অ্যা রেইনি ডে...

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৪/০৯/২০০৬ - ২:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


আমার বস্ মানুষটা মাথা মোটা টাইপ লোক। নিজে যা ভালো মনে করে সেটাই করবে। গ্রুপ-ওয়ার্কের নামে সবাইকে নিয়ে ব্রেইন স্টর্মিং সহ নানান সব হাবিজাবি কাজ করবে। শেষে দেখা যাবে - নিজের নেয়া সিদ্ধান্তে অটল। ব্যাপারটা বুঝতে আমার বেশী দিন লাগেনি। তাই এখন তার সাথে আমার সহজাত স্বভাবে কথা বলি না। সব উলটা-পালটা স্টাইলে কথা বলি। খেয়াল করেছি - এটাই তার পছন্দ।এই যেমন আজ। আজ আমি অফিসে আসলাম সাড়ে এগারোটায়। ড্রেস কোডের কোন তোয়াক্কা না করে জিন্স আর কেড্স পরে আসলাম - এটা দেখে বসের মাথা উলটে গেছে! জিজ্ঞেস করে - "কি ব্যাপার, এই অবস্থা কেন?"আমি ভাব করলাম যেন আকাশ থেকে পড়েছি - "তুমি বোধ হয় সকাল থেকে বাইরে তাকাওনি। বাইরে দেখেছ কি রোদ? এই রোদে ঘর থেকে বের হওয়া যায়? আমার আবার ছাতা নেই। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম রোদ কমার জন্য। শেষে - অনেক কষ্টে একটা মোটরবাইক ভাড়া করে আসলাম।"এটা শুনে বস্ মনে হলো জমিন থেকে আকাশে উঠে গেল। "ও পাগল হয়ে গেছে, পাগল হয়ে গেছে" - বলে হোঃ হোঃ হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে গেল।আমি বলি, নিজেকে বলি - হুম, আমি পাগল হয়ে গেছি। এই দেশে আসার পর এরকম পাগল আমি হইনি। আর পাগল হবোই না কেন? গত রাত থেকে যে রকম বৃষ্টি হচ্ছে, পাতায়ায় এরকম বৃষ্টি কখনো দেখেছি? সকাল ছয়টা চল্লিশ মিনিটে ঘুম ভাঙলো ঠিকই, কিন্তু জানালা দিয়ে যা দেখলাম, ঝমঝম বৃষ্টিতে পুরা পাতায়া শহর ধুয়ে যাচ্ছে, দরজা খোলার পর যে বাতাস গায়ে লাগলো - ওটা কেবল গায়ে নয়, মনেও লেগেছে সবচে' বেশী। তাই কী জানি কি হয় জানি না। রবি কবির আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে অনুপ্রেরণা দেয়। মুহূর্তে অফিসের চিন্তা বাদ। খিদে তখন চোঁ চোঁ করছে। ফ্রিজে দেখি - বিস্কিট আছে, জুস আছে, ইয়োগার্ট আছে। কিন্তু না, ওসব কিছু নয়। ওসবে পেট ভরলেও মন ভরবে না আজ। আজ খুব ইচ্ছা করছে খিচুড়ি খেতে, সাথে গরুর গোশ ভূনা অথবা অন্তত: একটা ডিম ভাজি! ভাবলাম - আফজাল ভাইয়ের দোকানে যাই, বলি - "ভাই - খিচুড়ি রান্না করেন - সাথে ডিম ভাজি দিবেন গরম গরম। আজ ডবল বিল দিবো।" কিন্তু কীভাবে যাই? ঘরের বাইরে এক পা-ও দিতে ইচ্ছে করছে না, দেয়া সম্ভব না। সেই যে কবে বৃষ্টির গান গুলো এনেছিলাম, আজ অনেকদিন পর শুনছি সব। শ্রীকান্তের বৃষ্টি পড়ে, পড়ে টাপুর টুপুর, বৃষ্টি ঝরে..., চিত্রার বারি ঝরা ঘন আকাশে কত কথা..., আকাশ মেঘে ঢাকা শাওন ধারা ঝরে...! অনুপ ঘোষালও অস্থির করে দিচ্ছে আজ - একখানা মেঘ ভেসে এলো আকাশে, একঝাঁক বুনো হাঁস পথ হারালো! আমার মন আজ সত্যি পথ হারিয়েছে! গায়ে চাদরমুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে গান শুনছি। চোখ বুঁজে দেখতে পাচ্ছি - আমার ঢাকার বাসার জানালা দিয়ে পাশের টিনচালা বাড়ির ছাদ। ওদের কবুতর দুটো বৃষ্টি হলেই ভিজে। বাসার বাচ্চা দুটো স্কুল বাদ দিয়ে সামনের লনে বল খেলছে, বৃষ্টির পানিতে লাফাচ্ছে। ওদের মা শত ডেকেও তাদের ঘরে ফিরাতে পারছে না! ভাবনার বৃষ্টিতে আমিও ভিজে চলেছি। আহ্! আজ নস্টালজিয়া আমাকে অবশ করে দিচ্ছে...তখনি মোবাইল বাজে। অফিসের ফোন। ভুলেই গিয়েছিলাম - আজ রিভিউ মিটিং। মেজাজ খারাপ করে অফিসের জন্য রেডি হই। বৃষ্টি খানিকটা কমেছে। রুম থেকে বেরুবো - তখন নচিকেতার কথা ও সুরে শোভা গাইছে - সঘন-মগন শ্রাবণ মেঘের দল, ফোটা ফোটা বারিধারা, একেলা বাতাস দিশেহারা, হিয়া হলো চঞ্চল...।...এমন বাদল দিনে নাকি তারে বলা যায়। কি বলা যায়, কারে বলা যায়? কোন উত্তর যখন পাইনা - তখন পাগল তো হবোই!


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।