বিদায়, ২০১৩

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: মঙ্গল, ৩১/১২/২০১৩ - ৮:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আরো একটা বছরের শেষ দিন আজ।
দিনগুলো হয়তো একই রকম, কিন্তু ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টানোর নিরিখে পেছন ফিরে তাকাই কেমন গেলো এ বছর, কিংবা কী চাই আগামী বছরে।
এ বছরের প্রথম সপ্তাহে এক পোস্টে লিখেছিলাম, “মর্ণিং শো'স দ্য ডে যদি সত্য হয় – ২০১৩ সালের ঢাকামেট্রো লাইফ রাজনৈতিক সহিংসতা আর হরতালে ভরপুর হবে। নির্মানাধীন ফ্লাইওভারগুলো চালু হলে যানজটের মাত্রা কমবে এটাই আশা।“
বাস্তবে খুব ব্যতিক্রম হয়নি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে হরতাল অবরোধ ছিল প্রায় সারা বছর।

শেষের দিকে এক মাস তো মনে হলো জীবন থেকে কেউ কেড়ে নিলো! আশা যেটা করেছিলাম সেটা, ফ্লাইওভারগুলো চালু হওয়ায় কেমন আরাম হয়েছে সেটা মিরপুর-উত্তরা রুটের যাত্রীরাই কেবল জানেন!

ব্যক্তিগত –
২০১৩ সাল নিয়ে ভাবলে আমার মনে হয়, কেবল আলস্যেই কাটালাম। কতো কিছু করা যেতো, সেসব ভেবে আফসোস করা করা ছাড়া কিছুই হয় না।
বছরের প্রথম দিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, "২০১৩ সালে - ৫০ টা ভালো বই পড়তে চাই। ২৫ টা ভালো ম্যুভি দেখতে চাই। মনোযোগ সহকারে ১০০ গল্প পড়তে চাই। ৩ টা বড়গল্প লিখতে চাই। সচলায়তনে ৫০ টা পোস্ট দিতে চাই।"
কোনোটাই পূর্ণ হয়নি। পরে বইয়ের বিশাল লম্বা এক তালিকা করেছিলাম, পড়বো। তার অর্ধেকও শেষ হয়নি। এ বছর পড়া বইগুলোর মধ্যে ভালো লেগেছে, আবুল বাশারের ফুলবউ আর হতাশ করেছে ম্যালকমের নতুন বই ডেভিড অ্যান্ড গোলিয়াথ। ফুলবউ আগে পড়ার চেষ্টা করেছিলাম, বেশ কয়েকবার। আগাতে পারিনি। এবার এক হরতালের ফাঁদে পড়ে পড়লাম। ভালো লেগেছে, হারুকি মুরাকামির কাফকা অন দ্য শোর’ও। আকবর আলি খানের আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি সুখপাঠ্য ছিল। ১৯৯৭ সালে দৈনিক জনকন্ঠের ঝিলিমিলি পাতায় ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়েছিল মঞ্জু সরকারের কিশোর উপন্যাস ‘নান্টুর মেলা দেখা’। সে সময়, কোনো এক কারণে, মাঝের এক সপ্তাহ পড়তে পারিনি, পত্রিকাও খুঁজে পাইনি। ফলে, নান্টু মেলায় হারিয়ে কীভাবে মনা ভাইর বাড়িয়ে উঠলো সে অধ্যায় অজানা রয়ে গিয়েছিল। অবশ্য, কল্পনায় অনেক অনেক সম্ভবনা পাঠক মনে নিজেই তৈরি করেছিলাম। প্রায় তিন মাস ধরে, সপ্তাহান্তে পড়া উপন্যাসটি মনে মাথায় গেঁথে গিয়েছিল। এবছর রকমারি থেকে অর্ডার করে আনালাম, নান্টুর মেলা দেখা। ৬৪ পৃষ্ঠার বই, এক বসায় পড়ে ফেললাম, কিন্তু বারবার মনে পড়ছিল সেই প্রথমবার পত্রিকায় পড়ার দিনগুলোর কথা, পরের সপ্তাহের অপেক্ষার স্মৃতি। ঘ্রাণ।
একই রকম হয়েছে, জাহানারা নওশীনের ‘উজালপুরের অর্কেস্ট্রা’ নিয়ে। ২০০৪ এ ভোরের কাগজ ঈদ সংখ্যায় ছাপানো বইটি কেন যে ভালো লেগেছিল বলতে পারি না। এটাকেও কিশোর উপন্যাস বলা যায়। তবে প্রায় ৯ বছর পরে আবার পড়েও হতাশ হইনি। দারুণ লেগেছে।

সেবা প্রকাশনীর অনেক পুরনো বই এখন অনলাইনে পিডিএফ পাওয়া যায়। সেবা যেহেতু রিপ্রিন্ট করে না, তাই পিডিএফ-ই ভরসা। সেবার বই পড়েছি বেশ কিছু। আবার-পড়েছি ‘তিন মিনারে খুন’। সেবার এখনকার অনুবাদ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করতে শুনি প্রায়ই। এ বছর পড়া, ইসমাইল আরমানের অনুবাদে রাফায়েল সাবাতিনির ‘দ্য সী হক’ পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। সাবলীল অনুবাদ।

তবে, যত বই পড়েছি সংখ্যায় তার সমপরিমাণ বই না-পড়া রেখে দিয়েছি। হয়তো আর পড়া হবে না। ই-বুকে সুলভ হওয়ায় অনেক বিদেশী বই ডাউনলোড করে পড়া শুরু করি, কিন্তু ই-শেলফে বইয়ের সংখ্যা এত বেশি হয়ে যায় যে একটায় মনোযোগ রাখা কষ্ট। এক বই কয়েক পাতা পড়ে আরেক বই পড়া শুরু করি। মুনতাসীর অয়নের একটা কথা ভালো লেগেছে, নন-ফিকশনে একই বিষয় কেবল ফেনায় ফোলায়। নন ফিকশন বইগুলো আরো ছোটো করে লেখে না কেন তা ভাবি। অনলাইনে নিউজ আপডেটের কারণে, ছাপা পত্রিকা পড়ার হার কমে গেছে এ বছর। তবে ভালো মানের সাপ্তাহিক পত্রিকার অভাব বোধ করি। সেবার রহস্য পত্রিকা পড়েছি নিয়মিত। বাজার থেকে পুরনো সংখ্যা কিনেছি, অনলাইনেও পাওয়া যায় কিছু। তবে, স্যাটায়ার পত্রিকার অভাব পূরণ করেছে মতিকন্ঠ।

এ বছর বাংলা ইংরেজী মিলিয়ে সিনেমা দেখেছি ডজন খানেক। তবে, সময় নষ্টই মনে হয়েছে বেশি। Ted, Beginner আর Now You See Me কিছুটা ভালো লেগেছে।

হরতাল অবরোধ আর ছুটিতে টেলিভিশনে চোখ রেখেছি বেশি। চ্যানেলগুলো সিগনেচার প্রোগ্রাম করতে পারছে না। এন্টারটেইনমেন্ট চ্যানেল টাইটেলে আসারাও সংবাদে ঝুঁকছে। একই রকম টক শো, বিজ্ঞাপন, আকর্ষণহীন ধারাবাহিক নাটক...। তবে ৭১ টিভি টক শো’তে অন্যদের চেয়ে আলাদা মনে হয়েছে। ঈদের অনুষ্ঠানে চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর বিভিন্ন ক্ষেত্রের ৭০ জন মানুষের জীবন নিয়েই ঈদের অনুষ্ঠান করেছে গত অক্টোবরে, এটা ব্যতিক্রম ছিল বেশ।

এফ এম রেডিও সংখ্যায় এখন এক ডজন। কিন্তু, আগের মতো শুনি না। রেডিও চ্যানেলগুলো একঘেঁয়ে। বাংলাদেশ বেতারের এফএম শুনি সময় পেলে। ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলাম – “চলতি পথে এফএম ৯৭.৬ এ বাংলাদেশ বেতার শুনি। পুরনো দিনের, স্মৃতির ঘ্রাণ তো আছেই, সাথে এটাও বুঝতে পারছি - জনসংখ্যা, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে গ্রামীণ-শ্রোতাদের টার্গেট করে দারুণ সব অনুষ্ঠান হচ্ছে। প্রাইভেট রেডিও চ্যানেলে আরজেদের খলবলানি, আর পোলাপাইনের মন খারাপ, জান্টু ফোন রিসিভ করছে না টাইপ এসএমএস দিন শেষে ফালতু ব্যাপার। গণ মাধ্যমের ভূমিকা বিচার করলে মান বিচারে বাংলাদেশ বেতারের ধারে কাছেও অন্য এফএমগুলা যেতে পারছে না।“

২০১৩ সালের বাংলাদেশে আলোচিত ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে। কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের দায় মোচন শুরু হয়েছে। তীব্র আন্তর্জাতিক চাপ এবং বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মধ্যেও নির্বাচনী ওয়াদাটি রেখেছেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও খানিক আস্থা হারিয়েছি ৪ ব্লগার গ্রেপ্তারের পর। অনলাইনে লেখালেখির ওপর নজরদারির ইতিহাসে এটি খুব খারাপ একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। যেমন হয়ে গেছে মোহাম্মদ আশরাফুল।

রানা প্লাজা ধ্বসে মারা গেছে হাজারের ওপরের মানুষ, পঙ্গু হয়েছে সমপরিমাণ। কত কত নিরাশার মাঝেও আশা জাগায় গণজাগরণ মঞ্চ, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। সজল খালেদের না ফেরার পাশাপাশি সংগ্রাম করে টিকে থাকে আমাদের সিমন, সচল শাহেনশাহ। তীব্র মনোবলের এই সচল বন্ধুটি আগামী বছর পূর্ণ মাত্রায় শারীরিকভাবে সচল হোক, এ কামনা করছি। ফাইটার সিমনের মনোবল অমর হোক।

প্রসঙ্গ অনলাইন-
একটু আনিসুলপনা করি শুরুতে। গত পাঁচ বছর, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ এলেই একটা আক্ষেপ জেগে ওঠে। তীব্র ইচ্ছে করে, ২০০৮ সালের শেষে দেয়া এমন একটা সালতামামী পোস্ট দিই। কিন্তু, সারা বছর নিয়মিতভাবে একনিষ্ঠ মনোযোগ না রাখায় এরকম রিভিউ দেয়া হয় না। ব্যস্ততা জীবনের অর্ধেক খেয়েছে। ফেসবুক খেয়েছে অনলাইন। বাকীটুকু আলস্য।

সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ, রাজনৈতিক উত্তাপ সব কিছু মিলিয়ে কেমন যেন একটা ২০০৬ সালের শেষের দিকের ঘ্রাণ পাই নাকে। বাংলা কম্যুনিটি ব্লগের বয়স তখনো বছর পার হয়নি। তুমুল গতিতে ব্লগিং করছিলাম আমরা। ছাপানো মাধ্যমের সম্পাদকীয় কাঁচির ভয় নেই, তাই কেবল পোস্ট নয় – মন্তব্যের ঘরেও জমতো দূর্দান্ত সব আলাপ। বুঝি, এখন ব্লগের মেজাজ – ধাঁচ - সময় বদলিয়েছে। যারা লিখতেন, তাদের অনেকেই ব্যস্ততা কিংবা ইচ্ছার অভাবে লিখছেন না। নাম উল্লেখ করলে, লম্বা হবে সে তালিকা। ২০০৭ এর সচলসংখ্যানে চোখ বুলানো যায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, গল্প, সমকালীন চিন্তা; এসব বিষয়ে পুরনো সচল যারা লিখতেন, সবাই কেমন যেন কী-বোর্ড চাপতেই আগ্রহ পাচ্ছেন না।

আমার ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা বলে, বাংলা ব্লগ জগতের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি করেছে ফেসবুক। হুট করে কিছু একটা মাথায় আসলো – ফেসবুকে লিখে দিলাম, লাইকের পর লাইক, কমেন্ট, শেয়ারিং, ফলোয়িং – মিনিট না, সেকেন্ডের ব্যাপার। সে তুলনায় ব্লগে লেখা, কিছুটা পরিশ্রমের কাজ। ভাবতে হয়, কিছুটা হলেও গুছিয়ে লিখতে হয়, কমেন্টে অংশ নিতে হয়। অনলাইন জগতের বাসিন্দারা তাই ফেসবুকেই সময় দিচ্ছেন বেশি। ফেসবুক আবার সেলিব্রিটি বানায়। এক একজন সেলিব্রিটির হাজার হাজার ফলোয়ার, এক স্ট্যাটাসে হাজার হাজার লাইক, শত শত কমেন্ট। ফেসবুক ৪০ মিনিটের প্যাকেজ নাটক আর বাংলা ব্লগ যেন দিনদিন মঞ্চ নাটক হয়ে উঠছে। পার্থক্যটা বোধ হয় এখানেই যে আট বছর আগে বাংলা ব্লগে যুদ্ধাপরাধের দাবী নিয়ে যে ব্লগার পোস্ট দিয়েছিলেন সেটা এখনো গুগলে সার্চ করে ফেসবুকে শেয়ার করা যায়, কিন্তু ফেসবুকে আপনার দেয়া স্ট্যাটাস, আলোচনা সমালোচনাগুলো ক্রমশঃ ফেসবুকের তলানীতেই হারিয়ে যায়। সচলায়তনের শুরু থেকে যারা ছিলেন, নিজেকেও সে তালিকায় যুক্ত করে – এবং না লেখার দায়ভার কাঁধে নিয়ে, পুরনো সব সচলকে বদ্দা সুমন চৌধুরীর ভাষায় বলি, “না লিখতে না লিখতে একসময় লেখার অভ্যাসটাই হারিয়ে যায়। তাতে ক্ষতি লেখকের নিজের ছাড়া কারো না। কারণ লেখকের সংখ্যা হু হু বেড়ে চলছে এবং সেটা বাড়তেই থাকবে। যারা লিখতে থাকবে তাঁদের কথাগুলি বলা হতে থাকবে। যারা লিখবে না তাঁদের কথাগুলি বলা হবে না। বিষয়টা ঠিক এরকমই সহজ।"

তাই সচলায়তনে, ২০১৪ সালে আবার পুরনো সচলদের দেখতে চাই। ফেসবুকের প্রভাবকে মেনে নিয়েই, আসুন মাসে দুইটা পোস্ট আর বিশটা কমেন্ট করার সময় এবং ইচ্ছাটুকু আমাদের ফেসবুক থেকে সরিয়ে সচলায়তনে দিই। আসুন, সচলে নতুন নতুন অনেকেই লিখছেন, তাদের লেখা পড়ি, কমেন্ট করি। পুরনো স্লোগান স্মরণ করি, ‘সচল থাকুন, সচল রাখুন’। কারণ, সচলায়তন যে আদর্শ এবং চিন্তার প্ল্যাটফর্ম, তার বিপরীত শক্তি এখন অনলাইনে অনেক তৎপর। তাই, কোনো যুদ্ধাপরাধীর ছবি চাঁদে দেখা সম্ভব নয়; এর স্বপক্ষে আমাদেরকেই লিখতেই হবে। পুরনো শকুনের ডানা মেলা আর মানুষ পুড়িয়ে মারার দিনগুলি নিয়ে আমাদের গল্প-চিন্তা-দিনলিপি ইতিহাস ধরে রাখবে অন্তর্জালে।
এই মুহূর্তে এটা খুব দরকার।

শুভ হোক, কল্যাণময় হোক – ২০১৪।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

২০১৩ সাল অনেকের জন্যে নিজেকে চেনা আর চেনানোর বছর হয়ে থাকবে। স্লোগান দিতে গিয়ে অনেকে হঠাৎ নতুন মানুষজন চিনতে শিখেছেন, স্লোগান দিতে গিয়ে বুঝতে শিখেছেন, কে ভাই, কে দুশমন। সময়ের সাথে আস্তে আস্তে চালে আর কাঁকরে মিশে মিশে আমাদের ভাণ্ডার বেড়ে উঠছিলো, সেখানে হঠাৎ একটা নাড়া দিয়ে গেছে শাহবাগ। আগামী বছর এবং আগামী বছরগুলো আমাদের এই উপলব্ধিকে দীর্ঘস্থায়ী করুক।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

অসাধারণ মন্তব্য! চলুক

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

চলুক

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

অ্যাঅ্যাঅ্যাত্তোদিন পরে একটা মন্তব্য করলাম, সেটাও লাফাং হলো! (-_-)

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আবার! মন খারাপ

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

এক লহমা এর ছবি

"আগামী বছর এবং আগামী বছরগুলো আমাদের এই উপলব্ধিকে দীর্ঘস্থায়ী করুক।" চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ওডিন এর ছবি
ওডিন এর ছবি

২০১৩ তে বেশি সুবিধা কর্তে পারি নাই, বাট আই উইল বি বেক। ২০১৪ তে লিইখ্যা ফাটায়ালামু! দেঁতো হাসি

তাসনীম এর ছবি

২০১৪ সালে অন্তত ১০ টা পোস্ট দেব সচলে - এটা নববর্ষের প্রতিজ্ঞাতে আছে।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

হাসিব এর ছবি
  • গুনে গুনে পোস্ট দেবার দরকার পড়ে না। একটা ইস্যু সামনে পড়লে ফেইসবুকটা বন্ধ করে ঘন্টাখানেক সময় দিলেই একটা পোস্ট লিখে ফেলা যায়।
  • ফেইসবুকের সেলিব্রেটি সিনড্রোম খুব পীড়াদায়ক। এটা খুব দৃষ্টিকটু যে একেকজন সেলিব্রেটি আবার অন্য ভালো লেখকদের ব্লগে প্রকাশিত এরকম ভালো লেখা শেয়ার দেন না।
  • সবগুলো ব্লগে পুরনো ব্লগারদের সংখ্যা গুনতে গেলে সবগুলো ব্লগ মিলিয়ে ১০/২০ জন পাওয়া যাবে। এদের কতোজন নিয়মিত ব্লগে সময় দেন সেটা গুনতে গেলে ঠগ বাছতে গা উজাড়ের মতো দশা হবে। আতঙ্কের বিষয় পুরনোদের রিপ্লেস করার মতো নতুন ব্লগার পাওয়া যাচ্ছে না। এটা সচলায়তন স্পেসিফিক সমস্যা না, গোটা ব্লগ জগতের সমস্যা।
  • ব্লগে রিগোরাস গবেষণামূলক কাজ হওয়া দরকার। এই ভ্যাকুয়ামটার আফসোস অনেকদিন থেকেই আছে আমার। এই আফসোসটা নিয়েই নতুন বছর শুরু করতে হবে।
শব্দ পথিক এর ছবি

চলুক

----------------------------------------------------------------
''বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!''-সুকান্ত ভট্টাচার্য

এক লহমা এর ছবি

"ব্লগে রিগোরাস গবেষণামূলক কাজ হওয়া দরকার।" চলুক
এই ধারা যদি গড়ে ওঠে আর চালু থাকে কি চমৎকার যে হবে!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

শব্দ পথিক এর ছবি

সচলায়তনে নতুন সদস্য আমি, পোস্ট-কমেন্ট মিলিয়ে ইস্যু স্পেসিফিক আলোচনায় সবসময় সচলের পাশেই থাকবো আশা করি।

----------------------------------------------------------------
''বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!''-সুকান্ত ভট্টাচার্য

এক লহমা এর ছবি

চলুক
"পুরনো স্লোগান স্মরণ করি, ‘সচল থাকুন, সচল রাখুন’। কারণ, সচলায়তন যে আদর্শ এবং চিন্তার প্ল্যাটফর্ম, তার বিপরীত শক্তি এখন অনলাইনে অনেক তৎপর। তাই, কোনো যুদ্ধাপরাধীর ছবি চাঁদে দেখা সম্ভব নয়; এর স্বপক্ষে আমাদেরকেই লিখতেই হবে। পুরনো শকুনের ডানা মেলা আর মানুষ পুড়িয়ে মারার দিনগুলি নিয়ে আমাদের গল্প-চিন্তা-দিনলিপি ইতিহাস ধরে রাখবে অন্তর্জালে।
এই মুহূর্তে এটা খুব দরকার।"
খুব দরকার।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আপনার পোস্ট বছরশেষে লগ-ইন করালো, যত কম পোস্ট আর মন্তব্য করেছি ২০১৩তে তার কিছুটা ভার লাঘব করি শেষে একটা মন্তব্য করে, তাই ভাবলাম! তো মন্তব্য দেখি দুই দুইবার লাফাং হয়ে অন্যত্র চলে গেলো!

বছর অত্যন্ত বাজে গিয়েছে, নিজের, পরিচিতদের, সবখানেই খারাপ খবরই বেশি পেয়েছি। ব্যক্তিগত জীবনে যাই হোক, দেশের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়েছি বারবার। আমার থেকে আমার দেশের সাধারণ মানুষ, পরিশ্রমী খেটে খাওয়া মানুষ অনেক বেশি সাহসী সেই প্রমাণ পেয়েছি। দেশের তরুণরা এখনো জেগে আছে সেটা নিজে উপলব্ধি করেছি আরেকবার। খারাপের মাঝে ভালো ছিলো সেগুলোকে স্মরণে রেখেই তাই আনলাকি থার্টিনকে বিদায় জানাতে আগ্রহী। খারাপটাতেই ফোকাস করে থাকলে সামনে আগানো যায় না, One needs to count one's blessings. এ বছর ঘুরেফিরে মনে হয়েছে আমার প্রথম ব্লেসিংস আমি বাংলাদেশে জন্মেছি!

আর বাই দ্য ওয়ে, আমি ৫০টা বইয়ের টার্গেট ঠিক করেছিলাম মধ্য ২০১৩-তে, আমার ৫০টা শেষ, ৫৩ নং চলছে সম্ভবত, আজকে রাতেই শেষ করে ফেলবো আশা রাখি! দেঁতো হাসি
সব থেকে ভালো লেগেছে Cloud Atlas, Pickwick Papers আর The Sweetness at the Bottom of the Pie. না পড়ে থাকলে পড়ে ফেলেন, বিশেষ করে প্রথমটা।
আর ব্যক্তিগত অ্যাচিভমেন্ট হলো ১৯৭১ নিয়ে অনুবাদের কাজ আগানো। আরও বেশি সময় পেলে, আরও মানসিক অবস্থা ভালো থাকলে, আরও আগানো যেত সেই আফসোস আছে, তাও, এ বছরে এটুকুই আমার গঠনমূলক কাজ, আমার তরফ থেকে দেশের জন্যে আমার কিছু।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অতিথি লেখক এর ছবি

২০১৩ ছিলো মানুষ চেনার, ছিলো নিজেকে জানার।

আমি লেখক নই, তাই পড়তে ভালোবাসি। ২০১৩ তে সচলে পাঠক হিসাবে আমার আসা, সচলের অংশ হতে পারা ২০১৩ তে আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন কিংবা পাওয়া। ছোটবেলা থেকে আমি যেমন চিন্তা করতাম, দেখতাম আমার আশে পাশে আমার পরিচিত গন্ডিতে কেউ আমার মতো চিন্তা করেনা, আমি তাই আমার চিন্তাগুলো শেয়ার করতে পারতাম না, সচলে সেটা পারি। অসাধারন সব লেখা, গভীর বিশ্লেষন আর দেশপ্রেমকে রক্তশ্রোতে প্রবাহিত করা প্রিয় সব সচল লেখক, অতিথি আর পাঠক। যুক্ত হওয়ার পর থেকেই বেশিভাগ সময় কেটেছে আমার সচলে, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগের মুহূর্তটিও কাটে আমার সচলে আর সকালে ঘুম থেকে উঠে যেই কথাটি মনে হয় কখন সচলের নীড়পাতায় নতুন নতুন লেখা দেখবো। সচলবিহীন বোধহয় দিন আমার কাটেনি যুক্ত হওয়ার পর থেকে। সচল, ছেলেবেলার দিনগুলোর মতই টানে আমাকে, আমি থাকতে চাই সচলের সাথে জীবনের পথ চলার পুরোটা সময়। সচল তার আদর্শে অবিচল থাকুক, সবাই মিলে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস রচিত হোক আর তা ছড়িয়ে যাক সামাজিক যোগাযোগের সব মাধ্যমে। সচলের সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা, আর শুভকামনা। জয় হোক ৭১এর চেতনার, জয় হোক অসম্প্রদায়িক বাঙালির। জয় বাংলা

মাসুদ সজীব

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

শিমুলের মত ব্লগারের এরকম আত্নপোলব্ধি সবার মধ্যে আসুক। আবার ২০০৭-২০০৯ এর মতো সময় ফিরে আসুক। সে সময়টুকুতে সকল গুরুত্বপূর্ণ খবরে পেতাম ব্লগ থেকে। এখনো মনে পড়ে বিডিআর মিউটিনির খবর সম্ভবত সচল থেকেই পেয়েছিলাম।

সময়ের সাথে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ফেইসবুক আমাদের অনেকের সময়ের অনেকখানি দখল করে নিয়েছে।

২০১৩-তে মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ হয়েছে বারবার--দল-মত-নির্বিশেষে। আবার যাকে যা খুশী বলার প্রবণতাও বেড়েছে বহুগুন। নামে বেনামে অন্যের মতের সাথে অমত হলেই ব্রান্ডিং, ট্যাগিং, গালিগালাজ থেকে শুরু করে হুমকি-ধামকি আগের তুলনায় বেড়েছে।

অধিকাংশ মানুষের আগের তুলনায় সহিষ্ণুতা অনেক কমেছে আর সংবেদনশীলতা বেড়েছে। সবকিছুতে পোলারাইজেশন বেড়েছে। যেন সবাইকে একটা পক্ষ নিতেই হবে। পরিস্থিতি এমন হয়ে যাচ্ছে যে কোন একটা পক্ষ নিতেই হবে অথবা কোন একটা পক্ষে আপনাকে ফেলে দেয়া হবে। সত্য এখন নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে। মতের মিল না হলেই অন্যের মতটা অগ্রহণযোগ্য বিবেচিত হচ্ছে। একটু সেকেন্ড থট দেয়ার সময়ও আমাদের আজকাল থাকছেনা। টেকনোলজির গতিময়তা হয়তো আমাদের এভাবে পরিবর্তিত করছে।

২০১৩র বেদনাময় ঘটনাবলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রানা-প্লাজা ধ্বসে এক হাজারেও বেশী মানুষের মৃত্যু, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর পুলিশের পেপার স্প্রে, বিরোধী দলের আন্দোলনে আগুন দিয়ে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে পুড়িয়ে মারা, প্রাকৃতি সম্পদ ও জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি।

পজিটিভ অগ্রগতির মধ্যে ৭১এ মানবতা বিরোধীদের বিচার প্রকৃয়া শুরু ও বিচার কার্যকর করণ, শিক্ষাখাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, বিশ্বঅর্থনৈতিক মন্দার সময়ও শেয়ার মার্কেট সহ আর্থিক কেলেংকারিগুলো বাদে মোটা দাগে (বছরের শেষের অংশটুকু ছাড়া) সুস্হিরভাবে দেশ পরিচালনা।

২০১৪ নিয়ে খুব একটা আশান্বিত হওয়ার কোন কারণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। যে অবস্থা চলছে তাতে ২০১৪ হতে পারে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের পিছিয়ে যাওয়ার বছর। তবুও প্রত্যাশা করছি ২০১৪ সাল হবে অগ্রগতির, নতুন সম্ভাবনার, অবসান হবে সকল আত্নধ্বংসী কর্মকান্ডের।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

কোনো যুদ্ধাপরাধীর ছবি চাঁদে দেখা সম্ভব নয়; এর স্বপক্ষে আমাদেরকেই লিখতেই হবে। পুরনো শকুনের ডানা মেলা আর মানুষ পুড়িয়ে মারার দিনগুলি নিয়ে আমাদের গল্প-চিন্তা-দিনলিপি ইতিহাস ধরে রাখবে অন্তর্জালে। এই মুহূর্তে এটা খুব দরকার।

শুভ হোক, কল্যাণময় হোক – ২০১৪।

হাততালি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

শুভ হোক, কল্যাণময় হোক – ২০১৪।

____________________________

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।