হুটহাট কয়েকটা লাইন এসে মাথায় হাতুড়ির আঘাত করে যায়। ভাবি, লিখে রাখবো এখানে ওখানে। আজ যেমন সাত সকালে নিজেই আওড়ে গেলাম, “অনুভুতিগুলো সব পুরনো হয়ে যাচ্ছে। তরতাজা স্মৃতি বলে কিছু নেই। এই সেদিনের প্রেম-প্রণয়ও আজ বিগত দিন। আরও আগের ডানডাস স্কয়ার স্বপ্নের দৃশ্যের মতো ঘোলাটে। আজ দিনটুকু বেঁচে আছে কেবল, ব্যক্তিগত জামায়।" জানি, এ লাইনগুলো আর লেখা না হবে অন্য কোথাও। মুছে যাবে স্মৃতি থেকে। এই করি, ঐ করি, হাতি মারি, ঘোড়া মারি করে করে কিছুই করা হয় না, দিনের শেষে কেবলই মনে হয়,’সব ঘোড়ার ডিম’। আবার দেখা করবো বলেও হাসিব ভাইয়ের সাথে আর দেখা করা হলো না, ফোনও করলাম না; শেষ মুহূর্তে বিদায়ী এসএমএস পেয়ে মন খারাপ হলো। অপরাধবোধও জাগলো।
হাসপাতালে নৃবিজ্ঞানী
মানুষের হিংস্রতা কেমন হতে পারে ভাবছিলাম। গতকাল ফেসবুকে পাওয়া লিংক ধরে খবরে পড়লাম - চমেক হাসপাতাল পাঁচতলা থেকে রোগীর ভাইকে ফেলে দিল কর্মচারীরা! সংক্ষেপে খবর হলো - বোনের জন্য ওষুধ নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢোকার সময় ইমরান (১৭) নামে এক তরুণকে বাধা দেন প্রবেশপথে কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষী। এ নিয়ে ওয়ার্ডের ফটকে দারোয়ানের সঙ্গে সামান্য বাকবিতণ্ডা হয় ইমরানের। এর জের ধরে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী মিলে পাঁচতলা থেকে ইমরানকে নিচে ফেলে দিয়েছে অভিযোগ করেছেন তার স্বজনেরা। গুরুতর আহত ইমরান এখন চমেক হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ইমরান নিজেই পাঁচতলা থেকে লাফ দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের এ মন্তব্য মোটেও বিশ্বাসযোগ্য মনে হলো না। গত দু’সপ্তাহ ধরে কাজে আসা যাওয়ার পথে পড়ছিলাম শাহাদুজ্জামানের “হাসপাতালে একজন নৃবিজ্ঞানী ও কয়েকটি ভাঙা হাঁড়”। গল্প কিংবা উপন্যাস নয়। লেখকের পিএইচডি পেপারের বাংলা সংস্করণ। নৃতাত্ত্বিক গবেষণার পর্যবেক্ষণ এবং প্রাপ্ত ফলাফল চমৎকার সুপাঠ্য বাংলায় লেখা হয়েছে। বাংলাদেশের কোনো এক সরকারী হাসপাতালের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে লেখক কয়েকমাস পর্যবেক্ষণ করেছেন, কথা বলেছেন। সে সুত্রেই উঠে এসেছে – রোগী, রোগীর আত্মীয়, ওয়ার্ড বয়, ক্লিনার, জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্স বিভিন্ন পক্ষের কথকথা এবং বিশ্লেষণ। শাহাদুজ্জামান তার বইয়ে লিখেছেন, হাসপাতালে সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ের মানুষ হলো রোগী। ডাক্তার থেকে ক্লিনার সবাই রোগীকে ধমক দেয়। রোগী এবং তার আত্মীয়দের ভোগান্তির কথা বলতে গিয়ে লেখক নিজেই একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন যেখানে একজন রোগীর আত্মীয়কে হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মী লাঠি দিয়ে আঘাত করে পিটিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়েছে। বইটি যদিও গবেষণপত্র – এর ভেতরে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা গল্পাকারে আছে। ভালো লেগেছে। তবে ইমরানকে যারা ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে তাদের কোনো বিচার হবে – এমনটা আমি আশা করছি না।
ক্যাম্পাসের যুবক
মিরপুর দশ নম্বর ফায়ার সার্ভিসের পাশে পুরনো বইয়ের দোকানগুলোয় আজকাল বইয়ের দাম বেড়ে গেছে। কিছুদিন আগে চোখে পড়লো, আসিফ নজরুলের উপন্যাস “ক্যাম্পাসের যুবক”। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে শুনেছিলাম, একসময় নাকি খুব আলোচিত হয়েছিল এ উপন্যাস। ৭৮ পৃষ্ঠার বই দরদাম করে কিনলাম ২০ টাকায়। একটানা বসে পড়ে ফেললাম। এরশাদের শাসন আমলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির প্রেক্ষিতে লেখা। কয়েকটি চরিত্র, তাদের প্রেম-অপ্রেম এবং রাজনীতির চাল উপন্যাসের মূল বিষয়। কিন্তু, পড়ে হতাশ হলাম। পুরো উপন্যাসে সময় কিংবা ইতিহাসকে ধরার কোনো চেষ্টা ছিল বলে মনে হয়নি। এমনও হতে পারে সে সময় যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ঘনিষ্ট ছিল, কেবল তারাই বুঝবে কে ছিল কোন জন। দুই দশক পেরিয়ে নতুন পাঠক এ উপন্যাসে সময় কিংবা ইতিহাসের কিছুই পাবে বলে মনে হয়নি। উপন্যাসের শেষ অধ্যায়ে মূল চরিত্র শাকিল যখন সাকুরা থেকে বের হয়ে আসে, কিংবা এর আগে শাকিল যখন বাম ধারার আন্দোলনকে স্বগোক্তিতে তুচ্ছ করে তখন শাকিলের মাঝে লেখকের নিজেরই ছায়া স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শেষে শাকিল রাস্তায় হেঁটে যায়, আর আমার মনে হয় – ওটাই ছিল আসিফ নজরুলের ব্যক্তিগত মেটামরফসিস পর্যায়। উৎসর্গ পাতায় লেখা আছে – ‘অভি, যারা তোমাকে বিষাক্ত করেছে তাদের অভিশাপ দিচ্ছি’। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ‘কর্মী’ আসিফ নজরুল নিজেই কবে বিষাক্ত হয়ে গেলেন তা কি তিনি জানেন? ঘাতক দালালদের কী চমৎকার বচনে তিনি সৎ নির্দোষ সার্টিফিকেট দিচ্ছেন মধ্যরাতের টক শোতে! কে জানে, আগামীকে হয়তো কোনো এক নতুন লেখক হয়তো আসিফ নজরুলকে নিয়ে উপন্যাস লিখবেন – “টকশো’র যুবুক”।
ঢাকার যানজট ও বিজ্ঞাপন
আগারগাঁও থেকে মিরপুর দশ এগারো পল্লবী হয়ে উত্তরা আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত একটা বাস সার্ভিস – জাবাল-এ-নূর- চালু হয়েছিল রোজার মাস থেকে। বিজয় স্বরণী-মহাখালী-বনানী হয়ে কুড়িল বিশ্বরোডে যেতে যেখানে যানজট মিলিয়ে দেড় ঘন্টার মতো লেগে যায়, জাবাল-এ-নূরে যেতে সময় লাগতো ২৫ মিনিট। ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে চলার পারমিশন পেয়েছিল, এর মালিকানায় ছিল নাকি অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা। মিরপুর থেকে যারা ও পথে আসা যাওয়া করেন, তাদের জন্য দারুণ একটা ব্যাপার ছিল। আমিও সকাল ছ’টা চল্লিশের ট্রিপ ধরতাম নিয়মিত। মোট বাস ছিল ৭টা আরও দশটা নাকি পারমিশনের অপেক্ষায় ছিল। গতকাল সকাল ছ’টা চল্লিশের বাস এলো না, পরের সোয়া সাতটায়ও এলো না। আজ সকালেও পেলাম না। ফেরার পথে যখন দেশবাংলা পরিবহনে ফিরছি – কন্ডাক্টরকে জিজ্ঞেস করলাম, জাবাল-এ-নূর বন্ধ নাকি? কন্ডাক্টর জানালো, ‘হ বন্ধ কইরা দিসে’। জিজ্ঞেস করলাম, ‘বন্ধ করলো ক্যানো? ভালোই তো ছিল’। জবাবে সে জানালো – ‘বুঝেননা, শাহজাইন্যা তো লোক ভালো না’। বুঝলাম না কোন শাহজানের কথা বলছে সে, ভাবলাম – হয়তো কোনো স্থানীয় নেতা হবে হয়তো। তবুও জিজ্ঞেস করলাম, ‘সে কে?’ কন্ডাক্টর বললো – ‘শাহজান খানরে চিনেন না, মন্ত্রী!’ আমি বললাম, ‘অ!’
আজ কুড়িল বিশ্বরোড থেকে দেশবাংলা বাসে উঠেছিলাম বিকেল চারটার দিকে, বাসায় পৌঁছলাম রাত আটটারও পরে। দু’ঘন্টা জ্যামে ছিলাম এয়ারপোর্ট রোডে মাছরাঙা টেলিভিশন অফিসের সামনে বাস ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছিল দেড় ঘন্টা। এর পর প্রতি দশ মিনিটে দশ হাত যায় অবস্থা। বনানীর দিকে কুল আফটার শেভ আর ডিওডরেন্ট প্রচুর বিলবোর্ড দিয়েছে, এ বিজ্ঞাপনগুলো [১ - ২] যারা করেছে তাদের একজন মাস ছয়েক আগে ফেসবুকে মতামত নিচ্ছিলো – কেমন হয়েছে। তার বেশিরভাগ ফেসবুক বন্ধুরা বলেছে – সেক্স অ্যাপিল দিয়ে সব অ্যাড সফল হয় না। কে শোনে কার কথা। দৈনিক বণিকবার্তা বিজ্ঞাপন করেছে ভেজালের ভীড়ে আসল খবর দেবে তারা। বিজ্ঞাপনের ছবিতে একজন মানুষের চারটি চোখ এবং দুটো নাক করে দিয়ে অপটিক্যাল ইল্যুশন করা হয়েছে – তাকালেই চোখে বিভ্রম লাগে। যানজটে বসে বসে এসব দেখি। সেনসেশন নিরোধকের বিজ্ঞাপন করেছে, একটা মেয়ে স্ট্রবেরি কামড়ে আছে। মোবাইল ফোনে হেডফোনে রেডিও চালু করি। সার্চ করতে করতে নতুন একটা চ্যানেল পেলাম এফ এম নাইন্টি টু পয়েন্ট এইট। শুরুতে চ্যানেলের নাম বুঝতে পারলাম না ওয়েভ রেডিও বা উই রেডিও এরকম কিছু একটা মনে হলো। ভালো ভালো গান চলছে – উপস্থাপকের কথা বার্তায় বাংলাদেশ বেতার ভাব। ডিয়ার লিসেনার না বলে বলছে – প্রিয় শ্রোতাসঙ্গী। রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, কবীর সুমন, অঞ্জন দত্ত, লোপামুদ্রা আর শুভমিতা গান শুনলাম একটানা। আরো কয়েকবার মন দেয়ার পর শুনলাম, চ্যানেলের নাম রেডিও ভূমি। নামটি ভালো লাগলো। আসলে, চ্যানেলটিকেই ভালো লাগছিল খুব। ভালো লাগার কারণ হলো – এখনো বিজ্ঞাপন নেই, আড়ঝেদ্যার বাংলিশ নেই, এসএমএস ভিক্ষা নেই। মন চায় বলি – রেডিও ভূমি তুমি এরকমই থাকো, কথা দিচ্ছি –অন্য কোনো চ্যানেলে কান পাতবো না আর। অথচ জানি, এরকম থাকবে না শেষ পর্যন্ত। এখন সম্ভবত পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে, পূর্ণাঙ্গ আয়োজন শুরু হলে – বিজ্ঞাপন আর আরজেদের খলবলানির অধিকারে নষ্ট হবে সব। মহাখালী ফ্লাইওভারের ওপরে যখন হাল্কা জ্যাম, রেডিওতে শুভমিতা গাইছে ‘যদি বন্ধু হতে চাও’, তখন গুলশান থেকে মহাখালির দিকে জ্যামে আঁটকে থাকা সারিবাধা গাড়ির টিমটিমে আলোর দিকে তাকিয়ে ঘরে ফেরা মানুষগুলোর জন্য মায়া জেগে ওঠে। মনে হয়, গানের কথাগুলোর মতোই মানুষ ঘরে ফিরছে বন্ধুর কাছে...।
অসহায় জীবন যাপন
ইউট্যুবে থাকা এক ভিডিওর প্রতিবাদের আমাদের দেশে হরতাল হয়! মোল্লারা পুড়িয়ে দেয় গাড়ি। এখনো গুগল সার্চ ঠিকমতো কাজ করে না। ব্লকড দেখায় অনেক কিছু। এর মাঝে রামুতে ঘটে গেছে কুৎসিত এক ঘটনা। মিডিয়া বলছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। দূর্বলের ওপরে সবলের এই একপক্ষীয় হামলাকে ‘দাঙ্গা’ বলা যায় কিনা সেটা প্রশ্ন। প্রথম আলোও শিরোনামে 'ওরা' লিখে অশ্লীলভাবে জানাচ্ছে - আমরা আক্রান্ত নই। জামাত-বিএনপি সরকার আমল হলে অবাক হতাম না। প্রচলিত আছে, আ-লীগ নাকি সংখ্যালঘুদের প্রতি সহানুভূতিশীল। অথচ আজ পর্যন্ত একটা উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ চোখে পড়লো না। পুড়ে যাওয়া বৌদ্ধমুর্তির ছবি দেখে ভাবি, ব্যাপক শান্তি নাজিল হচ্ছে, পাকসারজমিন সাদবাদের আগুন পানি শান্তি। আশার কথা এটুকুই যে, এখনো একদল মানুষ অনলাইনে অফলাইনে এর প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্টের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে অসহায় মনে হয়। কৌশিক বড়ুয়া নামের যে ছাত্রটি পরশু বিকেলে আমাকে স্লামালাইকুম বলে সম্মান দেখালো তার সামনে নিজেকে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম প্রাণী মনে হয়। বাংলাদেশ নিয়ে আশা নিরাশার কথা বলছে আমার বন্ধুরা। যারা সোহেল তাজের মতো ২য় সুযোগ রেখেছেন, তাঁরা হয়তো এই নষ্টভূমিতে আর ফিরবেন না। বন্ধুরা যারা উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে গিয়েছিল, তাদের অনেকেই আর ফিরবে না, যারা ফেরা-না-ফেরার দোলাচলে আছে, মেইলে পরামর্শ চাচ্ছে দেশে ফিরবে কিনা- তাদের নির্লজ্জের মতো করে বলছি – না ফিরলেই ভালো। গত এপ্রিলে ছিনতাইকারী ছোঁ মেরে আমার মোবাইল ফোনটা নিয়ে গিয়েছিল, গত সপ্তাহে নিয়ে গেল বৌয়ের ফোন। বাসায় ফিরে বৌ কাঁদছে – অন্যদের সাথে আমিও সান্ত্বনা দিচ্ছি – জানের ওপরে এসেছিল মালের ওপরে গেছে। বলছি, এরচেয়েও খারাপ কিছু ঘটতে পারতো, ছিনতাইকারী তোমার ব্যাগ নিতে পারতো, মুখ ছুরি মারতে পারতো। এসব বাক্যে কাজ হয়নি। প্রিয় ফোনের শোক এবং একরকম আতঙ্কে কেটেছে তার সারারাত। অথচ এর পরদিন সে ফেসবুক থেকে নিজেই আমাকে শোনাচ্ছে – তার এক বন্ধুর মামাকে ছিনতাইকারী কুপিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে গেছে, জাপান বাংলাদেশ মেডিক্যালে আছে- রক্ত লাগবে এবি পজিটিভ। বৌ আমাকে বলে, ভাগ্যিস আমার শুধু ফোনটাই গেছে!
আমি বলি, হ্যাঁ – অনেক ভালো আছি আমরা।
মন্তব্য
ভালো থাকাটাই আসল কথা। আর ভালো থাকা মানে সবকিছু এড়িয়ে মুখবুজে নন্দলাল হয়ে থাকা। মুখ খুলবেন তো আর আপনার ভালো থাকা হবেনা।
...........................
Every Picture Tells a Story
সেটাই!
ঢাকা শহর ক্রমশ আরো হিংস্র হবে। এই শহরে অকল্পনীয় বিত্তের সশব্দ ঝলমলে প্রদর্শন করে অসংখ্য মানুষ চলাফেরা করে। যার নেই, সে কি চিরজীবন সৎ অভাবী জীবন যাপন করবে? তার বলয়ে একজন হয়তো অন্য পথে পা বাড়াবে, সহজে বিনা ক্লেশে যা সে চায় তা হস্তগত করতে। তার হাত চরম উচ্চবিত্ত পর্যন্ত পৌঁছাবে না, সে কেড়ে নেবে পাবলিক ট্র্যান্সপোর্টে চড়ে বা পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরা মানুষটার মোবাইল বা অলঙ্কার। যে শহরে মানুষের সাথে মানুষের পার্থক্য এতো বেশি, সেখানে কিছু মানুষ আর মানুষ হয়ে থাকতে পারে না।
সাবধানে থাকো শিমুল।
দূর্দান্ত!!! আপনার এ কমেন্ট আজ ফেসবুকে আরো কয়েকজন শেয়ার করেছে।
এই সিরিজটা সবসময়েই ভাল লাগে
ধন্যবাদ।
৪২ বছর ঢাকায় আছি। দিনে দিনে সব পাল্টে গেল। পাল্টে যাওয়াই নিয়ম। কিন্তু এ পাল্টানোটা নেতিবাচক। এমনটাতো কথা ছিলনা। আগে মধ্যরাতে নির্ভয়ে ঢাকার রাস্তায় রিক্সা না পেলে হেঁটেই বাড়ি চলে আসতাম। এখন রাতে ঢাকার রাস্তায় ভয় লাগে। পুলিশের ভয়, সাদা পোশাকধারীদের ভয়, ছিনতাইকারীর ভয় আরও কত যে অনিশ্চয়তার ভয়, নিজেই বুঝিনা। তারপর ধর্মনিরপেক্ষ ইসলামী রাষ্ট্রে এই যে কয়েকদিন ধরে সারাদেশে যা হচ্ছে, বড্ড উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। আপনারা কেমন আছেন ? আমি ভাল নেই।
"ভালো নেই, ভালো থাকার কিছু নেই"
ঢাকার রাস্তায় যখন চলি একটা জিনিস প্রায়ই চোখে পড়ে, একদল মানুষ আর একজনকে ধরে ব্যাপক কিল-ঘুষি মারছে। হয়তো কথা কাটাকাটি থেকে শুরু অথবা মতের অমিল। এলাকার রাস্তায় যখন হাঁটি প্রায়ই দেখি, একজন আরেকজনকে বলছে কিংবা দলবদ্ধভাবে হুমকি দিচ্ছে, "দেইখা লিমু তোরে, তুই চিনস আমি কে?" এ ঘটনাগুলো আগেও যে চোখে পড়তো না, তা না। কিন্তু এখন অনেকবেশি পড়ে। মানুষ দিনে দিনে চরম অসহনশীল হয়ে যাচ্ছে, বোঝাই যায় জীবনযুদ্ধে এরা নিজেদের সহ্যের শেষসীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। মানুষ আরও হিংস্র হবে। সাবধানে থাকুন, আমার এখন রাস্তায় বের হতে ভয় লাগে।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ঠিক এই ব্যাপারটাই গতকাল এক কলিগ বলছিলেন, মানুষের সহনশীলতা একেবারেই নেই!
আপনার লেখা খুব উৎসাহ নিয়ে পড়ি সবসময়, আজকে মনটা বেশী খারাপ করিয়ে দিলেন।
facebook
আপনার লেখা পড়ি না। হিংসা লাগে, আপনি এত্তো ঘুরেন!!!
কেবল দীর্ঘশ্বাস ফেলি।
এত কিছুর পরেও স্বপ্ন দেখি। -রু
শেষে এসে মনটা ভারি হয়ে গেলো। আসলেই আমরা কি এক অন্ধকার সময় পার করছি? প্রতি নিয়ত চোখে পড়ে সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া মানুষদের কোন ছুতো পেলেই অন্তরের সব ক্ষোভ বের করে দিতে - বেশীরভাগ সময়েই মাধ্যম হয়ে ওঠে অপরকে হেনস্থা করা! বিশেষত নিম্ন-নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের মধ্যে বেশী চোখে পড়ে এই প্রবণতা। অথচ কয়েক বছর আগেও এতটা চোখে পড়েনি! গণ মানুষের ধৈর্য্যের বাঁধ কি তবে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে?
-অয়ন
চারপাশটা ক্রমশ হিংস্র হয়ে উঠছে।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
১। যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন তাহলে বলবো, "বাংলাদেশে যাদের ওপর ঈশ্বরের লানত বর্ষিত হয় তাদেরকে বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোর কোনটাতে যেতে হয়"। এখানে সরকারী-বেসরকারীর মধ্যে ইতর-বিশেষ নেই। অ্যাটেনডেন্টদের হয়রানী, পরিবারের পকেটসাফ, রোগীর ভোগান্তি মোটামুটি গ্যারান্টেড।
২। সামান্য সংশোধনী
এখানে উপন্যাসটার নাম "টকশো'র উযবুক" হবে।
৩। ঢাকা শহরে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে বাস ভাড়া কত? এটা একটা বিরাট গবেষণার বিষয়। কয়েকদিন বাংলা মোটর থেকে আগারগাঁওয়ে যাওয়া-আসা করতে হয়েছিল। যাবার বেলা ৮ টাকা থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত ভাড়া গুনতে হয়েছে। ফিরে আসার কালে ১০ টাকা থেকে ২৩ টাকা পর্যন্ত ভাড়া গুনতে হয়েছে। নানা রকমের সার্ভিসের কথা বললেও সবগুলো বাস আচরণে আসলে একই প্রকারের। বাসের যাত্রীদের স্বার্থের পক্ষে কেউ নেই। না সরকার, না রাজনৈতিক দলেরা, না মিডিয়া, না সুশীল সমাজ। শ্রমিক রাজনীতির নামে ইন্ডাস্ট্রি যখন অশ্রমিক মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় তখন সবচে’ নিচুতলার মানুষদের (যেমন, এখানে বাসযাত্রীরা) পক্ষে কথা বলারও কেউ থাকে না।
৪। বাংলাদেশের আরও অনেক ক্ষেত্রের মতো বিজ্ঞাপণ জগতটাও ‘মুর্খত্বের উত্তরাধিকার’-এ পরিণত হয়েছে। এককালে এই বিষয়ে নূন্যতম জ্ঞানবিহীন লোকজন যখন নানা চ্যানেল ধরে করে-কর্মে খাওয়া শুরু করলো তখন তারাই এই ব্যাপারে অথরিটি হয়ে বসলো। আজো তাদের দাপটে, তাদের পলিটিক্সে পড়ে এই সেক্টরটাতে প্রকৃত শিক্ষিত, মেধাবী, ক্রিয়েটিভ লোকজন সুবিধা করে উঠতে পারছে না।
৫। এফএম রেডিও নিয়ে পরে কখনো লেখার ইচ্ছে রাখি। কিন্তু কবে লিখতে পারবো জানি না। মনের কথাটা শিমুলই বলে দিয়েছেন -
৬। চল্লিশের দশকের পর বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের কোথাও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি। যা কিছু হয়েছে তার সবটাই ঠাণ্ডা মাথায়, সুপরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘু নিধণ। অল্প কিছু ঘটনা বাদ দিলে বাকি সবগুলোতেই প্রশাসন বা নিরাপত্তাবাহিনী নীরব ভূমিকা পালন করেছে বা হামলাকারীদের সহায়তা করেছে। এ’সব ঘটনার এক শতাংশেরও কোন বিচার হয়নি বা কারো কোন শাস্তি হয়নি। এইসব নিয়ে কয়েকদিন একটু মাতামাতি হয় তারপর সব ঠাণ্ডা হয়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্থরা ছাড়া সবাই সবকিছু ভুলে যায়। পরে এগুলো নিয়ে কেউ আমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমরা বলি, “ওসব কিছু সামান্য, বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র”। যদিও এই সামান্য ঘটনাগুলো মোটেও সামান্য নয়, আর ওগুলো নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলতেই থাকে।
৭। এই পর্যন্ত মোট তিনবার ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছি। প্রথমবার রাত আটটায় কাকরাইল মোড় থেকে ধরে রমনা থানার সামনে পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল, দ্বিতীয়বার সন্ধ্যা ছয়টায় বাংলা মোটর মোড়ে, তৃতীয়বার রাত দশটায় কাজীর দেউরীর কাছ থেকে ধরে দামপাড়া পুলিশ বক্সের কাছে পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল। এসব ঘটনায় মোবাইল আর টাকাপয়সা তো গেছেই সাথে বিয়ের আঙটিটাও গেছে। ছিনতাইয়ের শিকার যারা হয়নি তাদেরকে বোঝানো সম্ভব না এই অভিজ্ঞতা কী ভয়াবহ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মনোযোগী পাঠকের বিশ্লেষণী মন্তব্য!
অনেক ধন্যবাদ। নিরাপদে থাকবেন।।।
ইজি থাকতে হবে
অজ্ঞাতবাস
চারিদিকে মন খারাপ করা খবর, মন খারাপ করা লেখা। মাঝে মাঝে খুব বোকার মত কান্না পায়।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
রেডিও ভূমি মনেহয় ইমপ্রেস টেলিফিল্মের রেডিও ষ্টেশন।
আমাদের সবার(ম্যাঙ্গ পিপলদের) অবস্থাই মনেহয় একই রকম।
অক্ষম ক্রোধোক্তি করা ছাড়া কিছুই করার পাচ্ছি না শিমুল। তবুও বলি, ভালো থেকো, সাবধানে থেকো...
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
লোভের আগুনে সব পুড়ে যাচ্ছে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হাসপাতালের খবরটা পড়ে কতক্ষণ কিছু চিন্তা করতেও পারি নাই
আর চারপাশের ঘটনা তো আছেই মন কুঁকড়ে দেয়ার জন্য।
জ্যামের জন্য গাড়ি বাসে চড়তে ইচ্ছে করে না। উত্তরা গুলশান বনানী বারিধারা মিরপুর খিলগাঁ বাসাবো- দুরের বন্ধুবান্ধবদের ভুলে যাচ্ছি আস্তে আস্তে। শুধু হাঁটি। আমার বৃত্ত এখন ছোট হতে হতে উত্তরে ধানমন্ডি সাতাশ, দক্ষিণে আজিমপুর-লালবাগ, পূর্বে শাহবাগ রমনা বেইলী রোড আর পশ্চিমে জিগাতলা।
সোশাল নেটওয়ার্ক থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নিতে হবে আস্তে আস্তে। মুখোশপড়া মানুষজন আর ভালো লাগে না।
অবসরে সারাদিন ঘরে বসে গেমস খেলবো- এই ভাল।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
//রেডিও ভূমি//
আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ। আশা করি এই স্টেশান আপনার ভাল লাগা ধরে রাখবে অনেকদিন।
একটা সময় ছিল যখন প্রতিদিন বাইরে বের হবার সময় মনে মনে নিজেকে বলতাম ছিনতাইকারী ধরলে কোন প্রতিবাদ মাথা গরম করবে না যা চায় দিয়ে দিবে সঙ্গে সঙ্গে
সাবধানে থাকুন।
বাংলাদেশে অনেক সমস্যা তবে একটু সাবধানে থাকলে আর নামে মুসলমান হলে ভালোই থাকা যায়। প্রতিদিন গুলিস্তান দিয়ে আসি। অভিজ্ঞতা বলে, গুলিস্তানে বাসের জানালা থেকে যদি আমার মোবাইল ফোন নিয়ে যায় তবে সেটা আমার দোষ, গুলিস্তানের না।
দেশ ছেড়ে যেতে মন চায় কিন্তু কেনো জানি অনেক কিছু করেও, শেষে আর চূড়ান্ত মেইলগুলো লেখা হয়না, পোস্টগুলো পড়ে থাকে টেবিলে।
দেশের অবস্থা আসলেই আরো খারাপ হবে, ব্যান্ড-এইড দিয়ে কয়দিন আর চিকিৎসা হয়?? আজ ছিনতাইকারী রাস্তায় ধরছে, আগামীকাল ঘরে ঢুকে সর্বস্ব নিবে।
কিছু ভালো খবর আশা জাগায়, কিন্তু হিসাবে বুঝি ওগুলো শুধুই ব্যতিক্রম। মেধা প্রকৃত হিসাবে, প্রচন্ড বেগে ধেয়ে যাচ্ছে বিদেশে। ইমিগ্রেশনের নামে সূক্ষভাবে মেধাবীদের আলাদা করে নেয়া হচ্ছে ফার্স্ট ওর্য়াল্ডে।
থার্ড ওর্য়াল্ড মারামারি করেই শেষ হয়ে যাবে আর নাইলে প্রাকৃতিক দুর্যোগতো আছেই।
নতুন মন্তব্য করুন