পরপর দুটো খুনের ঘটনা নামকরা সাইকোঅ্যানালিস্ট ড. স্টিভেন জুড-এর জীবনটা অস্থির করে তুলে। সকালে খুন হয় এক রোগী জন হ্যানসন; জুডের চেম্বার থেকে বেরুনোর কয়েক মিনিটের মধ্যে। হ্যানসন পরা ছিল জুডের রেইনকোট। পুলিশ অফিসার ম্যাকগ্রেভির সন্দেহের চোখ পড়ে জুডের উপর। সকালের ধকল না কাটাতেই সন্ধ্যায় অফিসে বিভৎসভাবে খুন হয় জুডের সেক্রেটারি ক্যারোল। এবার ম্যাকগ্রেভির সন্দেহ আরো দৃঢ় হয়, কিন্তু প্রমাণের অভাবে গ্রেফতার করে না। ম্যাকগ্রেভির সাথে জুডের একটা পূর্ব শত্রুতার ব্যাপার ছিলো। আরেক পুলিশ অফিসার অ্যানজেলি বারবার জুডকে সাহায্য করে যায়, সতর্ক করে দেয়; ম্যাকগ্রেভি সুযোগের অপোয় আছে, যে কোন মুহুর্তে ফাঁদে ফেলতে পারে।
জুড খুব চেষ্টা করে সব দু:শ্চিন্তা বাদ দিয়ে স্বাভাবিক কাজ কর্মে থাকতে, তাই নিয়মিত রোগী দেখে যায়। কিন্তু অজানা শত্রু তার পিছু ছাড়ে না। রাস্তায় গাড়ি চাপা দেয়ার চেষ্টা করে - ভাগ্য জোরে জুড বেঁচে যায়। অথচ ম্যাকগ্রেভি বিশ্বাস করে না, বলে - সব জুডের সাজানো নাটক। অ্যানজেলি জুডকে মানসিক সার্পোট দিয়ে যায়, পুলিশ বিভাগের বড় কর্তাদের কাছে জুডের সাথে ম্যাকগ্রেভির শত্রুতার কথা ফাঁস করে। তবুও জুড নিরাপত্তা পায় না। কারা যেন ইলেকট্রিসিটি অফ করে জুডের অফিসে হামলা করে, কিন্তু খুন করতে পারে না। পুলিশ এগিয়ে আসে না।
অবশেষে জুড প্রাইভেট ডিটেক্টিভ নিয়োগ করে মোডিকে। রহস্যজনকভাবে মোডি ও খুন হয় খুব দ্্রুত। অ্যানজেলি সতর্ক করে দেয় বারবার, সময় আর বেশী নেই। এরপর জুড মরিয়া হয়ে উঠে । শত্রুর তালিকায় কাউকে ফেলতে পারে না। তবুও মোডির দেয়া সূত্র ধরে এগিয়ে যায়। রহস্যময় রোগী অ্যানির সাথে কোথায় যেন একটা সম্পর্ক খুঁজে পায়। কিন্তুবেশী কিছু জানা যায় না। তারপর এগিয়ে আসে অ্যানজেলি। সাহায্যের কথা বলে নিয়ে যায় অপরিচিত এক জায়গায়। সেখানে দেখে মাফিয়া দলের প্রধান মাইকেল; অ্যানির স্বামী। অ্যানজেলির আসল রূপ তখন বেরিয়ে আসে, সে মাইকেলের সহচর। মাইকেলের ধারণা ছিল, অ্যানি তার অবৈধ ব্যবসার কথা জুডকে বলে দিয়েছে। তাই ভুলক্রমে প্রথমে খুন করে হ্যানসনকে। তারপর অ্যানির সাথে জুডের কথকথার টেপ আনতে গিয়ে খুন করে ক্যারোলকে। পরের সব ঘটনার আড়ালে ছিল অ্যানজেলি। একে একে সব মুখোশ খসে পড়ে। সিদ্ধান্ত নেয়া হয় - জুডকে খুন করা হবে। মাইকেল কুট কৌশলে প্রথমে খুন করা হয় অ্যানজেলিকে। তারপর জুডের এক সাইকোলজিক্যাল গেমে পরাজিত হয় মাইকেল। নিজের পাতা ফাঁদে মারা যায়। ম্যাকগ্রেভির সহায়তায় অ্যানিও রক্ষা পায়। (অত:পর সবাই সুখে শান্তিতে বাস করিতে লাগিলো)।
দি ন্যাকেড ফেস, সিডনী শেলডনের প্রথম উপন্যাস। অবশ্যই বেস্ট সেলার! শেলডনের মাত্র দুটো উপন্যাসের প্রধান চরিত্র পুরুষ। তাই জুড ছিল শেলডনের যত্নে গড়া এক চরিত্র। অথচ পাঠক জানেনি জুডের বয়স কতো, প্রয়োজনও ছিল না তেমন। আমার মতো যারা শেলডনের "ইফ টুমরো কামস" কিংবা অন্য কোন বই পড়েছেন - তাদের কাছে দি ন্যাকেড ফেস কিছুটা পানসে মনে হতে পারে। তবুও চমকের কমতি ছিল না। একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে রাখা খুব কঠিন! এখানেই শেলডনের সাফল্য !
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন