একটি পরিবারের আনন্দ-বেদনা এবং আবেগ কথন

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: রবি, ০৮/০৪/২০০৭ - ৯:১০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ঘরের মধ্যে দুই চাচী সারাক্ষণ ক্যাচাল করে। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না। একজনের রান্না আরেকজনের পছন্দ হয় না, খুনসুটি লেগেই থাকে। সত্তরোর্ধ চাচামিয়া একূল ওকুল করে বারবার কামরা পাল্টায়। তামাশা দেখে কেউ কেউ হাসি ঠাট্টা করে। সমাধান তো হয় না, বরং গন্ডগোল বেড়ে গেলে চুলায় আগুন জ্বলে না। চার মগ আর চৌদ্দ গ্লাসের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে হরহামেশা কথা কাটাকাটি হয়। আপোষ-মীমাংসার বৈঠকগুলো বারবার ভেস্তে যায়। শেষে দাদুভাইয়া ধমক দিয়ে নোটিশ ঝুলায় - এসব চলবে না, কথা ও কাজে সাবধান হও - মুখে ছাঁকনি লাগাও। এতো সব ঝামেলার মাঝে ঘরের পোলাপানগুলোকে পরীক্ষার প্রিপারেশন নিতে হয়। খারাপ করলে চলে ঝাড়ির উপর ঝাড়ি। বড়রা ঝাড়ি দেয়, বকা দেয়। ছোটরাও থেমে থাকে না...।

আহারে! কতোই বা বয়স? এবার যে পশ্চিমবিন্দিয়ায় ছেলেগুলো পরীক্ষা দিতে গেলো, যেখানে হাজির হলো গত দুইবারের ফার্স্ট হওয়া ক্যাঙ্গারুলিয়া, প্রতিবেশী বিন্দিয়াপাড়া, ফাকিস্তান, খবরীভূমি, বিলাত, জাফ্রিকানগর আরো কতো গ্রামের ছেলেপেলে; সবাই বয়সে বড়ো। অথচ প্রথম পরীক্ষাতেই বিন্দিয়াপাড়াকে ঘরে তুলে দিলো বাংলার কচি কচি ছেলেগুলো। রাবণ রাজ্যের কাছে হারলেও ক্রন্দনশীলা ঘাড়মুটাকে বৃষ্টির মধ্যে ভালোই নাকানি চুবানি দিলো। তারপরে? তারপরে কী হলো? টেস্ট পরীক্ষায় অ্যালাউড হলে ফাইনাল যে দিতেই হবে খোকা! আরো ছয়টা পরীক্ষা। কতদূর পারবে? খোকাদের বুঝি ক্লান্তি লাগে, কতোদিন দেশ দেখে না! তাই ক্যাঙ্গারুলিয়া আর খবরীভূমির সাদা চামড়ার দামড়াগুলো খুব সহজে কাত করে দিলো পরের দুটো পরীক্ষায়। দুধে-ভাতে থাকা ছেলেগুলোর মাঝে না জানি আবার হতাশা চলে আসে! কত্তো দু:শ্চিন্তা ভর করে মাথায়...।
যেই না পরপর দুটো নাকানী-চুবানি খেলো, তার খবর ঘরে পৌঁছতেই শোরগোল পড়ে গেলো। কেউ কেউ বললো - ঘরে জায়গা পাবে না, বাইরে থাকবে। ভাত বন্ধ। বাচ্চাদের মাঝেও খানিকটা বড়'দা হয়ে থাকা হাবুলের উপরে ক্ষ্যাপে সবাই। আর ঐ পিচ্চিটা কী যেন নাম, রাবণরাজ্যে গিয়ে রেকর্ডের খাতায় নাম লিখিয়েছিল, হুমম আশারভুল - কার্ডিফে কবে জানি ক্যাঙ্গারুলিয়ার মাথায় একাই একশ ঘুষি মেরেছিল, তারপর আর পারে না। সবাই বলে - 'বারুদ পোলা'। অথচ পরীক্ষায় সরল অংকের ফলাফল মিলাতেই সময় পার করে দেয় বারবার। সেই আশারভুলও তেত্রিশ তুলতে পগারপার।
এসবের মাঝে মাথা চুলকায় লজিং মাস্টার দেবু পন্ডিত। দেবু পন্ডিতের ইয়া বড় গোঁফ, বড়বড় চোখ, কঠিন চাহনী। কিন্তু ওস্তাদের ট্রেনিং মার্কামারা। আরো এগার বছর আগে রাবণরাজ্যের ছেলেগুলোকে ম্যাজিকের মতো করে জিপিএ ফাইভ এনে দিলো। তাও গোল্ডেন জিপিএ। সেই দেবু পন্ডিতের মাঝেও এবার হতাশা ভর করে। বিন্দিয়াপাড়ার লজিং মাস্টার চপ্পলকে ঘাঁড় ধাক্কা দিয়ে বিদায় করার পর নতুন ওস্তাদ খোঁজা হচ্ছে। তাদের নজর গেলো - দেবু পন্ডিতের উপর। ...ধান ভানলে কুড়ো দেবো, মাছ কুটলে মুড়ো দেবো, কালো গরুর দুধ দেবো, দুধ খাবার বাটি দেবো...। শুনে দেবুও ঢোল বাজিয়ে বললো - 'বিন্দিয়াপাড়ায় জায়গীর হইতে আমি রাজী'। ইস্! বড়ই দু:সময়! জাফ্রিকানগরের সাথে পরেরদিন পরীক্ষা। কে জানে কেমন করবে বাংলার ছেলেগুলো, কোনদিন তো পারেনি আগে!

তবুও ঘরের বাসিন্দারা আশায় থাকে। বাঘ গর্জন করে উঠুক, জাফ্রিকানগরের আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠুক বাঘের গর্জনে। বারুদ পোলাটা এবার বোমা ফাটায়। সাথে নড়াইল এক্সপ্রেস, আফতাব আর নায়ক রাজের নামে যার নাম - রাজ্জাক; সে-ও কপালের ভাঁজ স্পষ্ট করে ঘুর্ণি ছুড়ে। জাফ্রিকানগরের বেলুনগুলো চুপসে যায় একে একে। এবারের পরীক্ষায় আসাধারণ এক পাশ দিলো বাঙলার ছেলেগুলো। খবর যখন ঘরে পৌঁছে তখন প্রায় শেষরাত। ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে মানুষ, বাদ্য-বাজনা, আনন্দ মিছিল। যারা মিছিলে যায়নি তারা অন্তত: ঘরের দাওয়াখানা কিংবা উঠোনে এসে দাঁড়ায় কিছুক্ষণ। আর দূর পরবাসে সারা রাত জেগে খেলা দেখা কেউ কেউ আনন্দে চোখ ভেজায়। দামাল ছেলেদের এ বিজয় সকালের নতুন সূর্যের সাথে নতুন সম্ভবনার স্বপন দেখায়। ওরা যে আমাদেরই সন্তান। পরীক্ষায় ভালো-মন্দ যা-ই করুক, ওরাই আমাদের রাত জাগায় - মন খারাপ করায় - আনন্দে ভাসিয়ে দেয়। আমরাও যেন ওদের পাশে থাকি সবসময় ...।

প্রতিবেশী সমাচার: পাশের বাসার হিংসুটে ভাবী
সেই পুরনো গল্পটা তো আমরা সবাই জানি - পাশের বাসায় বাচ্চা স্কুলে ভর্তি হলে হিংসুটে প্রতিবেশী বলে - 'স্কুলে গেলে কী হবে? পাশ করতে পারবে না'।
স্কুল পাশ করে কলেজে গেলে বলে - 'ওটাই শেষ, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার তো আর হবে না!'
পরে ডাক্তারী পাশ করলে বলে - 'ও ডাক্তার হয়ে কী করবে? সব রোগী মারা যাবে'!
কিন্তু একদা বালকটি ক্রমান্বয়ে স্কুল-কলেজ পাশ দিয়ে সফল ডাক্তার হয়ে অনেকদিন কাজ করে যাওয়ার পর পরশ্রীকাতর প্রতিবেশীটি আর কিছু বলতে পারলো না। কী-ই বা আর বলবে?
সনি চ্যানেল দেখার স্কোপ নেই, তাই 'তারে আমি চোখে দেখিনি, তার অনেক গল্প শুনেছি'। তিনি মন্দিরা বেদী। যতটুকু জেনেছি - বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য তিনি পাশের বাসার হিংসুটে ভাবীর মতো আবোল তাবোল বকে যাচ্ছেন ক্রমাগত। সর্বশেষ আপটেড - তিনি 'মন্দিরার সুমতি' (Mondira's Extra Innings) নামে একটি ছবিতে অভিনয় করতে যাচ্ছেন। ছবিটির ট্রেলার দেখুন এখানে

দ্বাদশ খেলোয়াড়ের হাফ সেঞ্চুরী:
সব সময় দ্বাদশ খেলোয়াড়ই ছিলাম। ব্যাটসম্যানের জন্য পানি নিয়ে যাওয়া, আহত ফিল্ডার রেস্টে গেলে তার জায়গায় ফিল্ডিং করার মাঝেই ছিল আমার বিচরণ। কোন একবার ওপেনিংয়ে নেমে বিশ ওভারের খেলায় সতের বলে শুন্য রান নিয়ে ক্রিজে পড়ে আছি - কোচ মহোদয় খবর পাঠিয়েছিলেন - এটা টেস্ট ম্যাচ না, ওকে ফিরে আসতে বলো। শেষে হার্ট রিটায়ার্ড হয়ে ফিরে এসেছিলাম। ওটাই প্রথম, ওটাই শেষ। কখনো 'ওরা 11জন'-এর একজন হতে পারিনি। বাকী দিনগুলোয় ম্যাচ রিপোর্ট লিখে স্থানীয় পত্রিকা আফিসে দিয়ে আসাই ছিল মূল কাজ।

ব্লগে 278 দিন পেরিয়ে হিসেব করে দেখি সিঙ্গেলস নিয়ে নিয়ে আমার পোস্টের হাফ সেঞ্চুরী হয়ে গেলো আজ। শতক করা হবে কি-না জানি না, তাই আপাত: গৌরবের 50তম পোস্টটি উৎসর্গ করলাম আমাদের ক্রিকেট দলকে। শাব্বাস বাংলাদেশ!!!


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।