অপার সম্ভাবনার আড়ালে

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: বুধ, ০২/০১/২০১৩ - ১:০৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গতকাল বছরের প্রথম দিন "বাংলাদেশের সামনে অপার সম্ভাবনা" শিরোনামের আশাবাদী খবর ছাপিয়েছে দৈনিক প্রথম আলো। সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় নিত্য খারাপ খবরের বিপরীতে এ রিপোর্ট মানুষের মনে আশার সঞ্চার করবে - এমনটাই স্বাভাবিক।
দেখা যাক সংবাদের মূল বক্তব্য কী কী। আলাদা বক্সে বলা হয়েছে -

১ম পথঃ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার সব ধরণের সুযোগ আছে।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, বলা হয়েছে 'সুযোগ' আছে। এ প্রসঙ্গে পরে বলছি।

২য় পথঃ ২০৩০ সালে বাংলাদেশ সামগ্রিকভাবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২৭টি দেশকে ছাড়িয়ে যাবে।
'সামগ্রিকভাবে' বলতে কী বোঝানো হচ্ছে সেটাই মূল প্রশ্ন? ধরে নিচ্ছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল সূচক - জিডিপি, মাথাপিছু আয়, বেকারত্বের হার, মূদ্রাস্ফীতি; এসব কিছুতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২৭টি দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ। প্রশ্ন জাগে, ২০৩০ সালে বাংলাদেশ যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ের ২৭টি দেশের অবস্থানকে ছাড়িয়ে যাবে, সেটা ঐ ২৭টি দেশের কতো সালের অবস্থান? ২০১৩ নাকি ২০৩০ সালের অবস্থান? যদি যায় তবে কীভাবে সম্ভব? বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী এমন উন্নয়ন ঘটবে যে ১৭ বছর পরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ? যদি ঘটে, তবে তার মূল ক্ষেত্রগুলো কী কী? প্রতিবেদনে উল্লেখ করা সাফল্যঃ মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু, গণস্বাক্ষরতার হার দিয়ে এ পরিবর্তন সম্ভব?

৩য় পথঃ ২০৫০ সালে প্রবৃদ্ধির দিক থেকে পশ্চিমা দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ।
২০৫০ সাল মানে ৩৭ বছর পরের প্রবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। যদি ভুল বলে না থাকি - এই প্রবৃদ্ধির হারে এগিয়ে থাকায় উস্ফালনের কিছু নেই। এর মাঝে লুকিয়ে আছে বড় ধরণের ফাঁকি।
একটা উদাহরণ ধরি -
আবুল আর বাবুল দুই বন্ধু। আজ আবুলের দৈনিক আয় ১০০ টাকা, বাবুলের দৈনিক আয় ১০০০ টাকা। এক বছর পরে আবুলের দৈনিক আয় হয়ে গেল ১৮০ টাকা আর বাবুলের দৈনিক আয় হয়ে গেল ১৫০০ টাকা। অংকের হিসাবে - আবুলের আয় বৃদ্ধির হার ৮০% আর বাবুলের আয় বৃদ্ধির হার ৫০%। আয় বৃদ্ধির হারে আবুল এগিয়ে থাকলে প্রকৃত আয় বৃদ্ধিতে বাবুল অনেক শক্ত অবস্থানে থাকবে। ৮০% আয় বৃদ্ধি, যেটা বাবুলের চেয়েও বেশি, এই ভেবে আবুল তৃপ্তির ঢেকুর তুলবে কিনা বড় প্রশ্ন।
বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের চেয়ে এত বেশি এগুনো যে ২০৫০ সালে বাংলদেশ প্রবৃদ্ধির হারে পশ্চিমা দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেলেও বাংলাদেশের অবস্থান উদাহরণের আবুলের মতোই থাকবে।

বাংলাদেশের এ অপার সম্ভাবনার রিপোর্টে যেসব সুত্রের কথা উল্লেখ আছে তা হলো - বিশ্বব্যাংক, লন্ডনের পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান (বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ ও গবেষকের মতামত), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্স কাউন্সিল, অর্থনীতিবিদ জিম ও'নেইল। যদিও এসব সুত্র বিস্তারিত করে বলেনি কীভাবে বাংলাদেশ এমন এগিয়ে যাবে। কিন্তু, বিশ্বের সবচে শক্তিশালী দেশের শক্তিশালী সংস্থা এবং লোকজন বলছে, তাহলে অবাস্তব কোথায়?

এখানে মনে পড়ে গেল - জন পার্কিন্সের 'দ্য কনফেশন অফ অ্যান ইকনোমিক হিটম্যান' বইটির কথা। বাংলায় বইটি অনুবাদ করা হয়েছে - 'এক অর্থনৈতিক ঘাতকের স্বীকারোক্তি' শিরোনামে। বইয়ের ব্যাক কাভারে যেমন বলা আছে - "জন পার্কিন্স ছিলেন আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত 'মেইন' নামের একটি কনসাল্টিং ফার্মের কর্তাব্যক্তি। সংস্থাটি বিশ্বের দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোকে বিপুল অংকের উন্নয়ন ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রলোভিত করতো। সে সাথে সংস্থাটি এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ যাতে আমেরিকান কোম্পানীগুলো পায় সেটাও সুনিশ্চিত করতো। যখন ঋণগ্রহীতা রাষ্ট্রগুলো ঋণের কারাগারে চিরবন্দী হতো তখন যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশের কাছ থেকে নিজের স্বার্থ আদায় করতো। আর যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ মানেই প্রাকৃতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ, সামরিক সহযোগিতা ও রাজনৈতিক সমর্থন।" মোট ৩৫ অধ্যায়ের বইতে পার্কিন্স লিখেছেন কীভাবে ইকুয়েডর, ইন্দোনেশিয়া, পানামা, সৌদিআরব, ইরান, কুয়েত, কলম্বিয়া, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশে বানোয়াট অর্থনৈতিক প্রতিবেদন তৈরি করে রাষ্ট্রের প্রভাবশালীদের যোগসাজশে আমেরিকা তার সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে। এক্ষেত্রে কতো কতো রাষ্ট্রপ্রধান রহস্যজনকভাবে খুন হয়ে গেছেন। নিজেকে অর্থনৈতিক ঘাতক উল্লেখ করে পার্কিন্স লিখেছেন - "অর্থনৈতিক ঘাতকরা মোটা অংকের বেতনপ্রাপ্ত পেশাদার। এদের কাজ হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে ধাপ্পা দিয়ে লক্ষ কোটি ডলার চুরি করা। একাজে এদের মূল অস্ত্র হচ্ছে ভুলতথ্যপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রতিবেদন, পাতানো নির্বাচন, ঘুষ, চাপ প্রয়োগ, যৌনতা ও হত্যা।"

প্রথম আলোয় প্রকাশিত রিপোর্টের ১ম পথে বিশ্বব্যাংক বলছে - ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার সব ধরণের সুযোগ আছে। অন্য খবরে প্রকাশ, বিশ্বব্যাংকের মতোই আরেকটি প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান আইএমএফ সমান ছয়/সাত কিস্তিতে বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার দেয়ার কথা, যার প্রথম কিস্তি পাওয়া গিয়েছিল গত বছর এপ্রিলে। জানা গেল - এই ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেছে। বাংলানিউজ লিখেছে - "ঢাকায় সফরকালে প্রতিনিধি দলটি যে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করেছে এর মধ্যে রয়েছে -রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আধুনিকায়ন, ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন, সরকারের ব্যাংক ঋণ পরিস্থিতি, নতুন মূসক আইন, সর্বশেষ বাজেট পরিস্থিতি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন পরিস্থিতি, সরকারের ভর্তুকি কমিয়ে আনা, ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ, অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় হ্রাস, ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও এর আলোকে বাজেটের বরাদ্দ ব্যয়, মূদ্রানীতি বাস্তবায়ন অগ্রগতি ইত্যাদি।"
বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি হবে কি হবে না এ নিয়ে সরকারের সাম্প্রতিক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, বিপরীতে বামপন্থী দলগুলোর হরতাল হুমকি - সাম্প্রতিক সপ্তাহে ছিল উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এরপরও গত ৭ ডিসেম্বর প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে - জানুয়ারিতে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাচ্ছে বাংলাদেশ।
কিন্তু, আইএমএফের শর্তগুলো না মানলে কি দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়া যাবে?
বিশ্বব্যাংক যেমন 'সুযোগ' এর লোভ দেখাচ্ছে, প্রথম আলোও গতকালের রিপোর্টের শেষ দিকে প্রশ্ন রেখেছে - "প্রশ্ন হচ্ছে, সুযোগ কি কাজে লাগাতে পারবে বাংলাদেশ?"

সুযোগের টোপ আর শর্ত বাস্তবায়নের পরিণতি কী হতে পারে তার ইতিহাস জন পার্কিন্সের বইতেই লেখা আছে। প্রথম আলোর ৭ ডিসেম্বরের প্রতিবেদন, আইএমএফের চাপ ও সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ, এবং গতকালের প্রতিবেদন তিনটিকে পাশাপাশি রাখলে কোনো সুত্র কি একেবারেই পাওয়া যায় না?

প্রথম আলোর এক পাঠকের মন্তব্য:
প্রথম আলোর খবরের নিচের পাঠকদের কমেন্ট অনেক ক্ষেত্রে হাসি তামাশার উপকরণ হয়ে ওঠে। তবে গতকালের প্রধান প্রতিবেদনের নিচে ৩য় মন্তব্য পড়ে মনে শংকা জাগলো। মাইনাস টু থিয়রীর পাশাপাশি পার্কিন্সের বইয়ে উল্লেখিত ইন্দোনেশিয়ার জনপ্রিয় নেতা বান্দুং আর পানামার ওমর তোরিজোর পরিণতির কথা মনে পড়লো।

Md. Mizanur Rahman
২০১৩.০১.০১ ০৩:০৮
প্রতিবেদনটি ৩বার পড়লাম, মন চায় আরো কয়েকবার পড়ি ........... আল্লাহ তুমি আমাদেরকে, কারো মেয়ে, কারো বউ এর হাত থেকে রক্ষা কর।এই প্রতিবেদন সত্যি হবেই হবে ... আমিন ধন্যবাদ প্রথমআলো একটা পজিটিভ প্রতিবেদন দিয়ে বছরটা শুরু করার জন্য


মন্তব্য

সদানন্দ ঘরামী এর ছবি

২য় পথের ক্ষেত্রে, "সামগ্রিকভাবে" বলতে আমি যেটা বুঝলাম, সেটা হলো ঐ ১১টা দেশের জিডিপির যোগফল, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টা দেশের জিডিপির যোগফলের চেয়ে বেশি হবে(২০৩০ সালের হিসেবে)। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ একাই বিশাল কিছু হয়ে যাবে সেটা বলা হয়নি।

রামগরুড় এর ছবি

হুম্ম সহমত, ঐখানে ঐ ১১টা "সম্ভাবনাময়" দেশের কথা বলেছে, শুধু বাংলাদেশ না।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এগুলি আমার কাছে ফাঁকা আওয়াজই মনে হচ্ছে। আর সব থেকে বড় কথা ২০৩০ সালে বা ২০৫০ সালে "পশ্চিমা দেশ"গুলির অবস্থা আসলে কেমন হবে সেটা নিয়ে এখনি মন্তব‌্য করা যায় কি? বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থায় প্রতিদিন এদিক ওদিক হচ্ছে। আগামী কালই যেখানে অনিশ্চিত সেখানে ২০৩০-৫০ গল্প একেবারেই সাধুসন্তুদের হাতে বানানো ‌নওগাঁর কল্কি।

ফাহিম হাসান এর ছবি
রামগরুড় এর ছবি

ভাল বিশ্লেষণ, কিন্তু লেখা হঠাৎ করে মাঝ পথে শেষ হয়ে গেল, আরো বিস্তারিত আছে ভেবে এগুচ্ছিলাম। ঐ রিপোর্ট দেখে আমিও খুব আগ্রহ নিয়ে পড়েছিলাম -- লেখার বিষয়বস্তু অবিশ্বাস্য রকমের পজিটিভ, পড়ে বেশ ভালও লেগেছিল। কিন্তু আসলে ঘটনা কি? দেশে কি এমন হইল যে হঠাৎ করে ঐ সব প্রতিষ্ঠান এইরকম রিপোর্ট বানাইল?

অতিথি লেখক এর ছবি

এ রিপোর্ট তো নতুন নয়, বিশেষ করে ১১টি দেশের সম্ভাবনা বিষয়ক "নেক্সট ইলেভেন" এর ধারনা বেশ আগেই প্রকাশিত হয়েছে। অন্য এক ব্লগে বোধ হয় বছর দেড়েক আগে এ বিষয়ে একটি পোষ্ট দেখেছিলাম। প্রথম আলো সে সকল ধারনা তাদের পত্রিকায় প্রকাশ করেছে মাত্র, অন্যান্য পত্রিকায়ও বেশ গুরুত্ব দিয়েই বিষয়টি প্রকাশ করা হয়েছে। আপনি মূল ধারনা সূত্র গুলো বিশ্লেষন করে কিছু লিখলে সেটাই ভাল হতো।

আব্দুল্লহ এ.এম.

দুর্দান্ত এর ছবি

গোল্ডম্য়ান সাক্স তথা জিম ও'নিলের নেক্স্ট -১১ গপ্পো'র সবচাইতে বড় ফুটোটা হল, এই ১১'র ৪ টা (মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, তুরস্ক) দিয়েই এদের মোট জিডিপির ৭৩% হয়ে যায়। বাকী প্রবৃদ্ধি আর রুজিরোজগারের যেসব তেনা পেচানো হয়েছে, সেইসব বিচারে বাংলাদেশ সবার পিছনে।

তথাপি গোল্ডম্য়ান বলুক আর সিলভারম্য়ান, এগুলো হল স্বপ্ন। এইসব স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটবে শুধু বসুন্ধরা, হলমার্ক আর ডেস্টিনিদের জন্য়। বাংলাদেশ খালেদা-হাসিনা-এরশাদ-আযম যদদিন করে খেতে পারবে, ততদিন আপনার আমার জন্য় বরাদ্দ আছে শুধু কায়দে আযম, জাতির পিতা, শহীদ জিয়া আর পল্লীবন্ধুর স্বপ্ন।

আইলসা এর ছবি

এক এক্স-কলিগের সাথে রির্পোটা নিয়ে কথা কইতাছিলাম মোবাইল মাইরা। আমরা একসময় টেলিকম সেক্টরের বিজনেস এন্যালিস্ট ছিলাম। এখন উনি আছে এনার্জি সেক্টরে। আমরা দুইজনই চেষ্টা করতাছিলাম, রির্পোটা কার উদ্দ‌্যেশ সার্ভ করার জন্য প্রিপেয়ার করা হইছে হেইটা বাইর করতে।

ধরে নেই, রির্পোটে যা বলা হইছে তা সত্য, আমরা আসলেই সব ফাটাইয়া ফেলবো, ইউরোপ-আমেরিকা সব আমাদের পিছে পড়ে যাবে, কিন্তু সেইটা করার জন্য আমাদের লাগবো কি? রির্পোটে কিন্তু সেইটা ও বলা আছে,

বাংলাদেশ এ পর্যন্ত অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যত এগিয়ে গেছে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ততটা এগোতে পারেনি, অনেক পিছিয়ে আছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সুশাসনের চাহিদাও তৈরি হয়। সুশাসনের চাহিদা তৈরি করে যদি ওই দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, তাহলেই কেবল বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক শক্তির কথা বাইরে বলা হচ্ছে, সেই শক্তি কাজে লাগাতে পারবে। বাংলাদেশ নিয়ে যে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে, তা সফল হবে।

সুতরাং আমাদের দরকার সুশাসন
কিন্তু প্রশ্ন হইলো সুশাসনটা আসবে কেম্নে? সহজ, যেইখানে সুশাসন আছে, তাদের কাছ থিকা ধারে আনমু। যথা উন্নত বিশ্ব- তারা চৌদ্দ পুরুষ যাবত সুশাসনের ব্যবসায় আছে। সুতরাং তারা সুশাসনটা পাঠাইয়া দিবে। তবে বিনিময়ে তাদের তো কিছু দিতে হবে। আমরা শুধু সুশাসিত ব্যবস্থায় আমেরিকান এবং ইউরোপিয়ান কোম্পানিকে কন্ট্রাক্ট গুলা দিয়ে দিবো। সো সুশাসন চলে আসলো, এবং তারাও কিছু মুদ্রা পাইলো।

একটা বেলাইনের কথা, "সেই সময়" উপন্যাসে একটা লাইন ছিলো অনেকটা এরকম, এক গরিব মেয়েকে খুন করার অপরাধে এক ধনীর দুলালের ফাসি হয়- তাতে ভারতবাসী জনতা ব্রিটিশদের ন্যায়পরায়নতায় বিশাল খুশ; কিন্তু প্রয়োজনের সময় ব্রিটিশরা যে আইন-আদালতরে "টেবিলে" বসাইয়া "মেশিন" চালাইয়া দেয়- সেইটা বুঝতে জ্ঞানী ভারতীয়দের কিছু সময় লাগছিলো এরাউন্ড ২০০ বছর। সুতরাং সাপ্লাইকৃত সুশাসনটা ক্ষেত্র বিশেষে যে "লইট্যা" মাছ খাইতে যাবে- তা বলাই বাহুল্য।

যাহোক, লাইনে আসি, আমেরিকান ইউরোপিয়ান কোম্পানিরা কন্ট্রাক্ট নিয়া, ঢাকারে ব্যাংকক বানাইয়া দিলো। এতে দরিদ্র লোকজনের দারিদ্র্য ধরে নিলাম কমবে, কিন্তু বৈষম্য নিশ্চিতভাবে বাড়বে। তা যাহোক গরিব মরলে কার কি শুধু আবেদ সাহেব আর ইউনুস ভাই একটু মার্কেট শেয়ার হারাবে। কিন্তু কন্ট্রাক্টই কী মধু যার জন্য এই রির্পোট- আমার এবং আমার এনালিস্ট কলিগের মতে, কন্ট্রাক্ট হচ্ছে জাস্ট বার্থ-ডে-কেকের উপরের ফুল। কেকটা হইলো চায়না

২০২২ সালেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ হবে চীন। বড় অর্থনীতির দেশ হবে ভারতও।

এইটা আমেরিক এবং ইউরোপীয় সভ্য সমাজ কেম্নে সহ্য করে!!! সুতরা চায়নাতে কেরা বেরা লাগাইতে হবে। এইজন্য মায়নমারে পেনিট্রেশন শুরু হয়া গেছে। উপরি হিসেবে মায়নমারে আবার প্রচুর রির্সোস। আর সভ্যতা এবং সুশাসনে লাইসেন্সধারীরা কখনোই ওয়ান ম্যান/ ওয়ান প্লানে বিশ্বাস রাখেনা, এরা ইউনুসরে ও রাখে আবেদরে ফুন দেয়। জিয়ারে ও কইছে খাল কাটো, এরশাদরেও কইছে কুমির চাষ করো। এরা গনতন্ত্রের সৈনিক এবং সাদ্দামের অস্ত্র সাপ্লায়ার।

সো, মায়নমার দিয়া চায়নারে ধরার জন্য তারা প্রস্তুত কিন্তু যদি মায়নমার বেকে বসে, তখন বাংলাদেশ থাকলো। ওহ কতগুলা খবর এম্নি এম্নি সিরিয়ালি লিখলাম

১. বাংলাদেশ কক্সবাজারে একটা বিমান ঘাটি প্রস্তুত করতেছে
২. আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মায়নমার ঘুরে গেছে
৩. চায়না বাংলাদেশে ডীপ-সী-পোর্ট বানাইয়া দিতে আগ্রহী। অবশ্য সম্পূর্ন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে
৪. আমেরিকা মনে করে বাংলাদেশ "সুশাসন" পাইলে, চান্দে চলে যাবে। এইটা লেটেস্ট

নেক্সট বাংলাদেশের অফসোরে চায়না কোম্পানির বিড করা... এ্যাটলিস্ট চাইনিজ কন্ট্রাক্টর আসা।

বাই দ্য ওয়ে, রির্পোটের শেষ অংশে কিন্তু বলা হইছে,

যুক্তরাষ্ট্রের সানডিয়া ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিজ মার্কিন জ্বালানি বিভাগের জন্য কাজ করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, সুপেয় পানির প্রাপ্যতা, মাথাপিছু ভূমির ব্যবহার, জনস্বাস্থ্য ইত্যাদি বিবেচনায় ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর একটি তালিকাও তারা দেশটির প্রেসিডেন্টের জন্য তৈরি করেছে। বর্তমান তালিকায় এ রকম ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১তম। আর ২০৩০ সালে বাংলাদেশ থাকবে ১৫তম অবস্থানে। সুতরাং বলা যায়, বিশ্বজুড়ে এত আশাবাদের মধ্যেও বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিও কম নেই।

সুতরাং আপনি যদি "সুশাসনের" পথে না আসেন কী হবে বলা আছে, পরে শ্যাম কাগুরে দোষ দিয়েন না।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক
দারুণ পর্যবেক্ষণ
লোভ আর ভয়... এই দুটো দিয়েই জয় করতে হয়... খুব পুরাতন থিউরি...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ফারুক হাসান এর ছবি

কথা হচ্ছে, বাংলাদেশকে নিয়ে এত হৈচৈয়ের মূল কারণটা কি?

হিমু এর ছবি

এ সবই ভ্যাসলিন।

সাফি এর ছবি

লেখাটায় শিরোনাম দেখে আনন্দিত আবার স্কেপটিক ও হয়েছিলাম। মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার মাপকাঠি বা এই লক্ষ্যে যেতে বাংলাদেশের বর্তমান পদক্ষেপ নিয়ে তেমন কিছু না পেয়ে অবাক হয়েছি। আর বাকীদুটো তুলনা আমার কাছে বাস্তবানুগ লাগেনি। ১১জন মিলে উন্নতি করে অন্য ১১ জনকে টেক্কা দিলে তাতে ১জনের অবদান নগণ্য হতেই পারে - এই নিয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার কিছু পাইনি।

দিগন্ত এর ছবি

গার্ডিয়ানের ঠিক কোন রিপোর্টের ভিত্তিতে লেখাটা প্রথম আলো দিয়েছে সেটা জানতে পারলে ভাল হত। আমি খুঁজে পেলাম না। তবে নেক্সট ইলেভেন রিপোর্ট পড়েছি। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পথ নিয়ে লেখা ঠিকঠাক হয়েছে। কিন্তু এর সাথে পরের অংশের খুব একটা যোগ নেই।

শর্তসাপেক্ষ ঋণ পুরোনো দিনের অধীনতামূলক চুক্তির মতই একটা বার্গেইনিং পিল - যা খেয়ে হজম করা ছাড়া গতি না থাকলে নেওয়া উচিত না। দক্ষিণ কোরিয়াকেও অর্থনৈতিক ধ্বসের পরে এই পিল হজম করতে হয়েছে কিন্তু তাদের নীতি-নির্ধারকেরা দ্রুত ঋণ শোধ করে নিজের পথে আবার পা বাড়িয়েছে। বাংলাদেশকেও উপায় না থাকলে পিল খেতে হবে, কিছু করার নেই। অন্য কেউ যে শস্তায় ঋণ দিচ্ছে এমন হলে অন্য কিছু ভাবা যেতে পারে - কিন্তু সেরকম কিছু আমি দেখছি না। বিকল্প পথ নিয়ে না লিখলে কি করে জানব যা হচ্ছে তা খারাপ?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দ্রোহী এর ছবি

আপনারা খারাপ লোক, দেশের ভাল চান না! আলুর ভালু ভালু কথা শুনেও সন্দেহ করেন!

পথের বাধা সরিয়ে দিন, দেশকে এগোতে দিন।

সালাহউদ্দীন এর ছবি

বাংলাদেশ যদি ৬% প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারে ২০৩০ পর্যন্ত তবে জিডিপিতে অনেক ইউরোপিয়ান দেশকে ছাড়িয়ে যাবে এটা গাণিতিক ভাবেই বোঝা যায়। সাথে যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকে তবে অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রেই অনেক ভালো অবস্থানে যাবো আমরা। যা অনুমান করা হয় তা যে সব সময় সত্যি হয়না তা তো অবশ্যই তবে ২০৩০ নাগাদ ভারত আর চীন যে শীর্ষে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই তা সে ইউরোপ আমেরিকার ভালো লাগুক আর নাই লাগুক। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে সামরিক সামর্থ্য বাড়াতে হয় আর ঠিক সেই কাজটাই করছে ভারত আর চীন; সুতরাং মায়ানমারে এসে আমেরিকা চীনের সাথে কিছু করে উঠতে পারবে বলে মনে করিনা। সামনের দিনগুলি হবে প্রাচ্যের।

abuayesha এর ছবি

প্রথম আলোর বছরের প্রথম প্রপাগান্ডা
এই পত্রিকার কাজই হল সকল অন্যায় অত্যাচার দূর্নীতিকে আড়াল করে বোকা বাঙ্গালীকে ভুলিয়ে রাখা - যা দেশের গরীব মানুষের সাথে সরাসরি প্রতারণা। হিসাবটা সোজা, কাউকে কোটি টাকা মুলা ঝুলিয়ে দিয়ে বলা হল দু চার লাখ টাকার আর কিইবা মুল্য।

কাজি মামুন এর ছবি

বাংলাদেশকে নিয়ে বাইরের দুনিয়ায় অনেক দিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। সুশাসনের মারাত্মক ঘাটতি থাকা সত্বেও বাংলাদেশ এতটা এগোল কি করে (যা প্রচলিত অর্থনৈতিক তত্বকে কন্ট্রাডিক্ট করে), হইচইটা মূলত তাকে ঘিরেই। অনেক গবেষনা/বিশ্লেষনের পর যা বেরিয়ে এসেছে, তা হল, বাংলাদেশের জনসংখ্যাই (যাকে অনেকদিন যাবৎ অভিশাপ হিসেবেই চিহ্নিত করা হত) এই আশ্চর্য ঘটনার জন্মদাতা। তাদের ঘাম ও শ্রমেই গড়ে উঠেছে এই আলোচিত উন্নয়নের প্রাসাদ।
আপনার লেখায় যে সন্দেহগুলো তুলে এনেছেন, তার জন্য ধন্যবাদ। আমাদের সুযোগ অবশ্যই রয়েছে, তবে পথ চলতে গিয়ে সাবধানী হওয়া দরকার। সে ক্ষেত্রে আপনার সন্দেহগুলো মাথায় রাখা ভাল।
তবে আবুল-বাবুলের তুলনাটা গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি আমার কাছে। যখন একটা লং টার্মের জন্য প্রজেকশান করা হয়, তখন রিলেটিভ গ্রোথ ফ্যাক্টরটি মাথায় রেখেই করে হয়। যদি অ্যাবস্যোলুট গ্রোথের কথাই বলা হয়, তাহলে তো বলা যায়, এখনই চীন-ইন্ডিয়া দাঁড়িয়ে সব দেশ ছাড়িয়ে।
আর 'সামগ্রিকভাবে' কথাটির ব্যাখার ব্যাপারে আমি প্রথম মন্তব্যকারী সদানন্দ ঘরামীর সাথে একমত।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।