্বপ্নের দেশের নাম জুড়ে দেওয়া থাকে তাহলে কথাই নেই) বেশি গ্রহনযোগ্য। তাই এই নামকরণটাও এক প্রকার বিজ্ঞাপন বটে।
নিজের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে খেয়াল করে দেখেছি, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সময় তথাকথিত ভালোমানের ৭-৮ টা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাছতে তারা কয়েকটা জিনিষ হিসেব করেন - সব মিলিয়ে কত টাকা লাগবে, কেমন ওয়েভার পাওয়া যাবে, ক্যাম্পাস বাসার থেকে কত দূরে ইত্যাদি। এইখানে শিক্ষার মান নিয়ে কাউকে কোন প্রকার দোলাচলে পড়তে দেখিনি (এর মূল কারন অবশ্য সেটা যাচাই করবার কোন শক্ত মানদণ্ড নেই)। তাই শেষ-মেশ বিজ্ঞাপনই যে মূল নিয়ামক হবে সে আর আলাদা কি?
নর্থ-সাউথ এর ব্যবসায়িক সাফল্য মনে হয় এর মূল কারণ। নর্থ-সাউথ, ইস্ট-ওয়েস্ট শেষ হয়ে নর্দান, সাউদার্ন - এরপর সাউদার্ন পয়েন্ট - চলতেই আছে
আরেকটা কথা।
আগে দেখতাম মানুষের সঙ্কল্প হয় - গবেষক হব, বিজ্ঞানী হব - আবিষ্কার করবো, ডাক্তার হবো - সেবা করবো, চাকরী করবো না, উদ্যোক্তা হবো - মানুষ কে চাকরী দিবো, নিদেন পক্ষে ব্যবসা করবো - বড়লোক হবো।
গাড়ি কেনা যে কারো জীবনের সঙ্কল্প হতে পারে, সেটা এই বিজ্ঞাপন না দেখলে মাথায় আসতো না। হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকলে এ ঘটনা নিয়ে একটা গল্প লিখে ফেলতেন।
গাড়ির সঙ্গে নারী ফৃ (কিংবা রিজনেবলি প্রাইসড)
নিজেও প্রাইভেট ইউনির ছাত্র। আমি বুঝিনা সরকার ও ইউজিসি কেন কোন পদক্ষেপ নেয় না?? এভাবে সার্টিফিকেট বিক্রির মচ্ছব রোখা দরকার।
গ্রাব-এর বিজ্ঞাপন মনে থাকে-- কারণ গুলো হচ্ছে
- বিজ্ঞাপন চিত্রের এক পর্যায়ে দেখা যায় কম্পিউটারে প্রিন্ট করা একটা পদের নাম যেটি চেয়ারে সাথে স্কচটেপ দিয়ে সাঁটানো থাকে। ওটা দেখে আমি বিজ্ঞাপন নির্মাতার আর্থিক দৈন্যের দিকটি দেখতে পাই।
- শুরুর কথাগুলো ফানি মনে হয়: ওরা পথ হারিয়েছে, ওদের পথ দেখাও (ওদেরকে ডিজুস খেতে দাও) বা এধরনের কিছু হবে বোধ হয়।
- তৃতীয়ত: একজন খ্যতনামা কম্পিউটার প্রকৌশলীর ওখানে পড়িয়েছিলেন; ওরা টাকা দেয়নি বা পুরোটা দেয়নি বলে শুনেছি।
ভূমিকা ভালো হলো। এবার পরের পর্বে এরকম বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণ আসুক।
হুমম আমাদের সময় উত্তর-দক্ষিণ বিশ্ববিদ্যালয় তখন মাত্র খুলছে। ক্যামনে ক্যামনে জানি বাসার ঠিকানায় চিঠি পাঠাইছে বলছে চা-চুর ব্যবস্থা আছে। গেলাম চা-চু খাইলাম, জানলাম মাসে ১০,০০০ ট্যাকা দিলেই হবে ৪ বছরে বিবিএ পাশ করাইয়া দিবে কুন সেশন জ্যাম নাই। আর পাশ করার পরেই হয় লাখ টাকার চাকরি নাইলে আম্রিকা, বেছে নাও!!
আমি ওয়ালাইকুম বইল্যা চইল্যা আসলাম। কিন্তু বন্ধু ভর্তি হইল। ৪ বছর পরে একদিন দেখি বন্ধু কার্জন হলে পোলাপান নিয়া গিটার বাজায়। জিগাই কিরে খবর কি। কয় লন্ডন যাইতাছে আগামী মাসে এমবিএ করতে। তখনও আমরা ৩ বছরের ব্যাচেলার শেষ করতে পারি নাই কপালরে গালি দিয়া শহীদের দোকানে গিয়া বাংলা ফাইভ সহযোগে চা খাইয়া আবার পরীক্ষা পিছানোর মিছিলে যাই।
শানে নজুল হইল গিয়া যদি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সেশন জ্যাম না থাকতো তাইলে হয়ত পেরাইভেটের এত ডিমান্ড থাকত না। তবে যেইটা হইব আলটিমেটলি, এখন যেমন পাবলিকের ছ্যাড়েরা ক্ষ্যাপ মারতে পারে কয়দিন পরে আর এগোর ভাত থাকব না, কারণ এখন ফরেন ডিগ্রিওয়ালারাই সেই জায়গা দখল কইরা নিতাছে ধীড়ে ধীড়ে। তখন পাবলিকের ছ্যাড়েরা কি করব??
খুব সম্ভবত ডক্টর জাফর ইকবাল বলেছিলেন এরকম একটা কথা যে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল সেই স্থান যেখানে বিশ্ববিদ্যা লয় প্রাপ্ত হয়। দেশের সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কয়টাতেই এখন গবেষণা হয় সেটা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ঠ অবকাশ আছে। বেসরকারীগুলোর কথা নাইবা বললাম। বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে বিশ্ববিদ্যার চর্চা হবে, নবতর জ্ঞানের উন্মেষ ঘটবে সেখানে আমাদের দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলে মৌলবাদের চর্চা, ছাত্রদের জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ জাগানোর পরিবর্তে তাদের কীকরে সফল বণিক হওয়া যাবে তার কলাকৌশল শেখানো হয় যেন। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিঃসন্দেহে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে শ্রেয়তর। কিন্তু ওখানেই চলে আরও চরম দূর্নীতি। এগুলো নিয়ে কিছু বলতে বা লিখতে গেলেই এখন বিরক্তি চরমে উঠে।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
ভারী সুন্দর বলেছেন তো ভায়া!!
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে বানিজ্য আর সরকারিটাতে কলুষিত ছাত্র রাজনীতি । তাইলে দেশ গঠনের ক্যামতে কি?
ইউনিভারসিটি অব সাউথ এশিয়ার বিজ্ঞাপন দেখে শুটিং স্পট না ভেবে কোন উপায় আছে কি?
এগিয়ে চলছে দেশ - ভালোই - এভাবেই
আরেকটু চলুক ... ... বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপন সম্পর্কে আরেকটু জানতে চাই। বিভিন্ন টার্গেট গ্রুপের জন্য কোন বিষয়গুলোকে হাইলাইট করে আর নিজেদের বৈশিষ্ট্যের জন্য কোন বিষয় হাইলাইট করে --- আর দেশীয় বিজ্ঞাপনে কীভাবে করেছে সেটা একত্রে দেখলে পাঠকের ধারণাগুলো আরেকটু পরিষ্কার হত।
আমার মনে হয়, সুযোগ সুবিধা (অ্যাকাডেমিক, আর্থিক), শিক্ষক ও গবেষণাগুলোর মান এবং অ্যালামনাইদের হাইলাইট করাটা যুক্তিসংগত। কিন্তু আমার যুক্তি দিয়ে তো আর টার্গেট গ্রুপ মজবে না ... ... তাই লজিক আর টার্গেটের মধ্যে ব্যালান্সটা কোথায় থাকা উচিত? মার্কেটিং-এর বিদ্যা কী বলে?
জাপানে যেখানে পড়েছিলাম সেখানে দেখেছিলাম, বছরের বিশেষ কোন দিনে (ছুটির দিন) বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্কিং লট বাস দিয়ে ভরে যায়। বিভিন্ন কলেজ থেকে ছাত্রদের নিয়ে এসে বিভিন্ন ল্যাব ও সুযোগ সুবিধা ঘুরিয়ে দেখায় সেখানকার প্রফেসরগণ।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
কি দারুন আইডিয়া এবং উদ্দ্যোগ !
খুব ভালো প্রশ্ন।
আমার নিজস্ব মন্তব্য হলো - ওপরের যে বিজ্ঞাপনগুলো নিয়ে আলাপ হচ্ছে, এখানে ভুল টুলস এবং টেকনিক ব্যবহার করা হচ্ছে।
তাত্ত্বিকভাবে, বিজ্ঞাপন হলো ব্যবসায়িক যোগাযোগের একটি পদ্ধতিমাত্র। এক্ষেত্রে সবার আগে ঠিক করতে হয় - কম্যুনিকেশন অবজেকটিভ, অর্থ্যাৎ এ যোগাযোগের ফলে আমি কী পেতে চাই, আমার লক্ষ্য কী?
লক্ষ্যের পরে থাকে টার্গেট অডিয়েন্স, কাকে বলবো। এরপর কী বলবো এবং কীভাবে বলবো।
আমরা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপন বা যোগাযোগের কথা ভাবি, তাহলে এখানে কারিক্যুলাম, গবেষণার ক্ষেত্র সুযোগ, বিগত সাফল্য, চাকুরির সুযোগ, অ্যালামনাইরা কোথায় আছে - এগুলো প্রাধান্য পাওয়া উচিত।
আমি বিদেশের ২টা উদাহরণ দিয়েছি, আপনি জাপানের কথা বলেছেন, প্রবাসী সচলরা হয়তো আরো বলতে পারবেন। আমি এটুকু যোগ করি, আপনি নিজেও যদি লক্ষ্য করেন, দেখবেন - আমাদের দেশের যে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো একটা পজিটিভ ইমেজ দাড় করাতে পেরেছে, মানে- শিক্ষার মানের ব্যাপারে মোটামুটি একটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে গেছে, তারা কিন্তু অ্যাডমিশন গোয়িং অন এর বাইরে তেমন বিজ্ঞাপন করে না।
ইনট্রোডাকটরি স্টেজে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো (ধরে নিচ্ছি যাদের বয়স ১০ বছরের কম) তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করে।
ভালো শিক্ষক সংকট, ভালো ছাত্র সংকট, ক্যাম্পাস সংকট, রিসোর্স সংকট, এরপর যোগ হয় ইমেজ সংকট। এত এত চাপের মাঝে শিক্ষার উচ্চ মান বজায় রাখবো, এটা দাবী করাটাই তাদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
শুরুতে যেটা বলছিলাম, তাত্ত্বিকভাবে, লক্ষ্য উদ্দেশ্য ঠিক করে বিজ্ঞাপনের বক্তব্য ঠিক করতে হয়। সংকটে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এজন্য ' কূটচালী চমকের' উপর নির্ভর করে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে কৌশলী প্রচার-প্রসার-আর বিপননের আশ্রয় নিতে হয়।এ কৌশলে সিনেমার পড়তি নায়িকার মতো শুধু স্বল্পবসনাই হতে হয়; ওপরের বিজ্ঞাপন দুটো এরই প্রতিচ্ছবি বলে আমার ধারণা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে জ্ঞান অর্জন, নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করা, নাকি চাকরির বাজারের জন্য গড়া, এসব সংকট ও প্রশ্নের সুযোগে অলিতে গলিতে 'ক্যারিয়ার ইউনিভার্সিটি' ট্যাগের দেখা আমরা পাই।
অপ্রিয় হলেও সত্যি ,বিশাল এক গ্রুপের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া মানে কোনোভাবে সার্টিফিকেট বাগানো, প্রেম, ডেটিং, ব্রেক আপ, কুল বয়ফ্রেন্ড আর হট গার্লফ্রেন্ডের হান্টিং মিশন। ইউ/সা/এ - সম্ভবতঃ এ সুযোগটিই নিতে চাচ্ছে। তারা হয়তো চাচ্ছে, জ্ঞান নয় - লাইফস্টাইলই হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলমন্ত্র। ভোক্তার মনে পণ্যের একটি স্বতন্ত্র ইমেজ তৈরি, যাকে মার্কেটিং বিদ্যায় 'পজিশনিং' বলে, সেটাই করতে চাচ্ছে। কিন্তু ভুলে যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ধারণা। এরকম বিজ্ঞাপন তো মাত্র শুরু হলো, আগামীতে কী আসে সেটা কল্পনাতীত মনে হচ্ছে। এটাই বড় রকম হতাশার একটি ব্যাপার।
সঙ্গে সামান্য এট্টু যোগ করি, থ্যাচারের শিক্ষা বানিজ্যকরণের ফলাফল শেষ পর্যন্ত খারাপই হয়েছে। ত্রিশ বছর পরে হলেও।
অজ্ঞাতবাস
পাঁচতারা শিমুল ভাই! খুব দরকার এমন পোস্ট।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
বিজ্ঞাপন তো দেয় টার্গেট গ্রুপ কে আকর্ষণ করার জন্যই তার মানে নিশ্চয়ই এমন একটা টার্গেট গ্রুপ আছে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে চায় গাড়ি, নারী অথবা আত্মা বন্ধু খুঁজে পাওয়ার জন্য!!!
পাবলিক বা প্রাইভেট বলে কথা না, আমাদের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাই তো একটা লাভজনক বাণিজ্য হয়ে গেছে,একেবারে স্কুল পর্যায় থেকে, ভুল বললাম আসলে তার আগে থেকে, কারন এখন স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে কোচিং করতে হয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য একটা ৪ বছরের বাচ্চারও । তারপর স্কুল কলেজ পার হয় কোচিং করে করে, তারপর ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং, এখন তো প্রশ্নও কিনতে পাওয়া যায় আবার , ভর্তি হয়েও কোচিং আর নকল, পাস করার পর মামা চাচা পলিটিক্স তৈলবাজি ইত্যাদি ইত্যাদি। এই শিক্ষা ব্যবস্থায় তো আমাদের সবার পচে যাওয়ার কথা , এখনও যে সেটা হয়নি তাই তো অনেক। তাই যে যেভাবে পারছে ফায়দা লুটছে। এই শিক্ষা ব্যবস্থার ভিতর দিয়ে যারা বড় হবে তাদের ভিতর একটা বড় অংশ এভাবেই চিন্তা করতে শিখবে এটাই হয়ত স্বাভাবিক, আমাদের কাছে সেটা যতই অস্বাভাবিক লাগুক।
বিদেশে কি ধরনের বিজ্ঞাপন দেয়া হয় ওটা দেখে সব সময় আমাদের মানদণ্ড ঠিক করা বুদ্ধিমানের কাজ হবেনা। কারণ ওদের সাথে আমাদের অনেক দিক থেকেই ভিন্নতা আছে। এটাকে বৈচিত্র্যও বলা যায়। যেমন আমেরিকাতে প্রতি মিনিটে বাবা - মাকে "আই লাভ ইউ" বলা হয়। আবার নিঃসঙ্গ এই বৃদ্ধ - বৃদ্ধা মারা যাবার পরে দেখা যায় সহায়-সম্পত্তি বাড়ীর কুকুর- বিড়ালের নামে লিখে দিয়ে গিয়েছে ! এই ধরনের বিজ্ঞাপন যদি বাইরে বহুল প্রচলিতও হয় তবুও আমাদের জন্য এটা স্বাস্থ্যকর না।
আরেকটা ব্যাপার, আমাদের হাম্বাদিকদের কাজ হল তিলকে তাল করা। আমি নিজে একটা পাবলিক ভার্সিটির ছাত্র। কিন্তু হাম্বাদিকরা যেভাবে পাবলিক ভার্সিটিগুলারে তুলে ধরে ( প্রতিদিন মারামারি - সেশন জট- আরও অনেক কিছু), অত ভয়ঙ্কর কিন্তু না। এই নিউজ পেপারগুলার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকদের অনেককেই চিনি। এদের "মান" দেখলে অবশ্য অবাক হবার কিছু নেই। "নো নিউজ ইজ গুড নিউজ !!"- কাজেই পাবলিক ভার্সিটি মানেই মারামারি-খুনাখুনি !
শেষে নিজের একটা অভিজ্ঞতার কথা লিখি - ধানমনডি ছেয়ে ফেলা "ডা" বিশিষ্ট এক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অথবা উপদেষ্টা ছিলেন প্রফেসর এমাজউদ্দিন। তিনি প্রতি সপ্তাহে ১ দিন আসতেন। ৩০ মিনিটের মত থেকে চলে যেতেন। এই মহাক্ষমতাশালী "বিদ্বান"কে রাখা হয়েছিল দেহরক্ষী হিসাবে। মাঝে মাঝেই ইউজিসি অথবা কিছু ত্যাঁদড় সাংবাদিক শিক্ষার মানে নিয়ে যে ঝামেলা করে তা সামলানো ছিল প্রফেসর সাহেবের কাজ। এই বিশাল কাজ করার জন্য ৬ অঙ্কের একটা "মাসোহারা" পেতেন তিনি।
আচ্ছা, আমি ম্যালা দিন ধইরা ওয়েট করতেছি, এই প্রাইভেট ভার্সিটি গুলা মার্কেটে শেয়ার ছাড়েনা ক্যান? আমার মতে বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে নিরাপদ আর লাভজনক ব্যবসা হইল ভার্সিটি ব্যবসা -- হেরা শেয়ার ছাড়লে কিন্তু জমজমাট ব্যবসা হইব, আমি শিউর।
আমার মাথায় আরো জম্পেশ একটা আইডিয়া আইছে (যদি ভার্সিটিগুলা শেয়ার ছাড়তে পারে) তাইলে এমন অফার দেওয়া যাইতে পারে যে, যে ছাত্র গুলা পুরা ৪ বৎসরের বেতন ভর্তির সময় একদমে দিতে পারবে তাদের লাইগ্যা ফ্রি আই.পি.ও. -- কিংবা সেকেন্ডারী মার্কেট থেইক্যা ডিস্কাউন্ট শেয়ার।
But where's the truth here?
গত দুদিন ধরে নিউজপেপারে এই ইউনির বিজ্ঞাপন খেয়াল রাখছি।
বিয়াপক বিনোদন।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
মেধাবি কেউ কি এইসব বিজ্ঞাপনে মজবে?
যার টাকা নেই, সে কি এইসব বিশ্ববিদ্য়ালয়ে পড়তে পারবে?
এদের নতুন বিজ্ঞাপন-
"জহির আংকেলের ছেলে আসিফের সাথে আমার যখন বিয়ে ঠিক হল আমি তখন খুব একটা এক্সাইটেড হতে পারিনি। ওকে আমি চিনি সেই স্কুল লাইফ থেকে। আমি যখন ফোরে পড়ি ও তখন নাইনে। তখন ও খুব লাজুক টাইপের ছিল। সিরিয়াস লুকিং, বিগ ব্যাং থিওরীর শেলডন মার্কা চেহারা। ও যখন ইন্টারমিডিয়েট পড়ে, বাবা রাজশাহী বদলী হয়ে গেলেন। এরপর অনেক বছর আসিফ কে দেখিনি। ও ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ এশিয়ায় ইংলিশে ভর্তি হয়েছে শুনেছিলাম। পাশ করে দেশ
ের এক নামকরা এড ফার্মে জয়েন করেছিল ৪ বছর আগে। গ্রাডুয়েশন শেষ করার আগেই আমার বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর আমি আসিফকে দেখে তো অবাক! কোথায় গেলো সেই লাজুক নার্ড ছেলেটি? ওর মত কনফিডেন্ট, ম্যানলি, রোমান্টিক হাজব্যান্ড পাওয়া যে কোন মেয়ের সাত জনমের ভাগ্য। এইতো গত শুক্রবার সামডাডো থেকে ডিনার করে ফেরার পর...
সারপ্রাইজ...সারপ্রাইজ...সারপ্রাইজ...এক জোড়া অসম্ভব সুন্দর ডায়মন্ড ইয়ার রিং বের করে চমকে দিল আমাকে। ভীষন মমতায়, দু'চোখ ভরা মুগদ্ধতা নিয়ে পরিয়ে দিল ইয়ার রিং গুলো। আনন্দে তখন আমার দু'চোখ উপচে জল। ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ এশিয়ার এডুকেশন আসিফকে করেছে এক পূর্নাঙ্গ মানুষ, আর পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ওয়াইফ হিসেবে, ফ্রম দ্যা বটম অফ মাই হার্ট, আই জাস্ট ওয়ানা সে Thanks You South Asia"
ধনেশ পাখির তেলের বিজ্ঞাপন।
ভাইরে ভাই, এইডা আপনি কোত্থিকে পাইলেন ভাই? এ কি অবস্থা? সত্য করে বলেন ভাই, এই স্ক্রিপ্ট কি আপনি নিজে বানাইছেন, নাকি এইডা সত্য সত্য স্ক্রিপ্ট?
যদি সত্য হয়, তাহলে খুবই ভয়ঙ্কর ব্যপার -- আমি যা ভাবছিলাম, তার মানে অবস্থা তার চাইতেও আরো ভয়াবহ।
এই সমস্যার সমাধান কি? আমি চোখে অন্ধকার দেখতেছি।
এই বিজ্ঞাপনটা চোখে পড়ার পর থেকে একটা প্রশ্নই আমার মাথায় ঘুরতেছে খালি, ডায়মন্ডের ভরি কতো এখন দেশে!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কোমড় বেঁকিয়া গেল এত ভারী বিজ্ঞাপন পড়িয়া।
সারা জীবন জেনেছি "লেখাপড়া করে যে, গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে।"
তাহলে আর এদের দোষ দিয়ে এখন কী হবে?
আমাদেরই বোধহয় গোড়ায় গলদ ছিল।
অজ্ঞাতবাস
খাঁটি কথা কইছেন, "গাড়ী-ঘোড়ায় চড়ার জন্য লেখাপড়া করা" -- এই ধরণের উদ্ভট ইন্সপিরেশনের ধারণা আমাদের মগজে পাকাপোক্ত ভাবে গেড়ে বসার প্রক্রিয়া শুরু হইছিল মনে হয় বৃটিশ আমলে, এর ফল শেষ পর্যন্ত্য ডিজুস যুগে এসে এইরাম ন্যংটা ভাবে দেখা লাগবে ভাবি নাই।
এদের ওয়েবসাইটের অবস্থা:
এরা বুঝতেও পারেনি এতটা জনপ্রিয় হবে তাদের অ্যাড। আর কোথায় যে সাইট হোস্ট করেছে ।।।।।।।
বিজ্ঞাপনটা দেখে কিছু প্রশ্ন উকি দিল-
১। বিজ্ঞাপনের শেষ লাইনটা এইরকম- “ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ এশিয়াই আমার আজকের সাফল্যের মূল”। কি ধরনের সাফল্য?
যেভাবে ছবিটা দেওয়া হয়েছে তাতে প্রথম ধাক্কায় একজন দালালকে তার পশারিণীর সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে বলে মনে হয়েছিলো।
২। বিজ্ঞাপন সাধারনতো তৈরী করা হয় তার উদ্দিষ্ট দর্শকের কথা মাথায় রেখে। যদি ধরি এই বিজ্ঞাপনের উদ্দিষ্ট দর্শক বাংলাদেশের শিক্ষান্বেষী ছাত্রছাত্রী এবং তাদের অভিভাবক, তাহলে কি ধরে নেব যে আমাদের সমাজের মানুষের রুচি আজ এতটাই নেমে এসেছে?
৩। ফারুকী সাহেবদের আশির্বাদে নাটক-সিনেমার মানতো অনেক আগেই রসাতলে গেছে। আজকাল কি ফারুকী সাহেবরা বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোও দখল করে নিয়েছেন নাকি?
৪। আমি জানিনা এই ইউনিভার্সিটির ভি.সি কে। তবে কোন ধরনের মানুষ একটা ইউনিভার্সিটির ভি.সি হলে এইরকম একটা বিজ্ঞাপন অনুমোদন পেতে পারে?
প্রশ্নগুলো অনেকটাই নিজের জন্য। টানা একযুগেরও বেশী দেশের বাইরে। এই সময়ে দেশ নিশ্চয়ই অনেক এগিয়েছে (যেইদিকেই হোক)। একটু বোঝার চেষ্টা করছি এগোনোটা কোন দিকে।
ক্যাপিটালিস্টিক সোসাইটিতে সবকিছুই পন্য। শিক্ষা, ডিগ্রী, ভালোবাসা, দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ, দান-খয়রাত এমনকি ধরেন ক্যাপিটালিজমের বিরোধিতা এইটা একটা পন্য। কই জানি পড়ছিলাশ চে গুয়েভারার ছবি সবচে বেশি বিক্রি হয় আমেরিকাতে। আর সুমনের গানেই তো আছে, "স্বপ্নটা পন্য এখন, বিকোতে পারলে টাকা আসবে ঘরে"।
সাইথ-এশিয়ার টার্গেট গ্রুপ নিশ্চয়ই এই বিজ্ঞাপন খাইবো কিংবা এই বিজ্ঞাপন দিয়া তারা পরিচিতি পাইলো, সামনে নতুন কোন বিজ্ঞাপন দিয়া আমাদের মন জয় কইরা নিবো।
আর যাই হোক আমি ঈদের পর এ্ই হানে এমবিএ তে ভর্তি হমুই হমু। কয়দিনের আর জীবন, সোলমেট একটা অত্যইন্ত্য জরুরী জিনিষ।
"ক্যাপিটালিজমের বিরোধিতা এইটা একটা পণ্য" -- এই ব্যপারটা আগে খেয়াল করি নাই, খুবই সত্য কথা। চে মার্কা লাগানো টিশার্ট না পড়লে আপনে আজকাল আর "জাতে" উঠতে পারবেন না -- এইটা বাংলাদেশেও সত্য। জাতে উঠতে চাইলে আপনার ওয়ার্ড্রবে শুধু "স্লিপনট" আর "ল্যাম্ব অফ গড" মার্কা লাগানো গেঞ্জি থাকলেই হবে না, সাথে একটা "চে"-ও থাকা চাই।
আহা। যদি এমুন ইনভার্সিটিতে ভর্তি হৈতে পার্তাম
জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশের পথ বয়েস বা মেধাজনিত কারণে কুনুদিন বন্ধ হৈতে পারেনা।
ঠিক কর্সি নেক্সট টাইম ঢাকা গিয়া এইখানে এক্টা রাত্রিকালীন এম্বিএ (এম এ আর বিয়ে একসাথে) কোর্সে নাম লেখাইয়ালামু।কি আছে জেবনে। চীন দেশে না গিয়াও আমরা বিপুল জ্ঞান দেশে বসেই লাভ কর্তে পার্ব। ভাবতেই আরামে চোখ বুজে আসে (ওরে! কেউ আমারে ধর!! পড়ে গেলুম!) !!!
আরও!
নতুন মন্তব্য করুন