বাড়ী বদলে যায়

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: রবি, ২২/১০/২০০৬ - ১২:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


আজ কোন মিটিং সমাবেশ নেই।
দর্শনার্থী নেই।
দফতরের কাজকর্মও স্থগিত করা হয়েছে। তবুও সকাল থেকে তার মনটা খুব ভার হয়ে আছে। আহ্! পাঁচ বছর কেটে গেলো! মনে হলো এই তো সেদিনের ঘটনা। সবাই মিলে কি হৈ হুল্লোড় করে এ বাড়ীতে উঠেছিল। আজ বাড়ীটা ছেড়ে দিতে হবে। বিশাল লন, খোলা বারান্দা, চাকর-বাকর-খানসামায় সয়লাব। চা-য়ের কেটলী চুলা থেকে নামতো মাঝরাতে। কত লোক এর আসা যাওয়া! কতো দেন-দরবার, শলা পরামর্শ, কতো স্মৃতি! এরকম লোকে গমগম এই বাড়ীটা আজ থেকে বেশ কয়েক মাস খাঁ খাঁ করবে। আগামীতে কে আসবে জানে না কেউ।

...বিপরীতে নতুন ভাড়া নেয়া গুলশানের তিন হাজার স্কয়ার ফিটের অ্যাপার্টমেন্টের কথা ভাবলে ভীষণ অস্বস্তি লাগে। কেমন যেন দমবন্ধ গুমোট ম্যাচবক্স বাসা। এরকম খোলা হাওয়া কই? এরপরও এ বাড়ী ছেড়ে ম্যাচবক্স জীবনে যেতে হবে! রোজাদারের দোয়া সবার আগে কবুল হয়। তাইতো এবার প্রতিদিন ইফতার সামনে নিয়ে চোখ বুঁজে বারবার বলেছেন - হে পরওয়ারদেগার, হে সর্বশক্তিমান, তুমি দয়ার সাগর। তুমি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করো, যাকে ইচ্ছা তাকে নি:স্ব করো। ইয়া রাহমানির রাহিম, পাঁচ বছরে অনেক ভুল-ত্রুটি করেছি - হে মাবুদ, তুমি ক্ষমা করে দিও, ...আর কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই; কেবল আর একবার ইলেকশনে জিতায়ে মন্ত্রী বানায়ে দিও...।

...এসব ভাবতে ভাবতে তিনি পিক-আপ ভ্যানগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলেন। একে একে সব মালপত্র উঠানো হচ্ছে। শংকা হয় - নতুন অ্যাপার্টমেন্টে এতো জিনিসের জায়গা হবে তো! গিনি্নও বিষণ্ন মুখে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছে ছিল ঈদটা এই বাড়ীতেই করবে! অথচ সরকারের অর্ডার...। আরেকটু দূরে পোষা বিড়াল ছানা কোলে নিয়ে তাদের আট বছর বয়েসী মেয়ে বসে আছে। তারও এই বাড়ী ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। অথচ যেতে হবে! মা-কে অনেক বুঝিয়ে বিড়াল ছানাটা নেয়া যাচ্ছে। বাবা বলেছিল - অ্যাপার্টমেন্টে বিড়াল নেয়া যাবে না। পরে কান্নাকাটি করায় বাবা রাজী হয়েছে। এখন ইচ্ছে করছে - সামনের আম গাছে ঝুলানো দোলনাটা নিয়ে যেতে। মা-কে বলার পর চোখ রাঙানো দেখে আর কথা বলার সাহস হয় না। বাবাও গম্ভীর মুখে চেয়ে আছেন।

অবশেষে ভীষণ মন খারাপ নিয়ে তিনজন গাড়ীতে উঠে বসে। তখন হঠাৎ মোবাইল বাজে
- মিনিস্টার সাব, জাকাতের কাপড় নিয়া হেভি গ্যাঞ্জাম লাগছে। ঠেলাঠেলিতে কয়েকজন মারাও গেছে। এতো লোক সামাল দেয়া মুশকিল।
-আহারে জ্বালা! এই শেষ ক'টা দিনও কি তোরা আমারে শান্তি দিবি না? যেমনে পারিস সামাল দিয়ে যা। আমি ঈদের আগের রাতে আসবো..। হুম... হুমম... ঠিক আছে, ঠিক আছে...।

ফোনের লাইন কেটে মিনিস্টার সাহেব শেষ বারের মতো বাড়ীটার দিকে তাকান। আম গাছে ঝোলানো দোলনাটা আপন মনে বাতাসে দুলছে।

বুকটা হু হু করে উঠে...।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।