একটি গল্প-
রাজশাহীর বাঘা থানার গাঁওতলী গ্রামে মাত্র সকাল হয়েছে।
গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কোলাহল নেই, শিশুদের হৈ-হুল্লোড় ছুটোছুটি নেই। কারণ, দু'দিন পরে ঈদ, স্কুল বন্ধ। আসন্ন উৎসবের নির্জন প্রস্তুতির সকালে হর্ণ বাজিয়ে, ধুলো উড়িয়ে গ্রামে আসে সাদা রঙের মাইক্রোবাস।
উৎসুক জোড়া জোড়া গ্রাম্য সরল চোখ যখন বাড়িগুলোর উঠোন পেরিয়ে, বাংলা ঘরের সামনে দিয়ে কালামের চায়ের দোকানের দিকে যায়, তখন সবাই দেখে তালুকদার বাড়ির শহুরে বৌ-নাতির গাড়ি নয়, অচেনা মানুষের গাড়ি থামে এসে - সিরাজুল ইসলামের ভাঙা ঘরের সামনে। সিরাজুল ইসলাম গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ কেউ নয়, স্কুলের মাস্টার নয়, মেম্বার চেয়ারম্যানও নয়, এমনকি মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনও নয়। সিরাজুল ইসলাম কাজ করে ঢাকা শহরে, ছয়-সাত মাসে বাড়ি আসে, দু'তিন মাসে টাকা পাঠায়। সব ঈদে বাড়িও আসে না। ঘরে তার বৌ, তিন সন্তানের দুই মেয়ে যারা ক্লাস এইটে ও সিক্সে পড়ে যথাক্রমে, ছোটজন ছেলে - ক্লাস থ্রির ছাত্র। ঘরে আরও আছে সিরাজুল ইসলামের বৃদ্ধা মা, যিনি চোখে তেমন কিছুই দেখেন না।
গাড়ি থেকে নেমে আসে, ফর্সা ফর্সা টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের মতো, দুজন তরুণ-তরুণী। সঙ্গে ভিডিও ক্যামেরা হাতে লম্বা চুলের যুবক।
তরুণ-তরুণী জানায় তারা গ্রামীণ ফোনের পক্ষ থেকে এসেছে, তাদের মাথায় গ্রামীণ ফোনের ক্যাপ। চারপাশে সমবেত জনগণ দেখে সাদা মাইক্রোবাসেও গ্রামীণফোনের চিহ্ন।
জানা যায়, ঢাকায় সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে গ্রামীণফোন যোগাযোগ করে জানতে পেরেছে - গত বছরের মত এবছরও সে বাড়ি আসতে পারবে না। তাই সিরাজুলের পরিবারকে গ্রামীণফোন ঢাকা নিয়ে যাবে। তখন ক্যামেরার সামনে আগত তরুণী বলে যাচ্ছে, "Grameenphone takes up a secret plan for a surprise...!" ব্যাকগ্রাউন্ডে চমকিত সারপ্রাইজড সিরাজুল-পরিবার।
সিরাজুলের দুই মেয়ে বেশি উচ্ছ্বসিত। কারণ, পাশের বাড়ির দত্তকাকাদের বাড়িতে টিভি দেখতে গিয়ে তারা গ্রামীণফোনের এমন বিজ্ঞাপন দেখেছে। কিন্তু, কখনো ভাবেনি তাদের জীবনে এমন সৌভাগ্য নেমে আসবে!
সমবেত গ্রামবাসীদের কেউ কেউ সিরাজুল-পরিবারের এমন সৌভাগ্যে ঈর্ষান্বিত হয়। কেউবা ক্যামেরার ফ্রেমের মধ্যে থাকার জন্য ধাক্কাধাক্কি করে, যদি টিভিতে নিজেকে দেখা যায়!
ঘটনা দীর্ঘ হয়নি।
ঘন্টাখানেকের মধ্যে ব্যাগ গুছিয়ে তারা সাদা মাইক্রোবাসে উঠে বসে, টেলিভিশনে দেখা বিজ্ঞাপনের মতো। মূল রাস্তায় উঠতেই আবার ক্যামেরা চালু হয় - "সিরাজুলকে না জানিয়ে আমরা তার পরিবারকে ঢাকা নিয়ে যাচ্ছি একত্রে ঈদ পালনে..."
না।
সে গাড়ি ঢাকা যায়নি।
সিরাজুলের পরিবার ঢাকায় পৌঁছেনি। লোকগুলো গ্রামীণফোনের কেউ ছিল না। কোনো পত্রিকায় তাদের পাচার হওয়ার খবর আসেনি।
সিরাজুলের মায়ের মতো গ্রামের সবাই ভেবেছে, শহরে সিরাজুলের কাছে ভালোই আছে তার পরিবার। ওদিকে সিরাজুল ভেবেছে - তার পরিবার গ্রামেই আছে।
হয়তো, কোনো এক নিষিদ্ধ জগতে সিরাজুলের স্ত্রী-কন্যাদের সামনে আরেকবার ক্যামেরা ধরবে, হিউম্যান রাইটসের ডকু নির্মাতারা- লাইফ ইন ব্রথেল কিংবা সেক্স ট্রেড শিরোনামে।
গল্প এখানেই শেষ।
বাস্তবতা হলো-
প্রিয় পাঠক, গল্পটি সত্য হয়ে যেতে পারে। শুধু গাঁওতলীতে নয়, এমন ঘটতে পারে - আরো বিশটি গ্রাম, বিশটি পরিবারে।
প্রতারণার পন্থাটা শিখিয়ে দিয়েছে গ্রামীণফোন।
দেখুন, এবারের ঈদে প্রচারিত গ্রামীণফোনের ৩টি বিজ্ঞাপন-
_
_
গ্রামীণফোন বলছে-
"The spirit of Eid creates a magic of closeness as we unite with our families. However there are a few who have a huge responsibility to serve us even during Eid Day. Although they cannot be together with their near & dear ones, Grameenphone takes up a secret plan for a surprise...!"
মন্তব্য
বিষয়টি সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখার মত নয়।
মনের রাজা টারজান,
জঙ্গলে ভোর হলো, (টারজানের) নতুন প্রভাত এলো, খুশিতে ভরে গেল চারিদিক।
কিছুই বুঝা গেল না, বাংলায় বলেন ভাই।
মনের রাজা টারজান,
বললে কি শুনতে পাবেন? বাংলাতেই লিখেছি, - সম্মানিত অতিথি।
জঙ্গলে ভোর হলো, (আনোয়ারের) নতুন প্রভাত এলো, সন্দেহে ভরে গেল চারিদিক।
শিমুলের আশঙ্কটাকে একটু ফার-ফেচড মনে করে বিদ্রুপ করছেন, কিন্তু লজিস্টিকসের কথা ভেবে দেখুন। দরকার শুধু গ্রামীণফোনের কয়েকটা টুপি। র্যাবের পোশাক পরে ডাকাতির খবর তো প্রায়ই আসে।
গুড পয়েন্ট.
..................................................................
#Banshibir.
একবার সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞাপনে কী কী করা যাবে না বলে এক বিশাল লিস্টি দেখাইছিলো টিভিতে। সেইটা দেখে বুঝছিলাম, আসলে 'দুষ্ট লোকে সব পালিয়ে যাওয়ার' কথা ভুলে গিয়ে এতো সৃজনশীল আইডিয়া পায় কোথায় আসলে!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভালো পয়েন্ট ধরেছেন। আমার মাথাতেই আসেনি (কখন কিছু আসে ও না )।
কিন্তু যাদের আসার তাদের ঠিকই আসবে।
-- ঠুটা বাইগা
সেই মাধুকরী!
চিন্তার বিষয়।
ইমা
আপনার লেখা পড়ে আমার এক বন্ধুর ডায়ালগ মনে পড়ে গেল- বাংলাদেশ স্ক্যামিস্ট-এ ভরা।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
মারাত্বক আশঙ্কা! আসলেই এভাবে ভেবে দেখা হয় নি। জিপির অ্যাড গুলো এর আগ পর্যন্ত তো ভালোই ছিলো দেখেছি!
ফোন কোম্পানীগুলোর বিভিন্ন অফারের সুযোগ নিয়ে প্রতারণা তো অহরহই হচ্ছে!
নতুন একটি দিক উন্মোচিত হলো
পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
লেখাটি গুরুত্বপূর্ণ । বিষয়টি চিন্তনীয় ।
গ্রামীণ ভালো করছে না খারাপ সে নিয়ে আলোচনা হতে পারে, কিন্তু এই ব্যাপারটা নিশ্চিত এই ধরনের বিজ্জাপনকে ব্যবহার করে যেকোন মহল প্রতারণা করতেই পারে।
অলস সময়
চিন্তার বিষয়...
গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনটি দেখে প্রথম দু-তিনদিন বুঝতেই পারি নি বিজ্ঞাপনের থিমটি আসলে কী? যখন বুঝতে পারলাম, তখন ঠিক এই কথাগুলোই মনে হয়েছিল।
কিন্তু এক্ষেত্রে আরেকটি প্রশ্নও জাগছে মনে, ওই যে, চাকু তো নানান কাজে ব্যবহার করা যায়। এরজন্য চাকুর আবিষ্কারককে দোষ দিয়ে লাভ আছে? বলে রাখি, গ্রামীণের এই বিজ্ঞাপনটি আমার পছন্দ হয় নি, কিন্তু এ থেকে কি বলা যায় গ্রামীণ প্রতারণার পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছে?
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
চাকু আবিষ্কারে সমস্যা নেই। কিন্তু, চাকুর আবিষ্কারক যদি বলেন - আমরা আপনাদের সারপ্রাইজ দিতে আপনাদের বাড়ি গিয়ে মাছ-মাংস সব কেটে দিয়ে আসবো, এটা আমাদের সিক্রেট সারপ্রাইজ; তাহলেই সমস্যা। এই সিক্রেট সারপ্রাইজ বাজারজাতকরণের ভিক্টিম কেউ হয়ে গেলে- তার দায়ভার সারপ্রাইজদাতাকেই নিতে হবে।
...এই ধরনের বিজ্ঞাপন আসলে আইনগতভাবে চ্যালেঞ্জ করা উচিত। হরলিক্সের বিজ্ঞাপনও।
বিজ্ঞাপন মনিটরিং-এর সময় বহু আগেই হয়েছে। সরকার কেন যে নির্বিকার বুঝতে পারি না।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
সাধারণত টিভি দেখা হয়না খুব একটা। তবে এবার বাড়িতে গিয়ে অনুষ্ঠানের চেয়ে বেশী বোধহয় বিজ্ঞাপন দেখেছি। জিপি'র এই বিজ্ঞাপনগুলোও চোখে পড়েছে। প্রথম দেখাতেই, নাই কাজ তো খই ভাজ-র মত মনে হয়েছে। যেমন, আজকে রিক্সায় করে আজিজ সুপার মার্কেটে যাবার সময় একটি স্থানে ডাস্টবিনের আখড়া দেখে দুহাত দিয়ে নাক-মুখ চেপে ধরেছি। আর চলন্ত রিক্সায় থেকে দেখছি, মোটর বাইক দাড় করিয়ে এক ফটোগ্রাফার বেশ আয়েশ করে ডাস্টবিনের ছবি চুলছে। পাশেই ফটোগ্রাফারের পেছনে দীনহীন নিঃস্ব অসহায় মানুষের নির্বিকার চলমান জীবনধারা। ঐদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই কারো।
আমি ডাস্টবিন দেখে নাক-মুখ চেপে ধরি। আবার কেউ কেউ ওদের দেখে রোদচশমা লাগায়।
আর ওরা ঠিক আগের মতই নির্বিকার অসহায় পড়ে থাকে কিংবা তারও বেশী কিছু!
ভালো লিখেছেন। আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়।
লোকজনের মানসিকতার যা দুরবস্থা! একটা ক্যামেরার জন্য চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে হাত বের করে ছবি তুলতে থাকা লোকজনের হাতে রাম দা দিয়ে কোপ দিতে দ্বিধাবোধ করে না মানুষ! একটা সস্তা মোবাইল ফোনের জন্য বেড়াতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বখাটেদের হাতে তুলে দিতে দ্বিধা করে না নৌকার মাঝি।
সুতরাং, আশঙ্কা মোটেও অমূলক না।
অ্যাড দেখে তো মুগ্ধ হইলাম। তা গ্রামীণ ফোন কয়টা পরিবাররে সারপ্রাইজ দিসে এই ঈদে?
কোথায় যেন পড়েছিলাম, সায়েবি পশুপালনের ভাষায় সারপ্রাইজ শব্দটা মদ্দার সাথে মাদীর সঙ্গমের ইউফেমিজম হিসেবে ব্যবহার করা হয় (যেমন দ্য স্টিয়ার হ্যাজ সারপ্রাইজড দ্য কাউ) ... দেশের আমজনতাকে সারপ্রাইজ দেয়ার এই প্রচেষ্টা দেখে একটা চুটকি মনে পড়লো।
গল্পের ষাঁড়ের কি কোন আমেরিকান বান্ধবী আছে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এদের বোধোদয় যে কবে হবে! এর আগে বাংলালিংক না যেন কোন এক অপারেটর, ঠিক মনে আসছে না, খবরের মত করে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল, মডেল-অভিনেত্রী নিখোঁজ। পরে জানলাম ওটা ক্যারিশমা, শক্তিশালী নেটওয়ার্কের বিজ্ঞাপন!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
হুমম!
এখন থেকে এড বানানোর আগে কি কি হইতে পারে, এইটার একটা ফিজিবিলিটি ষ্টাডিজ করতে হবে মনে হয়।
ওস্তাদ, জলিল সাহেবের মোষ্ট ওয়েলকাম এর কুফল, সুফল কি হইতে পারে, এইটা যদি একটু আলোচনা করতেন!
আপনি লেখার আগে এইটা তো মাথাতেই আসে নি। আমাদের এড বানানোর আগে আসলেই অনেক সতর্ক থাকা প্রয়োজন
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
নতুন মন্তব্য করুন