মাধবী কখনো সিডিউল মিস করে না। তপুই বরং মাঝে মাঝে দেরী করে। কিন্তু আজ উলটো ঘটনা। তপু পনের মিনিট আগে এসে অপেক্ষা করছে। এ সময়টায় আর্চিস গ্যালারীর ভেতরে ভীড় হয়। তপু-মাধবী ঈদকার্ড কিনবে, কিন্তু শর্ত হলো ঈদের সকাল ছাড়া খোলা যাবে না। ঈদের সকালে ফোনে 'ঈদ মোবারক' বলতে বলতে খাম খুলতে হবে। গত কয়েকটা ঈদে এমন হচ্ছে।একটু পর মাধবীর রিকশা এসে থামে।- উঠ, রিকশায় উঠ...।- কোথায় যাবি? এখানেই তো আসার কথা ছিল।- আহ্! উঠ তো, তারপর দেখবি কই যাই। মাধবী তাড়া দেয়।তপু উঠে বসে।রিকশা চলতে শুরু করলে মাধবী মাথায় ওড়না তুলে ঘোমটা দেয়। তপু হাসে - 'কীরে হঠাৎ মাথায় ঘোমটা দিলি'।- মাথায় রোদ লাগে।- এতক্ষণ রোদ লাগেনি, আমি পাশে বসার সাথে সাথে রোদ লাগা শুরু হলো?- বুঝিস যখন - তখন এতো কথা বলিস কেন?- এক কাজ কর, রিকশার সীটটা অনেক বড়। তোর ব্যাগটা আমাদের দুজনের মাঝখানে রাখ...- চুপ করবি?...রিকশা চলতে থাকে।দুই.মাধবীর কথাবার্তা তপু ঠিক বুঝতে পারে না। আবারো জিজ্ঞেস করে - 'আমি তোকে কত টাকা দামের কার্ড দিবো ওটা আমার ব্যাপার...'- বললে সমস্যা কি?- আমি কি তোকে জিজ্ঞেস করছি - তোর বাজেট কতো! তুই দিনদিন ছোটলোকের মতো কথা বলছিস...- ঠিক আছে, আমি ছোটলোক। শোন, আমি তোকে 50 টাকার ঈদকার্ড দিবো। এখন বল - তুই কত টাকার দিবি?- ওকে ধর, আমিও 50টাকার কার্ড দিবো। তপু জবাব দেয়।- গুড, এখন আমাকে 50 টাকা দে।তপু পকেট থেকে 50 টাকা বের করে দেয়।মাধবী হাসে, বলে - তোর 50 আর আমার 50 মোট 100 টাকার গিফট কিনলাম একজনের জন্য।- কার জন্য?- জানি না। এখনো খুঁজে চলেছি।রিকশা তখন কচুক্ষেত - ইব্রাহিমপুর - তের নাম্বার মোড় পেরিয়ে গেছে। - চাচা, থামেন, থামেন, একটু থামেন। হঠাৎ মাধবী রিকশা থামায়।তপুও রিকশা থেকে নামে। রাস্তার পাশ দিয়ে এক ময়লা কুড়ানো 'টোকাই' হেঁটে যাচ্ছিল। ওকে থামিয়ে মাধবী তার সাথে গল্প জুড়ে দেয়। নাম মিলন। কোথায় থাকিস, কী করিস, বাপ-মা কী করে...। এইসব। এই গল্পগুলো প্রায় একই রকম। তারপর মাধবী তার ব্যাগ থেকে শার্ট-প্যান্ট দুটো বের করে দেয়। নতুন জামা পরে মিলন ভূবন ভুলানো এক হাসি দেয়, জিজ্ঞেস করে - আফা, আপনে কে? কি করেন?জবাব না দিয়ে - মাধবী তপুর হাত ধরে রিকশায় উঠে বসে।তপু পেছন ফিরে দেখে - মিলন হাসি মুখে তাকিয়ে আছে তাদের রিকশার দিকে। এ যেন এক দেবশিশু স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে, হাসছে...।তিন.মিনিট দুয়েকের নীরবতা ভেঙে তপু খোঁচা দেয় - 'ভালোই লাগছে, মাদার তেরেসার সাথে নগর ভ্রমণ...'মাধবী হাসি দেয় - আচ্ছা তপু, তুই তো প্রায়ই বলিস, আমরা স্টুডেন্ট মানুষ - এইসব বঞ্চিত মানুষদের জন্য আমরা কী-ই বা করতে পারি!- হুম বলি...- কিন্তু, এই যে আমাদের অহেতুক লোক দেখানো ফরমালিটিসের ঈদকার্ড দেয়া নেয়া; এই অভ্যাসটা কি আমরা পরিবর্তন করতে পারি না? ভেবে দেখ - তোর আর আমার 100 টাকা একজনের মুখে যে হাসি আনন্দ এনে দিলো, এটা কী খুব কঠিন কিছু?- না কঠিন কিছু না। কিন্তু তোর কথাগুলোকে এই মুহূর্তে খুব কঠিন মনে হচ্ছে। ...তোর মাথার ঘোমটা কই?মাধবী মুচকি হাসে। 'এখন রোদ লাগছে না' - বলে আরেকটু কাছে ঘেঁষে বসে।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন